Powered By Blogger

Friday, June 30, 2023

প্রবন্ধঃ হেগে মরা আর হেঁটে মরা।

এই সমাজে যার যা ইচ্ছা সে তাই করছে। 'আমাদের ইচ্ছেটা আমাদেরই, তাই ইচ্ছের ডানা মেলে উড়বই'-এই দর্শন আজ যুব সমাজের পথ চলার প্রধান সাথী। আর এই দর্শনের উপর জোর প্রচার চলছে নানাভাবে, নানাঢঙে। ছবিও তৈরী হচ্ছে এর উপর, যার জন্য আরও আকৃষ্ট হ'য়ে পড়ছে যুবক, যুবতী; এমনকি বালক,বালিকারাও। আদর্শহীন সমাজ আজ ঘড়ঘড় আওয়াজ তুলে এই দর্শনের স্রোতে ভেসে চলেছে। চারিদিকের লাল নীল আলোর ঝলকানিতে অল্প বয়সীদের তো বটেই তিন কুল গিয়ে চার কুলে ঠেকা জীবনও যাচ্ছে ঝলসে। কান্ডারি বিহীন জীবন বলি হচ্ছে সেই সমাজের চোরাগলিতে। যারা জীবনে আদর্শ গ্রহণ করেনি তাদের কথা না হয় বাদ দিলাম, কিন্তু যারা জীবনে আদর্শ গ্রহণ করেছে, সে যাকেই গ্রহণ করুক আর মেনে চলুক, তাদের জীবন যখন কান্ডারি বিহীনদের মত সর্বনাশের গভীর খাদে মুখ থুবড়ে গিয়ে পড়ে তখন মনে হয় এমন কেন হ'ল? এমন হওয়ার তো কথা ছিল না। আর, যারা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার মানুষের মাঝে মানুষের রুপ নিয়ে নেবে আসা শ্রেষ্ট রুপকে জীবনে গ্রহণ করে, এমনকি তাঁর যে যুগানুযায়ী নতুন রূপ, ঘোর কলি যুগের অবতীর্ণ শেষ সর্বশ্রেষ্ট যে রূপ সেই রুপকে জীবনে গ্রহণ করেছে আর গ্রহণ করার পরেও তাদের জীবনের উপর যখন ঘোর অমাবস্যার অন্ধকার নেবে আসে তখন মন ভারাক্রান্ত হ'য়ে প্রশ্ন করে, কেন এমন হ'ল? কোথায় ভুল? কোথায় ফাঁক?, কোথায় ত্রুটি? কে যেন হঠাৎ ব'লে উঠল, লক্ষ্মীন্দরের কি হয়েছিল জানো তো? লোহার বাসর ঘরও তাকে বাঁচাতে পারেনি। একটা চুলের মত সরু ফুটো তার জীবনের সর্বনাশ ডেকে এনেছিল, নাবিয়ে এনেছিল বেহুলার জীবনে ঘুটঘুটে অন্ধকার! একটু চুপ ক'রে থেকে কে যেন আবার বলল, সাবধান! ভুসোমাল দিয়ে তৈরি তোমার জীবন চলনায় কিন্তু হাজার ফুটো আর সেই ফুটো দিয়ে ঢুকে পড়ছে হাজার হাজার কালনাগিনীর বাচ্চা। তা থেকে সাবধান হও। নতুবা শিয়রে সমন নিয়ে অপেক্ষা করছে শয়তান কিলবিসের দূত। অন্তিম পরিণতি ভয়ংকর। কাউকে দোষারোপ ক'রে লাভ হবে না। মানব বন্ধন ক'রে কোনও লাভ হবে না, মিছিল, মিটিং ক'রে লাভ হবে না, সমবেদনা প্রকাশের জন্যও অন্তিম সময়ে একজনকেও পাবে না। কারণ তুমি মুখে গান গেয়েছো, 'ছাড়ো রে মন কপট চাতুরী, বদনে বল হরি হরি' আর উপরে ভক্ত সেজে দাঁতে দাঁত লাগিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে গান গাইতে গাইতে মনে মনে তোমার পাশের সৎসঙ্গী গুরুভাইকে, তোমার প্রতিবেশীকে, তোমার বন্ধুকে, তোমার পরিবারের কাছের জনদের বলেছো, 'দাঁড়া, দেখাচ্ছি মজা, ......বাঁশটা দেবো সোজা'।
তুমি ঠাকুর ধরেছো কিন্তু ঠাকুর মানোনি, ঠাকুরের কথা মানোনি, ঠাকুরের পরিবার পরিজন মানোনি, ঠাকুরের ঔরসজাত ও কৃষ্টিজাত সন্তান জেষ্ঠ্যাত্মজকে মানোনি, অপমান, বিদ্রূপ, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, কুৎসা যা নয় তাই তাঁর বিরুদ্ধে করেছো, সংঘ আচার্য্যের অপমানকর চরম নোংরা বিরোধিতা করেছো, ঠাকুরকে নিয়ে উদারতার ভঙ্গিতে ব্যবসা করেছো, প্রতিমুহুর্তে ঠাকুরকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে সীমাহীন ভাঙাচোরা বেকুব মানুষদের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গেছো আর অর্থ, মান, যশ ভোগ করার বাসনায় মৌরসি পাট্টা জমিয়ে আয়েস ক'রে বসে, চর্ব্য, চষ্য, লেহ্য, পেয় খেয়ে ভেবেছো এমনিভাবেই কেটে যাবে চিরটাকাল? ঠাকুর কি তোর এতই বেকুব? ফাঁকি দেখে নয় সামাল? তাই বলি,
"তুমি যা করছো বা ক'রে রেখেছো, ভগবান তাই-ই গ্রাহ্য করবেন আর তার ফলও পাবে ঠিক তেমনি"।
'যা ইচ্ছা তাই করবে তুমি, তা করলে কিন্তু চলবে না’
ভালো ছাড়া মন্দ করলে পরিস্থিতি ছাড়বে না'।
তাই বলি, কাউকে কিচ্ছু করতে হবে না। সাবধান, 'শেষের সেদিন ভয়ংকর', যেদিন ঘরের বিছানার সামনের জানালায় পৃথিবীটা হঠাৎ থেমে যাবে, আর, হেগে হেগে মরতে হবে বিছানায়। ভুলে গেছো সাবধান বাণী? "হেগে মরার চেয়ে হেঁটে মরা ভালো"।
( লেখা ২০শে জুন'২০১৬ )

No comments:

Post a Comment