Powered By Blogger

Friday, June 9, 2023

প্রবন্ধঃ ইষ্টভৃতি ও ইষ্টভৃতির হিসাব।

শ্রীশ্রীআচার্যদেবের জন্মতিথি পালনকে কেন্দ্র ক'রে নিন্দাবৃষ্টিতে সৎসঙ্গ জগত ভাসিয়ে দিতে চাইছে একশ্রেণীর মানুষ। তারা সৎসঙ্গী সেজে এবং কিছু সৎসঙ্গী আছে না বুঝেই নিন্দুকের প্রচারে প্রভাবিত হ'য়ে জন্মানুষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রচার ক'রে চলেছে। তারা ইস্টভীতির ( শব্দটাও জানে না ) হিসাব চাইছে, বলছে পাবলিকের নাকি অধিকার আছে হিসাব চাইবার। তারা বালখিল্য পোঙ্গা পন্ডিতের মতো বলছে, হিসাব দিতে সমস্যা কোথায়?

প্রথমে সেইসমস্ত বালখিল্য পোঙ্গা পন্ডিতদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আগে তো শব্দটা ঠিক ক'রে জানুন ও লিখুন; তারপর না হয় হিসাব চাইবার ধৃষ্টতা দেখাবেন। শব্দটা ইস্টভীতি নয়। শব্দটা ইষ্টভৃতি। ইষ্টভৃতি মানে ইষ্টকে ভরণ-পোষণ, ইষ্টকে পূরণ। ইষ্টকে অর্থাৎ মঙ্গলকে, মঙ্গল শব্দের জীবন্ত প্রতিমূর্তিকে বাস্তব সেবা দান। আগে শব্দটা জানুন, শব্দের মানে জানুন ও বুঝুন তারপর কমেন্ট করবেন। শব্দটাই জানেন না যেখানে সেখানে এর মানে বুঝবেন কি ক'রে? বোঝাই যায় যারা হিসাব চাইছেন তারা কিছু জানেন না, কিছু করেন না অথচ এই বিষয়ে মন্তব্য করবেন একেবারে পোঙ্গা পন্ডিতের মতন। কে পাবলিক? কোন পাবলিক? ইষ্টভৃতি পাবলিকের বাপের টাকা যে পাবলিক হিসাব চাইবে? আপনারা যারা ইষ্টের অর্ঘ্যের হিসাব চাইছেন তারা সৎসঙ্গী নন। সৎসঙ্গী হ'তে পারেন না। সৎসঙ্গী হ'লে হিসেব চাইতেন না, পাবলিকের কথা তুলতেন না, ইস্টভীতি বলতেন না, ট্রাস্টি বোর্ডের কথা আনতেন না। সৎসঙ্গী সেজে সৎসঙ্গীদের মনের মধ্যে সন্দেহের বিষ ঢেলে বিভেদ সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আপনারা। আর ভেবেছেন প্রায় দশ কোটি পূরণের লক্ষ্যে ছুটে চলা সৎসঙ্গী তা বুঝতে পারে না বা পারবে না? তারা চারঅক্ষর গান করা আম সৎসঙ্গী?

আপনারা এটা জেনে রাখুন বিশ্বজুড়ে সৎসঙ্গীরা শ্রীশ্রীআচার্যদেবের নির্দেশে চলা শ্রীশ্রীঠাকুরের শৃঙ্খলিত, সভ্য, সুশিক্ষিত শিষ্যকুল। দেওঘর মূল কেন্দ্রের সৎসঙ্গীরা শ্রীশ্রীঠাকুরের "এক আদেশে চলে যারা, তাদের নিয়ে সমাজ গড়া" বাণীর মূর্ত রূপ। শ্রীশ্রীআচার্যদেবের অঙ্গুলি হেলনে, চোখের ইশারায়, ইঙ্গিতে, আদেশমাত্রই বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ইয়ং জেনারেশন, প্রৌঢ়, বৃদ্ধ নারীপুরুষ নীরবে আত্মবলিদান দিতে পারে ভয়ঙ্করের জীবন্ত রূপ হ'য়ে। শিবের তান্ডব নৃত্য সম্বন্ধে নিশ্চয়ই ওয়াকিবহাল আছেন আপনারা। দক্ষ রাজার যজ্ঞভুমি শিবের প্রলয় নৃত্যে ধ্বংস হ'য়ে গিয়েছিল, ধ্বংস হ'তে বসেছিল সৃষ্টি। নিশ্চয়ই জানা আছে। শান্ত, সৌম্য, সুন্দর, ধ্যানস্থ শিবের আসন টলে উঠেছিল দক্ষের অশ্রদ্ধায় ভরা অসম্মানজনক অন্যায় আচরণে। দক্ষ রাজার যজ্ঞকুন্ড থেকে উত্থিত অগ্নি দেবতা বা ক্ষিতি, অপ, বায়ু, আকাশ ইত্যাদি অন্যান্য আমন্ত্রিত দেবতার বাপের সাহস বা ক্ষমতা হয়নি শিবের ক্রোধকে শান্ত করে, তান্ডব নৃত্যকে থামায়। থামায় দেবাদিদেব মহাদেবের মহানভক্ত নন্দীভৃঙ্গীর ও দলবলের সুশৃঙ্খল সৌন্দর্যমন্ডিত ভয়াল নৃত্যকে। তাই সাবধান! ভেবে কথা বলুন, ভেবে কথার ঢিল ছুঁড়ুন।

যাই হ'ক, শুনুন ইস্টভীতি আর ইষ্টভৃতি শব্দের মানে আকাশপাতাল তফাৎ। আর, পাবলিকের কথা বলেছেন, পাব্লিকের কোনও অধিকার নেই সৎসঙ্গীদের ইষ্টভৃতির হিসাব চাওয়ার। ইষ্টভৃতি করবে সৎসঙ্গীরা আর হিসেব চাইবে হরিদাস পাল পাবলিক? এটা জেনে রাখুন সৎসঙ্গী পাবলিক নয়। সৎসঙ্গীরা ইষ্টরক্ষা, ইষ্টপ্রতিষ্ঠা ও ইষ্টস্বার্থরক্ষাকারী ইষ্টপ্রাণ নিরাশিনির্ম্মম ইষ্টের অবিনাশী যোদ্ধা, ধর্ম্ম রক্ষা ও বাঁচাবাড়ার রক্তবীজের ঝাড়। আর, হিসাব দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার কথা বলেছেন যারা তারা জেনে রাখুন সমস্যা এইটাই যে অনধিকার চর্চা। আপনারা অনধিকার চর্চা করছেন। এটা বালখিল্য পাবলিকের চুলকানি স্বভাব।

আর, ধরেই যদি নিই যারা হিসাব চাইছেন তারা সৎসঙ্গী, ইষ্টভৃতি করেন তাহ'লে এটা জানিয়ে দিই আপনি সৎসঙ্গী হওয়ার ও ইষ্টভৃতি করার যোগ্য নন। সৎসঙ্গী হ'লে ইষ্টভৃতি অর্ঘ্যকে টাকা বা পয়সা বলতেন না। ইষ্টভৃতি সৎসঙ্গীদের স্বতঃস্বেচ্ছ, অনুরাগ-উদ্দীপী, আগ্রহ-উচ্ছল, অপ্রত্যাশী অর্ঘ্যাঞ্জলী। সৎসঙ্গীরা ইষ্টভৃতিকে অশ্রদ্ধা উদ্রেককারী শব্দ টাকা বলে না, বলে অর্ঘ্য।

আর, আমরা ঠাকুরের ভরণ পোষণের দায় দায়িত্ব নিতেও পারি, না-নিতেও পারি। তাঁকে কিছু খেতে দিতেও পারি, না-দিতেও পারি। তিনি আমাদের কাছে কোনও জোরজবরদস্তি বা বলপ্রয়োগ করেননি। আমাদের জাগতিক পিতামাতার দায়দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে আমরা জীব, জগৎ, জীবন, কারণের যে উৎস অর্থাৎ আমাদের সবার পরমপিতার জীবন্ত রূপের ভরণ-পোষণের দায়দায়িত্বও গ্রহণ করি; গ্রহণ করি আমাদের জীবন চোঁয়ানো রক্তঘাম ঝরা সৎ পথের পরিশ্রমের বিকল্প রূপ অর্থ দিয়ে বাস্তব সেবার মাধ্যমে। আমরা যারা আমাদের পিতামাতাকে দেবতাজ্ঞানে প্রতিমুহূর্তে বাস্তব সেবার মাধ্যমে পুজা করি তারাই একমাত্র ইষ্টকে নিবেদিত ইষ্টভৃতির মর্ম বুঝি। এছাড়া কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় ইষ্টভৃতির মর্মার্থ। রিপুতাড়িত বৃত্তি-প্রবৃত্তির রসে জারিত মানুষের পক্ষে ইষ্টভৃতির অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝা বা সেইসমস্ত মানুষকে বোঝানো আর সূচের মধ্যে দিয়ে হাতি গলানো বা হিমালয় পাহাড়কে কাঁধে ক'রে ব'য়ে আনা সমার্থক। আর আশ্চর্য ও দুঃখ এটাই, সেই ইষ্টভৃতির হিসাব চাইবে এইসমস্ত বালখিল্য অজ্ঞানী পাবলিক।

আমরা সৎসঙ্গীরা আমাদের পাঠানো অর্ঘ্যের কোনও হিসাব চাই না। আমরা ঠাকুরের নিদেশমতো ঠাকুরের বলা নির্দিষ্ট জায়গায় ইষ্টভৃতি পাঠিয়ে দিই। আপনি কি জানেন এক একজন সৎসঙ্গী আছে তারা কত ক'রে ডেইলি ইষ্টভৃতি করে? মাথা ঘুরে যাবে জানলে। সেই বিশাল পরিমাণ ইষ্টভৃতির টাকা কি পাবলিকের বাপের টাকা নাকি সৎসঙ্গীদের জীবন চোঁয়ানো রক্ত, ঘাম ঝড়ানো সৎপথের রোজগারের টাকা? আমার সৎ পরিশ্রমের রোজগারের টাকাপয়সা দিয়ে আমি গাঁজা খাব না মদ খাব, বেশ্যাবাড়ি যাবো কি উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খল ভাবে উড়িয়ে দেব নাকি আমার ভালোবাসার প্রিয় মানুষ জীবন্ত ইষ্টকে দেব সেটা কে ঠিক ক'রে দেবে? পাবলিক? সেটা আমার ব্যক্তিগত অধিকারের মধ্যে পড়ে, পাবলিকের হিসাব চাইবার অধিকারের মধ্যে পড়ে না। যেখানে সরকারের হিসাব চাইবার অধিকার নেই সেখানে পাবলিকের অধিকার তো হাস্যকর মূর্খের মতো দাবী। এ ভয়ংকর স্বৈরাচারী অনধিকার চর্চা।

যাই হ'ক আমার পাঠানো ঠাকুরের অর্ঘ্য কি হচ্ছে না হচ্ছে সেটা আমার দেখার কোনও দরকার নেই, আমরা সেই শিক্ষাতে অভ্যস্ত। আমরা সৎসঙ্গীরা জানি ঠাকুর সব দেখছেন আর তার হিসাবও তিনি রাখেন। আর যদি আপনি সৎসঙ্গী না জেনে ব'লে থাকেন তাহ'লে এবার জেনে নিয়ে নিজের ভোঁতা ধারণা পালটে ফেলুন, অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসুন আর ঠাকুরকে জানুন, পড়ুন, বুঝুন, জীবনকে করুন সার্থক ও সফল। আর যদি মনে করেন এসব ফালতু কথা আপনি ইষ্টভৃতি করেন তাই তার হিসেব চাইবেন তাহ'লে কাল থেকে ইষ্টভৃতি বন্ধ ক'রে দিন। আপনার অশ্রদ্ধার অপমানের অবিশ্বাসের ইস্টভীতির চারআনা পয়সাও ঠাকুর গ্রহণ করেন না। আপনাকে কেউই বলেনি আপনাকে আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইষ্টভৃতি করতে। ইষ্টভৃতি কি তা আমি উপরে পরিস্কার বলে দিয়েছি; আবারও বলছিঃ ইষ্টভৃতি সৎসঙ্গীদের তার ইষ্টের উদ্দেশ্যে, তার জীবনদেবতার উদ্দেশ্যে, তার ভালোবাসাময় প্রিয়পরমের উদ্দেশ্যে স্বতঃস্বেচ্ছ, অনুরাগ-উদ্দীপী, আগ্রহ-উচ্ছল, অপ্রত্যাশী অর্ঘ্যাঞ্জলী। এই ব্যক্তি স্বাধীনতায়, ব্যক্তি অধিকারে কেউ মাতব্বরি করবার ধৃষ্টতা দেখাবেন না।
অলমিতি বিস্তারেন।
( লেখা ২রা জুন'২৩ )

No comments:

Post a Comment