ঈশ্বর বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী প্রায় সকলের এক কথা, ঈশ্বর কোথায়? ঈশ্বরকে তো দেখিনি, দেখাও যায় না। তাহ'লে কিভাবে ঈশ্বর আছেন, ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে তা বিশ্বাস করবো? রামকৃষ্ণ মঠের মহারাজরা বলেন, শুনেছি-----আমি বই পড়িনি, আর পড়ার একটা বিশেষ ধৈর্য্যও নেই, কারণ ঘোর কলিযুগের প্রোডাক্ট তো তাই, ------- স্বামী বিবেকানন্দও নাকি বলেছেন, ঈশ্বরকে অনুভব না করা পর্যন্ত ঈশ্বরের অস্তিত্বে যেন বিশ্বাস না করা হয়। অর্থাৎ ঈশ্বরকে অনুভব করো তারপর ঈশ্বরকে বিশ্বাস করো। বেদ অধ্যয়ন আমি করিনি। তবে শুনেছি কিম্বা কোথাও পড়েছি; কোথায় পড়েছি এখন অবশ্য মনে নেই। বেদে নাকি আছে 'আমি কে?' এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে একদিন তুমি তোমার ভিতরেই ঈশ্বরকে খুঁজে পাবে; বুঝতে পারবে তুমিই সে। তুমিই সেই পরাৎপর ব্রহ্ম অর্থাৎ শ্রেষ্ঠের শ্রেষ্ঠ সর্বশ্রেষ্ঠ ব্রহ্ম, পরমেশ্বর। রামকৃষ্ণ মঠের এক মহারাজের লেখা পড়ছিলাম ইশ্বর যে আছেন, ঈশ্বরের যে অস্তিত্ব আছে তার প্রমাণ হ'লো আমার অস্তিত্ব।
এখন প্রশ্ন হ'লো তাহ'লে ঠাকুর রামকৃষ্ণ কে? তিনি কি পরমাত্মা? তিনি কি পুরুষোত্তম? তিনি কি পরমপিতা? তিনি কি সদগুরু? তিনিই কি সৃষ্টিকর্তা? তিনি কি জীবন্ত ঈশ্বর? তাহ'লে আমি কে? আমি যদি ঈশ্বর হবো, ঈশ্বরের অস্তিত্ব হবো তাহ'লে প্রভু রামচন্দ্র থেকে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রই বা কে? কে দেবে উত্তর? বিবেকানন্দ প্রথম জীবনে যে কথা বলেছিলেন সেই কথা কি তিনি রামকৃষ্ণকে পাওয়ার পর শেষ জীবনেও বলেছিলেন? তিনি ঈশ্বরকে অনুভব না করা পর্যন্ত ঈশ্বরকে না বিশ্বাস করার কথা যে বলেছেন তা তিনি ঈশ্বরকে কিভাবে অনুভব করেছিলেন? তিনি কি ঠাকুর রামকৃষ্ণকে দেখে, ঠাকুরের সঙ্গ ক'রে ঠাকুর রামকৃষ্ণের মধ্যে ঈশ্বরকে খুঁজে পেয়েছিলেন, ঈশ্বরকে অনুভব করেছিলেন ও ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেছিলেন? নাকি বেদ, বেদান্ত পড়ে, নিজের মধ্যে ঈশ্বরকে খুঁজতে খুঁজতে একদিন নিজের ভেতরেই ঈশ্বরের সন্ধান পেয়েছিলেন? বিবেকানন্দ কি সনাতন ধর্ম তথা হিন্দু ধর্মের এবং বেদ-বেদান্তের প্রচার করেছিলেন? নাকি শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের প্রচার করেছিলেন? আমেরিকায় তিনি যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন সেখানে তিনি কোন বিষয়কে হাইলাইটস করেছিলেন? ঠাকুর রামকৃষ্ণ নাকি সনাতন ধর্ম বা হিন্দু ধর্ম? কেন মহারাজরা আজও বিবেকানন্দ আর বেদ-বেদান্তের কথায় ব'লে বেড়ান? কেন ধর্মজগতের ধর্মগুরুরা খালি নানা তাত্ত্বিক কথার প্যাচাল পাড়েন? কেন রামভক্ত, কৃষ্ণভক্ত, বুদ্ধ বা যীশুভক্ত, রসুল, মহাপ্রভু বা রামকৃষ্ণ ভক্তরা তাঁদের আরাধ্য দেবতার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী রূপের মধ্যে তাঁদের আরাধ্য দেবতাকে দেখতে পান না?
যাই-ই হোক আমার বেদ, বেদান্ত, পুরাণ, উপনিষদ ইত্যাদি গ্রন্থ পড়া হয়নি, পড়া হয়নি একটু আধটু পুরুষোত্তমদের মুখ নিঃসৃত কথামৃত ছাড়া আর কোনও ধর্মগ্রন্থ। আর পড়ার মতো ধৈর্য্যও নেই। আমি ভালো পাঠক, ভালো সাধক, ভক্তও নই। শুধু ভাবি আমার সামনে যখন এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা রক্তমাংসসংকুল জীবন্ত ঈশ্বর পুরুষোত্তম পরমপিতা পরমাত্মা সদগুরু শ্রীশ্রীরাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও The greatest phenomenon of the world SriSriThakur Anukulchandra আছেন তখন আমার কি আর দরকার বেদ, বেদান্ত ইত্যাদি পড়ার? কি দরকার নিজের ভেতরে ঈশ্বরকে খুঁজতে যাওয়ার? তিনারাই তো জীবন্ত বেদ, বেদান্ত, পুরাণ, উপনিষদ, গীতা, ত্রিপিটক, বাইবেল, কোরান, সত্যানুসরণ সহ তাঁর ২৫হাজার বাণী ও হাজারো প্রশ্ন উত্তর সহ কথোপকথন। তিনারাই তো জীবন্ত ঈশ্বর। তাঁদের উপস্থিতিই তো আমার কাছে জীবন্ত ঈশ্বর। তাঁদের মুখনিঃসৃত অমৃত কথা আমার জীবনে বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার এবং ঈশ্বরের উপস্থিতি, ঈশ্বরকে অনুভব করার সহজ সরল সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এক-অদ্বিতীয় উপায়। আমার মন, আমার প্রাণ, আমার হৃদয় বলে,
'রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপভু, রামকৃষ্ণ, অনুকূল রূপে
সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছো ঈশ্বর?
তাঁদের প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।
তাহ'লে কেন আমি কঠিন পথ অনুসরণ করবো? কেন আমি "মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন" সেই পথ অনুসরণ করবো না? কেন আমি জেনে শুনে পরিক্ষিত সত্য সেই সহজ সরল পথ ছেড়ে অজানা অদেখা কণ্টকাকীর্ণ দুর্গম পথ অকারণ বেছে নেব? কেন আমি রামচন্দ্র থেকে ঠাকুর অনুকূল পর্যন্ত জীবন্ত ঈশ্বরকে আট আটবার কাছে পেয়েও বনে জংগলে, পাহাড়ে পর্বতে, হাজারো দেবদেবী, ধর্মগুরু ও ধর্মগ্রন্থের মধ্যে, আমার নিজের অন্তরে বেমতলব খুঁজতে যাবো!?
ঈশ্বর কোথায়? ঈশ্বর কে? এই প্রশ্নের উত্তরে যখন ঈশ্বর ভক্ত পূজারি বলে, ঈশ্বর তোমার অন্তরে। অন্তরে তাঁকে খোঁজ। আর প্রশ্ন করো নিজেকে 'আমি কে? আমি কে?' তখন মন-প্রাণ-হৃদয় বিদ্রোহী হ'য়ে বলে ওঠে, ধ্যাৎ তোর অন্তর আর অন্তরে খোঁজা। গুলি মেরেছে 'আমি কে? আমি কে? জানা।
আমি বোকা, আমি মূর্খ, আমি অশিক্ষিত, আমি হাবলা-ক্যাবলা তাই আমি আর ঈশ্বরকে খুঁজতে মন্দির, মসজিদ, গীর্জা ইত্যাদি কোথাও যাই না। নিজের অন্তরে ও কোনও ধর্মগ্রন্থের মধ্যে ঈশ্বরকে খুঁজতে যাই না, জানতেও চাই না ও যাইও না 'আমি কে?'। কোথাও গিয়ে ও নিজেকে জানতে চেয়ে এই অল্প ক'দিনের জন্য আসা পৃথিবীতে সময় নষ্ট করতে চাই না। কারণ আমি হাজার বছর বাঁঁচবো না যে সময় নষ্ট করবো।
আমি পেয়েছি, আমি জেনেছি আমার প্রিয়পরম ঈশ্বরকে। আমার জীবন সার্থক।
-----প্রবি।
No comments:
Post a Comment