Powered By Blogger

Sunday, December 4, 2022

আহ্বানঃ হে আমার প্রিয়জন,

(একটু কষ্ট ক'রে পড়ার অনুরোধ রইলো বাবা-মায়েদের কাছে)

একমুহুর্ত আর সময় নষ্ট ক'রো না। ভবিষ্যত সময় ভয়ঙ্কর! সমাজের সমস্ত নেতৃবৃন্দ, সমাজের এলিট সম্প্রদায়, সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত ও অর্থবলে বলীয়ান মানুষ নিজেদের ভবিষ্যত ও সন্তানদের ভবিষ্যত গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত। নিজেদের দায় ছাড়া সমাজের প্রতি, সমাজের সাধারণ মানুষের প্রতি কোনও দায়, কারও প্রতি কোনও দায় তাদের কারও নেই। ভাঁড় মে যায় সমাজ, সভ্যতা, দেশ, দেশের আর্থিক ব্যবস্থা, শিক্ষা-শিল্প-ক্রীড়া ব্যবস্থা, আইন ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদি সব ব্যবস্থা। নিজের আখের গুছিয়ে নাও এই দর্শনে এরা বিশ্বাসী সবাই।

এ অবস্থায় তুমি অসহায়, তোমার সন্তান ভবিষ্যত কঠিন ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে। তুমিও বাঁচবে না, তোমার সন্তানকেও চারপাশের নোংরা পরিবেশ থেকে বাঁচাতে পারবে না। ভবিষ্যত চারপাশের অস্থির পরিবেশে পাগল হ'য়ে যাবে তোমার শিশু। ভবিষ্যতে মৌমাছির মতো মৌ মানুষ হওয়ার পরিবর্তে গু'য়ে মাছির মতো গু'য়ে মানুষ হ'য়ে ঘরে ফিরে আসবে। সমাজের সমস্ত নোংরা ঘরে নিয়ে আসবে। সাবধান! ঘুমিয়ে থেকো না, উদাসীন থেকো না। তুমি ভালোমতোই জানো তোমার চারপাশে পরিবেশ, পরিস্থিতি কি। যদি বিয়ে ক'রে না থাকো তবে তোমার যদি ইচ্ছা হয় তবে তোমার জীবন নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করো কিছু বলার নেই। আর যদি সংসার জীবনে প্রবেশ ক'রে থাকো, স্বামী, স্ত্রী, পুত্র থেকে থাকে আর পুত্র কন্যার ভবিষ্যতের জন্য একটুও কান্না থেকে থাকে তোমার বুকের মধ্যে তবে থমকে একটু দাঁড়াও। সব ভুলে যাও। নিজেকে পাল্টাও। সন্তানের জন্য, স্ত্রীর জন্য, স্বামীর জন্য সর্বোপরি তোমার ভবিষ্যত নিশ্চিন্ত জীবনের জন্য এক ও একমাত্র ভরসা, আশ্রয়স্থল ঠাকুরের দিকে মুখ ফেরাও। ফুল বেলপাতা ধুপ ধুনো দিয়ে চরণপুজা ভুলে যাও। নিজের ও তোমার সংসারে তোমার স্ত্রী, তোমার শিশু সন্তান প্রিয়জনের জীবনে ঠাকুরকে অভিভাবকের আসনে বসাও। তাঁর চরণপুজার পরিবর্তে তাঁর চলনপুজা করো ও তোমার শিশু সন্তানকে এখন থেকেই চলনপুজায় অভ্যস্ত করাও। জীবনে আদর্শ ধরিয়ে দাও। রক্তমাংস সংকুল জীবন্ত ঈশ্বর সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ। তাঁর চরণে সন্তানকে বসাও। শ্রীশ্রীঠাকুর বলেন, "সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ যার উন্নতি হয় অবাধ তার।" আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার কথা স্মরণ করো আর চোখের জলে নিজেকে ভাসিয়ে সন্তানকে বলো, "আমারও অনেক ভুল হয়, তোরও ভুল হয় বাবা। সংসারে ঐ একমাত্র নির্ভুল মানুষ ঠাকুর। আমি তোর অভিভাবক নই। আমারও অভিভাবক, তোরও অভিভাবক দু'জনের অভিভাবক ঐ ঠাকুর।"

শোনো আমার প্রিয়জন, শোনো সন্তানের বাবা-মা!
ঠাকুরকে, ঠাকুরের বিধানকে জীবনে প্রধান ক'রে নাও। আর কিচ্ছু করতে হবে না। শুধু সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই পারলে অতি প্রত্যুষে প্রথমে নিজে কিছু খাওয়ার আগেই ইষ্টভৃতি করো অর্থাৎ তোমার ইষ্ট অর্থাৎ মঙ্গলকে ভরণ করো অর্থাৎ তাঁকে খেতে দাও। তুমি যা পারো তাই তাঁকে দাও। সন্তানকে পাশে বসিয়ে নিজের হাতে ইষ্টভৃতি করাও। উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে মনে মনে শুধু নাম করো ও সন্তানকে নাম করা শেখাও যে নাম পেয়েছো দীক্ষার সময়। নাম করার ও করাবার অভ্যাস করো ও করাও। ভুলে গেলে মনে পড়লেই করো। 'স্বতঃ অনুজ্ঞা' পাঠ করো ও করাও। স্বতঃ অনুজ্ঞা জানো তো? দীক্ষা নেবার সময় দীক্ষার কাগজে লেখা আছে 'স্বতঃ অনুজ্ঞা'। না জানলে দীক্ষিত কারো কাছ থেকে লেখা কাগজ চেয়ে নিও। আর না পেলে আমাকে ব'লো আমি লিখে দেবো কমেন্টের ঘরে। নিজে প্রতিদিন ভালোবেসে আগ্রহ সহকারে ইষ্টভৃতি করার আগে এবং যখনি সময় পাবে তখন অর্থ বুঝে 'স্বতঃ অনুজ্ঞা' পাঠ করলে, আবৃত্তি করলে দেখবে নিজের অজান্তে একদিন নিজের ভিতরে একটা শক্তি অনুভব করবে আর চরিত্র গড়ে যাবে।
বিশেষ ক'রে ছোটোবেলা থেকে শিশু যদি পাঠ করে 'স্বতঃ অনুজ্ঞা' তাহ'লে আর চিন্তা নেই শিশুর ভবিষ্যত জীবন, ভবিষ্যত চরিত্র গঠন নিয়ে। এক্কেবারে মোক্ষম জীবন তৈরী হ'য়ে যাবে তোমার ও তোমার সন্তানের। সমাজের কোনও শক্তি নেই তোমাকে, তোমার সন্তানকে বিপথে, ভুল পথে চালিত করে। এখন মোবাইলের যুগ, নেটের যুগ। কিছু পারো আর না পারো সকাল হ'লেই ঘরে নেটে চালিয়ে দাও ভোরের প্রার্থনা। আবার বিকেল বেলা চালিয়ে দাও বিকেলের প্রার্থনা। ছুটির দিনে অবশ্য অবশ্যই বাজুক ঠাকুরের প্রার্থনা, ঠাকুরের সুন্দর সুন্দর নোতুন নোতুন গান। বাজুক শ্রীশ্রীদাদার লেখা, আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার লেখা, শ্রীশ্রীঅবিনদাদার লেখা ও ঠাকুরবাড়ির শ্রদ্ধেয় অন্যান্য দাদাদের লেখা দুর্দান্ত দুর্দান্ত সব গান। সময় পেলেই অবসর সময়ে অন্য কিছু মোবাইলে না দেখে সবাই মিলে চা টিফিন খেতে খেতে আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার ভাষণগুলি শোনো। মন দিয়ে একটু ধৈর্য নিয়ে একটু কষ্ট ক'রে শোনো। নির্ঘাত ফল পাবে; গ্যারান্টি। পৃথিবীর কোথাও গেলে ঘরে বসে এমন বিপাক পথে হাত ধ'রে জীবনে চলার কায়দা ফোকটে পাবে না। তাই উদাসীন থেকো না, অবজ্ঞা অবহেলা ক'রো না শিশুর জীবন নিয়ে। তোমরা বাবা-মা ছাড়া এমন আপন, এমন বিশ্বাসযোগ্য, নির্ভরযোগ্য আশ্রয় শিশুর আর কেউ নেই এই বিশ্ব দুনিয়ায়।

আর, সময় পেলেই একটু ঠাকুরের কাছে বসো; ঠাকুরের সঙ্গে কথা বলো কারণ ঠাকুর যে তোমার ঘরের অভিভাবক। যখনি যা খাবে তাঁকে নিবেদন ক'রে খাও। যেখানেই যাবে তাঁকে ব'লে যাও। যেখানেই সবাই মিলে ঘুরতে যাবে তাঁকে সঙ্গে ক'রে নিয়ে যাও কারণ তাঁরও বেড়াতে যেতে ইচ্ছা করে তোমাদের সঙ্গে। কি ক'রে নিয়ে যাবে? মনে মনে মাথায় ক'রে নিয়ে যাবে তাঁর দেওয়া বীজনাম। জেনে রাখো, নাম আর নামী অভেদ। ব্যস্ দেখবে শয়তানের বাবার ক্ষমতা হবে না তোমাকে, তোমার পরিবারকে স্পর্শ করার, মুখ তুলে তাকাবার। তাঁকে তোমাদের সকলের মাঝে জীবন্ত রাখো।

হে আমার প্রিয়জন। দেখবে তাঁর দয়ায় অর্থ, মান, যশ ইত্যাদি সব না চাইতেই পাবে। ভুতের মতো কে যেন তোমাকে যুগিয়ে দেবে সব তোমার প্রয়োজনের সময়ে। বিশ্বাস করো আমার কথা। সন্তানের ভবিষ্যত উন্নত সুন্দর নিষ্কণ্টক বিপদমুক্ত জীবন দেখে তোমার চোখ জলে ভরে যাবে। শেষ বয়সে উপলব্ধি হবে দয়ালের উপস্থিতি। 

No comments:

Post a Comment