Powered By Blogger

Friday, December 30, 2022

প্রবন্ধঃ মিলনের আবেদন ও বাস্তব।

একটা লেখা পড়লাম। ভালো লাগল। ভাঙ্গনের যাবতীয় কারণ নিয়ে যে বিতর্ক তৈরী হয়েছিল আজ থেকে ৫৪বছর আগে সেই সমস্ত যাবতীয় বিতর্ক একপাশে সরিয়ে রেখে মিলনের জন্য আকুল আবেদন।

লেখাটার মধ্যে মিলনের একটা সহজ সরল ভাব, আকুতি ও আবেগ লক্ষ্য করলাম। ভাবলাম ভাব, আকুতি ও আবেগ ভাল কিন্তু ভেসে যাওয়া ভাল নয়। মিলনের উদ্যোগ কে নেয়? কার নেওয়া উচিত? ভাঙ্গনকারীকেই উদ্যোগ নিতে হয় জোড়া লাগাবার জন্য। তাই না?
তাই ভাঙ্গন ধরাবার আগে সতর্ক থাকতে হয়। কথায় আছে বলার আগে ও করার আগে ভেবে ব'লো ও ক'রো। ভাবিয়া বলিও বা করিও কথা বা কাজ, বলিয়া বা করিয়া আর ভাবিও না। আগুন জ্বালানো সহজ কিন্তু দাবানলের সৃষ্টি হ'লে তা নেভানো কঠিন। তখন সুযোগসন্ধানীরা সেই সুযোগ নেয়। এই অস্থির সময়ে বন্ধু সেজে ঢূকে পড়ে অন্দরমহলে আর ভেতরে ভেতরে খোকলা ক'রে দেয় অন্তরমহল। কান দিয়ে ঢুকে একেবারে খাদ্যনালীতে পৌঁছে গিয়ে বিষ ঢেলে বিষাক্ত ক'রে নষ্ট ক'রে দেয় পেটের যাবতীয় কলকব্জা। হজম শক্তি নিঃশেষ ক'রে দেয় চিরতরে। অন্দরমহলে ঢুকে গিয়ে জ্বালানি ছড়িয়ে দেয় সর্বত্র যাতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে সহজেই। তাই সতর্ক থাকতে হয় প্রতিদিন প্রতিরাত প্রতিক্ষণে শয়নে-স্বপনে-জাগরণে।

এবার প্রশ্ন,
বিতর্কিত বিষয় গুলি কি ক'রে সরিয়ে রেখে একসঙ্গে কাজ করবো? বিতর্কিত বিষয় সরিয়ে রেখে শিয়া সুন্নি, মহাযান হিনযান, ক্যাথলিক প্রোটেষ্ট্যান্ট ইত্যাদি মতাবলম্বীরা একসঙ্গে কাজ করতে পেরেছে বা পারছে? দু'টো মাথা দুটো মত একসঙ্গে কাজ করবে কি ক'রে? কে কার মতকে সরিয়ে রেখে কে কার মতকে নিয়ে কাজ করবে? মত মাথাতে তো এক হ'তে হবে কাজ করতে গেলে তাই নয় কি? শ্রীশ্রীঠাকুর কি বললেন,
"মত মাথাতে একই হ'য়ে দু'টি লোকও ইষ্টনেশায়
চলে যদি দক্ষ তালে রুখবে কে তায় ভরদুনিয়ায়?

এখানে কোন মত, কার মতকে সামনে রেখে দু'টি লোক এক হবে?
শ্রীশ্রীঠাকুর আবার বললেন,
এক আদেশে চলে যারা
তাদের নিয়ে সমাজ গড়া।

এখানে দু'টো, তিনটে দলের সমষ্টি লোকজন কোন দলের কার আদেশ মেনে নেবে? তিনটে দলের মধ্যে আদেশ দানের ক্ষেত্রে কে প্রধান হবে?

আবার শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন,
আদর্শকে ঘায়েল ক'রে চুক্তি রফায় বাধতে দল
যতই যাবি পড়বি ঘোরে হাতে হাতেই দেখবি ফল।
এখানে তিনটে দলের প্রত্যেকেই মনে করে তাদের একটা আদর্শ আছে। একটা আদর্শকে মাথায় নিয়ে তারা চলছে। কিসের উদ্দেশ্যে চুক্তি রফার ভিত্তিতে তারা দল বাধবে? দল বাধতে গেলেই আদর্শ ঘায়েল হবে না? আর এর ফলে কি হবে তা তো শ্রীশ্রীঠাকুর আগাম বলেই দিয়েছেন তবুও দল বাধতে কেন যাবে?

যাই হ'ক কেউ বৃহত্তর স্বার্থে স্বপ্ন দেখতেই পারে। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝে শত যোজন দূর। বাস্তব বড় কঠিন। তার ওপর যখন এক তরফ থেকে অন্য তরফের প্রতি বিরামহীন মিথ্যা ও কুৎসা প্রচার এবংগালাগালি, নিন্দা, অপমান, অশ্রদ্ধা প্রদর্শন চলতেই থাকে তখন এইসমস্ত অসার স্বপ্ন দর্শন আর মুঠো ক'রে বালি ধ'রে রাখা সমার্থক।
তাই অসহায় আমি বলি, যাদের ঠাকুরের কৃষ্টিকে নিখুঁত আচরণে বহন ক'রে নিয়ে যাবার কথা ছিল, ছিল প্রধান ভূমিকা তারা যখন বহন করতে ব্যর্থ হয়েছে তখন ঠাকুরের বাণী," বিচারের ভার, শাস্তির ভার আপন হাতে নিতে যেও না; অন্তরের সহিত পরমপিতার ওপর ন্যস্ত করো, ভাল হবে।

আর, শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী
"তুমি সত্যে অবস্থান কর, অন্যায়কে সহ্য ক'রতে চেষ্টা কর, প্রতিরোধ ক'রো না, শীঘ্রই পরম মঙ্গলের অধিকারী হবে"

আমৃত্যু অনুসরণ ক'রে চলতে চাই এই বাণী। শ্রীশ্রীবড়দা তাঁর নিজের ওপর প্রিয়জনদের কাছ থেকে ক্রমাগত হ'য়ে চলা অনেক সীমাহীন অন্যায় সহ্য করেছেন মুখ বুজে, কোনওদিন প্রতিরোধ করেননি, টুঁ শব্দট পর্যন্ত করেননি। ধ্যানস্থ থেকেছেন ঠাকুরের ইচ্ছাপূরণে, ঠাকুরের সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ'-কে চোখের মণির মতো অতন্দ্র প্রহরী সেজে রক্ষা করতে। তিনি আজ আর আমাদের মাঝে স্থুল শরীরে নেই। কিন্তু রেখে গেছেন মুখ বুজে সমস্ত সহ্য ক'রে প্রতিকূল পরিস্থিতি পরিবেশে মাথা ঠান্ডা রেখে ধীর স্থির হ'য়ে শান্ত চিত্তে দৃঢ পদক্ষেপে মাথা উঁচু ক'রে অজুর্নের মতো নিখুঁত লক্ষ্যে ধ্যনস্থ হ'য়ে অবিচল ভাবে ঠাকুরের ইচ্ছাপূরণে এগিয়ে যাওয়ার এক অভুতপূর্ব আচরণসিদ্ধ শিক্ষার নমুনা! সেই একই শিক্ষার উত্তরসূরি হ'য়ে শ্রীদাদাও মুখ বুঝে চিরদিন আমৃত্যু তাঁর বিরুদ্ধে হ'য়ে চলা সীমাহীন জঘন্য প্রচার, কুৎসা, গালাগালি, নিন্দা, অপমান, অশ্রদ্ধা সব সহ্য ক'রে আমাদের কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেছেন। তবুও কুৎসাকারীদের প্রতি একটাও শব্দ খরচ করেননি। অকারণ একবুক যন্ত্রণা নিয়ে এ পৃথিবী থেকে চলে গেছেন নিজের কাজ ক'রে নীরবে, নিঃশব্দে হাসি মুখে আনন্দকে সাথী ক'রে পরমপিতার ওপর সব কিছু ন্যস্ত ক'রে দিয়ে।

আর আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি শান্ত, ধীর, স্থির বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদাকে। তিনি আমাকে একবার বলেছিলেন, "শ্রীশ্রীঠাকুরকে যখন চিরকাল নাজেহাল হ'তে হয়েছে আর আমরা তাঁর সন্তান হ'য়ে নাজেহাল হবো না?

কি সহজ সরল অকপট উক্তি!!!!! জয়গুরু।
প্রবি।
( লেখা ২৮শে ডিসেম্বর'২০২২)

No comments:

Post a Comment