Powered By Blogger

Thursday, December 29, 2022

অভিজ্ঞতাঃ তুমি শুধু প্রভুর জন্য!-১

You are for the Lord
Not for others
You are for the Lord
And so for others.
এই বাণী কার? পরম প্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের। এই বাণীর অর্থ কি?
এই বাণীর অর্থ:
তুমি একমাত্র প্রভুর জন্য অন্য কারো জন্য নও,
তুমি একমাত্র প্রভুর জন্য বলেই তুমি সবার জন্য।
এখন প্রশ্ন জাগে মনে,
আমি কার দীক্ষা নিয়েছি? আমার আরাধ্য দেবতা কে? কে আমার প্রভু?
মন বলে, আমি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র প্রদত্ত সৎ নামে দীক্ষা নিয়েছি। আমার আরাধ্য দেবতা এক ও একমাত্র শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আর তিনিই আমার প্রভু।
আচ্ছা সেই যে কোন ছোটবেলায় ৫বছর বয়সে নাম আর ১২বছর বয়সে পূর্ণ দীক্ষা হয়েছিল তা এই এত বছর ধ'রে কত ঘটনা প্রবাহের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে জীবন কি এই বাণীর মর্মার্থ অনুধাবন করতে পেরেছে? এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত মন নিজের কাছে নিজে নানা সময়ে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে ও হ'য়ে চলেছে! এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে স্বাভাবিকভাবেই আরও একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হয় আমার ভিতরের আমি!
আমার ভিতরে যে আরও একটা আমি আছে অর্থাৎ যাকে বলি বিবেক সেই বিবেক আমাকে চাঁছাছোলা নির্দয়ভাবে জিজ্ঞেস করে, আরে বয়স তো অনেক হ'লো! জীবনসূর্য পাট-এ যেতে বসেছে! উপরিউক্ত বাণীর মর্মার্থ বোঝার আগে বলো দেখি হে ঠাকুরভক্ত! দীক্ষা নিয়েছো মানে কি?
আমতা আমতা ক'রে বললাম, দীক্ষা নিয়েছি মানে জীবনে সফল ও বড় হওয়ার জন্য দক্ষ হওয়ার প্রয়োজন আছে আর সেই সফলতার সিঁড়ি বেয়ে ক্রমশঃ উচ্চ থেকে উচ্চতর স্তর পেরিয়ে উচ্চতম অবস্থায় পৌঁছবার জন্য নিখুঁত অসীম দক্ষতা লাভের প্রয়োজন আর সেই প্রয়োজনকে বাস্তবায়িত করার জন্য একটা সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়মকে, একটা নীতিকে জীবনে গ্রহণ করেছি। আর সেই নিয়ম বা নীতি একটা সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষকে ঘিরে আবর্তিত হ'য়ে চলেছে! সেই সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটিই আমার জীবনে জীবন্ত সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ! আমি সেই মানুষটির চরণে নিজেকে সঁপে দিয়েছি তাঁর চলনপূজায় মগ্ন হবো ব'লে। আমার ভালোবাসার উৎস সেই মানুষটির নাম বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র! আমার অস্তিত্বকে রক্ষা করা ও সুন্দর ক্রমবৃদ্ধির পথে চালিত করার নামই দীক্ষা গ্রহণ বা নিয়মনীতি গ্রহণ ও পালন!
মনের মধ্যে যেন কথার তুফান উঠেছে! আপন মনে কে যেন ব'লে চলেছে, দীক্ষা নেওয়ার কথায় মানুষের কোথায় যেন ইগোতে বাধে, বকোয়াস কুসংস্কার ব'লে বোধ হয়। অথচ এই অতি বোদ্ধারাই দিন শেষে গিয়ে গুরুর বদলে গরুর ল্যাজ ধ'রে বৈতরণী পার হ'তে চায়! আবার ইয়ং পড়াশুনাজানা ভালো ভালো ছেলেমেয়েরা সমাজ কো বদল ডালোর নামে নানা মনভোলানো ভুল অসম্পূর্ণ চটজলদি সমাধানের সস্তা রঙিন স্বপ্ন দেখানো মতবাদে ভরপুর রাজনৈতিক দলের সদস্য হ'তে দ্বিধা করে না! সেখানে উচ্শৃঙ্খল বিশৃঙ্খল জীবন বিধ্বংসী মারণ নেশায় মেতে ওঠার জন্য নাম লেখাতে মরিয়া হ'য়ে ওঠে! সেখানে রাজনৈতিক গুরুর জীবন কতটা সুন্দর, কতটা সুশৃঙ্খল, কতটা জ্ঞানে সমৃদ্ধ, কতটা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন জীবনের অধিকারী, কতটা সৎ, কতটা বৃত্তিপ্রবৃত্তির অধীশ্বর, কতটা প্রেমময়-ভালোবাসাময় জীবনের অধিকারী ইত্যাদি সেসব দেখার ধার ধারে না। এটাই অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের নিয়তি, ভাগ্যের পরিহাস! তারা এতটাই মানবতার জয়গানে মাতাল যে প্রকৃত মানবতার গান তারা শুনতে পায় না, দেখতে পায় না প্রকৃত মানবতার পূজারী মানুষরূপী জীবন্ত ঈশ্বরকে! কারণ তাদের কাছে ঈশ্বর শব্দটাই এলার্জি! অথচ এরাই আবার গঙ্গা জলে স্নান ক'রে 'মা মা ব'লে, বাবা বাবা' ব'লে কপালে সিঁদুর লেপে কারণসুধা সহযোগে ঈশ্বরের নামে চোখের জল ফেলে, কুম্ভীরাশ্রু! এরাই আবার যৌবনে বা যৌবন শেষে তাবিজ-মাদুলি, লালনীল সুতো, শেকড় বাকর, তুকতাক, ঝাড়ফুঁক ইত্যাদি নির্ভর হ'য়ে বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে দিনের শেষে যন্ত্রণাময় সংসার জীবন কাটায়। এরা বিপদতারিণীর পূজা ক'রে নিজের জীবনের হাজারো ভুল থেকে উদ্ভূত বিপদকে জীবন থেকে সংসার থেকে তাড়াতে চায়! এরা জীবনে রিপুতাড়িত হ'য়ে বৃত্তি-প্রবৃত্তির রসে ডুবে থাকা উচ্শৃঙ্খল-বিশৃঙ্খল জীবনের অধিকারী হ'য়ে রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে যখনই যেখানে বিপদে পড়ে সেখানেই ভাবে ঈশ্বরকে স্মরণ করলেই ঈশ্বর আমার বাপের চাকর হ'য়ে তৎক্ষণাৎ তড়িঘড়ি ছুটে আসবে কোলে তুলে নিতে! এটাই এদের বিশ্বাস! এটাই এদের ঘরের সংস্কার! এটাই এদের জীবনের সংস্কৃতি! এইভাবেই এরা স্বামীস্ত্রী পুত্রকন্যা বাঁচেবাড়ে, বাঁচতে চায়, বাড়তে চায়!
আচ্ছা এরজন্যে ধর্মীয় গুরু বা আধ্যাত্মিক জগতের মানুষেরা কি দায়ী নয়? ভন্ড কপট ধর্মব্যবসায়ী ধর্মীয় গুরু বা আধ্যাত্মিক জগতের মানুষদের নিয়ে শব্দ খরচ ও সময় খরচ করার মত সেই পর্যাপ্ত সময় ও এনার্জি আর আমার নেই। একটুকুও যা সময় ও এনার্জি অবশিষ্ট আছে তাতে বলতে পারি আমি ঈশ্বরবিশ্বাসী ঈশ্বরপ্রেমী ভক্ত ঈশ্বরের সাম্রাজ্য সৃষ্টির সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক! সবচেয়ে বড় বেঈমান! সবচেয়ে বড় নেমখারাম! অকৃতজ্ঞ! আমিই ঈশ্বরের সবচেয়ে বড় প্রেমিক, বড় পূজারী, বড় ভক্ত ঈশ্বরের বারবার মানুষ রূপে মানুষের মাঝে আসাকে নানা ধর্মীয় রীতিনীতি ও কথার কূটকচালির মধ্যে গুলিয়ে দিয়েছি যাতে মানুষ ঈশ্বরের জীবন্ত রূপকে চিনতে না পারে আর চিনলেও তাঁর বিভিন্নরূপ নিয়ে বা একই রূপের মাঝে বিকৃত-অবিকৃত পরিবেশনের ধুয়ো তুলে বহুধা বিভক্ত হ'য়ে যায়! এর থেকে অনেক বেশি স্বচ্ছ পবিত্র ঈশ্বর অবিশ্বাসী নাস্তিক, এমনকি ভন্ড কপট ধর্ম জগতের তামাম ভক্তকূল! আমি, হ্যাঁ আমি পাক্কা একটা ধর্ম জগতের আস্ত ধর্মীয় আধ্যাত্মিক বরাহনন্দন!
যাই-ই হ'ক, মনের মধ্যে অনেক কথার তুফান ওঠে ও উঠবে আর সেই তুফানে আলোচনার পথ মেইন লাইন ছেড়ে কর্ড লাইনে যাতে চলে না যায় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। সেই সতর্কতার সিগন্যালস্বরূপ আবার ফিরে আসি যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম সেই আলোচনায়।
আমার ঠাকুর, আমার প্রিয়পরম, আমার এক ও একমাত্র ইস্টদেবতা, আমার গুরু, আমার জীবন্ত ঈশ্বর, আমার ভগবান, গড বা আল্লা বা সৃষ্টিকর্তা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আমায় বললেন,
তুমি একমাত্র ঈশ্বরের জন্যে, অন্য কারও জন্যে নও
আর তুমি ঈশ্বরের জন্যে বলেই তুমি সকলের জন্যে।
এখন এখান থেকে আমি কি শিখলাম? আমি কি কিছু শিখেছি? সেই যে কত ছোটবেলায় ঠাকুর নির্দেশিত সময়ে নাম ও দীক্ষা প্রাপ্ত হয়েছি আজ জীবন সায়াহ্নে এসে এই বাণী সম্বন্ধে কিছু কি উপলব্ধি হয়েছে বা অভিজ্ঞতা লাভ করেছি?
এই বাণীর প্রতিটি শব্দ আর লাইন ধ'রে ধ'রে যদি আমি এগিয়ে যায় বা বিশ্লেষণ করি তাহ'লে কি দেখতে পাবো? আসুন পরবর্তী 'তুমি শুধু ঈশ্বরের জন্য-২' আর্টিকেলের আয়নায় নিজের মুখ দেখি! দেখি কতটা নির্মল নাকি মলপূর্ণ মুখ!
ক্রমশঃ।
( লেখা ১৩ই অক্টোবর'২০২০ )

No comments:

Post a Comment