Powered By Blogger

Monday, December 5, 2022

আমার দয়াল ঠাকুর ও আমার আচার্যদেব। (১)

এই যে আমি প্রায় বিপদ সীমার শেষ প্রান্ত থেকে ফিরে এলাম এই ফিরে আসা কি ক'রে সম্ভব হ'লো!? কে ফিরিয়ে আনলো? ডাক্তার? ওষুধ? ঠাকুর না আচার্যদেব? এর উত্তর দেওয়ার আগে দেখে নিই বিপদটা কি ছিল আমার?

আমার অন্যান্য বিপদের কথা এখানে আলোচনা ক'রে লেখাকে দীর্ঘ করতে চাই না। শুধু রোগ নিয়ে যে বিপদের মুখোমুখি হয়েছিলাম সেই রোগ সংক্রান্ত বিপদ্গুলির কথায় শুধু বলবো এখানে এই প্রবন্ধে।
তার আগে ব'লে রাখি জাগতিক জীবনে আমার শ্রীবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সেই ছোটো থেকে আজ পর্যন্ত কোনও সুখই আমাকে রাঙাতে পারেনি। জীবন জুড়ে ছোটোকে বড় আর বড়কে আরো বড় করার ঠাকুর দর্শনে বিশ্বাসী আমি শুধু বাড়ির খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো অন্যের মই হ'য়েই বেঁচে আছি আজ পর্যন্ত।
সালটা সম্ভবত ২০১৫ হবে। বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেব তখন দর্শন দিতেন শ্রীশ্রীবড়দার বাড়ি যাওয়ার পথে ঠাকুর বাংলো থেকে বেরিয়েই পাশে যে গেট সেই গেটের ভিতরের বিশাল যে ফাঁকা জায়গা সেইখানে নির্দিষ্ট বসার জায়গায় এবং আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদার নির্দেশেই তাঁকে নিবেদন করার পরিবর্তে বর্তমান আচার্যদেবকে সব নিবেদন করা হত সেই সময়।
সেইসময় কোনও একদিন সকালে শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে আমার স্ত্রী আমার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা প্রসঙ্গে বলেছিল, "আমি অন্যের মই হয়েই কাটিয়ে দিয়েছি আমার রাজনৈতিক সারাটা জীবন। মই হিসেবে সবাই ব্যবহার করে আর কাজ মিটে গেলে কেউ খোঁজ রাখে না।" এ কথার উত্তরে সেদিন আচার্যদেব রাজনীতির সঙ্গে আর যুক্ত না থাকার কথা আমায় বলেছিলেন। বলেছিলেন পুরো সময়টায় ঠাকুরের কাজে যুক্ত থাকতে। আর হাসতে হাসতে বলেছিলেন, "রঙ করেন কেন? রঙ করবেন না। সাদা চুল আর দাঁড়ি দেখে আপনাকে কেউ আর ডাকবে না নতুবা আপনার মুক্তি নেই।" চারপাশে একটা হাসির রোল উঠেছিল।
অনেকদিন পর বেশ ভালো লাগছিল, নিজেকে হালকা বোধ হচ্ছিলো সেই মুহুর্ত থেকে। মুহূর্তে যেন একটা বিরাট অসহ্য চাপ নেবে গেল মাথা থেকে। যে চাপ কোনও ডাক্তার, কোনও ওষুধ, কোনও জাগতিক সুখ এতদিন নাবাতে পারেনি। একটা পাহাড় হ'য়ে চেপে বসেছিল মাথার ওপর। সেদিন বেশ ফুরফুরে পাখির পালকের মতো হালকা বোধ হচ্ছিলো শরীরটা সেই মধুময় আলোময় রূপময় সকালে। অনুভব করলাম একটা দিব্য জ্যোতি যেন সেই দেবোপম শরীর থেকে বিচ্ছুরিত হ'য়ে আমাকে স্নান করিয়ে দিচ্ছে! আমি তৃপ্ত হলাম, শান্ত হলাম। তখন আমি তাঁকে হাত জোড় ক'রে প্রণাম ক'রে বললাম, 'আজ্ঞে তাই হবে। আর আজ থেকে নিজের মই নিজে হলাম।'
তখন তিনি শ্রদ্ধেয় শান্তিদাকে ডেকে কিছু নির্দেশ দিয়ে দিলেন আমার জন্য। প্রণাম ক'রে উঠে এলাম সেখান থেকে। সেই থেকে শ্রদ্ধেয় শান্তিদার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা।
প্রথমে স্ত্রীর উপর বিরক্ত হ'লেও পরে বুঝেছিলাম আচার্যদেবকে বলা আমার সম্পর্কে স্ত্রীর সেই কথার আল্টিমেট উপকারিতা। সেই শুরু হ'লো মানসিক নিরাময় প্রক্রিয়া! আমি ধীরেধীরে সম্পূর্ণ রূপে মসৃণ ভাবে রাজনীতি থেকে মুক্ত ক'রে নিলাম নিজেকে। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে কোনও জটিলতার সৃষ্টি হ'লো না, সৃষ্টি হ'লো না কোনও টানাপোড়েন, হ'লো না কারও সঙ্গে কোনও বিরোধ, মনোমালিন্য। এখনও পুরোনো সবার সঙ্গে সুন্দর মসৃণ সম্পর্ক আমার!
এখানে অলৌকিক রহস্য কোথায় জানি না। তবে দীর্ঘদিন পরে নিজেকে স্বাভাবিক ও হালকা বোধ হ'লো। এটাকে কি বলবো? মানসিক চিকিৎসা? জানি না। তবে তিনি যে বাকসিদ্ধ পুরুষ এবং তাঁর সাক্ষাৎ দর্শন, সঙ্গলাভ, পরামর্শ, উপদেশ, নির্দেশ গ্রহণ ও পালন সমস্যা সমাধানের ও মুক্তির উপায় তা বাস্তবভাবে অনুভূত হ'ওয়া শুরু হ'লো।
কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম পরবর্তী সময়ে, অন্যের মই হওয়া যত সহজ ও সম্ভব নিজের মই নিজে হওয়া ততটাই কঠিন ও অসম্ভব। কখনো কখনো মনে হয় অবাস্তবও!! এখানে দয়ালের দয়া, আচার্যদেবের প্রত্যক্ষ আশীর্বাদ, পরামর্শ ছাড়া নিজের মই নিজে হওয়া এবং সমস্ত রকম কঠিন ভয়ংকর সমস্যা, রোগ এমনকি নিশ্চিত মৃত্যু থেকে মুক্ত হওয়া একপ্রকার অসম্ভব। দয়ালের উপর বকলমা দিয়ে নিজের মই নিজে কি ক'রে হ'তে হয় আর বকলমাই বা কি ক'রে দিতে হয় তার আচার আচরণ স্বয়ং আচার্যদেব শিখিয়ে দেন। তাই তিনি আমার ও আমাদের আচার্যদেব।
ক্রমশঃ
( রচনা ২৭শে নভেম্বর)

No comments:

Post a Comment