Powered By Blogger

Saturday, December 31, 2022

আচার্যদেবের পবিত্র দীক্ষাদান কর্মসূচি

শ্রদ্ধেয় ইষ্টপ্রাণ দাদা ও ভক্তিমতি মায়েরা ।

( যদিও লেখাটা বড় তবুও অনুরোধ রইলো লেখাটা কষ্ট ক'রে পড়ার জন্য। বিশেষ একটা বিষয় নিয়ে বাংলার সৎসঙ্গীদের উদ্দেশ্যে লেখা। নোতুন বছরের শুরুতেই তাই লেখাটা পোষ্ট করলাম গুরুভাইবোনেদের উদ্দেশ্যে)

একটা খবর জানতে পারলাম পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীআচার্যদেব 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের আচার্য রূপে অভিষিক্ত হওয়ার পর এই প্রথম ও এই শেষ আগামী নোতুন বছর ২০২৩-এর জানুয়ারি মাসের সম্ভবত ১০ তারিখ ( অন্য সূত্রে ২৩শে জানুয়ারী ) আসামের শিলচরের বরাক ভ্যালিতে আসছেন পবিত্র দীক্ষাদান কর্মসূচি নিয়ে। থাকবেন তিনদিন। তারপর ফিরে যাবেন ১৩ তারিখ দেওঘরে। এর মধ্যে একদিন পরমপুজ্যপাদ শ্রীশ্রীআচার্যদেব স্বয়ং দীক্ষা দেবেন।
পুজ্যপাদ শ্রীশ্রীঅবিনদাদা শ্রীশ্রীআচার্যদেবের এই পরম পবিত্র শেষ দীক্ষাদান কর্মসূচী সৎসঙ্গ জগতের সমস্ত গুরুভাইবোনেদের জানাবার জন্য বলেছেন, সঙ্গে আরো বলেছেন সারা ভারত থেকে দাদা ও মায়েরা যেন মানুষ নিয়ে আসেন এই পবিত্র কর্মযজ্ঞে।
শ্রীশ্রীআচার্যদেব এরপরে আর দীক্ষা দেবেন না। তাঁর শেষ দীক্ষাদান কর্মসূচী আসামের বুকেই সংঘটিত হবে। আসামবাসী হিসেবে প্রতিটি সৎসঙ্গীর আজ এক বিরাট আনন্দের সময়! পরমপিতার অজচ্ছল অমৃত আশিসধারা ১০ই জানুয়ারি'২৩ নেবে আসতে চলেছে সমগ্র আসামবাসীর জীবনে। এই আশীস লাভে ধন্য হবে আসামের প্রতিটি প্রাণ, প্রতিটি জীবন। স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে সৎসঙ্গের এই ইতিহাস।
খবরটা কতটা সত্যি, কতটা মিথ্যে আর কতটা অতিরঞ্জিত তা আমার জানা নেই। এ সম্পর্কে আপাতত ঠাকুরবাড়ি থেকেও কোনও খবর প্রকাশিত হয়নি 'সৎসঙ্গ' অফিশিয়াল পেজে। তবে ফেসবুকের মাধ্যমে খবরটা জানতে পারলাম। আর জানতে পারলাম নিচের পোষ্টটা থেকে। শিলচর থেকে প্রকাশিত 'যুগশঙ্খ' পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে।
যাই হ'ক আমরা সৎসঙ্গী মাত্রেই অবহিত আছি সারা দেশব্যাপী তাঁর ১০০ দিনের দীক্ষা পরিক্রমার বিষয়ে। আবার সেই পরম পবিত্র দিন নেবে আসতে চলেছে বিরাট কর্মসূচি নিয়ে শিলচরের পবিত্র মাটিতে। পরম সৌভাগ্য আসাম তথা শিলচরবাসীদের। একটা ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হ'তে চলেছে শিলচরবাসী।
আর এটাও যদি সত্যি হয় যে এটাই আচার্যদেবের শেষ দীক্ষাদান কর্মসূচী তাহ'লে একটা অব্যক্ত বেদনা এই খবর জানার পর থেকে বুকের মধ্যে পাকিয়ে পাকিয়ে উঠেছে যা বলতে না পারলে দম বন্ধ অবস্থায় বেঁচে থাকার সামিল। আমার মনের বেদনা আমি আমার এই লেখার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করলাম নিতান্তই নিজেকে হালকা করার উদ্দেশ্যে। এই বেদনা একান্তই আমার বেদনা। আমি কাউকে এর দায় নিতে বলি না; এই লেখার দায় আমার একারই। এজন্য মতের অমিল হ'তে পারে কিন্তু আমি চাই না এই নিয়েও প্রতিবারের মতো মতান্তর থেকে মনান্তর হ'ক।
একদিন বলা হ'তো "আজকে বাংলা যা ভাবে অবশিষ্ট ভারতবর্ষ ভাবে আগামীকাল।" মহামতি গোখলের এই কথা আজ সময়ের স্রোতে ভেসে গিয়ে খানাখন্দে আটকে উল্টে গিয়ে হ'য়ে গেছে 'আজকে অবশিষ্ট ভারতবর্ষ যা ভাবে আগামীকাল বাংলা তা ভাবে।' এক্ষেত্রেও হয়তো বা তাই হ'লো। হয়তো এইজন্যই বললাম কারণ খবরটা যদি সত্য হয় তাহ'লে বাংলা এই ভাবনা ভাবাতে ব্যর্থ হ'লো আচার্যদেবের মনে প্রাণে যে তাঁর শেষ দীক্ষাদান কর্মসূচী বাংলার বুকেই হ'ক। বাংলা ভাবার আগেই আসাম এগিয়ে গেছে বাংলাকে পিছনে ফেলে তাদের করার তীব্র স্রোতে ভেসে আচার্যদেবের মনে এই তৃষ্ণা জাগাতে। মহামতি গোখলের কথা আজ উল্টো হ'য়ে গেছে এই কথা আজ আবার প্রমাণিত হ'লো। সব বিষয়ে সব ক্ষেত্রে বাংলা আজ পিছনে। বাংলার সৎসঙ্গীদের আজ ভাবার সময় এসেছে। শ্রীশ্রীঠাকুরের স্বপ্ন পূরণে আজ বাংলাকে ছাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তরতরিয়ে অন্যান্য রাজ্য নীরবে নিঃশব্দে মসৃণ গতিতে মাখনে ছুরি চালাবার মতো।
আজ থেকে ৭৫ বছর আগে এই বাংলা একবার পরম চরম সুযোগ থেকে বঞ্চিত হ'য়েছিল বাঙালীর দূরদর্শিতার অভাবে। আর তার ফলে চিরদিনের জন্য আরও একবার দয়াল ঠাকুর শ্রীশ্রীঅনুকূলচন্দ্রকে তাঁর প্রিয় জন্মভুমি বাংলা ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। সেদিন বাংলা বোঝেনি যে কতবড় সর্বনাশ সে ক'রে বসলো। নিজের পায়ে নিজে কুড়োল মেরে বাবু বাঙালি সেদিন প্রমাণ করেছিল সে কতখানি তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থাকা প্রকৃতপক্ষে অসাড় এক নির্বোধ জীব। সেদিনটা ছিল স্বাধীনতার বছর ১৯৪৭ সাল। দেশবিভাগের কারণে 'সৎসঙ্গ' তার পাবনায় স্থিত ১.৫ কোটি টাকার সম্পত্তি হারিয়েছিল। পূর্বপাকিস্তান সরকার সেইসময় ঠাকুরের সমস্ত সম্পত্তি দখল ক'রে নেয়। পরিবর্তে সেইসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার পানাগড়ে শ্রীশ্রীঠাকুরকে ৬০০০হাজার বিঘা জমি দান করতে চেয়েছিলেন মানবজাতির কল্যানার্থে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সেই সময় পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় সেই ৬০০০ হাজার বিঘা জমি দেওয়ার ব্যাপারে রাজী ছিলেন না। পরিবর্তে তিনি ৮০০ বিঘা জমি দিতে চেয়েছিলেন সৎসঙ্গকে। যেহেতু ৮০০ বিঘা জমি ঠাকুরের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার পক্ষে যথেষ্ট ছিল না তাই শ্রীশ্রীঠাকুর মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের ৮০০ বিঘা জমি দানের প্রস্তাব খারিজ ক'রে দেন। শ্রীশ্রীঠাকুর তৎকালীন বিহার তথা বর্তমান ঝাড়খন্ডের দেওঘরে বাংলাদেশের পাবনার হিমাইতপুর আশ্রমের মতন পুনরায় আজকের বিশাল 'সৎসঙ্গ' আশ্রম নোতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করেন। পিছনে পড়ে রইলো দুর্ভাগ্যের তকমা নিয়ে বর্তমান ভারতের বিদগ্ধ রাজ্য বহু মনীষী, সন্ত, মহাপুরুষদের বিচরণ ক্ষেত্র খন্ডিত বাংলা 'পশ্চিমবঙ্গ'। সেইসময়ের একজনও বাঙ্গালী বিদগ্ধ মনীষী বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে বাংলার বুকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেননি। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের দরবারে প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরুর শ্রীশ্রীঠাকুরের সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠানের জন্য ৬০০০ হাজার বিঘা জমি প্রদানের যৌক্তিকথার পক্ষে ওকালতি বা মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে আসেননি। ফলে শ্রীশ্রীঠাকুর অবহেলায় অবলীলায় ৮০০ বিঘা জমি উপেক্ষা ক'রে চলে গেলেন দেওঘরের রুখোশুকো অথচ সহজ সরল, শান্ত প্রাণ অধ্যুষিত লাল মাটির দেশে। ইচ্ছে করলেই সেই ৮০০বিঘা জমি তিনি তৎকালীন বাংলা সরকারের কাছ থেকে নিয়ে রেখে দিতে পারতেন। কিন্তু তা তিনি করেননি। একবারও কেউ ভেবে দেখলো না ৮০০বিঘা জমির লোভ ত্যাগ করা যায় কোন শক্তিতে!? কেন তিনি পিছন ফিরে পর্যন্ত তাকালেন না, কেন তিনি একটিবারের জন্য বিবেচনা করলেন না সেই ৮০০ বিঘা জমির দিকে!? কেউ ছাড়তো সরকারী ৮০০বিঘা জমির লোভ!? কে ছিল শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র? কি ছিল তাঁর পরিকল্পনা? পানাগড় তথা বাংলার দুর্ভাগ্য বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান পানাগড় তথা বাংলার বুকে গড়ে উঠলো না। বঞ্চিত হ''লো বাংলা, বাংলার পানাগড়, পানাগড়ের মাটি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ তীর্থক্ষেত্র তথা বাণিজ্যক্ষেত্র হ'য়ে ওঠা থেকে।
একবার 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের আচার্যদেব শ্রীশ্রীবড়দা ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন বাংলার বুকে কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ধর্ম মহাসভা ও মহোৎসব করার। বাংলার সৎসঙ্গীরা নানা কারণে পারেননি শ্রীশ্রীবড়দার সেই ইচ্ছা বা স্বপ্ন পূরণ করতে। আজ শ্রীশ্রীবড়দা অমরধামে যাত্রা করেছেন। তাঁর ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে গেছে। একদিন নিশ্চয়ই পূর্ণ হবে বড়দার ইচ্ছা এ বিশ্বাস আমার অটূট আছে। সময়, পরিস্থিতি, পরিবেশ, প্রস্তুতি, যোগান ইত্যাদি নানান ব্যাপার হয়তো সবসময় অনুকূলে থাকে না। আর তাই হয়তো করা সম্ভব হ'য়ে ওঠে না। যেমন শ্রীশ্রীঠাকুরের বহু বিস্ময়কর স্বপ্ন, ইচ্ছা পূর্ণ হয়নি। হয়নি হয়তো সেই একই কারণে। আর এখানেই লুকিয়ে আছে আমাদের দুর্বলতা।
একইরকমভাবে 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের শ্রীশ্রীআচার্যদেবের শেষ দীক্ষাদান কর্মসূচীও আসামের বরাকের সৎসঙ্গীদের জন্য নোতুন বছরে বিশেষ উপহার। যে উপহার পাওয়ার জন্য লালায়িত হ'য়ে আমি এই লেখা লিখছি। যদি এই খবর সত্য হয় তাহ'লে আমাদের বাংলার সৎসঙ্গীদের আজ ভাবার সময় এসেছে। বাংলা যেন আর নিজেদের দুর্বলতার কারণে বঞ্চিত না হয়। শ্রীশ্রীঠাকুরকে আমরা বাঙালিরা বাংলায় আশ্রয় দিতে পারিনি। অখন্ড বাংলা, খন্ড বাংলা কোনও বাংলায় তিনি থাকতে পারেননি, থাকার জায়গা পাননি। জায়গা বা আশ্রয় হয়েছে বাংলার বাইরে অন্য রাজ্যে। এ আমাদের চিরদিনের লজ্জা, অমার্জনীয় অপরাধ। আর বিশ্বের কাছে বাঙালীর এই লজ্জা শত প্রায়শ্চিত্তেও কোনওদিনই মোছার নয় যদি না তিনি আবার বাংলার বুকে নেবে আসেন। শ্রীশ্রীবড়দার ইচ্ছাও এখনও আমরা পূরণ ক'রে উঠতে পারিনি বাংলার সৎসঙ্গীরা। হয়তো নিশ্চয়ই আমরা একদিন তাঁর ইচ্ছা পূরণ করতে পারবো। কিন্তু শ্রীশ্রীআচার্যদেবের কাছে আমাদের বাংলার সৎসঙ্গীদের হৃদয় নিংড়ানো আকুল প্রার্থনা হ'ক বাংলার বুকেই হ'ক তাঁর শেষ দীক্ষাদান কর্মসূচী। উঠুক বাংলার বুকে দীক্ষার ঝড়, তুফান। গোটা রাজ্যের সৎসঙ্গী সমাজ ভেঙ্গে পড়ুক এই দীক্ষাদান অনুষ্ঠানে। সারা বিশ্বে ধর্মজগতে সৃষ্টি হ'ক দীক্ষাদানের ইতিহাস!
আর বাংলার বুক থেকে মুছে যাক দয়ালকে বাংলায় আশ্রয় না দেওয়ার লজ্জা কলঙ্ক। একই সংগে পূরণ হ'ক পরমপুজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দার স্বপ্ন ইচ্ছা।
শেষে শুধু অশ্রুভেজা চোখে কান্নামিশ্রিত ভাঙ্গা গলায় বলতে চাই, শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা অন্তত এই এক জায়গায় মিথ্যে হ'য়ে যাক! অনেক আগে কোথায় যেন পড়েছিলাম ঠাকুর দুঃখ ক'রে বলেছিলেন, "আমার সৎসঙ্গের আন্দোলন বাংলার বুক থেকে উঠবে না। বাংলার বাইরে থেকে সৎসঙ্গের আন্দোলন শুরু হবে।" তাই আজ সত্য হ'য়ে উঠছে বাংলার বাইরে রাজ্যে রাজ্যে। আজ আর মনে পড়ে না, জানি না কোথায় কোন বইয়ে আছে ঠাকুরের এই কথা। রেফারেন্স দিতে আজ আমি অপারগ। তাই আমি বাংলার সৎসঙ্গীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলছি, আমার এই কথা ভুল প্রমাণিত হ'ক। আর বাংলার বুক থেকে উঠুক ঝড়। শ্রীশ্রীআচার্যদেবের উপস্থিতিতে মানুষে মানুষে ঢেকে যাক বাংলার আকাশ বাতাস। আর সেই আকাশের মেঘের বুকে ভেসে উঠুক আমার দয়াল প্রভুর মিষ্টি মধুর হাসি।
হে দয়াল বাংলার সৎসঙ্গীদের আকুল হৃদয় নিংড়ানো এই প্রার্থনা তুমি পূরণ ক'রো।---প্রবি।

No comments:

Post a Comment