Powered By Blogger

Thursday, December 29, 2022

অভিজ্ঞতাঃ তুমি শুধু প্রভুর জন্য-৪

'তুমি শুধু প্রভুর জন্য-৩' লেখা শেষ করেছিলাম এই ব'লে যে, অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির মণি মানিক্য নিয়ে হাজির হবো 'তুমি শুধু প্রভুর জন্য-৪' লেখায় আর সেই অভিজ্ঞতার আয়নায় দেখে নেবো নিজের ইষ্টপ্রাণতার চরিত্র কতটা ফর্সা আর কতটা কালো। তাই এসেছি অভিজ্ঞতা ভাগ ক'রে নিতে।
অভিজ্ঞতা **
বহুদিন ধ'রে মাঝেমাঝেই ইউরিনাল সমস্যা কষ্ট দিচ্ছিল আমার সহধর্মিণীকে। একটা জ্বালা জ্বালিয়ে মারছিল তাকে। এলোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক সবরকম চিকিৎসা সত্ত্বেও অনেকদিন পরপর মাঝেমধ্যে এই সমস্যা লেগেছিল এঁটেল পোকার মত। বহুদিন ভালো থাকে আবার হয়। যখন হয় তখন জ্বালা ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে তীব্র হ'তে থাকে ফলে জল খেতে হয় প্রচুর আর জল খাওয়ার কারণে বারবার বাথরুমে যাওয়ার নতুন বিরক্তি যোগ হয় জীবনে। এমতাবস্থায় ঠাকুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম দুজনে শ্রীশ্রীবাবাইদাদাকে নিবেদন করবো ব'লে। যথারীতি ঠাকুরবাড়ি পৌঁছে নির্দিষ্ট সময় ভোরবেলা বাবাইদাদাকে স্ত্রী তার সমস্যার কথা নিবেদন করলে বাবাইদাদা হিমালয় কোম্পানির পুনর্নোভা খাওয়ার পরামর্শ দিলেন এবং একজন ডাক্তারকে বললেন ব্যাপারটা দেখবার জন্য। সেই ডাক্তারের নির্দেশমতো হাসপাতালে গিয়ে তাকে দেখানো হ'লে তিনি সব শুনে অল্ট্রাসোনোগ্রাফি করার নির্দেশ দিলেন। সেইমত দেওঘরের কেয়ার ডায়াগনস্টিক থেকে ইউ এস জি অফ হোল আবডোমেন পরীক্ষা করিয়ে সন্ধ্যাবেলা আবার ডাক্তারবাবুকে দেখানো হ'লো। তিনি দেখে বললেন, ইউরিনাল ট্র্যাকে কোনও সমস্যা নেই এবং আরও কিছু পরীক্ষা করার কথা লিখে দিলেন এবং হোয়াটস আপে রিপোর্ট পাঠাবার কথা বলে দিলেন। আমরা সৎসঙ্গ হাসপাতালের ফ্রি মেডিসিন কাউন্টার থেকে বিনামূল্যে ঔষধ নিয়ে ফিরে এলাম। সেদিন দেখেছিলাম কত মানুষ হাসপাতালের সেই মেসিসিন কাউন্টার থেকে ফ্রিতে ওষুধ নিয়ে যাচ্ছে! আমার স্ত্রীর জন্য প্রেসক্রিপশন করা একটা যে ওষুধ ফ্রিতে নিয়েছিলাম সেই ওষুধের দাম ছিল প্রায় ৩০০টাকা।
দেওঘর থেকে পরদিন ফিরে এসেছিলাম বাড়ি। তারপর বাবাইদাদা নির্দেশিত হিমালয় কোম্পানির পুনর্নোভা আর ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা ইউ টি অফ ওষুধ সেবন করতে লাগলো এবং তারপর ডাক্তারের নির্দেশিত বাকি সব পরীক্ষা ক'রে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হ'লো হোয়াটস আপ ক'রে দেওঘরে ডাক্তারের কাছে। কিন্তু বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করার পরও কোনও উত্তর পেলাম না। তারপর ফোন করলেও ফোন ধরলেন না ডাক্তারবাবু। চিন্তায় পড়ে গেলাম! কি করবো কিছু বুঝলাম না।
এভাবে কেটে গেছিল কয়েকমাস। অনেকবার ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও উত্তর না পাওয়ায় ভাবলাম লোকাল কোনও ডাক্তারকে দেখানোর কথা। এরমধ্যে ডাক্তারবাবুর দেওয়া ওষুধ যেটা হাসপাতাল থেকে ফ্রিতে নেওয়া হয়েছিল সেটাও শেষ হ'য়ে গেছিল। এর মধ্যে আর কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু সমস্যা আবার দেখা দেওয়ায় আর ডাক্তারবাবুর কোনও উত্তর না পেয়ে পুনরায় কয়েকমাস পর আবার দেওঘর গেলাম শেষ লক ডাউন ঘোষণার আগে ১২ই মার্চ'২০২০। ১৩ই মার্চ ভোরবেলা শ্রীশ্রীবাবাইদাদার শ্রীচরণে অসুখের কথা বিস্তারিত নিবেদন করলে তিনি হিমালয় কোম্পানি ক্রেনবেরি ক্যাপসুল ৩০০ খাওয়ার আশীর্বাদ করলেন। কিন্তু দেওঘর থেকে ফিরে এসে ওষুধের জন্য নেটে খুঁজলে এবং লোকাল ওষুধের দোকানে চাইলে দেখা গেল হিমালয় কোম্পানির ক্রেনবেরি ক্যাপসুল ৩০০ আউট অফ মার্কেট! হিমালয় কোম্পানি ওষুধ মার্কেট থেকে তুলে নিয়েছে! কিন্তু অন্য কোম্পানির ক্রেনবেরি আছে। কিন্তু কাকে জিজ্ঞেস করবো সেটা খাওয়া যাবে কিনা। আবারও ডাক্তারবাবু ব্যস্ততার কারণে কিম্বা হয়তো অন্য কোনও অসুবিধার কারণে হোয়াটস আপের উত্তর না দেওয়ায় ও ফোন কল রিসিভ না করায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না কি করণীয়।
মনটা মানছিল না বাবাইদাদা নির্দেশিত ওষুধ না পাওয়ায়। আর এর মধ্যে দেওঘরে যাওয়ারও কোনো পরিকল্পনা ছিল না। ঘরে বসেই ঠাকুরের ফটোর কাছে নিবেদন করলাম সমস্যার কথা এবং বাবাইদাদাকে ফটোর মাধ্যমেই জানালাম বর্তমান পরিস্থিতি। ইতিমধ্যে আমাদের এলাকায় নতুন একজন ডাক্তার এলেন। তিনি একদিন বাড়িতে এসে আমার অসুস্থ বৌদিকে দেখে গেছিলেন। তখনই তাঁর সঙ্গে আমার স্ত্রীর পরিচয় হয় এবং একদিন তাঁকে দেখাতে তাঁর চেম্বারে গেলেন। তিনি পুরোনো রিপোর্ট দেখলেন এবং নতুন কিছু পরীক্ষা করার নির্দেশ দিলেন তারপর সব রিপোর্ট দেখার পর প্রথমেই তিনি যে ওষুধের নাম প্রেসক্রাইব করলেন তার নাম হিমালয় কোম্পানির ক্রেনবেরি ক্যাপসুল ৩০০! সেটা দেখে আমার স্ত্রী স্তম্ভিত হ'য়ে গেলেন এবং ডাক্তারকে বললেন এই ওষুধের আউট অফ মার্কেটের কথা। তখন ডাক্তারবাবু শুনে কোম্পানির নাম চেঞ্জ করে দিয়ে অন্য কোম্পানির ক্রেনবেরি প্রেসক্রাইব করলেন! আর পুনর্নোভা কন্টিনিউ করার নির্দেশ দিলেন! শেষমেশ বাবাইদাদার দেওয়া ওষুধের সমাধান হ'লো! এরকমভাবে যে সমস্যার সমাধান হ'তে পারে তা আজও বিস্ময়করভাবে ঘোর বিস্ময়! যার কোনও ব্যাখ্যা নেই! একে কি বলবো!? কাকতালীয়!? নাকি সত্যি সত্যিই প্রার্থনা তাঁর কাছে পৌঁছে যায়!? আমি জানি না; আমার কপট প্রার্থনার অত জোর নেই।
শ্রীশ্রীবাবাইদাদার নির্দেশ মত সেই পুনর্নোভা ও ক্রেনবেরি ৩০০ খেয়ে স্ত্রী সুস্থ হ'য়ে উঠলো। মাঝে একজন ভালো মহিলা হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের সাথে পরিচয় হওয়ায় এবং তাকে সমস্যার কথা জানানোয় তিনি প্রথমে স্ত্রীকে ফ্রসফময়সিন ট্রমেতামল পাউডার দিয়ে বললেন জলে গুলে রাতে ঘুমানোর আগে খেয়ে নিতে। আর অন্ততঃ তিনঘন্টা পর বাথরুমে যেতে বলে দিলেন। এতে যদি ইনফেকশন থাকে তাহলে সব বেরিয়ে যাবে। তারপরে দু'দিন পর যেতে বললেন তখন ওষুধ দেবেন এখন কোনও ওষুধ দেবেন না। সেইমত স্ত্রী তার কাছে দু'দিন পর গেলে সেই মহিলা হোমিওপ্যাথি ডাক্তার স্ত্রীর কাছে জেনে নেওয়া পুনর্নোভা আর ক্রেনবেরি ক্যাপসুল ৩০০ খেয়ে যেতে বললেন এবং সঙ্গে হোমিওপ্যাথি ওষুধ দিলেন!
আজ স্ত্রী ঠাকুরের অপার দয়ার পরশে ও বাবাইদাদার আশীর্বাদ, নির্দেশ ও প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে চলার জন্য এবং শ্রীশ্রীঠাকুর ও বাবাইদাদার কাছে প্রার্থনা হেতু হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়ার জন্য ভালো আছে।
কিন্তু আজ বড় মনে পড়ে সেই হাসপাতালের ডাক্তারবাবুর কথা! কেন এমন হয়!? কেন বাবাইদাদার নির্দেশ আহত হয়!? চিকিৎসাজনিত ব্যস্ততা, কাজের চাপ, সংসারের চাপ ও জীবনে চলার পথে অন্যান্য কারণ মানুষকে দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধ শূন্য ক'রে তোলে!? ইষ্টপ্রাণতায় ঘাটতি দেখা দেয়!? এই কারণে কি 'তুমি শুধু প্রভুর জন্য' হ'য়ে ওঠা হয় না!?
কিন্তু সবচেয়ে যেটা আশ্চর্য করেছিল আমায় সেটা হ'লো দ্বিতীয়বার বাবাইদাদাকে যখন অসুখের কথা নিবেদন করা হয়েছিল তখন তিনি পুনরায় সেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রসঙ্গ তোলেননি বা নির্দেশ দেননি! তিনি নিজেই ক্রেনবেরি ৩০০ খাওয়ার আশীর্বাদ করেছিলেন। এবং সেইমত পরবর্তী ঘটনা বিস্তার লাভ করেছিল যা আজও রহস্যময়!!!!
এমনিভাবেই দেখে নেব পরবর্তী অভিজ্ঞতা কি বলে! কি বলে 'তুমি শুধু প্রভুর জন্য বলেই তুমি সকলের জন্য' এই বাণী অভিজ্ঞতার আয়নায়! কার জীবনে কতটা প্রকট হ'য়ে উঠেছে এই বাণীর মর্মার্থ! আসুন দেখে নিই 'তুমি শুধু প্রভুর জন্য- ৫' কি বলে!
ক্রমশঃ
লেখা ২৪শে অক্টোবর'২০২০ )

No comments:

Post a Comment