Powered By Blogger

Wednesday, January 24, 2024

প্রবন্ধঃ ফটো বিতর্ক।

সম্প্রতি ফেসবুকে সৎসঙ্গের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, মন্দিরে ক'জনের ফটো রাখা হবে চার জনের নাকি পাঁচ জনের এই নিয়ে নাকি বিতর্ক দানা বাঁধছে সেই কারণে দ্বন্ধের সমাধানের জন্য স্বস্তি-যজ্ঞ/Swasti-Jogyo Team-এর একটা লেখা পোষ্ট হয়েছে ফেসবুকে এবং তা শেয়ারও হ'য়ে চলেছে লেখাটাকে সমর্থন ক'রে।

লেখাটা পুরোটা পড়েছি। বুঝলাম অকারণ এইসব প্রশ্ন উত্থাপন। এইসব প্রশ্ন উত্থাপন করা মানে আগ বাড়িয়ে সৎসঙ্গীদের মনে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করা এবং সৎসঙ্গ বিরোধীদের হাতে সমালোচনার অস্ত্র তুলে দেওয়া। যেমন ইতিমধ্যেই দেখলাম একটা শেয়ারে একজন এই বিষয়ে সমালোচনা ক'রে তার বক্তব্য পেশ করেছে আর একজন তার কমেন্টে 'একদম ঠিক' ব'লে সমর্থন ক'রে কমেন্ট করেছে। আরও কমেন্ট আসছে পোষ্টের বক্তব্য বিষয়ে রাখা যুক্তির বিরোধীতা ক'রে এবং আরও হয়তো আসবে এরকম কমেন্ট। আর যদি আগ বাড়িয়ে এই বিষয় নিয়ে পোষ্ট না হ'তো তাহ'লে বিরুদ্ধবাদীরা সুযোগ পেত না।

আরো কমেন্ট আসলে তখন তার উত্তর দেবেন তো? শুরু হবে বিতর্ক। তা' বিতর্ক শুরু করলো কে? কোথা থেকে এর সূত্রপাত হ'লো? তারপরে এ ওকে, ও একে দোষ দেবে। এই ধরণের প্রশ্নে দরকার হ'লে ঠাকুরবাড়ি থেকে উত্তর দেবে কিংবা এই ধরণের প্রশ্নের উত্থাপন করবে ও তার যথাযথ সমাধান দেবে। আগ বাড়িয়ে কোথায় কে কি বলছে, কোথায় কি করছে, কি লিখছে তা ঘাঁটাঘাঁটি করা কি দরকার? যদি তেমন বাড়াবাড়ি হয় এই প্রশ্ন নিয়ে, হয় সমালোচনা তখন নিশ্চয়ই উত্তর দেওয়া যেতে পারে এবং দেওয়াও উচিত কিন্তু নিজের নিজের বোধবুদ্ধি অনুযায়ী।

তাই সেধে সেধে ঘা করার কোনও দরকার নেই। যার যা ভালো লাগে করুক ও বলুক। শুধু লক্ষ্য রাখুন মাত্রা ছাড়া হচ্ছে কিনা সমালোচনা। তখন নাহয় যুক্তির চাবুক দিয়ে আগাপাছতলা কঠিন আঘাত করবেন। এছাড়া আরো শ্রীশ্রীঠাকুরের অগুন্তি বহু বিষয় আছে যা নিয়ে আলোচনা বা লেখালেখি করা যেতে পারে।

এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে,
লেখার শেষ স্ট্যাঞ্জাতে লেখা হয়েছে,
"অনেক কিছু লিখলাম, শুধু গুরুভাইদের মনের সন্দেহ দূরীকরণের জন্য। এটা আমাদের একান্ত নিজেদের লেখা । আমাদের যুক্তি অন্যের সঙ্গে না মিলতে ও পারে । তবে আমাদের যেটা মনে হলো তাই লিখলাম, আশা করি অনেকের সন্দেহ দূর হবে ।"

উপরের এই লেখাটায় লেখা হয়েছে, গুরুভাইদের মনের সন্দেহ দূর করার জন্য এই লেখা লেখা হয়েছে। এর পরেই আবার লেখা হয়েছে, উনাদের যুক্তি অন্যের সঙ্গে না মিলতেও পারে।

প্রশ্ন জাগে মনে, যদি না মেলে তাহ'লে গুরুভাইবোনেদের মনের সন্দেহ দূর হবে কি করে? উনাদের যেটা মনে হয়েছে সেটা লিখেছেন, আবার অন্য সৎসঙ্গীদের মনে অন্যরকম মনে হবে, বিরোধীদের আর একরকম মনে হবে তখন তারা অন্যরকম লিখবে আর শুরু হবে বিতর্ক, মহা বিতর্ক। সুযোগ নেবে বিরুদ্ধবাদী সুযোগসন্ধানীরা। যারা লেখাটা লিখে পোষ্ট করেছেন ও শেয়ার করেছেন যারা তাঁরা আশা করছেন, সৎসঙ্গে ও মন্দিরে চারটে না পাঁচটা ফটো রাখা হবে তা নিয়ে গুরুভাইবোনেদের সন্দেহ দূর হবে; কিন্তু তারা কোনও গ্যারান্টি দিতে পারছেন না।

প্রশ্ন হচ্ছে, লেখা যুক্তি সঙ্গত হ'লে গ্যারান্টি দিতে হবে কেন? সলিড যুক্তির ওপর যদি লেখা দাঁড়ায় তাহ'লে গ্যারান্টি দিতে হয় না ও মানা, না-মানা ব্যক্তিগত ব্যাপার। এতটাই কনফিডেন্ট থাকতে হয়।


আর, ফটো রাখার ব্যাপারে ঠাকুরবাড়ির নির্দেশ মেনে চলা ভালো। সাধারণভাবে তিনজনের ফটো থাকবেই। শ্রীশ্রীঠাকুর, শ্রীশ্রীঠাকুরের সহধর্মিণী লক্ষ্মীস্বরূপিণী শ্রীশ্রীবড়মা, আর শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রধান ভক্ত এ যুগের হনূমান শ্রীশ্রীবড়দা। আর, একজনের ফটো থাকবে তা' হ'লো সৎসঙ্গের পরিচালক বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেব। যিনি আমাদের পথপ্রদর্শক। কেমনভাবে শয়নে, স্বপনে, জাগরণে শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিয়ে জীবনে চলবো প্রতিমুহুর্তে তা নিজে আচরণ ক'রে ক'রে দেখিয়ে দেন পূজ্যপাদ আচার্যদেব; যাতে এই কঠিন শয়তানী সময়ে আমাদের চলার পথে কোনও ভুল না-হয়, আশপাশের শয়তান দ্বারা যাতে বিভ্রান্ত হ'য়ে না পড়ি। বিপদে-আপদে কি ক'রে চলবো, কি ক'রে উদ্ধার পাবো, কি ক'রে জটিল সমস্যা মুক্ত হবো, কি ক'রে রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধিবিপর্যয় ও দরিদ্রতা থেকে রক্ষা পাবো তা তিনি নিখুঁত সমাধান দেন, আচরণ ক'রে ক'রে দেখিয়ে দেন। শ্রীশ্রীঠাকুরই যে মুখ্য, এক ও একমাত্র আরাধ্য, ঠাকুরই যে নিরাকারের সাকার রূপ, ঠাকুরই যে আমার একমাত্র বাঁচার আধার ও আশ্রয়, ঠাকুরই যে জগতের সমস্ত সমস্যার সমাধান, ঠাকুরই সৃষ্টির পরম কারণ, ঠাকুরই যে পূর্ব পূর্ব রূপের বর্তমান প্রতিফলন তা' যুক্তি দিয়ে, আচরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেন, দেখিয়ে দেন বলেই তিনি আচার্যদেব। এইসব জটিল বিষয়ে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের সিদ্ধান্ত, আদেশ, উপদেশ, পরামর্শ শিরোধার্য হওয়া উচিত।।


আর, শ্রীশ্রীঅবিনদাদার ফটো রাখা বা না-রাখা নিয়ে এখনো পর্যন্ত ঠাকুরবাড়ির বা আচার্যদেবের কোনও নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত নেই। বর্তমান সময় স্পুটনিকের যুগ। গরুরগাড়ির যুগ নয় যে ধীরে ধীরে চলবো। তাই, বিশ্বজুড়ে বৃত্তি-প্রবৃত্তির তীব্র টানে উদ্দাম গতিতে উদোম হ'য়ে ছুটে চলা যুব সম্প্রদায়কে আকর্ষণ করার জন্য, পথ ভোলা, জীবন্রের মূল ধারা থেকে বিচ্যুত হওয়া, মিথ্যে রঙ্গীন দুনিয়ার হাতছানিতে ছুটে চলা, অলীক মায়ার মোহন বাঁশীর সুরে বিভ্রান্ত হ'য়ে আলো ভেবে আগুনে হাত দিয়ে হাত ঝলসে যাওয়া, সমাজের কুহেলিকাময় প্রহেলিকার আবর্তে জীবনের শুরুতেই জীবন শেষ হয়ে যাওয়া, ঘরে-বাইরে কৃষ্টি-সংস্কৃতি, শিক্ষা, বিবাহ, সাহিত্য, ধর্ম, রাজনীতি ইত্যাদির বিষাক্ত আবহাওয়ায় ভয়ংকর ভাবে সংক্রামিত, ক্ষতবিক্ষত জীবনকে জীবনের, বাচা-বাড়ার মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য বাস্তবভাবে যুবকদের সামনে সময়োচিত যুগপোযোগী স্পুটনিকের গতিতে ছুটে চলা একজন প্রচন্ড ব্যক্তিত্ববান, আকর্ষণীয় যুব আইকন থাকার দরকার, যিনি আবার গোঁড়া, কট্টর ইষ্টপ্রাণ, আচার্যপ্রাণ, আদর্শপ্রাণ, আচারবান, চরিত্রবান, জ্ঞানবান, বুদ্ধিমান, প্রজ্ঞাবান। ভারত তথা বিশ্বজুড়ে জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্ব্বিশেষে যুবসমাজের কাছে পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীঅবিনদাদার আকর্ষণ তীব্র বাঁধভাঙা জলের ঢেউ-এর মতন। তাই যুবসমাজের কাছে পূজ্যপাদ অবিনদাদার গ্রহণযোগ্যতা অসীম, অনন্ত। তাই তারা ভালোবেসে ফটো রাখে, রাখতে চায় যা আজ সাধারণ মানুষের কাছে, রাজনৈতিক দলের কাছে, অন্যান্য ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিস্ময়ের ব্যাপার ও সৎসঙ্গ বিরোধীদের কাছে ইর্ষনীয়। যেখানেই অবিনদাদার আগমন হয় সেখানেই লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি যুবকযুবতী, কিশোরকিশোরী, প্রৌঢ়, বৃদ্ধা পঙ্গপালের মতো, আগুনে পোকার মতো নিজের থেকে ছুটে যায় বাড়ি ঘর সব কিছু পিছনে ফেলে রেখে, রোগ-শোক-বার্ধক্য উপেক্ষা ক'রে কারও তোয়াক্কা না ক'রে। শ্রীশ্রীঅবিনদাদার আগমন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের ময়দান ভরাবার জন্য কোনও এজেন্ট নিয়োগ করতে হয় না, সরকারি-বেসরকারি পরিবহন ব্যবস্থাকে অচল ক'রে রেল্ভাড়া, বাসভাড়া ফাঁকি দিতে হয় না অগণিত লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি সৎসঙ্গীকে। এটা সৎসঙ্গের প্রাণপুরুষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের শিক্ষা, যে শিক্ষা রেত শরীরে সুপ্ত থেকে জ্যান্ত হ'য়ে ব'য়ে চলেছে বংশ পরম্পরায়।
তাই, ফটো রাখা, না-রাখা ব্যক্তিগত ভালোবাসার ব্যাপার; সর্বোপরি শ্রীশ্রীআচার্যদেবের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশের ব্যাপার। কারণ শ্রীশ্রীঠাকুর ব'লে গেছেন,
"এক আদেশে চলে যারা
তাদের নিয়ে সমাজ গড়া।"----শ্রীশ্রীঠাকুরের এই বাণী যেন আমরা শয়নে-স্বপনে-জাগরণে সবসময় মনে রাখি। অলমিতি বিস্তারেন।

No comments:

Post a Comment