Powered By Blogger

Tuesday, December 17, 2024

প্রবন্ধঃ সনাতনী আন্দোলন ও সৎসঙ্গ আন্দোলন।

বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অকথ্য অত্যাচারের প্রতিবাদে পথে নেমেছে কলকাতায় সনাতনী সমাজ। সেখানে মঞ্চ থেকেই হিন্দুদের জেগে ওঠার বার্তা দিলেন বিরোধী দলনেতা। বললেন, "এখনও বাঙালি হিন্দুরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। আমি হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হতে বলেছিলাম। কেন ধর্ম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আইন হবে না? হিন্দু ভোট নানাভাবে বিভক্ত। সারা দেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যা, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে বাংলাদেশে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।"

বিভিন্ন দেশের সরকার বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে চলেছে কারণ সংসদ সদস্যরা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সাম্প্রতিক হামলা এবং ধর্মীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হিন্দুরা আজ শঙ্কিত।

আচার্য স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ বলেছিলেন, "হিন্দুর বিদ্যা আছে, বুদ্ধি আছে, অর্থ আছে; ব্যক্তিগত শক্তি সামর্থ্য যথেষ্ট আছে। কিন্তু নেই কেবল তার সঙ্ঘশক্তি। এই সঙ্ঘশক্তি জাগিয়ে দিলে হিন্দু অজেয় হ'য়ে দাঁড়াবে।"

মনে প্রশ্ন জাগে, হিন্দুর বিদ্যা, বুদ্ধি, অর্থ ও শক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কেন আজ হিন্দু অজেয় না? সনাতন ভারতবর্ষে কেন সঙ্ঘ শক্তির অভাব? কোথায় এর মূল গলদ? কোথায় এর ফাঁক? কোথায় ত্রুটি? কোথায় লুকিয়ে আছে এর মূল গলদ, এই ফাঁক, ত্রুটির মূল কারণ কি? কি অপ্রিয় সত্য? খুঁজে কি দেখার সময় আসেনি এখনও হিন্দু পন্ডিতদের? এখন হিন্দুদের ছোটো থেকে বড়, লেন্ডিত থেকে পন্ডিত, মূর্খ থেকে চালাক, অশিক্ষিত থেকে শিক্ষিত সবাই এখন ফেসবুকে সমস্ত সনাতন হিন্দুর স্বঘোষিত মাইবাপ, রাখোয়ালা। বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে ডুবে থাকা রিপু তাড়িত বিশৃঙ্খল মূর্খ অজ্ঞ এই স্বঘোষিত সনাতনীরা সনাতনীদের বিরুদ্ধেই কথা বলছে, সমস্যা সৃষ্টি করছে, আরও জটিল ও ভয়ংকর ক'রে তুলছে পরিবেশ ও পরিস্থিতি। এরা সবাই সনাতনী ঐক্যের ডাক দিচ্ছে, ফেসবুকে নানা ভিডিও বানিয়ে, ছদ্মনামে ও সনাতনী নাম দিয়ে প্রোফাইল বানিয়ে আহ্বান জানাচ্ছে সনাতনী হিন্দুদের। নেতৃত্ব দিচ্ছে সনাতনীদের বিরুদ্ধে কুৎসা ক'রে সনাতনীদের হ'য়ে। যে যার মত বলে যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথের "আমরা সবাই রাজা আমাদেরই রাজার রাজত্বে" বাণীর অন্তর্নিহিত অর্থ অনুধাবন না ক'রে (বোঝার ক্ষমতাই নেই অনুধাবন করা তো দূরের কথা) নিজেকে সনাতনী প্রবক্তা মনে ক'রে সোশ্যাল মিডিয়ায় ল্যাজা মুড়ো বাদ দিয়ে আর যা ইচ্ছা তাই করে চলেছে। আর এই সমস্ত মানুষদের হাতে চলে যাচ্ছে সনাতনী হিন্দু আন্দোলনের রাশ। ফলে সনাতনীদের মধ্যে প্রকট হচ্ছে ফাটল। কেন এই ফাটলের সৃষ্টি হচ্ছে, কে বা কারা এই ফাটল সৃষ্টির ক্রূর নায়ক? তা' ভেবে দেখছে না হিন্দু নেতারা। ভেবে দেখার ক্ষমতা নেই সাধারণ সীমাহীন ভাঙাচোরা সনাতনী হিন্দু জনসমাজের। ভেবে দেখার ক্ষমতা নেই কেন কি কি কারণে অতীতে সনাতনী হিন্দুরা ধর্মান্তরিত হয়েছিল? কি সেই কারণ ভারতে সনাতনী হিন্দুর দেশে বিশাল সনাতনী হিন্দু সমাজের মানুষেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও ক্রমে ক্রমে নিজেদের মধ্যে ভাঙনের সৃষ্টি হ'লো? কেন ১১৫ কোটি হিন্দুর দেশে হিন্দুরা নিজেদের শক্তি নিয়ে সন্দিগ্ধ? ৩৩কোটি দেবদেবী, সমস্ত বড়ো, মাঝারী, ছোট মন্দির সহ আশ্রম, গুহাপাহাড় ,জঙ্গলের ভিতর, রাস্তার ধারে, গৃহদেবতার এবং গ্রামের অধিষ্টাত্রী দেবদেবীর মন্দিরের সংখ্যা ১ (প্রায়) কোটি হবে, এছাড়া হাজারো লক্ষ সাধু, সন্ন্যাসী, গুরু, সন্তদের দেশ ভারতবর্ষ; তথাপি সনাতন হিন্দু ধর্ম ও সনাতনীরা কেন আজও ভারতবর্ষে দুর্বল, হিন্দুদের পক্ষে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কেন পারে না?

কে নেতৃত্ব দেবে সমগ্র সনাতনী হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য? কে সেই ব্যক্তি আসমুদ্র হিমাচল ব্যাপী সনাতনী হিন্দু সমাজকে নেতৃত্ব দেবে? সমগ্র সনাতনী সমাজের কাছে কার আছে সেই গ্রহণ যোগ্যতা? কার আছে সেই দানা বাঁধাবার জৈবী ক্ষমতা? বায়োলজিক্যালি নিখুঁত কে সেই মানুষ? কে সেই ব্যক্তি যার মধ্যে ঐশ্বরীয় শক্তি প্রকট? এভাবেই কি কেটে যাবে দিন শুধু হিন্দু ঐক্যের কথা বলে?

আর বর্তমানে সনাতনী হিন্দু জাগো আন্দোলনের সময় সনাতন ধর্মের এক শ্রেণীর স্বঘোষিত সনাতনী নামধারী মানুষ, বালখিল্য সাজা সাধু, ব্রহ্মচারীর দল সৎসঙ্গের প্রাণপুরুষ পরমপ্রেমময় পুরুষোত্তম পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে সরাসরি অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করছে, আক্রমণ করছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সৎসঙ্গ-এর বিরুদ্ধে। অথচ সনাতনী হিন্দু নেতৃবৃন্দ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে তাঁদের নিয়েই হিন্দু জাগো আন্দোলনে নেমেছেন। এর পরেও বৃহত্তর সনাতনী ঐকের কথা বলে এরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় বর্তমান এই হিন্দুদের এই দুর্দিনে, এই অস্থির সময়ে 'সৎসঙ্গ' কেন চুপ ক'রে রয়েছে এই নিয়ে মানুষকে সৎসঙ্গের বিরুদ্ধে নানা আপত্তিকর অন্যায় অপমানজনক মিথ্যে সাজানো অভিযোগ তুলে ক্ষেপিয়ে তুলছে এই স্বঘোষিত সনাতনী হিন্দু বালখিল্য কৃষ্ণ প্রেমীরা। সৎসঙ্গের বিরুদ্ধে একটা বিষাক্ত বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর এ সবই করছে বাঙালী হিন্দুরা।

যাই হ'ক এই চেষ্টা আজকের নয়, এই চেষ্টা আজ থেকে ১০০বছর আগে শ্রীশ্রীঠাকুরের যৌবনকালের সময় থেকে হ'য়ে এসেছে। শ্রীশ্রীঠাকুর ও তাঁর প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' আশ্রমের ওপর আক্রমণ করেছে বাংলাদেশে হিন্দু বাঙ্গালীরাই যা' এখনও করে চলেছে বাংলাদেশের সনাতনীরা; আর এদেশেও তাই হ'য়ে চলেছে। সনাতনীরা ব'লে থাকে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসেছেন। যদি পালিয়ে এসে থাকেন কাদের ভয়ে পালিয়ে এসেছিল? তাহ'লে এই বাংলায় কেন বাঙালীদের মাঝে তিনি আশ্রয় পেলেন না? কেন তাঁকে চলে যেতে হয়েছিল বিহারে? কেন বাংলার বর্ধমান জেলার পানাগড়ে 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার পরিবর্তে তৎকালীন বিহার বর্তমান ঝাড়খন্ড রাজ্যের দেওঘরে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলো? কাদের জন্য এমনটা হ'লো প্রশ্ন উঠবে না? কেন এই অসীম অনন্ত সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা পুরুষোত্তম পরমপিতা পরমপুরুষ পরম উৎস পরম অস্তিত্ব পরম কারণ রক্তমাংস সংকুল জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীবুদ্ধ, শ্রীশ্রীমহাপ্রভু, শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ ও বর্তমান যুগপুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ছয় ছয়বার এই ভারতের মাটিতে জন্ম নেওয়া সত্ত্বেও কেন আজ সনাতনী হিন্দুরা দুর্বল? কেন সৃষ্টিকর্ত্তা ঈশ্বর শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সর্বমোট আট আটবারের মধ্যে ছ'ছয়বার ভারতের মাটিতে জন্ম নিল? কেন হিন্দুরা নির্যাতিত? এই প্রশ্ন উঠবে না? সনাতনী হিন্দুরা কি কোনোদিন বিশ্বাস করেছে সৃষ্টিকর্তা মানুষের রূপ ধ'রে এই পবিত্র ভূমি ভারতের মাটিতেই নেমে এসেছেন স্বয়ং অবতারী আটবারের মধ্যে ছ'বার? 

সৃষ্টিকর্তা এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বর তো আটবারের মধ্যে ছ'ছবার নেমে এসেছেন ভারতের মাটিতে তবুও কি সনাতনীরা বুঝেছেন ঈশ্বর কখনো কোনও সম্প্রদায়ের নন, কোনও সম্প্রদায়ের পৈতৃক সম্পত্তি নন? বরং সমস্ত সম্প্রদায়ই তাঁর। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮০০কোটি মানুষের সবার তিনি জীবন্ত ঈশ্বর।

সনাতনী হিন্দুরা কি কোনোদিন আকাশের ভগবান, অমূর্ত ভগবান, বোবা ভগবান, মাটির ভগবান, ফটোর ভগবান থেকে সরে এসে রক্তমাংসের এক ও অদ্বিতীয় জীবন্ত ঈশ্বরে বিশ্বাস স্থাপন করেছে? ঈশ্বর যতবার এসেছেন ততবারই তাঁদের বারবার আসার কথা ব'লে যাওয়া সত্ত্বেও সনাতনী হিন্দুরা তা' বিশ্বাস করেছে? তাঁদের কথা পালন করেছে? অনুসরণ করেছে? এর পরেও ঐক্যের আহ্বান জানায় সনাতনীরা? আর, কলিযুগে আবির্ভূত বর্তমান শেষ অবতারী শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে গালাগালি, হুমকি, এবং তাঁর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' কে চুপ ক'রে থাকা নিয়ে সীমাহীন কটুক্তি করে এর পরেও?

এই চুপ থাকা প্রসঙ্গে বলি, যখন শ্রীশ্রীঠাকুরের ওপর বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমায়েতপুর গ্রামে ও বিহারের বর্তমানে ঝাড়খন্ডের দেওঘরে শ্রীশ্রীঠাকুরের পরিবার ও তাঁর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ'- এর ওপরে নানারকম চরম অত্যাচার হয়েছিল, হয়েছিল হামলা, আক্রমণ তখনও 'সৎসঙ্গ' চুপ করেছিল। হঠাৎ ঘুম ভেঙে উঠে কুম্ভকর্ণের মতো লম্ফ দিয়ে ঝম্প মারার শিক্ষা দিয়ে যাননি বিশ্বের সমস্ত বিস্ময়ের বিস্ময় সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।

সৎসঙ্গ একটা আন্দোলন, এই আন্দোলন তাৎক্ষণিক কোনও ভুঁইফোঁড় হাউই বাজির মতো আলো ছড়িয়ে আকশের অন্ধকারের বুকে হারিয়ে যাওয়ার মতো ঠুনকো হাউই বাজির হঠাৎ আন্দোলন নয়। যখনই দেশে ও বিদেশে কোনও প্রলয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে ও সমাজের ভিত নড়ে ওঠে তখনও চুপ থাকে সৎসঙ্গ। যেদিন মহাপ্রলয় আসবে সেদিনও সৎসঙ্গ চুপ থাকবে। কারণ সে জানে মহাপ্রলয় আসবে, লুপ্ত হ'য়ে যাবে মানব সভ্যতা, ধ্বংস হ'য়ে যাবে পৃথিবী। কে রক্ষা করবে এই মহাপ্রলয়ের হাত থেকে মানব জাতিকে? কিভাবে রক্ষা করবে? কি তার Blue print? জানা আছে সনাতনীদের?

শ্রীশ্রীঠাকুর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' জানে শ্রীশ্রীঠাকুরের ব'লে যাওয়া কথা, "তোদের সামনে এমন একদিন আসছে সেদিন একমুঠো সোনার বদলে একমুঠো চাল পাবি না। দুনিয়ার সামনে একটা সর্বনাশ আসছে যার তুলনায় এই (দ্বিতীয়) মহাযুদ্ধ, লোকক্ষয়, সম্পদের ক্ষয় কিছুই না। গতিক দেখে মনে হয় মনুষ্যত্বের ভিত পর্যন্ত লোপ পেয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছুই নয়। তাই শিক্ষা, দীক্ষা, বিবাহ এই তিনটে জিনিস ঠিক ক'রে দেন আপনারা।"

তাই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৃষ্ট এক ও একমাত্র প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' সেই মানুষের মনুষ্যত্বের ভিতকে রক্ষা করার জন্য যে মহা আন্দোলন সেই আন্দোলনে মগ্ন। বিশাল প্রাসাদের ভিতটাই যদি নড়ে যায় তাহ'লে কি হবে? ভেঙ্গে পড়বে বিশাল অট্টালিকা। তা' সে যতই শক্তিশালী প্রাসাদ হ'ক না কেন? প্রাকৃতিক ও মানুষের কারণে ভয়ংকর ভূমিকম্পে যখন ভূস্তরের প্লেটগুলি নড়ে ওঠে এবং সরে যায় আর তখনই হয় ভূমিকম্প। আর, ভেঙ্গে পড়ে গাছপালা, ছোটোবড় বাড়িঘর, প্রাসাদ অট্টালিকা মাটির ওপরে সবকিছু।
ঠিক তেমনি মানুষের ভিত যে মনুষ্যত্ব সেই মনুষ্যত্বের ভিত যদি লোপ পেয়ে যায় তখন গোটা মনুষ্য সমাজ ধ্বংস হয় এবং তারপর নেমে আসে গভীর শীতল যুগ।

সেই বর্তমান অস্থির সময়ে যখন তথাকথিত গোটা মানব সভ্যতার মনুষ্যত্বের ভিত নড়ে উঠছে, অশনি সঙ্কেতের ইঙ্গিত দিচ্ছে তখন সবাই যখন Superficial thoughts-ওপর দাঁড়িয়ে অর্থাৎ ভাসাভাসা, উপর উপর, অগভীর চিন্তাভাবনার ওপর দাঁড়িয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আন্দোলনরত, কখনও বা Pseudo politics (ছদ্ম রাজনতির) এর ওপর দাঁড়িয়ে Pseudo movement ( ছদ্ম আন্দোলন) করে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সেরকম আন্দোলন পুরুষোত্তম পরমপিতা জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' করে না। সৎসঙ্গ মনুষ্যত্বের ভিত যাতে লোপ না পেয়ে যায়, যা যা করলে মনুষ্যত্বের ভিত টেকসই, দীর্ঘস্থায়ী হয়, কঠিন মজবুত হয় সেই বিষয়ে সৎসঙ্গ বিভোর, তন্ময়, সমাচ্ছন্ন, সাধিস্থ। মানব জাতি যাতে তাদের জ্ঞানের অহংকারে লুপ্ত হ'য়ে না যায় সেই কঠিন আন্দোলনে 'সৎসঙ্গ' মগ্ন, অন্তর্লিপ্ত।

প্রত্যেকটি ধর্ম প্রতিষ্ঠানের তার নিজের নিজের চিন্তাভাবনা অনুযায়ী সমাজের জন্য কাজ আছে। বহিরঙ্গ ও অন্তরঙ্গ দুইভাবে সমাজ সেবা হয়। সমস্ত ধর্ম প্রতিষ্ঠান তাদের শক্তি সামর্থ্য দিয়ে অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা ইত্যাদি বিভিন্ন অন্তরস্পর্শী সেবার মধ্যে দিয়ে সমাজের বহিরঙ্গের সেবা করছে। ছদ্ম সেবা হ'ক আর প্রকৃত সেবা হ'ক দুই সেবায় সমাজকে বহিরঙ্গে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। সময়ের কষাঘাতে টিকে থাকে প্রকৃত সেবা। আর, শীতের শেষে ঝরা পাতার মত সময়ের কষাঘাতে সময়মত লুপ্ত হ'য়ে যায় ছদ্ম সেবা প্রতিষ্ঠান।

আর, অন্তর অঙ্গের সেবা করে ঈশ্বর স্বয়ং ও তাঁর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান। 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান এই দুনিয়ার বুকে ঈশ্বর যতবার এসেছেন, আট আটবার এসেছেন কিন্তু তিনি কোনও প্রতিষ্ঠান এর আগে নিজের হাতে গড়ে দিয়ে যাননি, তাঁকে কেন্দ্র ক'রে গড়ে উঠেছিল সমস্ত প্রতিষ্ঠান তাঁর প্রধান প্রধান ভক্তদের উদ্যোগে। কিন্তু এক ও একমাত্র প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান নিজের হাতে গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন বর্তমান সৃষ্টিকর্তা, জীবন্ত ঈশ্বর, সদগুরু, সর্বদর্শী, সর্বশক্তিমান, সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ, সর্বজন কল্যাণকর, পরম কারণ, পরম উৎস, পরম অস্তিত্ব পরমপুরুষ, পুরুষোত্তম, পরমপিতা পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৃষ্ট "সৎসঙ্গ হচ্ছে একটি সনাতন ধর্মীয় আন্দোলন। এর আদর্শ হচ্ছে - ধর্ম কোনো অলৌকিক ব্যাপার নয় বরং বিজ্ঞানসিদ্ধ জীবন সূত্র; ভালোবাসাই মহামূল্য, যা দিয়ে শান্তি কেনা যায়। সৎসঙ্গ’-এর উদ্দেশ্য মানুষকে সত্যকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। সৎসঙ্গ কখনো সম্প্রদায়ে বিশ্বাস করে না। ধর্ম কখনও বহু হয় না-ধর্ম এক। সপারিপার্শ্বিক জীবন-বৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলাই ধর্মের প্রধান লক্ষ্য। ধর্ম মূর্ত্ত হয় আদর্শে এবং শ্রীশ্রীঠাকুর হলেন ধর্মের মূর্ত্ত আদর্শ। তিনি কোন সম্প্রদায়-বিশেষের নন, বরং সব সম্প্রদায়ই তাঁর। শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন-“একজন মানুষের বিনিময়ে আমি একটি সাম্রাজ্য ত্যাগ করতে পারি, কিন্তু একজন মানুষকে ছাড়তে পারি না।"

সৎসঙ্গ আন্দোলন দাঁড়িয়ে আছে শিক্ষা, কৃষি, শিল্প ও সুবিবাহ এই চারটি স্তম্ভের ওপর। জীব জগতের এমন কোনও দিক বাকি নেই যে বিষয়ে তিনি আন্দোলন সৃষ্টি করেননি। অসীমের সসীম রূপকে বুঝতে বালখিল্য অজ্ঞ স্বঘোষিত সনাতনী নামধারী হিন্দু ব্রহ্মচারীদের পক্ষে হাজার বার জন্ম নিলেও সম্ভব হবে না। কারণ তাঁদের মধ্যে মনুষ্যত্ব লোপ পেয়ে গেছে। তাই, মানুষের মধ্যে প্রকৃত মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে পারলেই এই পৃথিবিতেই আবার রামরাজ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব, পৃথিবীর মানুষের যথার্থ কল্যাণ সম্ভব।

আর, এই সৎসঙ্গ আন্দোলনের প্রাণ ভোমরা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র এই সৎসঙ্গ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটিয়েছেন একেবারে নারীপুরুষের বিজ্ঞানসিদ্ধ সুবিবাহের মধ্যে দিয়ে জন্মবিজ্ঞানকে হাতিয়ার ক'রে ভ্রূণ সৃষ্টিতে। সৎসঙ্গের আন্দোলন জন্ম বিজ্ঞানকে আশ্রয় করে উন্নত মানুষ জন্মের আন্দোলন।

তাই, হে অহংকারী অজ্ঞ সনাতনী হিন্দু,
সৎসঙ্গের আন্দোলনকে হাউই বাজির আন্দোলনের সঙ্গে যেন আমরা গুলিয়ে না ফেলি।

আজ এই পর্যন্ত। আবার আসবো পরবর্তী অন্য বিষয় নিয়ে। নমস্কার।

No comments:

Post a Comment