Powered By Blogger

Saturday, December 14, 2024

প্রবন্ধঃ সৎসঙ্গীরা যুগ পরিবর্তনের কান্ডারী।

আমি সৎসঙ্গী। যদি আমি সত্যি সত্যিই সৎসঙ্গী হ'ই, আর, সৎসঙ্গীর পরিচয়ে আমি যদি নিজেকে আমার ঘরে বাইরে, বৃহত্তর সমাজে পরিচয় দিয়ে থাকি, অনেক মানুষের মাঝে তাহ'লে আমার কাছে ঠাকুরের একটা সামান্য চাওয়া আছে। তা' হ'লো "আমায় মানুষ ভিক্ষা দাও, আমায় মানুষ ভিক্ষা দাও।"

অর্থ নয়, ক্ষমতা নয়, সাম্রাজ্য নয় কেন তিনি শুধু মানুষ ভিক্ষা চাইলেন? সারা জীবন দীর্ঘ ৮১বছর ধ'রে তাঁর এই একটাই মানুষ ভিক্ষা চাওয়া কি জন্য? কার জন্য? কাদের জন্য? তাঁর নিজের জন্য? আমাদের জন্য অর্থাৎ তাঁর সৃষ্টির জন্য? তিনি কি করবেন মানুষ দিয়ে? রাজনীতি করবেন? দেশের শাসন ক্ষমতা দখল করবেন? কি করবেন?
উত্তর কি এখন?
উত্তর হ'লো, তিনি মানুষ ভিক্ষা চেয়েছিলেন মানুষকে বাঁচাবার জন্য, বেঁচে থাকার ও বেড়ে ওঠার জন্য তাঁর যে যে পরিকল্পনা সেই পরিকল্পনাগুলিকে বাস্তবায়িত করার জন্য, তাঁর বলাগুলিকে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব আগামী মহাপ্রলয়ের হাত থেকে যাতে মানুষকে, তাঁর সৃষ্টিকে বাঁচানো যায়, তার জন্য তিনি মানুষ ভিক্ষা চেয়েছিলেন।
মানবজাতীকে, তাঁর সৃষ্টিকে রক্ষা করার জন্য সবদিক দিয়ে সবরকমভাবে তার যে Blue print তিনি তৈরী করে রেখেছেন তা' বিশ্বজুড়ে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য তিনি আকুলভাবে তাঁর কাছে যারা যারা গেছেন তাঁদের সবার কাছে আমৃত্যু তিনি শুধু এই একটি চাওয়ায় চেয়েছিলেন তা' হ'লো মানুষ ভিক্ষা, মানুষ ভিক্ষা চেয়েছিলেন। যে চাওয়া আজও বহমান তাঁর রেত শরীরে সুপ্ত অবস্থায় অবস্থানরত শ্রীশ্রীআচার্যদেবের মধ্যে দিয়ে। এই চাওয়া তাঁর কলিযুগ থেকে পুনরায় সত্যযুগে প্রবেশের ট্রাঞ্জিশানাল পিরিয়ডে।

এই মানুষ ভিক্ষা চাওয়া প্রসঙ্গে আমি নিজেকে নিজে বলি,

তুমি যদি সৎসঙ্গী হও তবে মনে রেখো সৎসঙ্গীরা যুগ পরিবর্তনের কান্ডারী। অর্থাৎ দয়াল প্রভু পরমপিতার সৃষ্টি সবাইকে, সব কিছুকে আগলে নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে রাখাল বালকের মত ঘোর কলি যুগ পার হ'য়ে সত্য যুগে প্রবেশের কান্ডারী। আর, তা' শুধু বহিরঙ্গে নয়, শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মনে ও আত্মায়। যুগ পরিবর্তনের কান্ডারী সৎসঙ্গী শুধু শারীরিক সদাচারে সৎসঙ্গী নয়, একইসঙ্গে মানসিক, আত্মিক ও আধ্যাত্মিক সদাচারে সদাচারী সৎসঙ্গী। যুগ পরিবর্তনের কান্ডারী সৎসঙ্গী শুধু নিজেকে বহিরঙ্গে শুভ্রতার মোড়কে পেঁচিয়ে শুভ্রতার বিজ্ঞাপন করে না। তা' নিজের অন্তরে আরও অন্তরে, হৃদয়ের, মনের গভীরে এক শুভ্র আত্মা অর্থাৎ এক নিখুঁত আত্মা গড়ে তোলে নীরবে। যা পৃথিবীর সমস্ত নোংরা থেকে দূরে। তবেই তুমি যুগ পরিবর্তনের কান্ডারী সৎসঙ্গী। আর, যুগ পরিবর্তনের কান্ডারীর মাথায় স্বয়ং দয়াল অবস্থান করেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কান্ডারী অর্থ কি? আমি কি কান্ডারী হওয়ার যোগ্য?
কান্ডারী অর্থ কর্ণধার, যে নৌকার হাল ধ'রে গতি নিয়ন্ত্রিত করে অর্থাৎ মাঝি, ভবতরণীর কান্ডারী। অর্থাৎ সহজ ক'রে বললে বলতে হয় ভব অর্থাৎ আমি, আপনি, আমার, আপনার চারপাশের জগত জুড়ে যে অস্তিত্ব, জাগতিক যে অস্তিত্ব, জাগতিক অস্তিত্বের যে সংসার সেই ভব, সেই সংসার একটা সাগরের মত সেই সংসার সাগর আর সেই সংসার সাগরের ওপর নৌকোরূপী ভাসমান আমার যে জীবন সেই জীবনকে এবং আমার সঙ্গে সংপৃক্ত অর্থাৎ আমার সঙ্গে সংযুক্ত যে অন্যান্য জীবন সবাইকে আগলে নিয়ে যে নিখুঁত লক্ষ্যে ঝড় ঝঞ্ঝাকে মোকাবিলা ক'রে সামনে এগিয়ে যায় সেই কান্ডারী।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে উত্তাল সমুদ্রে অর্থাৎ বিক্ষুব্ধ, আলোড়িত, অতিউচ্চ, তরঙ্গসঙ্কুল সমুদ্রে অর্থাৎ সমুদ্রের বুকে বিশাল বড় বড় ও উঁচু উঁচু ঢেউয়ে প্রবলভাবে আন্দোলিত নৌকো, জাহাজকে নাবিক ঠান্ডা মাথায়, ধীর স্থির ভাবে হাল ধ'রে গতিকে নিয়ন্ত্রিত ক'রে দিশা ঠিক রেখে সঠিক লক্ষ্যে পাড়ে নিয়ে যায়, নোঙর ফেলে ও সবাইকে বাঁচায়; ঠিক তেমনি নিজের জীবনের ও চারপাশের উদ্বিগ্ন, চঞ্চল, ভাবাবেগে আকুল, অস্থির, টলোমলো, উৎকট যে পরিবেশ ও পরিস্থিতি, সেই বিশ্বজুড়ে উৎকট পরিবেশ ও পরিস্থিতি থেকে নিজের জীবন, নিজের পরিবার ও পরিবেশের সবার জীবনকে রক্ষা ক'রে সকলকে নিয়ে ভয়, বিপদ, আপদ, ভয়াবহ বিধ্বংসী আগুনরূপী সমস্যাকে এড়িয়ে, মোকাবিলা ক'রে নিখুঁত লক্ষ্যে বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার পথে এগিয়ে চলায় যে নেতৃত্ব দেয় সেই কান্ডারী।
বিশ্বের বিস্ময়ের বিস্ময় সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় যুগপুরুষোত্তম পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ভয়ংকর কলিযুগে এসেছিলেন আমাদের এই ভয়ংকর ভয়াবহ ঘোর কলিযুগের নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা ক'রে, বাঁচিয়ে যুগপরিবর্তনের ট্রাঞ্জিশনাল পিরিয়ডে কান্ডারির ভূমিকায় উত্তীর্ণ করতে। তিনি এসেছিলেন আর প্রত্যেকবার কথা দিয়েছিলেন আবার আসার, আর কথা দিয়ে কথা রেখেছিলেন, এসেছেন বারবার। প্রয়োজনে তিনি আবার আসবেন। যতদিন না তিনি নোতুন দেহ নিয়ে আসছেন ততদিন তিনি আমাদের সৎসঙ্গীদের সামনে রেখে গেছেন আচার্যদেবকে। কারণ এই আচার্যদেবের মধ্যে দিয়েই তিনি সুপ্ত অবস্থায় রেত শরীরে অবস্থান করছেন আমাদের নিখুঁত লক্ষ্যে পরিচালনা করবার জন্য, যাতে আমরা সৎসঙ্গীরা, যুগ পরিবর্তনের কান্ডারীরা ডিরেইল্ড হ'য়ে অর্থাৎ মেইন লাইন চ্যুত হ'য়ে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পরস্পর বিচ্ছিন্ন হ'য়ে অবস্থান না করি। এ এক কঠিন অনুভবের ব্যাপার, অনুভূতির ব্যাপার, উপলব্ধির ব্যাপার। সৎসঙ্গীদের আজ সিরিয়াস হবার সময় এসেছে, সময় এসেছে নিজের, নিজের পরিবারের, দশের ও দেশের স্বার্থে সিরিয়াস হবার। যে ভয়ংকর মহাপ্রলয়ের ইঙ্গিত ঠাকুর দিয়ে গেছেন চারপাশে চোখ মেলে একটু তাকালেই ধ্বংসের অশনি সংকেত ধরা পড়বে। আমরা তাকাচ্ছি না কেউ শরীরের, মনের চোখ মেলে। বুঁদ হ'য়ে আছি বৃত্তি-প্রবৃত্তির ঘেরা টোপে।

এবার প্রশ্ন হচ্ছে আমি কান্ডারী হওয়ার যোগ্য কিনা। যোগ্যতা, দক্ষতা নির্ভর করে পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর অর্থাৎ যে পরিবেশে, যে পরিস্থিতির মধ্যে আমি জন্মেছি ও লালিতপালিত হয়েছি। আমার মধ্যে সুপ্ত জন্মগত যোগ্যতা ও দক্ষতার যে গুণাবলী সেই গুণাবলী পরিবার ও পারিপার্শ্বিকের সেই পরিবেশ ও পরিস্থিতির মধ্যে প্রকাশ পাওয়ার সুযোগ ঘটেছে কিনা। এবং কর্মের ওপর আমার জীবন প্রতিষ্ঠিত কিনা। আর, সবচেয়ে মূল যে বিষয় তা হ'লো বায়োলজিক্যালি আমার জন্ম নিখুঁত কিনা। অর্থাৎ জন্মেরও যে একটা বিজ্ঞান আছে সেই জন্মবিজ্ঞান অনুসরণ ক'রে জন্ম হয়েছে কিনা আমার।
এখন কথা হচ্ছে আমরা যে যা জন্মে গেছি, জন্মে গেছি, এই জন্মে যাওয়ার জন্য আমি দায়ী নই। এই জন্মের জন্য দায়ী আমার মা-বাবা। আর, আমার মা-বাবার সঙ্গে সঙ্গে দায়ী তাঁর মা-বাবা, তাঁদের পূর্ব পুরুষ, এই সমাজ, এই দেশ, এই বিশ্বের প্রতিটি সমাজ সংস্কারক, জ্ঞানী, পন্ডিত, রাষ্ট্রনায়ক, দেশনেতৃত্ব, ধর্মগুরু ইত্যাদি ইত্যাদি ক্লাস পিপলরা।
এবার আমি জন্মে যখন গেছি তখন পরিবেশ পরিস্থিতি যদি আমার বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার সহায়ক না হয়, আমার জৈবী সংস্থিতি যদি আমার জন্মবিজ্ঞান সম্মত না হয় তাহ'লে আমি করবো?

এক্ষেত্রে গড্ডালিকা প্রবাহে নিজেকে আমি ভেসে যেতে দেবো না। আমার চারপাশে যা কিছু মিথ্যে, আমার সামনে অলীক মায়ার মোহন বাঁশি বেজে চলেছে সেই সমস্ত হাতছানি দিয়ে ডাকা মিথ্যে মায়া মোহর পিছনে, মোহন বাঁশির সুরের পিছনে আমি ভেড়ার পালের মত অন্ধভাবে অনুসরণ ক'রে ছুটে যাবো না।আমাকে আমার পুরুষত্বকে জাগিয়ে নিজেকে কঠোর মানসিকতায় প্রতিকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে মোকাবিলা ক'রে অদম্য অটুট অস্খলিত ইচ্ছায় একজন সর্ব্বশ্রেষ্ঠ আদর্শকে মাথায় নিয়ে আমাকে বাধার পাহাড় ঠেলে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। এই যে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ আদর্শের কথা বললাম এই সর্ব্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ হ'লো রক্তমাংস সংকুল জীবন্ত ঈশ্বর। তিনি আমার গার্ড ওয়াল। তাঁর সংস্পর্শে আমি আমার নিজের বাঁচার স্বার্থে আমার অনিয়ন্ত্রিত বৃত্তি-প্রবৃত্তিকে কন্ট্রোল করার তুকটা জেনে নিয়ে প্রতিমুহুর্তে তাঁর অরবিটে থেকে সতর্কতার সঙ্গে সমস্ত নিশ্চিত বিপদ আপদ, ভুলভ্রান্তি এড়িয়ে, জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। জন্মবিজ্ঞানে যাদের ভুল আছে, জৈবী সংস্থিতিতে যাদের ডিফেক্ট আছে তাদের ক্ষেত্রে কড়া বাঁধুনি হ'লো সর্ব্বশ্রেষ্ঠ আদর্শের অর্থাৎ রক্তমাংস সঙ্কুল জীবন্ত ঈশ্বরের চারপাশে বৃত্তাকার কক্ষপথে অটুট, অচ্যুত, অস্খলিত ভাবে লেগে থাকা। এইভাবে বাকী জীবন উপভোগ করা সম্ভব, সম্ভব, সম্ভব, নিশ্চিত সম্ভব; নতুবা ঘোর অন্ধকার গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া নিশ্চিত।

বর্তমান বিশ্বে যে অগ্নিময় অবস্থা ক্রমশ ঘনিয়ে উঠছে তার নমুনা আমরা সবাই প্রতিনিয়তই টিভিতে, মোবাইলে দেখতে পাচ্ছি। কারও কাছে আজ কিছুই লুকোনো নেই, গোপন নেই। ৬টা রিপু, কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য এই ৬টা রিপুর লাগামছাড়া উৎকট উল্লম্ফন আমরা আমাদের চারপাশে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি, জানতে পাচ্ছি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে।

গোটা বিশ্ব আজ দু'ভাগে ভাগ হ'য়ে গেছে। অর্থে, ঐশ্বর্যে, সম্পদে, ক্ষমতায় বলীয়ান মানুষ, লোভী মানুষ, কপট মানুষ, অনিয়ন্ত্রিত রিপুতাড়িত মানুষ আজ দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য। আর একদল অশিক্ষায়, কুশিক্ষায় আজ অন্ধ। সাধারণ অতি সাধারণ ভাঙাচোরা মানুষ, ধর্মীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ, অজ্ঞানতার ঘোর অন্ধকারে ডুবে থাকা মানুষ, মূর্খ, দুর্বল, ভীরু মানুষ আজ নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছে। এই দুইয়ের মাঝে পড়ে দয়াল আজ অসহায়। যারা সাধারণ অতি সাধারণ ভাঙাচোরা মানুষ, ধর্মীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ, অজ্ঞানতার ঘোর অন্ধকারে ডুবে থাকা মানুষ, মূর্খ, দুর্বল, ভীরু মানুষ তারা যেমন কেউ কেউ ধর্ম, ঈশ্বর মানে না, আত্ম অহংকারে সবজান্তা মনোভাবে আক্রান্ত। আত্মগর্বে বলীয়ান তারা নিজেদের সর্ব্বজ্ঞ ব'লে মনে করে।

আবার যারা ধর্ম মানে, ঈশ্বর মানে, তাঁর মূর্তি পুজো করে তারা সবাই বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে আক্রান্ত হ'য়ে রিপু তাড়িত জীবনে কিছুই না ক'রে শুধু পাওয়ার আশায় ঈশ্বরের মূর্তি পুজো করে, ভক্তি করে। তারা কুসংস্কারকে সংস্কার মনে করে, অধর্মীয় আচরণকে ধর্মীয় আচরণ মনে করে।
কিন্তু যারা ঈশ্বরের জীবন্ত রূপকে জীবনে গ্রহণ করেছে, যারা জীবন্ত ঈশ্বরের পুজো করে তারা তাঁকে মানে না, তাঁর কথা মানে না, তাঁর কথা পড়ে না, শোনে না, জানে না, বোঝে না; এককথায় তাঁকে মানা, শোনা, জানা ও বোঝার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করে না। আর নিজের ইচ্ছেমতো ধর্ম পালন করে ও জীবন্ত ঈশ্বরকেও পুজা করে মূর্তি পুজোর মতো। এই উভয় দলের ভক্তকূলের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকেই ঈশ্বরের মূর্তিকে কিংবা জীবন্ত ঈশ্বরকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে নিয়েছে।
শ্রীশ্রীঠাকুর এ প্রসঙ্গে বললেন, "ঈচ্ছে মতো ভজলি গুরু, হ'তে মানুষ হ'লি গরু।"
আর যারা অর্থে, ক্ষমতায় শক্তিমান তারাও বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে আকন্ঠ ডুবে থেকে ধ্বংসযজ্ঞে আজ উন্মত্ত। বিশ্বের সমস্ত দেশের শক্তিমান মানুষেরা চারপাশে যে সমস্ত ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে সেদিকে তাকিয়ে দেখলেই দেখতে পাওয়া যাবে তারা ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠার আগে ঈশ্বরের নামে ধ্বনি দিয়ে সেই ধ্বংসস্থান, ধ্বংসবস্তু তাঁর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ ক'রে তারপর মারণ লীলায় মেতে উঠছে। কতটা সীমাহীন কপটতা ও অজ্ঞানতা। সবাই আজ ভাঙ্গার খেলায় উন্মত্ত! এই ভাঙ্গার খেলায়, এই মারণযজ্ঞে, এই ধ্বংসলীলায় সীমাহীন আনন্দ, এতেই উত্তেজনা, এতেই তৃপ্তি, এতেই সুখ, এতেই শান্তি! সাধারণ থেকে অতি সাধারণ ও সাধারণ থেকে অসাধারণ মানুষ ঘরে-বাইরে, সমাজে-দেশেদেশে সবাই ভাঙ্গার নেশায় আচ্ছন্ন ও দক্ষ কারিগর। এর থেকে বড় নেশা আর নেই। কারোর প্রতি কারোর নেই দয়া, মায়া, মমতা, সহানুভূতির মনোভাব, নেই, দুঃখ, কষ্ট বোধ। মানবতা, মানবিকতা নিরুদ্দেশ, নিহত। সবার একটাই মনোভাব, ভাঁড় মে যায় দেশ, দেশের মানুষ, ভাঁড় মে যায় সমাজ, সভ্যতা, শিক্ষা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি। আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা। আমার প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগলে যে আমারও সেই আগুনে পুড়ে মরার সম্ভাবনা নিশ্চিত তা' তলিয়ে দেখছে না কেউ। সবাই পি, পু, ফি, শু। এক তো ভয়ংকর আগুনের মধ্যে জতুগৃহে শুয়ে আছে নিশ্চিন্তে, সেখানে আগুনে পিঠ পুড়ে যাওয়া সত্ত্বেও তবুও উঠছে না। ওঠা তো দূরের কথা পিঠ পুড়ে যাচ্ছে ফিরে শো এই কথাও তাঁর বা তাঁদের প্রিয়জনকে বলতে পারছে না, বলছে পি, পু, ফি, শু। পিঠ পুড়ে যাচ্ছে ফিরে শো এই কথাও বলতে আলস্য বোধ করছে আজ মানবকূল। এতটাই শরীরে, মনে, আত্মা কোলাপ্সড হ'য়ে গেছে আজ। আর, তা হ'য়ে গেছে বায়োলজিক্যালি। সামনে জলজ্যান্ত মৃত্যুকে দেখেও প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে বেকুব হাসি হাসছে, চিনতে পারছে না।
তাই আমার প্রিয় সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেদের বলি, সামনে মহাসঙ্কট, ভবিষ্যৎ ভয়ংকর মৃত্যুর অন্ধকার নেমে আসছে। কবি নজরুল ইসলামের কথা দিয়ে বলি,
দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার!
দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।

পরবর্তী লেখাতে আমাদের সৎসঙ্গীদের করণীয় কি এই বিষয়ে আলোকপাত করবো। জয়গুরু। 
( লেখা ৪ই অক্টোবর'২৪)

No comments:

Post a Comment