Powered By Blogger

Wednesday, December 18, 2024

স্মৃতিকথাঃ আমার সোনার বাংলা -----

আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।
ভারত আমার হৃদয়, বাংলা আমার দুই নয়ন!!
প্রাণভ'রে দেখি তোমায়, হৃদয়ে ধরে রাখি।।

১৯৭১ ভুলে যেতে চেয়েছিলাম। আজও সেদিনের ভয়ংকর দিনগুলির কথা ভুলতে পারি না। সেদিন একজন ছাত্র হিসাবে দিনের পর দিন ঘুমোতে পারিনি। বড় অসহায় লাগছিল সেদিন। আমার সোনায় বাংলার ওপর সেদিন রাজাকার আর পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর নারকীয় অত্যাচার এ-পার বাংলা সহ গোটা ভারতের সাধারণ মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, উদ্বিগ্ন ক'রে তুলেছিল, আকুল ক'রে তুলেছিল। ভারত সরকারের ওপর বাড়ছিল উত্তরোত্তর চাপ। আমার বাংলা মা-বোনেদের ওপর যে লালসার নারকীয়, নৃশংস, বিকৃত, পাশবিক, দানবীয় শারীরিক অত্যাচার আর তারপরে নির্মম হত্যালীলা চালিয়েছিল তা' মনে করলে অতি বড় দানবও লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নেবে। মেয়েদের সেদিনের কলেজ হোস্টেলের ঘরে ঘরে, হোস্টেল গুলির দেওয়ালে,আজও কান পাতলে সেই ভয়াবহ দিনগুলির ভয়ার্ত মরণ আর্তনাদ শুনতে পাওয়া যাবে। সেবিনের বাংলার মাটিতে পাকিস্থানি সেনা দরিন্দাদের ক্যান্টনমেন্টগুলি যেন আবার জেগে ঊঠল। ক্যান্টনমেন্টগুলির ভেতরে বাংলা মা-বোনেদের ওপর মদ্যপ সেনাদের ভয়ংকর গা শিউরে ওঠা কামনার উল্লাস, অট্টহাসি, ছিনিমিনি খেলা ছিল সেদিনের পাকিস্থানি হামলার দিনগুলির প্রতিদিনের খোরাক!!!! খবরের কাগজে, রেডিওতে শুনতে শুনতে কেঁপে কেঁপে উঠতাম। আজও এই লেখা লিখতে বসে সেদিনের কথা মনে ক'রে বুক কেঁপে উঠছে। একটা অস্বস্তি মাথাটাকে তোলপাড় ক'রে দিছে। সেদিনের কথা মনে করতে চাইছি না আর দেশজুড়ে চলা আপনাদের আন্দোলন মনে ক'রে দিচ্ছে। কত সাধারণ মানুষ থেকে শুরু ক'রে কত কবি, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, নাট্যকার এককথায় কত অমূল্য প্রাণ, জাতীয় সম্পদ পাকিস্থানী সেনাবাহিনী, রাজাকারদের হাতে শেষ হয়েছে তার মূল্য কে রাখে আর কে দেবে? আজকের বাংলাদেশের নব প্রজন্মকে শুধু এটুকুই বলতে পারি সেদিন ভারতীয় জনমতকে সম্মান জানিয়েছিলেন ভারতের সমস্ত রাজনৈতিক দল, সমস্ত প্রতিষ্ঠান। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় নির্ব্বিশেষে সমস্ত মানুষের হৃদয়ে সেদিন জায়গা ক'রে নিয়েছিলেন শুধু দু'টো মানুষ যা' আজও নতমস্তকে শিকার ক'রে ভারতের সমস্ত মানুষ বাংলাদেশের যুদ্ধের কথা মনে ক'রে,
১) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক ও একমাত্র প্রাণভোমরা শ্রদ্ধেয় মুজিবর রহমান, যিনি কি সহজেই আমার সোনার বাংলার মা-বোন এবং 
দাদা -ভাইদের সমস্ত আম বাঙালির বুকে জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন ঘৃণা আর ক্রোধের আগুন !!

২) ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভারতাত্মা ইন্দিরা গান্ধী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সেদিন আন্তর্জাতিক কোন চাপের কাছে মাথা নত না ক'রে, আমেরিকার চাপকে পরোয়া না ক'রে মানবতার ডাকে, নিজের দেশের ভয়ংকর বিপদের কোথা না ভেবেই ভারতের আসমুদ্র হিমাচলব্যাপী, উত্তরের হিমালয় থেকে দক্ষিণের কন্যাকুমারী পর্যন্ত আপামর ভারতবাসীর হৃদয়ের ডাকে, নিজের বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে সেদিন সমস্ত ভারত আত্মার শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন পাকিস্থানি হানাদারদের বুকে ভয়ংকর কা-লো রাত্রির ভয়াল বিদ্যুৎ হ'য়ে। ছারখার হ'য়ে গেছিল সেদিন ভারত আত্মার রোষে পাকিস্থানী ভাড়াটে মাতৃ-পিতৃ পরিচয়হীন নরাধমরা। আজ ৪২ বছর পর বাংলাদেশের আন্দোলন আমাকে নিয়ে গেছিল টাইম মেশিনে ক'রে মুহূর্তের মধ্যে ৭১ সালের সেই ভয়াবহ দিনগুলিতে একটু ফিরে দেখার জন্য। বাংলার নব প্রজন্মকে আমি শুধু এই স্মৃতিকথা অর্পণ করতে পারি আর পারি বলতে সেই সময় একটা সিনেমা হয়েছিল হিন্দিতে নাম 'জয়বাংলা', সেখানে দেখেছিলাম নারকীয় অত্যাচারের ভয়ংকর চিত্রায়ন। ইচ্ছা করলে আজও দেখতে পাওয়া যেতে পারে হয়তো নেটে। আমার সোনার বাংলার প্রতি রইলো আমার অফুরন্ত ভালোবাসা।
( লেখা ১৯শে ডিসেম্বর'২০১৩)






No comments:

Post a Comment