Powered By Blogger

Wednesday, December 11, 2024

খোলা চিঠিঃ কাজী মাসুম আখতার কে।

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। খুব ভালো লাগলো আপনার যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে CCTV ক্যামেরা বসানো নিয়ে বক্তব্য। আপনার অন্যান্য বিষয়ে বক্তব্য শুনেছি। যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে CCTV ক্যামেরা নিয়ে বক্তব্যে বিরক্তির সঙ্গে 'বাঙালি একটা জাত' বলা ভালো লাগলো। তাই এই বিষয় নিয়ে আপনাকে এই খোলা চিঠি লিখছি।

যাক তবুও তো আপনি বললেন 'বাঙালী একটা জাত?' 'বাঙালি জাত' ব'লে বাঙালিকে ইজ্জৎ দিলেন। দুই বাংলা তো ভাগ হয়েছে বাঙালিকে দিয়েই হিন্দু মুসলমান ক'রে। বাঙালি আবার কবে 'বাঙালি জাত' হ'লো আর হ'লোই বা কি করে সেটা জানতে চেয়ে এই চিঠি।

স্বাধীনতার সময়ে দেশভাগের সময়ে বৃহত্তর বাংলাকে খন্ডিত ক'রে মুসলমান অধ্যুষিত এলাকাকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাবীতে বর্তমান বাংলাদেশকে অবাঙালিরা বাঙালির ঐক্যকে, বাঙালি সেন্টিমেন্টকে ধর্মের উস্কানিতে, ধর্মের সুড়সুড়িতে খতম ক'রে হিন্দু মুসলমান এই দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে বাঙালিদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ক'রে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত ক'রে দিয়েছিল বিদেশীদের সহায়তায়। তখন কোথায় ছিল দুই বাংলার 'বাঙালি জাত বা জাতি?' বর্তমান ভারতের অবশিষ্ট বাংলা অঞ্চলটাকেও অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা হয়েছিল বা করানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সফল হয়নি। কারা করেছিল? আর এই বাঙালি জাতটাকে ভাঙ্গার চক্রান্তে কারা কারা ছিল আর কারা কারা সাহায্য করেছিল? বাঙালি ছিল না? ছিল না 'বাঙালি জাত'-এর ওপরে হিন্দু-মুসলমান তত্ত্ব?

আর তাছাড়া এই বাংলার বাঙালিদের মধ্যেও ছিল, আছে বাঙালি মানসিকতার চেয়ে বড় ও তীব্র সঙ্কীর্ণ বাঙ্গাল-ঘটি নিম্ন মানসিকতা। যে মানসিকতা তীব্র হ'য়ে ফেটে পড়তো ফুটবল খেলার মাঠে। যা হিন্দু বাঙালিদের মধ্যে আজও প্রকট। কলকাতা ফুটবল লীগে মহামেডাম স্পোর্টিং ক্লাবও ছিল। তখনও দেখেছি সেই ক্লাবের সমর্থক কারা ছিল। বাঙালি ছিল নাকি মুসলমান ছিল? কারা এই নানা সঙ্কীর্ণ মানসিকতার জন্ম দিয়েছিল বাঙালিদের অন্তরে? কারা গোপনে 'বাঙালি জাত'কে বধ করার জন্য তলে তলে বেড়ে উঠেছিল?
আমরা বাঙ্গালিরা সবাই কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান, কেউ খ্রীষ্টান ইত্যাদি ইত্যাদি ধর্মের। আবার আমরা কেউ বাঙ্গাল, কেউ ঘটি ইত্যাদি। হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ ইত্যাদি ইত্যাদি ধর্মের ও বাঙ্গাল, ঘটি মানুষ আমরা কেউ বাঙালি ন'ই। 'বাঙালি জাত' মরে গেছে বহুদিন আগে; তাই 'বাঙালি জাত' কথাটা এখন ভুল, আর খাটে না।

এছাড়া বাংলা ভাষাটাই তো এখন নানা বিদেশি ভাষায় আক্রান্ত হ'য়ে তার বৈশিষ্ট্য, তার মর্যাদা, তার সৌন্দর্য হারিয়েছে। অনেক বাংলা শব্দের অর্থই তো জানি না। যেমন আপনি আমি। আমি আপনি কি বাঙালি? নাকি হিন্দু-মুসলমান? আপনি আগে মুসলমান, আর আমি আগে হিন্দু তারপর আপনি ও আমি বাঙালি। মুসলমানকে আগে মুসলমান বলা হয় বাঙালি বলা হয় না, এ কথা আপনি বা মুসলমানরা অস্বীকার করতে পারবেন? ঠিক তেমনি কথা হিন্দুদের ক্ষেত্রেও খাটে। যতদিন যাচ্ছে হিন্দু বাঙালি ও মুসলমান বাঙালি পরস্পরকে বাঙালি ব'লে বিশ্বাস করে না, আপন ভাবে না, কেউ কাউকে বাঙালি ব'লে ভাবে না। শত্রুতার ডিম ফুটে চলেছে তা দিয়ে দিয়ে। যার জ্বলন্ত উদাহরণ সদ্য শেষ হওয়া ভারত ও অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট ফাইনাল খেলা নিয়ে। লড়াইটা মূলত লেগে গেল দুই বাংলার বাঙালিদের মধ্যে। যেন মনে হচ্ছে গোটা ভারতটাই বাঙালিদের ভারত। সোশ্যাল মিডিয়ায় পরস্পরের মধ্যে অশ্লীল গালাগালি, বিবাদ, অশ্রাব্য খিস্তিখেউড় সব চললো দুই বাংলার হিন্দু মুসলমানের মধ্যে, বাঙ্গাল-ঘটির মধ্যে, বাঙালির মধ্যে নয়। রেষারেষির সব দায়দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে দুই বাংলার বাঙ্গালিরা হিন্দু-মুসলমান ও বাঙ্গাল-ঘটির ভিত্তিতে। এই ব্যাপারে ব্যতিক্রম অবশ্যই ছিল ও আছে হিন্দু-মুসলমান।বাঙ্গাল-ঘটি বাঙালির মধ্যে দুই বাংলায়। কিন্তু তা ছিল গৌণ ও ম্লান।

আর, তার ওপর দেখতে পাই মুসলমান বাঙালি মুসলমান বাঙালির বিরুদ্ধে আর হিন্দু বাঙালি হিন্দু বাঙালির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার ক'রে চলেছে। এই আপনার রীলের মধ্যে কমেন্ট বক্সে তার প্রমাণ আছে। গোটা ভারতবর্ষে বাঙালি জাতকে বজ্জাত বলে অবাঙালিরা। আর বিশ্বে? বিশ্ব দেখে নিয়েছে কিভাবে বাঙালি দিয়েই বাঙালিকে খতম করা যায় ভারত শাসন ভারত ভাগের সময়। সে অভিজ্ঞতা বিদেশীদের ও ভারতের অন্য প্রদেশের অবাঙালিদের আছে। কাউকে লাগবে না।

আমরা সবাই কমবেশি জানি, ইতিহাসের বুকে সেই অতীত থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত বাঙালিদের দ্বারা বাঙালিকে কিভাবে খতম করা হয়েছে ও হ'য়ে চলেছে তার Blue print তৈরি আছে। সেই Blue print-এর ভিত্তিতে বহু মহান বাঙালিকে মুছে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সর্বাগ্রে মুছে দেওয়া হয়েছে ভারতভাগের শুরুতেই নেতাজী সুভাস চন্দ্র বোসকে যাতে হিন্দু-মুসলমানের ভিত্তিতে ভারতকে ও বাংলাকে ভাগ করা যায় সহজেই এবং বাঙালি ঐক্য, মেধা ও শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করা যায়। দ্বিতীয়বার মুছে দেওয়া হয়েছে বাংলা ও বাঙালির আর এক গর্ব বাঙালি শেখ মুজিবর রহমানকে। যাতে দুই বাংলা কখনও একাত্ম হ'তে না পারে বাঙালি বোধে, বাঙালি মানসিকতায়, বাঙালি চিন্তায়, মননে ও ভালোবাসায়। চক্রান্তকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের এই সমস্ত ভাগাভাগি, ভাঙ্গাভাঙ্গিতে কারা সহযোগীতায় মুখ্য ভুমিকা নিয়েছিল? এই বাঙালিই! নয় কি? তাই আপনার এই বিষোদ্গার করা 'বাঙালি জাত' কথার মধ্যে উঠে এলো তাহ'লে 'বাঙালি জাত' ব'লে একটা ছিল। এই বিষয়ের ওপর আপনার সুচিন্তিত মতামত দিলে খুশী হবো।

আপনি আমার ভালোবাসা নেবেন।
( লেখা ১১ই ডিসেম্বর'২০২৩)

No comments:

Post a Comment