Powered By Blogger

Monday, December 9, 2024

অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধিঃ মৃত্যুর মুখোমুখি ও নোতুন জীবন। (৪) শেষ পর্ব।

কে তুমি দয়াল? কে তুমি প্রভু?

শ্রীশ্রীআচার্যদেবের আশীর্বাদপূত VASUDHAIBA KUTUMBAKAM FOUNDATION এর একটি ইউনিট ANUTTARA SAMYAK SAMBODHI. সেখানে হিলিং সেকশানে হিলিং সেশন শেষে চারজন গাড়িতে উঠে বসলো বাড়ি ফেরার জন্য। গাড়ি ছুটে চলেছে বেহালার রাস্তা ধ'রে ক্যালকাটা বিজনেস স্কুল-এর দিকে। সেখানে ক্যাম্পাসে একজন ছাত্রী পেশেন্টকে নামিয়ে দিয়ে ফেরার পথে ক্যাম্পাসের গেট দিয়ে বেরিয়েই বড় রাস্তায় ওঠার মুখে ঘটেছিল ভয়ংকর দূর্ঘটনা। যে ভয়ংকর দূর্ঘটনার পরিণতি হ'তে পারতো মর্মান্তিক সেই মর্মান্তিক পরিণতির হাত থেকে আমাদের দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত অলৌকিক রহস্যময় এক শক্তি বাঁচিয়ে দিয়েছিল গাড়ির তিন আরোহীকে। আর ঠিক সেই মুহূর্তে ভয়ে আতঙ্কে দিশেহারা তিন আরোহী চীৎকার ক'রে ডেকে উঠেছিল 'দ-য়া-ল' ব'লে।
আর, তখনি তাদের মনে পড়েছিল দয়াল ঠাকুরের বলা,
"আমি ইচ্ছে করলে কুষ্ঠি ওলোট পালোট ক'রে দিতে পারি। আমি যদি মনে করি কাঠের বিড়াল দিয়ে ইঁদুর ধরাতে পারি। আমি যে তোদের কত ছোট ছোট ভাবে, কতরকম ভাবে কত বড় বড় বিপদ থেকে রক্ষা করি তা' তোরা বুঝতে পারিস না।"

শ্রীশ্রীঠাকুর আমাদের কতবার কত রকমে সাবধান ক'রে দিয়ে এই কথা বলেছেন কিন্তু আমরা তা' কর্ণপাত করিনি কখনও।
আজও যখন এই ঘটনা আলোচনা হয় তখনি কাঁদতে কাঁদতে দয়াল ঠাকুরের বীজমন্ত্রে দীক্ষিত চিকিৎসক দম্পতি ও গুরুবোন সোনাই ঢালি স্মরণ করে উপরে উক্ত এই কথা।

এখন এই শেষ প্রতিবেদন লিখতে বসে এক এক ক'রে সংশ্লেষণ বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে দেখে নিতে চাই পুরো ঘটনাটা। কেন এই ঘটনা ঘটলো? কেনই বা এই ঘটনার পরিণতি ভয়ংকর মর্মান্তিক হ'লো না? কেন ঐ সোনালি মা হিলিং সেশন শেষে ঐ চিকিৎসকের গাড়িতে বাড়ি যাওয়ার কথা থাকা সত্ত্বেও শেষ মুহূর্তে মত পরিবর্তন ক'রে অত রাতে মেয়েকে নিয়ে একা চলে গেল? এরকম বহু প্রশ্ন নিয়ে হাজির হলাম আমি,
যা' মিলে যায় সেই শেক্সপিয়ারের বলা কথা যা শ্রীশ্রীঠাকুর আলাপ আলোচনার মাঝে ভাব গম্ভীর পরিবেশে ভাব সমাধি অবস্থায় মাঝে মাঝেই বলতেন, "There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy."
যার অর্থ ছিল,
স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরাশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত।"
আসুন, একবার সমস্ত ঘটনায় এক ঝলক চোখ বুলিয়ে নিই, দেখে নিই এই ভয়ংকর দুর্ঘটনায় যে মর্মান্তিক দুঃখজনক ঘটনা ঘটতে পারতো, অকালে চিরসমাপ্তি ঘটতে পারতো বা মারাত্মক জখম হ'য়ে চিরদিনের মতো পঙ্গু হ'য়ে বেঁচে থাকতে হ'তো নিজের ও অপরের কাছে বোঝা হ'য়ে গাড়ির আরোহীদের সেই ঘটনা কেন ঘটলো, কি কি কারণে ঘটলো, মর্মান্তিক হ'তে গিয়েও কেন হ'লো না ইত্যাদি।
আসুন পাঠকবর্গ, এক এক ক'রে সংশ্লেষণ বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে দেখে নিই পুরো ঘটনাটা যা দয়ালের দয়ার পাত্র হ'য়ে ঘটেনি, ঘটেনি পরমপিতার অপার করুণায়, অজচ্ছল দয়ায় অলৌকিক ভাবে ।

১) সেদিন শনিবার দুর্ঘটনার দিন গাড়ির চালক হিলিং থেরাপির চিকিৎসক শ্রী শিবাশীষ চ্যাটার্জীর মন থেকে গাড়ি চালানোর একদম ইচ্ছে ছিল না। আগের দিন শুক্রবার সকাল থেকেই সে বারবার বলেছিল কাল আমি গাড়ি চালিয়ে যাবো না। আমার চালাতে ইচ্ছে করছে না। তথাপি কেন যে শেষমেশ স্টিয়ারিঙে হাত দিল তা আজও বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে যে অলৌকিক ঘটনা ঘটে যা দর্শনের পাল্লার বাইরে ও কল্পনার অতীত; এটা কি তাই? একে কি আগাম সাড়া পাওয়া বলে?

২) কেন সেই মহিলা পেশেন্ট ( সোনালি মা ) যাকে নিয়ে এসেছিল ইষ্টপ্রাণা বোন সোনাই ঢালি হিলিং থেরাপির সেশনে সেই সোনালি মা সঙ্গে তার মেয়ে নাতাশা হিলিং থেরাপি শেষে এই একই গাড়িতে যাওয়ার কথা থাকা সত্ত্বেও শেষমুহুর্তে গেল না? অদৃশ্য কোনও হস্তক্ষেপ?

৩) কেন হিলিং সেশন শুরুর আগে শ্রীশিবাশীষ চ্যাটার্জী গুরুবোন সোনাই ঢালিকে আলাদা ক'রে ডেকে এই পেশেন্ট সোনালি মাকে দেখে হঠাৎ কেন বলেছিলেন, "উনার মৃত্যুযোগ আছে; যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পারলে কালই উনাকে দীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করো?"

৪) কেন পরের দিনই শ্রী শিবাশীষ চ্যাটার্জীর কথামতো সোনালি মায়ের দীক্ষার ব্যবস্থা ক'রে তাকে দীক্ষা দেওয়ার পরে প্রখ্যাত জ্যোতিষী ও ঋত্বিক শ্রীসুমন্ত কয়াল, যিনি Senco Gold এ বসেন, সোনালি মায়ের সঙ্গে কথা বলার সময় আশ্চর্য হ'য়ে বলেছিলেন, "আপনার তো বেঁচে থাকার কথা নয়। আপনার তো মৃত্যু হওয়ার কথা, আপনি বেঁচে আছেন? আজকের দিনের জন্যই দয়াল আপনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আপনার নবজন্ম হ'লো।"
অথচ জ্যোতিষী ও শ্রীশ্রীঠাকুরের ঋত্বিক শ্রীসুমন্ত কয়াল গতকাল রাতের ভয়ংকর দূর্ঘটনার কথা তখনও পর্যন্ত বিন্দুমাত্র জানতেন না। কেন নিশ্চিত মৃত্যু রোধ হ'লো?

৫) এই সোনালি মা যার জীবন খুবই করুণ যন্ত্রণাময়, যাকে পাগল প্রতিপন্ন ক'রে হাসপাতালে ভর্তি ক'রে দিয়েছিল স্বামী জোর ক'রে, দাদা বৌদি সব সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে ছেড়ে দিয়েছিল, বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে থাকতো সোনালি মা। হঠাৎ ১১মাস আগে অসহায় সেই মায়ের সঙ্গে ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে একাকী উদভ্রান্ত অবস্থায় হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গিয়ে রেলওয়ের এক প্ল্যাটফর্মে আশ্রয় নেওয়া অবস্থায় কেন গুরুবোন সোনাই ঢালির সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল ?

৬) কেনই বা আবার ১১ মাস পরে হঠাৎ ১লা ডিসেম্বর'২৩ তাঁর সঙ্গে আবার দেখা হ'লো গুরুবোন সোনাই ঢালির সঙ্গে? কেনই বা তাঁকে নিয়ে তার পরদিনই হিলিং থেরাপির চিকিৎসকের পরামর্শ মতো জরুরী সেশনের ভিত্তিতে নিয়ে এলো সেই হিলিং সেন্টারে সেই দম্পতির কাছে মানসিক চাপ মুক্ত হওয়ার জন্য? কেন সেদিন হিলিং থেরাপির চিকিৎসক সেই মাকে দেখেই তাঁর মৃত্যু যোগ আছে বুঝতে পেরে গুরুবোনকে তাঁকে ঠাকুরের দীক্ষা দেবার কথা বলেছিল তাড়াতাড়ি?

৭) আর কেনই বা পরদিনই সেই ঋত্বিক দাদা মাকে দীক্ষা শেষে 'আপনি এখনও বেঁচে আছেন? আপনার তো মৃত্যুযোগ ছিল'---- এই বেঁচে থাকার কথা বলেছিলেন? অথচ 'হিলিং থেরাপি'-র চিকিৎসক এবং ঋত্বিক কাম জ্যোতিষীর সঙ্গে এর আগে কোনও পরিচয় বা যোগাযোগ কখনো ছিল না।

৮) কেনই বা পরিচিত ঋত্বিক যারা কাছাকাছি থাকে এবং যাদের দিয়ে এর আগে বরাবরই দীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সেই গুরুবোন সোনাই ঢালি কেন তাঁদের একজনকেও চেষ্টা করা সত্ত্বেও পেল না সেদিন সোনালি মাকে দীক্ষা দেওয়ার জন্য? আর কেনই বা শেষে হঠাৎ যোগাযোগ হ'য়ে গেল Senco Gold-এ বসা অপরিচিত জ্যোতিষাচার্য ও ঋত্বিক সুমন্ত কয়াল-এর সঙ্গে? এর পিছনে রহস্য কি?
৯) ঐ গাড়িতে সেদিন হিলিং সেশন শেষে চিকিৎসক দম্পতির গাড়ীতে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা ছিল ঐ অসুস্থ সোনালি মায়ের; সঙ্গে ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কেন যাওয়া হ'লো না? কেন তাঁরা দেরি হওয়ার কারণে চলে গেলেন?

১০) বিদ্যুৎ গতিত ছুটে আসা ঐ ওভার লোডেড ট্রাকটা যদি সামনে ধাক্কা না মেরে আর একটু সময়ের এদিক ওদিক হ'য়ে সোজা ড্রাইভিং সিটের দরজায় ধাক্কা মারতো তাহ'লে কি ঘটতো?

১১) কিংবা গাড়ির মাঝখানে বা পিছনের দরজায় যেখানে গুরুবোন সোনাই ঢালি বসেছিল সেখানে ধাক্কা মারতো কিংবা আরও একটু গাড়ি এগিয়ে যাওয়ার পর যদি পিছন থেকে ধাক্কা মারতো ঐ অত রাতের অন্ধকারে তাহ'লে কি হ'তো? কেন এমনটা হ'লো না?

১২) প্রচন্ড ধাক্কা খেয়েও কেন গাড়ি বেসামাল হ'য়ে রাস্তার পাশের খালে উল্টে পড়লো না? কেন সামান্য একটু দুলে উঠেই গাড়ি শক্ত হ'য়ে দাঁড়িয়ে গেল?

১৩) এই দূর্ঘটনাটা যদি ক্যালকাটা বিজনেস স্কুল ( C.B.S )-এর ক্যাম্পাসের সামনে না হ'য়ে যদি অত রাতে হাই ওয়ের অন্ধকার রাস্তার মাঝখানে হ'তো?

১৪) কেন এতবড় দূর্ঘটনার পরও স্টিয়ারিঙে বসা হিলিং থেরাপির চিকিৎসক শ্রী শিবাশীষ চ্যাটার্জীর স্টিয়ারিং ধরা হাত একটুও কেঁপে ওঠেনি ও মনসংযোগ বিন্দুমাত্র বিচ্ছিন্ন হয়নি? যা হ'লে গাড়ি নিশ্চিত উল্টে গিয়ে পড়তো একেবারে নীচে।

এরকম নানা প্রশ্ন এসে ভিড় করে এলো মাথায় আর আমি দয়াল প্রভুর মুখপানে চেয়ে অশ্রুভেজা চোখে তা' তুলে ধরলাম দয়ালের চরণতলে।
কে তুমি দয়াল? কে তুমি প্রভু?
দাও হে মাথা নত ক'রে আমার তোমার চরণ তলে,
যাক ঘুচে অবিশ্বাস আর যাক সন্দেহ মুছে চিরতরে।
সত্য তুমি বিশ্ব চরাচর জুড়ে থাক এই অহংকার মম
মিথ্যা অহংকার না থাকে কভু, অজ্ঞানতা মোর ক্ষম। 
(লেখা ৯ই ডিসেম্বর'২০২৩)

No comments:

Post a Comment