Powered By Blogger

Monday, December 9, 2024

প্রবন্ধঃ কৃষি বিল ও আমরা (৪)

কৃষকের জন্য শুধু নয় গরীব, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী আম জনতার দুঃখ কষ্টের জন্য কুম্ভীরাশ্রু শুধু আজ নয় স্বাধীনতার আগে এবং পড়ে ৭৩ বছর ধ'রে ঝ'রে পড়েছে ও পড়ছে এবং আগামিতেও পড়বে। আর আগামী প্রজন্ম আজকের প্রজন্মের মত বুঝুক না বুঝুক প্রতিবাদের রাস্তায় নামবে যেমন আজকের প্রজন্ম তার পূর্ববর্তী প্রজন্মের শিকার। মাঝখান থেকে সেই প্রবাদ আবার স্বমহিমায় জ্বলজ্বল ক'রে ওঠে "নেপোয় মারে দই, আমে দুধে মিশে গিয়ে (আম জনতার) আঁটি হ'য়ে পড়ে থাকা"।
তেমনি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য যেমন চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তৈলবীজ ইত্যাদি আম জনতার অতি আবশ্যক পণ্য এই কৃষি বিলের কারণে আজ আর আম জনতার কাছে অতি আবশ্যক পণ্য নয়। এর ফলে এইসমস্ত পণ্য উৎপাদন করা, তাকে গুদামজাত করা এবং বিক্রি করার উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ রাজ্যের আর রইলো না। রইলো না আপতকালীন বন্টন ও প্রয়োজনে দাম নিয়ন্ত্রণে রাশ টানার কোনও অধিকার। এই বিলের ফলে এখন থেকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ব্যাপারে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে চলে গেল। এই কারণে বিরোধী দল কেন্দ্রের আম জনবিরোধী নীতির জন্য আন্দোলনে পথে নেবেছে।

প্রশ্নঃ ১) প্রতিদিনের অতি আবশ্যকীয় এইসমস্ত পণ্য কোনদিন আম
জনতা সুলভ মুল্যে পেয়েছে?

২) স্বাধীনতার ৭৪বছরে কোনদিন কোন রাজ্য সরকার এইসমস্ত
প্রতিদিনের আবশ্যকীয় পণ্য আম জনতার কথা চিন্তা ক'রে
ব্যাপক হারে উৎপাদন করা ও তাকে ভবিষ্যতের জন্য
গুদামজাত করা এবং যাতে দাম তার সীমা ছাড়িয়ে না যায় ও
আম জনতার নাভিশ্বাস না ওঠে তার জন্য ভীষনভাবে
ইমারজেন্সি মানসিকতায় কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে?

৩) তাহ'লে আজ কেন্দ্রের হাতে অত্যাবশ্যক পণ্য আইন থাকা
নিয়ে এত চিন্তা, মাথাব্যথা কেন? কিসের জন্য?

৪) এতদিন রাজ্যের হাতে এই অত্যাবশ্যক পণ্য আইন থাকায় কি
কৃষক স্বার্থ সুরক্ষিত ছিল?

এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল ৭০দশকের কথা। সেইসময়ে কংগ্রেসি শাসনকালে পশ্চিমবঙ্গে কম্যুনিস্ট পার্টির আন্দোলনে গণনাট্যের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা মনে পড়লো। সেইসময় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠিত হত নাট্য প্রতিযোগিতা এবং তাতে অংশগ্রহণ করা ছিল দারুণ উত্তেজনার। সেইসময় যে নাটকগুলি নিয়ে উপস্থিত হতাম বিভিন্ন নাট্য প্রতিযোগিতায় রাজ্যে কংগ্রেসি পট পরিবর্তনে সেইসব নাটক নাট্য আন্দোলনে বিরাট ভুমিকা পালন করেছিল। নাট্যকার অরুণ চক্রবর্তীর সেইসব সাড়া জাগানো নাটক যেমন হচ্ছেটা কী?, ছররা, স্বপ্ন-যন্ত্রণা-রাজপথ, আমলাদের গামলা গামলা বুদ্ধি ইত্যাদি নানা আলোড়ন সৃষ্টিকারী সাড়া জাগানো নাটক যারা সেই সময়ের সাক্ষী তারা জানে কি অসাধারন সব নাটক অভিনীত হ'তো গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে! আজ সেই দিন আর নেই, আছে শুধু স্মৃতি! সেই স্মৃতির আঙ্গিনায় ভেসে ওঠে আজকের মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতিতে প্রয়াত অরুণ চক্রবর্তীর আরও একটা আকাশ বাতাস কাঁপানো নাটকের নামঃ দামস্ট্রং মূল্যফোস্কার চন্দ্রাভিযান! সেই সাতের দশকে দাম এমন স্ট্রং হয়েছিল, মূল্যবৃদ্ধি এমন ফোস্কা ফেলেছিল শরীরে যে দাম আর মূল্য স্ট্রং হ'য়ে ফোস্কা ফেলতে ফেলতে পাড়ি দিয়েছিল চাঁদের বুকে নীল আর্মস্ট্রং-এর মত! আজ মনে পড়ে সেই নাট্য আন্দোলনের দিনগুলির কথা। তাতে কি হয়েছিল? সরকার বদল হয়েছিল কিন্তু বদল হয়নি শোষণের মানসিকতা! শুধু ছিল কথার হাই, যা আজও সেই ট্রাডিশান সমানে চলেছে! দু'মুঠো খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য কখনোই নিয়ন্ত্রণে থাকেনি, রাখার চেষ্টাও করেনি কোনদিন কোনও সরকার।
আর আজ দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা ও না রাখা নিয়ে, কৃষকদের স্বার্থ নিয়ে আন্দোলন নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। তাই এই কৃষি বিল কৃষকের মঙ্গল হবে কি অমঙ্গল ডেকে আনবে তা আবার সেই সময় জবাব দেবে।
কথায় আছেঃ আশায় মরে চাষা!
ক্রমশঃ। ( লেখা ৯ই ডিসেম্বর'২০২০)

No comments:

Post a Comment