Powered By Blogger

Monday, December 2, 2024

মৃত্যুর মুখোমুখি ও নোতুন জীবন। (১)

শ্রীশ্রীঠাকুর বলতেন,
"জগতে যা কিছু-ঘটে তারই কারণ আছে, আমরা যেখানে কারণটা ধরতে পারি না, সেখানে সেইটাকে বলি অলৌকিক।"

ইংরেজি ভাষার কবি, নাট্যকার ও সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক শেক্সপিয়ারের 'হ্যামলেট' নাটকের একটা লাইন শ্রীশ্রীঠাকুর প্রায়ই বলতেন,
"There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy."
যার অর্থ ছিল, স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরাশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত।

আজ তেমনই এক ঘটনার কথা লিখবো যা পড়লে ভয়ংকর এক ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠবে শরীর, শিউড়ে উঠবে প্রাণ। যার মর্মান্তিক পরিণতির কথা ভাবলেও রক্ত চলাচলের গতি অসম্ভব ক্ষিপ্রতায় দ্রুতগতিতে উচ্চগতি প্রাপ্ত হয়। প্রাণ সঙ্কটে পড়ে। দয়ালের অপার দয়ায় যাদের কথা লিখবো তাদের সঙ্গে সঙ্গে আমি ও আমার স্ত্রী বেঁচে গেলাম নিশ্চিত। আরও একবার দয়াল প্রাণ ভিক্ষা দিলেন আমায়। আমার কথা এইজন্যেই বললাম, ইদানীং যে কোনও ছোটো বড় ঘটনায় হঠাৎ হঠাৎ রক্তচাপ ভীষণ বেড়ে যায়, ফ্লাকচ্যুয়েট করে; যা আমার কোনওদিনও ছিল না। দয়ালের অপার দয়ায় ও করুণায় আমি বিপদমুক্ত থাকি বরাবর। তবুও একটা চাপ ব'য়ে নিয়ে বেড়ায়।
যাই হ'ক, ঘটনাটা এবার বলি। কাল রাত তখন ১টা ৩০ হবে। হঠাৎ স্ত্রীর ফোনটা বেজে উঠলো। সবে ঘুমিয়েছি। ঘুমটা ভেঙে গেল। এমনিতে প্রতিদিন অনেক রাত হয়ে যায় ঘুমাতে কাজে-অকাজে। কাজের চেয়ে অকাজই বেশী। ভাবলাম ফোনটা স্ত্রী ধরবে। কিন্তু ফোনটা বেজে গিয়ে বন্ধ হ'য়ে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার বেজে উঠলো। অত রাতে ফোন বাজলে বুকটা ধরাস ক'রে ওঠে। ঘুম থেকে উঠে আলো জ্বালিয়ে ফোনটা খুঁজতে লাগলাম। কোথাও পেলাম না। চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম কোথা থেকে আওয়াজটা আসছে। মনে হ'লো স্ত্রীর মাথার বালিশের সামনে থেকে আসছে। খুঁজে পেলাম না। কিন্তু মনে হ'লো ওখান থেকেই আসছে। তাই বালিশটা একদিকে তুলে দেখলাম ফোনটা বালিশের নীচে। ফোনটা বন্ধ হ'য়ে গেল। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে ফোন করতে যাবো আবার ফোনটা বেজে উঠলো আর তখনি দেখলাম ফোন করছে মেয়ে। বুকটা ধরাস ক'রে উঠলো। রক্তচাপ বাড়তে লাগলো। বুঝতে পারছি রক্তের চাপ। ফোনটা নিয়ে ঠাকুরের সামনে গিয়ে দয়ালের নাম নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম। 'হ্যালো' বলার সঙ্গে সঙ্গে ও প্রান্তে ভেসে এলো 'বাবা' ডাক। আমি 'হ্যাঁ, বল' বলাতে ওপ্রান্ত চুপ ক'রে গেল। আমি 'হ্যালো, হ্যালো' করতে লাগলাম। ভয়ে বুকটা কাঁপতে লাগলো। স্ত্রীকে ডাকতেও সাহস পাচ্ছি না। একা ঘরে। ছেলে আর বৌমাও নেই ঘরে। বাইরে গেছে। আমি 'হ্যালো, হ্যালো' করতে ওপ্রান্ত থেকে মেয়ে বললো, 'মা ঘুমিয়ে পড়েছে?' আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি উৎকন্ঠার সাথে বললাম, 'এত রাতে ফোন করেছিস, কি ব্যাপার? সব ঠিক আছে তো?' ও পাশ থেকে একটু থেমে ধরা গলায় বললো, 'হ্যাঁ ঠিক আছে।' আমি গলার স্বরের অস্বাভাবিকতায় ভয় পেয়ে বললাম, 'তুই ওরকমভাবে কথা বলছিস কেন?' তারপরেই ভেসে এলো কান্নার শব্দ। কান্নার শব্দ শুনে আমার শরীরটা কেঁপে উঠলো ভয়ঙ্করভাবে। 'তুই কাঁদছিস কেন?' ব'লে আমি একটু জোরে 'কি হয়েছে?' ব'লে চেঁচিয়ে উঠলাম ভয়ে। চীৎকারে বউ-এর ঘুম ভেঙে গেল। ওপাশ থেকে কান্না ভেজা গলায় ভেসে এলো, 'বাবা, ঠাকুর আজ আমাদের নতুন জীবন দিল। মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে ফিরিয়ে দিল আমাদের সবার জীবন। নতুন গাড়িটার সামনের দিকটা একেবারে শেষ হ'য়ে গেছে।'
একনাগাড়ে কথাগুলি ব'লে থেমে গেল মেয়ে। আর তারপরেই কেটে গেল লাইনটা। বারবার ফোন করাতেও কিছুতেই কানেক্ট করতে পারলাম না। অজানা আশংকায় হাত-পা কাঁপতে লাগলো। বুঝতে পারলাম রক্ত চাপ বাড়ছে। ভয়ে, উৎকণ্ঠায় হিতাহিতজ্ঞানশূন্য আমি নাম করতে লাগলাম। আমি জানি রক্তচাপ বাড়তে বাড়তে ১৯০-এ চলে যায়। স্ত্রী ঘুম থেকে উঠে আতংকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো, কি হয়েছে? কি হয়েছে? আর তখনি আবার ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনে জিজ্ঞেস করাতে বুঝতে পারলাম নেটের প্রবলেমের জন্য কানেক্ট হচ্ছিলো না। তারপর ওপাশ থেকে কাঁদতে কাঁদতে ভেসে এলো দয়ালের অজচ্ছল দয়ার কথা। ধীরে ধীরে সমস্ত ঘটনাটা শুনে ঘটনার ভয়াবহতায় বিস্ময়ে, ভয়ে ও দয়ালের দয়ায় হতভম্ব হ'য়ে গেলাম। কিছুক্ষণ কথা বলার পর স্ত্রীর হাতে ফোনটা দিয়ে গিয়ে বসলাম ঠাকুর ঘরে, ঠাকুরের মুখের দিকে চেয়ে ব'সে রইলাম।
দু'চোখ ভরে এলো জলে। কোনও কথা বলতে পারলাম না। বোবা হ'য়ে চুপ ক'রে বসে রইলাম। শুধু মনে পড়ে গেল সবার উপরে লেখা শ্রীশ্রীঠাকুরের কথাগুলি,
"জগতে যা কিছু-ঘটে তারই কারণ আছে, আমরা যেখানে কারণটা ধরতে পারি না, সেখানে সেইটাকে বলি অলৌকিক।"

আর মনে পড়ে গেল শেক্সপিয়ারের 'হ্যামলেট' নাটকের লাইন যা শ্রীশ্রীঠাকুরের অন্যতম প্রিয় এবং প্রায়ই তিনি আপন মনে আউড়াতেন,
"There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy."
যার অর্থ ছিল, স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরাশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত।

আর তারপরেই মনের মধ্যে ভেসে উঠলো বহুবার পড়া, বারবার পড়া দয়ালের ব্যথাজড়িত কণ্ঠে বলা কথা। স্পষ্ট দেখলাম, ব্যথায় বিবর্ণ ঠাকুর যেন আমায় বলছেন,
"আমি যে তোদের কত ছোট ছোট ভাবে, কতরকম ভাবে কত বড় বিপদ থেকে রক্ষা করি তা' তোরা বুঝতে পারিস না।"

আমার দৃষ্টি ঝাপসা হ'য়ে এলো। আমি জল ভরা চোখ বন্ধ ক'রে বসে রইলাম। কানে ভেসে এলো স্ত্রীর মেয়ের সঙ্গে কথা বলা কন্ঠস্বর। রক্তচাপ নেমে ধীরে ধীরে নরম্যাল হ'য়ে গেল বুঝতে পারলাম।

আমি আলোআঁধারী ঘরে একাকী বসে মনে মনে ভাবতে লাগলাম মেয়ের মুখে শোনা রাতের রাস্তায় ঘটা আমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত ভয়াবহ অলৌকিক সমস্ত ঘটনাটা।
ক্রমশ।
( লেখা ৩রা ডিসেম্বর' ২০২৩)

No comments:

Post a Comment