যাই হক, প্রোগ্রাম চলার সময় কানে আসে কথাটা। কথাটা হ'লো "যতই ঘুড়ি ওড়াও রাতে লাটাই তো আমার রাতে।" এই কথাটা এর আগেও শুনেছি এই প্রোগ্রামে! তখন ভেবেছিলাম হয়তো সংশোধিত হ'য়ে যাবে পরবর্তী সময়ে। কিন্তু দেখলাম, না! হওয়ার নয়! তাই বিষয়টা তুলে ধরার প্রয়োজন অনুভব করলাম একজন সচেতন নাগরিক ও প্রোগ্রামের দর্শক হিসাবে। কানে হেড ফোন লাগানো অবস্থায় যে গান ভেসে আসে তখন সঞ্চালক রচনা ব্যানার্জী প্রশ্ন করেন প্রতিযোগীকে আর তখন অংশগ্রহণকারী নারীপ্রতিযোগী তাঁর স্বামীর সামনে দাঁড়িয়ে রচনার প্রশ্নের উপরে গানের প্রথম লাইন বলেন। সেই গানের লাইন "যতই ঘুড়ি ওড়াও রাতে, লাটাই তো আমার রাতে।"!!!
আমার চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ও রচনা ব্যানার্জীর কাছে প্রশ্ন, এই গানের লাইনের মানে কি!? রচনা ব্যানার্জী এবং জি বাংলা অথরিটিকে প্রশ্ন এমন একটা গানের লাইনের খুল্লমখুল্লা মায়েদের অর্থাৎ নারীদের অনুষ্ঠানে উল্লেখ করার উদ্দেশ্য কি!? প্রকাশ্যে একটা চ্যানেলে নারীর মুখ দিয়ে যে গানের লাইন স্বামীর উদ্দেশ্যে খুল্লমখুল্লা বেরিয়ে আসছে সেই গানের অন্তর্নিহিত মানে কি!? সেই গানের সেটিং জি বাংলা অথরিটি করেছিলেন আর তা নারীর মুখ দিয়ে বলিয়াছিলেন! যারা সেটিং-এ ছিলেন তারা কি পুরুষ ছিলেন নাকি নারী? যদি পুরুষ হ'য়ে থাকে তাহ'লে তারা নারীকে দিয়ে প্রকাশ্যে মিডিয়াতে রাতের নিষিদ্ধ গোপন দিদিগিরির রূপ দিদি নং ওয়ান প্রোগ্রামে উলঙ্গ ক'রে দিয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন? নারী তাদের হাতের পুতুল মাত্র!? আর যদি নারী হ'য়ে থাকে প্রোগ্রাম সেটার তাহ'লে তারা নিজেরা নিজেদের উলঙ্গ ক'রে পুরুষের কাছে নিজেদেরকে সস্তা পণ্য ক'রে তুললো!?
আশ্চর্য লাগে যখন রচনা ব্যানার্জী জিজ্ঞেস করলেন প্রতিযোগীনিকে, স্বামীকে কি বলবেন? তখন স্ত্রী হাসতে হাসতে বললেন গানের লাইনটা যেটা তার কানের হেডফোনে বাজছে, "যতই ঘুড়ি ওড়াও রাতে লাটাই তো আমার হাতে।" আর এই লাইন শুনে সঞ্চালক রচনা জিভ কেটে হেসে উঠলেন, হা হা হা ক'রে বিকট! জিভ কেটেছেন মানে লজ্জা লেগেছে আর হেসে উঠলেন মানে ভালো লেগেছে, মজা পেয়েছেন! স্ত্রী প্রতিযোগিনীর হাসির উচ্ছাস প্রমাণ করে লাটাই যে তার হাতে সেটা বেশ অহংকার ও গর্বের ব্যাপার!
এরকম চ্যানেলে চ্যানেলে প্রোগ্রামে, সিরিয়ালে, বিজ্ঞাপনে নারীকে খিল্লির বিষয়বস্তু ক'রে তোলে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ! তা'তে কোনও হেলদোল হয় না নারীবাদীদের বা নারী এলিট সমাজের! কিছুদিন আগে শ্যাম স্টিলের একটা বিজ্ঞাপনে দেখা গিয়েছিল একটা দৃষ্টিকটু বিষয়! বিজ্ঞাপনটা ছিল বিরাট কোহলি ও অনুষ্কা শর্মার। বিজ্ঞাপনে স্ত্রী অনুষ্কা লাথি মেরে স্বামী কোহলিকে ডাকছে! এই হ'লো ভারতীয় এলিট সমাজের শিক্ষা-চেতনা-সভ্যতার নিদর্শন! চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বা শ্যাম স্টীলের কর্ণধারদের এই বিষয়ে প্রথমদিকে কোনও হেলদোল বা মাথাব্যথা ছিল না। এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এইখানে আমার টাইম লাইনে লিখেছিলাম।
যাই হ'ক পরবর্তী সময়ে সেই দৃষ্টিকটু জায়গাটা এডিট হ'য়ে যায়।
এবার আসি হক কথায়। আচ্ছা 'দিদি নং ওয়ান' নারীদের প্রোগ্রাম কি মেসেজ দিচ্ছে সমাজকে!? প্রথমতঃ আজকে ডঃ প্রিয়াঙ্কা রেড্ডির অপরাধীদের বিরুদ্ধে ভোরবেলায় হওয়া এনকাউন্টারের কোনও প্রতিফলন পড়লো না প্রোগ্রামে! অথচ এই দিদি নং ওয়ান প্রোগ্রামে কত নারীর মুখে শুনেছি তাদের স্বামীদের কাছে, বয় ফ্রেন্ডদের কাছে কিংবা দরিন্দাদের হাতে সীমাহীন যন্ত্রণাদায়ক অত্যাচারিত হওয়ার, অবহেলিত, অপমানিত হওয়ার কাহিনী! অথচ আজকের দিনে দিদিদের প্রোগ্রামে ডঃ প্রিয়াঙ্কা রেড্ডির দরিন্দাদের এনকাউন্টার সম্পর্কিত বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য হ'লো না। এতে জি বাংলার মনোভাব স্পষ্ট হ'য়ে উঠলো, 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা।' অথচ প্রোগ্রামে বৃত্তি-প্রবৃত্তির সুড়সুড়ি দিতে এক্সপার্ট চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। এতে সমাজে কি মেসেজ যাচ্ছে তার ধার ধারে না জি বাংলা। অত গভীরে যাওয়ার মত সময়, শিক্ষা, চেতনা নেই চ্যানেল কর্তৃপক্ষের। নারীর প্রগতি নিয়ে শুধু উপরসা ভন্ডামী করো আর পয়সা কামাও! ভার মে যায় সমাজ! ভার মে যায় নারীর ইজ্জৎ!! ভার মে যায় শিক্ষা-সংস্কৃতি!!!
কারণ না নারী বড়া না সমাজ, না শিক্ষা বড়া না চেতনা দা হোল থিং ইজ দ্যাটস সে মাইয়া সবসে বড়া রুপাইয়া!!!!!!
কি বলেন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ? কি বলেন রচনাদি?
( লেখা ৬ই ডিসেম্বর'২০১৯)
No comments:
Post a Comment