Powered By Blogger

Tuesday, December 31, 2024

উপলব্ধিঃ শিব ঠাকুরের আপন দেশে-------

শিব ঠাকুরের আপন দেশে-------
সরকার কি কোমায় আচ্ছন্ন!? নববর্ষের ডি. জে. শব্দ দানবের তান্ডব কি কানে পৌঁছোয় না!? চোখে দেখে না!?!?!? সরকার, প্রশাসন, প্রশাসক কি কালা!? অন্ধ!?!?

ঠিক এমনি বরাবরের অন্যান্য অনুষ্ঠান, উৎসব ও পুজোর মত ছট পূজার সময়ও পানিহাটি স্বদেশী মোড়ে জনবহুল বি. টি. রোডে প্রকাশ্যে দেখেছিলাম সারাদিনব্যাপী শব্দদানবের দাপাদাপি, শুনেছিলাম জনবহুল ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ির ভিড়ে ডি. জে. শব্দদানবের হুঙ্কার! কেউ কারও কথা শুনতে পাচ্ছে না, কারও সঙ্গে কথা বলতে পারছে না! গাড়ির হর্ন চাপা পড়ে যাচ্ছে ডি. জে-র ভয়ঙ্কর গর্জনের নীচে!!!!! একটা অদ্ভুত দানবীয় উল্লাসের খুল্লমখুল্লা স্বাধীনতা! কোনও প্রশাসন নেই, নেই কোনও শাসন ও নেই কোনও প্রশাসক! অনুরোধ করলে সামান্য একটু কমিয়ে দেয় একজন আর পরমুহূর্তেই আর একজন ছট পূজার উদ্যোক্তা এসে দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয় শব্দের ভলিউম!! শব্দের প্রচন্ডতায় সৃষ্টি হয়েছে একটা উচ্শৃঙ্খল বিশৃঙ্খল পরিবেশ আর সেই পরিবেশে নীরবে মানুষ মুখ বুজে সহ্য ক'রে চলেছে ঈশ্বর পূজার অত্যাচার!!!!! কয়েকটি মাত্র মানুষ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে স্বদেশী মোড়ের মত জনবহুল রাস্তার পাশে সরকার, প্রশাসন, প্রশাসক আর তামাম নাগরিকের সুবিধা-অসুবিধাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বলাৎকার করতে করতে!!!!!! যেন মনে হচ্ছে দেশে কোনও সরকার, পুলিশ, প্রশাসন, প্রশাসক নেই! চালাও পানসি! শালা যা চলছে, চলুক! যা হচ্ছে, হ'ক! চলেছে! চলছে!! চলবে!!! হয়েছে! হচ্ছে!! হবে!!! শিব ঠাকুরের আপন দেশে আইনকানুন সর্বনেশে!! হ্যাটস অফ পুজোপার্বন! হ্যাটস অফ নববর্ষ!! হ্যাটস অফ অনুষ্ঠান-উৎসব!!! হ্যাটস অফ সরকার, প্রশাসন, প্রশাসক!!!! হ্যাটস অফ তামাম সাধারণ-অসাধারণ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, লেখাপড়া জানা ও না-জানাওয়ালা আম নাগরিক!!!!! হ্যাটস অফ!!!!!!! ( লেখা ১লা জানুয়ারী'২০)

কবিতাঃ অতিবাহিক সত্ত্বা।

বিনিদ্র রজনী কেটে যায়, কেটে যায় দিন
তব পরশ লাগি; প্রাণ উচাটন, দেহমন নয় ক্ষীণ।
অশরীরী স্পর্শে জাগাও শিহরন হে দয়াল প্রভু
আমার শরীরে-মনে শয়নে-স্বপনে-জাগরণে
প্রাণময় সত্ত্বার গভীরে নামময় স্পন্দন শুধু
থাকুক অহোরাত্র। হে দয়াল চাহি না অর্থ,
চাহি না মান, যশ, মান-অভিমান
তোমার অতিবাহিক সত্ত্বার ছোঁয়ায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে
ঘটুক বিস্ফোরণ জুড়াক আমার ক্লান্ত শ্রান্ত প্রাণ।
( লেখা ১লা জানুয়ারী'২৪)

বিচিত্রা ৭২

আধুনিকমনস্ক সৎসঙ্গী নাকি সৎসঙ্গী নয়!? 
সৎসঙ্গ মানে মানদাতার আমলে ফিরে যাওয়া 
আর বুড়োবুড়িদের মাঝে শুধু হরিবোলের হুঙ্কার ছাড়া?

সবকিছুর মধ্যে ফুঁটো খোঁজার স্বভাব 
নিজের অজান্তে জনসমাজে নিজেকে 
'ফুঁটো দা' ক'রে তোলে! সাবধান!!

সৎসঙ্গী গুরুভাইদের কাছে বিনীত নিবেদন
ভুল ধরার আগে নিজে কিছু ক'রে দেখান।

সাজানো বাগানে ফুল তোলা আর 
মালির দোষ ধরা সহজ! 
সাজানো বাগানে ঘুরতে এসে 
নির্বিচারে ফুল ছেঁড়া বন্ধ করুন, 
নিজে মালি হ'য়ে দেখান।

নিজে কর্মী না হ'য়ে কর্মীর দোষ খুঁজে খুঁজে 
ছিদ্রান্বেষীর চরিত্র হ'য়ে বেঁচে থাকার চেয়ে 
ধরিত্রীর বোঝ হালকা করা অনেক মঙ্গলজনক।

পুরোনোকে বিদায় আর নতুনকে স্বাগত 
জানাতে কারা উল্লাসে মত্ত 
শব্দদূষণ-এর পরোয়া না ক'রে 
মানুষকে বাঁশ আর হ্যারিকেন ধরাবে ব'লে!?

মার শব্দ কা হাতোড়া! 
ভাঁড় মে যায় বুড়াবুড়ি!! 
ভাঁড় মে যায় পেশেন্ট!!! 
নয়া সাল আয়া তো মার 
শব্দ কা গোলি -----মে ডিসেন্ট!!!!
( লেখা ৩১শে ডিসেম্বর'২০২২)

সারাবছর একসঙ্গে সুখেদুঃখে 
মিলেমিশে থাকার আনন্দ 
জীবনের চরম পরম পাওয়া। 
স্বল্প জীবনে এর থেকে বড় পাওয়া 
আর কিছুই নেই। 
বছরের শেষ দিনে এই-ই আমার উপলব্ধি।
( লেখা ৩১শে ডিসেম্বর'২০১৯




































Monday, December 30, 2024

বিচিত্রাঃ ৭১

স্বপ্ন নিয়েই তো বেঁচে আছি
স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই
আর স্বপ্নকে সাথে নিয়েই
জানাবো সবাইকে বিদায়!
যা ইউটোপিয়া তা কোনোদিন
বাস্তব হবে ব'লে ভাবতে ভয় পাই।
কে দায়ী? আমি না পরিবেশ?

Old age realizes: Slow but steady.
Youth follows: Fast but unsteady. 
Result: Zero.
Either old age or youth we 
Should rather be fast but steady.

কাল বছরের শেষ দিন
পরশু নতুন বছর শুরু
সবাইকে জানাই অকৃত্রিম ভালোবাসা;
বন্ধু, তবুও বুক করে কেন দুরুদুরু!?

আর একটা নোতুন বছর আসছে 
কলঙ্ক গায়ে মাখবে ব'লে।
বছর বছর বছরেরা আসে 
আলো জ্বালিয়ে আশা জাগিয়ে
সুরের মূর্চ্ছনা আর শব্দে মাতিয়ে!
কিন্তু যাবার যাবে চ'লে 
কাঁদিয়ে ভাসিয়ে পলে পলে।

বছর শেষে উপলব্ধির
খুললো জানালা, খুললো দোরঃ
ভাবতে ভাবতে দিন গেল রে মোর,
আঁধার ঘুচে তাই এলো না আর ভোর।
(৩০শে ডিসেম্বর'২০১৭)














উপলব্ধিঃ ফিরে দেখা ২০২০! (১)

এখন রাত দুটো। ২৯শে ডিসেম্বর'২০, আজ বুধবার। বিষময় দু'হাজার বিশ শেষ হ'তে আজ নিয়ে আর তিনদিন বাকী। চোখে ঘুম আসছে না। চারপাশ নিস্তব্ধ, নিঝুম! বাড়ির সবাই স্বাভাবিক নিয়মেই গভীর ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছে। আমি আছি বসে নিরালায় নিভৃতে জমাট বাঁধা আঁধার রাতে ঘরে একাকি। নিস্তব্ধ নিথর অন্ধকার মধ্য রাত আমায় জানান দেয় বিষময় দু'হাজার বিশের ভয়াবহ দিনগুলি ফিরে দেখার। বিশ্বজুড়ে করোনার ভয়াবহতা গোটা বছরটাকে দুমড়ে মুচড়ে দ বানিয়ে দিলেও নিজের ব্যক্তিগত জীবনে এই ভয়াবহতার কোনও টের পাইনি! মাঝে একবার জ্বর হয়েছিল আর স্বাভাবিক নিয়মেই তা কয়েকদিন থাকার পর জ্বর কমার ওষুধ সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক আর ভিটামিন খেয়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু আজ রাতদুপুরে একাকি নামমাত্র নাইট ল্যাম্প জ্বলা নিরালা নিঝুম অন্ধকার ঘরে ঠাকুরের ফটোর সামনে বসে চলে যাওয়া বিষময় দিনগুলি ভেসে উঠলো একে একে; মন চলে গেল ফিরে দেখার দেশে। ভেসে উঠলো চোখের সামনে তিন মূর্তি! বেঈমান, নেমকহারাম আর অকৃতজ্ঞ!!! মনে হ'লো,
অকৃতজ্ঞ, বেঈমান আর নেমকহারাম কি হওয়া যায়? নাকি অকৃতজ্ঞতা, বেঈমানি আর নেমকহারামি রক্ত বাহিত মারণ রোগের জীবাণু!? অকৃতজ্ঞ-বেইমান-নেমকহারাম কি জন্মভ্রস্ট? প্রশ্নগুলি মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল অনবরতঃ কয়েকদিন ধ'রে। কিন্তু লেখার জন্যে পরিবেশ, পরিস্থিতি অনুকূল ছিল না। লিখবো লিখবো ক'রে লেখা হ'য়ে উঠছিল না আবোল তাবোল কথার ভিড়ে। কোন প্ল্যাটফর্মের ওপর দাঁড়িয়ে ব্যাপারটাকে দেখবো, বুঝবো, বিশ্লেষণ করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। কার ওপর দাঁড়াবো? রাজনীতি? শিক্ষানীতি? ধর্মনীতি? ছোটবেলা থেকে আজ এই বয়স পর্যন্ত শিক্ষা, ক্রীড়া, শরীরচর্চা, অভিনয়, রাজনীতি ও ধর্ম একের পর এক প্ল্যাটফর্মের ওপর দিয়ে হেঁটে আসতে আসতে আসার পথের দু'পাশে লেখার শুরুতে উল্লেখিত প্রশ্নগুলি সম্বন্ধে যা যা দেখেছি, বুঝেছি সব বুকের ও মাথার মাঝে রেখে দিয়েছি। এখন জাবর কাটার মত দেখা ও বোঝাগুলিকে উগলে নিয়ে দেখতে গিয়ে মনে হ'লো, যে প্ল্যাটফর্মের ওপর বর্তমানে দাঁড়িয়ে আছি নিজের সেই প্ল্যাটফর্মের অকৃতজ্ঞতা, বেঈমানি আর নেমকহারামী নিয়ে জাবর কাটা যেতে পারে।
আমার বর্তমান প্ল্যাটফর্ম কি?
ক্রমশঃ
( ৩০শে ডিসেম্বর'২০২০০

Saturday, December 28, 2024

বিচিত্রা ৭০

কিসকো ডর? কাহেকো ডর?
বহেনা কৌন হ্যাঁয় আল্লা ইয়া
ঈশ্বরসে বড়কড়?
আপনে আপকো পহেচানো
আউর ঈশ্বর ছোড়কর কিঁউ করে
দুসরোকে উপর নির্ভর?

ধর্মের নামে ব্যবসার ছলাকলা
করছো ধর্মকে বলাৎকার খুল্লমখুল্লা
তাঁর বাণীর দোহাই দিয়ে ক'রো না
আর নারীর উপর যত পৌরুষের হল্লগোল্লা।

অন্যের যা কিছু সব তোমার 
 নাই লাগতে পারে ভালো;
কিন্তু তোমার মনের মতো 
সব করতে হবে তাকে
এই ভাবনাটাই কালো।

তুমি তোমার মনকে নিয়ে
যদি সদাই ব্যস্ত থাকো
তবে বন্ধু!
অন্যের চটিতে পা গলাবার আগে 
মনকে সজাগ রেখো।

ধর্মের নামে যদি হ'য়ে চলে অধর্ম 
আর সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য 
করাই হয় রাজনীতি তবে এর হাত থেকে 
কি হবে না কোনোদিন মুক্তি!?

কোনদিন আসবে সেদিন যেদিন 
তমসার পার অচ্ছেদ্য বর্ণ মহান পুরুষ 
হাতে নেবে রাজদন্ড আর মানুষ খুঁজে পাবে 
সেদিন জীবন দর্শন অখন্ড!

ঈশ্বর স্বয়ং আসেন নেবে 
মানুষ রূপে মানুষের মাঝে; 
বলেন, তিনি ঈশ্বর পুত্র! 
ঈশ্বর কখনো বলেন না তিনি ঈশ্বর, 
দিয়ে যান শুধু সূত্র!!

আমি তুমিও ঈশ্বর পুত্র
কিন্তু ন'ই ঈশ্বর আর ঈশ্বর স্বয়ং 
মর্তধামে এসে বলেন,
আমি ঈশ্বর পুত্র!!
কারণ এই জীব জগৎ সব নশ্বর।
( লেখা ২৯শে ডিসেম্বর' ২০১৭)





























Friday, December 27, 2024

বিচিত্রা ৬৯

এই গভীর রাতে শুধু তোমায় মনে পড়ে
তোমায় ছেড়ে কেমনে থাকি দূরে দূরে!?
তুমি ছাড়া এই জীবনে সব লাগে আলুনি;
এসো ধরা দাও মোরে, হে প্রিয়!
প্রেম জ্বরে পুড়ুক পরাণ, উঠুক, তুফান,
ভাসা মোরে দিয়ে তীব্র কাঁপুনি।

হরি নাম মুখে নিয়ে সবাই চায় সাজতে হরি!
হরি বলে,
কি যে করি সবাই যে নিচ্ছে হরিকে হরণ করি!!

হরি নামের ছুটিয়ে ফোয়ারা নিজেই হরি হ'লাম!
হরি! তুমি যতই আসো বারেবারে 
তোমায় বানিয়ে মোদের গোলাম 
পরাবো গলায় তোমার লাগাম!!

হরি নাম কা পেয়ালা
হরে কৃষ্ণ কি হালা!
অ্যায়সি হালা পি পি করকে
হরি কো হি মার ডালা!!
( লেখা ২৭শে ডিসেম্বর'২০১৭)









Thursday, December 26, 2024

প্রবন্ধঃ নিজের মুখোমুখি।

যেটা সবাই জানি সেটা নিয়ে আলোচনা ক'রে মানসিক যন্ত্রণা আরও বাড়িয়ে দেওয়ার কোনও মানে হয়? নারীপুরুষ সবাই গল্প করে আনন্দে থাকার জন্য। কিন্তু যখনই এক জায়গায় নারীপুরুষ জড়ো হয়, গল্প শুরু করে তখনি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই কলুর বলদের চাক্কি পেষার মতো ঘুরেঘুরে ফিরে চলে আসে সেই এক জায়গায় টাকার আলোচনায়। টাকা থাকলে তুমি অমুক, টাকা থাকলে তুমি তমুক ইত্যাদি বলতে বলতে শুরু হ'য়ে যায়,

টাকা থাকলে তুমি বাবামায়ের যোগ্য ছেলে,
টাকা থাকলে তুমি যোগ্য স্বামী,
টাকা থাকলে যোগ্য পিতা,
টাকা থাকলে যোগ্য ভাই বা দাদা,
টাকা থাকলে সেরা যোগ্য বন্ধু,
টাকা থাকলে যোগ্য প্রতিবেশী,
টাকা থাকলে তুমি দেশের যোগ্য নাগরিক,
টাকা থাকলে যোগ্য নেতা,
টাকা থাকলে তুমি গ্রামের মোড়ল,
টাকা থাকলে তুমি পাড়ার ক্লাবের প্রেসিডেন্ট,
টাকা থাকলে শ্বশুরবাড়িতে আদরের বড়লোক জামাই,
টাকা থাকলে তুমি গরীবের মসীহা,
টাকা থাকলে তুমি পরিবারের যোগ্য সেরা সদস্য।

এই এক কথা শুনতে শুনতে মনে পড়ে যায় কিশোর কুমারের বিখ্যাত সেই গানের লাইন,
" না বিবি, না বাচ্চা, না বাপ বড়া, না ভাইয়া
The whole thing is that কে ভাইয়া সবসে বড়া রপাইয়া।"
এই যে দিনরাত এক আলোচনা ঘরেবাইরে উঠতে বসতে শোতে জাগতে টাকা-টাকা আর টাকা! এতে কি লাভ হয়? একটা নেগেটিভ অরবিট সবসময় ঘিরে রাখে ঘরের পরিবেশে, নিজের জীবনে, শরীরে-মনে-আত্মায়।

এই যে সবসময় টাকা সংক্রান্ত বিষাক্ত আলোচনা যা' খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ছোটো থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত অন্যের জোর ক'রে চাপিয়ে দেওয়া নিজের মধ্যে চাপা পড়ে থাকা মিথ্যে এক অপদার্থতাকে মনে পড়িয়ে দেয়। মনে করিয়ে দিয়ে সেই অপদার্থতার ঘা-র অসহ্য যন্ত্রণাকে দ্বিগুণ ফিরিয়ে আ্নে; এ ছাড়া আর কিছুই হয় না। আড্ডার গল্পের মাঝে আনন্দের বদলে হতাশার দীর্ঘশ্বাস পড়ে। মনে হয় আবার, আমি একটা অপদার্থ। ফলে পরিবারে ও সমাজে অর্থাৎ ঘরে-বাইরে পরস্পরের মধ্যে ভালো সম্পর্ক নষ্ট হয়, ভেঙে যায়। কিন্তু কেউই ভেবে দেখে না, দেখার প্রয়োজন বোধ করে না কেন পরস্পরের মধ্যে সম্পর্কগুলো ভেঙে যাচ্ছে।

আসলে আমরা কেউই অপদার্থ নই, কেউ নই। একেবারে ছোটো থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যে মানুষ শুনে এসেছে মা-বাবা, ভাই-বোন, দাদা-দিদি, আত্মীস্বজন, বন্ধুবান্ধব, সহপাঠী, মাস্টারমশাই, অফিসের বস, কলিগ থেকে শুরু ক'রে ঘরে নিজের একেবারে আপনজন বউ ও পরবর্তী সময়ে ছেলেমেয়ে সবার কাছে 'তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না ছাগল, আপনি একটা ওয়ার্থলেস অপদার্থ, তোমার দ্বারা কিচ্ছু হবার নয়, একেবারে ফালতু' এমন আরও অপমানজনক অনেক কিছু, সেই মানুষ প্রতিনিয়ত ঘরে-বাইরে শুনতে শুনতে নিজের অজান্তে কখন যে মানসিকভাবে সত্যি সত্যিই ছাগল, মূল্যহীন, অপদার্থ, একেবারে ফালতু হ'য়ে গেছে শরীরে-মনে-আত্মায় তা' সে নিজেই জানে না। আর সবচেয়ে বেশী ঘরের প্রিয়জনের কাছে শুনতে শুনতে আত্মবিশ্বাসশূন্য, হতাশা অবসাদে জর্জরতি এক তাল মাংসের একটা জড় পদার্থে পরিণত হয়েছে মানুষটা। দুনিয়ার রোগ এসে বাসা বেঁধেছে সমস্ত শরীর আর মন জুড়ে। ফলে হয়েছে আরও উপেক্ষা আর অবহেলার পাত্র আমৃত্যু।

আর, যাদের টাকা আছে তাদের যাদের যাদের সঙ্গে কম বেশী পরিচয় ছিল ও এখনও আছে দেখেছি তাদের, তারা, যাদের টাকা নেই তাদের থেকে তারা অর্থাৎ টাকাওয়ালারা অন্তরে, কখনো কখনো বাইরে দুঃখী বেশী। তারা অনেকটা রোবোটে পরিণত এক কৃত্রিম মানুষ। কারণ তারা জানে তাদের টাকার জন্যেই ঘরে বাইরে সবাই তাদের খাতির করে, পাত্তা দেয়। নতুবা দেয় না। তারা এ অপমান না পারে গিলতে, না পারে উগলাতে। তাদের রোবোটিক মন বুঝতে পারে তাদের প্রশংসার মাখখন লাগাচ্ছে, তোয়াজ করছে, তেল দিচ্ছে। অথচ কিছুই করার নেই। এ সমস্ত খাতির যত্নের সঙ্গে জড়িয়ে আছে টাকার উগ্র সুমিষ্ট এক গন্ধ। যতক্ষণ এই উগ্র সুমিষ্ট গন্ধের যোগান দিতে পেরেছে ততক্ষণ মাথায় তুলে রেখেছে, যখনই যোগানে ভাঁটা পড়েছে তখনই দেখেছে কৃত্রিম ভালোবাসার, খাতির যত্নের আসল রূপ। বিশেষ ক'রে টাকাওয়ালার একেবারে আপনজন প্রিয়জন ও আত্মজনেরাই তাকে টেকেন ফর গ্রান্টেড ক'রে নেয়। ভাবখানা এমন, আগে ফেল কড়ি, তারপর মাখো তেল!

তখন তারা নির্বাক অসহায় দৃষ্টি মেলে ছলছল চোখে খামচে ধরা বুকে নোতুন করে উপলব্ধি করে একদিন হাসি মস্করাতে পার্টি পিকনিকে রঙিন জলে গলা ভিজিয়ে নেশাতুর চোখে গেয়ে ওঠা
"না বিবি, না বাচ্চা, না বাপ বড়া, না ভাইয়া
The whole thing is that কে ভাইয়া সবসে বড়া রপাইয়া।" গানের মর্মার্থ।

ফলে তারা যখন বাইরে বেরোয় গরীবের থেকে তারা বেশী গরীব হয়ে বেরোয়। রোবটের মধ্যে আগে থেকে প্রোগ্রাম ফিট ক'রে দেওয়ার মতো বাইরে বেরোবার আগে মুখে কৃত্রিম হাসি মেখে ও সুখী সুখী একটা ভাব চোখে মুখে মেখে নিয়ে বেরোয়।
কিন্তু এই কৃত্রিম হাসি হাসার ও চোখে মুখে সুখী সুখী ভাব মেখে নিয়ে বের হবার দরকার হয় না গরীবের। সে জানে সে গরীব। তার সঙ্গে কেউ মিশুক না মিশুক, কথা বলুক না বলুক কপট ভালোবাসার মানুষের ভিড়ে সে নেই, কপট মানুষের কপট খাতির যত্নের দমবন্ধ করা দূষিত বিষাক্ত আবহাওয়ায় তার প্রাণ ওষ্ঠাগত নয়, কিন্তু সেটা বোঝে না গরীবের পরিবারের আপনজন। পরিবারের লোকেদের কাছে এসব তাত্ত্বিক কথার কোনও মূল্য নেই। ভাঁড় মে যায় ইয়ে সব বেকার ফিলসফি।

তাই টাকা বিশেষ কিছু প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটায়, অবশ্যই মেটায়, হ্যাঁ নিশ্চয়ই মেটায়, তার জন্য টাকার দরকার। কিন্ত টাকা অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতার চাহিদাও মেটায়। সেই অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতার চাহিদা মেটাবার জন্য মানুষ টাকার পিছনে পাগলের মত ছুটে বেড়ায়, ছুটে বেড়ায় পরিবারের প্রিয়জনের চাহিদা মেটাবার তাগিদে অসৎ পথে, আর নিজের অজান্তে ধীরে ধীরে জীবন সূর্য অস্তাচলে ঢলে পড়ে। যেদিন জীবন সূর্য ডুবে যাবার সময় আসে তখন বোধের ঘরে ধরা পড়ে জীবন সূর্য ঢলে পড়েছে তখন ঢলে পড়া পশ্চিমাকাশে বসে বোধে আরও ধরা পড়ে কেউ কারও না, সব স্বার্থের সম্পর্কে বাঁধা। তখন বুঝতে পারে, উপলব্ধি হয় টাকা মূল্যবান হলেও টাকা সবকিছু না। আর, যখন বোঝে তখন আর কিছু করার থাকে না। প্রচুর টাকা তখন শুধুই কাগজ আর কাগজ, কাগজ আর কাগজ। তখন সে একা, নিঃসঙ্গ! ফাঁকা ঘরে অসহায়। আপনজনদের কারও সময় নেই পিছন ফিরে তাকাবার, থেমে যাওয়া ঘড়িকে আবার চালু ক'রে দেবার। তখন তার এতদিনের রোজগার করা গান্ধীর ছবি ছাপানো কাগজের বান্ডিলগুলো আর তার না, এখন বান্ডিলগুলো অন্যের। সব অন্যের। শুধু অসহায় চোখে চেয়ে থাকে সিলিঙের দিকে তাকিয়ে ফাঁকা ঘরে একা। একা ঘরে শুনতে পায় বহুদূর থেকে কে যেন ডাকছে, বলছে, আয়, সময় হ'য়ে গেছে যাবার।

তাই জীবনকে যে অল্পে বেঁধে রাখতে পারে আর যে বোঝে যা কিছুর তৃপ্তি ও আনন্দ সবই ঐ ভূমা র উপলব্ধিতে; অর্থাৎ সর্বব্যাপী পুরুষ; মহান পুরুষ, পুরুষোত্তম পরমপিতার সান্নিধ্যে, সেই মুক্তো পুরুষে জীবনের সমস্ত তৃপ্তি ও আনন্দ লুকিয়ে রয়েছে সে তখন বুঝতে পারে সত্যিই সত্যিই আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনের কোনখানে। সেখানেই খুঁজে পায় জীবনে কোথাও না পাওয়া শান্তি, শান্তি, শান্তি!
( লেখা ২৩শে ডিসেম্বর'২৪)



কবিতাঃ মুখ আর মুখোশ।

মাঝে মাঝে হতাশা আসে, ক্লান্তি আসে, বিশ্বাস যায় ভেঙে।
মুখ আর মুখোশের লড়াই দেখতে দেখতে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত,
চারিদিকে দেখি অন্ধকার, মিথ্যার ঘোর অন্ধকার সবার চোখে!
দেখে অবাক হয়ে যায়! কত দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি যার সাথে
দেখি বেলা শেষে গোধুলী আলোয় লালিম ঠোঁটে
কি ভয়ংকর সুন্দর এক মিষ্টি হাসি হেসে দাঁড়ায় এসে
প্রতিবাদহীন এক গভীর শীতল চোখে পাশে!
দেখে মনে হয়, কি অদ্ভুত! কে এ!?
চিনি চিনি মনে হয়, তবুও চিনিতে না পারি
শুধু মনে হয় শালা আমিই ছিলাম এক আনাড়ি।

শয়তানের হাসি ভগবানের চেয়েও মিষ্টি! মিষ্টি তার কথা!
মৃদু শিষ্ট মিষ্ট প্রতিবাদটুকুও নেই চোখে মুখে,
অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র নেই বুকে ব্যথা!?
প্রেম ভালোবাসার অকুল দরিয়ায় জোয়ারে ভাসিয়ে ভেলা
কথার স্রোতে ভেসে ভেসে জীবন দেখায় মাদারীর খেলা!
কূলকিনারাহীন ভাবনা ভেবে ভেবে ক্লান্ত হ’য়ে পড়ি শেষে।
ক্লান্তি স্তর ভেদ ক'রে উঠে দাঁড়ায় আবার অবশেষে
আরও একবার সত্যের মুখোমুখি হবো ব’লে।

বয়সের গাড়ি হু হু ক'রে চলেছে ছুটে
যে কোনোদিন যাবে থেমে বটে।
শুধু এ জন্মে দয়াল তোমার কথামতো
"saviour of mankind" হওয়া হ'লো না।
দেখা যাক যদি আবার আসি
পালন পূরণ করতে এই ব্রত।
দয়াল দয়া ক'রো, তুমি আমায় ভুলো না।
May be an image of text

বিচিত্রা ৬৮

যার যা প্রাপ্য নয়,
যোগ্য নয় যে যা পাওয়ার
তাই তাকে দিয়েছি দু'হাত ভ'রে 
করেছি উজার হৃদয় আমার; 
আমি কি টুকরা হীরার!?

চল কোদাল চালাই 
ভুলে কেন্দ্রের বালাই
ঝেড়ে সংহতির দায়
ভাসি ফুর্তির হাওয়ায়
যত ভক্তির বালাই
বলবে পালাই পালাই।
অর্থ মান যশের ধান্ধায়
যাবো ইষ্টের দরজায়।

একে মিনমিন, দুয়ে পাঠ;
তিনে গন্ডগোল, চারে হাট!
মন বলে, চল হাটে
পেছনে বিবেক হাঁটে 
চুপিসারে ডেকে বলে, 
সাবধান! খোয়াবি রাজপাট
( লেখা ২৫শে ডিসেম্বর'২০১৭)


















Wednesday, December 25, 2024

বিচিত্রাঃ ৬৭

মখে ইষ্টের ফোয়ারা
মনে ঈর্ষার ছররা
হৃদয়ে বিষবৃক্ষের বাগিচা গঠন!
হাতে নিয়ে ইষ্টের ধ্বজা
চড়ে বসি তাঁর রথে সোজা
না ক'রে নামধ্যান, 
না ক'রে পঠন পাঠন।

বদমাইশি বুদ্ধি মাথায় করছে গিজগিজ
আর ব্যবসা বুদ্ধি নিরন্তর!
তবুও চাও তুমি ইষ্টের দয়া?
শালা বেকুব, তুমি করবে ইষ্টপ্রতিষ্ঠা
নিয়ে বিষে ভরা অন্তর!?
( ২৫শে ডিসেম্বর'২০১৭)

কবিতাঃ এ জীবন শুধুই তোমার জন্য।

এ জীবন শুধুই তোমার জন্য
তুমি ছাড়া নেই আর অন্য!
তোমার নামে প্রাণ আমার বন্য!
তোমার নাম কেবলি আমার অন্ন!

আজ তোমার নামে প্রাণে প্রাণে
জাগে শিহরণ,
তোমার নামে ওঠে প্রাণে
নামের অনুরণন!
মনের মাঝে উঠল বেজে
তোমার নামের গুঞ্জন,
প্রাণে প্রাণে নামের পরশ
হৃদয় অনুরঞ্জন!

নব রূপে যীশু তুমি
এসেছো আবার
আমার জীবন স্বামী।
তোমার নাম আর তুমি
অভেদ জানি
তুমি সর্বজ্ঞ অন্তর্যামী।
( লেখা ২৫শে ডিসেম্বর'১২/ রাত ১২টা)

কবিতা/গানঃ আমরা সবাই ওপারের যাত্রী

আমরা সবাই ওপারের যাত্রী
এ-পারেতে হল্ট স্টেশন;
এই স্টেশনে জীবাত্মা মোরা
করি হানাহানি.........
ও-পারেতে পরমাত্মায় মিলন!!!!!
আমরা সবাই ওপারের যাত্রী!!

দেহরুপ এই গাড়িতে
জীবাত্মা চলে ধীর গতিতে;
পরমাত্মায় হ'লে মিলন,
ছুটে চলে ভীম গতিতে!!
পরমাত্মা অনুকূল (যীশুর কূল)
সঁপেছি দুই কূল,
ইহকূল পরকূল
হবো না ছিন্নমূল।

পথে পথে ঘুরে ফেরা
পথ ভোলা পথিক মোরা;
আলো ধ'রে দেখায় পথ
তোমার ওই নয়ন জোড়া!

অনুকূল প্রভু তুমি ( প্রাণনাথ যীশু তুমি)
তোমার ওই চরণ চুমি!
রাঙ্গিয়ে তোমার রঙ্গে
সাজাবো এই স্বর্গ ভূমি!!

তোমার ওই নয়ন জলে
মোরা সব পরাণ ভুলে,
সঁপেছি মোদের জীব
তোমারই চরণ তলে।
জীবনের এই ক্ষণে
শপথ নি মনে মনে;
ধোয়াবো চরণ তোমার
নয়নের অশ্রুজলে!!!
( লেখা ২৫শে ডিসেম্বর'১৩)

Monday, December 23, 2024

বিচিত্রা ৬৬

ভুলের ভুলভুলাইয়ার ঘুলঘুলিতে 
কেন মরছো ঘুরে অনিবার!?
যার জীবনে যত কম ভুল
জেনো সে থাকে সুখে,
আনন্দ তার দুর্নিবার।

সাবধান!
শয়তানের মিষ্টি হাসিতে 
ভুলেও দিও না তারে বসিতে 
তোমার আর প্রভুর মাঝে;
চতুর জেনো কিন্তু সে 
চার আল দেখে চলে যে।
(লেখা ২৪শে ডিসেম্বর'২০১৭)

উঠতে পলিটিক্স, বসতে পলিটিক্স, 
শুতে পলিটিক্স, খেতে পলিটিক্স, 
চলতে-বলতে-শুনতে পলিটিক্স! 
উফ! জীবনের D. N. A-তে পলিটিক্স!
(লেখা ২৪শে ডিসেম্বর'২০১৯)

তাত্ত্বিক ঘোর আমেজে সকাল থেকে সন্ধ্যে
অলীক মায়ার মোহন বাঁশির সুরে
ডুবে আছো মণি,
তাই জানতে পারলে না তুমি
কোথায় লুকিয়ে আছে জীবনের খনি।
(লেখা ২৪শে ডিসেম্বর'২০২৪)



প্রবন্ধঃ সন্তান থাকুক মোর দুধে ভাতে। (পর্ব ২)

'সন্তান থাকুক মোর দুধে ভাতে (পর্ব ১)' প্রতিবেদন আমি শেষ করেছিলাম "এর জন্যে কে দায়ী? সমাজ? সমাজব্যবস্থা? শিক্ষা? পিতামাতা? পরিবার? পরিবেশ? নাকি সে নিজে?
"
এই পর্ব ১ প্রতিবেদন ক'জন পড়েছেন তা আমি জানি না। তবে ১০কোটি সৎসঙ্গী লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ছুটে চলা সৎসঙ্গীদের মধ্যে কয়েক কোটি ছোট্ট শিশুর দীক্ষিত পিতামাতা আছেন; এছাড়া অদীক্ষিতরাও যাতে উপকৃত হয় সেই উদ্দেশ্যেই আমি এই প্রতিবেদন লিখছি। সমস্ত পাঠককে আমার অনুরোধ আসুন একবার সংশ্লেষণ ও বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে দেখে নিই শিশুর ভবিষ্যৎ জীবন নষ্ট হওয়ার জন্য প্রকৃত কে দায়ী।

কবি সুকান্ত অনেক স্বপ্ন বুকে নিয়ে লিখেছিলেন,
"চলে যাব— তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি—
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার।"

আমিও ব'লে যাই,
যাবার হয়েছে সময়; চলে যাবো যে কোনও একদিন
আমার ফুলের মতো ছোট্ট ছোট্ট দেবদূতদের ছেড়ে
অন্ধকার আগুন পৃথিবী আর বিষাক্ত নিশ্বাসে ভরা
আকাশের তলে।
তাই যাবার আগে ব'লে যাই,
শিশুর ভবিষ্যৎ সুদিন রাখা আছে জেনো নিশ্চিত
শিশুদের মা-বাবাদের কোলে।

প্রশ্নটা ছিল কে দায়ী? আজ পর্যন্ত মানুষের মুক্তির জন্য সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিল পৃথিবীর সমস্ত সমাজ সংস্কারক মনিষীরা। মানুষের যত দুঃখ, কষ্ট, জ্বালা, যন্ত্রণা সমস্ত কিছুর জন্য বুর্জোয়া সমাজ ব্যবস্থা দায়ী ছিল ব'লে তাদের অভিমত। তাই তারা ঐ বুর্জোয়া সমাজব্যবস্থার কারাগারের লৌহকপাট ভেঙে ফেলার ডাক দিয়েছিল। কিন্তু অনেক কিছু হারাবার বিনিময়ে ঐ বন্ধ কপাট ভেঙে ফেলার পরেও আবার ধীরে ধীরে ভুঁই ফুঁড়ে উঠে এসেছিল আরও ভয়ংকর আবার ঐ বুর্জোয়া সমাজব্যবস্থার কারাগারের বন্ধ লৌহকপাট।

তাই, সমাজব্যবস্থার দোষ দেখিয়ে নিজের জৈবী সংস্থিতিতে যে অব্যবস্থা, নিজের প্রাত্যহিক জীবন চলনের ব্যবস্থার মধ্যে যে অব্যবস্থা, পারিবারিক সদস্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে যে অব্যবস্থা, এককথায় চরিত্রের মধ্যে যে অব্যবস্থার দোষ লুকিয়ে রয়েছে তা এড়িয়ে যাওয়া আর গোড়া কেটে আগায় জল দিয়ে গাছ বাঁচানোর চেষ্টা একই ব্যাপার। গুয়ের এ-পিঠ আর ও-পিঠ। সেদিকে কোনও সংস্কারক নজর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। সমস্যার সমাধান যে রিপুতাড়িত বৃত্তি-প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে, জৈবী সংস্থিতির মধ্যে, জীবন্ত সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ গ্রহণের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে তা তারা স্বীকার করেননি ও মানেননি। অহংকারের কারণে আর অবৈজ্ঞানিক ব'লে সেই মূল বিষয়গুলিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে।

শিশুর প্রথম স্কুল তার মা। তারপর বাবা ও পারিবারিক অন্যান্য সদস্যরা। পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। শিশুর বাবা-মা যদি নিজেদের খারাপ দিকগুলিকে পরিবর্তন না করে তাদের জীবন যাপন, চালচলন, কথাবার্তা, আচার আচরণ, চিন্তাভাবনা ইত্যাদির মধ্যে তাহ'লে শত শিক্ষাও তাদের শিশুদের জীবনকে পরিবর্তন করতে পারবে না। কারণ বাবা-মায়ের প্রতিদিনের প্রতিমুহুর্তের শরীরের ও চোখমুখের ভালো বা মন্দ ভাষা শিশুর কাঁচা মাথায় ছাপ রেখে যায়। ছোট্ট শিশুরা নকল প্রিয়। তারা তার চারপাশের সব কিছুকে খুব দ্রুত নকল করতে পারে। তাই খুব সাবধান থাকতে হয় বাবামায়েদের শিশু জন্মের পর থেকেই। বাবা-মা যদি তাদের সন্তানকে সত্যি সত্যিই ভালোবাসে, যদি শিশুকে শরীরে-মনে ও আত্মায় ছোট্ট থেকে মহাত্মায় উত্তীর্ণ করতে চায় তাহ'লে প্রথমে নিজেদের জীবনের যত বদ অভ্যাস, কু অভ্যাস, কুসংস্কার, অসৎ চিন্তা, ভাবনা, কর্ম ত্যাগ করতে হবে, ষড়রিপুকে নিজের কন্ট্রোলে রেখে সচেষ্ট হ'তে হবে মহাত্মায় উত্তীর্ণ হওয়ার। ষড়রিপু অর্থাৎ কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য যেন মা-বাবাকে কন্ট্রোল ক'রে রাস্তার কুত্তার মত টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে না পারে গলায় তাদের বকলেস পড়িয়ে।

তাই, শিশু সন্তানকে কে যদি ভবিষ্যতে আদর্শ মানুষ হিসেবে দেখতে চায় মা-বাবা তাহ'লে মা-বাবার জীবনে আদর্শ গ্রহণ করা দরকার। সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ অর্থাৎ জীবন্ত ঈশ্বরকে যাকে পুরুষোত্তম, পরমপিতা, পরমকারণ, সদগুরু, সর্বজ্ঞ, সর্বদর্শী, সর্বব্যাপী বলা হয় তাঁকে জীবনে গ্রহণ করা দরকার এবং লোকদেখানো ফুল, ধুপ-ধুনো দিয়ে আদর্শের চরণপূজা করা নয় তাঁর চলনপুজা করার দরকার। তাবিজ, মাদুলি, আংটি, পাথর, লালসুতো, কালোসুতো, লোহা, শেকড় বাকড় ইত্যাদি নির্ভর ক'রে সন্তানকে মানসিকভাবে দূর্বল মানুষে পরিণত ক'রে বড় করা নয়। তারপর সেই জীবন্ত ঈশ্বরের চলনপুজা অনুযায়ী নিজে শিক্ষিত হ'য়ে নিজে ক'রে ও সন্তানকে করিয়ে একেবারে আধো কথার সময় থেকেই জীবন্ত আদর্শে অনুপ্রাণিত ক'রে তোলা দরকার এবং যথাসময়ে পাঁচ বছর বয়সেই জীবন্ত সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ সদগুরু পরমপিতার সৎনাম দিয়ে দেওয়া দরকার। তারপর পাঁচ থেকে দশবছরের মধ্যেই যা কিছু সন্তানের ভিত তৈরী ক'রে দিতে হবে। নতুবা সেই প্রবাদ 'কাঁচায় না নুইলে বাঁশ পাকায় করে ট্যাঁসট্যাঁস'-এর মতো হবে। পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে ভিত তৈরীর সময়। সেই সময়ের মধ্যে ভিত যদি তৈরী না হয়, তৈরী না হয় সময়ে কাঁচা জমিতে তখন পাকা জমিতে শত শাসন, লক্ষ সাধু কথা, কীর্তন, গুরুর হাজার আশীর্বাদ কোনও কাজে আসবে না। উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খল রিপুর দাপাদাপিতে বৃত্তি-প্রবৃত্তির বৃত্তে পড়ে হাবুডুবু খাওয়া তোমার সন্তান তখন পাড়ে উঠে আর আসতে পারবে না। যদিও বা আসে কখনও কোনোদিন উঠে তবে ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ে সময় হারিয়ে উঠে আসবে।
আর, তোমার সন্তানের মঙ্গলের জন্য তোমায় তৈরী হ'তে আগে। তৈরী হ'তে জীবন্ত ঈশ্বর যুগ অনুযায়ী যিনি এসেছেন তাঁকে জীবনে গ্রহণ ক'রে তাঁর অনুশাসন মেনে চলতে হবে সন্তানের বাবা-মাকে। ত্যাগ করতে হবে জীবনের সব অলীক মায়ার মোহন বাঁশীর ডাক সন্তানের সুন্দর জীবন যদি চাও তুমি। ত্যাগ করতে হবে সমস্ত রকম ভারসাম্যহীন ভোগ বিলাসিতা। ত্যাগ করতে হবে মদ, সিগারেট ইত্যাদি সমস্ত রকম জীবন ধ্বংসকারী নেশা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে। যদি তুমি সন্তানের মঙ্গল চাও তাহ'লে তোমার আত্মজর দিকে তাকিয়ে ষড় রিপু কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য রিপুর 
সমস্ত রকম বিশৃঙ্খলা থেকে নিজেদের অর্থাৎ বাবা-মাকে মুক্ত থাকতে হবে। নতুবা শিশু বাবা-মা পেয়েও অনাথ শিশুর মতো জীবনে বড় হবে। তুমি নিজের হাতে বসিয়ে দিয়ে যাবে তোমার আদরের সন্তানকে নরকের দ্বারে। বাবা-মা সাবধান। 
( লেখা ২৪শে ডিসেম্বর'২০২৩)

Sunday, December 22, 2024

উপলব্ধিঃ সংশয়।

অনেকদিনের সংশয় এক লহমায় দূর হ'য়ে গেল!

"সবাইকে নিয়ে চলতে যাবো কেন? সবাই আমার কে হয়, শুনি? আমি শুধু ঠাকুর নিয়ে চলবো, সবাই আমার সঙ্গে চলবে। সবাইকে নিয়ে যে চলতে চায় সে ঐ মন্দিরের ঘন্টার মতো,---------যে আসে ঘন্টার মতো ঢং ঢং ক'রে বাজিয়ে চলে যায়।"------শ্রীশ্রীআচার্যদেব।

শ্রীশ্রীআচার্যদেবের রাঙা চরণে কোটি কোটি প্রণাম।
বাপ কা বেটা সহিস কা ঘোড়া
কুছ নেহী তো থোড়া থোড়া।
কে আছিস কোথায়?
দয়াল ঠাকুরের ঝলক
দেখবি যদি আয়
সদলবলে হেথায়!!---প্রবি। 
( লেখা ২২শে ডিসেম্বর'২০২২)




May be an image of 1 person, indoor and text that says 'Satsang Vihar Bengaluru luru'

প্রবন্ধঃ সন্তান থাকুক মোর দুধে ভাতে। (পর্ব ১)

পৃথিবীর সব মায়েরাই তার ছোট্ট সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধ'রে গালে কপালে চুমু খেতে খেতে অশ্রুসিক্ত চোখে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা ক'রে বলে, আমার সন্তান থাকুক দুধে ভাতে। পৃথিবীর গরীব-বড়লোক, মূর্খ-জ্ঞানী, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সৎ-অসৎ, সতি-অসতী সব মায়েদের এই একই চাওয়া। এই চাওয়ায় কোনও ভেজাল নেই, নেই কোনও এই চাওয়ায় ধর্মীয় পরিচয়। একটাই পরিচয় 'মা'। এই একই কথা বাবাদের ক্ষেত্রেও।

মেয়েরা যেমন চেনা পরিবেশ, চেনা মানুষ, চেনা ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে আসে সম্পূর্ণ অচেনা এক মানুষের হাত ধ'রে অচেনা পরিবেশ, অচেনা মানুষজন, অচেনা বাড়িতে অচেনা এক নোতুন ঘরে; তারপরে ধীরে ধীরে স্বামী নামক অচেনা মানুষটির হাত ধ'রে অচেনা পরিবেশ, অচেনা বাড়িঘর, শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর-ননদ নামক অচেনা মানুষজন সবাইকে চেনা ক'রে নেয়, আপন ক'রে নেয়, তারপরে সংসারের সমস্ত কাজের বোঝা কাঁধে তুলে নেয় হাসি মুখে, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে সংসারের জন্য, সংসারের সকল সদস্যের জন্য হাসি মুখে। তারপর একদিন ঈশ্বরের আশীর্ব্বাদে মায়ের ঘর ছেড়ে আসা সেই মেয়েই সংসার সমুদ্র পাড়ি দিতে দিতে একদিন নিজেই 'মা'-এর আসন গ্রহণ করে এবং অবশেষে একদিন সেই নতুন সংসারের সর্ব্বময় কর্ত্রী হ'য়ে ওঠে।

সেই যেদিন সেই মেয়েটি 'মা' হয় তখন সেই মা আমৃত্যু তার সেই ছোট্ট সন্তানের জন্ম থেকে ধীরে ধীরে বড় হওয়া, অনেক বড় হওয়া পর্যন্ত একটা কথায় ভাবে শয়নে-স্বপনে-জাগরণে 'সন্তান থাকে যেন মোর দুধে ভাতে।' এর জন্য কোনও কষ্টকেই কষ্ট ব'লে মনে হয়না মায়েদের। সন্তানের একটু হাসি মুখে দেখলেই সমস্ত কষ্ট, যন্ত্রণা, জ্বর, রোগ, সারাদিন না খেয়ে থাকা, অভাব, অনটন, কত বিনিদ্র রাত ইত্যাদি সব সব ভুলে যায়, শিশুর হাসি মাখা মুখ দেখলেই মায়েদের শান্তি, আর কিচ্ছু চায় না মায়েরা সন্তানের কাছে।

ঠিক এই একই চাওয়া বাবাদেরও। বাবারা সন্তানের জন্য, সন্তানের মঙ্গলের জন্য, সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য পাহার ভেঙ্গে আনতেও পিছপা হয় না। কত কষ্ট, কত পরিশ্রম, কত ক্লান্তি, কত অপমান, কত অবহেলা, কত অন্যায়, কত আঘাত, কত না ঘুমানো রাত মুখ বুঝে সহ্য করে সন্তানের জন্য, সন্তানের মুখে দু'মুঠো ভাত তুলে দেবার জন্য, সন্তানের ভালো থাকার জন্য, সন্তানের পড়াশুনার জন্য, সন্তানকে বড় ক'রে তোলার জন্য।

এই সন্তানকে ঘিরেই নিজেদের কত চাওয়া, কত ইচ্ছা, কত স্বপ্নকে ভ্রুণের মধ্যেই হত্যা করে বাবা-মা। হত্যা করে শুধুমাত্র 'সন্তান থাকুক মোর, থাকবে মোর দুধে ভাতে' এই চিন্তায়। একমাত্র নির্ভেজাল অকপট এই চিন্তায়। কত বিনিদ্র রাত যে কেটে যায় সন্তানের ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে চেয়ে; তার হিসাব কে রাখে? রাখে কি কেউ? সন্তান কি জানে তা? নাকি বোঝে তা? শুধু জানে একজন! সে জন আমার দয়াল প্রভু।
সত্যি সত্যিই কি বোঝে না? নাকি বুঝেও কিছুই করার থাকে না? কেন বোঝে না সন্তান? যে সন্তান পড়াশুনা ক'রে প্রতিষ্ঠিত সে কেন বোঝে না? প্রতিষ্ঠিত পুত্র সন্তান কেন বোঝে না বাবা-মায়ের কষ্টের দিনগুলির কথা? কেন বোঝে না বয়সকালে বাবা-মায়ের মনের কথা, অন্তরের ব্যথা? প্রতিষ্ঠিত পুত্র, উচ্চশিক্ষিত পুত্র বিয়ের পর শ্বশুর শাশুড়ীর প্রতি জামাইয়ের দায়িত্ব পালনে অতিমাত্রায় সচেতন কিন্তু নিজের পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব পালনে ততোধিক উদাসীন হয় কেন? কিসের জন্য? বাবা-মা কি এইজন্যই নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়েছিল যে তাদের প্রাণাধিক পুত্র বড় হ'লে লেখাপড়ায় দড় হ'য়ে বিয়ের পর তাদের ভুলে যাবে ও এমন মেয়েমুখো স্ত্রৈণ পুত্র হবে? কিংবা স্ত্রীর বাপের বাড়ির টাকার জোরে তাদের পুত্র শ্বশুরবাড়ির কেনা গোলাম হবে আর বাবা-মাকেই ভুলে যাবে? নিজের জন্মদাতা মা-বাবার চেয়ে বড় হ'য়ে দাঁড়াবে শ্বশুর শাশুড়ী?

ঠিক তেমনি প্রতিষ্ঠিত, উচ্চ লেখাপড়া করা কিংবা সাধারণ ঘরের কন্যা সন্তান বিয়ের পরেও বাপের বাড়ির প্রতি, নিজের বাবা-মায়ের প্রতি যে রকম দরদী থাকে, কর্তব্যপরায়ণ হয় তেমনটি কেন হয় না নিজের শ্বশুরবাড়ি ও শ্বশুর-শাশুড়ীর প্রতি?

কেন পড়াশুনা জানা, উচ্চমেধাসম্পন্ন সন্তান যখন অর্থ রোজগারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন কোনও সন্তান রাজনীতি, ধর্ম, বিজ্ঞান, আইন, শিক্ষা, ক্রীড়া, শিল্প, সাহিত্য ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যষ্টি, সমষ্টি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র জীবন গঠন, উন্নয়ন ও বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের চেতনার উন্মেষ হয় এমন নীতিকথা বলে ও তুলে ধরে তাদের বক্তৃতায়, লেখনীতে তখন তার বাস্তব ছবি তাঁদের চরিত্রে প্রতিফলিত হয় না কেন? কেন তারা সেই নীতিকথা তাঁদের চালচলন, কথাবার্তা, আচার আচরণ ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে নিজ জীবনে বহন ক'রে নিয়ে চলে না? কেন পালন করে না charity begins at home তত্ত্ব? তখন তাঁদের দিয়ে সমাজের কি হিত রচিত হবে?
আর, যারা অক্ষরজ্ঞানহীন, সাধারণ লেখাপড়া জানাওয়ালা, সরল, সিধা, বেকুব, মূর্খ, দুর্বল, কুসংস্কারাছন্ন, ভীরু, স্বার্থপর, ধান্দাবাজ আম মানুষ তারা যখন স্বাভাবিকভাবেই নিজের অজান্তে নিজেদের সর্বনাশ করার মধ্যে দিয়ে সমাজের সর্বনাশ করে তখন তাদের দিয়েই বা আর কি হবে?
ব্যতিক্রম কি নেই? আছে, নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু এই কলিযুগে ব্যতিক্রম ব্যতিক্রমীই।
এর জন্যে কে দায়ী? সমাজ? সমাজব্যবস্থা? শিক্ষা? পিতামাতা? পরিবার? পরিবেশ? নাকি সে নিজে? 
(লেখা ২২ডিসেম্বর' ২০২৩)



Saturday, December 21, 2024

কবিতাঃ ঈশ্বর ছাড় দেন------

ঈশ্বর ছাড় দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না।
তিনি মহাকাল! তিনি ভয়াল!
বেইমান, নেমকহারামের পূজা তিনি নেন না।
তাঁর সৃষ্টিকে নিয়ে করবে যে খেলা
তাঁর কাছে তিনি কখনো হন না দয়াল।

নিজের ধর্ম ছেড়ে যারা অন্য ধর্মে যায়
তাদের মুখে ধর্মের কথা শুনতে আমি না চাই।
তোমরাও বন্ধু কেউ ধর্ম ও নীতিকথা তাঁর মুখে
যদি চাও নিজের ভালো শুনো না ভাই।

নিজ ধর্মের লোকের কাছে ধাক্কা খেয়ে যারা
নিজের ধর্ম ত্যাগ ক'রে অন্য ধর্ম গ্রহণ করে
তাদের জন্য হয় করুনা, ধর্ম যে কারও বাপের
সম্পত্তি নয় এ বোধ তার নাইরে। কিন্তু যারা অন্য
ধর্মের নারী বা পুরুষের জন্য নিজ ধর্ম ত্যাগ করে
তাদের মুখে নীতিকথা, ধর্ম কথা বিষ বহন করে।

নিজ ধর্ম ত্যাগ না করেও অন্য ধর্মের মানুষকে
ভালোবাসা ও বিয়ে করা যায় যদি বিবাহ বিজ্ঞানকে
মান্যতা দেওয়া হয় এবং ধর্ম আর মতের মধ্যে
প্রকৃত তফাৎ কোথায় তা' বোঝা যায়।

ভয় দেখিয়ে কিংবা গায়ের জোরে বা লোভ দেখিয়ে
যারা অন্য ধর্মের লোককে নিজ ধর্মে ধর্মান্তরিত করে
তাদের জন্য তোলা রইলো নিখুঁত বিচার এ জন্মেই
ঈশ্বর, আল্লা, গড বা ভগবানের দরবারে।

নিজ দল বা সম্প্রদায় ভারী করার জন্য যদি
অন্য ধর্মের লোককে নিজ ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়
জীবন্ত ঈশ্বর যুগাবতার হন ক্রূদ্ধ, মনে রেখো ভয়।
ধর্ম এক, মত বহু, তাই ধর্ম ত্যাগ হয়না ভাই
এক মত থেকে আরেক মতে যেতে পারে সবাই
তার জন্য ধর্ম ত্যাগ করতে হয়না ভাই,
ধর্ম ত্যাগের মত বড় ভুল বন্ধু আর কিছুই নাই।

নিজ ধর্ম ত্যাগ ক'রে যতই তুমি অন্য ধর্মের
অনুসারী হও, তুমি আদপে কোনও ধর্মের প্রতি
অনুগত ও বিশ্বাসী নও; ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু নাই।
যারা প্রচুর জ্ঞানের অধিকারী পান্ডিত্যের ডঙ্কা বাজায়,
তারা জানে না ধর্ম ত্যাগ করা আর অন্য ধর্ম গ্রহণ করা
বেকুবি ছাড়া আর কিছুই নয়? ঘটে বুদ্ধি কিছুই নাই।
এরা জাতি, সমাজ, দেশ রাষ্ট্রের ডেকে আনে ক্ষয়
ঈশ্বরের রাজ্যে এরা শত্রু, এরা ঈশ্বরকে করে না ভয়।

কিন্তু ঈশ্বর যেমন দয়াল তেমনি ঈশ্বর ভয়াল
তিনি ছাড় দেন কিন্তু দেন না ছেড়ে কাউকে
যারা তাঁর সৃষ্টিকে করে বেহাল, তাঁর কাছে তিনি মহাকাল!
এটা কি খুবই কঠিন বিষয়? যা বোঝা না যায়?
এত জ্ঞান তাহ'লে কিসের বার্তা বোঝায়?

গোত্রান্তর ক'রে বিয়ে সমর্থন যেমন মূর্খের শাস্ত্র জ্ঞান
রক্তের শুদ্ধতা হয় নষ্ট তা'তে নেই তার প্রতি ধ্যান।
তেমনি ধর্মান্তর ঘোর পাপ গোত্রান্তর বিয়ের মতো
নরকের আবাহন করছো বন্ধু, জানাচ্ছো শয়তানকে স্বাগত।
তবে তাই হ'ক! ঘোর কলি আগত।---প্রবি।

Wednesday, December 18, 2024

স্মৃতিকথাঃ আমার সোনার বাংলা -----

আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।
ভারত আমার হৃদয়, বাংলা আমার দুই নয়ন!!
প্রাণভ'রে দেখি তোমায়, হৃদয়ে ধরে রাখি।।

১৯৭১ ভুলে যেতে চেয়েছিলাম। আজও সেদিনের ভয়ংকর দিনগুলির কথা ভুলতে পারি না। সেদিন একজন ছাত্র হিসাবে দিনের পর দিন ঘুমোতে পারিনি। বড় অসহায় লাগছিল সেদিন। আমার সোনায় বাংলার ওপর সেদিন রাজাকার আর পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর নারকীয় অত্যাচার এ-পার বাংলা সহ গোটা ভারতের সাধারণ মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, উদ্বিগ্ন ক'রে তুলেছিল, আকুল ক'রে তুলেছিল। ভারত সরকারের ওপর বাড়ছিল উত্তরোত্তর চাপ। আমার বাংলা মা-বোনেদের ওপর যে লালসার নারকীয়, নৃশংস, বিকৃত, পাশবিক, দানবীয় শারীরিক অত্যাচার আর তারপরে নির্মম হত্যালীলা চালিয়েছিল তা' মনে করলে অতি বড় দানবও লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নেবে। মেয়েদের সেদিনের কলেজ হোস্টেলের ঘরে ঘরে, হোস্টেল গুলির দেওয়ালে,আজও কান পাতলে সেই ভয়াবহ দিনগুলির ভয়ার্ত মরণ আর্তনাদ শুনতে পাওয়া যাবে। সেবিনের বাংলার মাটিতে পাকিস্থানি সেনা দরিন্দাদের ক্যান্টনমেন্টগুলি যেন আবার জেগে ঊঠল। ক্যান্টনমেন্টগুলির ভেতরে বাংলা মা-বোনেদের ওপর মদ্যপ সেনাদের ভয়ংকর গা শিউরে ওঠা কামনার উল্লাস, অট্টহাসি, ছিনিমিনি খেলা ছিল সেদিনের পাকিস্থানি হামলার দিনগুলির প্রতিদিনের খোরাক!!!! খবরের কাগজে, রেডিওতে শুনতে শুনতে কেঁপে কেঁপে উঠতাম। আজও এই লেখা লিখতে বসে সেদিনের কথা মনে ক'রে বুক কেঁপে উঠছে। একটা অস্বস্তি মাথাটাকে তোলপাড় ক'রে দিছে। সেদিনের কথা মনে করতে চাইছি না আর দেশজুড়ে চলা আপনাদের আন্দোলন মনে ক'রে দিচ্ছে। কত সাধারণ মানুষ থেকে শুরু ক'রে কত কবি, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, নাট্যকার এককথায় কত অমূল্য প্রাণ, জাতীয় সম্পদ পাকিস্থানী সেনাবাহিনী, রাজাকারদের হাতে শেষ হয়েছে তার মূল্য কে রাখে আর কে দেবে? আজকের বাংলাদেশের নব প্রজন্মকে শুধু এটুকুই বলতে পারি সেদিন ভারতীয় জনমতকে সম্মান জানিয়েছিলেন ভারতের সমস্ত রাজনৈতিক দল, সমস্ত প্রতিষ্ঠান। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় নির্ব্বিশেষে সমস্ত মানুষের হৃদয়ে সেদিন জায়গা ক'রে নিয়েছিলেন শুধু দু'টো মানুষ যা' আজও নতমস্তকে শিকার ক'রে ভারতের সমস্ত মানুষ বাংলাদেশের যুদ্ধের কথা মনে ক'রে,
১) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক ও একমাত্র প্রাণভোমরা শ্রদ্ধেয় মুজিবর রহমান, যিনি কি সহজেই আমার সোনার বাংলার মা-বোন এবং 
দাদা -ভাইদের সমস্ত আম বাঙালির বুকে জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন ঘৃণা আর ক্রোধের আগুন !!

২) ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভারতাত্মা ইন্দিরা গান্ধী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সেদিন আন্তর্জাতিক কোন চাপের কাছে মাথা নত না ক'রে, আমেরিকার চাপকে পরোয়া না ক'রে মানবতার ডাকে, নিজের দেশের ভয়ংকর বিপদের কোথা না ভেবেই ভারতের আসমুদ্র হিমাচলব্যাপী, উত্তরের হিমালয় থেকে দক্ষিণের কন্যাকুমারী পর্যন্ত আপামর ভারতবাসীর হৃদয়ের ডাকে, নিজের বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে সেদিন সমস্ত ভারত আত্মার শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন পাকিস্থানি হানাদারদের বুকে ভয়ংকর কা-লো রাত্রির ভয়াল বিদ্যুৎ হ'য়ে। ছারখার হ'য়ে গেছিল সেদিন ভারত আত্মার রোষে পাকিস্থানী ভাড়াটে মাতৃ-পিতৃ পরিচয়হীন নরাধমরা। আজ ৪২ বছর পর বাংলাদেশের আন্দোলন আমাকে নিয়ে গেছিল টাইম মেশিনে ক'রে মুহূর্তের মধ্যে ৭১ সালের সেই ভয়াবহ দিনগুলিতে একটু ফিরে দেখার জন্য। বাংলার নব প্রজন্মকে আমি শুধু এই স্মৃতিকথা অর্পণ করতে পারি আর পারি বলতে সেই সময় একটা সিনেমা হয়েছিল হিন্দিতে নাম 'জয়বাংলা', সেখানে দেখেছিলাম নারকীয় অত্যাচারের ভয়ংকর চিত্রায়ন। ইচ্ছা করলে আজও দেখতে পাওয়া যেতে পারে হয়তো নেটে। আমার সোনার বাংলার প্রতি রইলো আমার অফুরন্ত ভালোবাসা।
( লেখা ১৯শে ডিসেম্বর'২০১৩)






কবিতাঃ কত রঙ্গ

কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়
ও ভাইরে ও ভাই কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়।
ময়দানেতে কুণাল নামে শুভেন্দু পালায়!
আমি যেই দিকেতে চাই
দেখে অবাক বনে যাই
ফুলে ফুলে আছে সবাই
জোড়া হ'ক আর পদ্ম ফুল ভাই!
( লেখা ১৯শে ডিসেম্বর'২০২০)

All react

কবিতাঃ সময় ও দয়াল আমার।

সময় যে কখন কোথায় নিয়ে যায়,
সময় যে কখন কি নেয় ছিনিয়ে!
সময় যে কখন কি সাজিয়ে রাখে,
সময় যে কখন কি দেয় ফিরিয়ে!
সময় যে কখন কি লিখে রাখে
সময় যে কখন কি রূপ নেয়!
সময় যে কখন কি আঁকে
কেউ জানি না আমরা তা হায়!


কোথায় জন্ম, কোথায় মৃত্যু,
কোথায় শৈশব, যৌবন, বড় হওয়া!
আর কোথায় বা বিকেলের ফুল হয়ে
দিন কাটানো, অচেনা অজানার বুকে
অবশেষে ঝ'রে পড়া!! কেউ কি জানো তা?


মন ভাঙে তাই শরীর ভাঙে। শরীর ভাঙে
তাই ঘরে ফিরে যাওয়ার ডাক আসে।
এমনিভাবে কান্না হ'য়ে ঝ'রে পড়ে
না পাওয়ার বেদনা সব আকাশে বাতাসে।
একাকী ব'সে কখনো বারান্দায় রোদ্দুরে,
কখনও বা নির্জনতায় ঘেরা বাতায়নে
শীতের বিষন্ন দুপুরে স্মৃতি হ'য়ে ভেসে আসে
যত মনের মণিকোঠায় সযত্নে পরতে পরতে
রক্ষিত ছবি দেখি আর ভাবি, ভাবি আর ভাসি
আঁখিজলে স্মৃতির অতল তলে হারিয়ে।


স্মৃতি মধুর কিন্তু বড় বেদনাময়।
দুঃখ, বেদনা অন্তরে চাপা যত যাতনা
ফিরে ফিরে আসে নিস্তদ্ধ, নির্জনতা মাঝে
নিয়ে যেতে চায় অলীক মায়ায় ঘেরা সাজে
আর ফিক ক'রে শয়তানী হাসি হেসে বলে,
যাওয়ার সময় হয়েছে আয় চলে আয়!


হঠাৎ কে যেন ভয়ংকর হুঙ্কারে বেরিয়ে আসে
কালাপাহাড় হয়ে বুকের ভেতর থেকে আর
ত্রাসে সন্ত্রাসে ভিতর বাহির কাঁপিয়ে আকাশের
বুক চিঁড়ে প্রচন্ড রাগত স্বরে ব'লে ওঠে
চোখ পাকিয়ে বিস্ময়ে দৃপ্ত কর্কষ কন্ঠে,
শালা! কেন মরছো অভিমানে কুরে কুরে?
দুঃখ, বেদনা আর হতাশায় চাও যেতে মরে?
কে কার? কার জন্য কে? তুমি কার? কে তোমার?
কেন বাজাও অকারণ ব্যর্থতার বিন?
কার জন্যে ভেবে ভেবে মরছো রাত্রদিন?
সময়কে সময়ের কাজ করতে দাও
আর তুমি করো তোমার কাজ।
জানি সময় সবসে বড়া বলবান;
তার থেকেও বলবান তোমার ঠাকুর।
সময়কে কে দেখেছে? কেউ দেখেনি;
তুমিও কখনো দেখনি।
কিন্তু ঠাকুরকে তুমি দেখেছো,
পড়েছো তাঁর শত সহস্র অভয় বাণী।
ঠাকুরকে যদি না দেখে থাকো তবে
আচার্যদেবকে দেখেছো, দেখেছো তাঁর
অপূর্ব দেহ সৌষ্ঠব, মিষ্টি মধুর কণ্ঠস্বর
আর ভুবন ভোলানো তাঁর রূপকথার হাসি!
শুনেছো তাঁর ভরসা দীপ্ত সমস্যা সমাধানী।
তাহ'লে ভয় কি? ডর কিস বাত কি?
দয়াল তোমার বলছে হেঁকে,
হাম হ্যায় না! ম্যাঁয় হুঁ না!
শালা! শুনতে কি পাওনা।
এতদিন তোমার সাথী ছিল যারা
সকাল থেকে সন্ধ্যে সত্যি ভেবে তাদের
ছিল মিথ্যের পিছনে আহাম্মকি ঘুরে মরা!
মধু ছিল ভরা তোমার ঘড়া ঘড়া তাই ছিল
পাছে পাছে ঘোরা আর সবল কাঁধে দিয়ে ভর
ছিল সুপ্ত ইচ্ছা, পাড়ে উঠে পড়া।
তা'তে ক্ষতি কি? "জীবনের অথৈ নদী
পার হয় তোমাকে ধ'রে দুর্বল মানুষ যদি?"
তোমায় ধ'রে পায় যদি কেউ জীবন খুঁজে
পাক না, পরে তোমায় ছেড়ে যাক না;
দোষের কি? অথৈ নদী পেরিয়ে তুমি তারে
তুলে দিলে তো পাড়ে! এমনিভাবে ধ'রে
ঘরে যদি ফেরে তোমার প্রিয় আত্মজন
জীবন খুঁজে পাবে সেথায় দয়াল প্রভু
আছেন যেথায়! এর থেকে জীবনে আর
প্রাপ্তি আছে কিছু কি তোমার?
বলতে পারো আমার সুজন?


তাই ওঠো, জাগো, হ'ক শুরু আবার
তোমার পরশে জুড়িয়ে যাক অশান্ত হৃদয়,
মরা প্রাণে আসুক জোয়ার দয়ালের নামে
নতুন ক'রে জাগাও প্রাণ সবার। ( লেখা ১৮ই ডিসেম্বর/২০২৩)

কবিতাঃ ঘরপোড়া গরু!

কবিতা লিখে হবেটা কি সত্যি আমার চিন্তা!
দেশ যখন জ্বলছে আগুনে আরামে খাচ্ছি ডিগবাজিটা!!
কবিতা লিখে হবেটা কি সত্যি আমার চিন্তা!
জ্বলুক দেশ! জ্বালাও দেশ! মরুক আমজনতা,
আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা!!
সত্যি! কবিতা লিখছি, কবিতা বলছি, কবিতা শুনছি আমি!
সাম্যের নামে দিচ্ছি ধ্বনি, মুক্তির কসম খাচ্ছি!!
কবিতার সঙ্গে ছড়াও লিখছি, ছুঁড়ছি ছড়ার ছররা!
বিপ্লবের নামে তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে ডুবে খাচ্ছি ভদকা!!
ছড়ার ছররা নাকি শব্দের ছররা ছুঁড়ছি এলোমেলো!
শিক্ষা-চেতনা-বিপ্লব-মুক্তির মারছি ঘাই, দেখাচ্ছি আলো!!
কবিতা লিখছি, ছড়া লিখছি, লিখছি কতকিছু!
জ্বলো, জ্বালো, জ্বালাও হাঁক দিয়ে ভাই ছুটছি সবাই
অর্থ, মান আর যশের পিছুপিছু!!
কবিতা, ছড়া লিখে হবেটা কি সত্যি আমার চিন্তা!
ঘরপোড়া গরু আমি ডরাই দেখে
সিঁদুরে মেঘের মত এক ঝলক শেষের সেদিনটার!!
( ১৮ই ডিসেম্বর-২০১৯)

Tuesday, December 17, 2024

কবিতাঃ যাবে নাকি তুমি?

জীবন নিয়ে বিব্রত? বিপন্ন বিপর্যস্ত সময়?
হতাশা, অবসাদগ্রস্ততা হাতছানি দিয়ে ডাকে?
সকাল থেকে দুপুর একাকী নিঃসঙ্গতা ভরপুর?
উদ্দেশ্যহীন চলা সাথী অবহেলা অন্ধকারময়
উন্মুক্ত আকাশে শব্দহীন রাতে পথের বাঁকে?
কেউ কোথাও নেই অন্ধকার বাড়িয়ে দেয় হাত
জড়িয়ে ধরে ঝিঁঝিঁপোকার ডাক, জোনাকি রাত!
ক্লান্তিতে ঘুমে জড়ানো স্বপ্নহীন চোখ কাকে যেন
কি যেন খোঁজে টলোমল পায় কি যে হাতড়ায়!
জীবনের শুরুতে সকালেই বিকেলের ফুল হ'য়ে
বিমর্ষ অবসন্ন, হ'য়ে ফ্যাকাশে ঝ'রে পড়ো কেন?
কথার স্রোতে ভাসা আর গন্তব্যহীন উদোম চলা
জীবনকে করেছে ফাঁপা করাকে দিয়ে ফাঁকি।

যাক পিছনে পড়ে থাক সে যতসব দুঃস্বপ্নের রাত।
যা হয়েছে বন্ধু ভুলে সে অতীত ফেরাও সম্বিৎ
ফিরে চলো ঘরে সবাই হাত ধরাধরি ক'রে
উপ ছেড়ে করো ভোগ দূর হ'ক যত দুর্ভোগ
জীবন আছে এখনো অনেক বাকী।

জীবন খুঁজে পাবে বন্ধু সেই ঘরেতে তুমি
আছে সেথায় তোমার আমার সবার জীবন স্বামী।
হতাশা অবসাদ একাকীত্ব ঝগড়া বিবাদ
নেই সেথা রোগ শোক গ্রহদোষ বুদ্ধি বিপর্যয়
দরিদ্রতার আবাদ। সেথা আছে শুধু ভালোবাসা
আর প্রেম দয়া মায়ার এক খাসা ভালো বাসা।
এ বাসা তোমার বাসা জীবন খুঁজে পাবে তুমি।
সেথায় তোমার তরে আছেন বসে দয়াল জীবনস্বামী।
এমন বাসায় বন্ধু যাবে নাকি তুমি? 
( লেখা ১৭ই ২০২৩)

প্রবন্ধঃ আমিষ ও নিরামিষ।

আমিষ-নিরামিষ আহার নিয়ে প্রায় সময়ই বাদ বিতন্ডা চোখে পড়ে ধর্মজগত ও ঈশ্বর বিশ্বাসী লোকেদের মধ্যে। ভয়ংকর উগ্রতার বিষের কুয়াশায় ঢাকা পড়ে যায় চারপাশ। আমিষ নিরামিষ নিয়ে পৃথিবীর কোন ধর্মগ্রন্থে কি বলা আছে, কোন ধর্মগুরু কোথায় কি বলেছেন, কোন প্রফেট তাঁদের কোন গ্রন্থে কি বলেছেন, বিজ্ঞান কি বলছে ইত্যাদি তাই নিয়ে চলে চুলচেরা বিশ্লেষণ, চলে কথার স্রোতে অন্তহীন গন্তব্যহীন, লক্ষ্যহীন, কর্মহীন ভেসে চলা। আবার মুসুর ডাল আমিষ কি নিরামিষ তাই নিয়েও চলে জোর চর্চা, তর্কবিতর্ক, ছুঁৎমার্গ।

আরে বাবা, আমিষ নিরামিষ নিয়ে এত কথার প্যাচাল পারার কি আছে বুঝি না। সত্যিই বুঝি না। আরে আমিষ খেলেই বা কি আর না খেলেই বা কি? খাদ্যখানা সব তো জীবনকে ধারণ করা বা ধ'রে রাখা অর্থাৎ রক্ষা করার জন্য। আর এই ধারণ করা থেকেই ধর্ম কথাটা এসেছে। খাওয়ার জন্য জীবন নাকি জীবনের জন্য খাওয়া? এই ব্যাপারটা যে যেমন বোঝে তাকে তেমন বুঝতে দিন। এই নিয়ে এত খড়্গহস্ত হওয়ার বা তর্কাতর্কি, ঝগড়াঝাটি, মারামারির কি আছে? যে মনে করে খাওয়ার জন্য জীবন, খাওয়ার জন্য সে জন্মেছে তাকে প্রাণভরে খেতে দিন, আমিষ খেতে দিন। বিভিন্ন স্বাদের, বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পদের নানারকম দুর্দান্ত খাওয়াই যদি না হ'লো মন ভরে তাহ'লে এই অল্প ক'দিনের জন্য পৃথিবীতে এসে কি লাভ? ঠিক আছে সে তাই খাক। খেয়ে জীবন উপভোগ করুক। এতে ক্ষতি বা দোষটা কোথায়? এখানে নিরামিষাশীদের নাক সিটকানো বা ঘৃণার কি আছে!?!?

আর যে মনে করে জীবনের জন্যই খাওয়া, জীবনের প্রকৃত বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধি পাওয়ার জন্যই খাওয়া। জীবনকে উপভোগ করার জন্যই খাওয়া। এই ভুবন মাঝে ব'য়ে যাওয়া আনন্দধারাকে জীবন মাঝে ব'য়ে দেবার জন্য নানারকম উপকরণের মধ্যে অন্যতম এক উপকরণ খাওয়া। এই নশ্বর পৃথিবীতে জীবনে রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধিবিপর্যয়, দরিদ্রতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য খাওয়ারও একটা মুখ্য ভুমিকা আছে। শরীরে-মনে সুস্থ থাকা ও দীর্ঘ জীবন লাভের সঙ্গে খাওয়ার একটা সম্পর্ক জড়িয়ে আছে। সে তেমন খাবারই খাক না নিজের তৃপ্তি মতো। তা'তে আমিষাশীদের নিরামিষ আহারকারীদের ওপর তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার বা দূর্বল ভাবারও কিছু নেই। নিরামিষ আহারকারীদেরও এতে নিজেদের অহিংস ভেবে অহংকার করার কিছু নেই। জলের প্রাণী জলে বাঁচুক, ডাঙার প্রাণী ডাঙায়; আর উভচরকে উভয় জায়গায় থাকতে দিন। আসুন মিলেমিশে থাকি।

আমিষ আহারকারীকেও একদিন চলে যেতে হবে এই দুনিয়া ছেড়ে, নিরামিষ আহারকারীকেও তাই। আগে আর পিছে। নিরামিষ আহার গ্রহণকারী গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবে সে আমিষ আহারকারীর থেকে পরে অনেক পরে দুনিয়া ছেড়ে যাবে এবং সুস্থভাবেই যাবে এবং দুনিয়ার সব সব নিরামিষ আহার গ্রহণকারী আমিষ আহার গ্রহণকারীর চেয়ে দীর্ঘদিন সুস্থ সবলভাবে বাঁচে?

যাই হ'ক যে যে দর্শনে বিশ্বাসী, যে যে এঙ্গেল থেকে জীবন ও খাওয়ার ব্যাপারটাকে দেখে, যে যে বোধ, বুদ্ধি, জ্ঞান ও দূরদৃষ্টি দিয়ে জীবন ও খাওয়ার মধ্যে পরস্পরের সম্পর্কটা দেখে, বিচার করে সে সেই দর্শনে বিশ্বাস, সেই এঙ্গেল, বোধ, বুদ্ধি, জ্ঞান ও দূরদৃষ্টি নিয়ে চলুক না দু' দিনের জন্য আসা এই জীবনে। এত চাপাচাপি, এত তত্ত্বকথা গলা টিপে গেলানোর, এত তর্কবিতর্ক, ঝগড়াঝাটি, মারামারি, মনোমালিন্য, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে, জাতে জাতে সম্পর্কের অবনতি করার কি আছে বুঝি না।

আমিষ নিরামিষ খাদ্যের সঙ্গে শরীর-মনের বিধানের একটা সম্পর্ক আছে। শরীর বিধান অনুযায়ী খাদ্যখানা ক্রিয়া করে। যেমন পশুদের মধ্যে আছে। মাংসাশী পশু যেমন আছে আবার তৃণভোজী প্রাণীও আছে। মানুষ সর্বভুক। মানুষ সব খায়। মানুষের বুদ্ধি তীক্ষ্ণ তাই সে সব রকমের খাবার চেখে দেখেছে, করেছে বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু প্রোটিন ভিটামিন যুক্ত খাদ্যের আবিস্কার। আর সেই অনুযায়ী শরীরের ভালমন্দের কথা ভেবে সেইমতো বিধান দিয়েছে। এবার মানুষ কেউ তা মেনে চলতে পারে, কেউ মেনে নাও চলতে পারে। কেউ আমিষ খাদ্য পছন্দ করতে পারে, কেউ নিরামিষ খাদ্য পছন্দ করতে পারে, কেউ কেউ উভয় খাদ্যই পছন্দ করে। আমার জীবনে বহু মানুষকে দেখেছি আমিষভোজী মানুষ যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমিষ ছাড়া চলতে পারতো না তাকেই দেখেছি আমিষ খাদ্যের প্রতি আর তেমন আগ্রহ বোধ করে না। কেউ শরীরের কারণে, কেউ বা বিতৃষ্ণার কারণে, কেউ বা ধর্মীয় কারণে খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। ছোটোবেলার পারিবারিক পরিবেশের কারণেও অনেক মানুষ আছে সম্পূর্ণ নিরামিষভোজী। আবার আজন্ম নিরামিষ পরিবারের বাইরে যখন পা রাখে পড়াশুনা কিংবা কর্মসূত্রে তখন অনেককেই দেখেছি বাধ্য হয়েই হ'ক আর লোভে পড়ে বা বন্ধুবান্ধবদের চাপে পড়েই হ'ক আমিষ খাদ্য গ্রহণ করতে। আবার অনেকে আছে সমাজে একটা মিথ্যা স্ট্যাটাস সিম্বল বজায় রাখতে প্রকাশ্যে নিরামিষ আহার খায় আর পর্দার পিছনে আমিষের মাথা, হাড় চিবিয়ে খায় পরম তৃপ্তিতে। অনেকে আছে আদর্শের খুশীর স্বার্থে আমিষ আহার ত্যাগ করেছে সানন্দে। অনেক মানুষ আছে যারা আদর্শে অনুপ্রাণিত হ'য়ে, কারও কথায় বা কোনও পরিবেশের ছোঁয়ায় প্রভাবিত হ'য়ে আমিষ ত্যাগ করেছে ও করছে। কিন্তু পরে আবেগ নষ্ট হওয়ার কারণে, বিশ্বাস ভঙ্গ হওয়ায়, কারও দুর্ব্যবহারে বিরক্ত ও আঘাতপ্রাপ্ত হ'য়ে ঐ ত্যাগ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে এসেছে। পুনরায় ডুবে গেছে আমিষ আহারে।

যাই হ'ক এরকম নানা কারণ আছে আমিষ নিরামিষ ছাড়ার ও ধরার। কিন্তু ধর্মপালন করার কারণে যে আমিষ ত্যাগ ও নিরামিষ আহার গ্রহণ সেখানে ধর্মের মূল অর্থ, আমিষ নিরামিষ আহারের মেরিট-ডিমেরিটস্-এর কোনও ধার ধারে না তথাকথিত ধার্মিকেরা। তারা স্পষ্টতই একটা বিভাজনের খেলা ডিভাইড অ্যান্ড রুলের খেলা খেলে, একটা সুপিরিয়র-ইনফিরিওর-এর ক্ষেত্র রচনা ক'রে ধর্মের খোলসে অধর্মীয় আচরণের চাষ করে ক্ষমতা ও প্রভাব প্রতিপত্তি বজায় রাখার তাগিদেই বোকা, মুর্খ, ভীরু, অতিবোদ্ধা, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মাথা মোটা ধর্ম ও ঈশ্বরভীরু মানুষের সাহায্যে। মিলেমিশে থাকার মানসিকতা কেন যে থাকে না সেটাই অবাক হওয়ার ব্যাপার।

আমরা ধর্ম ও ঈশ্বর আরাধনার জগতে ধর্ম ও ঈশ্বর আরাধনার পথে চলা প্রকৃত ও ভন্ড উভয় ভক্তদের দেখেছি ও দেখছি। ঈশ্বর ও ধর্মকে অনুধাবন করা দুনিয়া কাঁপানো উপলব্ধিবান আধ্যাত্মিক পুরুষ প্রকাশ্যে আমিষ ভক্ষণকারী বিবেকানন্দকে আমরা যেমন দেখেছি ঠিক তেমন বহু নিরামিষভোজী আধ্যাত্মিক মহাপুরুষকেও দেখেছি ও দেখছি। আবার লুকিয়ে নিরামিষ খাওয়া তথাকথিত ধর্মকথক ও ধার্মিক মানুষও বহু আছে। আবার এমন অনেক আছে যারা ধর্ম-ঈশ্বর ভালোবাসে, সত্যিই ভালোবাসে আবার আমিষ খাবারও পছন্দ করে। কিন্তু লোকলজ্জায় কিংবা অতিভক্ত, উগ্র, অন্ধ, মূর্খ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও ভন্ড ভক্তদের চাপে প্রকাশ্যে আমিষ আহার করতে পারে না, বাধ্য হ'য়ে লুকিয়ে খায়। আমি প্রায় সব ধরণের ধর্মীয় লোকেদের ক্ষেত্রেই দেখেছি এ ধরণের প্রবণতা।

নিরামিষ আহার গ্রহণকারী অনেক মানুষ আছে যারা পেঁয়াজ রসুনকে আমিষ মনে করে না। আবার অনেক আছে পেঁয়াজ রসুনও খায় না। যেমন স্বস্ত্যয়নী ব্রতধারী সৎসঙ্গীরা পেঁয়াজ রসুনও খায় না। কিন্তু অনেক স্বস্ত্যয়নী ব্রতধারী আছে যারা রা -জ-সিক নিরামিষ খায় অর্থাৎ হাত চপচপে তেল, ঘি, ঝাল, মশলা সহযোগে নিরামিষ খায়। খেয়ে আবার নাক-চোখের জল মুছে পাড়া কাঁপিয়ে নিরামিষের ঢেঁকুর তোলে। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, নিশ্চয়ই আছে, অ-নে-ক আছে যারা সাত্ত্বিক নিরামিষ খায়।

আবার আমাদের সৎসঙ্গীদের মধ্যেও অনেক সৎসঙ্গীকে দেখেছি তাদের মধ্যে যারা স্বস্ত্যয়নী ব্রত গ্রহণকারী তারা অনেকেই সাধারণ দীক্ষিত সৎসঙ্গীদের সঙ্গে কথাবার্তায়, চালচলনে, এককথায় বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মধ্যে একটা প্রচ্ছন্ন কিংবা অদৃশ্য একটা দেওয়াল সৃষ্টি করে। কারণ তারা মনে করে তারা নিরামিষভোজী। স্বস্ত্যয়নী ব্রতধারী সৎসঙ্গীরা মনে করে তারা অন্য গ্রহের জীব। স্বস্ত্যয়নীর অর্থ বা ব্রতের অর্থ জানুক আর না-জানুক, বুঝুক, না-বুঝুক, স্বস্ত্যয়নীর পঞ্চনীতি পালন করুক আর না-করুক, চরিত্রে তার প্রতিফলন ঘটুক, আর না-ঘটুক ও কর্মক্ষেত্রে তা ফুটে উঠুক আর না-উঠুক নিরামিষ খেলেই তারা জাতে উঠে গেছে, সাধারণ দীক্ষিতদের থেকে একটু উচ্চ আসনে তারা অবস্থান করে, তারা ঠাকুরের খুব কাছের মানুষ। অতএব তারা সাধারণ দীক্ষিতদের থেকে ওঠা, বসা, শোওয়া, খাওয়া সব কিছুতেই একটা দূরত্ব বা ব্যবধান রচনা করে নিজ এলাকায়। মাঝে মাঝে দেখে মনে হয় নিজেরাই এক একজন ঠাকুর হ'য়ে গেছে। কিন্তু ধর্ম, ঈশ্বর, দীক্ষা, স্বস্ত্যয়নী, নিরামিষ-আমিষ ইত্যাদি সব ব্যাপারেই চলনে-বলনে, কথাবার্তায়, আচারে-ব্যবহারে অর্থাৎ চরিত্রে যার বিন্দুমাত্র প্রতিফলন নেই। ঈশ্বর বিশ্বাসী, ধর্ম পালনকারী, নিরামিষ আহার ভক্ষণকারী মানুষ কথাবার্তায়, চালচলনে, আচার-আচরণে এমন উগ্র হয় কেন? বৃত্তি-প্রবৃত্তির ওপর লাগাম নেই ক? মোদ্দাকথা সব ধর্মের এই ধরনের মানুষ ধর্ম ও ঈশ্বরের জগতের সব ব্যাপারে অন্ধকারে, ঘোর অন্ধকারে। অথচ এদের হাতেই লাগাম, চাবিকাঠি!!!

সম্পূর্ণ নিরামিষ আহার ভক্ষণকারী মানুষের চরিত্রে যেখানে দেখেছি ও দেখছি ষড় রিপুর ভয়ংকর উগ্রতা; সেখানে আবার আমিষ ভক্ষণকারী মানুষের চরিত্রে অদ্ভুতভাবে দেখা গেছে চরম মানবিকতার, মনুষ্যত্বের নিদর্শন।

চরিত্রটাই যে নীরব যাজন ধর্ম পালন ও ঈশ্বর আরাধনার ক্ষেত্রে সে ব্যাপারে তথাকথিত ধার্মিকেরা বেহুঁশ।

সৎসঙ্গীরাও কি তাই? শ্রীশ্রী ঠাকুর কেমন দেখতে চেয়েছিলেন তাঁর সোনার সৎসঙ্গীদের? 
( লেখা ১৭ই ডিসেম্বর' ২৩)

প্রবন্ধঃ সনাতনী সমাজের আন্দোলন ও সৎসঙ্গী সমাজ।

আজ সনাতনীদের অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন ভারতে ও বাংলাদেশে তীব্র আকার ধারণ করেছে। সনাতনী ঐক্য, সনাতনী বোর্ড গঠন, হিন্দুদের রক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে আন্দোলন তুঙ্গে। সমস্ত হিন্দুদের এই আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার জন্য আহ্বান করা হচ্ছে। সনাতনী ঐক্যের জন্য আজ হিন্দু সনাতনী সমাজের বিবেক জেগে উঠেছে। এর মধ্যেও দেখলাম বাংলাদেশের মতো কলকাতাতেও হিন্দুদের ধর্মীয় স্থানের প্রতি আক্রমণ অব্যাহত।

আবার এই ঐক্যের ডাকের পাশাপাশি ফেসবুকে আজকাল দেখি পোষ্টে সনাতনী নাম নিয়ে সনাতনীদের বিরুদ্ধে সমালোচনা, হুমকি দিতে। এই সমস্ত স্বঘোষিত সনাতনীরা কি সমস্ত কোটি কোটি সনাতনীদের মাইবাপ? এরা কি বিশ্বজুড়ে সমস্ত সনাতনীদের মুখপাত্র? সনাতনীদের পক্ষ থেকে এরা কে বা কারা যারা নিজের ইচ্ছেমতো সনাতনী নানা নাম দিয়ে ফেসবুকে পেজ খুলে সনাতনী কীর্তনীয়া, পাঠক, ব্লগার, ধর্মীয় বক্তা, পুরোহিত, পন্ডিত, সাধু,সন্ত, কবিয়ালদের হুমকি দেবার? এদের কথার কে গুরুত্ব দেয়? এদের কি গ্রহণযোগ্যতা আছে সনাতনী হিসেবে সনাতনী সমাজে? যখন যাকে পারছে ফেসবুকে স্বঘোষিত সনাতনীরা হুমকি দিচ্ছে, বয়কট করার ঘোষণা দিচ্ছে। এদের কি কোমরের জোর আছে, পায়ের তোলার মাটি আছে হুমকি দেওয়ার, বয়কট করার? এইসমস্ত কথার স্রোতে ভাসা বালখিল্য সনাতনীরা আগে দেখুক এদের পায়ের তলার মাটি আছে কিনা। যখন ইচ্ছা হচ্ছে ভিডিও ক'রে সনাতনী সমাজের বিরাট জ্ঞানী সেজে এরা সনাতনীদের ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে সুকৌশলে বিবাদ সৃষ্টি ক'রে সনাতনী সমাজে ভাঙ্গন ধরাবার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে? এরা গেরুয়া কাপড়ে নিজেদের ঢেকে, চন্দন তিলকে আপাদমস্তক সেজে নিজেরাই নিজেদের সনাতনীদের অগ্রণী ভূমিকায় অবস্থানকারী প্রবক্তা মনে ক'রে সনাতনীদের আক্রমণ করে চলেছে। স্বাধীনতার ৭৭বছর বছর পর এদের কুম্ভকর্ণের ঘুম ভেঙ্গেছে?
আর রাজনৈতিক দলের মতো হিন্দু ঐক্যের ডঙ্কা বাজিয়ে তলে তলে প্রকারন্তরে সনাতনী ঐক্যের নামে ঐক্যের বিরুদ্ধে ধ্বংসের বীজ বপন করার গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে এরা? প্রশ্ন জাগে মনে এরা সনাতনী ঐক্যেকে ধ্বংস করার ভয়ংকর চক্রান্ত করছে?

এদের মধ্যে অনেককেই দেখি দু'পয়সার বালখিল্য বটতলার জ্ঞান নিয়ে The greatest phenomenon of the world, the greatest wonder in the World, Of the world Unprecedented supreme personality in all aspects পুরুষোত্তম, পরমপিতা, সদগুরু, জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত এক ও একমাত্র প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ'-এর সমালোচনা করে, হুমকি দেয়! এদের এত সাহস হয় কি করে? কে এদের পিছনে মদদদাতা?

ভারত তথা সারা বিশ্বের তাবড় তাবড় জ্ঞানী যাঁর দীক্ষিত, যাঁর চরণে মাথা নত করেছে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ আজ তাঁর দীক্ষিত। প্রজাপতি, মৌমাছি যেমন ফুলে তীব্র গন্ধে ছুটে ছুটে আসে ফুলের বুকে, ফুল যেমন কোথাও যায় না, গাছেই থাকে ঠিক তেমনি বিশ্বের সমস্ত ধর্মের হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ইত্যাদি আরও বিভিন্ন ধর্মমতের, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন রাজ্যের লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ, অসাধারণ ক্ষমতাবান মানুষ, অর্থ, মান, যশের অধিকারী কোটি কোটি মানুষ, আর্ত, অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু, জ্ঞানী মানুষ আজ তাঁর অসীম, অনন্ত জ্ঞানের আকর্ষণে, তাঁর তীব্র ভালোবাসার টানে আকৃষ্ট হ'য়ে তাঁর কাছে ফুল মৌমাছির মতো ছুটে ছুটে এসেছিল অখন্ড ভারতের পূর্ব বাংলার বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমায়েতপুর গ্রামে তিনি থাকতে, দীক্ষিত হয়েছিল তাঁর এবং তিনি ১৯৬৯ সালে দেহ রাখার পর ছুটে ছুটে এসেছিল পরমপুজ্যপাদ শ্রীশীবড়দার নেতৃত্বে সৎসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর ও শ্রীশ্রীবড়দার আকর্ষণে, শ্রীশ্রীবড়দার দেহ রাখার পর শ্রীশ্রীদাদার নেতৃত্বে দেওঘরে 'সৎসঙ্গে' আর আজও লক্ষ লক্ষ মানুষ ছুটে ছুটে আসছে শ্রীশ্রীদাদার দেহ রাখার পর ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের দেওঘরে বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার তীব্র ভালোবাসার আকর্ষণে, মধুর মিষ্টি ব্যবহার ও ব্যক্তিত্বের টানে, যাঁর মধ্যে প্রতিটি সৎসঙ্গী অনুভব ও উপলব্ধি করছে শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবন্ত উপস্থিতি, তাঁর কাছে ছুটে ছুটে আসছে রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয় ও দরিদ্রতার তীব্র সমস্যার কষাঘাতে জর্জরিত হ'য়ে বাস্তব সম্মত নিখুঁত সমাধানের আশায়, নোতুন ক'রে বাঁচার টানে, নোতুন ক'রে জীবন শুরু করার কামনায়, জীবন জুড়ে অশান্তি, অতৃপ্তির মাঝে শান্তি, তৃপ্তি লাভের লোভে তাঁদের বিরুদ্ধে সমালোচনা, নিন্দা, কুৎসা করে, হুমকি দেয় এরা?

বর্তমান যুগগুরু পুরুষোত্তম, পরমপিতা জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র যাঁর মধ্যে একাধারে আবির্ভূত হয়েছে সেই ত্রেতাযুগের শ্রীশ্রীরাম, দ্বাপর যুগে শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, কলিযুগে শ্রীশ্রীবুদ্ধ, শ্রীশ্রীযীশু, শ্রীশ্রীমহম্মদ, শ্রীশ্রীমহাপ্রভু, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ, সেই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বিরুদ্ধে আর তাঁর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান বিশ্বজুড়ে আলোচিত 'সৎসঙ্গ'-এর কুৎসা, নিন্দা, কটুক্তি, অপমান, অশ্রদ্ধা ও সমালোচনা করে এইসমস্ত বালখিল্য স্বঘোষিত অজ্ঞানী, মূর্খ, কপট, ভন্ড সনাতনী নামধারী ব্যক্তিরা? এরা সনাতনীদের উদ্ধারকর্তা? এরা রক্ষা করবে সনাতনী হিন্দুদের? এরা আজ সনাতনী সমাজের মুখপাত্র? তারা আজ অগ্রণী ভুমিকায়? তারা আজ সনাতনী সমাজের পুরোধা?
প্রশ্ন জাগে মনে, তারা আজ সনাতনী সমাজের, হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করার আন্দোলনের ধর্মীয় মুখ, ধর্মীয় নেতা? এরা সনাতনী সমাজের আদর্শ? এদের কি সনাতনী সমাজের ঈশ্বর আরাধনার সঙ্গে সমস্ত যুক্ত সাধু, সন্ত, সাধক, যোগী, ঋষি, ভক্তমন্ডলী সমর্থন করে? স্বীকৃতি দেয়? তাঁরা কি বলেন? সনাতনীদের বিরুদ্ধে এটা শকুনি রূপী সনাতনীদের ষড়যন্ত্র মূলক অন্তর্ঘাত নয়তো?

এই জন্যেই সনাতনীদের মধ্যে অনৈক্যের আজ এই অবস্থা। এই অবস্থা আজ নয়। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশের হিন্দু বাঙালীদের অসহযোগিতা, বিরোধিতা, চক্রান্তের কারণে তাঁর জন্মভূমি পাবনার হিমাইয়েত পুর ত্যাগ ক'রে চোখের জলে এক বুক অসহনীয় ব্যথা নিয়ে মধ্যবয়সে এক কাপড়ে ১৯৪৬ সালে তৎকালীন বাজার মূল্য ১.৫০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি ত্যাগ ক'রে এ দেশে চলে আসতে হয়েছিল। এবং এই দেশে বাংলায়ও তাঁর জায়গা হয়নি বাঙালীদের কারণে। সনাতনীরা তখন কোথায় ছিলেন? পুরুষোত্তম পরমপিতা জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে যারা চিনতে পারেনি তারা হবে ভারতের ১১৫কোটি সনাতনী হিন্দু সমাজের মুক্তিদাতা?

তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সৎসঙ্গের জন্য মঞ্জুর করা বর্ধমান জেলার পানাগড়ে ৬০০০হাজার বিঘা জমি নাকচ করে দেন। তিনি কি সনাতনী হিন্দু ছিলেন না? তিনি কি মুসলমান , খ্রীষ্টান বা অন্য কোনও ভিন্ন ধর্মী ছিলেন? তৎকালীন কোনও বিখ্যাত সনাতনী হিন্দু বাঙালী সেদিন শ্রীশ্রীঠাকুরকে এই বাংলায় আশ্রয় দেওয়ার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। তাই শ্রীশ্রীঠাকুরকে বাধ্য হ'য়ে চোখের জলে এই সনাতনী হিন্দু বাঙালীদের বাংলা থেকে চলে যেতে হয়েছিল তৎকালীন বিহারের বর্তমান ঝাড়খন্ডের জনবসতি শূন্য দেওঘরে। কোনও বাঙালী হিন্দু সনাতনী সমাজ তখন ধর্ম জগতের হিন্দু ও বাঙালী গুরু শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জন্য এগিয়ে আসেননি। কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সেদিন ঠাকুরের পাশে দাঁড়িয়ে বাংলায় থাকার জন্য জোর তদারকি করেননি। ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের শ্রীশ্রীঠাকুরের বিরুদ্ধে পানাগড়ে জমির বিরোধিতা করা সত্ত্বেও সেইসময়ের নির্বাচনে ১৯৪৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মহম্মদ ইসমাইলের বিরুদ্ধে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের সমর্থনে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও শ্রীশ্রীঠাকুরের একনিষ্ঠ কর্মী শ্রদ্ধেয় কাপুরদা ও জনার্দনদা প্রাণপাত করেছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুরের আদেশে। আর, পরবর্তী সময়ে নির্বাচনের ফলাফল কি হয়েছিল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের তাও আজ ইতিহাস হ'য়ে আছে।
এই সনাতনী যারা আজ ঐক্যের ডাক দিচ্ছে, হিন্দুদের রক্ষা করার জন্য আন্দোলন করছে তারা সেদিন ভারত ভাগের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জিন্না পাকিস্তানকে যে ইস্লামিক রাষ্ট্র ঘোষণা করেছিল সেদিন কেন ভারতের সনাতনীরা ভারতকে হিন্দু রাষ্ট ঘোষণা করার দাবী তোলেনি? কেন করেনি সেদিন জোরদার আন্দোলন? যেদিন বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট ঘোষণা করা হয়েছিল সেদিন কেন আজকের সনাতনীরা বিরোধীতে করেনি? প্রতিবাদ, আন্দোলন করেনি? কেন সেদিন ১৯৪৭ এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সমস্ত হিন্দুদের ভারতে ফিরিয়ে আনার জন্য তীব্র সংগ্রাম, আন্দোলন করেনি? সেদিন কি ঘুমিয়ে ছিল সনাতনীরা? সেদিন কেন সনাতনী ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দেয়নি? সেদিন কেন 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতায় নাকে তেল দিয়ে বাবাজী, মাতাজী হ'য়ে সনাতন ধর্মের নিরাপদ রাখোয়ালা হ'য়ে আয়েসে দিন কাটিয়েছিলেন? সেদিন কাকে বা কাদের খুশী করেছিলেন সনাতনীরা? যেদিন কাশ্মীরে হিন্দুদের ওপর নির্ম্মম অত্যাচার হয়েছিল সেদিন কোথায় গেছিল সনাতনীদের তেজ? সেদিন যখন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ব্রিটিশ চক্রান্তে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে ঘৃণ্য ডিভাইড এন্ড রুল প্রয়োগের মাধ্যমে ভারতবর্ষ মুসলমান আধ্যুষিত সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল হিসেবে যাতে ভাগ না হয় তার জন্য যে পরামর্শ দিয়েছিলেন, একশ্রেণীর মুসলমানদের ইসলামিক রাষ্ট গঠনের তীব্র মনোভাবে ভারতবর্ষ ভাগ হ'লেও বাংলাদেশ যাতে পাকিস্তানের দখলে না যায় সেজন্য তিনি যে পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন ও যে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন দেশনেতাদের কাছে তখন দেশনেতারা সেই পরিকল্পনা ও প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন? শ্রীশ্রীঠাকুরের পরামর্শকে মান্যতা দিয়েছিলেন? সেদিন সনাতনী বীরপুরুষেরা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন? তিনি যে দেশভাগের অনেক আগে দেশনেতাদের সতর্ক ক'রে দিয়ে লিখিত বার্তা পাঠিয়ে বলেছিলেন "Dividing compromise is hatch of the animosity." যার অর্থ, "ভাগ ক'রে সমাধানের অর্থ হ'লো, 'তা' দিয়ে দিয়ে শত্রুতার ডিম ফোটানো।" সেই সতর্ক বাতাকে দেশনেতারা, সনাতনীরা সেদিন গুরুত্ব দিয়েছিলেন? পাত্তা দিয়েছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে সেদিন? ধর্ম জগতের লোক ব'লে তাঁকে উপেক্ষা করেননি তারা সবাই সেদিন সত্যদ্রষ্টা, দূরদ্রষ্টা অন্তর্যামী ও সর্ব্বজ্ঞ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে নিজেদের বিরাট মহান জ্ঞানী মহাপুরুষ মনে ক'রে? আজ ৭৭বছরে তা প্রমাণ হ'লো কিনা? পাকিস্তানে কত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ক্ষতি হয়েছে আজ ৭৭বছরে? বাংলাদেশে ১৯৪৭ সাল থেকে ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৫৩ বছরে কত ক্ষতি হয়েছে হিন্দু বাঙ্গালীর জীবন ও সম্পদের? কত ধর্মীয় উৎসবের ওপর আক্রমণ হয়েছে স্বাধীনতার পরে ৭৭ বছর ধ'রে? এর হিসেব নিয়েছে আজ পর্যন্ত সনাতনী সমাজ? সনাতনীদের পক্ষ থেকে গোমাতাদের রক্ষার জন্য যতটা যে ধর্মীয় লড়াই সঙ্ঘটিত করার চেষ্টা হয়েছে কথার স্রোতে ভেসে ততটা কি পাকিস্তানে ও বাংলাদেশে হিন্দু বাঙালী বা হিন্দু ভাষাভাষীদের রক্ষার জন্য মানুষদের নিধন যজ্ঞের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করেছে? করার স্রোতে ভাসার করার কথা বাদ দিলাম অন্তত কথার স্রোতে ভেসে চেষ্টা হয়েছে প্রতিবাদ করার?

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র দেশভাগের আগে হিন্দু ও মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় হিন্দু মুসলমানের মধ্যে জন সংখ্যার দিক দিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য যে সমাধান দিয়েছিলেন বহু বছর আগে যাতে দেশ ভাগ না হ'তে পারে, হিন্দু মুসলমান পরস্পরের মধ্যে তথাকথিত সভ্য জাত ব্রিটিশদের ঘৃণ্য পলিশি ডিভাইড এন্ড রুল প্রয়োগের মাধ্যমে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি নষ্ট করার অমানবিক নোংরা নারকীয় ঘৃণ্য চক্রান্ত সফল হ'তে না পারে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করেছিল দেশের নেতৃবৃন্দ, জমিদার শ্রেণী ও সনাতনী সমাজ সেইসময়? বরং একক উদ্যোগে যখন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র চেষ্টা করেছিলেন দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার কাজ তখন তাঁর পবিত্র মহান কাজে কারা বাধা দিয়েছিল? মুসলমানরা? নাকি হিন্দুরা? হে সনাতনী সমাজ সেই ইতিহাস কি জানা আছে? এক বিগদ দূরের জিনিস দেখার ক্ষমতা নেই সনাতনী সমাজের বালখিল্য স্বঘোষিত মূর্খ অজ্ঞ অজ্ঞানী কপট ভন্ড ও গেরুয়া রঙে সাজা সনাতনীরা যারা ফেসবুকে ও ভিডিওতে বিশ্বজুড়ে দেশ বিদেশের কোটি কোটি হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ ইত্যাদি বিভিন্ন ধর্ম মতের, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের, বিভিন্ন রাজ্যের, বিভিন্ন জাতের মানুষের আরাধ্য দেবতা গুরুদেব The greatest phenomenon, the greatest wonder of the world সৃষ্টিকর্তা জীবন্ত ঈশ্বর সদগুরু পুরুষোত্তম পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা করার, কুৎসা করার, হুমকি দেওয়ার স্পর্ধা দেখায়!? কাদের মদদে এরা এই কাজ করে? সনাতনী ভারতবর্ষের সমস্ত সনাতনীদের কাছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোটি কোটি সনাতনী হিন্দুদের কাছে আমার জিজ্ঞাস্য সমগ্র সনাতনী সমাজ এদের এই কাজ সমর্থন করেন কিনা? দেশের সরকার এই কাজ সমর্থন করে কিনা?

তাই, সৎসঙ্গীদের শুধু এটুকুই বলবো আপনারা যারা যারা সনাতনীদের সমর্থনে ফেসবুকে পোষ্ট করছেন, তাদের কারও কারও পাশে দাঁড়িয়ে ফটো তুলে সনাতনী ঐক্যের পক্ষে সওয়াল করছেন, তাদের হুমকি দেওয়া পোষ্টে না বুঝে সমর্থন সূচক মন্তব্য করছেন তাদের সকলকে বলবো আপনারা সনাতনীদের সমর্থন করুন, হিন্দু ঐক্যের পক্ষে কথা বলুন, ফেসবুকে পোষ্ট করুন তার আগে নিজের গুরু, ইষ্টদেবতা, এক ও অদ্বিতীয় সৃষ্টিকর্তা, সদগুরু, পুরুষোত্তম, পরমপিতা জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণের বর্তমান শেষ নব রূপ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বিরুদ্ধে স্বঘোষিত সনাতনীদের ঘৃণ্য আচরণ, কটু ব্যবহার, নোংরা কথাবার্তা, হুমকি ইত্যাদির বিরুদ্ধে আপনার তীব্র প্রতিবাদ জানান। কারণ আপনি সৎসঙ্গী। আপনি সৎসঙ্গী। আপনি সৎসঙ্গী। ( লেখা ৩রা নভেম্বর'২৪)

প্রবন্ধঃ সনাতনী আন্দোলন ও সৎসঙ্গ আন্দোলন।

বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অকথ্য অত্যাচারের প্রতিবাদে পথে নেমেছে কলকাতায় সনাতনী সমাজ। সেখানে মঞ্চ থেকেই হিন্দুদের জেগে ওঠার বার্তা দিলেন বিরোধী দলনেতা। বললেন, "এখনও বাঙালি হিন্দুরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। আমি হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হতে বলেছিলাম। কেন ধর্ম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আইন হবে না? হিন্দু ভোট নানাভাবে বিভক্ত। সারা দেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যা, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে বাংলাদেশে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।"

বিভিন্ন দেশের সরকার বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে চলেছে কারণ সংসদ সদস্যরা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সাম্প্রতিক হামলা এবং ধর্মীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হিন্দুরা আজ শঙ্কিত।

আচার্য স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ বলেছিলেন, "হিন্দুর বিদ্যা আছে, বুদ্ধি আছে, অর্থ আছে; ব্যক্তিগত শক্তি সামর্থ্য যথেষ্ট আছে। কিন্তু নেই কেবল তার সঙ্ঘশক্তি। এই সঙ্ঘশক্তি জাগিয়ে দিলে হিন্দু অজেয় হ'য়ে দাঁড়াবে।"

মনে প্রশ্ন জাগে, হিন্দুর বিদ্যা, বুদ্ধি, অর্থ ও শক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কেন আজ হিন্দু অজেয় না? সনাতন ভারতবর্ষে কেন সঙ্ঘ শক্তির অভাব? কোথায় এর মূল গলদ? কোথায় এর ফাঁক? কোথায় ত্রুটি? কোথায় লুকিয়ে আছে এর মূল গলদ, এই ফাঁক, ত্রুটির মূল কারণ কি? কি অপ্রিয় সত্য? খুঁজে কি দেখার সময় আসেনি এখনও হিন্দু পন্ডিতদের? এখন হিন্দুদের ছোটো থেকে বড়, লেন্ডিত থেকে পন্ডিত, মূর্খ থেকে চালাক, অশিক্ষিত থেকে শিক্ষিত সবাই এখন ফেসবুকে সমস্ত সনাতন হিন্দুর স্বঘোষিত মাইবাপ, রাখোয়ালা। বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে ডুবে থাকা রিপু তাড়িত বিশৃঙ্খল মূর্খ অজ্ঞ এই স্বঘোষিত সনাতনীরা সনাতনীদের বিরুদ্ধেই কথা বলছে, সমস্যা সৃষ্টি করছে, আরও জটিল ও ভয়ংকর ক'রে তুলছে পরিবেশ ও পরিস্থিতি। এরা সবাই সনাতনী ঐক্যের ডাক দিচ্ছে, ফেসবুকে নানা ভিডিও বানিয়ে, ছদ্মনামে ও সনাতনী নাম দিয়ে প্রোফাইল বানিয়ে আহ্বান জানাচ্ছে সনাতনী হিন্দুদের। নেতৃত্ব দিচ্ছে সনাতনীদের বিরুদ্ধে কুৎসা ক'রে সনাতনীদের হ'য়ে। যে যার মত বলে যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথের "আমরা সবাই রাজা আমাদেরই রাজার রাজত্বে" বাণীর অন্তর্নিহিত অর্থ অনুধাবন না ক'রে (বোঝার ক্ষমতাই নেই অনুধাবন করা তো দূরের কথা) নিজেকে সনাতনী প্রবক্তা মনে ক'রে সোশ্যাল মিডিয়ায় ল্যাজা মুড়ো বাদ দিয়ে আর যা ইচ্ছা তাই করে চলেছে। আর এই সমস্ত মানুষদের হাতে চলে যাচ্ছে সনাতনী হিন্দু আন্দোলনের রাশ। ফলে সনাতনীদের মধ্যে প্রকট হচ্ছে ফাটল। কেন এই ফাটলের সৃষ্টি হচ্ছে, কে বা কারা এই ফাটল সৃষ্টির ক্রূর নায়ক? তা' ভেবে দেখছে না হিন্দু নেতারা। ভেবে দেখার ক্ষমতা নেই সাধারণ সীমাহীন ভাঙাচোরা সনাতনী হিন্দু জনসমাজের। ভেবে দেখার ক্ষমতা নেই কেন কি কি কারণে অতীতে সনাতনী হিন্দুরা ধর্মান্তরিত হয়েছিল? কি সেই কারণ ভারতে সনাতনী হিন্দুর দেশে বিশাল সনাতনী হিন্দু সমাজের মানুষেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও ক্রমে ক্রমে নিজেদের মধ্যে ভাঙনের সৃষ্টি হ'লো? কেন ১১৫ কোটি হিন্দুর দেশে হিন্দুরা নিজেদের শক্তি নিয়ে সন্দিগ্ধ? ৩৩কোটি দেবদেবী, সমস্ত বড়ো, মাঝারী, ছোট মন্দির সহ আশ্রম, গুহাপাহাড় ,জঙ্গলের ভিতর, রাস্তার ধারে, গৃহদেবতার এবং গ্রামের অধিষ্টাত্রী দেবদেবীর মন্দিরের সংখ্যা ১ (প্রায়) কোটি হবে, এছাড়া হাজারো লক্ষ সাধু, সন্ন্যাসী, গুরু, সন্তদের দেশ ভারতবর্ষ; তথাপি সনাতন হিন্দু ধর্ম ও সনাতনীরা কেন আজও ভারতবর্ষে দুর্বল, হিন্দুদের পক্ষে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কেন পারে না?

কে নেতৃত্ব দেবে সমগ্র সনাতনী হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য? কে সেই ব্যক্তি আসমুদ্র হিমাচল ব্যাপী সনাতনী হিন্দু সমাজকে নেতৃত্ব দেবে? সমগ্র সনাতনী সমাজের কাছে কার আছে সেই গ্রহণ যোগ্যতা? কার আছে সেই দানা বাঁধাবার জৈবী ক্ষমতা? বায়োলজিক্যালি নিখুঁত কে সেই মানুষ? কে সেই ব্যক্তি যার মধ্যে ঐশ্বরীয় শক্তি প্রকট? এভাবেই কি কেটে যাবে দিন শুধু হিন্দু ঐক্যের কথা বলে?

আর বর্তমানে সনাতনী হিন্দু জাগো আন্দোলনের সময় সনাতন ধর্মের এক শ্রেণীর স্বঘোষিত সনাতনী নামধারী মানুষ, বালখিল্য সাজা সাধু, ব্রহ্মচারীর দল সৎসঙ্গের প্রাণপুরুষ পরমপ্রেমময় পুরুষোত্তম পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে সরাসরি অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করছে, আক্রমণ করছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সৎসঙ্গ-এর বিরুদ্ধে। অথচ সনাতনী হিন্দু নেতৃবৃন্দ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে তাঁদের নিয়েই হিন্দু জাগো আন্দোলনে নেমেছেন। এর পরেও বৃহত্তর সনাতনী ঐকের কথা বলে এরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় বর্তমান এই হিন্দুদের এই দুর্দিনে, এই অস্থির সময়ে 'সৎসঙ্গ' কেন চুপ ক'রে রয়েছে এই নিয়ে মানুষকে সৎসঙ্গের বিরুদ্ধে নানা আপত্তিকর অন্যায় অপমানজনক মিথ্যে সাজানো অভিযোগ তুলে ক্ষেপিয়ে তুলছে এই স্বঘোষিত সনাতনী হিন্দু বালখিল্য কৃষ্ণ প্রেমীরা। সৎসঙ্গের বিরুদ্ধে একটা বিষাক্ত বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর এ সবই করছে বাঙালী হিন্দুরা।

যাই হ'ক এই চেষ্টা আজকের নয়, এই চেষ্টা আজ থেকে ১০০বছর আগে শ্রীশ্রীঠাকুরের যৌবনকালের সময় থেকে হ'য়ে এসেছে। শ্রীশ্রীঠাকুর ও তাঁর প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' আশ্রমের ওপর আক্রমণ করেছে বাংলাদেশে হিন্দু বাঙ্গালীরাই যা' এখনও করে চলেছে বাংলাদেশের সনাতনীরা; আর এদেশেও তাই হ'য়ে চলেছে। সনাতনীরা ব'লে থাকে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসেছেন। যদি পালিয়ে এসে থাকেন কাদের ভয়ে পালিয়ে এসেছিল? তাহ'লে এই বাংলায় কেন বাঙালীদের মাঝে তিনি আশ্রয় পেলেন না? কেন তাঁকে চলে যেতে হয়েছিল বিহারে? কেন বাংলার বর্ধমান জেলার পানাগড়ে 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার পরিবর্তে তৎকালীন বিহার বর্তমান ঝাড়খন্ড রাজ্যের দেওঘরে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলো? কাদের জন্য এমনটা হ'লো প্রশ্ন উঠবে না? কেন এই অসীম অনন্ত সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা পুরুষোত্তম পরমপিতা পরমপুরুষ পরম উৎস পরম অস্তিত্ব পরম কারণ রক্তমাংস সংকুল জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীবুদ্ধ, শ্রীশ্রীমহাপ্রভু, শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ ও বর্তমান যুগপুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ছয় ছয়বার এই ভারতের মাটিতে জন্ম নেওয়া সত্ত্বেও কেন আজ সনাতনী হিন্দুরা দুর্বল? কেন সৃষ্টিকর্ত্তা ঈশ্বর শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সর্বমোট আট আটবারের মধ্যে ছ'ছয়বার ভারতের মাটিতে জন্ম নিল? কেন হিন্দুরা নির্যাতিত? এই প্রশ্ন উঠবে না? সনাতনী হিন্দুরা কি কোনোদিন বিশ্বাস করেছে সৃষ্টিকর্তা মানুষের রূপ ধ'রে এই পবিত্র ভূমি ভারতের মাটিতেই নেমে এসেছেন স্বয়ং অবতারী আটবারের মধ্যে ছ'বার? 

সৃষ্টিকর্তা এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বর তো আটবারের মধ্যে ছ'ছবার নেমে এসেছেন ভারতের মাটিতে তবুও কি সনাতনীরা বুঝেছেন ঈশ্বর কখনো কোনও সম্প্রদায়ের নন, কোনও সম্প্রদায়ের পৈতৃক সম্পত্তি নন? বরং সমস্ত সম্প্রদায়ই তাঁর। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮০০কোটি মানুষের সবার তিনি জীবন্ত ঈশ্বর।

সনাতনী হিন্দুরা কি কোনোদিন আকাশের ভগবান, অমূর্ত ভগবান, বোবা ভগবান, মাটির ভগবান, ফটোর ভগবান থেকে সরে এসে রক্তমাংসের এক ও অদ্বিতীয় জীবন্ত ঈশ্বরে বিশ্বাস স্থাপন করেছে? ঈশ্বর যতবার এসেছেন ততবারই তাঁদের বারবার আসার কথা ব'লে যাওয়া সত্ত্বেও সনাতনী হিন্দুরা তা' বিশ্বাস করেছে? তাঁদের কথা পালন করেছে? অনুসরণ করেছে? এর পরেও ঐক্যের আহ্বান জানায় সনাতনীরা? আর, কলিযুগে আবির্ভূত বর্তমান শেষ অবতারী শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে গালাগালি, হুমকি, এবং তাঁর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' কে চুপ ক'রে থাকা নিয়ে সীমাহীন কটুক্তি করে এর পরেও?

এই চুপ থাকা প্রসঙ্গে বলি, যখন শ্রীশ্রীঠাকুরের ওপর বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমায়েতপুর গ্রামে ও বিহারের বর্তমানে ঝাড়খন্ডের দেওঘরে শ্রীশ্রীঠাকুরের পরিবার ও তাঁর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ'- এর ওপরে নানারকম চরম অত্যাচার হয়েছিল, হয়েছিল হামলা, আক্রমণ তখনও 'সৎসঙ্গ' চুপ করেছিল। হঠাৎ ঘুম ভেঙে উঠে কুম্ভকর্ণের মতো লম্ফ দিয়ে ঝম্প মারার শিক্ষা দিয়ে যাননি বিশ্বের সমস্ত বিস্ময়ের বিস্ময় সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।

সৎসঙ্গ একটা আন্দোলন, এই আন্দোলন তাৎক্ষণিক কোনও ভুঁইফোঁড় হাউই বাজির মতো আলো ছড়িয়ে আকশের অন্ধকারের বুকে হারিয়ে যাওয়ার মতো ঠুনকো হাউই বাজির হঠাৎ আন্দোলন নয়। যখনই দেশে ও বিদেশে কোনও প্রলয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে ও সমাজের ভিত নড়ে ওঠে তখনও চুপ থাকে সৎসঙ্গ। যেদিন মহাপ্রলয় আসবে সেদিনও সৎসঙ্গ চুপ থাকবে। কারণ সে জানে মহাপ্রলয় আসবে, লুপ্ত হ'য়ে যাবে মানব সভ্যতা, ধ্বংস হ'য়ে যাবে পৃথিবী। কে রক্ষা করবে এই মহাপ্রলয়ের হাত থেকে মানব জাতিকে? কিভাবে রক্ষা করবে? কি তার Blue print? জানা আছে সনাতনীদের?

শ্রীশ্রীঠাকুর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' জানে শ্রীশ্রীঠাকুরের ব'লে যাওয়া কথা, "তোদের সামনে এমন একদিন আসছে সেদিন একমুঠো সোনার বদলে একমুঠো চাল পাবি না। দুনিয়ার সামনে একটা সর্বনাশ আসছে যার তুলনায় এই (দ্বিতীয়) মহাযুদ্ধ, লোকক্ষয়, সম্পদের ক্ষয় কিছুই না। গতিক দেখে মনে হয় মনুষ্যত্বের ভিত পর্যন্ত লোপ পেয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছুই নয়। তাই শিক্ষা, দীক্ষা, বিবাহ এই তিনটে জিনিস ঠিক ক'রে দেন আপনারা।"

তাই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৃষ্ট এক ও একমাত্র প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' সেই মানুষের মনুষ্যত্বের ভিতকে রক্ষা করার জন্য যে মহা আন্দোলন সেই আন্দোলনে মগ্ন। বিশাল প্রাসাদের ভিতটাই যদি নড়ে যায় তাহ'লে কি হবে? ভেঙ্গে পড়বে বিশাল অট্টালিকা। তা' সে যতই শক্তিশালী প্রাসাদ হ'ক না কেন? প্রাকৃতিক ও মানুষের কারণে ভয়ংকর ভূমিকম্পে যখন ভূস্তরের প্লেটগুলি নড়ে ওঠে এবং সরে যায় আর তখনই হয় ভূমিকম্প। আর, ভেঙ্গে পড়ে গাছপালা, ছোটোবড় বাড়িঘর, প্রাসাদ অট্টালিকা মাটির ওপরে সবকিছু।
ঠিক তেমনি মানুষের ভিত যে মনুষ্যত্ব সেই মনুষ্যত্বের ভিত যদি লোপ পেয়ে যায় তখন গোটা মনুষ্য সমাজ ধ্বংস হয় এবং তারপর নেমে আসে গভীর শীতল যুগ।

সেই বর্তমান অস্থির সময়ে যখন তথাকথিত গোটা মানব সভ্যতার মনুষ্যত্বের ভিত নড়ে উঠছে, অশনি সঙ্কেতের ইঙ্গিত দিচ্ছে তখন সবাই যখন Superficial thoughts-ওপর দাঁড়িয়ে অর্থাৎ ভাসাভাসা, উপর উপর, অগভীর চিন্তাভাবনার ওপর দাঁড়িয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আন্দোলনরত, কখনও বা Pseudo politics (ছদ্ম রাজনতির) এর ওপর দাঁড়িয়ে Pseudo movement ( ছদ্ম আন্দোলন) করে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সেরকম আন্দোলন পুরুষোত্তম পরমপিতা জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' করে না। সৎসঙ্গ মনুষ্যত্বের ভিত যাতে লোপ না পেয়ে যায়, যা যা করলে মনুষ্যত্বের ভিত টেকসই, দীর্ঘস্থায়ী হয়, কঠিন মজবুত হয় সেই বিষয়ে সৎসঙ্গ বিভোর, তন্ময়, সমাচ্ছন্ন, সাধিস্থ। মানব জাতি যাতে তাদের জ্ঞানের অহংকারে লুপ্ত হ'য়ে না যায় সেই কঠিন আন্দোলনে 'সৎসঙ্গ' মগ্ন, অন্তর্লিপ্ত।

প্রত্যেকটি ধর্ম প্রতিষ্ঠানের তার নিজের নিজের চিন্তাভাবনা অনুযায়ী সমাজের জন্য কাজ আছে। বহিরঙ্গ ও অন্তরঙ্গ দুইভাবে সমাজ সেবা হয়। সমস্ত ধর্ম প্রতিষ্ঠান তাদের শক্তি সামর্থ্য দিয়ে অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা ইত্যাদি বিভিন্ন অন্তরস্পর্শী সেবার মধ্যে দিয়ে সমাজের বহিরঙ্গের সেবা করছে। ছদ্ম সেবা হ'ক আর প্রকৃত সেবা হ'ক দুই সেবায় সমাজকে বহিরঙ্গে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। সময়ের কষাঘাতে টিকে থাকে প্রকৃত সেবা। আর, শীতের শেষে ঝরা পাতার মত সময়ের কষাঘাতে সময়মত লুপ্ত হ'য়ে যায় ছদ্ম সেবা প্রতিষ্ঠান।

আর, অন্তর অঙ্গের সেবা করে ঈশ্বর স্বয়ং ও তাঁর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান। 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান এই দুনিয়ার বুকে ঈশ্বর যতবার এসেছেন, আট আটবার এসেছেন কিন্তু তিনি কোনও প্রতিষ্ঠান এর আগে নিজের হাতে গড়ে দিয়ে যাননি, তাঁকে কেন্দ্র ক'রে গড়ে উঠেছিল সমস্ত প্রতিষ্ঠান তাঁর প্রধান প্রধান ভক্তদের উদ্যোগে। কিন্তু এক ও একমাত্র প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান নিজের হাতে গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন বর্তমান সৃষ্টিকর্তা, জীবন্ত ঈশ্বর, সদগুরু, সর্বদর্শী, সর্বশক্তিমান, সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ, সর্বজন কল্যাণকর, পরম কারণ, পরম উৎস, পরম অস্তিত্ব পরমপুরুষ, পুরুষোত্তম, পরমপিতা পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৃষ্ট "সৎসঙ্গ হচ্ছে একটি সনাতন ধর্মীয় আন্দোলন। এর আদর্শ হচ্ছে - ধর্ম কোনো অলৌকিক ব্যাপার নয় বরং বিজ্ঞানসিদ্ধ জীবন সূত্র; ভালোবাসাই মহামূল্য, যা দিয়ে শান্তি কেনা যায়। সৎসঙ্গ’-এর উদ্দেশ্য মানুষকে সত্যকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। সৎসঙ্গ কখনো সম্প্রদায়ে বিশ্বাস করে না। ধর্ম কখনও বহু হয় না-ধর্ম এক। সপারিপার্শ্বিক জীবন-বৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলাই ধর্মের প্রধান লক্ষ্য। ধর্ম মূর্ত্ত হয় আদর্শে এবং শ্রীশ্রীঠাকুর হলেন ধর্মের মূর্ত্ত আদর্শ। তিনি কোন সম্প্রদায়-বিশেষের নন, বরং সব সম্প্রদায়ই তাঁর। শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন-“একজন মানুষের বিনিময়ে আমি একটি সাম্রাজ্য ত্যাগ করতে পারি, কিন্তু একজন মানুষকে ছাড়তে পারি না।"

সৎসঙ্গ আন্দোলন দাঁড়িয়ে আছে শিক্ষা, কৃষি, শিল্প ও সুবিবাহ এই চারটি স্তম্ভের ওপর। জীব জগতের এমন কোনও দিক বাকি নেই যে বিষয়ে তিনি আন্দোলন সৃষ্টি করেননি। অসীমের সসীম রূপকে বুঝতে বালখিল্য অজ্ঞ স্বঘোষিত সনাতনী নামধারী হিন্দু ব্রহ্মচারীদের পক্ষে হাজার বার জন্ম নিলেও সম্ভব হবে না। কারণ তাঁদের মধ্যে মনুষ্যত্ব লোপ পেয়ে গেছে। তাই, মানুষের মধ্যে প্রকৃত মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে পারলেই এই পৃথিবিতেই আবার রামরাজ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব, পৃথিবীর মানুষের যথার্থ কল্যাণ সম্ভব।

আর, এই সৎসঙ্গ আন্দোলনের প্রাণ ভোমরা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র এই সৎসঙ্গ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটিয়েছেন একেবারে নারীপুরুষের বিজ্ঞানসিদ্ধ সুবিবাহের মধ্যে দিয়ে জন্মবিজ্ঞানকে হাতিয়ার ক'রে ভ্রূণ সৃষ্টিতে। সৎসঙ্গের আন্দোলন জন্ম বিজ্ঞানকে আশ্রয় করে উন্নত মানুষ জন্মের আন্দোলন।

তাই, হে অহংকারী অজ্ঞ সনাতনী হিন্দু,
সৎসঙ্গের আন্দোলনকে হাউই বাজির আন্দোলনের সঙ্গে যেন আমরা গুলিয়ে না ফেলি।

আজ এই পর্যন্ত। আবার আসবো পরবর্তী অন্য বিষয় নিয়ে। নমস্কার।

প্রশ্ন ও উত্তর।

 








( লেখা ১৯শে অক্টোবর'২৪ )

Monday, December 16, 2024

প্রশ্ন ও উত্তর।

প্রশ্নঃ ইষ্টানুসরণে ধ্যান করতে হয় কা’র?

শ্রীশ্রীঠাকুরঃ যুগাবতার ছাড়া অন্য কেউ ধ্যেয় নন।

প্রশ্নঃ তাঁর অবর্ত্তমানে কি হবে?

শ্রীশ্রীঠাকুরঃ যুগাবতারের অবর্ত্তমানে তাঁতে অচ্যুত-আনতিসম্পন্ন, ছন্দানুবর্ত্তী, জীবন-বৃদ্ধিদ আচরণ-সিদ্ধ তঁদ্ বংশধর ইষ্ট-প্রতীকস্বরূপ থাকতে পারেন। পরবর্ত্তী এসে গেলে তখন তিনিই হবেন ধ্যেয়। [আ.প্র.১/৮.১.১৯৪০]

"ইষ্ট গুরুপুরুষোত্তম
প্রতীক গুরু বংশধর
রেতঃ শরীরে সুপ্ত থেকে
জ্যান্ত তিনি নিরন্তর। "-------শ্রীশ্রীঠাকুর।

সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর যুগ শেষে ঘোর কলিযুগের যুগাবতার হ'লেন পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন যুগাবতার রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ-এর পরবর্তী রূপ। তাঁকে যুগাবতার না ব'লে বলা উচিৎ যুগাবতারী। তিনি যুগাবতারী। অর্থাৎ যিনি যুগাবতারদের প্রেরণ করেন অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা। সেই অর্থে পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরামচন্দ্র থেকে পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ প্রত্যেকেই হ'লেন যুগাবতারী।

আর, পরবর্তী যুগাবতারী যতক্ষণ না আসছেন ততক্ষণ শ্রীশ্রীঠাকুরই ধ্যেয়। পরবর্ত্তী যুগাবতারী এসে গেলে তখন তিনিই হবেন ধ্যেয়। আর শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা ও বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা হ'লেন যুগাবতারী দয়াল ঠাকুরের অবর্তমানে তাঁতে অচ্যুত-আনতিসম্পন্ন, ছন্দানুবর্ত্তী, জীবন-বৃদ্ধিদ আচরণ-সিদ্ধ তঁদ্ বংশধর ইষ্ট-প্রতীকস্বরূপ।
প্রবি। ( লেখা ১০ই অক্টোবর'২০২২)

প্রবন্ধঃ আসুন, শপথ নিই আজ,

"আমরা ভাসি কথার স্রোতে, তুমি বলো জীবন দিতে।"---শ্রীশ্রীঅবিনদাদা।

'শ্রীশ্রীঅবিনদাদা' অনেক আগেই তাঁর যৌবনের শুরুতেই আমাদের বিরাশী সিক্কার এক থাপ্পর কষিয়ে আমাদের চরিত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন স্বরচিত গানের কলির মধ্যে দিয়ে।

তিনি বলেছিলেন, "দয়াল, তুমি বল জীবন দিতে আর আমরা ভাসি কথার স্রোতে।" সেই কথার স্রোতে ভাসা আমরা সৎসঙ্গীরা এখনও কথার স্রোতে ভাসার প্রমাণ রেখে চলেছি ফেসবুকের বিভিন্ন প্রোফাইলে ভালোবাসার তীব্র দামামা বাজিয়ে। ফল্গুনদীর মতো ব'য়ে চলেছে আমার ভালোমানুষির আবরণে আমার ভিতরে আমার অজান্তে তলে তলে কথার স্রোতে ভাসা শয়তানি স্রোত। শয়তানি প্রবৃত্তি এক ভালোমানুষের ভালোবাসার মোড়কে নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়ে মিষ্টি মুখের মধুর হাসি আর চাহনিতে ভরিয়ে আমার অন্তরে চোরের মতো লুকিয়ে থেকে আমাকে দিয়ে শ্রীশ্রীঅবিনদাদাকে ভালোবাসার নাটক রচনা করিয়ে নিয়ে চলেছে ও অভিনয়ের নিখুঁত প্রমাণ দিয়ে চলেছে প্রেম ভালোবাসার এক তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে।

আমার ভিতরে বাস করছে রিপ্রোডাক্টিভ ক্লোনিং প্রক্রিয়ায় তৈরী হওয়া ক্লোনিং জীবের মত ক্লোনিং ভালোবাসা। ফলে আমরা নিজেরাই বুঝতে পারছি না আমার বুকের ভেতরে অবস্থিত ভালোবাসার আসল আর নকলের তফাৎ। আসল ছেড়ে নকলেতে মনটা মজে আছে আমাদের। ফলে ভগবানের ভালোবাসা, হাসি আর শয়তানের ভালোবাসা, হাসি একই রকম হ'য়ে আমার বুকের ভেতরে জন্ম নিয়ে আমার সামনে প্রতিমুহূর্তে উপস্থিত হচ্ছে। কখনও কখনও বা শয়তানের ভালোবাসা, হাসি ভগবানের ভালোবাসা ও হাসির চেয়েও মিষ্টি মধুর হ'য়ে যাচ্ছে; আর তা হয়ে যাচ্ছে রূপে, গুণে, আচার-আচরণে, কথা-বার্তায়, ব্যবহারে সবেতেই। ফলে সাধারণ মানুষ, অতি সাধারণ মানুষ, সহজ-সরল ভালো মানুষ, বোকা মানুষ, ধর্মভীরু মানুষ, আবেগ তাড়িত ভারসাম্যহীন মানুষ আমার ভেতরের শয়তানী ভালোবাসা ও ভগবানের ভালোবাসার মধ্যে তফাৎ করতে পারছে না প্রকৃতি সঞ্জাত মুক্তো আর চাষের মুক্তোর মধ্যে তফাৎ করতে না পারার মতন, পারছে না সুন্দরবনের গাছে গাছে প্রাকৃতিক মধু যাকে Raw Honey ( কাঁচা মধু ) বলে, তাঁর সঙ্গে Processing Honey (প্রক্রিয়াজাত মধু )-র তফাৎ করতে না পারার মতো।
সুন্দরবনের গাছে গাছে মৌমাছি মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বিভিন্ন ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু মৌচাকে জমা করে তাকে Raw Honey ( কাঁচা মধু ) বলে এবং বাক্সের মধ্যে পোষা মৌমাছি দিয়ে তৈরী করা মধুকে Processing Honey (প্রক্রিয়াজাত মধু ) বলে। এই দুই মধু খাঁটি হ'লেও গুণের অনেক তফাৎ থাকে। তাই যেটা আমি বলতে চেয়েছি তা' হ'লো বাজারে প্রাপ্ত এই দুই মধুর তফাৎ ধরতে পারা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এই দুই মধুর পার্থক্য ধরতে পারা তো দূর অস্ত বাজারে চিনি, গুড়, কেমিক্যাল মেশানো মধুর নামে যে গরল খাওয়ানো হয় তাই-ই ধরতে পারে না মানুষ। মাঝে মাঝে দেখা যায় বালতি ভর্তি চিনি, গুড়, কেমিক্যাল, রঙ মেশানো তরল পদার্থের মধ্যে একটা চাক ডুবিয়ে দিয়ে তাতে কয়েকটা মরা মাছি ছড়িয়ে দিয়ে মাথায় ক'রে পাড়ায় পাড়ায়, বাড়ির দরজায় দরজায় হাঁক দিয়ে যায় 'খাঁটি মধু, চাক ভাঙা মধু' ব'লে। আর, বোকা মানুষ, অজ্ঞানী মানুষ তা' খাঁটি মধু ভেবে, বিশ্বাস ক'রে কিনে নেয় পরম মমতায়, ভালোবেসে। এই মধুই যখন মানুষ চিনতে পারে না তখন Raw Honey (কাঁচা মধু) ও Processing Honey (প্রক্রিয়াজাত মধু)-এর মধ্যে তফাৎ ধরবে কি করে? ঠিক তেমনি আমি তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থাকা সৎসঙ্গি, আমার ভেতরে শয়তানের হাসি ভগবানের চেয়েও মিষ্টি হ'য়ে চোখে মুখে, আচারে-ব্যবহারে ফুটে উঠেছে আর ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে সাধারণ দীক্ষিত মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যে।
যাই এক, যেটা আমি বলতে চেয়েছিলাম সেটা হ'লো ভালোবাসার কথা, শ্রীশ্রীঅবিনদাদাকে ভালোবাসার কথা। সেটা হ'লো অবিনদাদাকে, অবিনদাদার কথাবার্তা ও কার্যধারাকে বুঝতে পারার কথা।
প্রথমে তাঁর কথাবার্তা ও কার্যধারার কথা বলি। এর আগের পোষ্টে আমি শ্রীশ্রীঅবিনদাদার কথাবার্তা ও কার্যধারা সম্পর্কে বলেছি।
শ্রীশ্রীঅবিনদাদাও শ্রীশ্রীঠাকুরের মতো সময়ের অনেক আগেই এসেছেন। শ্রীশ্রীঠাকুর এসেছিলেন ভবিষ্যৎ পৃথিবীর নকশা আমাদের হাতে তুলে দিতে। কলি যুগ শেষে সত্য যুগে প্রবেশের Transitional period চলছে এখন। এই সত্য যুগে প্রবেশের ক্রান্তিকালের মানুষ যারা সত্য যুগে প্রবেশ করবে তাদের জন্য প্রবেশের Complete Blue print ( সম্পূর্ণ নীল নকশা) তিনি দিয়ে গেছেন। আর কিছু লাগবে না। এবার শুধু সেই নীল নকশা বাস্তবায়নের ব্যাপার। কলি যুগ থেকে সত্য যুগে প্রবেশের পথ তৈরীর চলবে ভয়ংকর প্রস্তুতি। এই ভয়ংকর প্রস্তুতি কল্পনার অতীত। জানতো শ্রীশ্রীঠাকুরের কুকুর এ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ পরম ভক্ত শ্রীবড়দা, জানতো জন্মসিদ্ধ পুরুষ শ্রীশ্রীদাদা, জানে বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেব, শ্রীশ্রীঅবিনদাদার মতো ঈশ্বরকোটি পুরুষ।
তাই শ্রীশ্রীঠাকুরকে সময়ের এত আগে আসতে হয়েছে। তাই তিনি ব'লে গেছিলেন, যা দিয়ে তিনি গেছেন আগামী দশ হাজার বছর আর আর কিছু লাগবে না, আর আসতে হবে না। ঐ ভাব যখন মলিন ও ম্লান হ'য়ে যাবে, উবে যাবার মতো হবে, বিকৃতিতে আচ্ছন্ন হ'য়ে উঠবে তখন মানুষকে ঈশীস্পর্শে সঞ্জীবিত ক'রে তোলবার জন্য তিনি আবার মানুষ হ'য়ে আসবেন, মানুষের মধ্যে তাদেরই একজন হ'য়ে বিচরণ করবেন, আর নিজের আচরণ দিয়ে প্রতি পদক্ষেপেই দেখিয়ে দেবেন, কেমন ক'রে মানুষ ঈশ্বরের হ'য়ে চলতে পারবে সব কিছুর মধ্যে।
শ্রীশ্রীঠাকুর স্থুল শরীর ছেড়ে চলে যাবার পর শ্রীশ্রীঠাকুরের ঔরসজাত ও কৃষ্টিজাত সন্তান, কলিযুগের শেষে নুতন রূপে আবির্ভূত এ যুগের হনূমান, অর্জুন, উপগুপ্ত, সেন্ট পল, আলি, নিত্যানন্দ, বিবেকানন্দ ইত্যাদি ভক্তদের সম্মিলিত রূপ শ্রীশ্রীঠাকুরের কুকুর পরম ভক্ত শ্রীশ্রীবড়দার হাত দিয়ে শুরু হয়েছিল সেই নীল নকশার ক্ষেত্র প্রস্তুতের কাজ, যা শ্রীশ্রীদাদা, বর্তমান শ্রীশ্রী আচার্যদেবের মাধ্যমে প্রবাহিত হ'য়ে চলেছে ক্ষুদ্র থেকে বৃহতের দিকে ধীরে ধীরে। সেই ক্ষেত্র প্রস্তুতের কাজ যা আপাতদৃষ্টিতে বিতর্কিত, সমালোচিত হ'য়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে চলেছে সাধারণ আপামর দীক্ষিতদের মনে কথার স্রোতে ভাসা বিরোধীদের ক্লোনিং ইষ্টপ্রাণতার ঝলকে। 

এইসমস্ত ঘরে-বাইরে ক্লোনিং ইষ্টপ্রাণ ব্যক্তিকে চেনা ও তাদের দ্বারা পরিবেশিত নকল মধুর স্বাদ আর প্রকৃত ইষ্টপ্রাণ ব্যক্তিকে চেনা ও তাঁদের পরিবেশিত আসল মধুর স্বাদের মধ্যে তফাৎ করার, পার্থক্য ধরতে পারার ক্ষমতা আমাদের মতো সাধারণ, অতি সাধারণ আই কিউ ( I Q ) লেবেলের অধিকারী সৎসঙ্গীদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্ত পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দাকে একইসঙ্গে ঔরসজাত ও কৃষ্টিজাত সন্তান ক'রে নামিয়ে এনেছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুর এবারে। কেন তিনি একইসঙ্গে নামিয়ে এনেছিলেন তা রহস্যময় হ'লেও শ্রীশ্রীঠাকুরে সমর্পিত প্রকৃত ইষ্টপ্রাণ, অকপট, করার তীব্র স্রোতে ভেসে চলা নীরব কর্মী মাত্রই জানতে পারেন, বুঝতে পারেন সেই রহস্যের কিঞ্চিৎ। তাঁরাই চিনতে পারে, বুঝতে পারে শ্রীশ্রীঠাকুরের ব'লে যাওয়া "তাঁ'তে অচ্যুত – সশ্রদ্ধ – আনতি-সম্পন্ন, প্রবুদ্ধ-সেবাপ্রাণ,তৎবিধি ও নীতির সুষ্ঠু পরিচারক ও পরিপালক, সানুকম্পি-চর্যানিরত , সমন্বয়ী সামঞ্জস্য - প্রধান,পদনির্লোভ , অদ্রোহী , শিষ্ট-নিয়ন্ত্রক, প্রীতিপ্রাণ" সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্তটিকে। এ ছাড়া কারু পক্ষে সম্ভব নয়।

শ্রীশ্রীবড়দার নেতৃত্বে শ্রীশ্রীঠাকুরের দিয়ে যাওয়া সেই নীল নকশার ( Blue print ) ক্ষেত্র প্রস্তুতের কাজের ধাবমান গতির রহস্যময়তায় ঘেরা তাৎপর্য অন্তঃসলিলা ফল্গু নদীর মতো। তা বোঝা সাধারণ সৎসঙ্গীদের পক্ষে সম্ভব নয়।

আর, ক্লোনিং ইষ্টপ্রাণ ব্যক্তিরা বিভিন্ন চ্যানেল খুলে ভিডিওর মাধ্যমে নকল মধু পরিবেশন ক'রে যতই বিরুদ্ধ প্রচার করুক না কেন, যতই সাধারণ সৎসঙ্গী ও অদীক্ষিত মানুষের মগজ ধোলাই ক'রে 'সৎসঙ্গ'-এর উল্কার গতিতে ছুটে চলা রথকে থামানোর চেষ্টা করা হ'ক না কেন সেই ক্ষেত্র প্রস্তুতের কাজের ধারা ও গতিবেগের তীব্রতা যা ব'য়ে চলেছে শ্রীশ্রীবড়দা থেকে শুরু ক'রে শ্রীশ্রীদাদা, শ্রীশ্রীআচার্যদেব ও শ্রীশ্রীঅবিনদাদার মধ্যে দিয়ে তা' রুদ্ধ হওয়ার নয়।

এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে যায় শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা, "এইবার করিবো লীলা অতি চমৎকার, আমিই বুঝিতে নারি, অন্যে কি বা ছাড়।"

এইকথা তো স্বয়ং শ্রীশ্রীঠাকুর ব'লে গেছেন তার মর্মার্থ ঘরে-বাইরে আমি, আপনি বুঝবো কি ক'রে ও বিরোধীরা বা অন্যেরা বুঝবে কিভাবে?
এবার আসি আলিপুরদুয়ারের ভিডিও প্রসঙ্গে। ভিডিও তুলতে, ছবি তুলতে বারণ করেছিলেন স্বয়ং শ্রীশ্রীঅবিনদাদা। এবং বলেছিলেন অনুষ্ঠানের দিন মঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে, বলেছিলেন তাঁকে দর্শন করতে, প্রণাম করতে, নিবেদন করতে ভালোবেসে যারা এসেছিলেন তাঁদের সকলের উদ্দেশ্যে। তাঁতে বিরোধীদের ও অন্যান্যদের গাত্রদাহ হচ্ছে কেন? কেন গায়ে মানে না আপনি মোড়লের মতো ফেসবুকে ও ভিডিওর মাধ্যমে সেই অনুষ্ঠানের বক্তব্যের বিরোধীতা করা হচ্ছে? এটা কি অনধিকার চর্চা নয়? ভিডিওতে শ্রীশ্রীঅবিনদাদার বিরোধীতা করার জন্য এত মাখো মাখো ক'রে কথার ফুলঝুড়িতে ক্লোনিং ইষ্টপ্রাণতায় নকল মধু পরিবেশন করার এত প্রয়াস, এত কান্না, এত আব্দার-আবেদন কেন? কে বা কারা কপট চাতুরী করছে আর বদনে হরি হরি বলছে?

এবার আসি আমার গুরুভাইবোনেদের কাছে সরাসরি কিছু প্রশ্ন ও একটা আবেদন নিয়ে।
১) শ্রীশ্রীঅবিনদাদা যখন বলেছেন ভিডিও না করতে, ছবি না তুলতে তাহ'লে আমরা ভিডিও করি কেন? ছবি তুলি কেন?

২) তাঁর অনুমতি নিয়েই তো করতে পারি, তুলতে পারি, তাই না?

৩) আর যখন সমস্ত ভিডিও ডিলিট করা হ'লো তখন কেন এখনো বিভিন্ন প্রোফাইলে ভিডিওর খন্ড খন্ড অংশ প্রকাশ করা হচ্ছে?

৪) কেনই বা আমরা বিরোধীদের সুযোগ ক'রে দিচ্ছি, "কেন খন্ড খন্ড অংশ প্রকাশ করছেন, হিম্মত থাকলে পুরো ভিডিও প্রকাশ করুন"---এই কথা বলার?
৫) ভিডিওর কেন খন্ড খন্ড অংশ প্রকাশ করবো?

৬) যদি ভিডিও প্রকাশ করিই তাহ'লে পুরো ভিডিও কেন প্রকাশ করি না।?
৭) অসুবিধা কি আছে পুরো প্রকাশ করার?

৮) ঐ ভিডিওতে আপত্তিজনক কিছু আছে নাকি?

৯) খন্ড খন্ড ভিডিও প্রকাশ করার মধ্যে দিয়ে কি আমরা সৎসঙ্গীরা, শ্রীশ্রী অবিনদাদাকে যারা আমরা ভালোবাসি তারাই ঘুরিয়ে প্রমাণ করছি না যে ঐ পুরো ভিডিওতে আপত্তিকর কিছু ছিল?

১০) বিরোধীদের হাত কি আমরা শক্ত করছি না?

১১) আমরাই কি বিরোধীদের সমালোচনা করার অস্ত্র তুলে দিচ্ছি না?

১২) আমরাই কি শ্রীশ্রীঅবিনদাদাকে তাঁর নির্দেশ না-মেনে তাঁকে অসম্মান করছি না?
১৩) এর পরেও কি আমরা দাবী করতে পারি আমরা শ্রীশ্রীঅবিনদাদাকে আমাদের জীবনের চেয়েও বেশী ভালোবাসি?

১৪) এটা কি সেই শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী "ঋষি বাদ দিয়ে ঋষিবাদের আরাধনা শুরু হয়েছে" কথার একইরকম অর্থবহনকারী "ঋষিবাদ বাদ দিয়ে ঋষির আরাধনা শুরু হয়েছে" কথার অনুরূপ হ'লো না?

১৫) এটা কি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের সেইসময়ের ভক্তমন্ডলীদের বলা "আমরা দেশবন্ধুকে মানি, কিন্তু তাঁর দর্শন মানি না" কথার মতো হ'লো না?
১৬) শেষ প্রশ্ন, মিডিয়ার হাতে ভিডিও গেল কি ক'রে? আমরা সৎসঙ্গীরা কি মিডিয়ার হাতে ভিডিও তুলে দিয়েছি? তাঁদের কি কোনও প্রতিনিধি ছিল? আমরা সৎসঙ্গীরা শ্রীশ্রীঅবিনদাদার সঙ্গে বেইমানি ক'রিনি তো? এটাই আমার শেষ প্রশ্ন।

শ্রীশ্রীঠাকুর এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, "একটা মানুষকে ভালোবাসি কিন্তু তাঁর কথা ভালোবাসি না, একটা মানুষকে অর্ধেক ভালোবাসি, অর্ধেক ভালোবাসি না, এটা কি ক'রে সম্ভব হয় তা' আমি জানি না।"
তাই, পরিশেষে আমি অনুরোধ করবো, আমরা যেন এমন না হ'ই। যদি
মনে করি, ভিডিও অসাধারণ, অভূতপূর্ব, অসামান্য, অতুলনীয়, অপূর্ব তাহ'লে নিজেরা তাঁর নির্দেশ অমান্য ক'রে ভিডিও খন্ড খন্ড ক'রে প্রকাশ না ক'রে শ্রীশ্রীঅবিনদাদার কাছে নিবেদন করতে পারি, ভালোবেসে আবেদন, আব্দার করতে পারি ঐ অমূল্য সম্পদ ভিডিও প্রকাশ করতে দেওয়ার জন্য। অনুমতি দেওয়া না-দেওয়া একান্তই তাঁর ব্যাপার। আমরা তা' মাথা পেতে মেনে নেব।

কিন্তু কাউকে যদি ভালোবাসি, তবে তাঁকে পুরোপুরি ভালোবাসবো। তিনি যাই-ই বলবেন তাই মেনে চলবো। এক পায়ে যদি দাঁড়িয়ে থাকতে বলেন তিনি, তাহ'লে আমরা বাচ্চা-বুড়ো, কিশোরকিশোরী, যুবকযুবতী, প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবাই এক পায়েই দাঁড়িয়ে থাকবো। ইয়ং জেনারেশনের উদ্দেশ্যে বলবো, ফেসবুকে তাঁকে ভালোবাসি, ভালোবাসা জানাই লক্ষ কোটি হ্যাশ ট্যাগের মাধ্যমে, এ দেখে ভালো লাগে, খুব ভালো লাগে; তার থেকে আরো ভালো লাগে ও লাগবে আমরা কোটি কোটিতে যদি উদ্ভিন্ন হ'য়ে উঠি তাঁর মুখনিঃসৃত প্রতিটি কথা মেনে চলার মধ্যে দিয়ে, আমরা যদি আমাদের চরিত্র দিয়ে তাঁর গার্ডওয়াল হ'য়ে উঠতে পারি আগামী দিনগুলিতে নিজ নিজ এলাকায় দেশে-বিদেশে, শহরে-নগরে, গ্রামে গঞ্জে, পাহাড়ে-সমুদ্রে যেখানেই যে থাকি না কেন।

আসুন, আমরা ভয়ংকর গার্ড ওয়াল হ'য়ে উঠি শ্রীশ্রীঅবিনদাদার, যার ভয়ে কাল নত হয় এমন গার্ড ওয়াল, কেননা শ্রীশ্রীঠাকুরের কলি যুগ থেকে সত্য যুগে প্রবেশের যে Blue print ( নীল নকশা ), সেই নীল নকশা বাস্তবায়িত হ'তে চলেছে তাঁর রেতধারার মধ্যে দিয়ে। তিনি লীলা করবেন রেত ধারার মধ্যে দিয়ে আগামী দশ হাজার বছর এবং ট্রাঞ্জিশনাল পিরিয়ড-এর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। তিনি এসেছেন, রেতধারার মধ্যে দিয়ে আবার লীলা করবেন শ্রীশ্রীবড়দা থেকে শ্রীশ্রীঅবিনদাদা ও তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে দিয়ে।

আসুন, শপথ নিই আজ, আমরাও আসবো জন্মে জন্মে তাঁর ভয়ংকর গার্ড ওয়াল হ'য়ে, হওয়ার সৌভাগ্য নিয়ে, যে গার্ড ওয়ালের ভয়ে কাল নত হ'য়ে থাকবে। জয়গুরু।
( লেখা ১০ই ফেব্রুয়ারী'২০২৪)