Powered By Blogger

Monday, November 25, 2024

প্রবন্ধঃ আমরা কি ভেবে দেখবো না?

( ভিডিওটা দেখুন, শুনুন ও তারপর পড়ুন; তারপর আপনার মতামত অবশ্যই দিন।)


বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে অষ্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের হারে একশ্রেণী বাংলাদেশীদের অষ্ট্রেলিয়ার পক্ষে বাধভাঙ্গা আনন্দ প্রকাশ ও ভারতের বিরুদ্ধে সীমাহীন দৃষ্টিকটু কটুক্তি ও খুল্লমখুল্লা নিন্দনীয় কুৎসিত উল্লাস এবং তার প্রত্যুত্তরে ভারতের একশ্রেণী ভারতীয়র নিন্দনীয় কুৎসিত ভূমিকা ভারত-বাংলাদেশ উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ককে চরম গরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এর জন্যে কাকে দায়ী করবো? যখন আমরা দেখি দেশের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেধাবী ছাত্রছাত্রী খুল্লমখুল্লা রিপু তাড়িত উলঙ্গ কুৎসিত আচার আচরণ করতে পারে তখন সাধারণ বুদ্ধিহীন ভাঙাচোরা বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে ডুবে থাকা মানুষ যা ইচ্ছা তাই করতেই পারে। আর, যখন সেই দেশের সরকার, রাষ্ট্রপ্রধানরা এইসমস্ত দেখেও চুপ ক'রে থাকে, দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ও সেই একশ্রেণীর উদ্দেশ্যে কোনও মানবতার, মনুষ্যত্বের বার্তা এবং বলিষ্ঠ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেয় না তখন ধরেই নিতে হয় উভয় দেশের শেষের সেদিন ভয়ংকর।


ভারত সরকার প্রতিবেশী রাষ্ট্র সম্পর্কে কি কঠোর ব্যবস্থা নেবে সেটা সরকারী বিবেচনাধীন ব্যাপার। নিশ্চয়ই কঠোর পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু ভিডিওতে আপনি আপনার ব্যক্তিগত ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে একজন ভারতীয় হিসেবে যে সিদ্ধান্তগুলি সম্পর্কে বললেন, যে ভাষা ব্যবহার করলেন সেগুলি আপনাকে বলবার জন্য ভারত সরকার প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছিল? নাকি স্বাধীন ভারতের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে সংবিধান বহ্রির্ভূত কথা বলার------যা বললে, যে ভাষা প্রয়োগ করলে ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট হ'তে পারে, সমস্ত ভারতবাসী কলঙ্কে জড়িয়ে পড়তে পারে-----অনুমতি ও অধিকার দিয়েছিল? আপনি ভারত সরকারের মুখপাত্র? রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি? প্রধানমন্ত্রীর দূত? বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক দপ্তরের বিশেষ দায়িত্বাধীন কোনও প্রভাবশালী সরকারী প্রতিনিধি?


ভারত সরকার কি সিদ্ধান্ত নেবে সেটা ভারত সরকারের ব্যাপার ও তা' সরকারী বৈদেশিক নীতির ওপর নির্ভর করে। ভিসা নিয়ে শুধু চিকিৎসা কেন প্রয়োজনে শিক্ষা, ব্যবসা, ভারত ভ্রমণ ইত্যাদি যে কোনও ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারী করতে পারে ভারত সরকার ভারতের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থে।


কিন্তু প্রতিবেশী দেশের নাগরিককে প্রকাশ্যে 'শুয়োরের বাচ্চা ও হোগা মারার কথা' বলার জন্য আপনাকে বা ভারতের কোনও নাগরিককে, ভারত সরকার ভারতের মুখপাত্র করেছিল? ভারতের জনগণকে প্রকাশ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় যা ইচ্ছা তাই বলার ছাড় দেওয়ার ঘোষণা করেছিল নাকি ভারত সরকার? ভারতের বিদেশ দপ্তর নেট দুনিয়ায় এই উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খল আচরণ প্রকাশের গুরুদায়িত্ব ভারতীয়দের বিশেষ ক'রে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীদের দিয়েছিল নাকি? ভারত সরকার প্রতিবেশী দেশের জনগণকে প্রকাশ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় অশ্লীল অশ্রাব্য ভাষায় অকথ্য কুকথ্য কথা বলার জন্য সরকারী লাইসেন্স দিয়েছিল নাকি? তাহ'লে যে অসভ্য অশালীন বন্য উল্লাসজনক আচরণ একশ্রেণীর বাংলাদেশী করেছিল ভারতের বিরুদ্ধে ভারতের হারের জন্য সেই একই আচরণ কি আমরা সভ্য ভারতীয় বিশেষ ক'রে পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালী করলাম না? এটা কি সেই টিট ফর ট্যাট থিয়োরি? এই থিয়োরি কি দেশের সবার জন্য ও সবজায়গায় প্রয়োগ করার জন্য প্রযোজ্য? একশ্রেণীর বাংলাদেশীর এই অসভ্য আচরণের জন্য যেমন সমস্ত বাংলাদেশী কলঙ্কিত হ'লো ঠিক তেমনি কি ভারতীয় যারা এইধরণের অশ্লীল ভাষায় তৈরী ভিডিও তৈরীর মাধ্যমে ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশীদের উদ্দেশ্যে যে বাক্যবাণ চালাচ্ছে তা'তে কি একইরকম ভাবে সমস্ত ভারতীয় কলঙ্কিত হ'লো না? আমার জিজ্ঞাস্য, ভারত সরকার কি দায়িত্ব দিয়েছিল ভিডিও তৈরী ক'রে হাতের অশ্লীল ভঙ্গি ক'রে ইঙ্গিতে একজন বাংলাদেশী নারীকে এরকম 'র' ভাষায় এইসব অশ্লীল, অকথ্য, কুৎসিত ভাষায় কথা বলার? দেয়নি। তাই না? যে নোংরা আচরণ একশ্রেণীর বাংলাদেশী করেছে তার উত্তরে আপনি ও আপনারা তার দ্বিগুণ করলেন। তাহ'লে আর জ্ঞান দেওয়ার, মূল্যবোধ শেখাবার, দোষ ধরার নৈতিক দায়িত্ব আর থাকে কি আপনার ও আপনাদের? ভদ্রভাষায় ভদ্রভাবে কঠোর কঠিন বলিষ্ঠ প্রতিবাদ কি করা যেত না?


ভিডিওতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত 'বারবার হোগা মারা', বারবার শুয়োরের বাচ্চা বলা, বাপের মায়ের অসুস্থ দেহ কাঁধে তুলে নিয়ে উল্লাস কর', ইদ উদযাপন কর' এরকম ভাষা দিয়ে একজন নারীকে কথা বলার জন্য ভারত সরকার আপনাকে দায়িত্ব দিয়েছিল? আপনি ভারত সরকারের মুখপাত্র নাকি? আপনি আপনার বাড়ির সামনে 'কুকুর ও মুসলমান প্রবেশ নিষেধ' এইরকম বা কি সাইনবোর্ড টাঙ্গাবেন বলেছেন তা' সেটা আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। আর সেটা কতটা ন্যায় ও যুক্তিসঙ্গত তা রাজ্য সরকার ও ভারত সরকারের বিষয়। সেই স্বাধীনতা আপনার হয়তো আছে এবং কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের হয়তো বা সেই স্বাধীনতায় কঠোর হস্তক্ষেপ করার কোনও ক্ষমতা আছে; তা আমি জানি না। আপনি বাংলাদেশী কোনও মহিলাকে উদ্দেশ্য ক'রে তাদের এই জঘন্য উল্লাসের কি পরিণাম হ'তে পারে ও কি দশা হবে সে সম্পর্কে কল্পনা করার ক্ষমতা ওদের নেই বললেন, এবং বললেন, 'কল্পনা করার জন্য তোদের আই কিউ নেই, বোধবুদ্ধি নেই।' বারবার অসংখ্যবার হাতের কদর্য ইঙ্গিত ক'রে ক'রে ঐ নারীকে বললেন, মাদ্রাসার হুজুররা মাদ্রাসাতে তোদের হোগা মেরে মেরে তোদের মস্তিষ্ক একেবারে নষ্ট ক'রে ফেলেছে। শুধু জান্নাত, বাহাত্তর হুর আর মাদ্রাসার হুজুরদের সঙ্গে হোগা মারামারি ছাড়া আর কিছু চিন্তাশক্তি, কল্পনাশক্তি তোদের নেই । এই 'হোগা মারামারি'-র কথা শুরু থেকে কতবার বলেছেন আপনার জানা আছে? গুণে দেখেছেন? একবার ভিডিওতে গুণে দেখে নেবেন। আর এই ধরণের ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে আপনার এহেন ভাষা প্রয়োগ ও আচরণ সম্পর্কে ও আচরণের পরিণতি আপনার ও আপনার জন্য অন্য নিরপরাধ ভারতবাসীর কি হ'তে পারে সে সম্পর্কে চিন্তাশক্তি, কল্পনা শক্তি ও আই কিউ আপনার আছে? ওদের নেই বুঝলাম তা আপনার ছিল এই কথাগুলি বলার সময়?


কুচবিহার রাসমেলায় বা ভারতে বাংলাদেশী প্রোডাক্ট বয়কট হবে বলেছেন। যদি ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত তাই হয় আর তা যদি দেশের স্বার্থে হয় তাহ'লে তা হবে। আর সেই সিদ্ধান্ত তো আপনি নেবেন না, নিতে হবে ভারত সরকারকে। তা আপনাকে এসব কথা আগাম বলার কোনও দায়িত্ব সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে? দার্জিলিংয়ে বা ভারতের যে কোনও প্রান্তে বাংলাদেশীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হবে কি হবে না সেটা সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত। সেটা ভারতের অভ্যন্তরে কিংবা বাইরে মানবে কি অস্বীকার করবে সেটা কঠোর হাতে মোকাবিলা করবে কেন্দ্র। আপনি কোনও ভারতীয় বিদেশীদের ঢুকতে দেওয়ার বা না দেওয়ার কে? এটা সরকারী অনুমতি ও বিধিনিষেদের ব্যাপার। আপনি আমি কে? আর চোরা পথে যখন বাংলাদেশীরা প্রবেশ করে তখন কিভাবে, কাদের হাত ধ'রে চোরা পথে প্রবেশ করে তারা ভারতে? ভারতীয় সীমান্তে ভারতীয়দের হাত ধ'রে নাকি অন্য বিদেশী নাগরিকদের হাত ধ'রে? এতদিন ধ'রে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের আপনি ভারতে প্রবেশ করা বন্ধ করতে পেরেছেন নাকি আপনার কোনও ক্ষমতা আছে? তাহ'লে আপনি বলেন কি ক'রে যে, কোনও ভারতীয় প্রবেশ করতে দেবে না বাংলাদেশীদের? এর পরেও যদি ঢোকে আপনি কি করবেন? ভালোমন্দ বোঝার কথা বলেছেন ঐ বাংলাদেশী নারীকে আপনি। অথচ আপনি বললেন, 'সবে হোগা মারা শুরু হয়েছে, ভবিষ্যতে আরো হোগা মারবেন বলেছেন, বলেছেন পরবর্তী প্রজন্মকে হোগা মারবেন এবং কিভাবে হোগা মারবেন, কোথা দিয়ে হোগা মারা হবে সেটা সময়ে টের পাবে বলেছেন। তা এসব ভাষা প্রয়োগ আপনার ক্ষেত্রে ভালোমন্দ বোঝার মধ্যে পরে কি? কথায় আছে আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শেখায়।
আপনি ভারতের সঙ্গে শত্রুতা করার পরিণাম কি হয় তা' যুগ যুগ ধ'রে মনে রাখাতে হবে বলেছেন ঐ নারীকে ও ঐ নারীর মাধ্যমে বাংলাদেশীদের। অর্থাৎ যে শত্রুতার বীজ স্বাধীনতার সময়ে ভারত ভাগের ফলে ভুগতে হচ্ছে ভারত, পাকিস্তান আর ১৯৭১ সালে জন্ম হওয়া তৃতীয় টুকরো বাংলাদেশকে আজ ৭৬ বছর ধ'রে সেই বিষ আরও বিষাক্ত ভয়ংকর হ'য়ে ছড়িয়ে পড়ছে ও ছড়িয়ে দিতে চাইছেন প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে আপনাদের মতো তিন দেশের একশ্রেণীর উগ্র নাগরিকেরা পরস্পরের হাত ধ'রে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পুরোনো সেই ভারতবর্ষকে এক করার পরিবর্তে আরও টুকরো টুকরো ক'রে বিদেশীদের হাতে পুনরায় দেশকে তুলে দেওয়ার জন্য উদারতার ভংগীতে তীব্র দেশপ্রেমের দামামা বাজিয়ে চলেছেন।


যদি ভারত সরকার আপনাকে ও আপনাদের মতো নাগরিককে এই অধিকার দিয়ে থাকে তাহ'লে হয়ে যাক গালাগালির পাল্টা উৎসব, পাল্টা সংস্কৃতি।


আর যদি তা না দিয়ে থাকে তবে আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে ও একজন সৎসঙ্গী হিসেবে দেশের সর্ব্বাঙ্গীন স্বার্থে সমস্ত নাগরিকের নিরাপত্তার স্বার্থে আমার আবেদন, দুই দেশের সমস্ত সচেতন নাগরিক সমাজ আরও ভয়ংকর খারাপ অবস্থা আসার আগেই আগামী দিনের কথা ভেবে গর্জে উঠুক প্রবল্ভাবে এই দেশপ্রেমের অছিলায় বা মূর্খামিতে তা দিয়ে দিয়ে শত্রুতার ডিমকে ফুটতে দেওয়ার বিরুদ্ধে এবং দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে আবেদন রাখুক তাঁরা আর দেরী না ক'রে বলিষ্ঠ কঠোর হাতে দেশের স্বার্থে সঠিক ন্যায্য ব্যবস্থা নিক তা' সে যতই কঠোর হ'ক।


আমরা সচেতন দেশবাসী কি ভেবে দেখবো না এ আমরা কোন সর্বনাশের দিকে হেঁটে চলেছি? কোন ভয়ংকর ভবিষ্যৎ কে আহ্বান করছি?
প্রকাশ বিশ্বাস।
( ২৬শে নভেম্বর'২০২৩)
https://www.youtube.com/watch?v=xCsrBekFh94

No comments:

Post a Comment