বিষয়টা পড়তে ভালো লাগলো। কিন্তু ভাবলাম বাস্তব কি বলে? বাস্তব কি তাই-ই বলে বা সমর্থন করে? লেখকের তাঁর লেখার স্বপক্ষে নেওয়া চ্যালেঞ্জ কি বাস্তবে সফল হবে? এমন সমস্ত প্রশ্ন মনকে ভাবিয়ে তুললো। তাই মনকে ভাবনার সাগরে ভাসিয়ে দিলাম, করলাম রোমন্থন। অমৃত বা গরল যা উঠে এলো তাই শেয়ার করছি এবার। গ্রহণ বর্জন আপনাদের ব্যক্তিগত।
যাই হ'ক আবার বলছি লেখাটা ভালো লাগলো। কথাটা ভেবে দেখার মতো।
কিন্তু প্রতিদিন বাজারে, রাস্তার ওপরে প্রকাশ্যে যে জ্যান্ত মাছ, মুরগী, পাঁঠা, গরু কাটা হয় সেগুলি জ্যান্ত থেকে একেবারে ছাল চামড়া উপড়ে ফেলে দিয়ে টুকরো টূকরো ক'রে প্যাকেটে ভরে তবেই তো নিয়ে আসে মানুষ একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেই! তাই তো? খাঁচার ভিতর গাদা গাদা ক'রে রাখা মুরগীর ভিতর থেকে একটাকে টেনে বের ক'রে নিয়ে আসে। আর একটানে বের করার সময় খাঁচার তারের গায়ে লেগে গায়ের ছাল চামড়া উঠে আসে মুরগীর তারপর তা কাঁটা হয় প্রকাশ্যে তাও তো দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই দেখে মানুষ। সাইকেলের ক্যারিয়ারের দু'পাশে ঝুলিয়ে একসাথে অনেক মুরগীতে বেঁধে যখন নিয়ে যায় বা আসে, কখনও কখনও ঝুলে থাকা মুরগীর মাথা সাইকেলের স্পোকের মধ্যে পেঁচিয়ে গিয়ে মারা যাওয়া এইসমস্ত যন্ত্রণাদায়ক দৃশ্য তো পথচলতি মানুষ কিংবা মাংসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ দেখতে পায় প্রতিদিন প্রতিনিয়ত আর তারপরেও মাংস কিনে নিয়ে যায় দোকান থেকে হাসিমুখে। জ্যান্ত মাছকে খচাখচ পাখনা কেটে জ্যান্ত অবস্থায় গায়ের আঁশ ছাড়িয়ে নিয়ে তারপর গলা কেটে টুকরো টুকরো ক'রে প্যাকেটে ভরে নিয়ে আসে বাজার থেকে মানুষ সামনে দাঁড়িয়ে থেকেই প্রথম থেকে শেষ অব্দি দেখতে দেখতে। পাঁঠাগুলি কেটে ছাল চামড়া ছাড়িয়ে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখে প্রকাশ্য দিবালোকে আর সেখান থেকে লাইন ধ'রে মানুষ দাঁড়িয়ে থেকেই হাত পা শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে টুকরো টুকরো ক'রে নিয়ে যায় মানুষ বিন্দাস মনের আনন্দে সেই দৃশ্য উপভোগ করতে করতে ছুটির দিনে দুপুরে ভোজের কথা ভেবেই। প্রকাশ্যে রাস্তার ওপরে এবং পার্বনের সময় বিরাট বড় বড় পশুগুলোকে সামনে পিছনে পা বেঁধে নালী কেটে ফেলে রাখে আর রক্তের নদী ব'য়ে যায় তারপর মহানন্দে দোকানী কিংবা পার্বণের সময় সেই বিরাট পশুর বিরাট মাথা প্রকাশ্যে পথচলতি মানুষের সামনে কেটে ছাল ছাড়িয়ে যখন টুকরো টুকরো ক'রে কাটে আর তা দেখে বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই তখন আনন্দ উপভোগ করে। এইভাবে বছরের পর বছর, বছরের পর বছর চলে আসছে মনুষ্য সমাজে। কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে কি যারা সেইসব দৃশ্য দেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে তাদের মধ্যে? কেউ কোন আজ পর্যন্ত দাবী তুলেছে কি প্রকাশ্যে কোন রকম জীব হত্যা বা দৃষ্টিকটুভাবে সেই নৃশংসতার বিজ্ঞাপন বন্ধ হ'ক বা প্রকাশ্য স্থান থেকে সরিয়ে ফেলা হ'ক? হয়নি।
আর, এছাড়া ইউ টিউবে এখন বাচ্চা বুড়ো সবাই দেখতে পায় কতরকম নৃশংস উপায়ে জীব হত্যা করা হয় উদোর পূরণের জন্য। যা বাচ্চারা আগে দেখতে পেত না সেই নির্ম্মম দৃশ্য তারা তাদের শিশু বয়সেই দেখতে পায় আর তাদের সুকুমার অর্থাৎ অতিশয় কোমল মনের উপর কি প্রভাব পড়ে ও তার পরিণতি কি তা সহজেই অনুমেয়।
আবার যখন মানুষ টোপের সাহায্যে মাছকে বোকা বানিয়ে পুকুরে নদীতে বড়শিতে গেঁথে নেয় তখন ঐ মাছের বড়শিতে গাঁথা অবস্থায় যন্ত্রণা মহানন্দে উপভোগ করে মানুষ। এমনকি সেই মাছটিকে বড়শি থেকে আলাদা করার সময় এক টানে তার ঠোঁট টেনে ছিঁড়ে নেয় এবং জালের সাহায্যে ধরা মাছগুলোকে রেখে দেয় জলহীন পাত্রে বা ব্যাগে। তখন মানুষের বোধের ঘরে কি কোনও ঘা মারে ঐ যন্ত্রণাদায়ক দৃশ্য? আনন্দে মাতোয়ারা হ'য়ে থাকে বিশ্ববিজয়ের মতো। তাই সবটাই অরণ্যে রোদন।
তবে হ্যাঁ এটাও সত্য এমন অনেক মানুষ যারা মাছ মাংস খায় কিন্তু ঐ হত্যা বা টুকরো টুকরো ক'রে পিস পিস ক'রে কাটা বা জীবের শরীরের অংশকে থেঁতলে কিমা বানানো দেখতে পারে না।
এইসমস্ত গভীর অনুভূতির ব্যাপার, বোধের ব্যাপার। যেমনটা ঠাকুরের হয়েছিল নৌকোর ওপর জেলেদের নদী থেকে ধরা জালের মধ্যে ও নৌকোর মধ্যে ছটফট করতে থাকা মাছগুলোকে দেখে এবং নদীতে মাছগুলোকে ছেড়ে দেবার জন্য জেলেদের পায়ে ধ'রে কাঁদার ব্যাপারটা। আর তাই দেখে জেলেরা বলেছিল, দু'পয়সা দিলে সব মাছ নদীতে ছেড়ে দেবে। আর তাই ঠাকুর ছুটে গিয়েছিলে মায়ের কাছে আর কেঁদে পড়েছিল দু'পয়সা দেবার জন্য। আর সেই পয়সা এনে জেলেদের দিলে জেলেরা যখন মাছগুলোকে নদীতে ছেড়ে দিয়েছিল সেই ছাড়া মাছগুলোকে জলের মধ্যে কিলবিল করতে করতে চলে যাওয়া দেখে বালক অনুকূল আনন্দে নেচে উঠেছিল, দু'চোখ ভ'রে গিয়েছিল আনন্দাশ্রুতে। এই হ'লো একাত্মবোধের নমুনা।
তাই, এই বোধ শুধু ঐ দর্শন তত্ত্ব দিয়ে সম্ভব নয় জাগ্রত করার। সৃষ্টির কর্তার ওপর সারেন্ডার না হ'লে এই বোধ জাগ্রত হয় না। আর সারেন্ডার মানে সারেন্ডার। যা হয়েছিল হনুমানের, প্রহ্লাদের ইত্যাদির। বাকী সব বকোয়াস।
( লেখা ১লা নভেম্বর'২০২৩)
No comments:
Post a Comment