আপনার উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা আমাকেও ভাবিয়ে তুলেছে কিছুদিন ধ'রে। আগে আমি খেলা দেখতাম। কিন্তু এখন আর খেলা দেখায় তেমন আনন্দ পাই না, তাই দেখি না। যে কোনও খেলায় মনোরঞ্জন এখন মূল ব্যাপার নয়। হারজিৎ খেলার স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। যে কোনও একজন হারবে বা জিতবে সেই দিনের পারফরমেন্সের ওপর দাঁড়িয়ে। কিন্তু সেটা এখন গৌণ হ'য়ে গেছে। মূল ব্যাপার মনোরঞ্জন এখন খেলার হারজিৎ কে কেন্দ্র ক'রে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গেছে রাজনৈতিক উগ্রতায়, ধর্মীয় উন্মাদনায়, পারস্পরিক হিংসা ও ঘৃণায়। অথচ এই নিয়ে প্রতিবেশী দুই দেশের সমর্হকদের মধ্যে সাম্প্রতিক ঘটে চলা ঘটনায় উভয় দেশেই দেশজুড়ে কোনও হেলদোল নেই। আপনি ঠিকই বলেছেন, খেলা সবাই দেখে না। আমিও বলি, অথচ উগ্রতার বিষে সবাইকে জ্বলতে হবে। কেন?
তাই আপনার এই আবেদন সময়োচিত এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্য শুধু নয় তা' নিয়ে পারস্পরিক গম্ভীর সিরিয়াস আলোচনা হওয়া জরুরী। আপনার আবেদনকে সম্পূর্ণ সমর্থন ও শ্রদ্ধা জানিয়ে আপনাকে খোলা চিঠি লিখলাম।
কোনও লাভ নেই ব'লে।
সুরকার এ, আর, রেহমান কোথায় কোন বইয়ে নজরুলের গানের সুরে বিকৃতি ঘটিয়ে গানের ওপর নাকি বলাৎকার করেছে তা' নিয়ে নেটিজেনরা সুরের বিশুদ্ধতা নষ্টের প্রশ্নে চতুর্দিকে সরোষে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিল এবং নজরুলের প্রতি তাদের কাগুজে ভালোবাসায় নীল মূত্রপাত ঘটিয়েছিল ভয়ংকর তীব্র প্রতিবাদে নেট দুনিয়ায় কিন্তু দুই দেশের জনগণের মধ্যে সামান্য এক খেলাকে কেন্দ্র ক'রে যখন ক্রীড়াপ্রেমী সীমাহীন উচ্ছৃংখলা ও বিশৃংখলার যে উগ্র হিংস্রতার নির্দশন রাখতে বদ্ধপরিকর হ'য়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে একে অন্যের ওপর নেটদুনিয়ায় ফলে দুই দেশের সুসম্পর্ক যে তলানিতে গিয়ে ঠেকছে ও তা দিয়ে দিয়ে ক্রমশঃ যে শত্রুতার ডিম ফুটিয়ে চলেছে অদূর ভবিষ্যতে কোনও শয়তানী শক্তিকে জন্ম দেওয়ার জন্য ও ধ্বংসক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য তখন সেইসব তথাকথিত সচেতন নেটিজেনরা নীরব!!!!!!
কেন? কেন?? কেন???
কেন? কেন?? কেন???
দুই দেশের সমস্ত দিকের সমস্ত বিষয়ের মাথা যদি সুপরামর্শ, গঠনমূলক পরামর্শ দিতে অসমর্থ, অক্ষম হয় তবে অন্তত তারা দাবী তুলুক, মনোরঞ্জনের জন্য আয়োজিত সামান্য এক খেলাকে কেন্দ্র ক'রে যদি দুই দেশের জনগণের মধ্যে হিংসা, ঘৃণার বীজ বপন হয় তবে দু'দেশের মধ্যে খেলা বন্ধ হ'ক এবং দেশের অভ্যন্তরে কঠোর হাতে নির্মূল করা হ'ক খেলাকে কেন্দ্র ক'রে তৈরী করা হিংস্রতা, ঘৃণার বাতাবরণের উৎস।।
প্রশ্নঃ নেট দুনিয়ায় বালখিল্য বাহাদুরির ঝড় তোলা নেটিজেনদের প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগলে কি নিজের ঘরে আগুন লাগবে না ও ঘরের প্রিয়জনেরা পুড়ে মরবে না? মনুষ্যত্বের মূল বুনিয়াদ কি ধ্বংস হ'য়ে গেছে, নষ্ট হ'য়ে গেছে?
কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী নিশ্চয় এর পেছনে রয়েছে"---আপনার একথাটা যেমন সত্যি তার থেকেও বড় সত্যি দুই দেশের মেরুদন্ডহীন তথাকথিত বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উদাসীনতা ও 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' গোছের মানসিকতা।
দেশের উচ্চবিত্ত ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী নাগরিক আজ চুপ কেন? দেশের ঘুমিয়ে থাকা, লেখাপড়াজানাওয়ালা অশিক্ষিত, সহজ, সরল, মূর্খ ও আবেগ সম্পন্ন সীমাহীন ভাঙাচোরা জনগণ কি আগামী দুই দেশের সুসম্পর্ক নষ্টের জন্য দায়ী নয়? দেশের লেখাপড়া জানাওয়ালা ইয়ং জেনারেশন যতদিন না শিক্ষিত ও সচেতন হ'য়ে উঠবে এবং সহজ, সরল, আবেগ তাড়িত মূর্খ ভাঙাচোরা জনগণ অজ্ঞানতার ঘুম থেকে নিজেদেরকে জাগিয়ে তুলবে, যতদিন না মনোরঞ্জনের জন্য আয়োজিত খেলাকে কেন্দ্র ক'রে অপরিণত বালখিল্য মানসিকতায় ধ্বংসের আগুন নিয়ে খেলা বন্ধ হবে ততদিন আগত শেষের সেদিনের নিশ্চিত ভয়ঙ্করের হাত থেকে রক্ষা পাবে না দুই দেশের আজকের নালায়েক নাগরিক।
এর জন্য জ্ঞান-বিজ্ঞান, ব্যবসা-বাণিজ্য, গণমাধ্যম, ধর্ম-সম্প্রদায় সমস্ত দিকের দেশের মাথাদের যা করার দরকার ছিল তা যখন তারা করতে অপারগ, অনিচ্ছুক বরং তারা যখন নিরোর মতো আরাম কেদারায় শুয়ে আরামে হারাম বেহালার সুরে গভীর নিদ্রায় ব্যস্ত শয়তানদের বিষাক্ত নিঃশ্বাস আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ ক'রে দিতে এবং জনগণ যখন ঠিকই ক'রে নিয়েছে একশ্রেণীর এই আগুন নিয়ে খেলার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদে সরব হবে না তখন ধ্বংস অনিবার্য। তবে তাই-ই হ'ক।
ধন্যবাদান্তে,
প্রকাশ বিশ্বাস।
হামিম ফারুক
November 25' 2023
ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়দেশেরই একটি উগ্রশ্রেণী দুইদেশকে নিয়ে নানা বিদ্বেষমূলক, অপমানকর মন্তব্য করে যাচ্ছেন। এরা মূলত তরুণ বয়সেরই বলে অনুমিত হয়। কিন্তু তাদেরসাথে কিছু বয়স্ক ও তথাকথিত শিক্ষিত মানুষও জুটেছে। সামান্য একটি খেলাকে কেন্দ্র করে যে চূড়ান্ত পাগলামো ও উগ্রতা দুদেশে তৈরি হয়েছে তাতে ইন্ধন যোগাচ্ছে আবার একশ্রেণির রাজনৈতিক নেতা বা উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠী।
এইসব অপমানকর ট্রলে নিজেকে যুক্ত করবেন না, অপরকে ছোটো করতে গিয়ে নিজেকে আরও নিচে নামাবেন না। আমি এই ধরণের পোস্ট বা ভিডিও দেখলে সেগুলো ডিলিট করছি অথবা এড়িয়ে যাচ্ছি।
ভারত এবং বাংলাদেশ দুদেশই একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে দুদেশেরই পারস্পরিক নির্ভরতা রয়েছে, সেটাকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু খেলাকে কেন্দ্র করে দুটি দেশের জনগণের মন বিষিয়ে তুলবেন না কেউ এবং বিষিয়ে তোলার সুযোগও দেবেন না। সবাই অাপনাদের এই ক্রিকেট খেলা দেখে না।
সবকিছু দেখে এখন মনে হচ্ছে কোনো বিশেষ গোষ্ঠী নিশ্চয় দুদেশেই একটি পরিস্থিতি তৈরি করার সুযোগ খুঁজছে। আর আমরাও তাদের ইন্ধনে ছাগলের ৩ নম্বর বাচ্চার মতো লাফালাফি করছি।
কাজেই, সাধু সাবধান!
No comments:
Post a Comment