Powered By Blogger

Monday, November 25, 2024

উপলব্ধিঃ সৎসঙ্গ ঠাকুরবাড়ি, চুঁচুড়া।

আজ সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছিলাম চুঁচুড়া সৎসঙ্গ ঠাকুরবাড়ির উদ্দেশ্যে। সঙ্গে ছিল স্ত্রী, পুত্র আর কয়েকজন গুরুভাই ও গুরুবোন। গিয়েছিলাম হুগলী জেলার ও চুঁচুড়া সৎসঙ্গ ঠাকুরবাড়ির দায়িত্বে আসীন শ্রদ্ধেয় শ্রী নিলয় মজুমদারদার আহ্বানে। পূজনীয় শ্রীশ্রীঅবিনদাদার নির্দেশে শ্রদ্ধেয় শ্রী নিলয় মজুমদারদা কিছু বিশেষ আলোচনা করার জন্য আহবান জানিয়েছিলেন।

শ্রীনীলয়দার নির্দেশ মতো আমরা হুগলী স্টেশনে নেবে টোটো স্ট্যান্ড থেকে টোটো নিয়ে মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। হুগলী থেকে মন্দির কাছে হওয়ায় শ্রদ্ধেয় নীলয়দা আমাদের হুগলীতে নাবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেইমতো আমরা যখন মন্দিরে এসে পৌঁছোয় তখন সকাল ১০টা।

মন্দিরে পৌঁছে নীলয়দাদার সঙ্গে দেখা ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুর, শ্রীশ্রীবড়মা, শ্রীশ্রীবড়দা ও শ্রীশ্রীআচার্যদেব প্রণাম ক'রে এসে বসলাম তাঁর ঘরে। তিনি আমাদের ঘরে বসতে বললেন। তারপর আলোচনার সুবিধার জন্য সবাই মিলে আমরা ঠাকুর মন্দিরে বিছানো বড় শতরঞ্জির ওপর বসলাম। তারপর শুরু হ'লো আলোচনা। আলোচ্য বিষয় নিয়ে হ'লো দীর্ঘ আলোচনা। মাঝখানে ঠাকুরের প্রসাদ গ্রহণ করলাম। তারপর কথা বলতে বলতে এলো চা বিস্কুট। শ্রদ্ধেয় শ্রীনীলয়দার মিষ্টি কথা ও মনোমুগ্ধকর আলোচনায় মনপ্রাণ জুড়িয়ে গেল সবার। ভাবছিলাম মানুষ এতো মিষ্টি হ'তে পারে!?

ঠাকুরের দরবারে ঠাকুরের সোনার সৎসঙ্গীরা এমনই হয়!!

যাই হ'ক তারপর দীর্ঘ আলোচনা শেষে তিনি আমাদের সমস্ত মন্দির, রাস্তার ওপর সুদৃশ্য গেট, সদ্য কেনা ডাক্তারবাবুর বাড়ি, আনন্দবাজার, তার পাশে নির্মাণ কাজ চলতে থাকা বিরাট এড়িয়া জুড়ে শ্রীশ্রীঅবিনদাদার স্বপ্ন সুইমিং পুল ইত্যাদি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন। কোনও ক্লান্তি নেই। নেই কোনও বিরক্তি। আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখছিলাম এই বিশাল কর্মযজ্ঞ কত বাধা বিঘ্নকে অতিক্রম ক'রে হয়েছে ও হ'য়ে চলেছে! বাধাবিঘ্নের সেই ঝড় নিলয়দাকেও ঝাপ্টা মেরেছে প্রচন্ড।

দেখতে দেখতে অবাক হ'য়ে ভাবছিলাম কি সেই রহস্য যার অদৃশ্য অঙ্গুলিহেলনে দিকে দিকে ভারতবর্ষ তথা বিশ্বজুড়ে শ'য়ে শ'য়ে বিশাল বিশাল মন্দির গড়ে উঠছে!? এই নির্মাণকাজের পিছনে কার অবদান? শ্রদ্ধেয় নীলয়দাদার মত মিষ্টি মধুর ইষ্টপ্রাণ দাদাদের? নাকি আমার দয়াল ঠাকুরের অপার দয়ায় এই বিশাল মন্দির গড়ে উঠেছে, উঠছে?

শ্রদ্ধেয় নীলয়দা বললেন, এই সমস্ত কিছু দয়াল প্রভুর ইচ্ছায় গড়ে উঠেছে। তিনি চাইলে স-ব হয়, না চাইলে কিছুই হয় না। মনে পড়ে গেল আমার দয়াল প্রভুর পূর্ব রূপ শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের কথা, তাঁর ইচ্ছা না হ'লে গাছের একটি পাতা পর্যন্ত নড়ে না। কেন জানি নিজের এলাকার কথা মনে ক'রে চোখের কোণাটা ভিজে গেল। রুমাল দিয়ে চোখটা আড়াল করলাম।

ইতিমধ্যে আমাদের টোটো এসে গেল। যে টোটোতে ক'রে এসেছিলাম সেই টোটোচালকেরা বলেছিল, দাদা আমাদের ফোন নাম্বারটা রেখে দিন আপনারা যখন ফিরবেন আমাদের ফোন ক'রে দেবেন আমরা চলে আসবো। সেইমতো শঙ্করদা তাদের ফোন ক'রে দিয়েছিল। যাবার সময় মনটা খারাপ হ'য়ে গেল। কয়েক ঘন্টার মেলামেশায় নিলয়দাকে ছেড়ে যেতে মন চাইছিলো না। এত স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অল্পসময়ের ব্যবধানে তিনি আমাদের তাঁর মিষ্টি মধুর ব্যবহারে আপন ক'রে নিয়েছিলেন যে তিনিও তাঁর ব্যস্ত সময়ের কথা ভুলে গিয়ে মন্দির ছেড়ে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে টোটোর সামনে এসে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন আর আমাদেরও তাঁকে ছেড়ে টোটোতে উঠতে ইচ্ছে করছিলো না।

কিন্তু একসময় তো বাস্তবকে মেনে নিতেই হয়। নীলয়দাকে বিদায় জানিয়ে আমরা টোটোতে উঠে বসলাম। টোটোর সামনে দাঁড়িয়ে তিনি আপনজনের মতো বিদায়ের হাত নাড়ালেন। আমি নেবে এসে তাঁর হাত দুটো জড়িয়ে ধরলাম। তারপর মাথায় বুকে ঠেকিয়ে বললাম আশীর্বাদ করুন আমরাও যেন ভদ্রকালীতে তাঁর দয়া পায়। বয়স হ'য়ে গেছে। জানি না থাকতে থাকতে তাঁর দয়া লাভ করবো কিনা। তিনি সস্নেহে মিষ্টি মধুর কন্ঠে বললেন, অমন বলবেন না। দয়ালের দরবারে বয়স কোনও ফ্যাক্টর নয়। ভাবগ্রাহী হ'য়ে প্রার্থনা করুন। সবাই মিলে প্রার্থনা করুন। স্বপ্ন পূরণ হবেই। তাছাড়া আপনি ছেলেকে সংস্কার দিয়েছেন, সে আছে, সে আপনার স্বপ্ন পূরণ করবেন, তারপর তার পরবর্তী জেনারেশন রয়েছে। আপনি দয়ালের চরণে ছেলেকে বসিয়েছেন, চিন্তা আবার কি? কি সুন্দর মিষ্টি ক'রে বললেন কথাগুলি। তারপর আগামী ৮ই জানুয়ারী'২২ বাৎসরিক উৎসবে আমন্ত্রণ জানালেন। তারপর আরও যারা আছে সবাইকে নিয়ে আবার আসার জন্য আন্তরিক ভাবে বললেন। আমি উনার ধ'রে থাকা হাত ছেড়ে দিয়ে টোটোতে গিয়ে বসলাম। তারপর টোটো এগিয়ে চললো, আমি পিছন ফিরে আবছা দৃষ্টিতে দেখলাম, তিনি তাকিয়ে আছেন আমাদের টোটোর দিকে। ক্ষণিকের মিলনের বিচ্ছিন্নতায় মনটা বিষন্ন ভারাক্রান্ত হ'য়ে উঠলো।

তারপর বাড়ি ফেরার পথে ট্রেনে একটা কথায় ভাবছিলাম, এই জীবনে সৎসঙ্গ জগতে কত মানুষ দেখেছি। দেখেছি মিষ্টি মানুষ! দীর্ঘ জীবনের চলার পথে দেখা মানুষের ভিড়ে দেখলাম আরও একজন মিষ্টি মধুর সুন্দর দয়ালের সোনার সৎসঙ্গী শ্রদ্ধেয় নীলয়দাকে। স্মৃতির মণিকোঠায় গেঁথে গেল নামটা।

( ২৬শে নভেম্বর'২০২২)

No comments:

Post a Comment