শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৃষ্ট সৎসঙ্গ- এর প্রধান আচার্যদেব পরম পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দাকে জিজ্ঞেস করা হ'লো,
শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী, "অন্যায়কে সহ্য ক’রতে চেষ্টা কর, প্রতিরোধ ক’রো না, শীঘ্রই পরম মঙ্গলের অধিকারী হবে” ---এ-কথার অর্থ কী ?
শ্রীশ্রীবড়দা বললেন, তোমার প্রতি কেউ অন্যায় করলে তা সহ্য কর। আমি তাই ক’রে থাকি, কিন্তু অপরের ক্ষেত্রে কেউ অন্যায় করলে তা প্রতিরোধ করতেই হবে । ‘সত্যানুসরণ’ কার জন্য ? যে পড়ছে তার জন্য । নিজের প্রতি অন্যায় সহ্য করা দুর্বলতার লক্ষণ নয় । এটা সবল হৃদয়ের লক্ষণ । কথায় বলে, ‘যে সয় সে রয়’ । কিন্তু একটা পিপীলিকা বা পশুপক্ষীর উপরও কেউ আক্রমণ ক’রলে সেখানে রুখে দাঁড়াতে হবে---তা’ না করাই দুর্বলতা, ভীরুতা । হিংসাকে হিংসা দ্বারা প্রতিরোধ কর । হিংসাকে হিংসা কর---হিংসাভাবকে দূর কর ।
শ্রীশ্রীঠাকুর দেহ ত্যাগ করার আগে ও পরে শ্রীশ্রীবড়দার উপর কত অন্যায় যে করা হয়েছে, কত হিংসা করা হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। আজকের যে সমস্ত বিশ্বজুড়ে সৎসঙ্গের সূর্য মাথার উপর জ্বলজ্বল ক'রে জ্বলছে আর তার রশ্মি ছড়িয়ে পড়েছে দিক থেকে দিগন্তে, আলোয় আলোকিত হ'য়ে উঠেছে স্বর্গ, মর্ত, পাতাল এই সৎসঙ্গকে বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন কে? ঠাকুরের দেহ ত্যাগের পর চরম অপমান, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অপবাদ, অশ্রদ্ধাকে দিনের পর দিন সহ্য ক'রে চোখের মণির মত কে রক্ষা করেছিলেন ঠাকুরের স্বপ্নের সৎসঙ্গকে!? এই দুঃখ, কষ্ট, জ্বালা, যন্ত্রণাকে বুকের গভীরে পাথর চাপা দিয়ে রেখেছিলেন সৎসঙ্গ জগতের সকলের আদরের, শ্রদ্ধার, ভালোবাসার মানুষ শ্রীশ্রীবড়দা, কাউকেই বুঝতে দেননি তিনি পাহাড় প্রমাণ এই কষ্ট, যন্ত্রণা, অপমান, অশ্রদ্ধা! নীরবে সহ্য করেছেন অন্যায়, অত্যাচার! আর প্রাণ দিয়ে, সমস্ত জীবন নিংড়ে দিয়ে সেদিন রক্ষা করেছিলেন ঠাকুরের বড় সাধের 'সৎসঙ্গ' কে! কাউকে কিছু বলেননি, কোনও উত্তর দেননি; শুধু মুখ বুঝে লক্ষ্যে অবিচল থেকে ঠাকুরের দেওয়া কাজ, দায়িত্ব পালন ক'রে গেছিলেন! বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার!!!!! আজ সব ইতিহাস। শুধু সেই ট্রাডিশান সমানে বয়ে চলেছে তাঁর আত্মজদের মধ্যে আর সমস্ত কুৎসিত সমালোচনা, নিন্দা, গালাগালি মাথায় নিয়ে সৎসঙ্গকে আগলে রেখেছেন দুই বলিষ্ঠ কঠিন হাতে পরম স্নেহে, ভালোবাসায় বর্তমান আচার্যদেব পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীদাদা, শ্রীশ্রীবাবাইদাদা ও শ্রীশ্রীঅবিনদাদা ও ঠাকুরবাড়ির অন্যান্য সদস্যরা!!!!!!!!
আর, পরমপূজ্যপাদ প্রধান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবড়দার উপলব্ধি হ'লো তিনি বললেন,
হনুমানের জীবনে আমরা কি দেখি ? ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার জন্য হনুমানের অসাধ্য কিছুই ছিল না । ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠা হচ্ছে কি না এটাই ছিল তার একমাত্র বিচারের বিষয়, অন্য কোন বিচার নয় । কিন্তু এখানে একটা কথা থেকে যায় । ইষ্টের প্রতি প্রকৃত ভালবাসা না থাকলে ‘ইষ্টস্বার্থ কি’ তা ঠিক বোঝা যায় না । তা’ ঠিক বোঝা না গেলে, ইষ্টের প্রতি প্রকৃত ভালবাসা না থাকলে নিজের প্রবৃত্তি-মাফিক ইষ্টপূজা চলতে থাকে । তখন শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীর বিকৃত ব্যাখ্যা হ’তে থাকে। (ইষ্টপ্রসঙ্গে)।
আর আমাদের তাই শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে অনুসরণ ক'রে চলা উচিৎ আর তাই শেখা ও করা উচিৎ। আমরা সৎসঙ্গিরা কি তাই করছি? প্রতিনিয়তই আমরা দেখতে পাচ্ছি ও শুনতে পাচ্ছি ফেসবুকে ও সৎসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীর বিকৃত ব্যাখ্যা।
( লেখা ৪ই নভেম্বর'২০২০)