বাংলাদেশের সরকারী চাকরীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ ইস্যুতে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছে। হতাহতের হাতছানিতে উত্তাল বাংলাদেশ। জনজীবন বিপর্যস্ত, স্তব্ধ। সুযোগ বুঝে শয়তান অকাল মৃত্যুর পর মৃত্যুর রূপ ধ'রে হানা দিয়েছে শিয়রে। কত মায়ের কোল খালি হয়েছে ও হতে চলেছে। আবু সাঈদ তাদের একজন।
বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র মৃত্যু নিয়ে কিছু আলোচনা তেমন চোখে পড়ছে না। বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন কিসের ওপর ভিত্তি ক'রে? সব আন্দোলনেই ছাত্রদের পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে ছাত্রজীবন উপেক্ষা ক'রে নিশ্চিত লেখাপড়ার পথ ছেড়ে অনিশ্চিতের পথে পা বাড়াতে হবে, পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে? রাজনৈতিক দলগুলি কি জন্য আছে? তারা কি করে? নির্বাচনের সময়ে এই রাজনৈতিক দলগুলি ক্ষমতা দখলের খেলায় যখন মেতে থাকে তখন কোথায় থাকে ছাত্র আন্দোলন? যে কোন পট পরিবর্তনে ছাত্রদের কেন ব্যবহার করা হয়? কোটা আন্দোলনে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অস্তিত্ব কোথায়? বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কেন সরকার বিরোধী লড়াই আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করে না? ছাত্রদের সাহায্যের কি দরকার? কেন তাঁরা পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে অনিশ্চিত ভয়ংকর পথের দিকে পা বাড়াবে? কি সেই মহান আত্মত্যাগ? যার জন্য ১৮বছর বয়সটাকে বারবার বলী হ'তে হবে? কেন? কেন?? কেন??? ছাত্রছাত্রীদের মা-বাবাদের মনে কি এই প্রশ্ন কোনওদিনই জাগবে না? নাকি জাগে, কিন্তু অসহায়? জাগা সত্ত্বেও কেন অসহায়? কি সেই অসহায়ত্বের কারণ?
ভারতেও কিছুদিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন, জে এন ইউর পরপর ছাত্র আন্দোলন আমরা দেখেছি। কি ছিল সেই আন্দোলন? কোথায় এখন সেইসব আন্দোলন? কেন সেই সব আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়েছিল? কি ছিল সেই আন্দোলনের পিছনের রহস্য? কোথায় গেলেন যাদবপুরের ও জে এন ইউর ছাত্র আন্দোলনের সাড়া জাগানো নক্ষত্র ছাত্ররা? কোথায় গেলেন সেই উদীয়মান নেতানেত্রীরা? এখন তারা কোথায়? টিভির চ্যানেলে চ্যানেলে ঝড় তোলা নীতিবাদী ছাত্রছাত্রীর দল এখন কি করছে? নোতুন কোনও আন্দোলনের রূপরেখা Blue print তৈরী করছে আগামীর সহজ সরলমতি ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করার জন্য? আন্দোলন কেন থেমে গেল? বালখিল্য ছাত্রবিপ্লব আন্দোলন যদি নাই হ'য়ে থাকে, আন্দোলনের পিছনে যদি সত্য থাকে তাহ'লে সত্যকে চাপা দেওয়ার ক্ষমতা কারও থাকে? কার আছে? ইতিহাস কি বলে? কার আছে সেই ক্ষমতা প্রকৃত আন্দোলন বা ছাত্র আন্দোলন ঠেকায়?
৭০ দশকের কথা মনে পড়ে? যারা এখনও সেই আগুন সময়ের আগুন খেকো ছাত্রছাত্রী নেতা-নেত্রীরা বেঁচে আছেন তাঁরা তাঁদের সেই সময়ের আন্দোলনের ইতিহাসের সারবত্তা তুলে ধরবেন বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে? সফল হয়েছিল সেই দিনের আন্দোলন? কেন হয়নি? কেন মুখ থুবড়ে পড়েছিল আন্দোলন? কেন লজ্জাজনক পরিণতি হয়েছিল সেই আন্দোলনের? আন্দোলনের জন্য হাজার হাজার তরুণ তরুণী ছাত্রছাত্রীর প্রাণ, মেধা, ভবিষ্যৎ নষ্টের দায় কার? বিরাট একটা যুবশক্তি, দেশের ও জাতির সম্পদ নষ্ট হ'লো এর জন্য দায়ী কে?
যারা বেঁচে আছেন সত্তর দশকের নেতারা আজ্ও, তা' আপনারা, বিপ্লবের রাস্তা ছেড়ে সেই শুয়োরের খোয়ার ব'লে একদিন যা চিহ্নিত করা হয়েছিল সেই শুয়োরের খোয়ারে নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ঢুকে পড়া সম্বন্ধে কিছু বলবেন? আজকের ছাত্র ছাত্রীরা সত্য জানবে না? বিখ্যাত উপন্যাস 'হাজার চুড়াশির মা'র লেখিকা ঔপন্যাসিক র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার বিজয়ী সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী রচিত একটি বাংলা উপন্যাস। এই উপন্যাসটি ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৭০-এর দশকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এই উপন্যাসটি রচিত হয়। এ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র হাজার চুরাশি কি মা তৈরি করা হয়েছিল।
আজ যদি মহাশ্বেতা দেবী বেঁচে থাকতেন তিনি কি বলতেন তা আর জানা গেল না। যারা আজও সেই সময়ের নেতারা বেঁচে আছেন, যারা বিদ্যা বুদ্ধি বেঁচে খান তাঁরা তো কিছু বলুন বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন নিয়ে। যারা বাম পন্থায় বিশ্বাসী কবি, সাহিত্যিক ইত্যাদি তাঁরা কিছু বলবেন ৭০ দশকের আন্দোলনে ছাত্রদের জড়িয়ে পড়ার ও তাদের মর্মান্তিক করুণ পরিণতির কারণ কি ছিল? হাজার হাজার ছাত্র, যুব যে মারা গিয়েছিল সেদিন তাদের মৃত্যুর জন্য আবার একটা গা গরম কবিতা লিখে তাদের উৎসর্গ করলেই তাদের প্রতি সম্মান জানানো হ'য়ে গেল? এই গরম কবিতা, উপন্যাস, গল্প, ছবি তো নোতুনদের আবারও বিপথে চালিত করার জন্য গরম করার প্রয়াস। ৭০ দশকের হঠকারী আন্দোলনে হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী ও যুবক যুবতীর অকালে যে জীবনটা ঝ'রে গেল তার দায় নেবেন না কেউ? কে নেবে?
এই যে বাংলাদেশে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক নিহত আবু সাঈদ মারা গেল এর জন্যে কে বা কারা দায়ী? এই যে আবু সাঈদ নিজের জীবনের কথা না ভেবে, পরিবারের, সংসারের কারও কথা না ভেবে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে গেল আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হ'য়ে আন্দোলনকে সম্মান জানাতে সাহস নয় দুঃসাহসকে মূলধন ক'রে সততার সঙ্গে মাথা উঁচু ক'রে পুলিশের বন্দুকের সামনে আর পুলিশও বুক চিতিয়ে গুলি ক'রে দিল আগু পিছু না ভেবেই। এর জন্যে কে বা কারা দায়ী? আবু সাঈদ ও পুলিশ দু'জনেই দু'জনের মহান ডিউটি পালন করেছে। তবুও পুলিশ কিছু একটা ভেবে রাবার বুলেট চালিয়েছিল। আর আন্দোলনকারী ছাত্র আবু সাঈদও কিছু একটা ভেবে পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল। হয়তো বা ভেবেছিল পুলিশ গুলি করবে না, কিংবা করলেও রাবার বুলেটে প্রাণ যাবে না। কিন্তু যা আমরা ভাবি তা সবসময় মেলে না, উল্টোটাও ঘটে।
আর, আমরা এখন কি দেখছি? এস ওয়াজেদ আলি-র সেই বিখ্যাত কথা, "সেই একই ট্রাডিশান সমানে ব'য়ে চলেছে।"
আমরা দেখতে পাচ্ছি আন্দোলনকে সমর্থন করা নেতানেত্রীরা সেজেগুজে টিভির সামনে বসে পড়ছে, কবি, সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীরা তাঁকে বীর, মহাবীর, শহীদ প্রভৃতি নানারকম উপাধিতে ভূষিত ক'রে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ভাষণ দিচ্ছে, ক্ষমতা দখলের অঙ্ক কষছে, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখছে আবু সাঈদকে শ্রদ্ধা সম্মান জানিয়ে।
আবু সাঈদ! তুমি সবার রোজগারের উপকরণ হ'য়ে গেলে দিন শেষে অবশেষে। কিন্তু তুমি জানতেও পারলে না এ জীবন উৎসর্গ কি সঠিক লড়াই-এর জন্য ছিল?
আর, আবু সাঈদ! তোমার আত্মা পরমপিতার চরণে স্থান পেয়ে শান্তি লাভ করুক ব'লে দায় সারবো আমরা।
এ সত্য, তিন সত্য, অপ্রিয় সত্য।
মনে পড়ে যায় চিনের তিয়েনয়ানমেন স্কোয়ারের ছাত্র আন্দোলনের কথা। হাজার হাজার ছাত্রকে নির্বিচারে গুলি ক'রে মেরে ফেলার ইতিহাস। দুনিয়ার কোনও বাপের বেটার ক্ষমতা হয়নি চিনের তিয়েনয়ানমেনের ছাত্র আন্দোলন কে গুড়িয়ে দেবার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার। সেই আন্দোলন কিসের আন্দোলন ছিল? সেই আন্দোলন কি সঠিক ছিল? ছাত্রদের সেই আন্দোলনের রাশ কি ছাত্রছাত্রীদের হাতে ছিল? সেই অসহায় অভাগা ছাত্রদের করুণ পরিণতির দায় কার বা কাদের ছিল?
ছাত্র আন্দোলনের উৎস কি, কে বা কারা? কোন আদর্শের ওপর দাঁড়িয়ে ছাত্ররা আন্দোলন সংগঠিত করে? ছাত্র আন্দোলনের রাশ কি শেষ পর্যন্ত ছাত্রদের হাতে থাকে? নাকি হাত বদল হ'তে হ'তে ডিরেইল্ড হ'য়ে ক্ষমতা দখল ও স্বার্থসিদ্ধির কূটকচালি আর হানাহানিতে পরিণত হ'য়ে আবু সাঈদের মত ভাবাবেগে ভেসে চলা আবেগ সর্বস্ব উদার মনোভাবাপন্ন সহজ সরল কূটবুদ্ধিহীন নিষ্পাপ ছাত্রদের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে থিতিয়ে যায়, সমাপ্ত হয়?
ছাত্রদের কি বোঝার সময় হয়নি? এটাই বোধহয় নিয়তির জাঁতাকল। এই যাঁতাকলে চাক্কি পিষিং এন্ড পুষিং, পুষিং এন্ড পিষিং করে করেই কেটে যাবে ছাত্র জীবন।
কথায় আছে, নিয়তিঃ কেন বাধ্যতে। অর্থাৎ ভাগ্যকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। অদৃষ্টে যদি কিছু ঘটার থাকে তাহলে কেউই খন্ডন করতে পারেন না।
সত্যিই কি তাই? অদৃষ্ট ব'লে কিছু কি আছে?
The greatest phenomenon, The greatest wonder of the world শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন, "নিয়তি মানে নিয়ে যায়।
"তোমার দর্শনের----জ্ঞানের পাল্লা যতটুকু অদৃষ্ট ঠিক তারই আগে; দেখতে পাচ্ছ না, জানতে পাচ্ছ না, তাই অদৃষ্ট। তোমার শয়তান অহংকারী আহাম্মক আমিটাকে বের ক'রে দাও; পরমপিতার ইচ্ছায় তুমি চল, অদৃষ্ট কিছুই করতে পারবে না। পরমপিতার ইচ্ছায় অদৃষ্ট।'
আবু সাঈদ তাঁর দর্শনের, জ্ঞানের সীমাবদ্ধ পাল্লা দিয়ে দেখতে পায়নি তাঁর একটু পড়ে কি ঘটতে যাচ্ছে। আর, বুক চিতিয়ে দাঁড়াবার একটু পড়েই কি ঘটবে তা দেখতে পাচ্ছিলো না, জানতে পাচ্ছিলো না বলেই সেটা তাঁর কাছে ছিল অদৃষ্ট। এ ছাড়া অদৃষ্ট আর কিছুই নয়। এই যে বন্দুকের গুলির কাছে বুক চিতিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া এই মানসিকতার মধ্যে লুকিয়ে ছিল অহংকারী আহাম্মক আমি। এই সহজ সরল বেকুবি শয়তান অহংকারী আহাম্মক আমিত্ব যদি জীবন থেকে ত্যাগ ক'রে দিয়ে পরমপিতা রসুলের ইচ্ছায় চলতো, অদৃষ্ট কিছুই করতে পারতো না। পরমপিতা রসুলের ইচ্ছায় একমাত্র অদৃষ্ট। পরমপিতা রসুল নির্ভর জীবন হ'লে পরমপিতা রসুল আবু সাঈদকে দু'হাত দিয়ে আগলে রেখে রক্ষা করতো। শয়তান নিয়তির রূপ ধ'রে নিয়ে যেতে পারতো না পরমপিতা রসুলের হাত ছিনিয়ে মৃত্যুর কাছে।
এ আমার ব্যক্তিগত অভিমত। গ্রহণ ও বর্জন ব্যক্তিগত। গ্রহণ করতেও পারে আবার বর্জনও করতে পারে পাঠক বন্ধুরা আমার।
যাই হ'ক, পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক নিহত আবু সাঈদকে আমার চোখের জল ছাড়া কোনও কিছু দেওয়ার বা বলার নেই। শুধু প্রার্থনা করবো আগামী দিনে আর কোনও ভবিষ্যৎ আবু সাইদের যেন অকাল মৃত্যু না হয়। কারণ সর্বশক্তিমান, সর্বদর্শী, সর্বজ্ঞ পরমপুরুষ, পরমপিতা, পুরুষোত্তম সৃষ্টিকর্তা, জীবন্ত ঈশ্বর পরমপিতা রসুল হজরত মহম্মদের নবরূপ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র অকাল মৃত্যু অনুমোদন করেননি। একটা শিশু জন্মাবার পর শৈশব, কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ় ও বার্ধক্য শেষে সে জীবন থেকে বিদায় নেবে, তার আগে নয়। এ বিধান ঈশ্বরের বিধান, জীবন্ত ঈশ্বরের বিধান। আর, এই বিধানকে বিশ্বজুড়ে হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান, জৈন ইত্যাদি ইত্যাদি সম্প্রদায়, জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বজুড়ে ৮০০ কোটি মানুষের সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। আর, এই কাজ করতে হবে সৎসঙ্গীদের। সৎসঙ্গীদের আজ গভীরভাবে
সিরিয়াসলি ভাবার সময় এসেছে, সময় এসেছে ঠাকুরের ব'লে যাওয়া কথা সম্বন্ধে সচেতন হওয়ার, জানার ও বোঝার। আর সচেতনার সঙ্গে তা' জেনে ও বুঝে তা'কে চরিত্রগত করার। আর, সময় এসেছে তা' ছড়িয়ে দেওয়ার ঘরে ও বাইরে সর্বত্র।
আজ আমি আমার সৎসঙ্গী ছাত্রছাত্রী ও যুবকযুবতী গুরুভাইবোনেদের কাছে একটা প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি, এই যে ছাত্র আন্দোলন তা' আমার দেশের হ'ক আর দেশের বাইরেই হ'ক, এই আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের সৎসঙ্গীদের ও সৎসঙ্গ আন্দোলনের কোনও যোগসূত্র আছে কিনা আর থাকলে তা' কোথায়?
No comments:
Post a Comment