Powered By Blogger

Sunday, July 14, 2024

প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীআচার্যদেবের জন্মদিন ও বিরোধীরা।

কয়েকদিন আগে (৭ই জুন'২৪) শ্রীশ্রীআচার্যদেবের ৫৭তম জন্মদিন গেল। আর, ১৯শে জুন ছিল তাঁর জন্মতিথি। ৭ই জুন শ্রীশ্রীআচার্যদেবের জন্মদিন পালনের মুহূর্তগুলি ছিল আনন্দময়, আলোময়, রূপময়, রসময় ও মধুময়। লক্ষ লক্ষ মানুষের জোয়ারে ভেসে গেছিল দেওঘর ঠাকুরবাড়ি। জুন মাসের ঐ প্রচন্ড গরম মানুষদের দেওঘরে আসার পথ আটকাতে পারেনি। আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার প্রতি স্বতস্ফুর্ত তীব্র ভালোবাসা কোন পর্যায়ে পৌছে যেতে পারে তা' আজকের সময়ে অকল্পনীয়। এখানে মানুষের ঢল নাবে প্রাণের টানে। স্বতস্ফুর্ত ভালোবাসায় ছুটে ছুটে আসে দেওঘরে নিজের নিজের তাগিদে একা একা, পরিবার সহ বা ছোটো-ছোটো দল বেঁধে ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। আসে একটি মানুষের টানে। তিনি হলেন সৎসঙ্গের বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেব। কেন আসে লক্ষ লক্ষ মানুষ? এখন তো শ্রীশ্রীঠাকুর নেই। তবে দিন দিন কেন, কার টানে, কিসের জন্য মানুষের আগমন হাজার ছাড়িয়ে লক্ষ, লক্ষ ছাড়িয়ে কোটিতে পৌঁছে যাচ্ছে?
আর, দেওঘরের বুকে আচার্যদেবের জন্মদিনে এই জনপ্লাবন দেখে বিরোধীরা সোচ্চার। দেওঘর ঠাকুরবাড়ি থেকে বারণ করা সত্বেও এই বিশাল স্বতস্ফুর্ত লোক সমাগম দেখে, ঝাঁ চকচকে জন্মানুষ্ঠান দেখে বিরোধী কুৎসাকারী সমালোচকদের কি একটা তলপেট ছাড়িয়ে মাথায় উঠে গিয়ে প্রায় যায় যায় অবস্থা, মাথার সব শিরা ছিঁড়ে গিয়ে পাগলের মত প্রলাপ বকে চলেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেসবুকে, যত্রতত্র পরমযত্নে। আর তীব্র টক ঢেঁকুর তুলে প্রশ্নের বমি ক'রে চলেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই অনেক প্রশ্নের একটা প্রশ্ন হ'লো, যার জন্মদিন তার বাড়ির লোক পালন করুক না, বাইরের এত লোকজন, এত খরচখরচা কেন? আরো অনেক প্রশ্ন আছে। সেগুলি নিয়ে পরে একদিন আলোচনা করবো।



প্রশ্নটা ভালো লাগলো। যার জন্মদিন তার বাড়ির লোক পালন করুক বিরোধীদের এই কথার সঙ্গে আমি একমত। বিরোধীরা ঠিকই বলেছেন, যথার্থই বলেছেন। কিন্তু আমরা বাস্তবে কি দেখি? আমাদের ছোটোবেলার সময়ে সব বাড়িতে না হ'লেও প্রায় বাড়িতেই জন্মদিন বা অন্যান্য অনুষ্ঠান পালন হ'তো। কিন্তু আজকালকার ছেলেমেয়েদের মত এইদিন, ওইদিন ইত্যাদি নানা দিন উপলক্ষে আধুনিক নানা অনুষ্ঠান পালনের চল ছিল না। জন্মদিন পালন কোনও কোনও বাড়িতে হ'তো। তবে তখনও যৌথ পরিবারের চল ছিল তাই যখনি কোনও বাড়িতে জন্মদিন বা কোনও অনুষ্ঠান পালন হ'তো পরিবারের ও আশেপাশের সবার উপস্থিতিতেই পালন হ'তো। অনুষ্ঠান পালনের একটাই উদেশ্য ছিল তা' হ'লো প্রতিদিনের একঘেয়েমি জীবন থেকে বেরিয়ে এসে নির্ভেজাল আনন্দ উপভোগ করা। তা'তে একটা বড় উচ্চ মনের পরিচয় পাওয়া যেত। পাওয়া যেত মিলেমিশে থাকার পরিচয়। বর্তমানে এখনও বহু বাড়িতে এই চল বজায় আছে। আর্থিক শক্তি একটা মূল কারণ হ'লেও সবচেয়ে বড় কারণ হ'লো উন্নত মানসিকতা। এই মিলেমিশে জন্মদিন পালন করার উন্নত মানসিকতার প্রতিফলন গরীব পরিবারেও দেখা যেত। যা এখনো একদিনের জন্য হলেও দেখা যায়। এই হ'লো আমাদের পূর্বজদের কৃষ্টি সংস্কৃতি। যে ট্রাডিশন ব'য়ে চলেছে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান সৎসঙ্গ পরিবারে।


আবার অনেকের আর্থিক ক্ষমতা থাকলেও নিম্ন মানসিকতা ও নিম্ন রুচির কারণে এই সমস্ত যৌথভাবে আনন্দ উপভোগ করা থেকে তারা বঞ্চিত হয়। আর যারা অর্থে, শিক্ষায়, চরিত্রে, মানসিকতায় সবেতেই দরিদ্র তাদের জ্বালা আরো বেশি ও ভয়ংকর। তারা সবকিছুতেই বঞ্চিত। কিছুই তারা উপভোগ করতে পারেনি জীবনে ও আজও পারে না। বিরোধীরা সেই পর্যায়ের, যারা শ্রীশ্রীআচার্যদেবের জন্মদিন পালন করা নিয়ে বিষোদ্গার করছেন, হচ্ছে গাত্রদাহ।



কিন্ত আজকালকার ঐ বিখ্যাত গানের মত ' না বিবি না বাচ্চা, না বাপ বড়া, না মাইয়া The whole thing is that কে ভাইয়া, সবসে বড়া রুপাইয়া' এই গানের মত আধুনিক ছেলেমেয়েদের মন যতই সংকীর্ণ হ'ক না কেন তারা ঘরে ও বাইরে পাশ্চাত্যের অনুকরণে মিলেমিশে নানা দিবস পালন করে। আর তা করে নিছক আনন্দ লাভের জন্য। তারা এই সংকীর্ণ মানসিকতার মধ্যে থেকেও নির্মল আনন্দ লাভের ও হাঁপ ছেড়ে বাঁচবার জন্য এইসব অনুষ্ঠান পালন ক'রে থাকে বা করতে চায় জানতে ও অজান্তে। এমন অনেক আছে যারা হয়তো বা অনেক সময় বাবা-মায়ের বা নিজেদের আর্থিক অক্ষমতার জন্য ক'রে উঠতে পারে না ইচ্ছে থাকলেও। কিন্তু তাদের ইচ্ছেটাই, তাঁদের মানসিকতাটায় মহৎ।


এই যে নানা দিবস ( ফাদার্স ডে, মাদার্স ডে, চিল্ড্রেনস ডে, হাজবেন্ড ডে, ওয়াইফ ডে ইত্যাদি) পালনের ঢেউ এসেছে এর মধ্যেও আছে সুন্দর একটা মন। অন্তত এই অনুষ্ঠান পালন করতে করতে নিজের অজান্তে একটা সুন্দর মন গড়ে ওঠে। একদিনের জন্য হলেও নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে চায় তারা। একদিন হয়তো বা পুরোনো দিনের সব মিলনান্তক সুন্দর দিনগুলো এমনিভাবেই আবার ফিরে আসবে। সবটাই মনের ব্যাপার। আগে তো মন, মনের গঠন।


কিন্তু যে মানসিকতা নিয়ে বিরোধীরা শ্রীশ্রীআচার্যদেবের জন্মদিন পালন নিয়ে সোচ্চার হয়েছে তা'তে এটা তাদের বক্তব্যে পরিস্কার যে হিংসায় তাদের বুকের ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে। তারা তাদের ছোটো নীচ মানসিকতা ও রুচির কারণে পরিবার থেকে বঞ্চিত ও একাকিত্বে ভোগে। তারা ঘরে-বাইরে, পরিবারে, সমাজে উপেক্ষিত। তাদের জন্মদিন কেউ কোনোদিন পালন করেনি, পালন করে না, পালনের চল নেই। তারা পরিবার কি তাই-ই জানে না, তাই পারিবারিক অনুষ্ঠান থেকে হ'য়ে থাকে একঘরে। নিজের পরিবারে এদের ঠাঁই নেই। এইসব মানুষ ছোটো নীচ মানসিকতার কারণে পরিবারে, সমাজে না ঘরকা, না ঘাটকা হ'য়ে থাকে। আর, একাকি থাকার দরুন এদের কোনও জনসংযোগ থাকে না। ফলে এরা কাউকে ভালোবাসতে পারে না। এদের কাছে আপন সবসময় পর হ'য়ে থেকেছে। আর, পরকে করেছে জীবন থেকে দূর।


তাই, 'সৎসঙ্গ' যে একটা বিরাট পরিবার আর সৎসঙ্গীরা সেই পরিবারের সদস্য এবং সেই পরিবারের গৃহকর্তা যে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আর শ্রীশ্রীআচার্যদেব যে আপনার জন পরিবারের বড়ভাই, পথ প্রদর্শক এবং সৎসঙ্গীরা যে বিপদে আপদে, শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক ও নিজের নিজের নানা সমস্যায় ছুটে ছুটে চলে যায় নিজের বাড়িতেই নিজের বড়ভাই পরম আশ্রয় শ্রীশ্রীআচার্যদেবের কাছে সেকথা কুয়োর মধ্যে থাকা ব্যাঙের মানসিকতার অধিকারী শরীরে মনে আত্মায় বিধস্ত মানুষেরা বুঝতে পারবে না। বুঝতে পারবে না তারা এই স্বতস্ফুর্ত পারিবারিক মহামিলনের আনন্দ। ঠাকুরবাড়ি আমাদের নিজের বাড়ি আর যেটা নিজের বাড়ি ব'লে আমরা জানতাম, ঠাকুরবাড়ি থেকে ফিরে যেখানে গিয়ে থাকি তা আমাদের কর্মস্থল, এই বোধ তাদের কল্পনার বাইরে। আমরা যে পরিবারের আনন্দ অনুষ্ঠানে ছুটে ছুটে যাই পরিবারের মানুষদের সাথে মিলিত হ'তে আমাদের যৎসামান্য শক্তি নিয়ে নিজের বাড়ি ঠাকুরবাড়িতে আমাদের কর্মস্থল থেকে সেই জ্ঞানের আলো থেকে তারা বঞ্চিত তাই তারা অজ্ঞতার কারণে, নীচ মানসিকতার কারণে কুৎসা করে, জ্বালায় জ্বলে অশ্লীল কথায় আক্রমণ করে। এই গভীর মূল্যবোধ ও ভালোবাসা বুঝতে পারবে না এই কৃপণ স্বভাবের পরশ্রীকাতরতায় ভোগা রিপু তাড়িত বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে অক্টোপাসের মত জড়িয়ে থাকা ছোটো নীচ চিন্তার মানুষেরা। সারাজীবন বুকের আগুন বুকের মধ্যে নিয়ে অশান্তিতে একাকিত্বের জ্বালায় জ্বলে পুড়ে খাক হ'য়ে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে করতে আর মৃত্যুর দিন গুনতে গুনতে চলে যাবে একদিন ব্যর্থতায় ভরা জীবন নিয়ে। এর থেকে মুক্তি নেই যতদিন না অন্ধকার থেকে মুখ ফিরিয়ে আলোর দিকে তাকাচ্ছে।বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা সম্পর্কে আমার অভিমত।

কিছু কিছু ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে শ্রীশ্রীঠাকুরকে বেশী অনুভব করতে পারি কিনা জানি না, তবে বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেবের মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুরকে আমি স্পষ্ট জীবন্ত দেখতে পাই। SriSriAcharyadeb is the living Manifestation of SriSriTHakur . Sri Sri Acharyadeva is the living embodiment of Sri Sri Thakur.

ঐ যে আছে, "আজও লীলা করে গৌরচাঁদ রায়, কোনও কোনও ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়।" আর ঠাকুর বলে গেলেন, "ইষ্টগুরু- পুরুষোত্তম প্রতীক গুরু বংশধর, রেত- শরীরে সুপ্ত থেকে জ্যান্ত তিনি নিরন্তর।"

শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, "পুরুষোত্তমকে direct (সরাসরি) যারা না পায়, তারা তদনুবর্ত্তী আচার্য্য-পরম্পরার ভিতর দিয়ে তার ভাবটাই কিছু-না-কিছু পায়।"

শ্রীশ্রীঠাকুর যে আচার্যদেবের মধ্যে জীবন্ত আছেন এটা শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা। কে মানলো আর না-মানলো তা দেখা আমার কাজ নয়। আমার কাজ যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে তা ভেবে দেখা।
আবার শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, "ঐ ভাব যখন মলিন বা ম্লান হয়ে যায়, উবে যাবার মত হয়, বিকৃতিতে আচ্ছন্ন হয়ে ওঠে, মানুষকে ঈশীস্পর্শে সঞ্জীবিত করে তোলবার জন্য তখন তিনি আবার মানুষ হয়ে আসেন"।

অতএব আচার্য পরম্পরার মধ্যে ঐ ভাব এখনও মলিন হয়নি, বিকৃতিতে উবে যাওয়ার মত হয়নি। যেদিন হবে সেদিন শ্রীশ্রীঠাকুর আবার স্বয়ং আসবেন। আর কিছু বলার ইচ্ছা নেই।
কিন্তু এখন বর্তমানে আমি, আমরা শ্রীশ্রীআচার্যদেবের মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুরকে দেখতে পাই। শ্রীশ্রীঠাকুরকে অনুভব করতে পারি শ্রীশ্রীআচার্যদেবের সৌম্যকান্তি অপরূপ নয়নভোলানো চেহারা, তাঁর চেহারার শান্ত, সুন্দর শোভা, লাবণ্য, কমনীয়তা, দীপ্তি, সৌন্দর্য ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত মানুষকে শান্ত করে, শক্তি দেয়। তাঁর মধুর কথা, চোখের দৃষ্টি, মানুষকে তৃপ্তি দেয়, আনন্দ দেয়। তাঁর ভরসাদীপ্ত কথায়, পরামর্শে ফিরে পায় মানুষ হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস। তিনি বাকসিদ্ধ পুরুষ। হতাশা, অবসাদগ্রস্ত, ধ্বস্ত-বিধ্বস্ত মানুষ তাঁর কথায় আবার জেগে ওঠে, খুঁজে পায়, অনুভব করতে পারে বুকের ভেতরের মহাশক্তিকে, জীবন্ত ঠাকুরকে। তাই প্রতিদিন হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁর কাছে ছুটে যায়, তাঁর জন্মদিনে যোগদান করে শ্রীশ্রীঠাকুরকে অনুভব করার জন্য, শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতি বিশ্বাস ও নির্ভরতাকে মজবুত ক'রে রাখার জন্য।


এ দৈব অনুভূতি ওঁচাটে মানুষের জন্য নয়। এ স্বর্গীয় উপলব্ধি নয় ছ্যাবলা, জঘণ্য, অতি নিকৃষ্ট, খেলো, স্বার্থপর, ধান্দাবাজ, কপট বাজে চরিত্রের মানুষের জন্য। আজ এই পর্যন্ত।
জয়গুরু।

No comments:

Post a Comment