Powered By Blogger

Monday, July 15, 2024

প্রবন্ধঃ ব্রাজিল আমার নয়নমণি, জার্মান আমার প্রাণ'

ব্রাজিল আমার নয়নমণি, জার্মান আমার প্রাণ' Post-এ আমার কয়েকজন পাঠক বিরুপ মন্তব্য করেছিল। একজনতো নোংরা ভাষায় গালাগালি করতেও সামান্যতম দ্বিধাবোধ করেনি। গালাগালি ক'রে সে তার রক্তের পরিচয় দিয়েছিল। ব্রাজিল প্রেমী কেউ কেউ সমর্থক আমার এই মনোভাবে বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করেছিল আমি কি 'আমার নয়নের মণি'র ৭ গোল খাওয়াতে কষ্ট পাইনি? যাই হ'ক একটা উপভোগ্য ফাইনাল খেলা সমস্ত ভুলিয়ে দিল। আর তাই আমি আমার প্রতিক্রিয়া শেয়ার করলাম আমার সমস্ত পাঠক বন্ধুদের জন্য এই লেখার মধ্যে দিয়ে।
খেলা আমার কাছে অন্য মাত্রা বয়ে আনে। ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির তফাৎ হ’তেই পারে। ফুটবল খেলার প্রতি ভালোবাসা, খেলার কলাকৌশল, নৈপুণ্য, ঘরানা তার ওপর ফুটবল সম্রাট পেলের ক্রীড়া বৈচিত্র্য ব্রাজিল দেশটার প্রতি আমার নিজের অজান্তে স্বাভাবিকভাবেই ভালোবাসা এনে দিয়েছিল। দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলভাগের সবচেয়ে বেশি অংশ জুড়ে থাকা ব্রাজিল দেশটার ফুটবল খেলা ব্রাজিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া হিসেবে পরিচিত ও তার অনুনকরণীয় ঘরানা ফুটবলপ্রেমীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। যার অনুরণন বাঙ্গালীর রক্তের মধ্যে টের পাওয়া যায়। ৭টা গোল খাওয়া একটা দলের সমর্থকের পক্ষে হজম করা সত্যিই কষ্টের। কিন্তু যে দল যেদিন মাঠের মধ্যে যোগ্যতা ও দক্ষতার বিচারে শীর্ষে থাকবে সেই দলের ললাটে জয়ের চিহ্ন আঁকা হবে এটা understood. খেলার মাঠে performance-ই শেষ কথা। সেইজন্য আরেকটা দলকে শত্রু ভাবার কোনো মানে হয়না।


ব্রাজিল হেরে যাওয়াতে কষ্ট হয়না বা হয়নি যদি বলি তাহলে তো আমি বা আমার সত্তা দেবত্বে উত্তীর্ণ হয়েছে ধরে নিতে হয়। যদিও দেবতাদের অনুভব শক্তি অতি উচ্চ মার্গের। উপর থেকে বোঝা যায় না সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনাকে। নারকোলের মত। উপরে যত কঠিন ভেতরে ততই নরম ও রসালো। আমার তো আর সেই অবস্থা প্রাপ্ত হয়নি। তাই আমার কষ্ট হয়েছে ঠিক কথা কিন্তু অন্যদিকের কিছু বিশেষত্ব আমার প্রাণকে উদ্বেলিত ক'রে তোলে তাই কষ্ট হ'লেও যা সত্য, যা চিরন্তন তা আমাকে দোলা দিয়ে যায় বন্ধু!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!! কি করব, আমি যে চিরন্তন সত্যের পূজারী!!!!!!!!!!!!!!!! হুমায়ুনদা আমিও আপনার কষ্টের একজন সাথী।


আর কোচ জোয়াকিম লো’র জার্মানি একটা ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরির মত। যে কোন মুহুর্তে ঘুম ভেঙ্গে উঠে ভয়ঙ্কর আগ্নেয় ছোবল আছড়ে পড়বে প্রতিপক্ষের ঘাড়ে! জার্মান রক্তের মধ্যে অনবরত ফুটতে থাকে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির লাভার মত উত্তেজনা, উৎসাহ, উদ্দীপনা বাঙাল রক্তের মত। সেই চলমান গতিময়তাকে বজায় রেখেই বিশ্বকাপের ১৯টি আসরের ১৭টিতেই অংশগ্রহনকারী দলের নাম জার্মানি। সাফল্যের বিবেচনায় ইতিহাসের তৃতীয় সেরা। এখন পর্যন্ত কোন টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের রেকর্ড নেই তাদের। সর্বোচ্চ ১২বার শীর্ষ চারে থাকা দলের নামও জার্মানি। আর এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় সবগুলো বিশ্ব আসরেই ফেবারিট অন্যতম শক্তিশালী এই দলটি। এবার ব্রাজিল বিশ্বকাপেও এর ব্যাতিক্রম ছিল না।


আর মাঠের বাইরে কোচ জোয়াকিম লোর নিঃশব্দ শান্ত অথচ কঠিন দৃপ্ত বিচরণ প্রতিফলিত হচ্ছিল প্রতিমুহুর্তে মাঠের মধ্যে খেলোয়াড়দের মধ্যে। জার্মান দলটার মধ্যে প্রতিভার ছড়াছড়ি হওয়ার কারণে কোচ জোয়াকিম লোর জন্য অনেক সহজ হয়ে গেছিল খেলার মানকে উচ্চতার শিখরে পৌঁছে দেওয়া। খেলোয়াড়দের অবিরাম চলমান গতিময়তা জার্মান দলকে একটা বিশেষত্ব এনে দেয় বা এনে দিয়েছিল যার অনুরণন আমি আমার বাঙাল রক্তে অনুভব করি প্রতিমুহুর্তে।


তাই আমার প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, ‘জার্মান আমার প্রাণ’ বলে উঠেছিল আমার অন্তরাত্মা। এতে লজ্জার কি আছে বন্ধু আমি বুঝতে পারলাম না। আর এক বন্ধু বাঙাল আর জার্মানের রক্তের মিলের কথায় লিখেছিল ‘এটা আমার মতিভ্রমের প্রথম স্টেজ’। আমার রক্তের উত্তেজনা, উৎসাহ, উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনার রেশ এই গ্রহের যে প্রান্তে খুঁজে পাব সেখানেই গেয়ে উঠেবে আমার প্রাণ এই গান। আর এক বন্ধুকে তার কথার উত্তরে লিখেছিলাম আমি একটা উপভোগ্য ফাইনাল খেলা দেখতে চাই তা’তে হারজিৎ আমার কাছে গৌণ। আর জার্মান যদি ঘানা বাদে টানা খেলার consistency ধ'রে রাখতে পারে আর ব্রাজিল জয়ের আত্মবিশ্বাসকে মাঠের মধ্যে আছড়ে ফেলতে পারে তাহ'লে ভুমিকম্প ঘটলেও ঘটতে পারে। আর তাই ঘটলও!!!! তাই আবার বলি ‘ ব্রাজিল আমার নয়নমণি, জার্মান আমার প্রাণ’!!!
( লেখা ১৫ই জুলাই, ২০১৪_

No comments:

Post a Comment