Powered By Blogger

Tuesday, July 16, 2024

প্রবন্ধঃ রথযাত্রা।

আজ সোজা ও উল্টোরথ নিয়ে কথা বলবো।
আবার কাল ১৬ তারিখও পালন হবে উল্টোরথ। ৫৩ বছর বাদে এবার দু-দিন ধরে পালিত হ'চ্ছে রথযাত্রা। গত ৭ ও ৮ জুলাই রথযাত্রা পালিত হয়েছে এবার উল্টোরথও ১৫ ও ১৬ দুদিন ধরে চলবে।

ঘরের ভেতর থেকে শুনতে পাচ্ছিলাম বাইরে মাইকে বাজছে হরে কৃষ্ণ হরে রাম কীর্তন। আওয়াজ শুনে বাইরে এসে তাই দেখছিলাম। গলির ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসছে কীর্তনের দল। সামনে ম্যাটাডোরে মাইক লাগানো। পিছনে নারীপুরুষ আনন্দে নাচতে নাচতে চলেছে। কিন্তু কোনও রথ দেখতে পেলাম না। অনেকক্ষণ পর বোধহয় মাসীর বাড়ি থেকে গলি দিয়ে বেড়িয়ে এলো রথ। মানুষের ভিড়ে দেখা যাচ্ছে না রথ। কারণ রথের উচ্চতা খুব বেশী হ'লে ফুট তিনেক। খাজনা থেকে বাজনা বেশী। দেখলাম হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে ঐ ছোট্ট রথের দড়ি টানাটানির কাড়াকাড়িতে। সবাই পুণ্যি করতে চায়। ঐ টানাটানিতে ছোট্ট ৩-৪ ফুটের হাল্কা রথ একবার উল্টে পড়ে যেতে যেতে বেঁচে গেল। কোনরকমে সামলে নিল সামনে যারা ছিল।
এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল অনেক কথা।

এ বছরে পুরীর সোজা রথের কথা মনে পড়লো।
পুরীতে গুন্ডিচা মন্দিরে রথ থেকে নামানোর সময় পড়ে যায় বলরামের মূর্তি। বলরামের মূর্তি পড়ে ৫জন সেবায়েত আহত, পুরীর হাসপাতালে ভর্তি। শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার পরেই প্রচুর মানুষের ভিড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এর ফলে জখম হন বহু মানুষ। তাঁদের মধ্যে একজন শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারাও গেছেন।

মনে পড়ে গেল, বাংলাদেশের রথযাত্রার দিনে মর্মান্তিক ঘটনার কথা। বাংলাদেশের বগুড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ৫ জনের। ৫০ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রথের সঙ্গে সড়কের ওপরে থাকা বিদ্যুৎ-র তারের সংস্পর্শে এসে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

মনে পড়ে গেল আজ থেকে কয়েক বছর আগে রথযাত্রার দিন সকালের একটা ঘটনার কথা। সকালে প্রতিদিনের মত গাড়ি নিয়ে বেড়িয়েছিল ভাইপো অফিসের কাজে। পথে রাস্তার ধারে অনেক রথ নিয়ে বসেছিল রথবিক্রেতা। বাজারের রাস্তা দিয়ে বড় রাস্তা জিটি রোডে ওঠার মুখে পিছন থেকে একটা বাস এসে এমন সাইড চেপে দিল, গাড়ি টাল সামলাতে না পেড়ে রাস্তার ধারে থাকা সাজিয়ে রাখা রথের ওপর গিয়ে ধাক্কা মেরে পাশের বন্ধ দোকানে গিয়ে ধাক্কা মারলো। আর, সুযোগ বুঝে ঝামেলা হওয়ার আগেই বাস দ্রুতবেগে বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী না নিয়ে বেড়িয়ে গেল। গুণাগার দিতে হ'লো ভাইপোকে। কথায় আছে, ভাগ্যবানের বোঝা ভগবানে বয়। ঠিক তেমনি, ভাইপো রথ বিক্রেতাকে ডেকে সব রথের দাম দিয়ে দিল। সব রথ একসঙ্গে বিক্রি হ'য়ে গেল। আর, বন্ধ দোকানের মালিককে ডেকে ব'লে দিল, মিস্ত্রি ডেকে সারিয়ে নিতে। মিস্ত্রি এলে তাকে দোকানের বন্ধ দরজাটা দেখিয়ে তার পারিশ্রমিক দিয়ে দিল।

এখন আসুন একটু দেখে নিই জ্যোতিষবিদরা কি জানাচ্ছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন যে উল্টোরথের দিন কোন কোন খাবার ভুলেও মুখে তুলতে নেই। এই সব খাবারগুলি যদি আপনি উল্টোরথের দিনে খান, তাহলে আপনার জীবনে নাকি বড় সমস্যা দেখা দেবে।

তেতো জাতীয় খাবার
উল্টোরথের দিন উচ্ছে, করলা, নিমপাতা বা কুলেখাড়া জাতীয় সবজিগুলি ভুল করেও খাওয়া উচিত নয়। জীবনে অশুভ প্রভাব আনতে পারে। শরীরের পক্ষে উপকারী এই সব্জিগুলি যা ঔষধিয় গুণাবলীতে সমৃদ্ধ তা' কি অশুভ প্রভাব আনতে পারে তা আমার জানা নেই।

পুঁইশাক
শাস্ত্র বলছে যে সোজা রথের দিন ও উল্টো রথের দিন পুঁইশাক খাবেন না। মহাপ্রভু জগন্নাথদেব রুষ্ট হতে পারেন। হ'য়ে যাওয়া কাজও আটকে যেতে পারে। প্রেমময় মহাপ্রভু পুঁইশাক খেলে কেন রুষ্ট হবেন সেটা কেউ জানলে একটু জানাবেন।

কলমি শাক
উল্টো রথের দিন কলমি শাকও খাওয়া উচিত নয়, খেলে সংসারে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হতে পারে। এছাড়া আর্থিক সমস্যার মুখেও পড়তে পারে।

আমিষ খাবার
সোজা রথ ও উল্টো রথ, রথযাত্রার এই দু-দিনই আমিষ খাবার এড়িয়ে চলার কথা বলছে শাস্ত্র। মাছ, মাংস, ডিম,পেঁয়াজ ও রসুন ইত্যাদি আমিষ খাবার খেলে মহাদেব রেগে যেতে পারেন। ফলে অর্থ ক্ষতি হতে পারে। আর সারা বছর খেলে কোণও দোষ নেই। শরীরেরও ক্ষতি নেই, অর্থেরও ক্ষতি নেই।

অ্যালকোহলঃ রথের এই দু-দিন মদ, গাঁজা, সিগারেট ইত্যাদি কোনও নেশার দ্রব্য স্পর্শ করা উচিত নয়। সারা বছরের অন্যান্য সময় স্পর্শ করা যেতে পারে তখন কোনও দোষ হয় না।
এই যেগুলি নিষিদ্ধ বললাম রথের দিনে সারা বছর সেগুলি গ্রহণ করলে বা অন্যান্য পাপ কাজ করলে মহাদেব, মহাপ্রভু জগন্নাথ দেব রাগ করেন না।

যাই হ'ক, একটা পোষ্ট দেখছিলাম,
সারা বছর পাপ ক'রে রথের দড়ি টানলে নাকি সব পাপ মুছে যাবে।
জগন্নাথ দেব রথ থেকে নেমে থাপ্পড় মারে না এটাই অনেক।

এই থাপ্পড়টা খাওয়ার ভয়ে আমি রথের দড়ি টানা তো দূরের কথা রথের আশেপাশেই যাই না, যাইওনি কোনওদিন। হাজার হাত দূরে থাকি। এটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা। কে বলতে পারে কখন রথ থেকে জগন্নাথ নেবে আসবে? হঠাৎ যদি খাড়েমারে ঐ গোল গোল ভয়ংকর চখা আঁখি নিয়ে রথ থেকে নেবে এসে কষে একটা থাপ্পড় মারে গালে সবার সামনে, তখন? লজ্জায় অপমানে "দাদা কলসি দড়ি দে, ডুবে মরি রে" ব'লেও কোনও লাভ হবে না; এ লজ্জা, এ জ্বালা তাড়া ক'রে বেড়াবে মৃত্যুর পড়েও জনম জনম তা যতবড়ই আমি দাদা হ'ই না কেন, তাঁর সঙ্গে তো দাদাগিরি চলবে না, থাপ্পড় খেয়ে মুখ নীচু ক'রে লজ্জায় চ'লে আসতে হবে মানে মানে আরও অসম্মান হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে। ঐ বিরাশী সিক্কার থাপ্পড়ের জ্বালা আর দাগ মুছতে লেগে যাবে বাকী জীবনটা ঘরের মধ্যে মুখ লুকিয়ে ব'সে থেকে, যদি কেউ গালের দাগটা, থ্যাবড়ানো গালটা কেউ দেখে ফেলে এই লজ্জায়, এই ভয়ে। আর ঐ ভয়ংকর চখা আঁখি আর তাঁর বিরাশী সিক্কার থাপ্পড় ঐ ডাবল অ্যাকশান টুথ ব্রাশ দিয়ে ঘষা খাওয়ার পর শালা ছাল চামড়া আর কিছু থাকবে না শুধু কঙ্কালটা ছাড়া। আর কঙ্কালটায় গালের অংশটা দুমড়ে মুচড়ে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। এখন পাঠক বলতেই পারে, আরে বাবা, আপনাকে মারতে যাবে কেন? আপনি কি করেছেন? কথাটার উত্তরে বলতে পারি, অতশত জানি না বাবা, দিনকাল খারাপ, কখন শালা উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চেপে যাবে তার ঠিক কি? আর যদি চেপে যায়? নাও শালা এবার ঠালা সামলাও। তখন তো বন্ধু আপনি দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাদাম ভাজা খাবেন যেন কিছুই দেখতে পাননি এমন ভাব নিয়ে আর হুলো বিড়ালের মতন ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানেন না হাবভাব নিয়ে। আর বাদাম ভাজা খেতে খেতে মুচকি মুচকি শয়তানী হাসি হাসবেন। তার থেকে দূরে থাকায় ভালো।

তাই, রথের মেলার পোড়া তেলের পাপড় ভাজা আর রসহীন শুকনো জিলিপি খাওয়ার ইচ্ছা ও লোভ থাকলেও মুখ গুঁজে পড়ে থাকি ঘরের কোণে; বের হ'ই না। ঐ চখা আঁখিকে আমার বড় ভয়। ভাগ্যিস শালা নিম কাঠে আবদ্ধ হ'য়ে রইলো ঐ হাত কাটা জগন্নাথ তাঁর চখা আঁখি নিয়ে। নইলে ঐ একনম্বরী চখা আঁখি দাদার সামনে দেশজুড়ে দু'নম্বরী থেকে দশনম্বরী দাদাদের দাদাগিরি ছুটিয়ে দিত ---- লাথি মেরে ফাটিয়ে দিয়ে। ভালোই হয়েছে জগন্নাথদা নেবে আসে না রথ থেকে নীচে। ঐ রথের ওপর থেকে চোখ ফাঁড় ফাঁড় ক'রে বিস্ফারিত চোখে চেয়ে থাকে নীচে রাস্তার দিকে লোকেদের বালখিল্য ভক্তির ধ্যাস্টামো। আর, চোখ ফেটে বেরিয়ে আসতে চায় চোখের মণি। ঐ চোখ দেখলেই বোঝা যায়, এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। এটা অনুভবের ব্যাপার। আমি জানি, হাত নেই পা নেই জগন্নাথ না পারবে হাত দিয়ে রথকে থামাতে, না পারবে পা দিয়ে লাথি মেরে রথের ওপর থেকে তাঁর রথে চড়ে বসা অনাহূতদের ফেলে দিয়ে নেবে আসতে। তবুও আমি রিস্ক নিতে পারবো না। মাথায় থাক আমার জগন্নাথ দর্শন, মাথায় থাক আমার রথযাত্রা, মাথায় থাক আমার রথের দড়ি ধরা। শালা কখন ঐ মোটা দড়ি সাপের মত গলায় পেঁচিয়ে যাবে তার ঠিক কি? আর ওপর থেকে নেবে আসবে জগন্নাথ না হোক বিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার বলরাম কে বলতে পারে? মাথায় থাক আমার পাপড় ভাজা আর জিলিপি খাওয়ার লোভ। চাচা আপন প্রাণ বাঁচা। আমার গাঁয়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা। সাবধানের মার নেই। 
সাধু সাবধান!

No comments:

Post a Comment