যাই হ'ক, তাহ'লে এক কাজ করা যাক, প্রথমে এইসব কবিতা,আর্টিকেল লেখা ও ছবি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে লেখক নিজের প্রিয়জন অর্থাৎ নিজের মা, বোন, বউকে বা আরও যারা আছে আপনজন তাদের এইসমস্ত ছবি সহ কবিতা, আর্টিকেল ইত্যাদির পোস্টটা দেখাতে পারেন তারপর দেখুন তারা কি বলছেন। লেখক, যে নারীদের স্বপক্ষে এই পোষ্ট করেছেন সেই নারীরাই লেখককে সমর্থন করে কিনা একবার দেখে নিতে পারেন আর যারা এইসমস্ত পোষ্ট করেন তারা এত বৈপ্লবিক মানসিকতার অধিকারী অথচ প্রায়ক্ষেত্রেই নিজের মুখ লুকিয়ে এই পোষ্ট করেন; কেন? হে! কবি-লেখকের মত সাহসী আধুনিক মানুষ, আপনাদের ছবি সবাইকে দেখতে দিন! দেখতে দিতে আপত্তি কোথায়!?
বি-গ্রেড পর্ণ সিনেমার গায়েও 'A' লেবেল লাগানো থাকে!!!!! বি-গ্রেড সিনেমার রগরগে রেপ সিনের মত সিন দেখাতে সাহস করেননি বিশ্ববিখ্যাত সত্যজিৎ রায়ের মত চিত্র পরিচালকেরা তাদের ফিল্মে রেপ সিন থাকা সত্ত্বেও! কেন! কেন বি-গ্রেড সিনেমার গায়ে 'এ' লেবেল লাগানো থাকে? ঐ সব তো বি-গ্রেড সিনেমা! কেন সত্যজিৎ রায়ের মত বিশ্ববিখ্যাত পরিচালকরা তাদের সিনেমায় রেপ সিনকে প্রতীকী ঢঙে দেখাতেন? ভয় পেতেন? কবি, লেখকের মত তাঁরা সাহসী, আধুনিক ও প্রতিবাদী ছিলেন না? নাকি তাঁরা সভ্য সমাজের প্রতিনিধি ছিলেন ব'লে আদিম অসভ্য জংলী জাতির মত আচরণ করেননি? কোনটা? তাঁরা কি আধুনিক কবি, লেখকদের মত 'দৃষ্টিভঙ্গীর তফাৎ' এই দোহাই দিয়ে তাঁদের ফিল্মকে রগরগে ক'রে ব্যবসায়িক ক'রে তুলতে পারতেন না? আচ্ছা কোনো রেপের ঘটনাকে কোর্টে প্রমাণ করতে হ'লে তাহ'লে আগামীদিনে কি ঐ রেপ হওয়া মহিলাকে কোর্টের মধ্যে বিচারকের সামনে ঐ রেপিষ্টদের দ্বারা রেপ করিয়ে প্রমাণ দিতে হবে যে ঐ মহিলার রেপ হয়েছিল! তাই তো? আর এর প্রতিবাদ হ'লেই বলতে হবে, দৃষ্টিভঙ্গীর তফাৎ!!!!!!! তাই তো? তাহ'লে টিভিতে যেসব জন্মনিরোধক জিনিস ও বিষয়ের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় আগামীতে সেইসব বিজ্ঞাপনের কি সুবিধা আর কি অসুবিধা সেগুলি টিভিতে প্র্যাকটিক্যাল ডেমো দিলে বিজ্ঞাপন আরও চমকদার হবে, মনোরঞ্জন হবে, ব্যবসা বাড়বে, টিআরপি রেট বেড়ে যাবে চ্যানেলের! কি বলেন আধুনিক, উদার কবি ও লেখককুল? স্যানিটারী ন্যাপকিনের কার্যকারিতা বোঝাতে ফেসবুকে আধুনিকতা, উদারতা ও প্রগতির নামে পোষ্ট করা আপত্তিকর ছবির মত নারীকে প্রকাশ্যে টিভির পর্দায় তুলে ধরলে আম নারী জাতির সুবিধা হয়! কি বলেন অতি প্রগতিবাদীরা? তা'তে বিরুদ্ধবাদীরা কিছু বললে ঐ একটা কথা বললেই হবে, 'দৃষ্টিভঙ্গির তফাৎ'---------কি বলেন?
যাক, এবার একটা কথা জিজ্ঞেস করি,
১) পোষ্ট করা এই ছবিগুলি যার বা যাদের তার বা তাদের সম্মতি আছে এই ছবিগুলি পোস্ট করার ব্যাপারে?
২)কবি বা লেখককে এই সমস্ত ছবির নারীরা অনুমতি দিয়েছেন তাঁর বা তাঁদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের তোলা ছবি বাজারী করতে?
৩)ছবি প্রকাশকারী কি নারী? যদি নারী হ'য়ে থাকেন তাহ'লে তিনি নিজে এরকম ছবি হ'তে পারবেন?
৪)ছবি প্রকাশকরা তাদের কোনও কাছের প্রিয়জনকে এইভাবে ফটো তুলে গুরুগম্ভীর আলোচনার বিষয়ের অজুহাতে প্রকাশ্যে নাঙ্গা করতে পারবেন নাকি শিল্পী, কবি, লেখকদের প্রিয়জনরা শিল্পী, কবি, লেখকদের আধুনিকতাকে সাপোর্ট ক'রে নিজেরা এইভাবে বাজারী হ'তে পারবেন?
৫)এই নারীরা যদি কোর্টে কবি, শিল্পী, লেখকদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন তখন তারা বিচারককে 'দৃষ্টিভঙ্গির তফাৎ'-এর প্রসঙ্গ তুলে ব্যক্তিগত অধিকারে হস্তক্ষেপ করার অধিকারকে বৈধ ও ন্যায্য ব'লে প্রমাণ করতে পারবেন?
কোনটাই পারবেন না। আরও অনেক পয়েন্ট তুলে ধরতে পারতাম কিন্তু আমার উদ্দেশ্য তা'নয়। আমার উদ্দেশ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঠিক-বেঠিক তুলে ধরা। প্রগতির নামে অতি প্রগতিকে চিহ্নিত করা।
কারণ অতি প্রগতিই দুর্গতি!!!!! আর ফেসবুক এই দুর্গতি সৃষ্টির বলিষ্ঠ মাধ্যম! ফেসবুক আজ তার মান হারিয়ে নিজেও বাজারী হ'য়ে যাচ্ছে!!!!!!!!!!!!
এইসব কথা কবি, শিল্পী, লেখকরা মানতেও পারেন আবার নাও মানতে পারেন। গ্রহণ ও বর্জন আপনাদের ব্যক্তিগত। কিন্তু কোনও নারী শরীরকে অপমান করার কোনও অধিকার আপনাদের কারো নেই। এমনকি নিজের শরীরকেও না। কারণ সমাজ, সভ্যতা ব'লে একটা কথা আছে, সমাজিক বন্ধন ব'লে একটা বিষয় আছে যা অতি প্রগতির নামে আপনি বা আমি অস্বীকার করতে বা ভাঙতে পারেন না, পারি না।
( লেখা ১৬ই জুলাই। ২০১৯)
No comments:
Post a Comment