Powered By Blogger

Friday, March 31, 2023

প্রবন্ধঃ এ কিসের অশনি সংকেত????

দেখতে দেখতে অনেকগুলি বসন্ত পার হ'য়ে এলাম। এই লেখাও যখন লিখছি তখনও বসন্তের ঠান্ডা বাতাস এসে গায়ে তার নরম হাত বুলিয়ে দেয়। আজ আর লিখতে ভালো লাগে না বা ইচ্ছে করে না। মনে হয় অরণ্যে রোদন। আর সত্যি সত্যিই তাই। আর অপ্রিয় সত্য কথা কারই বা ভালো লাগে?

যাই হ'ক বসন্ত বা বাসন্তীর ঠান্ডা নরম হাতের আদর ভালো লাগে, ভীষণ ভালো লাগে। কিন্তু সময়টা খারাপ তার ওপর বয়স হয়েছে। বসন্ত কি বাসন্তি তার নরম হাত বুলাতে বুলাতে অবশেষে গা না আবার গরম হ'য়ে যায়। তখন আর এক ভোগান্তি। যা এই বয়সকালের পক্ষে কখনই মঙ্গলজনক নয়।

যাই হ'ক, এই এতগুলো বসন্ত বা বাসন্তিদের তো পার হ'য়ে এলাম। দেখতে দেখতে ঘেন্না জন্মে গেছে। ঘেন্না জন্মে গেছে বসন্তের মাঝে চারপাশের ক্রিয়াকলাপ দেখে। বিশেষ ক'রে যখন এই দীর্ঘ বসন্তের মাঝে ঠাকুরের সোনার সৎসঙ্গীদের দেখি। যখন দেখি কি বিন্দাস আছে এই সৎসঙ্গীরা যারা ধর্ম্মেও আছে ও জিরাফেও আছে চরিত্রের। আর সেই সংখ্যাটাও নেহাৎ কম নয়! বিরাট বিপুল বিশাল একটা সংখ্যা। সাধারণ, অতি সাধারণ থেকে অসাধারণ সব স্তরের সব বয়সের সৎসঙ্গী তারা। কি মসৃণভাবে নিপুণতার সঙ্গে অত্যন্ত কৌশলী হ'য়ে তারা মিষ্টি মুখের মধুর হাসি ছড়িয়ে তোতাপাখির মতো ঠাকুরের বাণী, ঠাকুরের কথা আউড়ে যাচ্ছে মন্দিরে সৎসঙ্গে বসে আর আউড়ে যাচ্ছে ঠাকুরেরই সাবধান বাণী "দেবতার পায়ে মাথা খুঁটে তুই ফাঁকিতে বাগাতে চাস মাল, ঠাকুর তোর এতোই বেকুব ফাঁকি দেখে নয় সামাল" আর "তুমি যা করছো বা ক'রে রেখেছো ভগবান তাই-ই গ্রাহ্য করবে আর সেগুলির ফলও পাবে ঠিক তেমনি।" বাণীর বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না ক'রে, ফুঁ দিয়ে, তুড়ি মেড়ে উড়িয়ে দিয়ে ঠাকুরকে ভাঙ্গিয়ে নিজের ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার তৈরি ক'রে যাচ্ছে! এ এক অদভুত সন্ধিক্ষণ!

সবচেয়ে খারাপ লাগে যখন দেখি কেউ কোনও লেখা লেখে কোনও বিষয়ের ওপর ফেসবুকে বা অন্যান্য জায়গায় তখন লেখার সেই বিষয়, বিষয়ের ভাব, ভাষা, শব্দচয়ন, এমনকি ব্র্যাকেটে ইংরেজী শব্দগুলো পর্যন্ত ঠাকুরের রঙে রাঙানো আর তা নিজের মৌলিক রচনা ব'লে চালিয়ে দিচ্ছে ফেসবুকে, ম্যাগাজিনে, পত্রিকায়। এমনকি বই পর্যন্ত ছাপিয়ে ফেলছে। কিন্তু একবারও লেখার মধ্যে ঠাকুরের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছে না বা ঠাকুরকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। সম্পূর্ণটাই নিজের চিন্তা ভাবনার ওপর দিয়ে সৃষ্টি ব'লে চালিয়ে দিচ্ছে আর এলাকার সৎসঙ্গী মহলে ও বৃহত্তর সমাজে একজন বুদ্ধিজীবী কেষ্টবিষ্টু সেজে বসছেন। এদের লেখাগুলি পড়লেই ঠাকুরের ভাব ভাষা পরিস্কার ভেসে ওঠে। যারা ঠাকুরের গ্রন্থ অধ্যয়ন করেছেন তারা পরিস্কার বুঝতে পারেন আমার এই লেখার সত্যতা।

তাই ভাবি ঠাকুর তোমাকে ভাঙ্গিয়ে কতজন কতভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছে, আখের গুছিয়ে নিচ্ছে আর তুমি খালি আজও একাকী বসে কেঁদে চলেছো, কে কোথায় আছো আমায় কেউ মানুষ ভিক্ষা দিতে পারো? আমায় মানুষ ভিক্ষা দাও, আমায় মানুষ ভিক্ষা দাও ব'লে। তোমার সেই বুক ফাটা হৃদয় নিঙড়ানো কান্না কারও কর্ণগোচর হচ্ছে না। চাপা পড়ে যাচ্ছে সেই সতীদাহ-এর সময়ে বিকট ঢাক ঢোল কাঁসর ঘন্টার আওয়াজের আড়ালে সেই আগুনে পুড়ে মরা সদ্য বিধবার ভয়ঙ্কর যন্ত্রণাময় ভয়াবহ কান্নার মতো সাজা সৎসঙ্গীদের ভিড়ের বিশৃঙ্খল কোলাহলে।

হে দয়াল! তুমি তো জানো এ ঘোর কলি যুগ। এ যুগে তুমি আর কি আশা করতে পারো? তুমি এও জানো, কথায় আছে, "পড়েছো মোগলের হাতে খানা খেতে হবে একসাথে। আর পঞ্চ ভুতের ফাঁদে ব্রহ্মা পড়ে কাঁদে।" তেমনি 'সাজা সৎসঙ্গীদের হাতে সাজতে হবে তোমাকে। আর, সৎসঙ্গী মাঝে দয়াল পড়ে কাঁদে।' এও ভবিতব্য।

এ কিসের অশনি সংকেত????

No comments:

Post a Comment