যাই হ'ক, দেশ তথা বিশ্বের সামনে এই করোনা নামক মারণ ব্যাধির মহা দুর্যোগ থেকে কি মুক্ত হবে না মানবজাতি!? হবে, নিশ্চয়ই হবে। মানুষের সৃষ্ট এই মহাদুর্যোগের মোকাবিলা ক'রে জয়ী হবে মানুষ! সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তাঁর সৃষ্ট সন্তানদের অহংকারী উচ্শৃঙ্খল অসদাচারী জীবন যাপনে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত হ'লেও একেবারে মুখ ফিরিয়ে রাখেন না! তাঁর দুঃখ বা কষ্ট একটাই তিনি সমস্ত কিছুর সমাধান জানলেও জোর ক'রে কাউকে দিয়ে কিছু করাতে পারেন না। যতক্ষণ না মানুষ নিজে বাঁচতে ও বাড়তে চাইবে ততক্ষণ তিনি অসহায়, ঠুঁটো জগন্নাথ! তাই জগন্নাথের কোনও হাত নেই! তিনি সমস্ত কিছুকে দু'হাত দিয়ে ধরেই আছেন, আগলে আছেন কিন্তু অহংকারে মত্ত মানুষ তাঁকে ধরে নেই, তাঁর হাত ছিটকে মানুষ আজ নিজেকেই মনে করেছে সব কিছুর সে নিজেই স্রষ্টা ও নিয়ন্তা! দেশের জমিদার থেকে জমাদার, দ্বীপপাল থেকে পঙ্গপাল সবাই নিজেকে মনে করে আমিই সর্বশ্রেষ্ঠ, আমিই প্রধান, আমার উপরে কেউ নাই, নাই অন্য কোনও অস্তিত্ব! আবার এই সমস্ত অহংকারী সবজান্তা ঈশ্বর অবিশ্বাসী ঘেতো মানুষ বিপদকালে দ্বারস্থ হয় আংটি, পাথর, তাবিজ, মাদুলি, তুকতাক, ঝাড়ফুঁক, লালসুতো-নীলসুতো-কালোসুতো, বাবাজী-মাতাজী, শনি-রাহু-কেতুর দরবারে! মাথা নত ক'রে হাজির হয় বোবা ভগবানের মন্দিরে মন্দিরে! বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে আকণ্ঠ ডুবে থাকা রিপু তাড়িত ভারসাম্যহীন বিশৃঙ্খল উচ্শৃঙ্খল গণ্ডিস্বার্থী মানুষ আবার মানবতার কথা বলে, বলে মানুষের বাঁচার কথা, বেড়ে ওঠার কথা, সাম্যের কথা! অসহায় গরীব দুর্বল মানুষের দুঃখ, ব্যথা, কষ্ট এদের ক্ষমতা দখলের আধার, রোজগারের উপকরণ! অপ্রিয় হ'লেও এ সত্য, মহাসত্য! মানুষের ইতিহাসে যখনই মানুষের অস্তিত্বের সংকট দেখা দিয়েছে, মানুষ কষ্ট, যন্ত্রণা পেয়েছে ও পায় স্বাধীন সুজলং সুফলং শস্যং শ্যমলং দেশে জন্মেও তখন বোঝা যায় সেই দেশের মাথায় কেমন মানুষ আছে বসে, যে আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে! তখন মনে পড়ে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের কথা:
ইষ্ট নাই নেতা যেই
যমের দালাল কিন্তু সেই।
গণ্ডিস্বার্থী হবে যে
নকল নেতা জানিস সে।
লোক পূরণ উপেক্ষি যে
গণ্ডিস্বার্থী ধরে,
শিষ্ট নেতা নয়কো সে-জন
নকল হয়েই মরে।
মানুষকে সইতে নারে
যে-জন তা'দের বয় না,
লাখ মোড়লি ঝাঁকুক না সে
নেতা তা'রে কয় না।
এ তো গেলো শাসকের কথা। কিন্তু এই শাসকই বা এমনতর জনগণ আবার যখন প্রকৃতির মারের কাছে দিশেহারা হ'য়ে সব হারিয়ে পাগলের মত মাথা নিচু ক'রে সেই প্রকৃতির কাছে অর্থাৎ স্রষ্টার দ্বারস্থ হয় নিজের লাজ লজ্জা, অহংকার, জ্ঞান-বিজ্ঞানকে পিছনে রেখে তখন সেই অবস্থা দেখলে মনে হয় মানুষ কত স্বার্থপর, ধান্দাবাজ! আর এই অবস্থা তখনই হয় যখন দুর্দশাতে কাবু হয় মানুষ। তাই এই প্রসঙ্গেও ঠাকুর বললেন,
দুর্দশাতে কাবু যখন বৃত্তিও কাবু তা'য়,
বাঁচার টানে মানুষ তখন বিধির পথে ধায়।৫৯
আবার যখন বিধির পথে অর্থাৎ নিয়ম শৃঙ্খলার পথে চলতে চলতে চিত্ত শক্তিশালী হ'য়ে ওঠে তখন আবার যে কে সেই কুত্তার ল্যাজে পরিণত হয় মানুষ। তাই এই অবস্থা সম্পর্কে ঠাকুর বললেন,
বিধির পথে তুষ্টি পেয়ে চিত্ত সবল হ'লে
বৃত্তি-ধান্দার স্বার্থ নিয়ে আবার ছুটে চলে।৫৯
আর এইভাবে চলতে চলতে আল্টিমেটলি ধ্বংসের মুখে চলে যায়। তাই ঠাকুর বললেন,
এমনি ক'রে ওঠা-পড়ায় মরণ মুখে ধায়,
ইষ্ট-উৎসর্জ্জনে কিন্তু সবই পাল্টে যায়।৫৯
এর মধ্যেও তিনি আশার আলো দেখিয়েছেন। মানুষ যদি ইষ্ট অর্থাৎ মঙ্গলময় ঈশ্বরের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে, নিজের সব কিছু ইষ্টের সেবায় দান করে তাহ'লে সমস্ত কিছু পরিবর্তন হ'য়ে যায়! যা কিছু জীবন বিধ্বংসী সব জীবন গড়ার উপকরণ হ'য়ে যায়!
আজ যখন দেশ সর্বনাশের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে তখন রাষ্ট্রধর্ম্ম যদি পালন না হয়, রাষ্ট্রের শাসন দন্ড যদি শিথিল হাতে ধরা থাকে তখন লোকশাসন তার পক্ষে অসম্ভব হ'য়ে ওঠে। তখন সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া ভুল হ'য়ে যায়। তাই শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন,
রাষ্ট্রশাসনদন্ড দেশের চললে শিথিল পায়,
শিষ্ট দলি' অজ্ঞ বেকুব লোকশাসনে ধায়।৪১
আজ যখন মৃত্যু শিয়রে হানা দিয়েছে তখনও মানুষ সমস্ত কিছুকে হালকাভাবে নিচ্ছে, কোনও কিছুরই গুরুত্ব অনুধাবন করার চেষ্টায় করছে না! ভাবনা চিন্তায় অদ্ভুত এক শিথিলতা! যেন মনে হচ্ছে জ্যান্ত মরা মানুষ! আবার আন্দোলনের নামে সীমাহীন নিদারুণ উচ্শৃঙ্খলা দেশের মাটিতে হ'য়ে চলেছে! হ'য়ে চলেছিল স্বাধীনতার নামে শাহীনবাগে, পার্ক স্ট্রিটে। আর সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছিলো দেশ ও রাজ্য নেতারা! অবাক লাগে এই ভয়ঙ্কর ছোঁয়াচে রোগকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে স্বাধীনতার নামে একশ্রেণীর উচ্শৃঙ্খল আন্দোলনকারী সংকীর্ণ গন্ডিস্বার্থীর ভালোর নামে নিজেদের রাজ প্রতিষ্ঠার নাকি ডাক দিয়ে চলছিল! আর তা চুপচাপ দেখছিল রাজ্য ও দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা, প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এই জন্মমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে! মনে পড়ে গেল ঠাকুরের সাবধান বাণী:
অবাধ ভালো করতে পারাই স্বাধীনতা কয়,
উচ্শৃঙ্খলের প্রশ্রয় পাওয়া স্বরাজ কিন্তু নয়।২৭
এরা নাকি এই ভয়ঙ্কর অবধারিত মৃত্যুর সময় দেশের সেবা করছে! এই প্রসঙ্গে ঠাকুর বললেন,
দেশের সেবার ধুয়ো ধ'রে জানিস কি যে করলি তা',
কী পেতে কী করতে হয় আছে কি তার দর্শীতা?
যাই হ'ক এমনিভাবেই অনেক আগেই অনেক রকম ভাবে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সাবধান ক'রে দিয়ে গেছেন মানুষকে। কিন্তু মানুষ তা মানলো না আর দেশের নেতৃবৃন্দ তাঁকে দিল না দেশ গড়ার, মানুষ গড়ার শ্রেষ্ঠ কারিগরের স্বীকৃতি! তবুও আজ তাঁর কোটি কোটি অনুগামী সৎসঙ্গীরা তাঁর কাছে আকুল প্রার্থনা জানাচ্ছে, হে দয়াল! তুমি ছাড়া এই সর্বনাশের সময়ে আর কেউই নেই আমাদের বাঁচায়! তুমি আমাদের বাঁচাও দয়াল! তুমি আমাদের বাঁচাও!!
(লেখা ২৫শে মার্চ'২০২০)
No comments:
Post a Comment