রাজনীতি ক্ষেত্রে, ধর্ম ক্ষেত্রে, ক্রীড়া ক্ষেত্রে, শিক্ষা ক্ষেত্রে ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সবাই সবাই-এর দিকে আঙ্গুল তুলছি! এমনকি এই সৎসঙ্গ ক্ষেত্রেও সৎসঙ্গীরাও সবাই সবাইকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছি। নিজে কাঁচের ঘরে ব'সে অন্যের কাঁচের ঘরে ঢিল ছুঁড়লে কি হ'তে পারে তা সহজেই অনুমেয়। ঠিক তেমনি নিজেকে কোন কাঠগড়ায় দাঁড় করায় তার ঠিক নেই অন্যকে তাদের কৃত কর্মের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছি!
অন্যদের ছেড়ে দিয়ে বিশেষ ক'রে একজন সৎসঙ্গী হিসেবে নিজের ক্ষেত্রে যদি এই আলোচনাকে তুলে ধরি তাহ'লে নিজেকে নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, ঠাকুর কি তাই চেয়েছিলেন নাকি? ঠাকুর কি তাঁর সমগ্র জীবনে যে হাজার হাজার বাণী দিয়েছেন সেই বাণীর কোথাও, বিভিন্ন গ্রন্থে অজস্র বিভিন্ন বিষয়ের যে কথোপকথন ধরা আছে সেই কথোপকথনের কোথাও আছে নাকি এমন কোনও দৃষ্টান্ত যা কিনা চালুনির স্বভাব আয়ত্তের কথা বলে? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি,
প্রকাশ! যখন তুমি ঠাকুরের কথা বলো তখন নিজে তুমি তা আচরণ করো তো?
যখন তুমি গুরুভাইবোনেদের সংস্পর্শে আসো তখন তুমি নিজে শরীরে-মনে-চরিত্রে, কথায়-আচরণে পরিশুদ্ধ থাকো তো?
যখন তুমি ঠাকুরের কথা বলো তখন তা ঠাকুরের কথা বলা হয় তো নাকি নিজের কথা বলা হয়?
যখন তুমি ঠাকুরের কথা বলো তখন বলাগুলি ঠাকুরের বলা তা স্বীকার করো তো?
যখন তুমি মন্দিরে, জনসভায়, সৎসঙ্গে বিচরণ করো তখন তোমার মুখের ভাষা, তোমার বডি ল্যাংগুয়েজ বিনয় সরলতা ও শালীনতার মোড়কে আবৃত থাকে তো?
যখন তুমি মঞ্চে ঠাকুরের কথা বলো তখন কথা শেষে নীচে নেমে আসার পরে মঞ্চ থেকে, মানুষ থেকে দূরে সরে যাও তো? নাকি বাহবা পাওয়ার আশায় মঞ্চের আশেপাশে মানুষের মাঝে ঘুরঘুর করো? নিজেই ভক্তমণ্ডলী মাঝে ঠাকুর সেজে বসো? কে কতটা তোমার কথায় অনুপ্রাণিত হ'য়ে ঠাকুর ভাবে ভাবিত হ'লো, ঠাকুরকে গ্রহণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ হ'লো সেটা না দেখে, তোয়াক্কা না ক'রে নিজেই প্রণাম, প্রণামী, প্রসাদ (p3) পাওয়ার লোভে ঠাকুর সেজে বসো না তো?
ঠাকুরের কথা বলার আগে ঠাকুরের জীবন, ঠাকুরের দর্শন, ঠাকুরের মিশন, ঠাকুরের গ্রন্থ ইত্যাদি জেনে, পড়ে, বুঝে, উপলব্ধি ক'রে বলো তো? অন্তত জানার, পড়ার, বোঝার, উপলব্ধি করার চেষ্টা করো তো?
ঠাকুরের বক্তা সাজো না ভক্ত হও কোনটা?
যখন তুমি কাউকে কথা দাও কথা রাখো তো?
যখন তোমার পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনও অসহায় মানুষকে তার সমস্যার সাহায্যের জন্য তোমার কাছে পাঠানো হয় ঠাকুরবাড়ী থেকে অর্থাৎ আচার্যদেব বা বাবাইদাদা বা অন্য কোনও পূজনীয় দাদাদের মাধ্যমে তখন সেই অসহায় ব্যক্তির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দাও তো? নাকি বিরক্ত হও? নাকি নামমাত্র বুড়ি ছোঁয়া দায়ছাড়া গোছের দায়িত্ব পালন ক'রে ঘাড় থেকে বোঝা নাবিয়ে তাকে মাঝ রাস্তায় ছেড়ে দাও? পরে খবর নাও তার? মনিটরিং করো? আর তারপরে মঞ্চে গলা ফাটাও ঠাকুরের নামে জ্ঞানের ঘন্টি বাজিয়ে দরদী কন্ঠে?
যখন তুমি ঠাকুরের কাজে নিমগ্ন থাকো তখন তুমি ছোটোকে বড় আর বড়কে আরো বড় করো তো?
বড়কে ছোটো আর ছোটোকে আরও ছোটো ক'রে লাথি মেরে পাতালে ঢুকিয়ে দাও না তো?
যখন তুমি ঠাকুরের সাদা পোশাকের আবরণে নিজেকে ঢেকে রাখো তখন শরীরে-মনে, হাবেভাবে গুরুভাইবোনেদের কাছে ঠাকুর সেজে যাও না তো?
যখন তুমি তোমার চারপাশে মানুষের মাঝে ঠাকুর জগতে থাকো তখন ঠাকুর সম্পর্কে যা বলো তা আচরণে নিজে করো তো? নাকি তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে মিথ্যে আমেজের সুরা পান করো?
যখন তুমি কোন লেখা লেখো তখন লেখার মধ্যে ঠাকুরের বলা, ঠাকুরের মত, ঠাকুরের কথা, ঠাকুরের ভাবকে ঠাকুরের ব'লে লেখার মধ্যে স্বীকৃতি দাও তো?
লেখার মধ্যে অন্যের লেখা, অন্যের বক্তব্যকে তুলে ধরার সময় লেখার মধ্যে ইনভার্টেড কমা দাও তো? নিজেকে মিথ্যে পন্ডিত সাজাবার ঘৃণ্য প্রয়াসে চালাকির আশ্রয় নাও না তো? লেখকের নাম তুলে ধরোতো? তুলে ধরলেও তুলে ধরার মধ্যে ইচ্ছাকৃত কৌশলী পদক্ষেপ থাকে না তো যাতে পাঠক বুঝতে না পারে? ব্যাপারটা সাপও মরলো লাঠিও ভাংলো না এমন হয় না তো?
তোমার আচরণে, তোমার কথায় কেউ ব্যথা বা অপমানিত বোধ করে না তো?
যখন তুমি ঠাকুরের কাজ নিয়ে থাকো তুমি নিজের হাতে কাজ ক'রে অন্যকে করাও তো? নাকি জমিদার সেজে শুধু হুকুম চালাও?
মন্দিরের হর্তাকর্তা সেজে মন্দিরকে পৈতৃক সম্পত্তি ভেবে সাধারণ গুরুভাইবোনেদের উপর ছড়ি ঘোরাও না তো?
কেউ তোমার জন্য কিছু করলে তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকো তো? ষোলো আনি ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করো তো? অকৃতজ্ঞ বেঈমান নেমকহারাম হও না তো?
প্রকাশ! তুমি সৎসঙ্গী! সৎসঙ্গ ও সৎসঙ্গী কথার মানে জানো তো? আর তা নিজের ওপর, নিজের আচরণে, কথায় বার্তায় প্রয়োগ করো তো? মিথ্যে ক্ষমতা দখলের লোভে অন্য সৎসঙ্গীর সঙ্গে অসৎ সঙ্গীর মত আচরণ করো না তো? নিজে ইষ্টভৃতি করো তো? অন্যকে করতে উৎসাহিত করো তো? অন্যে করছে কিনা তা খোঁজ নাও তো? নিজে নামধ্যান করোতো? অন্যকে করতে বলো তো? পাড়াপ্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখো তো? নিজে কোনও অসৎ কাজ করো না তো? অসৎ কথা বলো না তো? অসৎ কাজে প্রশ্রয় বা উৎসাহ দাও না তো? নেগেটিভ চিন্তা, নেগেটিভ আলোচনাকে প্রশ্রয় বা উৎসাহ দাও না তো? কাউকে ঠকাও না তো? কারও বিরুদ্ধে কুৎসা করো না তো? কাউকে গালি দাও না তো? তোমার কারণে কারও সামান্যতম ক্ষতি হয় এমন কোনও পদক্ষেপ নাও না তো?
প্রকাশ! তুমি তোমার পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল তো? স্ত্রী-পুত্র-কন্যা, বাবা-মা, ভাইবোন পরিবারের সবার প্রতি সহানুভূতিশীল তো? সবার জন্য ঠাকুরের কাছে মঙ্গল কামনা করো তো? তোমার প্রতিবেশী, তোমার গুরুভাইবোন, তোমার বন্ধুবান্ধব, পরিচিত-অপরিচিত সবার প্রতি কিছু করতে পারো আর না পারো প্রয়োজনের সময় অন্তত সহানুভূতিটুকু দেখাও তো?
প্রকাশ! ঠাকুর ব্যথা পায় এমন কোনও কাজ, এমন কোনও আচরণ, এমন কোনও চিন্তা, এমন কোনও ভাবনা করো না তো? এমন কোনও কথা বলো না তো? এমন কোনও পদক্ষেপ নাও না তো? নিজে একশোভাগ ঠিক থেকে ঠাকুর বিরোধীদের প্রতি প্রয়োজনে কঠোর হও তো? কঠোর হ'লেও পুনরায় তাদের প্রতি প্রয়োজনে কোমল হ'তে দ্বিধা নেই তো?
শেষ কথা বলি প্রকাশ! ঠাকুরের কাজ করতে গিয়ে ঠাকুরের মন্দির, ঠাকুরের গাড়ি, ঠাকুরের সম্পত্তিতে ভোগ বিলাসিতায় ডুবে যাও না তো? ঠাকুরের টাকাপয়সা সংক্রান্ত বিষয়ে পরিচ্ছন্ন থাকো তো? স্বচ্ছতা মেইনটেন করো তো?
প্রকাশ! জীবন দু'দিনের! কাল সকাল কেমন যাবে কেউ জানে না! কিছুই নিয়ে যেতে পারবে না। খালি হাতে এসেছিলে খালি হাতেই ফিরে যেতে হবে সব পিছনে ফেলে রেখে তাই সাধু সাবধান! এই অমূল্য জীবন চলে গেলে আর দয়ালের কাজ করার সুযোগ পাবে না। আর আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদার নির্মম অপ্রিয় সত্য কথাটা মনে রেখো প্রকাশ!
মনে রেখোঃ "শেষের সেদিন ভয়ংকর! তোর খেয়াতে মাঝিই যে নেই শেষের সেদিন ভয়ংকর।"
( লেখা ৬ই মার্চ'২০২১)
No comments:
Post a Comment