উদ্দীপনবাবু, আপনার লেখা পড়লাম। পড়ে বুঝলাম আপনার বাবা, মা-র দেওয়া নাম যথার্থই সার্থক হয়েছে। আপনি আপনার জেলাসির উদ্দীপনাকে আর ঠেকিয়ে রাখতে না পেরে লেখার শুরুতেই প্রমাণ করেছেন আপনি কারও উত্থান, সুখ্যাতি সহ্য করতে পারেন না। বিবেকানন্দের উত্থানে যে আপনার গাত্রদাহ হয় আর সেই দাহকে যে আপনি বাঙালি জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন সেটা আপনার তথ্যভিত্তিক আলোকপাতের অজুহাতে আপনার লেখার মধ্যে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। বিবেকানন্দের শিকাগো ধর্ম মহাসভার বক্তৃতার প্রচারকে আপনার কানে বেসুরো ও শ্রুতিকটু লেগেছে আর আপনার সেই বেসুরো কানকে সমগ্র বাঙালির কান বানিয়ে দিতে চাওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করেছেন! কি অদ্ভুত বিকৃত মানসিকতা! আর রামকৃষ্ণের প্রতি এমনি জ্বালা যে ‘রামকৃষ্ণ মিশন’ প্রতিষ্ঠানকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য দৃষ্টিতে দেখেছেন। যে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আপনি সেই প্রতিষ্ঠানকেই কটাক্ষ করেছেন!সেই প্রতিষ্ঠানের প্রাণপুরুষ, সেই প্রতিষ্ঠানের প্রাণপুরুষের অতি প্রিয়জনের চরিত্র নিয়ে নির্মম বলাৎকার করতে বিবেক এতটুকু কেঁপে ওঠেনি! এটাকে কি বলে? যে পাতে খায় সেই পাতেই হাগে!? ভয়ংকর হেগো চরিত্র! অভিধানের ‘অকৃতজ্ঞ আর বেইমান’ শব্দের জ্বলন্ত উদাহরণ শরদিন্দু উদ্দীপন!
আপনার মনে হয়েছে দেওঘরের রামকৃষ্ণ মিশনের লাইব্রেরিতে বিবেকানন্দের উপর যে বইগুলি রয়েছে সেগুলি সব ভেজাল। আর সেই ভেজাল বইগুলির উপর রিসার্চ ক’রে আপনি রামকৃষ্ণ আর বিবেকানন্দকে বলাৎকার করতে বাপের বেটার মত বুক টানটান ক’রে ময়দানে নেবে পড়লেন হৈ হৈ করতে করতে। আপনাকে হ্যাটস অফ! আপনাকে আমি নিশ্চিত বলতে পারি আপনি যাদবপুর বা অন্য যে কোনো দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভেজাল বিশেষজ্ঞের মোটা টাকার চাকরী পেয়ে যেতে পারেন। চেষ্টা ক’রে দেখতে পারেন। আচ্ছা আপনি কি শূদ্র? ব্রাহ্মণ্যবাদের উপর এত ক্ষিপ্ত কেন? আচ্ছা ঠিক ক'রে ভেবে বলুন তো কোনও সত্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কি কোনও চেষ্টা করতে হয়? সত্য তো চিরকাল সত্য! তাকে আবার প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করতে হয় না-কি? বেদান্ত দর্শন এতই ঠুনকো না-কি যে তার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বিবেকানন্দকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখাতে হবে? আর পুনঃ প্রতিষ্ঠার কথা ওঠে কখন? এটাকি কোনও লুপ্তপ্রায় কোনও প্রজাতি না-কি যে তাকে নতুন ক’রে ব্রিডিং করাতে হবে? আর তাছাড়া বিবেকানন্দতো দূরের কথা স্বয়ং রামকৃষ্ণও মিথ্যেকে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। ওহো ভুলেই গেছিলাম যে আপনারা রামকৃষ্ণকেও ছেড়ে কথা বলেন না। যাই হ’ক বেদান্ত দর্শনের মধ্যে যদি জীবন বৃদ্ধির কোনও মালমশালা না থাকে, বেদান্ত দর্শন যদি ফাঁপা দর্শন হয় তাহ’লে উদ্দীপনবাবু তাকে শত চেষ্টা করলেই কি তাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায়? না-কি তার কোনও গ্রহণযোগ্যতা থাকে? এটা তো একটা বাচ্চা ছেলেও বোঝে আর আপনার মত বেদবিৎ বোঝেন না? এটা এমনকি ব্যাপার যে তথ্য দিয়ে আপনার আলোকপাত করতে হবে? জীবনের উদ্দীপনাকে এভাবে নষ্ট করছেন কেন উদ্দীপনবাবু? আর আপনি আলোকপাত করলেই বা কে আপনার কথা নিচ্ছে সেটাও ভেবে দেখা বুদ্ধিমানের কাজ নয় কি? না-কি আপনি সেই সস্তা পথ অবলম্বন করেছেন জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার? সমাজের শ্রদার্হ ব্যক্তির চরিত্র হননের মাধ্যমে ‘বিতর্কিত চরিত্র’ হিসাবে নিজেকে তুলে ধ’রে সমাজে রাতারাতি প্রতিষ্ঠা পেতে চান? এটা নিশ্চয়ই জানা আছে, ‘সস্তার তিন অবস্থা’। তিনটে অবস্থা কি কি নিশ্চয়ই জানা আছে? তাহ’লে সাধু সাবধান!
আপনি লিখেছেন ১৮৮১ সালে নরেন্দ্রনাথ রামকৃষ্ণের খোঁজ পান এবং রামকৃষ্ণের মধ্যে জীবনের অন্তিম গতি ও মুক্তির পথ খুঁজে পান। অর্থাৎ আপনি বলতে চেয়েছেন বিবেকানন্দ ফরাসী বিপ্লব, মন্তেস্কুর “L’Esprit des lois”, রুশোর “Social Contact” ভলতেয়রের “Doctrine of Enlightened” কার্ল মার্ক্স-এর “Das Kapital” (1859) চার্লস ডারউইনের “Evolutinism” এবং “Origin of Species”(1871-1872), হারবার্ট স্পেনসারের বিবর্তনবাদ এবং “Education” ইত্যাদি ইত্যাদি যুগান্তকারী চেতনাকে, চেতনা জাগরণকারী মহাত্মাদের বাদ দিয়ে এক অখ্যাত পাগল নিরক্ষরের মধ্যে জীবনের গতি ও মুক্তি খুঁজে পান। অতএব আপনি যেটা আপনার অজ্ঞাতেই বলতে চেয়েছেন তা’ হ’ল ‘রতনে রতন চেনে’। গোটা পৃথিবী জুড়ে যখন নবজাগরণের ঢেউ আছড়ে পড়ছে তখন তাকে বাদ দিয়ে বিবেকানন্দ অধ্যাত্মবাদের যে পথ বেছে নিলেন তাকে আপনি মেনে নিতে পারেননি। মেনে নিতে পারেননি তার কারণ কি উদ্দীপনবাবু? আমি আপনার লেখা পড়ে যা বুঝলাম তা’ হ’ল সেই বাঙ্গালীর চিরকালের রোগ ‘পরকীয়া প্রেম’! পরকীয়া প্রেমে এত মত্ত যে সাপকে দড়ি ব’লে গলায় পেঁচিয়ে নিয়েছেন। পরিণতিতে নিশ্চিত যা হবার তাই হবে; অতীতে হয়েছেও। এত জানেন আর পরকীয়া প্রেমের পরিণতি সারা বিশ্বে ছেড়ে দিন আপনার পশ্চিমবঙ্গে তথা ভারতে কি হাল হয়েছে জানেন না? কাউকে কিছু করতে বা বলতে হবে না উদ্দিপনবাবু। আপনার ক্ষেত্রেও তাই হবে। শেষের ভয়ংকর সেদিনের অপেক্ষা করুন। শুধু Wait & See! নিজের মধ্যে থেকেই একদিন উত্তর পেয়ে যাবেন।
ফরাসী বিপ্লব থেকে প্রাক বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত নবজাগরণের সময় বলেছেন। সেই নবজাগরণ কি দিয়েছে মানুষকে? বিজ্ঞানের গবেষণা মানুষের বুদ্ধিকে এমনই ক্ষুরধার ক’রে তুলেছিল যে রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, পুঁজিবাদ চিরতরে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হ’য়ে গেছে ডাইনোসরের মত; তাই না উদ্দীপনবাবু? পুরোহিততন্ত্রের ধ্বংস হওয়ার কথা বলেছেন। আপনার কথামত হরিচাঁদের যোগ্য সন্তান গুরুচাঁদের নেতৃত্বে যে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল সেই মতুয়া আন্দোলন পুরোহিততন্ত্র থেকে মুক্ত ছিল তো? না-কি এখনও আছে? গির্জাগুলি অজ্ঞতার আঁতুড় ঘর ছিল ব’লে আপনার লেখায় উল্লেখ করেছেন তো সেই আঁতুড় ঘরগুলি কি সেই সময়ের ইউরোপের গণআন্দোলনের ঢেউ-এ ভেসে গেছিল চিরতরে না-কি এখনও বহাল তবিয়তে বিদ্যমান? আপনি আমেরিকার ‘মে বিপ্লব’-এর কথা বলেছেন; তো সারা পৃথিবীতে ‘মে বিপ্লব’-এর বর্তমান চিত্র কি উদ্দীপনবাবু? কি উত্তর এখন? কেন এমন হ’ল বা হয়? তাহ'লে বিবেকানন্দ এই সব কিছুর মধ্যে সত্য দেখতে, সত্যকে খুঁজে নিতে ভুল করেছিল কি?
আপনি লিখেছেন উপরে বর্ণিত মহান ব্যক্তিদের বিষয়গুলিকে বিবেকানন্দ অগ্রাহ্য করেছিলেন। ব্রাহ্মণ্য ধর্ম অর্থাৎ অধ্যাত্মবাদের মধ্যেই তিনি মোক্ষ খুঁজে পেয়েছিলেন। আচ্ছা উদ্দীপনবাবু আপনি আমায় বলুন তো আপনি যে মানুষের সামাজিক-রাজনৈতিক সমতা, স্বতন্ত্রতা ও ভ্রাতৃত্বের সংগ্রামের কথা বলেছেন-----যে সংগ্রাম থেকে বিবেকানন্দ মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন............ সেই সংগ্রাম আজকের মানুষকে কি দিয়েছে? সামাজিক-রাজনৈতিক সমতা পেয়েছে মানুষ? কিসের স্বতন্ত্রতার কথা বলতে চেয়েছেন? পেয়েছে মানুষ? আপনি পেয়েছেন? ভ্রাতৃত্বের সংগ্রামের কথা বলেছেন আপনি আর বিবেকানন্দকে নীচা দেখাবার, টেনে নীচে নামাবার ঘৃণ্য নীচ খেলায় মেতেছেন আপনি! এই কি আপনার ভ্রাতৃত্ব বোধ জাগাবার উন্নত মানসিকতার নমুনা? এটাকে কোন সংস্কৃতি বলে? ‘বড়কে ছোটো করো, আর ছোটোকে আরও ছোটো ক’রে লাথি মেরে পাতালে ঢুকিয়ে দাও’----এই সংস্কৃতির জনক কে? আপনি না-কি আপনার বা আপনাদের শ্রদ্ধেয় হরিচাঁদ মহারাজ জী না-কি হরিচাঁদজীর যোগ্য সন্তান শ্রদ্ধেয় গুরুচাঁদজী? আপনি ব্রাহ্মণ্যবাদ না মানুন চতুর্বর্ণ মানেন না? আপনি চতুর্বর্ণের কোন বর্ণের মধ্যে পড়েন? মনে হয় প্রকৃতির কোনও বর্ণের মধ্যেই পড়েন না। যাই হ’ক আপনি লিখেছেন সারা পৃথিবীর মানুষ যখন শৃঙ্খল ভাঙ্গার প্রতিজ্ঞা নিয়ে একটি স্বপ্নের প্রভাতের অপেক্ষা করছে তখন বিবেকানন্দ সন্ন্যাসের পথ বেছে নিয়েছেন। উদ্দীপনবাবু সারা পৃথিবীর মানুষ কিসের শৃঙ্খল ভাঙ্গার প্রতিজ্ঞা নিয়েছিল? শৃঙ্খল ভাঙ্গতে পেরেছিল কি? স্বপ্ন প্রভাত পেয়েছিল কি? না-কি অপেক্ষায় অপেক্ষায় দিন ,মাস, বছরের পর বছর কেটে গেছে? সন্ন্যাসের পথকে আপনি কি চোখে দেখেন? যারা শৃঙ্খল ভাঙ্গার প্রকৃত প্রতিজ্ঞা নিয়েছিল.................. সেই সময় তা’ ভুল হ’ক বা ঠিক হ’ক সে কথা না হয় তোলা রইল পরবর্তী গভীর আলোচনার জন্য..................তারাও কি প্রকারান্তরে সন্ন্যাসী ছিলেন না? সন্ন্যাসী মানে জানেন তো? আপনার লেখার পরতে পরতে বিবেকানন্দকে শুধু খোঁচা আর খোঁচা, খোঁচা আর খোঁচা!!!!!! প্রাণভরে ঝাল মিটিয়েছেন যেন মনে হচ্ছে বিবেকানন্দ ছিলেন আপনার জাত শত্রু!!!!!! আপনি লিখেছেন, বিবেকানন্দ ব্রাহ্মণদের প্রতিষ্ঠিত মঠ, মন্দিরে অবস্থান করেছিলেন বেদান্তবাদ প্রচারের জন্য; আর সেইজন্য একটি কমন্ডুলু, লাঠি এবং প্রিয় গ্রন্থ গীতা বগলে ক’রে দিগবিজয়ে বেড়িয়ে পড়েছিলেন। কি সুন্দর ‘কমন্ডুলু, লাঠি, প্রিয় গ্রন্থ, বগল, দিগবিজয়’ ইত্যাদি তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের বাক্যবাণ, অপূর্ব ব্যঙ্গোক্তি! যদি শিখতে হয়, ক্লাস নিতে হয় তো আপনাদের কাছেই নেওয়া উচিত যে কিভাবে একজনকে টেনে ভাগাড়ে এনে ফেলা যায়। কিন্তু যারা বুদ্ধিমান তারা জানে যে, যারা অন্যকে ভাগাড়ে টেনে নাবায় তারা ভাগাড়েরই বাসিন্দা, তারা ভাগাড়ের গুয়ের মধ্যেই বাস করে; তাদের বলে ‘গুয়ে দা’। তাই তারা ‘গুয়ে দা’ আখ্যা নেবার মত মুর্খামি করে না। আপনার জৈবীসংস্থিতির মধ্যে স্থিত বিশৃঙ্খল উদ্দীপনা আপনাকে বুদ্ধিমান হ’তে দিল না; আর দেবেও না কোনোদিন যদি জৈবীসংস্থিতির মধ্যে কোনও ভুল থেকে থাকে! উদ্দীপনবাবু আপনি এক কাজ করুন আপনার বা আপনাদের মতুয়া ধর্মকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কান ফাটানো............... যা কিনা কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গানোর আওয়াজকেও হার মানায়.................. শব্দ দূষণকে অগ্রাহ্য ক’রে, সমাজ, সভ্যতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঢাক, ঢোল, কাঁসা ইত্যাদি নানা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বিবেকানন্দের মত আপনিও দিগবিজয়ে বেড়িয়ে পড়তে পারেন। দেখুন না বিবেকানন্দের মত বিশ্বজয় হয় কিনা! বিশ্বজয় না হ’লেও বাংলার ছোটোখাটো একটা অঞ্চল জয় হ’লেও হ’তে পারে, আপনার ভাগ্যেও বিড়ালের মত শিকে ছিঁড়লেও ছিঁড়তে পারে। বিবেকের আনন্দ লাভ না হ’লেও মনের আনন্দ লাভ হ’য়ে 'মনানন্দ' হ’য়ে উঠলেও উঠতে পারবেন। সারা পৃথিবীতে আপনার ধর্মকে ছড়িয়ে দিয়ে রামকৃষ্ণ আর বিবেকানন্দকে যুক্তি তর্কের বিচারকাঠিতে বলাৎকার ক’রে শ্রদ্ধেয় হরিচাঁদজী, গুরুচাঁদজীকে সর্বশ্রেষ্টের আসনে বসাতে পারেন। দেখুন না, মহানন্দজী! ‘পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’।
বিবেকানন্দের সন্ন্যাস গ্রহণের কারণ হিসাবে আপনি আপনার অতি উর্বর মস্তিষ্ক প্রসূত কিছু মনগড়া তথ্য তুলে প্রমাণ করেছেন উত্তেজিত মস্তিষ্ক আর বৃথা আড়ম্বরযুক্ত কল্পনা থেকে ‘অশ্বডিম্ব’-ই প্রসব হয় আর তাই আপনি প্রসব করেছেন। আপনি ব্রাহ্মণ্যবাদীদের বিরুদ্ধাচরণ করতে রামমোহন ও বিদ্যাসগরের কথা তুলে ধরেছেন, তুলে ধরেছেন তাঁদের আন্দোলনের কথা। কিন্তু তুলে ধরেননি তারা জাতে কি ছিল। আপনি হয়তো জানেন না কিম্বা ভুলে গেছেন কিম্বা ছুপা রুস্তমের মত এড়িয়ে গেছেন যে এরাও কিন্তু কুলীন সম্ভ্রান্ত বংশীয় ব্রাহ্মণ ছিলেন। ব্রাহ্মণরা যদি কিছু বাড়াবাড়ি ক’রে থাকে তো ‘লোহে লোহে কো কাটতা হ্যায়’ তত্ত্বে এই সমাজসচেতন নিষ্ঠাবান প্রখর বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন ব্রাহ্মণরাই গোঁড়া, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, বই পড়ে বই হ’য়ে যাওয়া, বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে আপাদমস্তক ডুবে থাকা চালকলা সর্বস্ব ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে কঠোর হস্তে রুখে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করেছিলেন ব্রাহ্মণদের প্রকৃত পরিচয়, প্রকৃত চরিত্র কি।
আপনি লিখেছেন শ্রদ্ধেয় হরিচাঁদজীর চন্ডাল বিদ্রোহ, স্বাধিকার আন্দোলন, শ্রদ্ধেয় গুরুচাঁদজীর রাজনৈতিক আন্দোলন, মহাত্মা জ্যোতি রাও ফুলে ও মা সাবিত্রী ফুলের সামাজিক আন্দোলনে শূদ্র সমাজে এমন গণ জাগরণ ঘটে যে তার ভয়ে ব্রাহ্মণ সমাজ শূদ্র সমাজকে বাগে এনে হিন্দু ধর্মকে বাঁচানোর জন্য একজন জলচল শূদ্র নরেন্দ্রনাথকে স্বামী বিবেকানন্দ বানিয়ে ছেড়েছেন। আচ্ছা আপনি নরেন্দ্রনাথকে জলচল শূদ্র বললেন কেন? আপনি বা আপনার হরিচাঁদজী, গুরুচাঁদজী, জ্যোতি রাওজী ইত্যাদিরা কোন শূদ্র? এরা কি জলচল শূদ্র নয়? যদি না হয় কেন নয়? আর যদি হয় তাহ’লে কেন তাঁরা জলচল শূদ্র? শূদ্রদের মধ্যেও তাহ’লে উঁচুনিচু আছে? না-কি আপনি শূদ্রদের মধ্যে উঁচুনিচুর বিভাজনের রেখা টেনে দিলেন? কোন কোন গুণের অধিকারী হ’লে জলচল শূদ্র হওয়া যায়? এখানে তাহ’লে আপনি জাতিভেদ তো দূরের কথা স্বজাতিভেদ প্রথাকেও মেনে নিলেন ও স্বীকৃতি দিলেন? আর প্রকৃতিগত শূদ্র বর্ণের মধ্যেও বিভাজনের রেখা টেনে ‘জলচল শূদ্র’ বলার মধ্যে দিয়েও প্রমাণ দিলেন যে শূদ্রদের চরিত্রের মধ্যেও গুণ ও কর্ম অনুযায়ী উঁচুনিচু আছে তাই আপনি নিজের অজান্তেই স্বীকৃতি দিলেন গীতার সেই “চতুর্বর্ণং ময়া সৃষ্টং, গুণ কর্ম বিভাগশঃ” উক্তির অন্তর্নিহিত গভীর অর্থকে। এর থেকে কি প্রমাণ হয় শরদিন্দুবাবু? এর থেকে কি প্রমাণ হয় না আপনি নামে শরদিন্দু অর্থাৎ শরৎকালের অতিশয় সুন্দর ও উজ্জ্বল চাঁদ হওয়া সত্ত্বেও চাঁদের কলঙ্কের মত আপনি কাজে অতিশয় কুৎসিত ও অনুজ্জ্বল এক ভয়ংকর কলঙ্কিত চরিত্র?
আপনি রাজাগোপালাচারীর বক্তব্যকেও ব্যঙ্গার্থে আলোকপাত করেছেন। আর যদি ধরেই নিই যে শ্রদ্ধেয় রাজাগোপালাচারী ব্যঙ্গার্থেই ব’লেছেন, ‘বিবেকানন্দ হিন্দু ধর্মকে বাঁচিয়েছেন, ভারতকে বাঁচিয়েছেন’ তাহ’লে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে তিনি নিজের অজান্তেই ঠিক কথাটা ব’লে ফেলেছেন। আচ্ছা আপনি কোন ধর্মের? যদি হিন্দু ধর্মের না হন তাহ’লে কোন ধর্ম আপনার? আপনার ধর্ম কি শূদ্রদের নিয়ে তৈরী কোনও নূতন ধর্ম? আচ্ছা সমস্ত শূদ্ররা কি আপনাদের ধর্মে অংশগ্রহণ করেছেন? যদি না ক’রে থাকে তবে কেন করেনি? আপনারা, আপনাদের ধর্ম, আপনাদের ধর্ম প্রবর্তক মানবজাতির সমস্ত শূদ্রদের একচেটিয়া অভিভাবক? আপনি আপনার লেখায় প্রমাণ করতে চেয়েছেন নরেন্দ্রনাথ দত্তকে স্বামী বিবেকানন্দ বানানো হয়েছে চতুর্বর্ণ সমাজকে অটুট রাখার জন্য। আমায় একটা কথার উত্তর দেবেন? বিড়ালের পশ্চাতে ফুঁ দিয়ে ফুলিয়ে বিড়ালকে কি বাঘ বানানো যায় না-কি বাঘকে কখনো জোর ক’রে বিড়াল বানানো যায়? কারো পশ্চাতে ঠেকান দিয়ে কি জোর ক’রে কাউকে চিরদিন দাঁড় করিয়ে রাখা যায়? মিথ্যে দিয়ে কিছুকে বা কাউকে চিরন্তন সত্যতে পরিণত করা যায়? না-কি চিরন্তন সত্যকে মিথ্যের বেসাতি ক’রে চিরন্তন মিথ্যেতে পরিণত করা যায়? সার্কাসের জোকার চিরকাল জোকারই থেকে যায় উদ্দীপনবাবু; মুখে চোখে রঙ চং মেখে লোক হাঁসানোই তার কাজ! এটাই তার জীবনের ট্র্যাজেডি। আপনারও কি তাই হ’ল না?
যাই হ’ক আপনি নানা তথ্য ঘেঁটে প্রমাণ করতে চেয়েছেন বিবেকানন্দ শিকাগো ধর্মসভার অবৈধ প্রোডাক্ট আর তাঁর মার্কশিট তুলে ধ’রে প্রমাণ করতে মরিয়া হ’য়ে উঠেছেন যে বিবেকানন্দ অত্যন্ত নিম্নস্তরের নৈতিকতা বর্জিত সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন একটা মোটা দাগের চরিত্র মাত্র আর তাঁর ভাবমূর্তি একটা মিথ ছাড়া আর কিছু নয়। আপনি মার্কশিট তুলে ধ’রে কি প্রমাণ করতে চেয়েছেন উদ্দীপনবাবু? আপনি কি খবর রাখেন না রবীন্দ্রনাথের কোনও মার্কশিট ছিল না? শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মানিক বন্দোপাধ্যায়, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, দয়ানন্দ সরস্বতী (আপনি যার কথা লিখেছেন) ইত্যাদির ইত্যাদির মত আরও অ-নে-ক মনীষীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কি ছিল? আপনার মার্কশিট কি? আপনিও তো কম বড় সমাজ সংস্কারক নন? তাছাড়া আপনি কি আপনার জীবন দিয়ে প্রমাণ পাননি এখনও যে জীবনে স্কুলের লাস্ট বেঞ্চের ছেলে বা স্কুলের গণ্ডির মধ্যে না পৌছোতে পারা ছেলে তথাকথিত ফাস্ট বেঞ্চের ছেলেকে অ-নে-ক পিছনে ফেলে ভবিষ্যৎ জীবনের পরীক্ষায় সফলতার শিখরে পৌঁছে গেছে? রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দের উপরে এত রাগ আপনার, আপনাদের? কেন? একজন শূদ্র শূদ্র হ’য়ে একজন প্রকৃতির বিধানকে, বিধাতার বিধিকে ভেঙ্গে চুরমার করার ব্রত নিয়ে আবির্ভূত হওয়া, তথাকথিত উদারতার ভঙ্গী নিয়ে উদয় হওয়া শুদ্রনেতার মধ্যে জীবনের অন্তিম গতি ও মুক্তির পথ খুঁজে না পেয়ে অদ্ভুতভাবে একজন মূর্খ, পাগল ব্রাহ্মণের মধ্যে খুঁজে পেয়েছে মুক্তির পথ, সত্যের পথ; একজন ব্রাহ্মণের পদলেহণ করেছে আর ব্রাহ্মণ্যবাদ ও চতুর্বর্ণ-এর পক্ষে দাঁড়িয়েছে সেই জন্য আপনার মত শূদ্রদের এত রাগ? যাক গিয়ে, দেখুন এই শূদ্র সুড়সুড়ি দিয়ে সমস্ত শূদ্রজাতীকে আপনার, আপনাদের মত, পথ ও গুরুর পক্ষে আনতে পারেন কিনা! আপনি আপনার ভাষা, আপনার সম্বোধন, আপনার কথা বলার ভঙ্গী দিয়ে এটা প্রমাণ করেছেন যে শূদ্ররা যথার্থই অসভ্য, বর্বর, জংলী, অশিক্ষিত।
যাইহ’ক আমিও সেই সোনার দিনের অপেক্ষায় রইলাম যেদিন শূদ্ররা আপনাদের নেতৃত্বে গোটা বিশ্বে না হ’ক অন্তত বাংলাদেশে রাজ করবে!!!!!!!!!!!
( লেখা ২৭শে ফেব্রুয়ারী'২০১৭ )
No comments:
Post a Comment