Powered By Blogger

Monday, July 29, 2024

ইদ মুবারক।



EID MUBARAK! TO ALL MY FB FRNDZ.

KURBANI MEANS CLOSENESS, INTIMACY.
EID IS THE MESSENGER OF SACRIFICE.
YOUR DIVINE FACE IS THE REFLECTION
OF THAT HOLYNESS. BE VIGOROUS TO
MAINTAIN THE RAY OF LIGHT OF
INNOCENCE ON YOUR FACE & HAVE THE
GOD’S BLESSING ON THIS OCCASION.
PRAKASH।

আজি ঈদের এই খুশির দিনে
আনন্দধারা বহিছে ভুবনে!!!!!!
আকাশে বাতাসে বাজে তাঁর মধুর বাঁশরি!
এসো বন্ধু এসো, শোনো ঐ আহ্বান ধ্বনি!
ডাকিছে প্রভু তোমারে আমারে
এ বিশ্বমাঝে আছে যত প্রাণ, সবারে!!!!!
প্রাণের মাঝে বাজে ঐ সুরধ্বনি
শুনিতে কি পাওনা হে বন্ধু আমার?
কোথা সব!? ছুটে এসো, চলে এসো
বেলা বয়ে যায়, দিন যায় ঢলে
এসো, এসো সবে মিলি করি খেলা
আজি ঐ রাতুল চরণে!!!!
রাখি বেঁধে তাঁরে প্রেমের ডোরে
মোদের উজ্জ্বল হৃদয় কাননে!!!!!!!
আজি আনন্দধারা বহিছে ভুবনে!!!!
প্রকাশ।
( লেখা ২৯শে জুলাই, ২০১৪)
No photo description available.
All reactio

উপলব্ধিঃ মনকে বলি।

মনকে বলি। মন! কে বলতে পারে কোথায় কখন লখীন্দরের বাসর ঘরের চুলের সরু ছিদ্রের মত জীবন মাঝে ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে বৃত্তি-প্রবৃত্তি ছোবল দিয়ে সমস্ত মিষ্টি পবিত্র সম্পর্ক ছিন্ন ক'রে দেয়! শ্রীশ্রীবড়দা বলতেন, একটা ফুটোও ফুটো আর দশটা ফুটোও ফুটো। দশটা ফুটো দিয়ে তাড়াতাড়ি জল বেরিয়ে যাবে আর একটা দিয়ে আস্তে আস্তে বেরোবে কিন্তু আল্টিমেট বেরিয়ে যাবে!!!!! তাই মনকে বলি, সাধু! সাবধান!
( লেখা ২৯জুলাই, ২০২১ )

উপলব্ধিঃ কষ্ট হয়।

একটা কথা ভেবে কষ্ট হয় যে আমরা যারা কাপড় পড়ে আছি সেই কাপড় পড়াদের মধ্যে আমিও যে একজন সে কথা আমরা ভুলে যাই। আমরা যে সবাই সেই উলঙ্গ রাজার মত! নিজে যে উলঙ্গ তা দেখতে পাই না। অন্যকেই উলঙ্গ দেখি খালি! তাই ছোটোবেলা থেকে আজ এই বয়স পর্যন্ত ঠাকুরের একই কথার প্রতিধ্বনি শুনে এলাম ঠাকুরবাড়ির ঠাকুর পরবর্তী আত্মজদের মুখেঃ ঠাকুরের সঙ্গে তোমার চলনায় কোথায় কতটা মিল আর কতটা অমিল তা খুঁজে দেখো আর নিজেকে করো সংশোধন! আর তাই ক'রে চলি প্রতিনিয়ত। ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করি, আমি যেন সেই কাজে সফল হ'ই আর তোমার মনের মত হ'য়ে উঠি।

উপ্লব্ধিঃ মন চায়।

মন চায় সবাইকে নিয়ে জড়িয়ে ধ'রে থাকতে কিন্তু কেন জানি পারি না, কোথায় যেন কে বা কি যেন বাধা হ'য়ে সামনে এসে দাঁড়ায়। দূরত্ব রচনা ক'রে দেয়! রাগ হয়, কষ্ট হয় কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারি না। এখন স্পষ্ট দেখতে পাই মানুষ কিসে কেমন ক'রে আনন্দে সুস্থ হ'য়ে দীর্ঘ জীবন লাভ করতে পারে, বলতেও চেষ্টা করি কিন্তু পথ জানা থাকা সত্বেও বলতে গিয়েও কেন জানি গলায় কথা আটকে যায়। তাই প্রিয়জন চলে গেলে বা দূরে সরে গেলে বুকের ভেতরে দম বন্ধ হ'য়ে আসে মুখে বলতে পারি না তা। আমার কাছের দূরের প্রিয়জন তোমরা সবাই ভালো থেকো, মিলেমিশে থেকো, আনন্দে থেকো ছোট্ট দু'দিনের জন্য আসা এই পৃথিবীতে।

বর্তমান সময় (৪)

যা' তুমি জান না, যা তুমি বোঝো না
এমন বিষয়ে লোককে উপদেশ দিও।
বন্ধু সেজে, হিতাকাঙ্ক্ষী হয়ে, প্রেমিক সেজে
কাছের মানুষ হয়ে যাও আর প্রশংসার নামে,
স্তুতির নামে, বন্দনার ঢঙ্গে তাঁর বদনাম করো,
সর্বনাশ করো আর সাথী সেজে তাঁর মাথা খাও।
এটাই উন্নতির, প্রগতির প্রকৃষ্ট পথ।
কোনও কিছুর ভিতর সত্য দেখতে চেষ্টা ক'রো না
সত্য দেখা মানেই তাকে মেনে নেওয়ার প্রবণতার
জন্ম হওয়া আর তাই-ই উন্নতির অন্তরায়।
তৃষ্ণায় চেয়েছে জল; সেই জল গলা উচু ক'রে
পান করতে গিয়েছে কি পিছন থেকে দিও টেনে নলি,
যারে দিয়েছ জল হাতে তুলি!
কারও প্রশংসা বা স্তুতি করতে যেও না
তাহ'লে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হবে
শান্তিতে ঘুমোতে পারবে না।
প্রশংসা বা স্তুতি করতে হ'লে
খোসামদের ঢঙ্গে ক'রো যাতে তাকে
মই ক'রে তার মাথার উপরে উঠে যেতে পারো।
দান ক'রে প্রকাশ ক'রো
নইলে চিরদিন অপ্রকাশিতই থাকবে।
নিজের ঢাক নিজে না পেটালে কেউ পেটাবে না।
বোকার মতো অকারণ হেঁটে হেঁটে ম'রো না;
হেঁটে মরার চেয়ে ঘরে ব'সে থাকা
ও বিছানায় হেগে মরা অনেক ভালো।
অপরের মঙ্গল কামনা নিজ অমঙ্গলের প্রসুতি।
আর অন্যের হিত ডেকে আনে নিজের অহিত।
তাই সাধু সাবধান!
প্রবির অমৃত বচন শোনো দিয়া মন।
বর্তমান সময়ের দিনিলিপি করিলাম বর্ণন। ( লেখা ২৯শে জুলাই, ২০২৩)

চিঠিঃ সৎসঙ্গী গুরুভাইবোন,

একটা কথা বলি, যেখানে ঠাকুর ও ঠাকুর পরিবার বিরোধী, আচার্য ও আচার্যপরম্পরা বিরোধী যাই-ই দেখি, শুনি সে বিষয়ে ভালো ক'রে বুঝে নিয়ে, জেনে নিয়ে এসো মানুষের চোখ কান খুলে দাও, সত্যকে উন্মোচন ক;রে দাও সকলের কাছে কিন্তু কোনওরকম বিদ্বেষ মনে না রেখে। রুখে দাঁড়াও, তেজোদীপ্ত হও, প্রতিবাদে মুখর হও, সত্য বল। আমরা সবাই যেন তাই করি ও বলি। ঠাকুরের ওপর বিচারের ভার তুলে দেওয়ার অজুহাতকে হাতিয়ার ক'রে তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে হাতপা গুটিয়ে বসে না থাকি।

কিন্তু স্মরণে রাখি যেন দয়ালের কথা, সত্য বল কিন্তু সংহার এনো না। স্পষ্টভাষী হও কিন্তু মিষ্টভাষী হও। আর ক্রোধ নয় তেজ ছড়িয়ে দাও, তেজে জ্বলেপুড়ে খাক ক'রে দাও ঠাকুরবাড়ি বিরোধীতার ঘৃণ্য চক্রান্ত দিকে দিকে সারা বিশ্বজুড়ে। যে তেজে থাকবে বিনয়, দৃঢ়তা। কারণ ঠাকুর বললেন, তেজ মানে ক্রোধ নয়কো, বরং বিনয় সমন্বিত দৃঢ়তা।
খুব খুব ভালো ও আনন্দে থাকো। জয়গুরু।-
( লেখা ২৯শে জুলাই, ২০২৩)

প্রবন্ধঃ চরমে চরম প্রকাশ কল্কি।

সম্প্রতি কাজুদার বিতর্কিত ভিডিও-কে ঘিরে আমার প্রতি ছিল অনেকের সমর্থন, ভালোবাসা, ধন্যবাদ জ্ঞাপন। ঠিক তেমনি অনেক রকম পরামর্শ ছিল। পরামর্শের ছদ্মবেশে ছিল রাগ, বিরক্তি। পরামর্শের ছদ্মবেশে ছিল কাজুদার প্রতি সমর্থন আর আমার প্রতি অসহিষ্ণুতা। কেউ কেউ পক্ষে বিপক্ষের গোটা ঘটনাতে উদাসীন নিরপেক্ষ ও গুরুত্বহীন মানসিকতার বহির্প্রকাশ ঘটিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঠাকুর নিয়ে থাকতে। আর সেই সমস্ত পরামর্শগুলিকেই সামনে রেখে এই আর্টিকেল লেখা।

একজন বন্ধুর পরামর্শ ছিল 'ফেসবুকের মধ্যে ঝামেলায় না জড়ানোই ভালো'। তার সুপরামর্শ মেনে নিয়েও বলছি ফেসবুকের মধ্যে পরিকল্পিতভাবেই সৎসঙ্গ বিরোধী ও ঠাকুর পরিবার বিরোধী একটা গভীর চক্রান্ত বহুদিন ধ'রে যেভাবে নানা লেখা ও ভিডিওর মাধ্যমে ইনজেক্ট হয়ে চলেছে সাধারণ সৎসঙ্গী ও অ-সৎসঙ্গীদের মাঝে সেটা সুক্ষ্মভাবে ধরা খুব মুশকিল এবং এখনো তাতে অর্থাৎ এই অসুস্থ প্র্যাকটিস সম্পর্কে যদি ওয়াকিবহাল না হ'ই এবং সতর্ক ও সচেতন না হ'য়ে উঠি ভবিষ্যতে সেই চক্রান্ত আরও জটিল ও বিষাক্ত হ'য়ে গোটা সৎসঙ্গ সমাজ ও সৎসঙ্গীদের আরও বিষাক্ত ক'রে তুলে পচিয়ে দেবে।
যদিও আমাদের মাথায় আছেন শ্রীশ্রীঠাকুর। আর ঠাকুর সদা জাগ্রত এবং বিশ্বজুড়ে আমাদের সবাইকে তিনি দেখছেন ও গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন শ্রীশ্রীআচার্যদেবের মধ্যে দিয়ে। তাই আমাদের কোনও ভয় নেই কিন্তু আমাদের সচেতন সৎসঙ্গীদেরও একটা দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে।
সেই দায়িত্ব ও কর্তব্য মাথায় রেখেই আমার অনুভূতি ও উপলব্ধি তুলে ধরছি।
কোনও জিনিস গড়ে তোলা যেমন কঠিন, পরিশ্রমসাপেক্ষ, বিপদসংকুল তাকে রক্ষা করা ততোধিক হাজার লক্ষ কোটি গুণ কঠিন, ভয়ংকর কঠিন। আর এই রক্ষা করার ব্যাপারটা কতটা কষ্টের, কতটা যন্ত্রণার, কতটা জীবন সংশয়ের সেটা তারাই একমাত্র বোঝে যারা কোনও জিনিস নিজের হাতে গড়ে তোলে বা তুলেছে ও তুলছে। যেমন সব মায়েরায় বুঝতে পারে প্রায় ১১মাস ধ'রে নিজের শরীরের মধ্যে আর একটা শরীর ধারণ ও প্রসবকালীন গর্ভ যন্ত্রণার ব্যাপারটা, ঠিক তেমনি তাকে বুকের দুধ দিয়ে লালন পালন ক'রে বড় ক'রে তোলার পিছনে যে দীর্ঘ কষ্টকর যন্ত্রণাময় জার্ণি থাকে সেটা একমাত্র মায়েরাই বুঝতে পারে তা সে গরীব, বড়লোক, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, মুর্খ, বুদ্ধিমতী যে মা-ই হ'ক।

তাই বন্ধু, সৎসঙ্গ ও ঠাকুর বাড়ির বিরুদ্ধে এই ঘৃণ্য চক্রান্তের ট্রাডিশান আজ নয়, সেই যেদিন থেকে-------- শ্রীশ্রীঠাকুর দেহ রাখার পর থেকে শুধু নয়----- যখন ঠাকুরের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানের দেখভালের দায়দায়িত্ব একটু একটু ক'রে সমস্তটাই বড়দার কাঁধে এসে পড়ছিল সেইদিন থেকেই শুরু হয়েছিল এই চক্রান্তের জার্ণি। আর দিনদিন তা ভয়ংকর হ'য়ে উঠেছিল। তার পরিচয় আমরা যারা সতর্কতার সঙ্গে কিঞ্চিত খবর রাখি তারা জানি। আর আগামীতে তা কি ভয়াবহ কালবৈশাখীর রূপ নেবে তা ঠাকুর স্বয়ং জানেন আর জানেন ঈশ্বরকোটি পুরুষ শ্রীশ্রীআচার্যদেব ও সাধনার উচ্চমার্গে অবস্থানকারী সৎসঙ্গের সাধকগণ।

একটা কথা কি জানো বন্ধু, ঠাকুর যা যা ব'লে গেছেন, যে ভয়ংকর ভবিষ্যতের কথা ব'লে গেছেন, দিয়ে গেছেন বর্ণনা সেটা না জানাই ভালো। সেটা না জেনে জীবন কাটিয়ে দেওয়া ভালো। যারা জানে না তারা ভালোই আছে।

আর, জেনেও যদি কোনও এফেক্ট না হয় মনে তবে তো কথায় নেই। ধ'রে নিতে হবে হয় তারা শোধবোধহীন জড় পদার্থের মানুষ আর নয়তো উচ্চমার্গের সাধক পুরুষ।

আর যারা জানে যদি সেই জানার প্রতিক্রিয়া হয় মনে আর তার সমাধানে যদি কিছু করতে না পারে তাহ'লে তার যন্ত্রণা ক্যান্সারের শেষ স্টেজের যন্ত্রণার চেয়েও ভয়ংকর।

তাই, মনে হয়, 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করার কি হিমালয় পাহাড় সমান ভয়ংকর কষ্টকর, প্রাণান্তকর বোঝা দিয়ে গেছেন শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর আত্মজদের ওপর বংশপরম্পরায়, ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে ও মনুষ্যজাতীকে বাঁচাবার কি কঠিন দায় ও দায়িত্ব দিয়ে গেছেন শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর উত্তরসূরিদের কাঁধে সেটা একমাত্র তাঁরা জানেন আর জানে সে, প্রাণ বোঝে যার। বাড়ির খেয়ে বনের মোষ তাড়াবার যে রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত যন্ত্রণা সে যন্ত্রণা ভুক্তভোগী মাত্রেই জানে।
বন্ধুরা, একটু কল্পনার চোখ দিয়ে দেখো সেই দৃশ্যটা। আজকের যারা ইয়ং তারা দেখে যেতে পারবে স্বচক্ষে আগামীকে, আগামী আগুন পৃথিবীকে কিছুটা।

শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে ও শ্রীশ্রীঅবিনদাদাকে দেখে মনে হয় কি বিন্দাস আছেন তাঁরা। না তাঁরা বিন্দাস নেই, গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো ও বিছানো মখমলের বিছানার ওপরে বসে নেই, তাঁদের পায়ের তলা দিয়ে ব'য়ে যাচ্ছে আগ্নেয়গিরির গরম লাভা ও মাথার ওপর দিয়ে সমস্যার ঘন কুচকুচে কালো মেঘ। কতটা ঠাকুরময় হ'য়ে থাকলে, কতটা ইষ্টপ্রাণ হ'লে, কতটা জন্মগতভাবে উচ্চমার্গের ইশ্বরকোটি পুরুষের সোল হ'লে মাথার ওপরে ও পায়ের নীচে দিয়ে ব'য়ে যাওয়া ঘোর কলি যুগের উত্তপ্ত গরম বাতাসকে মোকাবিলা ক'রতে হবে সেটা বোঝা, তা অনুভব করা, সে সম্পর্কে জ্ঞান আমাদের মতো জীবকোটি সৎসঙ্গীদের, রাজনৈতিক দলের মতো উল্লাসে মত্ত হৈ হৈ করা লাগামছাড়া প্রবৃত্তিমুখর এক চক্ষু হরিণের দৃষ্টিতে পরিস্থিতি বিচারকারী সৎসঙ্গীদের বিষয় নয়।

শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন, " বিচারের ভার, শাস্তির ভার আপন হাতে নিতে যেও না; অন্তরের সহিত পরমপিতার উপর ন্যস্ত কর, ভাল হবে।"------আমরা এই বাণীকে সামনে রেখে বিচার করার, শাস্তি দেওয়ার যা কিছু করার ঠাকুর করবেন এই ভাব অন্তরে নিয়ে বিন্দাস সমস্ত কিছু, যে যেদিকে যা ইচ্ছা করছে সেই সবকিছু তাঁর কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে ভাবের ঘুঘু হ'য়ে তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে পরম ভক্ত সেজে বসে আছি। ইচ্ছামতো চ'লে বৃত্তি-প্রবৃত্তির লেজে পা না পড়ে এমন সন্তর্পনে ধর্মেও আছি আবার জিরাফেও আছি এবং এমন জেনেই হ'ক আর না-জেনেই হ'ক ভয়ংকর এক সর্বনাশা পথ বেছে নিয়েছি। মন্দিরে মন্দিরে, কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইষ্ট ও ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে যে আত্মপ্রতিষ্ঠার কর্মযজ্ঞ হ'য়ে চলেছে তার বিরুদ্ধে মিনিমাম ভদ্রভাবে হ'লেও শান্তভাবে প্রতিবাদ করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। মিষ্টভাষায় স্পষ্টবাদী হ'তে পর্যন্ত পারছি না। ঠাকুরের নানা বাণীকে ব্যবহার ক'রে অন্যায়কারীর অন্যায় কাজকে মুখ বুঝে সমর্থন করছি শুধু নয় যারা সীমা লঙ্ঘন না ক'রে ঠাকুরের দৃষ্টিতে কারও ভুল ধরিয়ে দিচ্ছে সেখানেও তাকে ঠাকুরের বাণী প্রয়োগ ক'রে থামিয়ে দিচ্ছি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই। যারা প্রতিবাদের ভাষার সীমা লঙ্ঘন করছে তাদের ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে কিন্তু যারা বৃহত্তর সার্বিক মঙ্গলের জন্য শালীনতার মাত্রা বজায় রেখেই মন্তব্য রেখেছে বা রাখছে তাদেরও আমরা থামিয়ে দিচ্ছি, মুখ বন্ধ ক'রে দিচ্ছি। ব্যাপারটা হচ্ছে আমি আমার বক্তব্যে ঠাকুরবাড়ির গায়ে কোথায় কালি লাগছে, কলঙ্কিত হচ্ছে ঠাকুর আত্মজরা, সেদিকে সতর্ক থাকার প্রয়োজন মনে করছি না কিন্তু ঠাকুরবাড়ির ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে লাগামছাড়া বক্তব্য পেশ ক'রে চলেছি সেটা দোষের না। তখন কেউ তাকে ঠাকুরের বাণীর কথা মতো গোপনেও বুঝিয়ে বলেনি ও সাবধান করেনি; বরং উল্লাসে মত্ত হয়েছে। কিন্তু যখন প্রতিবাদের ঝড় উঠছে চতুর্দিকে তখন ঝড়কে সামাল দিতে লাগামছাড়া বক্তার পক্ষ নিয়ে ঠাকুরের বাণী 'গোপনে বুঝিয়ে বলিস তারে' পরামর্শের বৃষ্টি হ'য়ে চলেছে। আবার কেউ কেউ প্রকাশ্যে বক্তার লাগামছাড়া বক্তব্যের পক্ষে দাঁড়িয়ে বক্তাকে যদি পারে থামাক, এই থামাবার চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসছে! অবাক কান্ড! আমিই যেখানে ঠাকুরের 'গোপনে বুঝিয়ে বলার কথা' বলছি সেখানে আমিই আবার সৎসঙ্গী হ'য়ে সৎসঙ্গীর বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হচ্ছি। ঠাকুর থেকে, আচার্য থেকে, ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের থেকে আমার কাছে কোনও কোনও সৎসঙ্গী এত মুখ্য, প্রধান হ'য়ে উঠছে যে তাকে কেন্দ্র ক'রে ব্যক্তিগত গ্রুপ বানিয়ে ফেলছি এবং সেই গ্রুপের মাধ্যমে সৎসঙ্গীরা [পরস্পর একে অপরকে আক্রমণ ক'রে বসছি, চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি রাজনৈতিক দলের মতো। ভুলে যাচ্ছি এটা এবারের ঘোর কলিযুগের জীবন্ত ঈশ্বরের প্রতিষ্ঠান, তাঁর সৃষ্টিকে রক্ষা করার ও এগিয়ে নিয়ে যাবার সোনার সৎসঙ্গীদের দল। এখানে কারও হুকুম, চ্যালেঞ্জ, কুৎসা, নিন্দা, গালাগালি, অপমান, অশ্রদ্ধা ও তথাকথিত ভালোমানুষি নিস্ক্রিয়তা, চালাকি ইত্যাদি ঠাকুর দর্শন বিরোধী ও বাঁচা-বাড়ার প্রতিকুল জীবন বিধ্বংসী ব্যবহার, কার্যকলাপের কোনও মাপ হবে না। কারণ শ্রীশ্রীঠাকুর নিজেই বলেছেন, "তুমি যা করছো বা ক'রে রেখেছো ভগবান তাই-ই গ্রাহ্য করবেন আর তার ফলও পাবে ঠিক তেমনি।"
আর, সমস্ত সাধারণ গুরুভাইবোনেরা সব দেখেশুনে 'আমার গাঁয়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতার ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে।
এছাড়া, দিব্যজীবনের পরিপন্থী প্রবৃত্তিমুখর জীবনের বিরুদ্ধে কিছু একটা লেখা বা বলা পছন্দ না হ'লেই বা মনের মতো না হ'লেই নিজের দিকে টেনে নিয়ে তার মন্তব্যকে 'রাফ এন্ড টাফ, এত রাগ ভালো নয়, সবাইকে নিয়ে চলতে হবে' ইত্যাদি নানাকথা শুনিয়ে কারও তেজকে ক্রোধ আখ্যা দিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিচ্ছি নিজেকে বিচারকের চেয়ারে বসিয়ে। একটা ভয়, একটা পিছুটান আমাদের গ্রাস ক'রে ফেলেছে ভালোমানুষির ছদ্মবেশে। কেউ কিছু বললেই তাকে 'কি দরকার এইসব ফালতু ব্যাপারে মাথা গলিয়ে? ঠাকুরবাড়ির হাতেই ছেড়ে দিন সব। ঠাকুর সব দেখছে। আসুন আমরা একটু নামধ্যান করি। একটু তাঁর গ্রন্থ পড়ি'--এমন অজস্র পরামর্শের তীর ছুঁড়ে দিচ্ছি তার দিকে। প্রয়োজন অনুযায়ী ভদ্র শালীনতাপূর্ণ মিষ্ট কঠিন কোমল মৃদু প্রতিবাদেরও যে প্রয়োজন আছে একজন 'সৎসঙ্গীর' ঠাকুর ও ঠাকুর পরিবারের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য ভাবমূর্তি নষ্টকারীর বিরুদ্ধে সেটাও ভক্তির আতিশয্যে ভুলে যাচ্ছি। অথচ ঠিক এইসময়েই মনে পড়ছে নামধ্যান করার ও গ্রন্থ পড়ার কথা ও হচ্ছে আহবান। নিশ্চয়ই নামধ্যান ও অধ্যায়ন-এর প্রয়োজন আছে এ কথা অনস্বীকার্য। কিন্তু আগে সংযত ভদ্র প্রতিবাদ পরে পরামর্শ। আর তাকে পরামর্শ যে সমস্যা সৃষ্টি করছে বা করেছে, যে সীমা লঙ্ঘন করছে প্রতিবাদের নামে আর যে সমস্যাকে সমর্থন করছে।

আর এই বিভেদের ফাঁক দিয়ে সিঁদ কেটে চলেছে সিঁদেল চোর গৃহকর্তার অর্থাৎ আমাদের সৎসঙ্গীদের অসতর্কতার সুযোগে আর ঘরে ঢুকে ফাঁক ক'রে দিচ্ছে ঘর।

কারও লেখা বা বক্তব্যের বিরুদ্ধে গঠনমূলক মন্তব্য করলেও সেটা সেই লেখকের বা বক্তার ভালো লাগছে না, নিজেকে শুধরে নিচ্ছে না; উপরন্তু তার ফেবারের লোকেরা তার পক্ষে দাঁড়িয়ে তার ভুলকে সমর্থন ক'রে ঠাকুর ও ঠাকুরের আত্মজদের থেকেও তাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলছে এবং প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ফেলছে। আর, সৎসঙ্গীরা নিজেদের মধ্যে অকারণ কলহে জড়িয়ে পড়ছে। ঠাকুর কি এমন সোনার সৎসঙ্গীর কথা বলেছিলেন না চেয়েছিলেন?

আর, তখন ভাবি, এইজন্যই এরকমই কোনও গোঁড়ামির জন্য ১৬শ শতকে বোধহয় ভয়ংকর কালাপাহাড়ের আবির্ভাব হয়েছিল। আবার কি আমরা কোনও কালাপাহাড়ের অপেক্ষায় আছি? যে প্রবল পরাক্রম কালাপাহাড় এসে শেষ ক'রে দেবে সবকিছু? ভবিষ্যৎ পৃথিবী কি কোনও কালাপাহাড়ের অপেক্ষা করছে শ্রীশ্রীঠাকুরের স্বপ্নপূরণের জন্য? তখন এই ধরণের ধর্মেও আছি ও জিরাফেও আছি সৎসঙ্গীদের অবস্থা হবে দুঃখময়।

আর তখনি মনে পড়ে গেল শ্রীশ্রীঠাকুরের কথোপকথন।
বিষ্ণুদা শ্রীশ্রীঠাকুরকে প্রশ্ন করছেন,
"ঠাকুর অনেকে তো সব বুঝেও চুপ ক'রে থাকেন?
প্রতিউত্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন,
"তাহ'লে দু'টি পথ আছে। হয়, বাঘ খাঁচা ভেঙে বেরুবে, নতুবা, সব বিলয় হ'য়ে যাবে। আর, বাঘ খাঁচা ভেঙে বেরোলে কল্কি অবতার না কি হয় তা বলা মুশকিল। চরমে চরম প্রকাশ কল্কি।"

আমরা কি সেদিকেই যাচ্ছি? ( ২৯শে জুলাই,২০২৩)

Thursday, July 25, 2024

বিচিত্রা ১৯

কেউ তোমায় বুঝবে না।
নিজের ভুলে সবারই তোমার মতো 
মাথার ঘায়ে কুত্তার অবস্থা। 
এ নির্ম্মম সত্য। তাই যদি বাঁচতে চাও 
খনো সময় আছে জীবন্ত ঈশ্বরের স্মরণ নাও 
আর তাঁর চলন পুজো করো।
দিব্যজীবন নাকি রিপুতাড়িত প্রবৃত্তিমুখর জীবন?
কোনটা চাও তোমার জন্য ও তোমার সন্তানের জন্য?
রিপুতাড়িত প্রবৃত্তিমুখর জীবন যদি চাও 
তবে আদর্শহীন জীবন বেঁচে নাও ও 
আকাশের ভগবান, বোবা ভগবানের 
প্রতি নিবেদিত প্রাণ হও।
আর, দিব্যজীবনের যদি অধিকারী হ'তে চাও
তাহ'লে জীবন্ত ঈশ্বরের চরণাশ্রিত হও ও
তাঁর চলন পুজোয় মগ্ন হও,,মাতাল হও। 
অর্থ-মান-যশ-সফলতা ও প্রতিষ্ঠা সব পাবে।

যত তাড়াতাড়ি বাবা-মায়েরা 
আদর্শকেন্দ্রিক দিব্যজীবনের 
প্রয়োজনীয়তা বুঝবে তত তাদের 
ন্তানদের ভবিষ্যৎ জীবন সুন্দর ও সুরক্ষিত থাকবে। 
দয়ালের চরণে আমার একান্ত প্রার্থনা 
ঐ সমস্ত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শিশুদের জন্য যে 
তাদের তুমি রক্ষা করো ও তাদের বাবামায়েদের 
বন্ধ চোখ খুলে দাও।
( লেখা ২৫শে জুলাই'২০২৩)























বিচিত্রা ১৮

বর্তমান সময়!
ভালো মানুষ সেজে থাকো ভালো মানুষ হ'য়ো না;
ভালো কথা মুখে ব'লো কিন্তু ভালো কাজ ক'রো না।
যে তোমার চোখ খুলে দিয়েছে প্রথমেই খোলা চোখে
তাকে মারো, মেরে উপরে উঠে যাও।
যে তোমার চোখ খুলে দিয়েছে
প্রথমেই তার চোখ উপড়ে নাও।
কারও চোখ খুলে দিয়েছো কি মরেছো!
খোলা চোখে প্রথমেই দেখবে সে
তুমি কি অপরাধ করেছো!!
কারও চোখ খুলে দিতে যেও না,
চোখ খুলে গেলেই তোমার চোখ খুবলে নেবে প্রথমেই।


যদি ভুল ক'রে থাকো বা ব'লে থাকো
তাহ'লে তাকে তৎক্ষণাৎ আরো ভুল দিয়ে চাপা দাও,
সাবধান! ভুল করতে যেন কখনো ভুল ক'রো না!
চোখে আঙ্গুল, মুখে আঙ্গুল, কানে আঙ্গুল মানে কি?
ভালো কিছু দেখো না, ভালো কিছু ব'লো না
আর ভালো কিছু শুনো না।


টাকা আপন মানুষ পর যত পারিস টাকা ধর!
চোখে মুখে অনুতাপ করো অন্তরে কিন্তু নয়।
সুযোগ পেলেই মারো দাঁও ক'রে নয়ছয়!
প্রসারণেই দুঃখ আর সংকোচেই সুখ!
প্রসারণে শুধু অপমান আর লাঞ্ছনা,
সংকোচে নেই কোনও লজ্জা,
নেই কোনও তথাকথিত দুখ।


বড়কে ছোটো করো আর ছোটোকে করো আরও ছোটো
ছোটো ক'রে লাথি মেরে দাও পাতালে ঢুকিয়ে।
আর এটাই হ'ক Motto, নীতিবাক্য।
প্রশংসা দিতে কৃপণ সাজো আর প্রশংসা নিতে হ্যাংলা হও।
সত্য ব'লো না, সত্য দেখো না, সত্য বলতে ও দেখতে যেও না,
কিন্তু সংহার এনো, সংহার আনতে ভুলে যেও না।


সৎ কথা মুখে বলো কিন্তু খবরদার ভেবো না,
অনুভব ক'রো না, আচরণে তো নয়ই।
আনসান বলো, ব'লে যাও; যা ইচ্ছা তাই করো, ক'রে যাও;
পারলে না ক'রে শুধু ব'লে যাও
আর তা বলো ও করো আত্মপ্রশংসা ও
খ্যাতি বিস্তারের জন্য।
যারা উলঙ্গ হ'য়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে তাদের লজ্জা লাগছে না
লজ্জা লাগছে যারা উলঙ্গদের দেখছে।
তাই তুমি উলঙ্গ হ'য়ে হেঁটে যাও, লজ্জা পেও না;
লজ্জা লাগুক তাদের যারা বেহায়ার মতো
তোমায় দেখছে।
( লেখা ২৫শে জুলাই ২০২৩)

Monday, July 22, 2024

প্রবন্ধঃ বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন ও সৎসঙ্গী ছাত্র সমাজ।

বাংলাদেশের সরকারী চাকরীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ ইস্যুতে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছে। হতাহতের হাতছানিতে উত্তাল বাংলাদেশ। জনজীবন বিপর্যস্ত, স্তব্ধ। সুযোগ বুঝে শয়তান অকাল মৃত্যুর পর মৃত্যুর রূপ ধ'রে হানা দিয়েছে শিয়রে। কত মায়ের কোল খালি হয়েছে ও হতে চলেছে। আবু সাঈদ তাদের একজন।

বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র মৃত্যু নিয়ে কিছু আলোচনা তেমন চোখে পড়ছে না। বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন কিসের ওপর ভিত্তি ক'রে? সব আন্দোলনেই ছাত্রদের পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে ছাত্রজীবন উপেক্ষা ক'রে নিশ্চিত লেখাপড়ার পথ ছেড়ে অনিশ্চিতের পথে পা বাড়াতে হবে, পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে? রাজনৈতিক দলগুলি কি জন্য আছে? তারা কি করে? নির্বাচনের সময়ে এই রাজনৈতিক দলগুলি ক্ষমতা দখলের খেলায় যখন মেতে থাকে তখন কোথায় থাকে ছাত্র আন্দোলন? যে কোন পট পরিবর্তনে ছাত্রদের কেন ব্যবহার করা হয়? কোটা আন্দোলনে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অস্তিত্ব কোথায়? বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কেন সরকার বিরোধী লড়াই আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করে না? ছাত্রদের সাহায্যের কি দরকার? কেন তাঁরা পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে অনিশ্চিত ভয়ংকর পথের দিকে পা বাড়াবে? কি সেই মহান আত্মত্যাগ? যার জন্য ১৮বছর বয়সটাকে বারবার বলী হ'তে হবে? কেন? কেন?? কেন??? ছাত্রছাত্রীদের মা-বাবাদের মনে কি এই প্রশ্ন কোনওদিনই জাগবে না? নাকি জাগে, কিন্তু অসহায়? জাগা সত্ত্বেও কেন অসহায়? কি সেই অসহায়ত্বের কারণ?

ভারতেও কিছুদিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন, জে এন ইউর পরপর ছাত্র আন্দোলন আমরা দেখেছি। কি ছিল সেই আন্দোলন? কোথায় এখন সেইসব আন্দোলন? কেন সেই সব আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়েছিল? কি ছিল সেই আন্দোলনের পিছনের রহস্য? কোথায় গেলেন যাদবপুরের ও জে এন ইউর ছাত্র আন্দোলনের সাড়া জাগানো নক্ষত্র ছাত্ররা? কোথায় গেলেন সেই উদীয়মান নেতানেত্রীরা? এখন তারা কোথায়? টিভির চ্যানেলে চ্যানেলে ঝড় তোলা নীতিবাদী ছাত্রছাত্রীর দল এখন কি করছে? নোতুন কোনও আন্দোলনের রূপরেখা Blue print তৈরী করছে আগামীর সহজ সরলমতি ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করার জন্য? আন্দোলন কেন থেমে গেল? বালখিল্য ছাত্রবিপ্লব আন্দোলন যদি নাই হ'য়ে থাকে, আন্দোলনের পিছনে যদি সত্য থাকে তাহ'লে সত্যকে চাপা দেওয়ার ক্ষমতা কারও থাকে? কার আছে? ইতিহাস কি বলে? কার আছে সেই ক্ষমতা প্রকৃত আন্দোলন বা ছাত্র আন্দোলন ঠেকায়?

৭০ দশকের কথা মনে পড়ে? যারা এখনও সেই আগুন সময়ের আগুন খেকো ছাত্রছাত্রী নেতা-নেত্রীরা বেঁচে আছেন তাঁরা তাঁদের সেই সময়ের আন্দোলনের ইতিহাসের সারবত্তা তুলে ধরবেন বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে? সফল হয়েছিল সেই দিনের আন্দোলন? কেন হয়নি? কেন মুখ থুবড়ে পড়েছিল আন্দোলন? কেন লজ্জাজনক পরিণতি হয়েছিল সেই আন্দোলনের? আন্দোলনের জন্য হাজার হাজার তরুণ তরুণী ছাত্রছাত্রীর প্রাণ, মেধা, ভবিষ্যৎ নষ্টের দায় কার? বিরাট একটা যুবশক্তি, দেশের ও জাতির সম্পদ নষ্ট হ'লো এর জন্য দায়ী কে?
যারা বেঁচে আছেন সত্তর দশকের নেতারা আজ্‌ও, তা' আপনারা, বিপ্লবের রাস্তা ছেড়ে সেই শুয়োরের খোয়ার ব'লে একদিন যা চিহ্নিত করা হয়েছিল সেই শুয়োরের খোয়ারে নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ঢুকে পড়া সম্বন্ধে কিছু বলবেন? আজকের ছাত্র ছাত্রীরা সত্য জানবে না? বিখ্যাত উপন্যাস 'হাজার চুড়াশির মা'র লেখিকা ঔপন্যাসিক র‍্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার বিজয়ী সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী রচিত একটি বাংলা উপন্যাস। এই উপন্যাসটি ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৭০-এর দশকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এই উপন্যাসটি রচিত হয়। এ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র হাজার চুরাশি কি মা তৈরি করা হয়েছিল।
আজ যদি মহাশ্বেতা দেবী বেঁচে থাকতেন তিনি কি বলতেন তা আর জানা গেল না। যারা আজও সেই সময়ের নেতারা বেঁচে আছেন, যারা বিদ্যা বুদ্ধি বেঁচে খান তাঁরা তো কিছু বলুন বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন নিয়ে। যারা বাম পন্থায় বিশ্বাসী কবি, সাহিত্যিক ইত্যাদি তাঁরা কিছু বলবেন ৭০ দশকের আন্দোলনে ছাত্রদের জড়িয়ে পড়ার ও তাদের মর্মান্তিক করুণ পরিণতির কারণ কি ছিল? হাজার হাজার ছাত্র, যুব যে মারা গিয়েছিল সেদিন তাদের মৃত্যুর জন্য আবার একটা গা গরম কবিতা লিখে তাদের উৎসর্গ করলেই তাদের প্রতি সম্মান জানানো হ'য়ে গেল? এই গরম কবিতা, উপন্যাস, গল্প, ছবি তো নোতুনদের আবারও বিপথে চালিত করার জন্য গরম করার প্রয়াস। ৭০ দশকের হঠকারী আন্দোলনে হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী ও যুবক যুবতীর অকালে যে জীবনটা ঝ'রে গেল তার দায় নেবেন না কেউ? কে নেবে?

এই যে বাংলাদেশে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক নিহত আবু সাঈদ মারা গেল এর জন্যে কে বা কারা দায়ী? এই যে আবু সাঈদ নিজের জীবনের কথা না ভেবে, পরিবারের, সংসারের কারও কথা না ভেবে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে গেল আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হ'য়ে আন্দোলনকে সম্মান জানাতে সাহস নয় দুঃসাহসকে মূলধন ক'রে সততার সঙ্গে মাথা উঁচু ক'রে পুলিশের বন্দুকের সামনে আর পুলিশও বুক চিতিয়ে গুলি ক'রে দিল আগু পিছু না ভেবেই। এর জন্যে কে বা কারা দায়ী? আবু সাঈদ ও পুলিশ দু'জনেই দু'জনের মহান ডিউটি পালন করেছে। তবুও পুলিশ কিছু একটা ভেবে রাবার বুলেট চালিয়েছিল। আর আন্দোলনকারী ছাত্র আবু সাঈদও কিছু একটা ভেবে পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল। হয়তো বা ভেবেছিল পুলিশ গুলি করবে না, কিংবা করলেও রাবার বুলেটে প্রাণ যাবে না। কিন্তু যা আমরা ভাবি তা সবসময় মেলে না, উল্টোটাও ঘটে।


আর, আমরা এখন কি দেখছি? এস ওয়াজেদ আলি-র সেই বিখ্যাত কথা, "সেই একই ট্রাডিশান সমানে ব'য়ে চলেছে।"
আমরা দেখতে পাচ্ছি আন্দোলনকে সমর্থন করা নেতানেত্রীরা সেজেগুজে টিভির সামনে বসে পড়ছে, কবি, সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীরা তাঁকে বীর, মহাবীর, শহীদ প্রভৃতি নানারকম উপাধিতে ভূষিত ক'রে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ভাষণ দিচ্ছে, ক্ষমতা দখলের অঙ্ক কষছে, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখছে আবু সাঈদকে শ্রদ্ধা সম্মান জানিয়ে।
আবু সাঈদ! তুমি সবার রোজগারের উপকরণ হ'য়ে গেলে দিন শেষে অবশেষে। কিন্তু তুমি জানতেও পারলে না এ জীবন উৎসর্গ কি সঠিক লড়াই-এর জন্য ছিল?

আর, আবু সাঈদ! তোমার আত্মা পরমপিতার চরণে স্থান পেয়ে শান্তি লাভ করুক ব'লে দায় সারবো আমরা।
এ সত্য, তিন সত্য, অপ্রিয় সত্য।
মনে পড়ে যায় চিনের তিয়েনয়ানমেন স্কোয়ারের ছাত্র আন্দোলনের কথা। হাজার হাজার ছাত্রকে নির্বিচারে গুলি ক'রে মেরে ফেলার ইতিহাস। দুনিয়ার কোনও বাপের বেটার ক্ষমতা হয়নি চিনের তিয়েনয়ানমেনের ছাত্র আন্দোলন কে গুড়িয়ে দেবার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার। সেই আন্দোলন কিসের আন্দোলন ছিল? সেই আন্দোলন কি সঠিক ছিল? ছাত্রদের সেই আন্দোলনের রাশ কি ছাত্রছাত্রীদের হাতে ছিল? সেই অসহায় অভাগা ছাত্রদের করুণ পরিণতির দায় কার বা কাদের ছিল?
ছাত্র আন্দোলনের উৎস কি, কে বা কারা? কোন আদর্শের ওপর দাঁড়িয়ে ছাত্ররা আন্দোলন সংগঠিত করে? ছাত্র আন্দোলনের রাশ কি শেষ পর্যন্ত ছাত্রদের হাতে থাকে? নাকি হাত বদল হ'তে হ'তে ডিরেইল্ড হ'য়ে ক্ষমতা দখল ও স্বার্থসিদ্ধির কূটকচালি আর হানাহানিতে পরিণত হ'য়ে আবু সাঈদের মত ভাবাবেগে ভেসে চলা আবেগ সর্বস্ব উদার মনোভাবাপন্ন সহজ সরল কূটবুদ্ধিহীন নিষ্পাপ ছাত্রদের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে থিতিয়ে যায়, সমাপ্ত হয়?

ছাত্রদের কি বোঝার সময় হয়নি? এটাই বোধহয় নিয়তির জাঁতাকল। এই যাঁতাকলে চাক্কি পিষিং এন্ড পুষিং, পুষিং এন্ড পিষিং করে করেই কেটে যাবে ছাত্র জীবন।

কথায় আছে, নিয়তিঃ কেন বাধ্যতে। অর্থাৎ ভাগ্যকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। অদৃষ্টে যদি কিছু ঘটার থাকে তাহলে কেউই খন্ডন করতে পারেন না।
সত্যিই কি তাই? অদৃষ্ট ব'লে কিছু কি আছে?
The greatest phenomenon, The greatest wonder of the world শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন, "নিয়তি মানে নিয়ে যায়।

"তোমার দর্শনের----জ্ঞানের পাল্লা যতটুকু অদৃষ্ট ঠিক তারই আগে; দেখতে পাচ্ছ না, জানতে পাচ্ছ না, তাই অদৃষ্ট। তোমার শয়তান অহংকারী আহাম্মক আমিটাকে বের ক'রে দাও; পরমপিতার ইচ্ছায় তুমি চল, অদৃষ্ট কিছুই করতে পারবে না। পরমপিতার ইচ্ছায় অদৃষ্ট।'

আবু সাঈদ তাঁর দর্শনের, জ্ঞানের সীমাবদ্ধ পাল্লা দিয়ে দেখতে পায়নি তাঁর একটু পড়ে কি ঘটতে যাচ্ছে। আর, বুক চিতিয়ে দাঁড়াবার একটু পড়েই কি ঘটবে তা দেখতে পাচ্ছিলো না, জানতে পাচ্ছিলো না বলেই সেটা তাঁর কাছে ছিল অদৃষ্ট। এ ছাড়া অদৃষ্ট আর কিছুই নয়। এই যে বন্দুকের গুলির কাছে বুক চিতিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া এই মানসিকতার মধ্যে লুকিয়ে ছিল অহংকারী আহাম্মক আমি। এই সহজ সরল বেকুবি শয়তান অহংকারী আহাম্মক আমিত্ব যদি জীবন থেকে ত্যাগ ক'রে দিয়ে পরমপিতা রসুলের ইচ্ছায় চলতো, অদৃষ্ট কিছুই করতে পারতো না। পরমপিতা রসুলের ইচ্ছায় একমাত্র অদৃষ্ট। পরমপিতা রসুল নির্ভর জীবন হ'লে পরমপিতা রসুল আবু সাঈদকে দু'হাত দিয়ে আগলে রেখে রক্ষা করতো। শয়তান নিয়তির রূপ ধ'রে নিয়ে যেতে পারতো না পরমপিতা রসুলের হাত ছিনিয়ে মৃত্যুর কাছে।

এ আমার ব্যক্তিগত অভিমত। গ্রহণ ও বর্জন ব্যক্তিগত। গ্রহণ করতেও পারে আবার বর্জনও করতে পারে পাঠক বন্ধুরা আমার।

যাই হ'ক, পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক নিহত আবু সাঈদকে আমার চোখের জল ছাড়া কোনও কিছু দেওয়ার বা বলার নেই। শুধু প্রার্থনা করবো আগামী দিনে আর কোনও ভবিষ্যৎ আবু সাইদের যেন অকাল মৃত্যু না হয়। কারণ সর্বশক্তিমান, সর্বদর্শী, সর্বজ্ঞ পরমপুরুষ, পরমপিতা, পুরুষোত্তম সৃষ্টিকর্তা, জীবন্ত ঈশ্বর পরমপিতা রসুল হজরত মহম্মদের নবরূপ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র অকাল মৃত্যু অনুমোদন করেননি। একটা শিশু জন্মাবার পর শৈশব, কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ় ও বার্ধক্য শেষে সে জীবন থেকে বিদায় নেবে, তার আগে নয়। এ বিধান ঈশ্বরের বিধান, জীবন্ত ঈশ্বরের বিধান। আর, এই বিধানকে বিশ্বজুড়ে হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান, জৈন ইত্যাদি ইত্যাদি সম্প্রদায়, জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বজুড়ে ৮০০ কোটি মানুষের সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। আর, এই কাজ করতে হবে সৎসঙ্গীদের। সৎসঙ্গীদের আজ গভীরভাবে
সিরিয়াসলি ভাবার সময় এসেছে, সময় এসেছে ঠাকুরের ব'লে যাওয়া কথা সম্বন্ধে সচেতন হওয়ার, জানার ও বোঝার। আর সচেতনার সঙ্গে তা' জেনে ও বুঝে তা'কে চরিত্রগত করার। আর, সময় এসেছে তা' ছড়িয়ে দেওয়ার ঘরে ও বাইরে সর্বত্র।
আজ আমি আমার সৎসঙ্গী ছাত্রছাত্রী ও যুবকযুবতী গুরুভাইবোনেদের কাছে একটা প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি, এই যে ছাত্র আন্দোলন তা' আমার দেশের হ'ক আর দেশের বাইরেই হ'ক, এই আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের সৎসঙ্গীদের ও সৎসঙ্গ আন্দোলনের কোনও যোগসূত্র আছে কিনা আর থাকলে তা' কোথায়?

প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কে? (২)' আর্টিকেল নিয়ে দু'এক কথা।

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কে? এই নিয়ে আমার অনুভূতি ও উপলব্ধি আমি প্রকাশ করেছি আমার আর্টিকেল 'শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কে? (২)' তে।

এটা একান্তই আমার সেই ছোট্ট থেকে আজ এই প্রায় সত্তর বছর বয়স পর্যন্ত বিভিন্ন ভয়ংকর ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে ঠাকুর সম্পর্কে আমার যা উপলব্ধি হয়েছে তাই-ই আমি তুলে ধরেছি আমার লেখা আর্টিকেলে। কারও পছন্দ হ'তে পারে আবার নাও হ'তে পারে। কারও বাড়াবাড়ি ব'লে মনে হ'তে পারে আবার না হ'তেও পারে। কারও বিশ্বাস হ'তে পারে আবার হাস্যকর ব'লে মনে হ'তে পারে। এ নিয়ে আমার কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। আমি আমার বিশ্বাস, অনুভূতি ও উপলব্ধি কাউকে গ্রহণ করতে বলিনি। গ্রহণ ও বর্জন ব্যক্তিগত। আর, অনুভূতি ও উপলব্ধিও ব্যক্তিগত ও সাধননির্ভর।    

যাই হ'ক, শ্রীশ্রীঠাকুর নিয়ে এই একই রকম লেখালেখি, ভাবনার প্রকাশ কোথায় কি হয়েছে বা হচ্ছে তা আমার জানা নেই। আর, জানার ইচ্ছাও নেই। কারণ আমি প্রায় (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে) প্রতিটি সৎসঙ্গীর ঘরে দেখেছি ঠাকুর সম্পর্কে কি ধারণা বা ভাবনার প্রতিফলন। এমনকি সহ প্রতিঋত্বিক, প্রতিঋত্বিক, ঠাকুর পুজোয় অংশ নেয়, ভোগ নিবেদন করে এমন বহু প্রবীণ (নবীনদের কথা বাদ দিলাম) সৎসঙ্গীকে দেখেছি ঠাকুরকে একপাশে যেমনতেমন ভাবে একটা ছোট্ট সাদা কাপড় দিয়ে ছোট্ট টুলের ওপর বসিয়ে রেখেছে। আর সামনে মুখ্য ক'রে ফুল বেলপাতা ইত্যাদি নানা সামগ্রী দিয়ে সাজানো ঘট রেখে সুতোর গন্ডি দিয়ে ঘিরে রেখেছে আর চারপাশে দুনিয়ার স্বস্তিক চিহ্ন ও নানা আলপনা এঁকে একটা সাজানো টেবিলের ওপর হাতে আঁকা ফটোর নারায়ণ রেখে যজ্ঞভূমি রচনা ক'রে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দাউ দাউ আগুলের লেলিহান শিখায় আত্মাহুতি দিয়ে বৈদিক প্রথায় পুজো ক'রে গৃহপ্রবেশ কিংবা কোনও মঙ্গলযজ্ঞ অনুষ্ঠান করতে। আর, জিজ্ঞেস করলে সাফাই দিয়ে বলবে, কেন আমি তো ঠাকুর সাজিয়ে বড় ক'রে ঠাকুরের সৎসঙ্গ করেছি। অজুহাত সব সময় রেডি।

শ্রীশ্রীঠাকুরকে যে বা যারা নারায়ণ অর্থ জেনে জীবন্ত নারায়ণ মনে ক'রে নারায়ণ পুজো করতে পারে না, ঘরে নানা দেবদেবীর মাঝে ঠাকুরকে রেখে ধর্মেও আছি আবার জিরাফেও আছি মানসিকতার তারা বলবে ঠাকুরের বাঁচা-বাড়ার কথা? আঙ্গুলে আংটি, গলায়, হাতে, কোমরে তাবিজ, মাদুলি, লোহা ও লাল-কালো সুতো ধারণকারী তারা ঠাকুরের বাঁচা-বাড়ার ধর্ম যে কত বাস্তব এবং বিজ্ঞানসম্মত তাকে explore করবে মানুষের মাঝে?????????? ঠাকুরকে যারা বিন্দুমাত্র চিনলো না, জানলো না, অনুভব ও উপলব্ধি করলো না, ঠাকুরকে নিজের জীবনে, সংসারে প্রতিষ্ঠা করলো না যারা তারা   ঠাকুরের জীবনবাদের কথা বলবে?

সাধে কি আর ঠাকুর বলেছেন, "ভারতের অবনতি (degeneration) তখন থেকে আরম্ভ হয়েছে, যখন থেকে ভারতবাসীর কাছে অমূর্ত ভগবান অসীম হ'য়ে উঠেছে----ঋষি বাদ দিয়ে ঋষিবাদের উপাসনা আরম্ভ হয়েছে।"

শ্রীশ্রীঠাকুরের বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সৎসঙ্গীর উদ্দেশ্যে ঠাকুরের বলা এইকথা কতজন সৎসঙ্গী আমরা বুক বাজিয়ে বলতে পারি?------ 'হ্যাঁ ঠাকুর! তুমি কে তা বুঝেছি। তোমার বলা কথা বুঝেছি। তোমায় বাদ দিয়ে তোমার কথার উপাসনা করিনি।'

সব শেয়ালের এক রা, হুক্কা হুয়া_আ-আ-আ-আ---------
এ অভিজ্ঞতা আমার ছোটোবেলা থেকে এই প্রৌঢ়ত্ব পর্যন্ত একইরকম।
( লেখা ২২শে জুলাই'২০২৩ )

Friday, July 19, 2024

প্রবন্ধঃ অহংকার-ই অজ্ঞানতা (Pride is ignorance)



Devotees of Absolutely loving Supreme Father ShriShriKrishna and ShriShriThakur Ramakrishna.

Devotees of ShriShriKrishna, Be aware and please remember this:
Supreme Father Lord SriSriRamakrishna is Lord SriSriKrishna and SriSriKrishna is SriSriRamakrishna in new form.

For those devotees who don't know it, Lord Jesus is remembered.
Lord Jesus said "O God forgive them they do not know what they are doing, what they are saying."

To those who have insulted ShriShriThakur Ramakrishna and his supreme and chief devotee ShriShri Vivekananda:

You have seen the peaceful form of Lord Shri Krishna
 with his flute in his hand, but you have not seen his terrible form. He is kind and terrible at the same time. Don't forget. Be careful before you say anything about someone. Especially about the living God.
Otherwise the last day is terrible.

And if not be careful, No matter how much you sing his praises, if you criticize his new form in blasphemous language, his flute will not sound for you, his weapons beautiful circle ( sudorrshon chokro) awaits you. This is the unpleasant and brutal truth.
Just remember, "Whatever you are doing or have done, God will accept it and you will get its results as well."----SriSriThakur Anukul.
Everyone is the child of Lord SriSriKrishna. When the child abuses the father, the father suffers. But he forgives thinking that the child will improve. If not, then there is a situation like Shishupala.
We should remember this. Otherwise the last day is horrible. No one has to do anything to suffer the consequences of insulting God. Blasphemy of God and dishonor of God must bear the consequences. No one should think anything of this.

Supreme Being, Supreme Father, Supreme Cause, Creator of the universe The greatest phenomenon of the world Sri Sri Thakur Anukulchandra is the new form of SriSriThakur Ramakrishna
said,
" Do not judge and punish on your own. But place it wholeheartedly before the Supreme Father; that will be good. If you punish anyone for his misdeed, surely the Supreme Father will mete out the punishment proportionately to you both."
JOYGURU

Wednesday, July 17, 2024

প্রবন্ধঃ জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী ও পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর।

আজকে একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। বিষয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বিশ্বের বিস্ময়ের বিস্ময় সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ও ভারতের অহিংস আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধী। দার্জিলিং-এ অসুস্থ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনকে দেখতে গিয়ে দেশবন্ধুর কাছে মহাত্মাজী শ্রীশ্রীঠাকুর সম্পর্কে জেনেছিলেন। শ্রীশ্রীঠাকুরের সংস্পর্শে এসে দেশবন্ধুর মতন প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন দুঁদে আইনজ্ঞ ও তাঁর দূরন্ত দুর্দান্ত রাজনৈতিক সত্ত্বার আধ্যাত্মিক সত্ত্বায় আমূল পরিবর্তন দেখে মহাত্মাজী অবাক হ'য়ে গিয়েছিলেন। এই কারণেই ঠাকুর সম্পর্কে গভীর বিস্ময় জন্ম নিয়েছিল মহাত্মাজীর মনে। দেশ, জাতি, সমাজ গড়তে হ'লে যে ধর্মই এক ও একমাত্র পথ এ ছাড়া যে দ্বিতীয় পথ নেই, গড়া সম্ভব নয়, দেশবন্ধুর মত যুক্তিবাদী, পরাক্রমশালী আইনজীবীর এইরকম গভীর বিশ্বাস ও দৃঢ়তা দেখে মহাত্মাজী ১৯২৫সালের ২৩শে মে পাবনার সৎসঙ্গ আশ্রমে আসেন। এবং শ্রীশ্রীঠাকুরের মা মনোমোহিনীদেবী ও আশ্রমের কর্ম্মীবৃন্দের সঙ্গে বিশাল সৎসঙ্গ আশ্রম ঘুরে ঘুরে সব দেখে তিনি বিস্মিত হ'য়ে যান। বিশাল আশ্রম জুড়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র দেখে বিস্ময়ে তিনি বলেছিলেন, আমি যে ভারতের স্বপ্ন দেখি তা ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে, এ যে ছোট্ট ভারত, আমি আপ্লুত। মহাত্মাজী শ্রীশ্রীঠাকুরের মা মনোমোহিনীদেবীর ব্যক্তিত্ব, সেবায়, মিষ্ট কথায় মুগ্ধ হ'য়ে বলেছিলেন, 'I have never seen such a masterful woman of such wonderful personality in my life' (এমন বিষ্ময়কর ব্যক্তিত্ব-সম্পন্না মহীয়সী নারী জীবনে আমি কখনও দেখিনি।)

পরবর্তী সময়ে যখন দ্বিতীয়বার মহাত্মাজী শ্রীশ্রীঠাকুরের অসুস্থতার খবর শুনে কলকাতায় তাঁকে দেখতে এসেছিলেন। তখন কথাপ্রসঙ্গে মহাত্মাজী হাসতে হাসতে ঠাকুরকে বলেছিলেন, "আপনার আশ্রম থেকে ফিরে আসার পর একদল লোক এসে আপনার খুব নিন্দা করল, আবার একদল লোক খুব প্রশংসা করল। অথচ উভয় দলেই বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ রয়েছেন"।

ঠাকুর একথা শুনে বললেন - "প্রশংসার কথাতো জানিনা। তবে নিন্দা যদি কিছু শুনে থাকেন তবে ভরসা হয় পরমপিতার কাজ তাহলে একটু আধটু শুরু হয়েছে"। ঠাকুরের কথায় মহাত্মাজী মুগ্ধ হয়ে হাসতে লাগলেন। শেষে বললেন “আপনার সংস্পর্শে এসে দেশবন্ধুর যে অদ্ভুত মানসিক পরিবর্ত্তন সাধিত হয়েছে তা দার্জিলিং এ তাঁর সাথে আলাপ করে বুঝতে পেরেছি”।

তখন শ্রীশ্রীঠাকুরের বয়স প্রায় ৪০বছর হবে। আর মহাত্মাজীর বয়স ৫৬ বছর। শ্রীশ্রীঠাকুরের চেয়ে মহাত্মাজী ১৬বছরের বড় ছিলেন। তারপর ভারতের বুকে ব'য়ে গেছে অনেক ঘোলা জল। সমস্যার নানা টানাপোড়েনে ওলোটপালোট হ'য়ে গেছে ভারতের মানচিত্র।

কি মধুর সম্পর্ক ছিল উভয়ের মধ্যে। ছিল শ্রদ্ধা, সম্মান, ভালোবাসার অটুট বন্ধন। কতটা মহাত্মাজীর অন্তর্দৃষ্টি জাগ্রত ছিল, ছিল প্রবল যে শুধু দেশবন্ধুর মত কঠোর যুক্তিবাদী, দুঁদে আইনজ্ঞ, দুরন্ত রাজনীতিবিদের আমূল পরিবর্তন মহাত্মাকে ভাবতে বাধ্য করেছিল দেশবন্ধুর মত এমন প্রবল পরাক্রমশালী আইনি ও রাজনৈতিক সত্ত্বার কি ক'রে আধ্যাত্মিক সত্ত্বায় পরিবর্তন হ'তে পারে, কি সে কারণ, কে সে ব্যক্তি, সেই ব্যক্তির সঙ্গে আমাকে দেখা করতে হবে। এতটাই মহাত্মাজীকে কৌতুহলী ক'রে তুলেছিল।

এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে ঠাকুরের কথা। আমাদের সৎসঙ্গীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, "তোমাকে দেখে চিনবে লোকে তোমার ঠাকুর কেমন। তোমাকে বলতে হবে না তুমি সৎসঙ্গী, তুমি ঠাকুরের দীক্ষিত। তোমার জীবন, তোমার কথা, তোমার আচরণ, তোমার আন্তরিকতা, তোমার প্রেম, ভালোবাসা, দয়া, মায়া, স্নেহ, মায়া, মমতা দেখে বলবে লোকে তোমায়, কোথায় গেলে এমন জীবন পাবো? " আজ ভাবি কতটা সত্যি ছিল তাঁর কথা।

শ্রীশ্রীঠাকুরের চাইতে ১৬ বছরের বড় হওয়া সত্ত্বেও কি সম্মান শ্রদ্ধা ছিল ঠাকুরের ওপর। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোধা হওয়া সত্ত্বেও, প্রবল ক্ষমতাসম্পন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হওয়া, বয়সে ১৬বছরের বড় হওয়া সত্ত্বেও সারা ভারত জুড়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রচন্ড ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি ছুটে এসেছিলেন একবার নয়, দু'দুবার ঠাকুরের কাছে। একবার পাবনায় হিমায়েতপুর আশ্রমে, আরেকবার ঠাকুরের অসুস্থতার খবর পেয়ে কলকাতায়। শুধুমাত্র দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের কঠোর কঠিন মানসিকতার অদ্ভুত পরিবর্তন মহাত্মাজীকে ঠাকুরের কাছে আকর্ষণ ক'রে এনেছিল, এনেছিল দেশবন্ধুর গুরুদেবকে দেখতে।। কে সে প্রবল ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ববাণ ব্যক্তি যিনি দেশবন্ধুর চেয়ে ১৮ বছরের ছোটো হয়েও দেশবন্ধুর মত দোর্দন্ডপ্রতাপ আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা সংগ্রামী, কবি ও লেখক, দানবীর ইত্যাদি হিসেবে সুপরিচিত দেশবন্ধুর গুরু হ'তে পারেন, এই প্রবল কৌতুহল মহাত্মাজীকে ঠাকুর দর্শনে এনেছিল।
তারপর মহাত্মাজী আর ২৩বছর মাত্র বেঁচেছিলেন। ভয়ংকর উত্তাল রাজনৈতিক টানাপোড়েনে আর দেখা হয়নি দু'জনের মধ্যে। ঠিক নেতাজীর মত। ৭৯বছর বয়সে ১৯৪৮ সালে মহাত্মাজীর মৃত্যু হয়। তখন ঠাকুরের বয়স ছিল ৬৩বছর। তখন ঠাকুর দেওঘরে। মহাত্মাজীর মৃত্যুর খবর ঠাকুরকে বিরাট আঘাত দেয়। ব্যথিত কন্ঠে মহাত্মাজীর মৃত্যুর (৩০শে জানুয়ারী'১৯৪৮) পরদিন সন্ধ্যায় ১লা ফেব্রুয়ারী ঠাকুর এক মর্মবিদারক বাণী দিয়েছিলেন,
"To shoot Mahatma is to shoot the hearts of all the people-- the lovers of existence; O Thou the great Tapas! bestow thy bliss that resists with every shooting off the evils that obsess, Father the Supreme! pour thy grace on this dumb appeal of human heart."
"যে মৃত্যু মহাত্মাকে গুলিবিদ্ধ করেছে সে গুলি সত্তানুরাগী সবারই হৃদয়কে আবিদ্ধ, বিকীর্ণ ক'রে ফেলেছে। মহাতাপস! তোমার আশীর্বাদ যেন সবারই অন্তর্নিহিত অমঙ্গলকে চিরদিনের মত অবলুপ্ত করে। পরমপিতা! মানুষের এ আবেদন তুমি মংগলে পূর্ণ ক'রে তোল।"

আজ শুধু মনে প্রশ্ন জাগে আর কল্পনার চোখে দেখি, যদি দেশবন্ধু ও মহাত্মাজী দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বেঁচে থাকতেন বহুদিন তাহ'লে কি হ'তো!? যদি বেঁচে থাকতেন কেমন হ'তো রসায়ন? দেশের বর্তমান অবস্থার কথা ভাবতে ভাবতে চোখ ঝাপসা হ'য়ে আসে।
মহাত্মা গান্ধী ১৯২৫ সালের ১৬ই জুলাই বলেছিলেন তাঁর সম্পাদিত ইয়াং ইন্ডিয়া পত্রিকায় I have seen many greatmen in this world, but have never seen a man with such on extra ordinary powerin all respects and as lovely as SriSriThakur Anukulchandra.


আজ স্পষ্ট দেখতে পাই জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী সত্যদ্রষ্টা পুরুষোত্তম পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুরের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর দিকে অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে বলছেন,

'কিন্তু আমি তাঁর কোন পরামর্শ নিইনি এবং নেওয়া প্রয়োজন মনে করিনি দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে।'

দেশের স্বাধীনতার সময় যখন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র দেশের প্রায় প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে কি করা উচিত আলোচনা করা সত্বেও তাঁর সেই পরামর্শ গ্রহণযোগ্য ব'লে মনে হয়নি দেশ নেতাদের। ভারত ভাগের ব্যাপারে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র যখন দেশের প্রথম সারির নেতাদের কাছে তাঁর ভবিষ্যৎ সাবধান বাণী "Dividing compromise is hatch of the animoysity" (দেশ ভাগ ক'রে হিন্দু মুসলমানের সমস্যার সমাধানের অর্থ তা' দিয়ে দিয়ে শ্ত্রুতার ডিম ফোটানো) পাঠানো হ'লো তখন তাঁর কথা কেউ পাত্তা দেয়নি।

যখন তিনি বাংলা ভাগ যাতে না হয়, হিন্দু মুসলমানের দীর্ঘদিনের একসাথে মিলেমিশে থাকার ঐক্য বিনষ্ট না হয়, অটুট থাকে, হিন্দু মুসলমানের জন সংখ্যার ভারসাম্য বজায় রাখা যায় তার জন্য তিনি সমাধান দিয়েছিলেন সেইসময়ের নেতাদের, হিন্দু মুসলমানের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের, পরামর্শ দিয়েছিলেন জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীশ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে, এই নিয়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ আলোচনা হয়েছিল ঠাকুরের কিন্তু তখন কেউই তাঁর কথাকে গুরুত্ব বা মূল্য দেননি।

বরং সেইসময় যখন তিনি একার উদ্যোগে বাংলাভাগকে আটকাবার জন্য, হিন্দুমুসলমানের ঐক্যকে রক্ষা করবার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন, হিন্দুমুসলমানের সমতা রক্ষা করার জন্য, উভয় সম্প্রদায়ের চিরকালীন মঙ্গলের জন্য, উভয় সম্প্রদায়ের বাঙ্গালীর মধ্যে বহু বছরের যে বাঙালি কৃষ্টি-সংস্কৃতি, বাঙালি সত্ত্বা, সম্প্রীতি, এক আত্মা বোধ রক্ষা করার জন্য, অটুট রাখার জন্য, যাতে কোনও অবস্থায় দাঙ্গা না বাধে সেইজন্য বহু হিন্দু মুসলমান পরিবারকে বিভিন্ন জায়গার থেকে এনে যেখানে হিন্দু কম মুসলমান বেশী, মুসলমান কম হিন্দু বেশী সমান বসতি স্থাপনের আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন, করেছিলেন হিন্দু মুসলমানের জনসংখ্যার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য। কিন্তু তখন তৎকালীন নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশের প্রভাবশালী নাগরিক কেউই সত্যদ্রষ্টা শ্রীশ্রীঠাকুরকে সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দেননি। উপরন্তু সেইসময়ের বহু প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতাশালী হিন্দু জমিদার তাঁর কাজে বিরাট বাধা সৃষ্টি করেছিল। ফলে তিনি হিন্দু-মুসলিম সমতা, সম্প্রীতি, ঐক্য রক্ষা, দাঙ্গা আটকানো, দেশভাগ ইত্যাদি সব কাজে ব্যর্থ হন। দেশভাগ ও বাংলাভাগ নিশ্চিত হ'য়ে যায়। দেশ টুকরো হ'য়ে যায়, বাংলা দু'ভাগ হ'য়ে যায়, হিন্দু মুসলমান পরস্পরের দীর্ঘ দিনের একসাথে মিলেমিশে থাকার ঐতিহ্য নষ্ট হ'য়ে যায়। দেশভাগ ও হিন্দু-মুসলমান দুই সম্পদায় পরস্পরের শত্রু হ'য়ে যায় চিরতরে। দীর্ঘ বহু বছরের বাঙালি কৃষ্টি-সংস্কৃতি, বাঙালি ঐক্য, বাঙালি সত্ত্বা, বাঙালি এক আত্মা ধ্বংস হ'য়ে যায়। দীর্ঘ বহু বছরের এক ঐতিহ্যশালী ইতিহাস ধ্বংসের বীজ বপন হ'য়ে যায়, যা আজ দুই বাংলার সম্পর্কের মধ্যে মহীরূহ হ'য়ে দাঁড়িয়েছে, যা আমরা প্রতিমুহুর্তে যে কোনও বিষয় নিয়ে দুই বাংলার মধ্যে ভয়ংকর বাদানুবাদ দেখতে পায়। ফলস্বরূপ দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই এবং আজও ৭৮ বছর পরে সত্যদ্রষ্টা শ্রীশ্রীঠাকুরের ব'লে যাওয়া বাণী "Dividing compromise is hatch of the animoysity" (দেশ ভাগ ক'রে হিন্দু মুসলমানের সমস্যার সমাধানের অর্থ তা' দিয়ে দিয়ে শ্ত্রুতার ডিম ফোটানো) সত্য প্রমাণিত হয়। এর থেকে আজও আমরা দেশবাসী, দেশ নেতানেত্রীরা কোনও শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি। ভুলে গেছি ভয়ংকর নিষ্ঠুর অতীত, দেশভাগ, বাংলাভাগের যন্ত্রণা, ভুলে গেছি সত্যদ্রষ্টা ঠাকুরের একক প্রচেষ্টা ও বুকের যন্ত্রণা। ঠাকুরের সোনার সৎসঙ্গীরাও তাই। আমরা সৎসঙ্গীরা ভুলে গেছি বললে ভুল হবে, আমরা অতীত যন্ত্রণাময় ইতিহাস জানিই না।
আজ এই পর্যন্ত। আবার আগামীতে দেখা হবে আপনাদের সাথে। নমস্কার। জয়গুরু।

Tuesday, July 16, 2024

প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীঠাকুর, শ্রীশ্রীআচার্যদেব ও অপ্রিয় সত্য।



অপ্রিয় হ'লেও সত্যি।
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীআচার্যদেব এবং পূজনীয় শ্রীশ্রীঅবিনদা ১১/৬/২৪ থেকে ২০/৬/২৪ দেওঘরে থাকবেন না এই কথাটা ঘোষণা করা হয়েছিল অফিশিয়ালি। এই ঘোষণার ফলে একটা অপ্রিয় হ'লেও সত্য লুকিয়ে আছে যা আরও বড় অপ্রিয় সত্যকে প্রমাণ করে। এখন প্রশ্ন জাগে মনে, কি সেই অপ্রিয় সত্য ও আরও বড় অপ্রিয় সত্য কি যা লুকিয়ে আছে এই ঘোষণার ফলে। আসুন আলোচনা ক'রে দেখি প্রথমে কি অপ্রিয় সত্য লুকিয়ে আছে এর পিছনে।

১) আমরা ঠাকুরবাড়ি যাই কেন? কার জন্যে যাই?
২) শ্রীশ্রীআচার্যদেব না থাকলে কি হবে? শ্রীশ্রীঠাকুর কি নেই?
৩) শ্রীশ্রীঅবিনদাদার থাকা আর না-থাকার কি গুরুত্ব আছে ঘোষণার সঙ্গে?

১) আমরা ঠাকুরবাড়ি যাই কেন? কার জন্যে যাই?
আমরা ঠাকুরবাড়ি যাই শ্রীশ্রীঠাকুর দর্শন ও প্রণাম করতে। যাই শ্রীশ্রীবড়মা, শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদাকে দর্শন ও প্রণাম করতে। যাই বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে দর্শন ও প্রণাম করতে ও তাঁর কাছে সমস্যা নিবেদন ক'রে সমাধান জানতে। যাই শ্রীশ্রীঅবিনদাদার দর্শনলাভ ও তাঁর শ্রীশ্রীমুখের দু'টো কথা শুনতে ও শ্রীশ্রীআচার্যদেবের অবর্তমানে তাঁর কাছে সমস্যা নিবেদন করতে। যাই ঠাকুরবাড়ির অন্যান্য পূজনীয় গুরুজনদের দর্শনলাভ করতে, প্রণাম করতে ও মনের দু'টো কথা প্রাণভরে খুলে বলতে, গল্প করতে। আমরা যাই চারপাশের হৈ চৈ, কোলাহল, অভাব, অনটন, হতাশা, অবসদ, ব্যর্থতায় ভরা অশান্তির জীবনে মানসিক শান্তি খুঁজে পেতে, আনন্দ পেতে ও অক্সিজেন পেতে।


২) শ্রীশ্রীআচার্যদেব ঠাকুরবাড়িতে না থাকলে কি হবে? শ্রীশ্রীঠাকুর কি নেই?


বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেব দেওঘরে না থাকলে আমরা হতাশ হ'য়ে পড়ি ও মনে হয় যেন নিরাশ্রয় হ'য়ে পড়লাম। ভাবি, কি হবে আর এখন যেয়ে, যখন আচার্যদেবই নেই? অতএব এখন যাওয়া বৃথা। আচার্যদেব থাকলে তাঁকে মনের কষ্টের কথা, দুঃখের কথা, সমস্যার কথা, বিপদের কথা বলতে পারতাম, সমাধান পেতাম, সমস্যা জর্জরিত জীবন হ'তো হালকা, মনে-প্রাণে শান্তি পেতাম। কিন্তু যখন জেনেই গেলাম দেওঘরে আচার্যদেব থাকবেন না তখন থাক এখন যেয়ে আর লাভ নেই, আচার্যদেব ফিরে এলে যাবো। যখন তিনি নেই তখন আর গিয়ে কি হবে? মুহূর্তে ঠাকুরবাড়ির আকর্ষণ হ'য়ে গেল ফিকে।

তাহ'লে শ্রীশ্রীঠাকুর কি নেই?


হ্যাঁ, ঠাকুর আছেন। ঠাকুর আগেও ছিলেন, এখনও আছেন। ঠাকুর যখন দেওঘরে আসেননি, বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমাইয়েতপুর গ্রামে ছিলেন, তখনও দেওঘরে ছিলেন। যখন ভারত ভাগের আগে দেওঘরে চলে এলেন তখনও হিমাইয়েত পুর গ্রামে ছিলেন। যখন তিনি দেহরূপে আসেননি তখনও ছিলেন, যখন দেহরূপে ছিলেন ও দেহত্যাগ ক'রে চলে গেলেন অর্থাৎ দেহ রূপে নেই তখনও ছিলেন, এখনও আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন অর্থাৎ অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সবসময়ই তিনি ছিলেন, আছেন ও থাকবেন। যখন কিছুই থাকবে না, যখন তিনি তাঁর সমস্ত চ্যাপ্টার ক্লোজ ক'রে দেবেন তখনও থাকবেন। যখন ছিল-নার অস্তিত্ব ছিল তখনও তিনি ছিলেন আবার যখন ছিল-নার অস্তিত্ব আসবে তখনো তিনি থাকবেন।

৩) শ্রীশ্রীঅবিনদাদার থাকা আর না-থাকার কি গুরুত্ব আছে ঘোষণার সঙ্গে?



ঠাকুরবাড়িতে ঘোষণা অনুযায়ী
অবিনদাদাও ১১/৬/২৪ থেকে ২০/৬/২৪ দেওঘরে ছিলেন না। যখন সৎসঙ্গীরা শুনলো আচার্যদেব থাকবেন না, অবিনদাদাও থাকবেন না তখন তারা ঠিক করলেন তাহ'লে আর কি করতে যাবো? আচার্যদেব না থাকলেও অবিনদাদা আছে জেনেও বহু বহু মানুষ ঠাকুরবাড়ি যায়। কারণ আচার্যদেবের অনুপস্থিতিতে শ্রীশ্রীঅবিনদাদা যখন আছেন তখন অন্তত খালি হাতে ঠাকুরবাড়ি থেকে ফিরে আসবো না।


শ্রীশ্রীঅবিনদাদার দর্শন, তাঁর হাসি আর তাঁর একেবারে চাঁছাছোলা অপ্রিয় সত্য কথার চাবুক বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে ডুবে থাকা হতাশাগ্রস্থ, অবসাদ্গ্রস্থ লোককে একেবারে চাঙ্গা ক'রে দেয়। আর সেই মানুষটাও যখন দেওঘরে থাকবেন না তখন দেওঘরে গিয়ে আর কি হবে? যদিও ঠাকুরবাড়ির প্রতিটি সদস্যই প্রাণময়, আলোময়, রুপময়, রসময় ও মধুময়। দেখলে ও কথা বললে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়, শান্ত, স্থির হ'য়ে যায়। তথাপি যার উদ্দেশ্যে যাওয়া তিনিই যদি না থাকেন তখন আর এত কষ্ট ক'রে, পয়সা খরচ ক'রে যাওয়ার কোনও মানে হয়না।


এখন প্রশ্ন করতেই পারে বিরোধীরা যার উদ্দেশ্যে যাওয়া মানে? শ্রীশ্রীঠাকুরের উদ্দেশ্যে যাওয়া নয়?
এই হ'লো অপ্রিয় সত্য কথা।
এখন কথা হচ্ছে, আমরা ঠাকুবাড়ি যাই বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে এবং অন্যান্য সাধারণ সময়ে। তখন আমরা ঠাকুরবাড়ি যাই শ্রীশ্রীঠাকুর দর্শন ও প্রণাম, শ্রীশ্রীবড়মা ও শ্রীশ্রীবড়দা দর্শন ও প্রণাম করতে, শ্রীশ্রীআচার্য দর্শন ও প্রণাম করতে, সমস্যা সমাধানের তুক জানতে, আশীর্বাদ নিতে। আমরা ঠাকুরবাড়ি যাই শ্রীশ্রীঅবিনদাদা সহ ঠাকুরবাড়ির অন্যান্য পূজনীয় দাদাদের ও মায়েদের প্রণাম করতে। কিন্তু যখন শ্রীশ্রীআচার্যদেব থাকেন না, শ্রীশ্রীঅবিনদাদাও থাকেন না তখন কেন আমাদের যাওয়ার আগ্রহ ক'মে আসে? শ্রীশ্রীঠাকুর কি ঠাকুরবাড়িতে থাকেন না? তাহ'লে কি ঠাকুরের গ্রহণযোগ্যতা আমাদের কাছে কমে গিয়েছে ও যাচ্ছে? আমাদের কাছে বড় হ'য়ে উঠেছে শ্রীশ্রীআচার্যদেব? শ্রীশ্রীঅবিনদাদা? আমরা কি ঠাকুর থেকে সরে যাচ্ছি? এই কথা অপ্রিয় হলেও এই অপ্রিয় সত্যের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে আরও বড় অপ্রিয় সত্য। আরও বড় অপ্রিয় সত্য বললাম এই কারণে যে, আরও বড় যে সত্য লুকিয়ে রয়েছে সেই সত্য বিরোধী সৎসঙ্গীদের(?) কাছে অপ্রিয়।
যাই হ'ক এখন দেখা যাক এই অপ্রিয় সত্য তো বললাম এখন এর পিছনে আরও বড় অপ্রিয় সত্যটা কি?

১) আমাদের ইষ্ট, আদর্শ, গুরু ও লক্ষ্য কে? শ্রীশ্রীঠাকুর না শ্রীশ্রীআচার্যদেব?
২) শ্রীশ্রীআচার্যদেব কি আমাদের গোল বা লক্ষ্য?
৩) আমাদের বিপদ থেকে প্রতি মুহুর্তে রক্ষা করেন কে?
৪) আমরা প্রতিটি সমস্যা থেকে সমাধান পেয়ে মুক্ত হ'য়ে উঠি কার সাহায্যে?
৫) কে আমাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে যান?
৬) কে আমাদের বন্ধ চোখ খুলে দেন?
৭) প্রতিমুহূর্তে আমরা শক্তি পাই কার কাছ থেকে?
৮) কার সংস্পর্শে আমাদের মনের ময়লা দূর হয়?
৯) কার চোখের দৃষ্টিতে, আশীর্বাদে, দয়ায় আমরা শক্তিমান হ'য়ে উঠি?
১০) কার স্পর্শে আমরা দিব্যদৃষ্টি, দূরদৃষ্টির অধিকারী হ'য়ে উঠি?
১১) কার দয়ায় আমরা রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয় ও দারিদ্রতা মুক্ত হ'য়ে উঠি?
১২) কার দয়ায় নিশ্চিত মৃত্যু ও অকাল্মৃত্যু থেকে আমরা রক্ষা পায়?

এইসমস্ত প্রশ্নগুলির এককথায় উত্তর হ'লো তিনি হলেন আমার আপনার মতন একজন রক্তমাংসের মানুষ। আর, সেই মানুষটিই হলেন এক ও অদ্বিতীয় পুরুষোত্তম, পরমপুরুষ, পরমকারণ, সদগুরু, সর্বদর্শী, সর্বজ্ঞ, সর্ব্বশক্তিমান জীবন্ত ঈশ্বর পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। তিনিই আমাদের প্রতিমুহুর্তে সূক্ষ্মশরীরে রক্ষা ক'রে চলেছেন, পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছেন।
এখন প্রশ্ন করতেই পারে কেউ, শ্রীশ্রীঠাকুর যদি সব কিছুর উৎস হন তাহ'লে শ্রীশ্রীআচার্যদেব যদি ঠাকুরবাড়ি না থাকেন আমরা ঠাকুরবাড়ি যাবো না কেন? শ্রীশ্রীআচার্যদেব যদি ঠাকুরবাড়ি না থাকেন তো কি হ'লো? শ্রীশ্রীঠাকুর তো আছেন? যা নিবেদন করবো আমরা তো ঠাকুরকেই নিবেদন করবো তাহ'লে ঠাকুরবাড়ি যাবো না কেন? শ্রীশ্রীঠাকুর যদি নাই-ই আসতেন পৃথিবীতে তাহ'লে কি এই ঠাকুরবাড়ি ব'লে কিছু থাকতো? শ্রীশ্রীঠাকুর যদি না আসতেন তাহ'লে আচার্যদেব ব'লে কিছু কি থাকতো? শ্রীশ্রীঠাকুর০ ছিলেন বলেই না আচার্যদেবের অস্তিত্ব।


এই যে ভারতবর্ষের বিভিন্ন বড় বড় মন্দিরে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ লোক যান পুজো দিতে তা সে জীবন্ত ঈশ্বরের মন্দির হ'ক আর অমূর্ত ভগবান বা Unseen God বা বোবা ভগবান, মাটির ভগবানের মন্দির হ'ক সেখানে মানুষ যান জীবন্ত ঈশ্বরের দর্শন, প্রণাম করতে বা অমূর্ত দেবতাকে পুজো দিতে, কোন আচার্যের কাছে যান না। অমূর্ত ভগবান বা দেবতাকে পুজো দিয়ে মনে শান্তি পান। তা এখানে কেন আচার্যদেব না থাকলে সৎসঙ্গীদের আগমন কমে যায়? এখানে কেন শ্রীশ্রীঠাকুরের উদ্দেশ্যে আচার্যদেব থাকুক আর না-থাকুক মানুষ আসে না বা কম আসে? কেন এখানে পুজো দিতে আসে না? পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা নেই?


অন্যান্য মন্দিরের মত ফুল প্রসাদের ডালি নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পুজো দেবার ব্যবস্থা কেন নেই দেওঘরে ঠাকুরবাড়িতে? বিভিন্ন বড় বড় মন্দির, তিরুপতির মন্দির, বৈষ্ণদেবীর মন্দির, দেওঘর বাবা বৈদ্যনাথ দেবের মন্দির, কালিঘাট, তারাপিঠ বা দক্ষিণেশ্বরের মন্দির, তারকেশ্বরে অমূর্ত ভগবান বা দেবতাকে পুজো দেবার মতো এখানেও যদি জীবন্ত ঈশ্বরকে পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতো তাহ'লে শ্রীশ্রীআচার্যদেব বা শ্রীশ্রীঅবিনদাদা না থাকলেও না ক'রে পাওয়ায় বিশ্বাসী, কুসংস্কারাছন্ন, নিতেই লেলিহান, ভীরু, দুর্বল, ধান্দাবাজ লক্ষ লক্ষ ভক্তের আগমন হ'তো। আর, এছাড়া যদি ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর বা মা কালীর কোনও অমূর্ত ভগবানের মূর্তি রেখে পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতো দেওঘর ঠাকুরবাড়িতে তাহ'লে সৎসঙ্গীদের সঙ্গে সঙ্গে আম ভক্তকুলের ভিড় উপচে পড়তো সেই জাগ্রত দেবতা হিসেবে প্রচারিত অমূর্ত ভগবানের সামনে পুজোর বর বড় ডালি নিয়ে।


আর, যদি এমনটা হ'তো তাহ'লে শ্রীশ্রীঠাকুর পড়ে থাকতো এককোণে। যেমন দক্ষিণেশ্বরে মায়ের পুজোতে সারাবছর হাজার হাজার ভক্তের বিশেষ ক'রে শাস্ত্র মতে কোনও বিশেষ দিনে লক্ষ লক্ষ ভক্তের ঢল নাবে মায়ের মন্দিরে মায়ের পুজো দিতে। আর, পাশে সৃষ্টিকর্তা, জীবন্ত ঈশ্বর, পুরুষোত্তম, পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের ঘর থাকে ফাঁকা পড়ে। কেউ আসে না তাঁকে দর্শন প্রণাম করতে। আর, রোদে পুড়ে, জলে ভিজে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের দীক্ষিত ও আম ভক্তের দল অমূর্ত ভগবান (Unseen God) মা কালীর পুজো দেওয়ার জন্য। এই হ'লো বাস্তব ছবি। যদি দেওঘরেও এই ব্যবস্থা থাকতো তাহ'লে এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা কামাবার রাস্তা খুলে যেত ঠাকুরবাড়ির। কিন্তু আপশোষের বিষয়, দেওঘরে সৎসঙ্গ মন্দিরে লাইন দিয়ে ফুল প্রসাদের ডালি নিয়ে দাঁড়িয়ে জীবন্ত ঈশ্বরের বা কোনও ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর বা মা-কালি, কোনও অমূর্ত ভগবান বা দেবতার ( Unseen God) পুজো দেবার কোনও ব্যবস্থা নেই।

২০২৩ সালের হিসেব অনুযায়ী আনুমানিক ভারতে ৩৫ লক্ষের চেয়েও বেশি বৃহৎ আকৃতির হিন্দু মন্দির রয়েছে বলে অনুমান করা হয়, যার সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমস্ত বড়ো,মাঝারী,ছোট মন্দির সহ আশ্রম, গুহাপাহাড়, জঙ্গলের ভিতর, রাস্তার ধারে, গৃহদেবতার এবং গ্রামের অধিষ্টাত্রী দেবদেবীর মন্দিরের সংখ্যা ১ (প্রায়) কোটি হবে। সেখানে মানুষের সারা বছর ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু দেওঘরের সৎসঙ্গে এর উল্টো বিপরীত চিত্র দেখা যায়।
মোদ্দা কথা শ্রীশ্রীআচার্যদেব না থাকলে কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের আগমন কমে যায় দেওঘরে, সৎসঙ্গীরা উৎসাহ পায় না আসতে।

১) কেন আসতে উৎসাহ পায় না?
২) কেন সৎসঙ্গীরা অন্য সৎসঙ্গীদের বলে এখন আচার্যদেব নেই, তিনি আসলে পরে যান বা আসুন?
৩) এটা কি অন্যায়? এটা কি ভুল? এটা কি দোষের?
৪) এটা কি শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতি অসম্মান, অশ্রদ্ধা প্রদর্শন?

এই ঘটনা বা দৃশ্য বা কথোপকথন চলে আসছে শ্রীশ্রীঠাকুর পরবর্তী শ্রীশ্রীবড়দার সময় থেকে। শ্রীশ্রীঠাকুরের সময় সবসময় আশ্রমে মানুষে মানুষে ভিড় লেগে থাকতো, গিজগিজ করতো মানুষ। শ্রীশ্রীঠাকুরের তিরোধানের পর থেকে ক্রমশঃ ঠাকুরবাড়িতে মানুষের আসার সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েছে, বেড়েই চলেছে। শ্রীশ্রীবড়দার সময় থেকে শ্রীশ্রীদাদা হ'য়ে বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্দেব পর্যন্ত চলে আসছে আর এই ট্রাডিশান চলতে থাকবে আগামী দিনে শ্রীশ্রীঅবিনদাদার মধ্যে দিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মের পর প্রজন্মের হাত ধরে হাজার হাজার বছর ধ'রে, আবার যতদিন না শ্রীশ্রীঠাকুর নোতুন রূপে আসছেন। আর, কলি যুগ শেষ হ'তে এখনও বহু হাজার হাজার বছর বাকী। এই হাজার হাজার বছর ধ'রে চলবে আচার্য প্রথা, আচার্য পরম্পরা।
এই যে লোকসংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে কিন্তু যখনি শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা ঠাকুরবাড়িতে থাকতেন না তখনও সৎসঙ্গীদের আগমন কম হ'তো, যা এখন বর্তমান আচার্যদেবের সময় যত দিন যাচ্ছে তত আশ্চর্যজনকভাবে আরও প্রকট হ'য়ে উঠছে। সাধারণ দিনগুলিতে শ্রীশ্রীআচার্যদেব ঠাকুরবাড়িতে কিংবা উৎসব ইত্যাদিতে উপস্থিত থাকলে লক্ষ লক্ষ লোকের আগমণ হয় আর তাঁরা ঠাকুরবাড়িতে না থাকলে ফাঁকা ফাঁকা লাগে। কেন এমন হয়?
এর থেকে তিনটে জিনিস প্রমাণ হয়।

১) কেন ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার পানাগড়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু কর্তৃক সৎসঙ্গের জন্য অনুমোদিত ৬০০০ হাজার বিঘার পরিবর্তে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের দেওয়া ৮০০ বিঘা জমি শ্রীশ্রীঠাকুর রিজেক্ট করেছিলেন।
২) ছোটোবেলায় ছোট্ট শিশু শ্রীশ্রীদাদাকে পথের ধারে খেলা করতে দেখে ছোট্ট শিশু শ্রীশ্রীদাদাকে দেখিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর কেষ্টদাকে ( শ্রীকৃষ্ণ প্রসন্ন ভট্টাচার্য) কেন বলেছিলেন, " আমার সৎসঙ্গের প্রকৃত আন্দোলন আমার থার্ড জেনারেশন থেকে শুরু হবে"।

৩) আর কেনই বা শ্রীশ্রীবড়দা হাসপাতাল থেকে সদ্য ঘরে আসা ছোট্ট শিশুকে কোলে নিয়েই শিশুর মুখের দিকে তাকিয়েই বিস্ময়ে তাঁর চখা আখি বিস্ফারিত ক'রে বলে উঠেছিলেন, "বাবা আই!!!!!" আর সেই থেকেই হ'য়ে গিয়েছিল বর্তমান আচার্যদেবের নাম বাবাই?


৪) কেন শ্রীশ্রীদাদা বলেছিলেন, বাবাই বাকসিদ্ধ পুরুষ। ও যা বলে তা ফলে যায়। সারা ভারত জুড়ে দীক্ষা পরিক্রমায় বেরোবার সময় কেন শ্রীশ্রীদাদা বলেছিলেন, বাবাই দীক্ষা দিতে বেড়োয়নি, শ্রীশ্রীঠাকুর স্বয়ং দীক্ষা দিতে বেড়িয়েছেন।


৫) কেন দেওঘরে বা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে উৎসব অনুষ্ঠানে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের অবর্তমানে বা অনুপস্থিতিতে শ্রীশ্রীঅবিনদাদার উপস্থিতিতে তাঁকে দেখবার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়ো হয়? এর জন্যে তো রাজনৈতিক দলের মঞ্চ ভরাবার মত লোক সংগ্রহের কোনও পরিকল্পনা বা ব্যবস্থা থাকে না। এ তো সম্পূর্ণ স্বতস্ফুর্ত যোগদান।

এখন এই যে পাঁচটা জিনিস তুলে ধরা হ'লো এর উত্তর কি? এর উত্তর ছিল, আছে ও আগামী দিনেতেও থাকবে তা হ'লো জন বিস্ফোরণ। জন বিস্ফোরণের সম্ভাবনা বুঝতে পারার কারণেই শ্রীশ্রীঠাকুর ৬০০০বিঘার পরিবর্তে ৮০০ বিঘা জমি দেওয়ার বিধান চন্দ্র রায়ের সরকারী প্রস্তাব সরাসরি রিজেক্ট ক'রে দিয়েছিলেন। দূরদর্শী সত্যদ্রষ্টা শ্রীশ্রীঠাকুরের ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হ'তে ওই ৮০০বিঘা জমি যথেষ্ট বিবেচিত না হওয়ায় তিনি অদূরদর্শী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের ৮০০বিঘার প্রস্তাব বাতিল ক'রে দিয়েছিলেন। সত্যদ্রষ্টা পরমপুরুষ পরমপিতা তাঁর সৃষ্টির আদি অন্ত সবটাই জানেন, তিনি সর্বদর্শী। তিনি যেদিন দেহরূপে, স্থুলরূপে থাকবেন না সেদিন কি হবে তা তিনি জানতেন বলেই ৮০০ বিঘা দয়ার দান রিজেক্ট ক'রে দিয়েছিলেন। জ্ঞানের অহংকারে, দূরদর্শীতার অভাবে শ্রীশ্রীঠাকুরকে অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তাকে তাঁরই সৃষ্ট জমি তাঁরই সৃষ্ট মানুষ অদূরদর্শী ডঃ বিধানচন্দ্র রায় তাঁকে তৎকালীন প্রদানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু কর্তৃক ৬০০০ হাজার বিঘার পরিবর্তে ৮০০বিঘা জমি দান করতে চেয়েছিলেন দয়া ক'রে। এর থেকে বেশী ঠাট্টা, অপমান, অশ্রদ্ধা, অজ্ঞানতা, অহংকার, ঔদ্ধত্ব, বেকুবি, সবজান্তা মনোভাব, শ্রেষ্ঠজনকে অস্বীকার, ইগো আর কিছু নেই। মেরী বিল্লি মুঝসে ম্যাঁও।


উৎসব ইত্যাদি ছাড়াই জন বিস্ফোরণ দিন দিন ভয়ঙ্কর হ'য়ে উঠছে প্রতিদিন সাধারণ সময়ে। যা চিন্তার কারণ হ'য়ে উঠছে স্থান সঙ্কুলান ও ভূগর্ভস্থ অপর্যাপ্ত জলের কারণে। বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেবের নেতৃত্বে শ্রীশ্রীঠাকুরের জলের সমস্যা সম্পর্কিত Blue print বাস্তবিত হয়েছে ও হয়ে চলেছে।

আর, শ্রীশ্রীঅশোকদাদার হাত ধ'রে বিশ্বজুড়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবন দর্শন 'বাঁচা-বাড়ার মতবাদ, জীবনবাদ বা অস্তিত্ববাদ'-এর আন্দোলন ও শ্রীশ্রীঠাকুর সৃষ্ট এক ও একমাত্র প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ'-এর প্রচার ও প্রসার আজ সারাবিশ্বে আলোচিত যা শ্রীশ্রীঠাকুরের ছোট্ট শিশু শ্রীশ্রীদাদাকে দেখিয়ে বলা "আমার সৎসঙ্গের প্রকৃত আন্দোলন শুরু হবে আমার থার্ড জেনারেশন থেকে" এই ভবিষ্যত বাণী প্রমাণ করে।


আর, বর্তমান আচার্যদেবের মধ্যে যে শ্রীশ্রীঠাকুর ভয়ঙ্করভাবে জীবিত তা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সৎসঙ্গী প্রতিমুহুর্তে অনুভব করতে পারে। অনুভব করতে পারে শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রায়ই সময়ের বলা, "আজও লীলা করে গৌড়চাঁদ রায়, কোনও কোনও ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়।" এই ছড়ার মধ্যে দিয়ে যেমন শ্রীশ্রীঠাকুরের মধ্যে তাঁর প্রতিটি পূর্বরূপ রাম। কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ-এর লীলা বিচ্ছুরিত হ'তো ঠিক তেমনি শ্রীশ্রীঠাকুরের ব'লে যাওয়া "ইষ্টগুরু পুরুষোত্তম প্রতীক গুরু বংশধর রেত শরীরে সুপ্ত থেকে জ্যান্ত তিনি নিরন্তর" এই ছড়ার বিচ্ছুরণ আমরা দেখতে পেয়েছি শ্রীশ্রীবড়দার মধ্যে, শ্রীশ্রীদাদার মধ্যে, দেখতে পাই বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেবের মধ্যে। দেখতে পায় ঠাকুর প্রতি মুহুর্তে আচার্যদেবের মাথার চুল থেকে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত যেন সঙ্কেত দিচ্ছে, ম্যায় হুঁ না, ডর কিস বাত কি? হাম হ্যাঁয় না। ডরো মাত। কল যুগ কা First and foremost পরিচয় হ্যাঁয় হল্লা। আগর হল্লা নেহী হোগা তো কলযুগ কা অস্তিত্ব কাহাঁ হ্যাঁয়? কলযুগ কিউ বোলা যাতা হ্যাঁয়? কলযুগ কা অর্থ ক্যা হ্যাঁয়? ধ্যান মত দো। ঠাকুরজীকা ধ্যান মে ডুব যাও। ঠাকুরজী হ্যাঁয় না।


শ্রীশ্রীআচার্যদেবের ধীর অথচ দ্রুত অদ্ভুত এক টানটান দৃপ্ত ভঙ্গীতে হেঁটে চলা, কথা বলা, অঙ্গভঙ্গী, আচার-আচরণ, চালচলন, চোখের চাউনি, চোখমুখের অভিব্যক্তি, অঙ্গুলি হেলন, মিষ্টি মধুর হাসি, কখনও বা বিস্ফারিত সার্চলাটের মতো উজ্জ্বল গভীর চোখের দৃষ্টি আমাকে ব'লে দেয়, ঐ দ্যাখ রেত শরীরে সুপ্ত জীবন্ত ঠাকুরজী আসছেন! তাঁর দিকে তাকালেই মনে পড়ে যায় ঠাকুরের বাণীঃ "তোমায় দেখে চিনবে লোকে তোমার ঠাকুর কেমন! তোমার সুন্দর আলোময়, রূপময়, রসময়, মধুময় জীবন দেখে বলবে লোকে কোথায় গেলে পাবো এমন জীবন!? শ্রীশ্রীআচার্যদেবের চোখের ভয়ংকর উজ্জ্বল দৃষ্টি মুহূর্তে যার শরীরের ওপর পড়ে সেই দৃষ্টি তার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ পড়ে ফেলতে পারে। এটা বিজ্ঞান। এই ক্ষমতা যার ভিতরে ঠাকুর যতটা জাগ্রত ততটাই তাঁর ক্ষমতা প্রবল ও ততটাই সে দেখতে পারে। শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর বংশধরদের সবার মধ্যে রেত শরীরে বর্তমান। শ্রীশ্রীঠাকুরের রক্ত যার যার মধ্যে বইছে সবাই এই ক্ষমতার অধিকারী। এবং যারা ঠাকুরের কৃষ্টিজাত সন্তান তাঁদের মধ্যে যাঁদের মধ্যে ঠাকুর যতটা জাগ্রত, যার মধ্যে যতটা ঠাকুরের ঠাকুরত্ব জাগ্রত তিনি ততটাই ঐ ক্ষমতার অধিকারী। তাই তিনি বলেছিলেন, তোমাকে দেখে, তোমার কথাবার্তা, চালচলন, আচার আচরণ, হাবভাব, ভঙ্গী, চোখের চাউনি, মুখের হাসি দেখে, তোমার সঙ্গ ক'রে লোকে বুঝে যাবে তুমি কে? তোমায় মুখে বলতে হবে না তুমি সৎসঙ্গী, তুমি ঠাকুরের মানুষ, তুমি ঠাকুরের দীক্ষিত। তোমায় দেখে লোকে বলবে কোথায় গেলে পাবো এমন জীবন?

শ্রীশ্রীআচার্যদেবের মধ্যে আমরা শ্রীশ্রীঠাকুরকে পূর্ণরূপে জাগ্রত দেখতে পাই, অনুভব করি, উপলব্ধি হয়। সবকিছু দেখে যেন মনে হয় দয়াল ঠাকুর আমাদের সামনে সশরীরে বসে আছেন আর আমাদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন তাঁকে প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা আমাদের নানারকম সমস্যার প্রশ্নবাণে জর্জরিত করার জন্য আর তিনি সমস্ত প্রশ্নের সহজ, সরল, যুক্তিপূর্ণ, বিজ্ঞান নির্ভর সমাধানী উত্তর দিচ্ছেন যতক্ষণ মানুষ আছেন ততক্ষণ। কি অসীম অনন্ত ধৈর্য! যা আমরা দেখেছি শ্রীশ্রীঠাকুরের মধ্যে। যা কোনও সাধারণ অসাধারণ মানুষের পক্ষে কখনই সম্ভব নয়। এটা সম্পূর্ণ অলৌকিক। যা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। শুধু বলতে পারি শেক্সপিয়ারের সেই হ্যাম্লেট নাটকের উক্তি, যা শ্রীশ্রীঠাকুর প্রায় সময় বলতেন, "There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreampt of in your philosophy." (স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরাশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত)


এই যে আচার্যদেবের মধ্যে আমরা আমাদের দয়াল ঠাকুরকে প্রত্যক্ষ করি এই প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর নিজেই বলে গেছেন,

"গুরু পুরুষোত্তমকে direct ( সরাসরি) যারা না পায়, তারা ত'দনুবর্তী আচার্য-পরম্পরার ভিতর দিয়ে তাঁর ভাবটাই কিছু না কিছু পায়। ঐ ভাব যখন মলিন ও ম্লান হ'য়ে যায়, উবে যাবার মতো হয়, বিকৃতিতে আচ্ছন্ন হ'য়ে ওঠে, মানুষকে ঈশীস্পর্শে সঞ্জীবিত ক'রে তোলবার জন্য তখন তিনি আবার মানুষ হ'য়ে আসেন, মানুষের মধ্যে তাদেরই একজন হ'য়ে বিচরণ করেন, আর নিজের আচরণ দিয়ে প্রতি পদক্ষেপেই দেখিয়ে দেন, কেমন ক'রে মানুষ ঈশ্বরের হ'য়ে চলতে পারে সব কিছুর মধ্যে।"
----শ্রীশ্রীঠাকুর। আলোচনা প্রসঙ্গে (১ম খন্ড/ পৃষ্টা ১৫৩; ৪/১২/৪১)

এছাড়াও বলেছেন,
শ্রীশ্রীঠাকুর- গুরুর তিরােধান যদি হয় তখন তিনি মূৰ্ত্তি গ্রহণ করেন
আচার্য্যের ভিতর। আচাৰ্য্যদেবাে ভব’ না কী কয়! আচাৰ্য—যাঁর আচরণকে অনুসরণ করে আমরা সমৃদ্ধ হয়ে উঠি। (দীপরক্ষী ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ২২)
আবার শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন,
"ইষ্টগুরু পুরুষোত্তম
প্রতীক গুরু বংশধর
রেত শরীরে সুপ্ত থেকে
জ্যান্ত তিনি নিরন্তর।"

এবার ফিরে আসি আমার প্রথমদিকের কথায় কেন সৎসঙ্গীদের দেওঘর ঠাকুরবাড়িতে আচার্যদেব না থাকলে আগমন কম হয়।
আমরা জানি, আমাদের দয়াল শ্রীশ্রীঠাকুর কোথায় থাকেন।
ঐ যে পদ্মপুরাণে আছে,
নাহং তিষ্ঠামি বৈকুন্ঠে, যোগীনাং হৃদয়ে চ।
মদ্ভক্তা যত্র গায়ন্তি, তত্র তিষ্ঠামি হে নারদ।।
(অর্থাৎ :শ্রীশ্রীভগবান বলেছেন - "আমি বৈকুন্ঠে বাস করি না, যোগী হৃদয়েও বাস করি না, আমার ভক্তগন যেখানে আমার নাম কীর্তন করে, হে নারদ ! সেখানেই আমি অবস্থান করি ।।" )

কিন্তু আমরা ঠাকুরবাড়ি যাই তাঁর কারণ ঠাকুরের কথামত ঠাকুর রেত শরীরে ওখানে লীলা করছেন। দেওঘরের আকাশে বাতাসে, গাছগাছালিতে, পথেঘাটে সব জায়গাতে ছড়িয়ে আছে তাঁর গায়ের বাতাস, সেই বাতসে মিশে আছে তাঁর অনুপম শরীরের সুবাস, তাঁর পায়ের স্পর্শ আছে পার্লার, নিভৃত নিকেতন, নিরালা নিবেশ, জামতলা অঙ্গন, মেমোরিয়া, চিড়িয়াখানা চত্বর, স্নানকুন্ড ইত্যাদি ইত্যাদি বিশাল আশ্রম চত্বর জুড়ে, হাতের স্পর্শ আছে সেইসব স্থানে ও গাছগাছালিতে। সেই সমস্ত কিছু অনুভূত হয় তখন, যখন আচার্যদেবকে সেইসব জায়গা দিয়ে হেঁটে চলে যেতে দেখি, যখন দেখি তিনি বসে আছেন প্রার্থনা স্থলে, যখন দেখি তিনি বসে আছেন নাট্মন্দিরে, কথা বলছেন মোহন ভঙ্গীতে তখন তাঁর অপরূপ শরীরে স্পষ্ট অনুভূত হয় শ্রীশ্রীঠাকুরের উপস্থিতি। বর্তমান আচার্যদেবের নয়নজুড়ানো দেহসৌষ্ঠব, মন মাতাল করা তাঁর কথা, যুক্তিপূর্ণ সহজ সমাধানী উত্তর, তাঁর ভুবনভোলানো মিষ্টি মধুর হাসি, তাঁর কোমল-কঠিন ব্যবহার দেখে চোখের সামনে ভেসে ওঠে পার্লারে বসে থাকা ঠাকুরের সেই একই রকম দৃশ্য, মনে পড়ে এস ওয়াজেদ আলির সেই বিকজ্যাত লাইন, "সেই ট্রাডিশান সমানে চলেছে।" যে দৃশ্য দেখে আমার পরিচিত আচার্যদেবের অতি বড় সমালোচককেও নতমস্তকে সলজ্জ ভঙ্গীতে নিম্ন কোমল স্বরে ভেজা গলায় অশ্রুসজল চোখে বলতে শুনি, সত্যি সত্যিই "আজও লীলা ক'রে গৌড় চাঁদ রায়, কোনও কোনও ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়" আর "ইষ্টগুরু- পুরুষোত্তম প্রতীক গুরু বংশধর, রেত-শরীরে সুপ্ত থেকে জ্যান্ত তিনি নিরন্তর।"
তাই আচার্যদেব না থাকলে আমরা সরাসরি ঠাকুর দর্শন, ঠাকুরের সঙ্গ লাভ থেকে বঞ্চিত হ'ই, তিনি যদি এবারও না রেখে যেতেন তাঁর বংশধর তাহ'লে আমরা এই ঘোর কলিযুগে, আমার চারপাশের ভয়ংকর সমস্যা জর্জরিত অন্ধকার জীবনে, জটিল নোংরা সমাজ জীবনে আমরা পাগল হ'য়ে যেতাম, মৃত্যুই একমাত্র আমাদের গন্তব্যস্থল হ'তো ঘরে ঘরে। এই কঠিন অন্ধকার জীবনে অক্সিজেন পাওয়ার জন্য আমরা ছুটে ছুটে যায় জীবন্ত ঠাকুর দর্শনের জন্য দেওঘরে। শ্রীশ্রীআচার্যদেব না থাকলে, শ্রীশ্রীআচার্যদেবের মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুর রেত শরীরে সুপ্ত না থাকলে আমরা বঞ্চিত হ'তাম আমাদের সমস্যা জর্জরিত জীবনে রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয় ও দারিদ্রতা নানাবিধ সমস্যার সমাধান পেয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া থেকে, বঞ্চিত হ'তাম আলোর সন্ধান পেতে যা' বোবা ভগবানের কাছ থেকে, অমূর্ত ভগবানের কাছ থেকে পাওয়া সম্ভব হ'তো না। আমাদের মতো রিপুতাড়িত বৃত্তি-প্রবৃত্তির বৃত্তে ডুবে থাকা জীবেদের পক্ষে শ্রীশ্রীঠাকুরের মূর্তি বা ফটোর সামনে বসে থেকে সমস্যার সমাধান পাওয়া, বিপদ থেকে বাঁচা কোনওদিনও সম্ভব হ'তো না।
আর, আচার্যদেব না থাকলে অবিনদাদার মধ্যে দিয়ে সেই অভাব কিছুটা পূরণ করি। পূরণ করি ঠাকুরবাড়ির অন্যান্য দাদাদের সংস্পর্শে থেকে। আমরা তো ভক্ত প্রহ্লাদ নই যে স্বয়ং শ্রীশ্রীঠাকুরকে সাধনার জোরে আমাদের সামনে নাবিয়ে আনবো। তাই ঠাকুর দয়া ক'রে এবার এই কলিযুগে আমাদের সামনে পূর্ণচন্দ্রের মতো রেত শরীরে অবস্থান করছেন শ্রীশ্রীআচার্যদেবের মধ্যে দিয়ে, আচার্য প্রথা ও আচার্য পরম্পরার মধ্যে দিয়ে। তাই আচার্যদেব আশ্রমে না থাকলে আমরা সৎসঙ্গীরা অসহায় বোধ করি। তিনি যখন যেখানে থাকেন সেখানে সৎসঙ্গীদের ঢল নাবে। সৎসঙ্গী জীবন্ত ঈশ্বরের পূজারী। শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে দেখে আমাদের অশান্ত মন শান্ত হয়, আমাদের প্রায় বন্ধ হ'য়ে যাওয়া হৃদস্পন্দন আবার চালু হ'য়ে যায়। আমরা বাঁচি, আমরা আবার পূর্ণশক্তি নিয়ে বেড়ে উঠি। এই সহজ কথাটুকু তারা বুঝতে পারে না, যাদের এই বিশ্বাস নেই, নেই নাম ধ্যান, নেই ঠাকুরের ঠাকুরত্ব জাগাবার ইচ্ছা ও চেষ্টা, যাদের নেই অভিজ্ঞতা, নেই উপলব্ধি; তাদের কাছে সবটাই বকোয়াস, বকোয়াস এই জীবন, বকোয়াস এই পৃথিবী। শ্রীশ্রীঠাকুর সৃষ্ট মূল কেন্দ্র 'সৎসঙ্গ'-এর বিরোধীদের কাছে এ প্রতিবেদন অপ্রিয় হ'লেও ভয়ংকর সত্যি। এ চিরন্তন সত্য।
এসব কথা প্রিয় হ'লেই বা কি আর অপ্রিয় হ'লেই বা কি। সত্য হ'লেই বা কি, আর মিথ্যা হ'লেই বা কি? মানলে ভালো, না-মানলে তার ব্যাপার, সময় থেমে থাকে না। সত্য তার আপন পথে চলতে থাকে।


তাই, শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট নাটকের সেই সংলাপ যা শ্রীশ্রীঠাকুর কথায় কথায় বলতেন, আবার বলি, There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreampt of in your philosophy. যার অর্থ, (স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরাশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত)

এই সংলাপ ঠাকুর বারবার বলতেন আমাদের চেতনাকে জাগ্রত করার জন্য, আমাদের সন্দেহকে দূর ক'রে বিশ্বাসকে শক্ত করার জন্য, মিথ্যার জগত থেকে বেরিয়ে এসে সত্যের মুখোমুখি হওয়ার জন্য। সেই সংলাপ বিরোধীরা জানেন না বা জানলেও মানেন না বা অর্থ বোঝেন না। তাই তারা আচার্য প্রথা, আচার্য পরম্পরা, আচার্যদেবের মধ্যে দিয়ে রেত শরীরে ঠাকুরের পূর্ণপ্রকাশ বিশ্বাস করে না। করে না তাদের আত্মপ্রতিষ্ঠা, একচেটিয়া ক্ষমতা দখল ও মৌরসি পাট্টা বজায় রাখার জন্য।
আজ এই পর্যন্ত। সবাইকে জয়গুরু জানিয়ে আজকের মত আসছি।

প্রবন্ধঃ রথযাত্রা।

আজ সোজা ও উল্টোরথ নিয়ে কথা বলবো।
আবার কাল ১৬ তারিখও পালন হবে উল্টোরথ। ৫৩ বছর বাদে এবার দু-দিন ধরে পালিত হ'চ্ছে রথযাত্রা। গত ৭ ও ৮ জুলাই রথযাত্রা পালিত হয়েছে এবার উল্টোরথও ১৫ ও ১৬ দুদিন ধরে চলবে।

ঘরের ভেতর থেকে শুনতে পাচ্ছিলাম বাইরে মাইকে বাজছে হরে কৃষ্ণ হরে রাম কীর্তন। আওয়াজ শুনে বাইরে এসে তাই দেখছিলাম। গলির ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসছে কীর্তনের দল। সামনে ম্যাটাডোরে মাইক লাগানো। পিছনে নারীপুরুষ আনন্দে নাচতে নাচতে চলেছে। কিন্তু কোনও রথ দেখতে পেলাম না। অনেকক্ষণ পর বোধহয় মাসীর বাড়ি থেকে গলি দিয়ে বেড়িয়ে এলো রথ। মানুষের ভিড়ে দেখা যাচ্ছে না রথ। কারণ রথের উচ্চতা খুব বেশী হ'লে ফুট তিনেক। খাজনা থেকে বাজনা বেশী। দেখলাম হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে ঐ ছোট্ট রথের দড়ি টানাটানির কাড়াকাড়িতে। সবাই পুণ্যি করতে চায়। ঐ টানাটানিতে ছোট্ট ৩-৪ ফুটের হাল্কা রথ একবার উল্টে পড়ে যেতে যেতে বেঁচে গেল। কোনরকমে সামলে নিল সামনে যারা ছিল।
এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল অনেক কথা।

এ বছরে পুরীর সোজা রথের কথা মনে পড়লো।
পুরীতে গুন্ডিচা মন্দিরে রথ থেকে নামানোর সময় পড়ে যায় বলরামের মূর্তি। বলরামের মূর্তি পড়ে ৫জন সেবায়েত আহত, পুরীর হাসপাতালে ভর্তি। শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার পরেই প্রচুর মানুষের ভিড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এর ফলে জখম হন বহু মানুষ। তাঁদের মধ্যে একজন শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারাও গেছেন।

মনে পড়ে গেল, বাংলাদেশের রথযাত্রার দিনে মর্মান্তিক ঘটনার কথা। বাংলাদেশের বগুড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ৫ জনের। ৫০ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রথের সঙ্গে সড়কের ওপরে থাকা বিদ্যুৎ-র তারের সংস্পর্শে এসে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

মনে পড়ে গেল আজ থেকে কয়েক বছর আগে রথযাত্রার দিন সকালের একটা ঘটনার কথা। সকালে প্রতিদিনের মত গাড়ি নিয়ে বেড়িয়েছিল ভাইপো অফিসের কাজে। পথে রাস্তার ধারে অনেক রথ নিয়ে বসেছিল রথবিক্রেতা। বাজারের রাস্তা দিয়ে বড় রাস্তা জিটি রোডে ওঠার মুখে পিছন থেকে একটা বাস এসে এমন সাইড চেপে দিল, গাড়ি টাল সামলাতে না পেড়ে রাস্তার ধারে থাকা সাজিয়ে রাখা রথের ওপর গিয়ে ধাক্কা মেরে পাশের বন্ধ দোকানে গিয়ে ধাক্কা মারলো। আর, সুযোগ বুঝে ঝামেলা হওয়ার আগেই বাস দ্রুতবেগে বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী না নিয়ে বেড়িয়ে গেল। গুণাগার দিতে হ'লো ভাইপোকে। কথায় আছে, ভাগ্যবানের বোঝা ভগবানে বয়। ঠিক তেমনি, ভাইপো রথ বিক্রেতাকে ডেকে সব রথের দাম দিয়ে দিল। সব রথ একসঙ্গে বিক্রি হ'য়ে গেল। আর, বন্ধ দোকানের মালিককে ডেকে ব'লে দিল, মিস্ত্রি ডেকে সারিয়ে নিতে। মিস্ত্রি এলে তাকে দোকানের বন্ধ দরজাটা দেখিয়ে তার পারিশ্রমিক দিয়ে দিল।

এখন আসুন একটু দেখে নিই জ্যোতিষবিদরা কি জানাচ্ছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন যে উল্টোরথের দিন কোন কোন খাবার ভুলেও মুখে তুলতে নেই। এই সব খাবারগুলি যদি আপনি উল্টোরথের দিনে খান, তাহলে আপনার জীবনে নাকি বড় সমস্যা দেখা দেবে।

তেতো জাতীয় খাবার
উল্টোরথের দিন উচ্ছে, করলা, নিমপাতা বা কুলেখাড়া জাতীয় সবজিগুলি ভুল করেও খাওয়া উচিত নয়। জীবনে অশুভ প্রভাব আনতে পারে। শরীরের পক্ষে উপকারী এই সব্জিগুলি যা ঔষধিয় গুণাবলীতে সমৃদ্ধ তা' কি অশুভ প্রভাব আনতে পারে তা আমার জানা নেই।

পুঁইশাক
শাস্ত্র বলছে যে সোজা রথের দিন ও উল্টো রথের দিন পুঁইশাক খাবেন না। মহাপ্রভু জগন্নাথদেব রুষ্ট হতে পারেন। হ'য়ে যাওয়া কাজও আটকে যেতে পারে। প্রেমময় মহাপ্রভু পুঁইশাক খেলে কেন রুষ্ট হবেন সেটা কেউ জানলে একটু জানাবেন।

কলমি শাক
উল্টো রথের দিন কলমি শাকও খাওয়া উচিত নয়, খেলে সংসারে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হতে পারে। এছাড়া আর্থিক সমস্যার মুখেও পড়তে পারে।

আমিষ খাবার
সোজা রথ ও উল্টো রথ, রথযাত্রার এই দু-দিনই আমিষ খাবার এড়িয়ে চলার কথা বলছে শাস্ত্র। মাছ, মাংস, ডিম,পেঁয়াজ ও রসুন ইত্যাদি আমিষ খাবার খেলে মহাদেব রেগে যেতে পারেন। ফলে অর্থ ক্ষতি হতে পারে। আর সারা বছর খেলে কোণও দোষ নেই। শরীরেরও ক্ষতি নেই, অর্থেরও ক্ষতি নেই।

অ্যালকোহলঃ রথের এই দু-দিন মদ, গাঁজা, সিগারেট ইত্যাদি কোনও নেশার দ্রব্য স্পর্শ করা উচিত নয়। সারা বছরের অন্যান্য সময় স্পর্শ করা যেতে পারে তখন কোনও দোষ হয় না।
এই যেগুলি নিষিদ্ধ বললাম রথের দিনে সারা বছর সেগুলি গ্রহণ করলে বা অন্যান্য পাপ কাজ করলে মহাদেব, মহাপ্রভু জগন্নাথ দেব রাগ করেন না।

যাই হ'ক, একটা পোষ্ট দেখছিলাম,
সারা বছর পাপ ক'রে রথের দড়ি টানলে নাকি সব পাপ মুছে যাবে।
জগন্নাথ দেব রথ থেকে নেমে থাপ্পড় মারে না এটাই অনেক।

এই থাপ্পড়টা খাওয়ার ভয়ে আমি রথের দড়ি টানা তো দূরের কথা রথের আশেপাশেই যাই না, যাইওনি কোনওদিন। হাজার হাত দূরে থাকি। এটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা। কে বলতে পারে কখন রথ থেকে জগন্নাথ নেবে আসবে? হঠাৎ যদি খাড়েমারে ঐ গোল গোল ভয়ংকর চখা আঁখি নিয়ে রথ থেকে নেবে এসে কষে একটা থাপ্পড় মারে গালে সবার সামনে, তখন? লজ্জায় অপমানে "দাদা কলসি দড়ি দে, ডুবে মরি রে" ব'লেও কোনও লাভ হবে না; এ লজ্জা, এ জ্বালা তাড়া ক'রে বেড়াবে মৃত্যুর পড়েও জনম জনম তা যতবড়ই আমি দাদা হ'ই না কেন, তাঁর সঙ্গে তো দাদাগিরি চলবে না, থাপ্পড় খেয়ে মুখ নীচু ক'রে লজ্জায় চ'লে আসতে হবে মানে মানে আরও অসম্মান হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে। ঐ বিরাশী সিক্কার থাপ্পড়ের জ্বালা আর দাগ মুছতে লেগে যাবে বাকী জীবনটা ঘরের মধ্যে মুখ লুকিয়ে ব'সে থেকে, যদি কেউ গালের দাগটা, থ্যাবড়ানো গালটা কেউ দেখে ফেলে এই লজ্জায়, এই ভয়ে। আর ঐ ভয়ংকর চখা আঁখি আর তাঁর বিরাশী সিক্কার থাপ্পড় ঐ ডাবল অ্যাকশান টুথ ব্রাশ দিয়ে ঘষা খাওয়ার পর শালা ছাল চামড়া আর কিছু থাকবে না শুধু কঙ্কালটা ছাড়া। আর কঙ্কালটায় গালের অংশটা দুমড়ে মুচড়ে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। এখন পাঠক বলতেই পারে, আরে বাবা, আপনাকে মারতে যাবে কেন? আপনি কি করেছেন? কথাটার উত্তরে বলতে পারি, অতশত জানি না বাবা, দিনকাল খারাপ, কখন শালা উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চেপে যাবে তার ঠিক কি? আর যদি চেপে যায়? নাও শালা এবার ঠালা সামলাও। তখন তো বন্ধু আপনি দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাদাম ভাজা খাবেন যেন কিছুই দেখতে পাননি এমন ভাব নিয়ে আর হুলো বিড়ালের মতন ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানেন না হাবভাব নিয়ে। আর বাদাম ভাজা খেতে খেতে মুচকি মুচকি শয়তানী হাসি হাসবেন। তার থেকে দূরে থাকায় ভালো।

তাই, রথের মেলার পোড়া তেলের পাপড় ভাজা আর রসহীন শুকনো জিলিপি খাওয়ার ইচ্ছা ও লোভ থাকলেও মুখ গুঁজে পড়ে থাকি ঘরের কোণে; বের হ'ই না। ঐ চখা আঁখিকে আমার বড় ভয়। ভাগ্যিস শালা নিম কাঠে আবদ্ধ হ'য়ে রইলো ঐ হাত কাটা জগন্নাথ তাঁর চখা আঁখি নিয়ে। নইলে ঐ একনম্বরী চখা আঁখি দাদার সামনে দেশজুড়ে দু'নম্বরী থেকে দশনম্বরী দাদাদের দাদাগিরি ছুটিয়ে দিত ---- লাথি মেরে ফাটিয়ে দিয়ে। ভালোই হয়েছে জগন্নাথদা নেবে আসে না রথ থেকে নীচে। ঐ রথের ওপর থেকে চোখ ফাঁড় ফাঁড় ক'রে বিস্ফারিত চোখে চেয়ে থাকে নীচে রাস্তার দিকে লোকেদের বালখিল্য ভক্তির ধ্যাস্টামো। আর, চোখ ফেটে বেরিয়ে আসতে চায় চোখের মণি। ঐ চোখ দেখলেই বোঝা যায়, এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। এটা অনুভবের ব্যাপার। আমি জানি, হাত নেই পা নেই জগন্নাথ না পারবে হাত দিয়ে রথকে থামাতে, না পারবে পা দিয়ে লাথি মেরে রথের ওপর থেকে তাঁর রথে চড়ে বসা অনাহূতদের ফেলে দিয়ে নেবে আসতে। তবুও আমি রিস্ক নিতে পারবো না। মাথায় থাক আমার জগন্নাথ দর্শন, মাথায় থাক আমার রথযাত্রা, মাথায় থাক আমার রথের দড়ি ধরা। শালা কখন ঐ মোটা দড়ি সাপের মত গলায় পেঁচিয়ে যাবে তার ঠিক কি? আর ওপর থেকে নেবে আসবে জগন্নাথ না হোক বিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার বলরাম কে বলতে পারে? মাথায় থাক আমার পাপড় ভাজা আর জিলিপি খাওয়ার লোভ। চাচা আপন প্রাণ বাঁচা। আমার গাঁয়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা। সাবধানের মার নেই। 
সাধু সাবধান!

Monday, July 15, 2024

প্রবন্ধঃ ব্রাজিল আমার নয়নমণি, জার্মান আমার প্রাণ'

ব্রাজিল আমার নয়নমণি, জার্মান আমার প্রাণ' Post-এ আমার কয়েকজন পাঠক বিরুপ মন্তব্য করেছিল। একজনতো নোংরা ভাষায় গালাগালি করতেও সামান্যতম দ্বিধাবোধ করেনি। গালাগালি ক'রে সে তার রক্তের পরিচয় দিয়েছিল। ব্রাজিল প্রেমী কেউ কেউ সমর্থক আমার এই মনোভাবে বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করেছিল আমি কি 'আমার নয়নের মণি'র ৭ গোল খাওয়াতে কষ্ট পাইনি? যাই হ'ক একটা উপভোগ্য ফাইনাল খেলা সমস্ত ভুলিয়ে দিল। আর তাই আমি আমার প্রতিক্রিয়া শেয়ার করলাম আমার সমস্ত পাঠক বন্ধুদের জন্য এই লেখার মধ্যে দিয়ে।
খেলা আমার কাছে অন্য মাত্রা বয়ে আনে। ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির তফাৎ হ’তেই পারে। ফুটবল খেলার প্রতি ভালোবাসা, খেলার কলাকৌশল, নৈপুণ্য, ঘরানা তার ওপর ফুটবল সম্রাট পেলের ক্রীড়া বৈচিত্র্য ব্রাজিল দেশটার প্রতি আমার নিজের অজান্তে স্বাভাবিকভাবেই ভালোবাসা এনে দিয়েছিল। দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলভাগের সবচেয়ে বেশি অংশ জুড়ে থাকা ব্রাজিল দেশটার ফুটবল খেলা ব্রাজিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া হিসেবে পরিচিত ও তার অনুনকরণীয় ঘরানা ফুটবলপ্রেমীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। যার অনুরণন বাঙ্গালীর রক্তের মধ্যে টের পাওয়া যায়। ৭টা গোল খাওয়া একটা দলের সমর্থকের পক্ষে হজম করা সত্যিই কষ্টের। কিন্তু যে দল যেদিন মাঠের মধ্যে যোগ্যতা ও দক্ষতার বিচারে শীর্ষে থাকবে সেই দলের ললাটে জয়ের চিহ্ন আঁকা হবে এটা understood. খেলার মাঠে performance-ই শেষ কথা। সেইজন্য আরেকটা দলকে শত্রু ভাবার কোনো মানে হয়না।


ব্রাজিল হেরে যাওয়াতে কষ্ট হয়না বা হয়নি যদি বলি তাহলে তো আমি বা আমার সত্তা দেবত্বে উত্তীর্ণ হয়েছে ধরে নিতে হয়। যদিও দেবতাদের অনুভব শক্তি অতি উচ্চ মার্গের। উপর থেকে বোঝা যায় না সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনাকে। নারকোলের মত। উপরে যত কঠিন ভেতরে ততই নরম ও রসালো। আমার তো আর সেই অবস্থা প্রাপ্ত হয়নি। তাই আমার কষ্ট হয়েছে ঠিক কথা কিন্তু অন্যদিকের কিছু বিশেষত্ব আমার প্রাণকে উদ্বেলিত ক'রে তোলে তাই কষ্ট হ'লেও যা সত্য, যা চিরন্তন তা আমাকে দোলা দিয়ে যায় বন্ধু!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!! কি করব, আমি যে চিরন্তন সত্যের পূজারী!!!!!!!!!!!!!!!! হুমায়ুনদা আমিও আপনার কষ্টের একজন সাথী।


আর কোচ জোয়াকিম লো’র জার্মানি একটা ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরির মত। যে কোন মুহুর্তে ঘুম ভেঙ্গে উঠে ভয়ঙ্কর আগ্নেয় ছোবল আছড়ে পড়বে প্রতিপক্ষের ঘাড়ে! জার্মান রক্তের মধ্যে অনবরত ফুটতে থাকে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির লাভার মত উত্তেজনা, উৎসাহ, উদ্দীপনা বাঙাল রক্তের মত। সেই চলমান গতিময়তাকে বজায় রেখেই বিশ্বকাপের ১৯টি আসরের ১৭টিতেই অংশগ্রহনকারী দলের নাম জার্মানি। সাফল্যের বিবেচনায় ইতিহাসের তৃতীয় সেরা। এখন পর্যন্ত কোন টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের রেকর্ড নেই তাদের। সর্বোচ্চ ১২বার শীর্ষ চারে থাকা দলের নামও জার্মানি। আর এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় সবগুলো বিশ্ব আসরেই ফেবারিট অন্যতম শক্তিশালী এই দলটি। এবার ব্রাজিল বিশ্বকাপেও এর ব্যাতিক্রম ছিল না।


আর মাঠের বাইরে কোচ জোয়াকিম লোর নিঃশব্দ শান্ত অথচ কঠিন দৃপ্ত বিচরণ প্রতিফলিত হচ্ছিল প্রতিমুহুর্তে মাঠের মধ্যে খেলোয়াড়দের মধ্যে। জার্মান দলটার মধ্যে প্রতিভার ছড়াছড়ি হওয়ার কারণে কোচ জোয়াকিম লোর জন্য অনেক সহজ হয়ে গেছিল খেলার মানকে উচ্চতার শিখরে পৌঁছে দেওয়া। খেলোয়াড়দের অবিরাম চলমান গতিময়তা জার্মান দলকে একটা বিশেষত্ব এনে দেয় বা এনে দিয়েছিল যার অনুরণন আমি আমার বাঙাল রক্তে অনুভব করি প্রতিমুহুর্তে।


তাই আমার প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, ‘জার্মান আমার প্রাণ’ বলে উঠেছিল আমার অন্তরাত্মা। এতে লজ্জার কি আছে বন্ধু আমি বুঝতে পারলাম না। আর এক বন্ধু বাঙাল আর জার্মানের রক্তের মিলের কথায় লিখেছিল ‘এটা আমার মতিভ্রমের প্রথম স্টেজ’। আমার রক্তের উত্তেজনা, উৎসাহ, উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনার রেশ এই গ্রহের যে প্রান্তে খুঁজে পাব সেখানেই গেয়ে উঠেবে আমার প্রাণ এই গান। আর এক বন্ধুকে তার কথার উত্তরে লিখেছিলাম আমি একটা উপভোগ্য ফাইনাল খেলা দেখতে চাই তা’তে হারজিৎ আমার কাছে গৌণ। আর জার্মান যদি ঘানা বাদে টানা খেলার consistency ধ'রে রাখতে পারে আর ব্রাজিল জয়ের আত্মবিশ্বাসকে মাঠের মধ্যে আছড়ে ফেলতে পারে তাহ'লে ভুমিকম্প ঘটলেও ঘটতে পারে। আর তাই ঘটলও!!!! তাই আবার বলি ‘ ব্রাজিল আমার নয়নমণি, জার্মান আমার প্রাণ’!!!
( লেখা ১৫ই জুলাই, ২০১৪_

বিচিত্রা ১৭

যে যা ইচ্ছা করছে করুক 
তুমি লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ো না
আর অন্যকে বিচ্যুত হ'তে সাহায্য ক'রো না।
সামনে যা ঘটছে দেখতে তুমি পাচ্ছো বটে
দেশ জুড়ে কারা যেন বলছে ডঙ্কা বাজিয়ে, 
যত পারো আখের নাও গুছিয়ে
ভাঁড় মে যায় ঈশ্বর, ভাঁড় মে যায় দেশ!
যে যাবে লঙ্কায় সেই হবে রাবণ
বিভীষণের রাজা হওয়ার দিন কিন্তু শেষ।
পড়েছো মোগলের হাতে
খানা খেতে হবে কিন্তু একসাথে!
নইলে যাবে কিন্তু গর্দান
শয়তানের এ নিদান।
এসো লুটেপুটে নিই দিনেরাতে।

ঠিক তেমনি মনে রেখো
দয়ালের সাথে খেলছো গেম বন্ধু!
দিনের শেষে ফল পেতে হবে হাতে হাতে!!
( লেখা ১৫ই জুলাই, ২০১৯)

বিচিত্রা ১৬


সময় সবসে বড়া বলবান
ভুল গ্যায়ে উও দিন দোস্ত
যব হর পল থা হয়রান!?
সময় কা থাপ্পড় পড়েগা বহুত ভারী
ইয়াদ রাখনা মেরে প্যারে ইনসান।
ম্যাঁয় তো এক আম আদমি
আউড় তু হ্যাঁয় বহুত ভারী, বহুত মহান!
ইয়ারোঁ পিছে মুরকে মত দেখ
পিছে হ্যাঁয় ভবিষ্য!
ভাগ, দোস্ত ভাগ, আগে ভাগ
নেহী তো বহুত পড়েগা ভারী
হো যাওগে 'পাগল ইন্সান।'
ক্য্যা করুঁ ঠাকুরজী , ক্যা করু!
কৈ নেহী হ্যাঁয় শুননে কে লিয়ে তৈয়ার
তুম বাতাও কিসসে করু প্যার
আউর কিসে বানাও ইয়ার।
তুমসে বড়া কোই নেহী হ্যাঁয় ইয়ার।
( লেখা ১৫ই জুলাই, ২০১৮)


বিচিত্রা ১৫

রাত গভীর, সময় পৌনে দুটো,
বাইরে অঝোর ধারায়
রিমঝিম রিমঝিম বরষা!
ঝিঁঝিঁপোকা, ব্যাঙের ডাক, নিস্তব্দ রাত্রি
ঘরে একাকী প্রভু তুমি ভরসা!!
নিস্তব্ধ গভীর রাতে প্রভু
শুধু তোমায় মনে পড়ে!
রিমঝিম রিমঝিম বরষাতে
মন তরঙ্গ নাচেরে,
মন তরঙ্গ নাচে!!
নিশুতি রাত, নিষুপ্ত পৃথিবী,
নিস্তব্ধ সময়!
আমি একাকী, মিলিবারে চায় প্রাণ,
প্রভু আমি তুমিময়!!
আজ সকালে রোদ হেসেছে, বৃষ্টি নিয়েছে ছুটি!
জীবন বীণায় সুর জেগেছে, যত বাঁধন গেছে টুটি,
মোর বাঁধন গেছে টুটি;প্রভু তোমার চরণ তলে লুটি!
( ১৫ই জুলাই,২০১৭)

Sunday, July 14, 2024

উপলব্ধিঃ অতি প্রগতিই দুর্গতি!

ফেসবুকে ইদানিং দেখা যায় কিছু পুরুষ নারীদের নিয়ে, নারীদের জীবন নিয়ে, জীবন যন্ত্রণা ও মা-সন্তানের সম্পর্ক নিয়ে কবিতা, আর্টিকেল পোষ্ট করে। সেইসঙ্গে পোষ্ট করে তাদের আপত্তিকর ছবি! পোস্ট করে আধুনিকতার দোহাই দিয়ে, উদারতার ভঙ্গিতে, মহানতার দৃষ্টিভঙ্গিতে! আর সেইসব কবিতা, ছবির প্রসঙ্গে অনেকের মন্তব্য পড়ি। মন্তব্যে থাকে বিরোধীতা, প্রতিবাদ, থাকে সমর্থনও। যদিও সেইসব সমর্থনের ভঙ্গিতে করা মন্তব্যে কোনও বোধের, অনুভূতির গভীরতা থাকে না। এবং সেইসঙ্গে এও দেখি যে সেইসব বিরোধী মন্তব্যের উত্তরে লেখকের উত্তর "দৃষ্টিভঙ্গির তফাৎ"-এই এক জায়গায় ঘোরাফেরা করে। ঐ এক উত্তরের বাইরে লেখক বেরিয়ে আসতে পারেন না। কারণ লেখকের কাছে এর বাইরে তার লেখার মানসিকতার স্বপক্ষে যুক্তি সঙ্গত বলিষ্ঠ কোনও উত্তর নেই। লেখক নিজেকে অতি আধুনিক ও উদার হিসাবে দেখাতে চান এসব ক্ষেত্রে। তখন পরিস্থিতি হ'য়ে দাঁড়ায় জটিল। কোনও পক্ষই আর ফিরে আসার অবস্থায় থাকে না। একটা সূক্ষ্ম ইগো কাজ করে তলে তলে!
যাই হ'ক, তাহ'লে এক কাজ করা যাক, প্রথমে এইসব কবিতা,আর্টিকেল লেখা ও ছবি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে লেখক নিজের প্রিয়জন অর্থাৎ নিজের মা, বোন, বউকে বা আরও যারা আছে আপনজন তাদের এইসমস্ত ছবি সহ কবিতা, আর্টিকেল ইত্যাদির পোস্টটা দেখাতে পারেন তারপর দেখুন তারা কি বলছেন। লেখক, যে নারীদের স্বপক্ষে এই পোষ্ট করেছেন সেই নারীরাই লেখককে সমর্থন করে কিনা একবার দেখে নিতে পারেন আর যারা এইসমস্ত পোষ্ট করেন তারা এত বৈপ্লবিক মানসিকতার অধিকারী অথচ প্রায়ক্ষেত্রেই নিজের মুখ লুকিয়ে এই পোষ্ট করেন; কেন? হে! কবি-লেখকের মত সাহসী আধুনিক মানুষ, আপনাদের ছবি সবাইকে দেখতে দিন! দেখতে দিতে আপত্তি কোথায়!?

বি-গ্রেড পর্ণ সিনেমার গায়েও 'A' লেবেল লাগানো থাকে!!!!! বি-গ্রেড সিনেমার রগরগে রেপ সিনের মত সিন দেখাতে সাহস করেননি বিশ্ববিখ্যাত সত্যজিৎ রায়ের মত চিত্র পরিচালকেরা তাদের ফিল্মে রেপ সিন থাকা সত্ত্বেও! কেন! কেন বি-গ্রেড সিনেমার গায়ে 'এ' লেবেল লাগানো থাকে? ঐ সব তো বি-গ্রেড সিনেমা! কেন সত্যজিৎ রায়ের মত বিশ্ববিখ্যাত পরিচালকরা তাদের সিনেমায় রেপ সিনকে প্রতীকী ঢঙে দেখাতেন? ভয় পেতেন? কবি, লেখকের মত তাঁরা সাহসী, আধুনিক ও প্রতিবাদী ছিলেন না? নাকি তাঁরা সভ্য সমাজের প্রতিনিধি ছিলেন ব'লে আদিম অসভ্য জংলী জাতির মত আচরণ করেননি? কোনটা? তাঁরা কি আধুনিক কবি, লেখকদের মত 'দৃষ্টিভঙ্গীর তফাৎ' এই দোহাই দিয়ে তাঁদের ফিল্মকে রগরগে ক'রে ব্যবসায়িক ক'রে তুলতে পারতেন না? আচ্ছা কোনো রেপের ঘটনাকে কোর্টে প্রমাণ করতে হ'লে তাহ'লে আগামীদিনে কি ঐ রেপ হওয়া মহিলাকে কোর্টের মধ্যে বিচারকের সামনে ঐ রেপিষ্টদের দ্বারা রেপ করিয়ে প্রমাণ দিতে হবে যে ঐ মহিলার রেপ হয়েছিল! তাই তো? আর এর প্রতিবাদ হ'লেই বলতে হবে, দৃষ্টিভঙ্গীর তফাৎ!!!!!!! তাই তো? তাহ'লে টিভিতে যেসব জন্মনিরোধক জিনিস ও বিষয়ের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় আগামীতে সেইসব বিজ্ঞাপনের কি সুবিধা আর কি অসুবিধা সেগুলি টিভিতে প্র্যাকটিক্যাল ডেমো দিলে বিজ্ঞাপন আরও চমকদার হবে, মনোরঞ্জন হবে, ব্যবসা বাড়বে, টিআরপি রেট বেড়ে যাবে চ্যানেলের! কি বলেন আধুনিক, উদার কবি ও লেখককুল? স্যানিটারী ন্যাপকিনের কার্যকারিতা বোঝাতে ফেসবুকে আধুনিকতা, উদারতা ও প্রগতির নামে পোষ্ট করা আপত্তিকর ছবির মত নারীকে প্রকাশ্যে টিভির পর্দায় তুলে ধরলে আম নারী জাতির সুবিধা হয়! কি বলেন অতি প্রগতিবাদীরা? তা'তে বিরুদ্ধবাদীরা কিছু বললে ঐ একটা কথা বললেই হবে, 'দৃষ্টিভঙ্গির তফাৎ'---------কি বলেন?

যাক, এবার একটা কথা জিজ্ঞেস করি,
১) পোষ্ট করা এই ছবিগুলি যার বা যাদের তার বা তাদের সম্মতি আছে এই ছবিগুলি পোস্ট করার ব্যাপারে?
২)কবি বা লেখককে এই সমস্ত ছবির নারীরা অনুমতি দিয়েছেন তাঁর বা তাঁদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের তোলা ছবি বাজারী করতে?
৩)ছবি প্রকাশকারী কি নারী? যদি নারী হ'য়ে থাকেন তাহ'লে তিনি নিজে এরকম ছবি হ'তে পারবেন?
৪)ছবি প্রকাশকরা তাদের কোনও কাছের প্রিয়জনকে এইভাবে ফটো তুলে গুরুগম্ভীর আলোচনার বিষয়ের অজুহাতে প্রকাশ্যে নাঙ্গা করতে পারবেন নাকি শিল্পী, কবি, লেখকদের প্রিয়জনরা শিল্পী, কবি, লেখকদের আধুনিকতাকে সাপোর্ট ক'রে নিজেরা এইভাবে বাজারী হ'তে পারবেন?
৫)এই নারীরা যদি কোর্টে কবি, শিল্পী, লেখকদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন তখন তারা বিচারককে 'দৃষ্টিভঙ্গির তফাৎ'-এর প্রসঙ্গ তুলে ব্যক্তিগত অধিকারে হস্তক্ষেপ করার অধিকারকে বৈধ ও ন্যায্য ব'লে প্রমাণ করতে পারবেন?
কোনটাই পারবেন না। আরও অনেক পয়েন্ট তুলে ধরতে পারতাম কিন্তু আমার উদ্দেশ্য তা'নয়। আমার উদ্দেশ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঠিক-বেঠিক তুলে ধরা। প্রগতির নামে অতি প্রগতিকে চিহ্নিত করা।
কারণ অতি প্রগতিই দুর্গতি!!!!! আর ফেসবুক এই দুর্গতি সৃষ্টির বলিষ্ঠ মাধ্যম! ফেসবুক আজ তার মান হারিয়ে নিজেও বাজারী হ'য়ে যাচ্ছে!!!!!!!!!!!!
এইসব কথা কবি, শিল্পী, লেখকরা মানতেও পারেন আবার নাও মানতে পারেন। গ্রহণ ও বর্জন আপনাদের ব্যক্তিগত। কিন্তু কোনও নারী শরীরকে অপমান করার কোনও অধিকার আপনাদের কারো নেই। এমনকি নিজের শরীরকেও না। কারণ সমাজ, সভ্যতা ব'লে একটা কথা আছে, সমাজিক বন্ধন ব'লে একটা বিষয় আছে যা অতি প্রগতির নামে আপনি বা আমি অস্বীকার করতে বা ভাঙতে পারেন না, পারি না।
( লেখা ১৬ই জুলাই। ২০১৯)

প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিয়ে সনাতনী ও শ্রীশ্রীকৃষ্ণপ্রেমীদের কুৎসা।

শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিয়ে বর্তমানে আলোচনা ফেসবুকে তুঙ্গে। সৎসঙ্গীরা অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুরের দীক্ষিতরা শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা, বাণী, ছড়া তুলে ধরছে, নিজেদের অনুভব, অনুভূতি, উপলব্ধি প্রকাশ করছে। সৎসঙ্গীরা অর্থাৎ ঠাকুরের দীক্ষিতরা, কেন এই কথা বললাম? কারণ যারা দীক্ষিত নয় অথচ সৎ-এর সঙ্গী অর্থাৎ প্রতিটি অস্তিত্বের সঙ্গী, অস্তিত্বের অস্তিত্ব পরম অস্তিত্বের সঙ্গী, ঈশ্বরের সঙ্গী তাঁরাই সৎসঙ্গী, তা সে যে দেশের, যে ভাষাভাষীর, যে সম্প্রদায়ের হ'ক না কেন। এই সৎসঙ্গীরাও ঈশ্বরের কথা ফেসবুকে পোষ্ট করে। তারা তাদের গুরুদের অর্থাৎ ঈশ্বরের উপাসকদের কথা তুলে ধরেন, আবার এদের মধ্যে যারা শ্রীশ্রীঠাকুরের পূর্ববর্তী শ্রীশ্রীরামচন্দ্র থেকে শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ অর্থাৎ রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু ও রামকৃষ্ণ যে যে রূপের দীক্ষিত সেই সেই রূপের দীক্ষিত অনুগামীরা সেই সেই পুরুষোত্তমের বাণীর সাথে সাথে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বাণী, কথাও পোষ্ট করে, শেয়ার করে, মন্তব্যও করে। আবার এর মধ্যে বহু আছে বিশেষ ক'রে স্বঘোষিত শ্রীকৃষ্ণ প্রেমী ও শ্রীকৃষ্ণ প্রেমী সনাতনীরা। হঠাৎ ফেসবুকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে স্বঘোষিত গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল সনাতনীর দল ও কৃষ্ণপ্রেমীর দল। চারিদিকে শুধু সনাতন, সনাতন, সনাতন গেল গেল রব। কৃষ্ণ বাঁচাও, কৃষ্ণ বাঁচাও হল্লা। কেন? কি হ'লো হঠাৎ সনাতন ধর্মের ও স্বঘোষিত সনাতনীদের ও কৃষ্ণপ্রেমীদের?
তারা এমনই উগ্র বিরোধীতা করে যেন এই স্বঘোষিত শ্রীশ্রীকৃষ্ণপ্রেমীরা, সনাতনীরাই একমাত্র হিন্দু ধর্মের মাইবাপ। এই স্বঘোষিত সনাতনী ও শ্রীকৃষ্ণপ্রেমীরা পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণের একমাত্র রাখোয়ালা। এদের হাবভাব সনাতন ধর্ম ও পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ এদের সিকিউরিটি নিযুক্ত করেছে ও এরাই একমাত্র সনাতন ধর্মের ও শ্রীকৃষ্ণের এজেন্ট। তাই তারা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের নামে মুখে যা আসে তাই ব'লে যায়। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ও সৎসঙ্গ, সৎসঙ্গীরা কৃষ্ণ মানে না। মন্দিরে কৃষ্ণের ছবি রাখে না। হরির গুণগান গায় না। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিন্দা, কুৎসা, গালাগালি, অশ্রদ্ধা, অপমান করে, অপবাদ, হুমকি দেয়। এরা অধর্মীয় আচরণ ক'রে, মুখ দিয়ে টাট্টি কা মাফিক ঘৃণ্য নিন্দনীয় কথা ব'লে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে বহাল তবিয়তে সিঁদুর, চন্দনে নিজেকে লেপ্টে নিয়ে, গেরুয়া সাজে সেজে গলায় হাতে নানা পাথরের মালা চাপিয়ে ধার্মিক সেজে অন্ধকার জগতের নিকৃষ্ট লোকেদের মত ধর্ম জগতে ব'সে শ্রীকৃষ্ণের প্রবচন শোনায়, গীতা পাঠ করে, বেদের কথা বলে। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় তা প্রচার ক'রে বেড়ায়।


অথচ যারা সেইসব কথা শোনে সেইসমস্ত সাধারণ সীমাহীন ভাঙাচোরা অজ্ঞ, মূর্খ, দুর্বল, ভীরু, কাপুরুষ, অজ্ঞানী, কুসংস্কারাছন্ন শ্রোতারা বুঝতেই পারে না যে, বেদে যে হীন, নিকৃষ্ট, দুশ্চরিত্র, বদমাশ, লম্পট, শয়তান চরিত্রের বর্ণনা দিয়ে গেছেন বেদজ্ঞ পন্ডিতরা, পুরুষোত্তম, পরমপিতা, সদগুরু, সৃষ্টিকর্তা জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণ গীতার ১৮অধ্যায়ে যে অসৎ চরিত্রের বর্ণনা দিয়েছেন তা শ্রোতাদের জানা না থাকায়, নিজেরা অধ্যয়ন না করার ফলে এই স্বঘোষিত বদনাশ সনাতনী ভন্ডরাই যে সেইসমস্ত চরিত্রের অধিকারী মানুষ, তা তারা ধরতে পারে না। ফলে সৎ, সত্য, জীবন্ত ঈশ্বর বারবার নিন্দিত হন, অপমানিত হন, কলঙ্কিত হন অসৎ, মিথ্যা, নকল ঈশ্বর ও ঈশ্বরপ্রেমীদের দ্বারা। এর জন্য দায়ী আম ভক্তমন্ডলী।


আর, বিরোধীরা তো আছেই, এদের মধ্যে প্রবল সক্রিয় বিরোধী হচ্ছে তারা যাদের স্বার্থে ঘা লেগেছে, ল্যাজে পা পড়েছে। আবার কিছু মানুষ আছে যাদের কাজ হচ্ছে শুধু গালাগালি ক'রে যাওয়া, নিজেদের হতাশা, ব্যর্থতা ঢাকতে তারা গালাগালি করে। আরও আছে যারা কেন গালাগালি করে, কেন কুৎসা করে তারা তা জানে না, লোকেদের কথা শুনে গালাগালি করে, বিচার ক'রে দেখে না যাদের কথা শুনে প্রভাবিত হ'য়ে গালাগালি করলো তাদের গালাগালি করার পিছনে উদ্দেশ্য ও রহস্যটা কি? এছাড়া সৎসঙ্গীদের মধ্যে একদল আছে যারা নিজেদের সৎসঙ্গী ব'লে, ঠাকুরের ফটো মাথার ওপরে তুলে নিয়ে, বুকে নিয়ে মিছিল করে যেমন তেমন পোশাকে ঐ চৈত্র সংক্রান্তিতে দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়ানো 'বাবা তারকনাথের চরণে সেবা লাগে, মহাদেব' ধ্বনি দিয়ে বেরোনো মানুষদের মত যারা পথেঘাটে, মাঠেময়দানে উৎসবে অনুষ্ঠানে ঠাকুর পরিবারকে গালাগালি ক'রে ভক্তি ছোটায়, ছোটায় ঠাকুর প্রেম। আর, কানে দিয়েছি তুলো, পিঠে বেঁধেছি কুলো আর মুখে লাগিয়েছি তালা এইভাবে সজ্জিত হ'য়ে বসে থাকে জড় পদার্থের মত ঠাকুরের আম ভক্তমন্ডলী। এখানেই ঠাকুরের কষ্ট আর হেরে যাওয়া। এত লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি সৎসঙ্গী অথচ বলিষ্ঠ গার্ড ওয়াল বিনা অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সৎসঙ্গীদের প্রেমের ঠাকুর, ভালোবাসার ঠাকুর।

আবার বহু গিরিগিটি মানুষ আছে যারা সৎসঙ্গীদের পোষ্টে এসে ভালোমানুষের মত পোষ্টদাতার পোষ্টের বিষয়ে সব ঠিক আছে বলে, পোষ্টের সমর্থন করে আবার কথার মারপ্যাঁচে কথা বলতে বলতে শেষে এসে সুকৌশলে ঠাকুরের নিন্দা ও কুৎসা ক'রে যায়। এদের মত বহু গিরিগিটি মানুষ আছে যারা মুহুর্তে মুহুর্তে ভোল পাল্টাচ্ছে, পাল্টাচ্ছে রঙ। এই মুহুর্তে ঠাকুর ঠিক তো পরমুহুর্তেই একেবারে ১৮০ডিগ্রি উল্টে গিয়ে ঠাকুরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়, কলঙ্ক লেপন ক'রে। আর, দুঃখের ও লজ্জার বিষয় এরা সবাই বাঙালী। এদের মধ্যে একসময়ের বহু ধান্দাবাজ বাঙালী আছে যারা সৎসঙ্গে এসেছিল, দীক্ষা নিয়েছিল নিজেদের ধান্দা পূরণ করতে। ধান্ধায় ব্যর্থ হ'য়ে তারা এখন বিরোধীতায় নেবেছে।


তাই এদের উদ্দেশ্যে বলি, যদি পোষ্টের বিষয় ঠিক থেকেই থাকে, যদি সবই ঠিক আছে তবে আবার ঘোমটার তলায় খেমটা নাচ কেন? নিজেকে নিজেই বলাৎকার করে কেন? সবই ঠিক আছে আবার ঠিক নেই এরকম দোকলা চরিত্রের দ্বিচারিতা কেন? কেন নিজের কথার নিজেই বিরোধীতা করে এরা ফেসবুকে? কারণ এরা অসহিষ্ণু ও একচক্ষু হরিণের চরিত্রের অধিকারী। তাই এদের লোকদেখানো জ্ঞানগর্ভ কথাগুলি ফাঁপা কলসীর মত। আর, রাবড়ি খচ্চররাই এমন জ্ঞানগর্ভ ভাষণ দেয়।.

তাদের মুখ থেকে হীরে, মণিমুক্তো, সোনাদানা বেরোবার পরিবর্তে সাপ, ব্যাঙ, ছুঁচো ইত্যাদির মত নোংরা দুর্গন্ধযুক্ত কথা বের হয়; যাকে হিন্দিতে টাট্টি কা মাফিক বাত বলা হয়। এই সমস্ত ধর্মেও আছি ও জিরাফেও আছি দোকলা চরিত্রের লোকেরা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মন্তব্য দেখলেই বোঝা যায় এদের ধর্ম সম্পর্কে দৌড় কতদূর। এরা ঠাকুরকে গালাগালি ক'রে ভিডিও করে। হাজার হাজার লোক এদের ভিডিও দেখে আর এরা ঠাকুরকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে ভিডিও ক'রে রোজগার করে। ঠাকুরকে গালাগালি দিয়ে, কুৎসা, নিন্দা, বদনাম ও চরিত্র হনন ক'রে এরা পাপের পয়সা কামায়।

কোনও বিষয় নিয়ে বা কারও বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় তা সে যে বিষয়ই হ'ক না কেন সে বিষয়ে অধ্যায়ণ করতে হয়, করতে হয় গবেষণা তারপর তার ভিতরের খারাপ বা ভালো দিক তুলে ধরতে হয় গবেষকের মত। রিপুতাড়িত চরিত্র নিয়ে বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে আবদ্ধ জীবনের অধিকারী জীবন বালখিল্য বটতলার চটি বইয়ের জ্ঞান নিয়ে নালা নর্দমায় ঘাই মেরে মহাসমুদ্রের বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করা আর বাচ্চা ছেলের ভয়ংকর বোমা নিয়ে নাড়াচাড়া করার মত দুর্বুদ্ধি ও দুর্ভাগ্য একই ব্যাপার এবং এদের শেষের মুহূর্ত ভয়ংকর হ'য়ে দাঁড়ায় দিনের শেষে।

যাই হ'ক, এরা এত সন্ন্যাস, সন্ন্যাসী, সন্ন্যাস ধর্ম, ত্যাগ, সংসার, ভোগ, যোগ, যোগের পথ, মায়া, দীক্ষা, ঋষি, সিদ্ধপুরুষ, রাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে এত জ্ঞানের ফোয়ারা ছোটায় যে ফেসবুকে বন্যা হ'য়ে যাবার যোগার। এত ধর্মপ্রাণ, ঈশ্বরসম্বন্ধীয় জ্ঞানী পুরুষ এরা যে ফেসবুক ছেয়ে গেছে। মাঝে মাঝে এদের কমেন্টে জ্ঞানের ফুলঝুড়ি দেখে, ভিডিওতে জ্ঞানের রোশনাই দেখে হতভম্ব হ'য়ে যাই! অবাক হ'য়ে ভাবি এদের ধর্ম ও ঈশ্বর জগত সম্পর্কে, গুরুদের সম্পর্কে, সাধকদের সাধনা সম্পর্কে, রাজনীতি সম্পর্কে কি অসাধারণ জ্ঞান। অথচ ধর্মজগত দু'নম্বরই থেকে গেল। সাধারণ মানুষ যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেল।


তাই, বালখিল্য স্বঘোষিত সনাতনী ও শ্রীশ্রীকৃষ্ণপ্রেমী, যারা সিঁদুর, চন্দন, গেরুয়া কাপড়, পাথরের ও ফুলের মালায় কিম্ভূতকিমাকার সেজে কুয়োর ব্যাঙের মত কুয়োর ভিতর থেকে আকাশ দেখা জ্ঞান নিয়ে ক্যামেরার সামনে ব'সে ভিডিও ক'রে ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে গালাগালি দেয়, জ্ঞান দেয় আর যারা ফেসবুকে নেট থেকে কপি পেষ্ট করা বক্তব্য পোষ্ট করে, অর্থ না বুঝেই বালখিল্য জ্ঞানগর্ভ কমেন্ট ক'রে ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুরকে নীচা দেখায়, অপমান, অশ্রদ্ধা করে, সেইসমস্ত অভাগা, জন্মভ্রষ্ট স্বঘোষিত সনাতনী ও শ্রীশ্রীকৃষ্ণপ্রেমীদের জন্য পরমপিতা পুরুষোত্তম সদগুরু জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের কাছে মঙ্গল প্রার্থনা ক'রে সনাতনী ও শ্রীশ্রীকৃষ্ণপ্রেমীদের কাছে তাদের বলা বক্তব্য থেকে কয়েকটি বিষয় জানতে চাই এই লেখার মাধ্যমে।


১) সন্ন্যাস, সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাস ধর্ম কি?


২) ত্যাগ মানে কি?

৩) সংসার অর্থ কি?


৪) শোক, লোভ, মোহ, কামনা, বাসনা ত্যাগ করা যায়? কিভাবে?

৫) ভোগের জগত কি বা কোনটা?

৬) ভোগের জগত ত্যাগ করা কাকে বলে?

৭) যে ভোগই করলো না, ভোগ কি তা জানলোই না সে আবার ত্যাগ করবে কি?

৮) ভোগের জগত ত্যাগ ক'রে যোগের মার্গ অবলম্বন করতে বলছেন তা যোগ কি? যোগের মার্গ অর্থ কি? মার্গ কোথায়?

৯) চারপাশের প্রতি যদি আমার মায়ায় না থাকলো তাহ'লে আমি কি জন্যে জন্মেছি? অসাড় বোধহীন, অনুভূতিহীন, অভিজ্ঞতাহীন, উপলব্ধিহীন বই পড়ে বইয়ের এসেন্সকে না বুঝে বই হ'য়ে তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে আধ্যাত্মিকতার ঘোমটার তলায় মুখ লুকিয়ে চুপি চুপি পেগের পর পেগ গলায় ঢেলে ঢুলু ঢুলু চোখে নিজের মাথার বাল নিজে ছিঁড়তে জন্মেছি? মায়া কি? মায়া থেকে মুক্তিই বা কি? মুক্তি কা'কে বলে?


১০) দীক্ষা কি? কার দীক্ষা নেব? কেন নেব? ঋষি অর্থ কি বা কাদের বলে?

১১) সিদ্ধ সন্ন্যাসী কে বা কারা? সিদ্ধপুরুষ, সিদ্ধ সন্ন্যাসী কথার অর্থ কি?

১২) সিদ্ধ সন্ন্যাসীদের কোন কাজটা সংসারের জন্য মঙ্গল কাজ? যারা নিজেরা সংসার করলো না, যাঁদের কোনও সাংসারিক অভিজ্ঞতা নেই তারা সংসার ধর্ম পালন সম্পর্কে, সংসারের মঙ্গল সম্পর্কে জ্ঞান দেবেন? আর, যদি দেনও বা সবাই দেবেন?

১৩) ধর্মজগতে যত মহারাজ, ব্রহ্মচারী, বাবা, সাধক, সাধিকা, যোগী, সাধু, সন্ন্যাসী, মহাপুরুষ ইত্যাদি যারা আছেন তাঁরা আর শ্রীশ্রীরামচন্দ্র থেকে শ্রীশ্রী,ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র অর্থাৎ রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও সর্ব্বশেষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র একই মর্যাদার? সমগোত্রের? সাধু, সন্ত, মহাপুরুষ, সন্ন্যাসী ইত্যাদিদের সঙ্গে এঁদের তুলনা? পুরুষোত্তমদের সঙ্গে এঁরা একই আসনে বসার যোগ্য? মহাত্মা আর পরমাত্মা এক? যোগী, জ্ঞানী, গোঁসাই, গোবিন্দ, সাধক আর পুরুষোত্তম এক? পিতা আর সন্তান এক? গুরু আর সদগুরু এক? সৃষ্টিকর্তা আর তাঁর সৃষ্টি এক?


১৪) ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব স্ত্রীকে মা বলেছেন ও স্ত্রীকে মায়ের মত পূজা করেছিলেন ও শ্রীশ্রীঠাকুর দু'টো বিয়ে করেছেন ব'লে শ্রীশ্রীঠাকুরকে নীচা দেখায়। ঠাকুর রামকৃষ্ণ কেন মা বলেছেন স্ত্রীকে? মা আর স্ত্রীর মধ্যে পার্থক্য কি?


১৫) শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র দু'টো বিয়ে করেছিলেন ব'লে কটুক্তি, কুৎসা করেন আবার বিশ্বগুরু জগৎপিতা মহেশ্বর-এর নাম তুলে সন্ন্যাস তত্ত্বের জাহির ক'রে বালখিল্য আধ্যাত্মিকতার ফোয়ারা ছোটান সনাতনীরা, শ্রীকৃষ্ণের মহিমার ধ্বজা ওড়ান সনাতনীরা তা এদের জিজ্ঞাস্য বিশ্বগুরু জগৎপিতা মহেশ্বর ক'টা বিয়ে করেছিলেন? শ্রীকৃষ্ণের ক'টা বউ ছিল? কেন এতগুলো বিয়ে করেছিলেন? আর, বিশ্বগুরু জগৎপিতা ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর থাকেনই বা কোথায়?

১৬) শ্রীশ্রীঠাকুরের সন্তানদের এক এক মন্দিরের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে কটু মন্তব্য করেছেন এরা। শ্রীশ্রীঠাকুরের কোন কোন সন্তান কোন কোন মন্দিরের দায়িত্বে আছেন জানাবেন? আর, দায়িত্বে যদি থেকেও থাকে সেটা কি অপরাধ? আপনাদের পিতা আপনাদের তাঁর তৈরী বাড়ির দায়িত্ব দিয়ে যাননি? আপনারা যদি দুই তিনভাই হ'ন তাহ'লে পিতার বাড়ি ভাগাভাগি ক'রে রক্ষা করেননি? নাকি তা' প্রমোটারের হাতে দিয়ে দিয়েছেন অনেক বেশী টাকা পাওয়ার লোভে পিতার স্মৃতির ----মেরে? এ বেলায় ধর্ম কোথায় থাকে? এ বেলায় ধর্ম অনুকূল থাকে ও রক্ষা পায়? আর, ঠাকুরবাড়ির বেলায় হ'য়ে যায় প্রতিকূল ব্যাপার? না জেনে অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়লেই হ'লো, তাই না সনাতন ধর্ম রক্ষাকারী স্বঘোষিত সনাতনীরা আমার?

১৭) ঠাকুরবাড়ির বিভিন্ন মন্দিরের দায়িত্ব সেই সেই মন্দিরের ইষ্টে উৎসর্গীকৃত, ইষ্টে অচ্যুত, অস্খলিত, অটুট ইষ্টপ্রাণ কর্মীদের হাতেই থাকে, তাঁরাই রক্ষণাবেক্ষণ করেন বিশ্বজুড়ে 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার কেন্দ্র ও মন্দির। আর, ঠাকুরের সন্তানদের এক একটা মন্দিরের দায়িত্ব দেওয়া প্রসঙ্গে অজ্ঞানতার ওপর দাঁড়িয়ে যে ওঁচা মন্তব্য ক'রে চলেছেন ফেসবুকে সনাতনীরা আর রাজব্যবস্থা বা রাজতন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন, তুলনা করেছেন network marketing বলে, তা মন্তব্যকারী স্বঘোষিত সনাতনীদের আমার জিজ্ঞাস্য,

অ) রাজব্যবস্থা বা রাজতন্ত্র বা network marketing বলে যেটা বলা হচ্ছে সেটা কি অনুন্নত, অসভ্য, অন্ধকারাছন্ন, স্বৈরাচারী ব্যবস্থা ছিল?

আ) আর, বর্তমানে যাকে প্রজাতন্ত্র বা গণতন্ত্র বলা হচ্ছে, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার কথা বলছেন ইনারা, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জনগণের রায়ে প্রতিনিধি নির্বাচনের কথা বলছেন, বলছেন প্রতিনিধিত্ব মূলক নেতাব্যবস্থা, সেই প্রজাতন্ত্র বা গণতন্ত্র, গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রতিনিধি নির্বাচন ও প্রতিনিধিত্ব মূলক নেতাব্যবস্থা কি ত্রুটিহীন, নিখুঁত? রাজব্যবস্থা বা রাজতন্ত্রের চেয়েও উন্নত ব্যবস্থা যেখানে প্রজারা সুখে আছে, আনন্দে আছে, শান্তিতে আছে?

ই) নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রতিনিধি নির্বাচন ও প্রতিনিধিত্ব মূলক নেতাব্যবস্থা এবং দেশ, রাজ্য, জেলা ও অঞ্চলভিত্তিক এলাকায় এলাকায় সমস্ত ক্ষেত্রের প্রশাসনিক স্তরে নেতাতন্ত্র কি রাজব্যবস্থা বা রাজতন্ত্রের প্রতিনিধি রাজা বা জমিদারদের চেয়েও সরকারী ব্যবস্থা ও দেশ, রাজ্য, জেলা, মিউনিসিপ্যাল ও পঞ্চায়েত স্তরের প্রতিনিধিত্বকারী নেতানেত্রীরা প্রজাদের, জনগণ বা গণতান্ত্রিক অধিকারপ্রাপ্ত নাগরিকদের খুব সুখে, শান্তিতে, আনন্দে রেখেছে?

যাই হ'ক আপনারা জুতো পেটা ক'রে গরু দান করার মত বদমাইশি বুদ্ধিতে কাউকে ছোটো করা আপনাদের লক্ষ্য না ব'লে আবার কথার টুইস্ট করেন, কথার টুইস্ট ক'রে ঘোমটার তলায় খেমটা নাচ নাচেন। ভালো করছেন আপনারা, আপনাদের যা ভালো মনে হয়েছে। সবশেষে জন্মমৃত্যুর চক্র থেকে বেড়িয়ে আসার কথা বলেছেন ইনারা। বলেছেন, এর জন্য ভোগী হ'লে হবে না, যোগী হ'তে হবে। তা সনাতনীদের ও ঠাকুর বিরোধীদের আমারও শুধু একটাই জিজ্ঞাস্যঃ আপনি, আপনারা যারা বড় বড় লম্বাচওড়া জ্ঞানের কথা ব'লে ঢাক পেটাচ্ছেন আপনারা তারা ভোগী নন তো? আপনি/আপনারা যোগী তো? আপনি/আপনারা সংসারী নন তো? আপনি/আপনারা সন্ন্যাসী তো? আপনি/আপনারা সংসারের মায়ায় বন্দী নন তো?

আগে নিজেকে একবার নিজের বিবেকের আয়নায় দেখুন, আপনি কি? আপনার চরিত্র, আপনার জীবন, আপনারা চলন, আপনার বলন, আপনার চিন্তা, আপনার কর্ম কেমন। দেখুন আপনার কুৎসিত মুখটা কতটা কুৎসিত। তারপর না হয় অন্যের বিচার হবে।

তাই বলে, আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শেখায়। আজ এই পর্যন্ত। নমস্কার, জয়গুরু।