স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ট্রেনে হাওড়া এসে ট্যাক্সিতে ধর্মতলা চাঁদনি চকে এসে মেট্রো রেলে চড়ে বসলাম। দ্রুতগতির ট্রেন একের পর এক ষ্টেশন ছাড়িয়ে শেষ ষ্টেশন কবি সুভাষ স্টেশনে এসে থামলো। সেখান থেকে অটোয় চেপে সোজা পিয়ারলেস হসপিটাল। সেখানে ভাইপো বাবাই অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য। নির্ধারিত সময় পার হ'য়ে গেছিল। যেহেতু সিরিয়াস পেশেন্ট এবং বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে এই হাসপাতালেই তাই একটু ছাড় ছিল বিশেষ ক্ষেত্রে। আমরা এগিয়ে গেলাম দোতলার নির্দিষ্ট কেবিনের দিকে। ভিজিটিং আওয়ার্স শেষে নার্সিং চলছিল পেশেন্টের। ভাইপো বাবাই বন্ধ দরজায় টোকা দিতে নার্স বেরিয়ে একটু অপেক্ষা করতে বলল; তারপর একটু পরে এসে দরজা খুলে দিয়ে ভেতরে আসতে বলল। আমরা ভেতরে গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। পেশেন্ট ভাইপো বাবাই-এর মা। সেরিব্রাল অ্যাটাকে আক্রান্ত হ'য়ে ভর্তি হয়েছে। অপারেশন হয়েছে মাথায়। এইদিকটা নিউরো পেশেন্টদের জন্য, যতগুলি ঘর আছে প্রতিটিতে দুটি ক'রে বেড। পেশেন্টকে খুব ফ্রেশ লাগলো কিন্তু আচ্ছন্ন অবস্থা। ডাকলে চোখ খুলছে আবার বন্ধ ক'রে দিচ্ছে। নার্স হাসি মুখে বললো, কি হ'ল চোখ খোলো। দেখো, তোমার বাড়ির লোক এসেছে। ওদিকে মুখ ঘোরাও। কথাটা বলেই হাত দিয়ে যেদিকে আমার স্ত্রী মাথার সামনে দাঁড়িয়েছিল সেদিকে মুখটা ঘুরিয়ে দিল। নার্সের এ-হেন আচরণে মনটা তৃপ্ত হয়ে গেল।
তারপর অনেকক্ষণ কথা বলার পর মনে একটা খুশির ভাব নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। বাইরে বেরিয়ে এসে আরও অনেকে যারা নীচে অপেক্ষা করছিল সবাই মিলে একটা চায়ের দোকানে গিয়ে দাঁড়ালাম। সবার মনে একটু নিশ্চিন্ত ভাব লক্ষ্য করলাম। সবাই একই কথা বলছে, 'আজকে সবচেয়ে এতদিনের মধ্যে বেশী ফ্রেশ লাগছিল পেশেন্টকে'। বাবাই-এর মাসীর মেয়ে টিংকু আমাকে দেখে হাসতে হাসতে বলল, 'বাপু আজ তুমি এসেছো তাই আজ মাসী সবচেয়ে বেশী ফ্রেশ। মনে জোর পেয়ে গেছে তুমি আসাতে'। আমি মনে মনে ঠাকুরের উদেশ্যে প্রণাম জানালাম আর বললাম ঠাকুর তুমি বৌদিকে তাড়াতাড়ি একেবারে সুস্থ ক'রে দাও, বেশীদিন যেন এখানে থাকতে না হয়'। আলোচনায় যা শুনলাম তার মর্মার্থ হচ্ছে, ডাক্তারদের বক্তব্য, এইরকম সেরিব্রাল অ্যাটাকের পেশেন্ট কখনোই এত তাড়াতাড়ি রেসপন্স দেয় না। কোথায় জানি কি একটা ঘটছে।
তারপর অনেকক্ষণ কথা বলার পর মনে একটা খুশির ভাব নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। বাইরে বেরিয়ে এসে আরও অনেকে যারা নীচে অপেক্ষা করছিল সবাই মিলে একটা চায়ের দোকানে গিয়ে দাঁড়ালাম। সবার মনে একটু নিশ্চিন্ত ভাব লক্ষ্য করলাম। সবাই একই কথা বলছে, 'আজকে সবচেয়ে এতদিনের মধ্যে বেশী ফ্রেশ লাগছিল পেশেন্টকে'। বাবাই-এর মাসীর মেয়ে টিংকু আমাকে দেখে হাসতে হাসতে বলল, 'বাপু আজ তুমি এসেছো তাই আজ মাসী সবচেয়ে বেশী ফ্রেশ। মনে জোর পেয়ে গেছে তুমি আসাতে'। আমি মনে মনে ঠাকুরের উদেশ্যে প্রণাম জানালাম আর বললাম ঠাকুর তুমি বৌদিকে তাড়াতাড়ি একেবারে সুস্থ ক'রে দাও, বেশীদিন যেন এখানে থাকতে না হয়'। আলোচনায় যা শুনলাম তার মর্মার্থ হচ্ছে, ডাক্তারদের বক্তব্য, এইরকম সেরিব্রাল অ্যাটাকের পেশেন্ট কখনোই এত তাড়াতাড়ি রেসপন্স দেয় না। কোথায় জানি কি একটা ঘটছে।
যাই হ'ক এবার বাড়ি ফেরার পালা। বাবাই থেকে গেল, থেকে গেল আমার আর এক ভাইপো জয় সঙ্গে বাবাই-এর ছোটো মামা। ওরা পরে যাবে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে। আমরা রিক্সায় রওনা দিলাম স্টেশনের দিকে। স্টেশনে এসে সবাই ট্রেনে উঠে বসলাম। বাবাই-এর মামাবাড়ির লোকেরা মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশনে নেবে গেল। বাবাই-এর মামা যাবার সময় বলে গেল, আপনি এখন 'সৎসঙ্গ' নিয়ে খুব ব্যস্ত, তাই না? আমি বললাম, আসলে 'ভদ্রকালী সৎসঙ্গ কেন্দ্র'-এর দায়িত্ব কেন্দ্র থেকে দেওয়ায় একটু ব্যস্ত, এ ছাড়া আর কিছুই না। বাবাই-এর মামার কথাটার মধ্যে আন্তরিকতা ও শ্রদ্ধামিশ্রিত ভাব ছিল। মনটা খুশিতে ভরে গেল। সকালের ঘটনার পর নার্স, টিংকু ও মামার ব্যবহার বিব্রত মনের ওপর খুশির একটা প্রলেপ এঁকে দিল। একসময় ট্রেন এসে আমাদের নির্দিষ্ট ষ্টেশন পার্ক স্ট্রিটে এসে থামলো। আমি আর স্ত্রী ট্রেন থেকে নেবে পড়লাম। তারপর ট্যাক্সি না পেয়ে অগত্যা হাওড়া গামী বাসে উঠে পড়লাম। বাস ছুটে চলল হাওড়ার দিকে। ভিড়ে ঠাসা বাসের গুমোট হাওয়ায় এক ঝলক দখিনা বাতাস বয়ে গেল। মন বলে উঠলো, পৃথিবী এখনো সুন্দর!!!!!!!!!!! দখিনা বাতাসটা কি?
ক্রমশঃ (লেখা ৬ই সেপ্টেম্বর-২০১৬)
No comments:
Post a Comment