Powered By Blogger

Tuesday, September 5, 2023

প্রবন্ধঃ ভুলের সাথী আমি।

ভুলভ্রান্তি মানুষের হয়
শুধরে যদি চলিস সোজা
দীপ্ত হবি তৃপ্তি পাবি
হালকা হবে ভুলের বোঝা।------ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।

ভুল, ভুল, ভুল! সবই ভুল! এ জীবনের পাতায় পাতায় যা লেখা সে ভুল! ভুল! সবই ভুল! ভুলের ভুলভুলাইয়ার চোরাবালিতে আজ আমরা সবাই হারিয়ে যাচ্ছি। হারিয়ে যাচ্ছি জান্তে-অজান্তে! অজান্তে ভুলের চোরাবালিতে হারিয়ে যাওয়ার মধ্যে একটা এক্সকিউজ থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু জান্তে ভুলের ভুলভুলাইয়ার ঘুলঘুলিতে হারিয়ে যাওয়াকে কিভাবে দেখবো? কিভাবে এই জেনে শুনে ভুলের বিষ করেছি পান'' মানসিকতাকে বিচার করবো? আমরা সবাই আজ সেই যে কবে থেকে রবীন্দ্রনাথের পরমভক্ত হ'য়ে গেছি সেই ভুলের ট্র্যাডিশন "আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান" সমানে ব'য়ে চলেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম! কবে মুক্তি পাবে মানুষ এই বিষম ভুলের ভুলভুলাইয়ার যাঁতাকল থেকে!? এই ভুলের ভুলভুলাইয়াই প'ড়ে প্রতিনিয়ত কত শত লক্ষ মানুষ যে তার ভবিষ্যৎ জীবনকে অনিশ্চিত ক'রে তুলছে, ঘোর অন্ধকারে নিক্ষেপ করেছে এবং হতাশায় জর্জরিত হ'য়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে তার ইয়ত্তা নেই! কিন্তু কতদিন মানুষ ভুল করবে? জীবন তো একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য! সফর শেষে তাকে তো সব ছেড়ে চলে যেতে হবে তবে কেন জীবন নিয়ে এত উদাসীনতা!? ভুলের পর ভুল আর ভুল আর ভুল! ভুলের জালে জড়িয়ে যাওয়ার এত ইচ্ছা কেন মানুষের!? প্রথম প্রথম ভুলের ক্ষেত্রে মানুষের দূর দৃষ্টির অভাব, গাইডেন্সের অভাব থাকতে পারে কিন্তু পরবর্তীতে সেই ভুল থেকে যদি শিক্ষা লাভ না করে, ভুল ধরিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও সতর্ক না হয়, নিজেকে শুধরে না নেয়, নিজেকে সংযত ও সংশোধন করার চেষ্টা না করে, সিরিয়াস না হয়, জীবনের বা কাজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকার চেষ্টা না করে এবং উত্তরসূরি যাতে ভুল না করে তার জন্য পূর্বসূরিদের যে সতর্ক ও সজাগ থাকার প্রয়োজন সেই প্রয়োজনকে যদি প্রয়োজন ব'লে মনে না করে, গুরুত্ব না দেয়, থাকে উদাসীন তাহলে সেই ভুল তার শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে ক্রমশঃ অক্টোপাশের মত জড়িয়ে ধরে জীবনকে! আজ জীবন যা বা যেটাকে ঠিক মনে করে কাল হ'য়ে যায় তা বেঠিক, আবার কাল যা ঠিক ব'লে মনে হবে পরশু হ'য়ে যাবে তা বেঠিক! আর তার ভিত্তি হ'লো ভুল! ভুল!! ভুল!!! ভুলের সাথী আমি!
মনে প্রশ্ন জাগে এই ভুল থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি?
এই ভুল থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুর উপরে উল্লেখিত বাণীটি দিয়েছিলেন। ভুলভ্রান্তি মানুষের হয়। কথায় আছে, To err is human. কিন্তু ঠাকুরের কথামত সেই ভুল শুধরে যদি নেয় মানুষ আর সোজা পথে চলে তাহলে মানুষ দীপ্ত হয় অর্থাৎ আলোকিত হ'য়ে ওঠে, উজ্জ্বল হ'য়ে ওঠে, তেজোময় হয় মানুষ! নিজেকে প্রকাশ করতে পারে সবদিক দিয়ে সঠিকভাবে! তখন আনন্দে ভরে ওঠে মনপ্রাণ! একটা অনির্বচনীয় ফুর্তি, শক্তিতে ভ'রে ওঠে বুক! তৃপ্ত হয় শরীর-মন-আত্মা! আর এর ফলে মানুষ ঐ ভুলের মারাত্মক বোঝা থেকে উদ্ধার পায়, হালকা হয় ভুলের বোঝা।
এখন পরবর্তী প্রশ্ন: এই শুধরে নেওয়া ব্যাপারটা কিসের ওপর নির্ভর করে? ভুল ক'রে যদি ভুল করেছি তা বুঝতে না পারি, ধরতে না পারি তাহলে ভুল শুধরাবোর প্রশ্নটাই হ'য়ে যায় অবান্তর! আর শুধরাবো-ই বা কি ক'রে? এর জন্যে গাইডেন্সের প্রয়োজন। গাইড বা পথ প্রদর্শক বা চলতি কথায় গুরু বা আদর্শের প্রয়োজন। যে বা যিনি আমায় আমার ভুল ধরিয়ে দেবে এবং ভুল শুধরানোর পথও ব'লে দিয়ে চলার কায়দা শিখিয়ে দেবে। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র এই প্রসঙ্গে বলেন, "বিপাক পথে হাত ধ'রে যে চলার কায়দা জানিয়ে দেয়, তাঁকেই জানিস গুরু ব'লে অভয় পথে সেই তো নেয়।"

এর থেকে আমরা বুঝতে পারি আমার মাথার ওপর এমন একজনের প্রয়োজন যে আমার সামনে ভুলের ভুলভুলাইয়ার ঘোর অন্ধকারে আলোর বিন্দু হ'য়ে দেখা দেবে!

মন বলে, কে হবে সেই আলোর বিন্দু?
সেই আলোর বিন্দু যে কেউ হ'তে পারে। মা-বাবা, ভাইবোন, বন্ধু ইত্যাদি যে কেউ শিক্ষক রূপে, গুরু রূপে, আদর্শ রূপে আলোর বিন্দু হ'য়ে আমায় ঘোর অন্ধকারে পথ দেখাতে পারে। তবে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, "সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ যার, উন্নতি হয় অবাধ তার।"

এই সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ কে বা কি?
আমার মা-বাবা, ভাইবোন, দাদাদিদি, বন্ধুবান্ধব, মুনি-ঋষি-সাধক আমার শিক্ষক, গুরু বা আদর্শ হ'তে পারেন কিন্তু তাঁদের যতদূর দেখার ক্ষমতা থাকুক না কেন, অভিজ্ঞতা যতই হ'ক না কেন তাদের দেখানো পথের মধ্যে, অভিজ্ঞতার মধ্যে লিমিটেশন আছে। সীমাবদ্ধ জ্ঞানের সমাধান আছে। তারা এমনকি অন্তর্যামী হ'তে পারেন কিন্তু তাঁরা কেউই সর্বজ্ঞ নন! তাই তাঁদের দেখানো পথ বা সমাধানের মধ্যে চুলের মত সূক্ষ্ম ফাঁক থেকে যাবে। আর সেই ফাঁক দিয়ে সমস্যার বেনো জল ঢুকে পড়তে পারে যে কোনও মুহূর্তে, যে কোনও সময়ে! তাঁরা যতবড় মহাত্মা হ'ন না কেন শেষ কথা তাঁরা বলতে পারেন না! এই সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ হ'লেন ঈশ্বর স্বয়ং! এই সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ হ'লেন ঈশ্বরের তাঁর সৃষ্টির বুকে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের মাঝে, মানুষ মায়ের গর্ভে মানুষের পৃথিবীতে মানুষ হ'য়ে নেবে আসা মানুষটি! ঈশ্বর স্বয়ং তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের মাঝে তাঁর সৃষ্টিকে রক্ষা করার জন্য মানুষের রূপ ধ'রে নেবে আসেন আর সেই মানুষ রূপী ঈশ্বরই হ'লেন সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ! তিনিই হ'লেন প্রকৃত গুরু অর্থে গুরু! এ ছাড়া কোনও মুনি-ঋষি-সাধক বা আধ্যাত্মিক জগতের কোনও মহাপুরুষ-ই গুরু নন! তাঁরা সবাই গুরুমুখ! গুরুরূপী জীবন্ত ঈশ্বরের কাছে পৌঁছনোর মুখ! একমাত্র গুরু হ'লেন, সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ হ'লেন সেই এক ও অদ্বিতীয় জীবন্ত ঈশ্বর পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীবুদ্ধ, শ্রীশ্রীযীশু, শ্রীশ্রীমোহাম্মদ, শ্রীশ্রীমহাপ্রভু, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ ও সর্বশেষ ঘোর কলির যুগপুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র! এছাড়া কেউই গুরু নন! নন সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শও!! পৃথিবীর ৭০০কোটি মানুষকে যদি ভুলের ভয়ঙ্কর বিষাক্ত মারণ ছোবল থেকে রক্ষা পেতে হয়, পৃথিবী নামক গ্রহকে মানুষের ভয়াবহ ভুলের কারণে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে হয় তাহলে তাঁর শ্রীচরণ তলে আসতেই হবে নতুবা বিশ্বজুড়ে দাদাদের ভয়ঙ্কর ভুলের পারমানবিক বোমায় ধ্বংস হ'য়ে যাবে ঈশ্বরের সৃষ্টি এই পৃথিবী!!!!!! পৃথিবীর কোনও ক্ষমতাধর মানুষ নেই তা রাজনীতি, ধর্ম, বিজ্ঞান ইত্যাদি যে ক্ষেত্রেই হ'ক না কেন এই পৃথিবীকে, এই পৃথিবীর মানবজাতিকে আগামী ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে!!!

এখন মনে মনে মন ভাবে এই সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শকে গ্রহণ করার পরও সৎসঙ্গী হিসেবে আমাদের কেন কষ্ট পেতে হয়!? দুর্দশায় কাবু হ'তে হয়!? তাহলে কি শ্রীশ্রীঠাকুর মিথ্যা!?
এককথায় এর উত্তর: কপটতা! সীমাহীন কপটতা! ভয়ঙ্কর ভয়াবহ কপটতা!! মন-মুখ এক না হওয়া!!! মুখ আর মুখোশের নীচ ঘৃণ্য লড়াই!!!! ঠাকুরের দীক্ষিতরা ঠাকুরকে টেকেন ফর গ্রান্টেড ক'রে নিয়েছে, বানিয়ে নিয়েছে আয়ের উপকরণ! আর তার ফলে ভুলের ভুলভুলাইয়ার অন্ধকার ঘুলঘুলির অভ্যন্তরে অবস্থিত ভুলের বিষাক্ত ছোবলে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে জীবন-যৌবন! এর হাত থেকে বাঁচার কোনও উপায় নেই যদি মানুষ, সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেরা সতর্ক হয়, সংশোধিত, পরিবর্তিত, শুদ্ধ, পবিত্র না হয়!!!!!!
তাই আবার বলি, বারবার বলি,

"ভুলভ্রান্তি মানুষের হয়
শুধরে যদি চলিস সোজা
দীপ্ত হবি তৃপ্তি পাবি
হালকা হবে ভুলের বোঝা।"

তাই আসুন, নিজের ভুল শুধরে নিয়ে শান্ত-পবিত্র-শুদ্ধ হ'য়ে নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের পূজার উপাচার ক'রে তুলি!!!!
(লেখা ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২০)

No comments:

Post a Comment