Powered By Blogger

Wednesday, September 20, 2023

চিঠিঃ প্রদ্যুত সাহাকে খোলা চিঠি। (২)

পরবর্তী অংশঃ

প্রদ্যুতবাবু লেখাটা দীর্ঘ তাই খন্ড খন্ড ক'রে পোষ্ট করলাম। এটা দ্বিতীয় অংশ। আশা করি ধৈর্য নিয়ে আলোচনার টেবিলে আমরা মুখোমুখি হবো।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জয়িতা কর্মকার ও মল্লিকা আচার্য যে কথাগুলি লিখেছে তার জন্য কতটা তারা দায়ী বা অপরাধী? সাধারণ ভাবে যদি তাদের বলা কথাগুলিকে মাইক্রোস্কোপের নীচে রাখা যায় তাহ’লে কি দেখবো? প্রদ্যুত বাবু কিছুক্ষণের জন্য আসুন তর্কের কূট কচালি দূরে সরিয়ে রেখে জয়িতার কথাটা ভেবে দেখি। আচ্ছা আপনি সামনাসামনি বাবাইদাদাকে দেখেছেন? সামনে বসে কথা বলেছেন? অবশ্য ফটো নিশ্চয়ই দেখেছেন। আমার অনুরোধ ফটোটার সামনে একবার বসুন প্রদ্যুতবাবু মাথা থেকে সব নেগেটিভ মনোভাব ঝেড়ে ফেলে দিয়ে; কারণ আপনার সঙ্গে কি কোনোদিন কোনও নেগেটিভ মনোভাব জন্মায় এমন কোনও তিক্ত ঘটনা বাবাইদাদার সঙ্গে ঘটেছে? উত্তর কি? ঘটেনি এবং কারও সঙ্গে ঘটে না। এবার বলি, ফটোটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকুন শুদ্ধ মন নিয়ে, বায়াস না হ’য়ে। দেখতে পাবেন প্রদ্যুতবাবু এমন সুন্দর মানুষ সত্যিই পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় নেই। আর কোনওদিন যদি একেবারে সামনে বসার এবং কথা বলার সুযোগ ঘটে তখন বুঝবেন কেন জয়িতা কর্মকার বলেছেন, বাবাইদাদাকে দেখলে মনে হয় তাঁকে ছাড়া পৃথিবীতে আর কিছুই নেই যা দেখা যায়। এত সুন্দর, এত শান্ত, এত সৌম্য একজন মানুষ যে হ’তে পারে তা সামনে থেকে না দেখলে বুঝতে পারবেন না। এত মিষ্টি মধুর প্রাণকাড়া যে কথা হ’তে পারে তা সামনে থেকে না শুনলে বোঝানো যাবে না। অন্যের কথায় প্রভাবিত হ’য়ে অকারণ রাগ বুকে পুষে নিয়ে যদি তাঁকে দেখতে যান তাহ’লে হবে না। সেখানে নিজেকেই দেখে ফিরে আসতে হবে। এই প্রসঙ্গেও ঠাকুরের বলা বাণীটার সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। ঠাকুর বললেন, “যদি পরিক্ষক সেজে অহংকার নিয়ে সদ্গুরু কিম্বা প্রেমী সাধুগুরুকে পরীক্ষা ক’রতে যাও তবে তুমি তাঁতে তোমাকেই দেখবে, ঠ’কে আসবে।“ এ ক্ষেত্রে বাবাইদাদাকে আমি সদগুরুর সাথে তুলনা করতে চাইনি; আমি যেটা বলতে চাইছি সেটা হ’লো ‘পরীক্ষা করা’র ব্যাপারটা আর ‘প্রেমী মানুষ’-এর কথা। প্রদ্যুতবাবু জয়িতা কর্মকারের এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অনুভূতি ও উপলব্ধির ব্যাপার। এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ভালোলাগার বিষয় যা কারও সঙ্গে ভাগ করা যায় না। কারও ব্যক্তিগত ভালোলাগার, ভালোবাসার বিষয়কে কেউ কি আঘাত করতে পারে প্রদ্যুতবাবু? আর প্রদ্যুতবাবু ভালোবাসা বা ভালোলাগা কি জোর ক’রে আদায় করা যায়? কি কি গুণের অধিকারী হ’লে সেই মানুষটার জন্য হাজার হাজার মানুষ পাগল হ’য়ে যায়? একটুও কি ভেবে দেখবো না প্রদ্যুতবাবু? এতটাই আমার তাঁর উপর রাগ? প্রদ্যুতবাবু একটা কথা বলি অন্যদিকে মানে করবেন না বা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেবেন না কথা দয়া ক’রে। আমরা যারা ঠাকুরকে দেখিনি------আমি দেখেছি, যদিও ঠাকুরের শেষের দিনগুলিতে ৬৭/৬৮ সাল নাগাদ, তখন ক্লাস এইটে কি নাইনে পড়তাম, সেই সময়ের ঠাকুরের মুখ এখন ঝাপসা হ’য়ে গেছে।----------- তারা ঠাকুরের ৫০ বছর বয়সের ছবিটা একটু দেখুন আর দেখুন ঠাকুরের মুখের সঙ্গে কি অদ্ভুত মিল বাবাইদার!!!!! তার মানে কি আমি বলতে চাইছি বাবাইদা ঠাকুর? আমি বা আমরা কি বলতে চাইছি বাবাইদাদা ভগবান? নিশ্চয়ই না। কিন্তু আমি যেটা বলতে চাইছি আমরা যারা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁর সামনে বসেছি তারা এ কথা বলতেই পারি বাবাইদাদা যদি এমন সুন্দর, সুপুরুষ হন, বাবাইদাদা যদি এত মিষ্টি-মধুর, প্রাণকাড়া কথা বলতে পারেন, বাবাইদাদার হেঁটে চলে যাওয়া যদি এত আকর্ষণীয় হয় তাহ’লে ঠাকুর কি ছিলেন!!!!!!!! ঠাকুরকে আমরা যারা পাইনি এটা কি ঠাকুরের অসীম দয়া বা করুণা নয় যে তিনি এবার বংশধারার মধ্যে দিয়ে রূপে, গুণে লীলা ক’রে চলেছেন? এই হ’লেন দর্শনধারী বাবাইদাদা! আর গুণ কি? ঐ যে বললাম মিষ্টি-মধুর, প্রাণকাড়া কথা! আর সেই কথা কি কথা? সবসময় ঠাকুর ছাড়া আর কোনও কথা নেই তাঁর মুখে! উঠতে, বসতে, চলতে, ফিরতে শুধুই ঠাকুরের কথা আর ঠাকুরের কথা! এখন বুঝতে পারি প্রদ্যুতবাবু, এত ঠাকুরকে ভালোবাসার, ঠাকুরের জন্য জীবন উৎসর্গ করার এত প্রেরণা, এত শক্তি পায় কোথা থেকে ঠাকুরের প্রকৃত কর্ম্মিরা? এত বিশাল বিশ্বজুড়ে যে ‘সৎসঙ্গ’-এর শ্রীবৃদ্ধি তার শক্তি কে যোগাচ্ছে বা কোথা থেকে আসছে? ঠাকুরবাড়িতে গেলে দেখবেন,----- যদি অবশ্য সুযোগ মেলে,----- ঠাকুর পরিবারের প্রত্যেকের মুখে শুধুই ঠাকুরের কথা আর ঠাকুরের কথা!!!! অন্য কোনও কথা নেই! অন্য কোনও আর বিষয় নেই। এ যে নিজের চোখে না দেখবে, না শুনবে তার পক্ষে সম্ভব না দূর থেকে কিছু বোঝার বা অনুভব করার। কারণ প্রতিকূল শক্তি, পরিবেশ, হাওয়া মানুষের পৃথিবীতে এত প্রবল, এত ভয়ঙ্কর, এত তীব্র ও বিষাক্ত যে সাধারণ সরল সাদাসিধে মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠা মুস্কিল। চতুর্দিকে প্রতিকূল যুক্তির এত রবরবা, এত ঢক্কানিনাদ যে কান পাতা দায়। সেই কান পেতে শোনার মত অনুকূল পরিবেশ, পরিস্থিতি ও সুযোগ যদি না থাকে তাহ’লে মানুষ জানবে কি ক’রে, বুঝবে কি ক’রে যে কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা? তাই প্রদ্যুতবাবু, অনুকূল যুক্তির প্রয়োজন। এখানে ঠাকুরের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। ঠাকুর তাঁর সত্যানুসরণ গ্রন্থে বললেন, “প্রতিকূল যুক্তি ত্যাগ ক’রে বিশ্বাসের অনুকূল যুক্তি শ্রবণ ও মননে সন্দেহ দূরীভূত হয়, অবসাদ থাকে না।“ আর প্রয়োজন, প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ। প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে ভুল ও মিথ্যে ধারণার বিলুপ্তি ঘটে। ঠাকুরের পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্রদের মধ্যে দিয়ে আমরা ঠাকুরকে জীবন্ত অনুভব করতে পারি। ঠাকুর আমাদের কাছে প্রথম ও প্রধান এই কথা তাঁরা তাঁদের কথাবার্তা, চালচলন, আচার ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে কখনও বা শাসনের মধ্যে দিয়ে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন। এ যে না সামনা সামনি দেখেছে, অনুভব করেছে, উপলব্ধি করেছে তার বা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় তাঁদের জীবন, তাঁদের চরিত্রের মূল্যায়ন করার। প্রদ্যুতবাবু, ঠাকুরবাড়ির প্রতি প্রত্যেকের কত ঘটনার কথা আর বলবো বাবাইদাদার অনেক শাসনের একটা শাসনের গল্প শুধু তুলে ধরবো আপনার সামনে, যেটা আমার সামনে আরও অনেক ঘটনার মত ঘটেছিল।
ক্রমশঃ। (লেখা ২০শে সেপ্টেম্বর'২০১৭)

No comments:

Post a Comment