শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র যখন শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ রূপে এসেছিলেন তখন ইষ্টভৃতির আগাম ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর ভক্তদের। কিন্তু জীবকোটি ভক্তেরা তা ধরতে পারেনি তাদের চৈতন্য জাগ্রত না হওয়ার কারণে। আর তাঁর কারণও যে আমরা জীবকোটি মানুষ সেই কথাও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আমাদের ব'লে গেছেন। আমাদের চৈতন্য জাগ্রত না হওয়ার কারণ আমাদের জীবকোটি মানুষের ছোট্ট হৃদয়খানি বৃত্তি-প্রবৃত্তির গঁদের আঠায় আষ্ঠেপৃষ্ঠে লেপটে থেকে আটকে যাওয়ায়। ফলে রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয় ও দারিদ্রতার হাত থেকে বাঁচার ও রক্ষা পাওয়ার উপায় পাওয়া সত্ত্বেও সেই উপায় ধরাই পড়লো না বোধে আর তাই অজানার অন্ধকারেই থেকে গেল আমাদের জীবন।
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র তাই বললেন,
"বৃত্তি-আঠায় লেপটে থাকে
ছোট্ট হৃদয়খান,
জীবকোটি তুই তা'রেই জানিস
অজানেই স্থান।"
এইরকম ধরতে না পারা বা জ্ঞানত উপেক্ষা করার অনেক বিষয় ছিল। যেমন "পূর্ণজ্ঞান দিলাম না খুব শিগগিরি আসছি" এইটা ছিল তাঁর ব'লে যাওয়া 'তোদের চৈতন্য হ'ক'-এর মূল ইঙ্গিত। অনেক কিছু ইঙ্গিতের ও না বলা বিষয়ের মধ্যে ইষ্টভৃতি ছিল জীবন্মুক্তির অন্যতম মোক্ষম বিষয় ফলে তাঁকে আবার আসতে হবে ব'লে তিনি কথা দিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর আসার পিছনে কারণ ছিল পূর্ণজ্ঞান না দেওয়া। কারণ তখন ক্ষেত্র প্রস্তুত ও উপযুক্ত সময় ছিল না। এই পূর্ণজ্ঞানের মধ্যে ছিল সংসার ত্যাগী সন্ন্যাসীর পরিবর্তে গৃহীসন্ন্যাসীর বিষয় যা আমরা দেখতে পাই শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের প্রয়াণের পরে বিবেকানন্দের পথ অনুসরণের মধ্যে দিয়ে তথাকথিত সংসার ধর্ম ত্যাগের আধিক্যের মধ্যে; তেমনি ছিল মৃন্ময়ী মায়ের পূজোর পরিবর্তে চিন্ময়ী মায়ের পূজো প্রচলন ইত্যাদি।
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ রূপে এসে 'তোদের চৈতন্য হ'ক' বলতে তাঁর পুনরায় আগমনের ইঙ্গিত ছাড়া অন্যতম মূল যে কথা তুলে ধরতে চেয়েছিলেন তাঁর অনুগামী শিষ্যদের কাছে সাধুর সঙ্গে কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে সেই কথা, সেই ইঙ্গিত, সেই অনুশাসন এবার এসে উপযুক্ত সময় ও ক্ষেত্র প্রস্তুত হওয়ায় সরাসরি ইষ্টভৃতি চালু করার মধ্যে দিয়ে সেই ইঙ্গিতের পূর্ণতা দিলেন। পূর্ণতা দিলেন দিনের শুরুতেই ইষ্টের ভরণ পোষণের দায়িত্ব পালনের জন্য ইষ্টভৃতি প্রথা চালু করার মধ্যে দিয়েই। পূর্ণতা দিলেন আমাদের মানবজাতির জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয় ও দারিদ্রতার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, বাঁচাবার জন্য।
কিন্তু আমরা বাঁচার, রক্ষা পাওয়ার মোক্ষম তুক বা মেডিসিন লাভ করার পরও কি বাঁচতে পারছি বা রক্ষা করতে পারছি নিজেকে ও পরিবারের প্রিয়জনদের????????????
ইষ্টভৃতির মোক্ষম উদাহরণ হ'লো শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের সাধুবাবার সঙ্গে সেই কথোপকথনের গল্প।
সেই সাধুবাবার সঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের কথোপকথনের গল্পটা কি?
একবার এক সাধু ঠাকুর রামকৃষ্ণের কাছে এসে বললেন, কী করলেন আপনি সারা জীবন সাধনা করে? আমি ৩০ বছর সাধনা ক’রে এখন হেঁটে নদী পার হ’ই! আপনি?
ঠাকুর রামকৃষ্ণ হেসে বললেন, যেখানে ১ পয়সা দিলেই আমাকে পার ক’রে দেয় মাঝি সেখানে ৩০ বছর নষ্ট ক’রে কি লাভ!
এই গল্পের মধ্যে দিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ এই ভবসাগরের যিনি মাঝি তাঁকে বাস্তবভাবে পালনপোষণের দায়িত্ব গ্রহণের যে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ১ পয়সা উল্লেখের মধ্যে দিয়ে সেই ইঙ্গিতই আজকের ইষ্টভৃতি। জীবনের শুরুতেই অতি প্রত্যূষে এই ইষ্টভৃতি পালনের কথা তিনি বলেছিলেন যাতে অকারণ অর্থহীন ও ইষ্টের সঙ্গে সরাসরি যোগসূত্রহীন কষ্টকর দীর্ঘ সাধনার মধ্যে অল্প সময়ের জন্য আসা এই ভবসাগরে অর্থাৎ সংসার সমুদ্রে সময় নষ্ট করা না হয়। এবার এসে সেই ইঙ্গিতকেই সরাসরি 'ইষ্টভৃতি' রূপে বেঁধে দিয়ে গেলেন যাতে সহজেই আমরা এই স্বতঃস্বেচ্ছ, অনুরাগ উদ্দীপী, আগ্রহ-উচ্ছল ও অপ্রত্যাশী অর্ঘ্যাঞ্জলী তাঁকে অর্পণ করতে পারি।
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের পূর্ব রূপ শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের ইষ্টভৃতির স্বপক্ষে এই কথোপকথনের গল্পটাই ছিল 'তোদের চৈতন্য হোক!' এই কথার মোক্ষম উদাহরণ।
আর তাই শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ এবার নবরূপে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'য়ে এসে এই ধর্ম্ম জগতের সঙ্গে যুক্ত ঈশ্বর উপাসনা ও সাধন জগতে অবস্থানকারী সমস্ত সাধক-সাধিকাদের উদ্দেশ্যে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বললেন,
"হ'স্ না যোগী, হ'স্ না ধ্যানী,
গোঁসাই-গোবিন্দ যা'ই না হ'স,
যজন-যাজন-ইষ্টভৃতি
না করলে তুই কিছুই ন'স্।"
No comments:
Post a Comment