শ্রীকুমার মুখার্জীদা,
ঠিকই বলেছেন, ঠাকুর বলেছেন "আমরা বিবেকানন্দী রামকৃষ্ণ চাই না" কিন্তু আমার প্রশ্ন হ'লো তাহ'লে কি চাই? সেটা কি বলেছেন ঠাকুর তা' তো বললেন না। ব্যাঙ্গার্থে ঢাকঢোল পিটিয়ে অসম্পূর্ণ কথাটা তুলে ধ'রে কাকে অপমান ক'রে নিজেকে প্রমাণ করতে চাইলেন আপনি ইষ্টপ্রাণ মহান? কাদের মাঝে এই অসম্পূর্ণ কথাকে বিকৃতভাবে তুলে ধ'রে কি প্রচার করতে চাইলেন? মিথ্যে ও বিকৃত প্রচারের প্রচারক হ'য়ে জীবনটাকে বলী দিলেন? মনে পড়ে গেলো বর্তমান আচার্যদেবের কবিতার শেষ লাইনটা, "তোর খেয়াতে মাঝিই যে নেই, শেষের সেদিন ভয়ংকর"।
যাই হ'ক আপনার কৌশলী দুরভিসন্ধিমূলক প্রচারের উত্তরে বলি,
ঠাকুর পরবর্তীতে বললেন, আমরা "রামকৃষ্ণী বিবেকানন্দ চাই।"
ঠাকুরের এই কথার জীবন্ত রূপ হ'লেন সৎসঙ্গ ও বিশ্বের কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের চোখের মণি পরম্পূজ্যপাদ প্রধান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবড়দা।
এই প্রসঙ্গে বলি ঠাকুরের তিরোধানের অব্যবহিত পরেই ঠাকুরের তথাকথিত পরম ভক্তদের মুখ আর মুখোশের ব্যবধান সরে যেতে লাগলো। পরমহংসরূপী সময়ের কশাঘাতে দুধ কা দুধ আর পানি কা পানি আলাদা হ'তে লাগলো। বড়দা বিরোধীরা যেমন সক্রিয় হ'য়ে উঠতে লাগলো ঠিক তেমনি বড়দাকে যারা নিজের প্রাণের চেয়েও বেশী ভালোবাসতো তারাও বড়দাকে ঘিরে ইষ্টস্বার্থরক্ষা ও ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠায় উদ্দাম হ'য়ে উঠলো। সেইসময় ভক্তকুল বড়দাকে ভালোবেসে ভালোবাসার অভিব্যক্তিস্বরুপ নানা নামে সম্বোধন করতো।
সেইসময় একদিন ঠাকুরের শিক্ষায় সুশিক্ষিত শ্রীশ্রীবড়দা বললেন, "তোরা আমায় বড়দা, পিতৃদেব বা যে যা ইচ্ছা নামে ডাকতে পারিস, আমার তা'তে কিছু যায় আসে না; কিন্তু আমি হ'লাম ঠাকুরের কুকুর। আমি নিজেকে ঠাকুরের কুকুর ছাড়া আর কিছু ভাবি না।
ঠাকুরের বাণী "ইশ্বরেরই কুকুর তুমি নিষ্ঠা শেকল গলায় বাঁধা
ডাকলে তুমি কাছে আসো, নইলে থাকো দূরেই খাড়া।"------ এই বাণীর জীবন্ত ও জ্বলন্ত মূর্ত রূপ হ'লেন ঠাকুরের আত্মজ, ঠাকুরের পরম প্রিয় প্রথম ও জেষ্ঠ্য সন্তান, ঠাকুরের বড় আদরের বড়খোকা, বিশ্বের সমস্ত সৎসঙ্গীদের বড়ভাই সবার প্রিয় শ্রীশ্রীবড়দা।
এক ও একমাত্র ঠাকুরকে জীবনের কেন্দ্রে বসিয়ে, হৃদয় মাঝে ঠাকুরকে রেখে ঠাকুরকে নিয়ে অস্খলিত, অচ্যুত, অটুট চলনে চলার জন্য ঠাকুর পরবর্তী ঠাকুরের আচারে আচরণসিদ্ধ এক ও একমাত্র পরম নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত ও আশাভরসার স্থল শ্রীশ্রীবড়দা হ'লেন 'সৎসঙ্গ' জগতের এক ও একমাত্র ঠাকুরের ঐ বাণীর বাস্তব রুপের কুকুর। আর তাই শ্রীশ্রীবড়দাকে ঠাকুরের "আমার ভালোলাগে রামকৃষ্ণী বিবেকানন্দ"-এর সুরে সুরারোপিত হ'য়ে বলি, 'অনুকূলী বড়দা'।
শ্রীকুমারদা, আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, আপনাদের মত মিশনারীদের বা 'সৎসঙ্গ' বিরোধীদের আমাদের শেখাতে হবে না আমরা বড়দাকে কি নামে ডাকবো, কি নামে পূজবো, কি নামে ভাববো। আমরা সেই সংস্কৃতিতেই সংস্কৃত; যে সংস্কৃত আমাদের শিখিয়েছে, শিক্ষিত ক'রে তুলেছে যেমন বিবেকানন্দের পরিচয়ে রামকৃষ্ণের পরিচয় নয় বরং রামকৃষ্ণের পরিচয়েই বিবেকানন্দের পরিচয় ঠিক তেমনি শ্রীশ্রীবড়দার পরিচয়ে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র পরিচিত নন, বরং ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের পরিচয়েই দুনিয়ার বুকে শ্রীশ্রীবড়দার পরিচয়। বিবেকানন্দ যেমন গোল নন, গোল হলেন শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ আর সেই লক্ষ্যে পৌছোনর জন্য, এপার থেকে ওপারে যাবার জন্য বিবেকানন্দ হ'লেন ব্রিজ; ঠিক তেমনি শ্রীশ্রীবড়দা সৎসঙ্গীদের গোল নন, গোল বা পরম ধাম বা অমর ধাম হ'লেন শ্রীশ্রীঠাকুর আর শ্রীশ্রীবড়দা হলেন সেই গোলে পৌছোনোর, সেই ঠাকুরের পরম ধাম, অমর ধামে পৌঁছনোর, ঠাকুরের হৃদয়ে পৌছোনোর এক ও একমাত্র সেতু বা দরজা!! ঠাকুরকে কেমনভাবে ভালোবাসবো, কেমন ক'রে তাঁকে মাথায় নিয়ে চলবো, কেমন ক'রে তাঁর মিশনকে অচ্যুত, অস্খলিত, অবদমিত মনোভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবো, কেমনভাবে সবাইকে নিয়ে চলবো, কেমনে তাঁর মনের মতো হ'য়ে উঠবো এই সমস্ত কিছু নিজে আচরণ ক'রে ও অন্যকে করিয়ে, নিজের জীবনে ও অন্যের জীবনে আচরণের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত ক'রে ও করিয়ে আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গেছেন, শিখিয়ে দিয়ে গেছেন আমাদের সকলের প্রিয় শ্রীশ্রীবড়দা। তথাকথিত কপট ভক্তদের চূড়ান্ত অপমান, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অপবাদ, নিন্দা, কুৎসা, বদনাম মাথায় নিয়ে, সীমাহীন ভয়ঙ্কর শারীরিক ও মানসিক কষ্ট কে প্রতি দিন প্রতি মুহূর্তে জীবনে মেখে নিয়ে চক্রান্তকারীদের হাত থেকে ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত 'সৎসঙ্গ'-কে রক্ষা করার জন্য সিংহের মত বীর বিক্রমে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, শরীরের প্রতিটি শিরা, স্নায়ু, কোষ কঠোর কঠিন হ'য়ে রুখে দিয়েছিল সেদিনের ঠাকুরের অনুপস্থিতির সুযোগে 'মারি তো গন্ডার, লুটি তো ভান্ডার' তত্ত্বে মাতাল ধান্দাবাজ ভক্তদের। কেমন ক'রে উদারতার ভঙ্গী নিয়ে ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার নামে আত্মস্বার্থপ্রতিষ্ঠায় নিবেদিত প্রাণ কপট ভক্তদের পরিকল্পিত আক্রমণ থেকে ঠাকুরের স্বপ্নের 'সৎসঙ্গ'-কে প্রাণ দিয়ে রক্ষা করতে হয় তার মরকোচ শিখিয়ে দিয়ে গেছেন তামাম ভক্তকুলকে নিজের জীবন দিয়ে প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ আচরণের ভিতর দিয়ে। তাই তিনি আমাদের কাছে ঠাকুরকে, ঠাকুরের স্বপ্নকে, ঠাকুরের প্রতিষ্ঠানকে, ঠাকুরের মিশনকে, ঠাকুরের তামাম ভক্তকুলকে কেমন ক'রে রক্ষা ক'রে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় তার আচরণসিদ্ধ জীবন্ত রুপকার ব'লেই তিনি আমাদের আচার্য, সঙ্ঘাচার্য। এই পাহাড়ের মত বিশাল, সমুদ্রের মত গভীর, আকাশের মত সীমাহীন, অরণ্যের মত ঘন সবুজ কঠোর কোমল আচার্য না থাকলে আজ আমরা ধান্দাবাজ, কপট, বেইমান, অকৃতজ্ঞ, নেমকহারাম, অসিদ্ধ, অসৎ, অমানবিক, অন্যায়ের পৃষ্ঠপোষক সাক্ষাৎ শয়তানের মূর্ত রূপ শক্ত ভক্তদের যাঁতাকলে প'ড়ে পিষ্ট হ'য়ে কোথায় কোন রসাতলে ভেসে যেতাম তার ঠিকানা করাও দুষ্কর। তাই পরমপিতা এবার দয়া ক'রে স্বয়ং অর্জুনকে, হনূমানকে, বিবেকানন্দকে অর্থাৎ নিজের শ্রেষ্ঠ ভক্তকে সন্তানরুপে নিয়ে এসেছেন এবারের যুগ পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে। এবার তিনি সন্তান, সন্তানের সন্তান রূপে লীলা করবেন এই ভয়ংকর ধান্দাবাজ শয়তানদের হাত থেকে নিজের ইচ্ছেকে পূর্ণরূপ দেবেন বলে।
তাইতো তো তিনি বলতেন বারবার,
"এইবার করিব লীলা অতি চমৎকার,
আমিই বুঝিতে নারি অন্যে কি বা ছাড়"।
সত্যিই তো যখন শ্রীশ্রীবড়মা, শ্রীশ্রীবড়দা, অনন্ত মহারাজ, কেষ্ট দা তাঁর লীলা বোঝার পায়ের নখের যোগ্য নন ব'লে নিজেদের মনে করেন তো আমরা কোন ক্ষেত কা মুলি!
"পুরুষোত্তমের কৃতী আচরণ,
তিনি না বোঝালে বোঝে কোনজন?"
No comments:
Post a Comment