আমি জীবনে খুব একটা বেশী বই পড়িনি। যা পড়েছি তাকে পড়া বলে না। কত জনে কত বই পড়ে। আমার আর পড়া হ'লো কই! যেদিন থেকে বুঝেছিলাম যা বলি, যা পড়ি, যা লিখি তা নিজের জীবনে পালন না করলেও চলে। শুধু সমাজে ঠাট বাট বজায় রাখার জন্য, নিজের একটা বুদ্ধিজীবী ইমেজ গড়ে তোলার জন্য জ্ঞানী পন্ডিতের একটা খোলস পড়ে থাকলেই চলবে এই বোকা মানুষের সমাজে। তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে জ্ঞানী পন্ডিত সাধু সন্ত সেজে আয়েস ক'রে কখনো বা সিগার আর রঙিন জলের গ্লাস হাতে সমাজ, সভ্যতা, ধর্ম ও মানবতার নামে দেশ বিদেশের মানুষের উদ্দেশ্যে মাঝে মাঝে বক্তৃতা, প্রবচন দিলেই হবে, আবার কখনো বা নিরপেক্ষতার মুখোশ খুলে সুবিধা মত ভোগ বিলাসের লোভে পক্ষপাতিত্ব করতে হবে; ব্যাস! তাহ'লেই হবে। কিন্তু যা বলবো, যা পড়বো, যা লিখবো বাস্তবে তা বা এই বক্তৃতা, প্রবচনের প্রতিফলন নিজের চরিত্রে ফুটে ওঠার দরকার বা বালাই নেই; তখন থেকে পড়ার অভ্যাসটা ধাক্কা খেতে লাগলো আর তা ক্রমশ সংক্রামিত হ'তে হ'তে একটা জড় পদার্থে পরিণত হলাম। আর এই অবস্থায় পড়ে কুত্তার বাঁকা ল্যাজের মত মাঝে মাঝে অভ্যাসবশত এখনও দু'একটা লেখা পড়ে ফেলি। সেরকমভাবে একটা লেখা পড়লাম। পড়লাম মন দিয়ে। ভালো লাগলো। লেখার গভীরতা মনকে আলোড়িত করলেও কিন্তু কি জানি এক বিষন্নতা মনটাকে আচ্ছন্ন ক'রে রেখেছে তাই ভালো লাগার মাঝেও কোথায় জানি ভালো না লাগার ভয় বুকটাকে খামছে ধ'রে আছে! কানের কাছে এসে বারবার হাতুড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত ক'রে দিচ্ছে আফগানিস্তানের নতুন সরকারের নতুন শিক্ষামন্ত্রীর কালকের প্রেস কনফারেন্সের বয়ান; বয়ান বললে ভুল বলা হবে ফতোয়া। শিক্ষামন্ত্রীর সেই ফতোয়া ছিলঃ দেশের যুবসম্প্রদায়ের আর উচ্চশিক্ষার কোনও দরকার নেই। মাষ্টার ডিগ্রি, পিএইচডি ইত্যাদি উচ্চ শিক্ষা মূল্যহীন। বিনা ডিগ্রি অর্জনে আমরা ক্ষমতা দখল করেছি, সরকার গঠন করেছি, শিক্ষা দপ্তরের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি অতএব ডিগ্রী অর্জন করার দরকার নেই, উচ্চ শিক্ষার কোনও দরকার নেই।
অবাক কান্ড! একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে অন্ধকার অজ্ঞানতার জগতে ফিরে যাওয়ার ফতোয়া!? তাও আবার দেশের শিক্ষামন্ত্রীর মুখে!? আধুনিক উন্নত উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে এমনতর জেহাদ!? এমনতর ফতোয়া!? ভাবা যায়!? তালিবানিদের মধ্যে উচ্চ ডিগ্রীধারী কেউ নেই!? একজনও নেই!? এ আমরা কোথায় কোন সভ্যতায় বাস করছি!? আর সেই ফতোয়া বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশের লেখাপড়াজানাওয়ালা উচ্চ এলিট সমাজ চুপ ক'রে হজম করলো। কোনও প্রতিবাদ নেই, নেই কোনও প্রতিক্রিয়া। আর এইজন্যই বোধহয় সমাজের এলিট সম্প্রদায়ের তথাকথিত শিক্ষিত মানুষদের উদ্দেশ্যে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলতেন, "শিক্ষিত কও ক্যান? কও লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষ!"
তাই মনে হয় ঐ গল্পের হৈমন্তীরা, যে উচ্চ শিক্ষিতা, সংস্কৃতি মনোভাবাপন্না, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ঘরানা পরিবারে বড় হ'য়ে ওঠা শিল্পী সে বা তারা ভুল, ভুল, ভুল; আর গল্পের পিঙ্কিরা যে আধুনিকা ও ভোগ বিলাসিতার মধ্যে দিয়ে বড় হ'য়ে ওঠা শিক্ষা সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকা বড়লোকের আদুরে বেটি এই ঘোর কলি যুগের সে বা তারাই ঠিক, ঠিক, ঠিক!
No comments:
Post a Comment