Powered By Blogger

Monday, October 11, 2021

শ্রীশ্রীবড়দা কে!? কে তুমি বড়দা!?

সৎসঙ্গীভাইবোন,

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র 'লেন বর্তমান বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময়! আর আমরা সৎসঙ্গীরা সেই বিস্ময়ের বিস্ময় সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের মন্ত্রশিষ্য! আজ সারা বিশ্বে প্রায় ১০ কোটি শিষ্য সংখ্যা ছুঁয়ে ফেলার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিষ্ঠিত দেওঘর 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান! সেই যে ১৯৩৮ সালে শ্রীশ্রীঠাকুরের ইচ্ছায় ঋত্বিক সংঘ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু 'য়েছিল ঋত্বিক, প্রতিঋত্বিক, সহপ্রতিঋত্বিক তৈরি 'রে দীক্ষা দানের অভিযান আজ এই প্রবন্ধ লেখা পর্যন্ত ৮২ বছর শেষ 'তে চললো দীক্ষাদানের কার্যক্রম শ্রীশ্রীঠাকুর পরবর্তী শ্রীশ্রীবড়দা তাঁর পরবর্তী যোগ্য দক্ষ চালক ঈশ্বরকোটি পুরুষ শ্রীশ্রীঅশোকদাদার নেতৃত্বে দ্রুতবেগে ছুটে চলেছে ঠাকুরের 'লে যাওয়া অন্ততঃ ১০কোটি লক্ষ্য পূরণের জন্য। ছুটে চলেছে স্লো বাট স্টেডি মন্ত্রে! ছুটে চলেছে নীরবে, নিঃশব্দে! ছুটে চলেছে পাহাড়ের মত বি-শা- বিস্তৃতি নিয়ে স্তম্ভের মত নিজের শক্তিতে অটল 'য়ে!!!!!

এইযে ছুটে চলা এই ছুটে চলা কিন্তু এত সহজে অনায়াসে হয়নি-হয়না, হচ্ছে না হবেও না।

বর্তমানেসৎসঙ্গ’-এর নূন্যধিক পাঁচ সহস্র কেন্দ্র রয়েছে; এইগুলি সৎসঙ্গ বিহার, সৎসঙ্গ অধিবেশন কেন্দ্র, সৎসঙ্গ উপাসনা কেন্দ্র, সৎসঙ্গ মন্দির, সৎসঙ্গ উপযোজনা কেন্দ্র ঠাকুরবাড়ি প্রভৃতি নামে বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত। ভারতবর্ষ ছাড়াও বাংলাদেশ, নেপাল, ব্রহ্মদেশ, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমিরিকাতেও ছড়িয়ে আছে কেন্দ্রগুলো। ভারতবর্ষের প্রায় সমস্ত প্রদেশে গড়ে উঠেছেসৎসঙ্গ বিহার চার মহানগরেইসৎসঙ্গ বিহারস্থাপিত হয়েছে। এই বি-শা- কর্মকান্ড যেমন সৎসঙ্গ ফিল্যান্ত্রপি, আনন্দবাজার, সৎসঙ্গ রসৈষণা মন্দির, সৎসঙ্গ ভেষজ মন্দির, সৎসঙ্গ দ্যুতদীপ্তি হাসপাতাল, সৎসঙ্গ পাবলিশিং হাউজ, অমরদ্যুতি বেদ মন্দির ( সৎসঙ্গ লাইব্রেরী), বেদ ভবন, সৎসঙ্গ তপোবন বিদ্যালয়, সৎসঙ্গ অমরদ্যুতি মহাবিদ্যালয়, সৎসঙ্গ বীণাপানি বিদ্যামন্দির, কলাবিভাগ, অতিথি ভবন, মেমোরিয়া, যতি আশ্রম, সৎসঙ্গ প্রেস, পশুপালিনী চিড়িয়াখানা, উপাসনা (মাতৃ-মন্দির গৃহ) ইত্যাদি ঠাকুরের দেহ রাখার আগেই নীরবে, নিভৃতে গড়ে উঠেছিল দেশভাগের আগেই বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমাইয়েতপুরের পবিত্র মাটিতে ঠিক তেমনি নীরবতা নিঃশব্দতাকে আশ্রয় 'রে এগিয়ে গেছে, নুতন 'রে গড়ে উঠেছে দেওঘরের বুকে এবং এগিয়ে চলেছে ঠাকুর পরবর্তী বর্তমান কর্মকান্ড ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের দেওঘরে! এই যে নীরবতা নিস্তব্ধতা এর গভীরে লুকিয়ে রয়েছে অনন্ত অসীম দুঃখ, কষ্ট, জ্বালা, যন্ত্রণা, অপমান, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, নিন্দা, কুৎসা, সমালোচনা, গালাগালি!!!!! যা প্রায় দশকোটিতে পৌঁছে যাওয়া সাধারণ শিষ্যবৃন্দের অগোচরে! কি পাহাড় প্রমাণ শারীরিক-মানসিক বাধার সম্মুখীন 'তে মুখ বুঁজে সহ্য করতে হয়েছিল শ্রীশ্রীঠাকুর শ্রীশ্রীবড়দাকে সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই সৎসঙ্গীদের! ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে, আর তা ব্যতিক্রম! আর সেই পাহাড় প্রমাণ বাধার ট্র্যাডিশন 'য়ে চলেছে মুখ বুঁজে দৃঢ়তার সঙ্গে কঠিন-কঠোর কোমল মনোভাবে সমানে ঠাকুর পরবর্তী বংশ পরম্পরা সেই তীব্র অপমান-অশ্রদ্ধার ট্রাডিশনকে আশীর্বাদস্বরূপ হাসিমুখে মাথায় নিয়ে!!!!!

ঠাকুরের জীবদ্দশায় শুরু 'য়েছিল পরিকল্পিতভাবে শ্রীশ্রীবড়দাকে অমান্য করার গোপন ষড়যন্ত্র পরিকল্পনা আর তা রূপ নিয়েছিল ভয়ঙ্করভাবে একেবারে শেষের দিকে!! কিন্তু শ্রীশ্রীবড়দা তা বুঝতে দেননি সৎসঙ্গ জগৎ তথা বিশ্ববাসীকে যার ঝলক এখনও দেখতে পায় শ্রীশ্রীঠাকুরের তৃতীয় পুরুষ আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদার মধ্যে এবং তা ফল্গুধারা- মত 'য়ে চলেছে পরবর্তী বংশধর শ্রীশ্রীঠাকুরের রেতধারা পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবাবাইদাদা শ্রীশ্রীঅবিনদাদার মধ্যে!!!!!! শ্রীশ্রীবড়দা ঠাকুরের স্বপ্ন পূরণের জন্য ঠাকুরের প্রাণের প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ'কে যে আগে রক্ষা করার দরকার সেই -ভী- বোধ থেকে 'সৎসঙ্গ'কে রক্ষা করার জন্য অনন্ত-অসীম বাধার পাহাড় ঠেলে কঠিন-কঠোর কোমল শরীরে-মনে হৃদয়ে কুকুরের মত পাহারা দিয়ে গেছেন! ঠাকুর প্রতিষ্ঠা ঠাকুরের স্বার্থপ্রতিষ্ঠায় বড়দা ছিলেন নিষ্ঠাবান আপোষহীন! কোনও অবস্থায় বড়দা দুর্বল হতেন না বা নড়ে যেতেন না। ঠাকুরের বলা "নিষ্ঠা, আনুগত্য, কৃতি-সম্বেগ, ক্লেশ-সুখ-প্রিয়তা"- মূর্ত প্রতীক 'য়ে উঠেছিলেন শ্রীশ্রীবড়দা! যেমন শাসনে কঠিন কঠোর ছিলেন ঠিক তেমনি শুধু মানবদরদী ছিলেন তা নয় সৃষ্টির প্রতিটি জিনিসের প্রতি ছিল তাঁর সমান দরদ ভালোবাসা! তাঁর কঠিন-কঠোর মুখাবয়ব শান্ত গম্ভীর গলার স্বর ছিল কপট ধান্দাবাজদের কাছে একেবারে ভয়ঙ্কর বজ্রপাতের মত!!! তাই তারা তাঁর সামনে দাঁড়াতে পারতো না, পিছন থেকে চালাতো ছুরি! শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর স্বার্থপ্রতিষ্ঠার স্বার্থে এতটাই শ্রীশ্রীবড়দা ফ্যানাটিক আনকম্প্রমাইজিং ছিলেন যে সেই সময় ধান্দাবাজ, কপট সৎসঙ্গীদের সাথে সাথে অনেকেই শ্রীশ্রীবড়দাকে ভুল বুঝেছিলেন! যার রেশ এখনও 'য়ে চলেছে! এইটাই তাদের দুর্ভাগ্য! দুর্ভাগ্য কারণ বিষধর সাপের বিষের জ্বালা যে কি ভয়ঙ্কর 'তে পারে তা যে সেই সাপের ছোবল খায়নি সে বুঝবে না! যে ঠাকুরের আজ ভারতের প্রায় সমস্ত প্রদেশ গোটা বিশ্বজুড়ে পাঁচসহস্র মন্দির, প্রায় ১০কোটিতে পৌঁছে যাওয়া শিষ্য সেই ঠাকুর যে কুলীদের সঙ্গে শিয়ালদহ প্ল্যাটফর্মে রাত কাটাতেন, দিনের পর দিন না খেয়ে শুধু কলের জল খেয়ে কাটিয়েছেন, কয়লার গোলায় কয়লার ডাস্ট-এর মাঝে দিন কাটিয়েছেন, মেসের নোংরা পরিবেশে থাকা খাবার পাতে কফ দেখে ঘেন্নায় প্রাণ বেরিয়ে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি আরও অনেক পরিস্থিতির মোকাবিলা 'রে জীবন অতিবাহিত করেছেন তেমন অভিজ্ঞতা কি সাধারণ সৎসঙ্গীদের আছে না হয়েছে!? কোয়ান্টিটি আর কোয়ালিটি এক নয়! কোয়ান্টিটি কখনও কোয়ালিটির মর্মব্যথা বুঝবে না, বুঝতে পারে না! ঠিক তেমনি শ্রীশ্রীবড়দাকে আজীবন অপমানিত 'তে হয়েছে তাঁকে মেনে নিতে না পারা কপট ভক্তমণ্ডলীর কাছে। তাই শ্রীশ্রীঠাকুর একবার দুঃখ 'রে বলেছিলেন শ্রীশ্রীবড়দাকে, "তোর একটাই দোষ তুই আমার সন্তান!" তাই শ্রীশ্রীবড়দার জীবন শ্রীশ্রীবড়দা কে বোঝা ঈশ্বরকোটি মানুষ ছাড়া সম্ভব নয়! আর সম্ভব সামান্য 'লেও 'তে পারে যদি বোঝার অন্ততঃ চেষ্টা করে! কোথায় সেই চেষ্টা!?

কেন শ্রীশ্রীঠাকুর যতবার এসেছিলেন ততবার তাঁর সঙ্গে আসা পরম ভক্ত কৃষ্টিজাত সন্তান প্রহ্লাদ, হনুমান, উপগুপ্ত, নিত্যানন্দ, বিবেকানন্দকে এবার একইসঙ্গে নিজের ঔরসজাত কৃষ্টিজাত সন্তান 'রে শ্রীশ্রীবড়দারূপে এনেছিলেন!?

এর আগে যতবার ঈশ্বর স্বয়ং মানুষের রূপে এসেছিলেন ততবারই তাঁর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান তাঁর দেহ রাখার পরে পরেই ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে জড়িয়ে সংকটের মুখোমুখি 'য়েছে আর দল উপদলের সৃষ্টি 'য়ে পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া মারামারিতে শক্তি হারিয়ে মানুষরূপী ঈশ্বরের জয়যাত্রাকে করেছে ভীষণভাবে ব্যাহত। তাই শ্রীশ্রীবড়দা আবির্ভাবের তাৎপর্য তারাই বুঝতে পারে সে শত্রু-মিত্র যেই ' না যারা সামনে দাঁড়িয়ে কোন কিছু গড়ার, রক্ষা করার, বাড়িয়ে তোলার নেতৃত্ব দিয়েছে জীবনকে বাজি রেখে আর যারা ডুবে ডুবে জল খায়, তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থাকে, সাজানো বাগানে ফুল তোলার বদভ্যাস বহন করে, না 'রে পাওয়ার মানসিকতার অধিকারী, চুলকে ঘা করার অভ্যাস, পিছন থেকে ল্যাং মেরে সামনে এগিয়ে যেতে চায়, ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার অভ্যাস আর নেপোয় মারে দই খাওয়ার স্বভাবকে অবলম্বন 'রে জীবন অতিবাহিত করে তারা ঈশ্বরকোটি পুরুষ শ্রীশ্রীবড়দাকে চিনবে তা অতি বড় মূর্খ মনে করে না!

একবার ঠাকুরকে 'আলোচনা প্রসঙ্গে'-এর অনুলেখক পরমভক্ত প্রফুল্ল দা জিজ্ঞেস করেছিলেন,

"Fanatic ( নিষ্ঠাবান) Uncompromising (আপোষহীন পথে) চলতেই হবে, কিন্তু তা'যে অনেক মানুষের সঙ্গে বিরোধ না বাধিয়ে উপায় নেই, তাদের অত্যন্ত রূঢ়ভাবে প্রতিরোধ করা দরকার, ওতে কিন্তু মনটায় কেমন লাগে।"

এর উত্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন, "Fanatic uncompromising-এর ( নিষ্ঠাবান আপোষহীনতার) সঙ্গে sweet (মধুর) কথাটাও যোগ 'রে নাও। 'সত্যং ব্রুয়াৎ প্রিয়ং ব্রুয়াৎ'---অবশ্য সময়-সময় অন্যরকম প্রয়োজন হয়। কেষ্ট ঠাকুর যে এত কুরুক্ষেত্রের কান্ড করলেন, শিশুপাল বধ করলেন----সবাই কিন্তু তাঁর favour- (অনুকূলে) ছিল। প্রীতিপূর্ণ নিরোধে আপাততঃ যত বিরোধই বাধুক, ওতে পরিণামে পরস্পরের মধ্যে টান বেড়ে যায়।"

এর থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় শ্রীশ্রীঠাকুর আগাম কুরুক্ষেত্রের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এবং সেই সঙ্গে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সেই পরিস্থিতিতে কেমনভাবে চলতে হবে! আর তাই তিনি এবার সঙ্গে 'রে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর কৃষ্টিজাত সন্তান সেই একই বিভিন্নরূপে আবির্ভুত পরমভক্ত প্রহ্লাদ, হনুমান, অর্জুন, উপগুপ্ত, নিত্যানন্দ, বিবেকানন্দকে একই সঙ্গে ঔরসজাত কৃষ্টিজাত সন্তান 'রে। নিয়ে এসেছিলেন এবার ঘোর কলিযুগ শেষে সত্য যুগে প্রবেশের ট্রানজিশনাল মুহূর্তে পিতাপুত্রের মধ্যে দিয়ে লীলা করবেন 'লে, নেতৃত্ব দেবেন 'লে! সেই ঔরসজাত কৃষ্টিজাত সন্তান 'লেন তাঁর প্রথম সন্তান আদরের বড়খোকা, সৎসঙ্গ জগতের চোখের মণি সকল সৎসঙ্গীদের বড়ভাই শ্রীশ্রীবড়দা! আর সেই শ্রীশ্রীবড়দা প্রীতিপূর্ণ নিরোধের মধ্যে দিয়ে ঠাকুরের মিশন 'বেঁচে থাকা বেড়ে ওঠা'- রথকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই প্রতিটি কঠিন মুহূর্ত অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়া দিনগুলিতে এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত! আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি তার নমুনা! সৎসঙ্গ আজ এই অল্পসময়ের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পারিপার্শ্বিক সবাইকে নিয়ে বাঁচা-বাড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলা সংগঠন! আর আজকের সেই শক্তিশালী সংগঠনের ভয়ঙ্কর নীরব উপস্থিতির কারণেই বর্তমান দেশের প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ লক ডাউন ঘোষণা সংক্রান্ত ভাষণে শ্রীশ্রীঠাকুরের সেই পারিপার্শ্বিক সহ 'বেঁচে থাকা বেড়ে ওঠা'- কথা দিয়ে শুরু করেন তাঁর ভরসাদীপ্ত ভাষণ; আবেগ তাড়িত কণ্ঠে তিনি দেশবাসীকে করোনা মহামারীর দুর্দিনে আশা-ভরসা দিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের সুরে সুর মিলিয়ে বলেন, "হামে মিলকর বাঁচনা হ্যায়, আগে বাড়না হ্যায়"!

তাই শ্রীশ্রীবড়দাকে চিনতে 'লে, জানতে বুঝতে 'লে, দিন শেষে উপলব্ধির ঘরে পৌঁছতে 'লে প্রথম প্রধান শর্ত 'লো ঠাকুরকে আগে চিনতে হবে, জানতে বুঝতে হবে, অনুভব করতে হবে কে এই অনুকূল!? তবেই চিনতে পারা সম্ভব হবে পরমপিতার সেই পরম ভক্ত প্রহ্লাদ, হনুমান ইত্যাদির নবরূপে নবকলেবরে আবির্ভুত শ্রীশ্রীবড়দাকে! অশ্রদ্ধা, অপমান, কুৎসা, নিন্দা, সমালোচনা, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, গালাগালি দিয়ে সাজানো আর মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসা টাট্টি কা মাফিক বাতে পরিপূর্ণ ঘৃণ্য জীবন যাই করুক ঈশ্বরকোটি পুরুষকে তো দূরের কথা নিজের ঘরের মানুষকে নিজেকেই চেনা যায় না!

এই প্রসঙ্গে পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুরের একটা ইঙ্গিতই যথেষ্ট শ্রীশ্রীবড়দা কে? কথায় আছে, বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার! লীলাপুরুষের লীলা বোঝে সে যে জানে হিন্দির কাহাবত: সমঝদার কে লিয়ে ইশারা কাফি হোতা হ্যায়! সেই ইশারা কি!? সেই ইশারা 'লো:

"একদিন ঠাকুরের পার্লারে বসে আছি। অনেকেই আছেন।

বড়দা এলেন। ঠাকুরের সঙ্গে কি একটা কথা বললেন, চলে

গেলেন। ঠাকুর বড়দার যাওয়ার পথের দিকে কিছুক্ষণ

তাকিয়ে রইলেন। তারপর কেষ্টদার দিকে ফিরে বললেন,

বড়খােকা যখন আসে, তখন আপনাদের কিন্তু উচিত উঠে দাঁড়িয়ে ওকে সম্বর্ধনা জানানাে।

আর একদিন কাজলদাকে বললেন—“কই, বড়খােকাকে তাে আজ প্রণাম করলি নে ?” ঠাকুর যে সেদিন বেশ ক্ষুন্ন হয়েছেন তা বলার রকমেই ধরা পড়লাে। কাজলদা সবিনয়ে বললেন—“বড়দা এখানে নেই, কলিকাতা গিয়েছেন।ঠাকুর বললেন—“তাতে কি? তা আসন তাে রয়েছে,

বিছানা তাে রয়েছে, সেখানে তাে প্রণাম করতে পারতে।

(‘আলােচনা, অগ্রহায়ণ, ১৩৭৮, পৃঃ-৪৮)

শ্রীশ্রীবড়দা কে!? এই প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর অনেকবার অনেকরকম ভাবে ইঙ্গিত ইশারা দিয়ে গেছেন! কোনোদিনই সরাসরি তিনি কাউকে কিছু বলেননি এবং নিজের সম্পর্কেও কোনোদিন কিছু বলেননি! সমাধি অবস্থায় নিজের স্বরূপ প্রকাশ করেছেন এবং তা পূণ্যপুঁথি গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু সরাসরি কখনোই ধরা দেননি! ধরা দিয়েছেন তাঁদের কাছে যারা ছিলেন ঈশ্বরকোটি পুরুষ! আর বুদ্ধিমান মানুষ, ভক্তমানুষ তাঁর ইশারা, ইঙ্গিতকে বোঝার চেষ্টা করেছেন! নামধ্যানহীন অহংকারী কথার মানুষ তর্কবাগীসদের কাছে তিনি চিরকালই অধরা থেকে যান! তিনি নানাভাবে কথা দিয়ে, আচরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন তিনি কে আর শ্রীশ্রীবড়দা- বা কে!? আসুন দেখে নেওয়া যাক আরও একবার!

পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরামচন্দ্র যখন বনবাস যুদ্ধ শেষে সবাইকে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে এলেন তখন তিনি দেশবাসী যারা তাঁকে স্বাগত জানাতে এসেছিল তাদের সঙ্গে তাঁর সঙ্গে আসা সবার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। সেইসময় পরিচয় করাতে করাতে যখন হনুমানকে পরিচয় করাবার সময় এলো তখন আর কথা বলতে পারছিলেন না। হনুমানের দিকে তাকিয়ে তাঁর দু'চোখ দিয়ে 'রে পড়ছিল জল! কান্নায় তাঁর গলা রুদ্ধ 'য়ে গেছিল! কিছুতেই কিছু বলতে পারছিলেন না। শুধু অঝোর ধারায় কেঁদে চলেছিলেন! সেই দৃশ্য দেখে সবাই অভিভূত 'য়ে গেছিল, বাকরুদ্ধ 'য়ে গেছিল উপস্থিত দেশবাসীর! তখন অশ্রুভরা চোখে প্রভু দয়াল রামচন্দ্র হনুমানের তাকিয়ে জলভরা চোখে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, "যে আমাকে ভালোবাসে সে হনুমানকেও ভালোবাসে আর যে আমাকে ভালোবাসে আর হনুমানকে ভালোবাসে না সে আমাকেও ভালোবাসে না আর আমি তার ভালোবাসা নিই না!"

ঠিক তেমনি শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের নবরূপ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র শ্রীশ্রীবড়দা সম্পর্কে বলেছিলেন, "যে আমাকে প্রণাম করে সে বড়খোকাকেও প্রণাম করে, যে আমাকে প্রণাম 'রে বড়খোকাকে প্রণাম করে না আমি তাঁর প্রণাম নিই না!"

আরো অনেকভাবে শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর আদরের বড়খোকা, তাঁর পরম ভক্ত শ্রীশ্রীবড়দা সম্পর্কে অনেকবার ইঙ্গিত দিয়েছেন করেছেন ইশারা!!!!!

শ্রীশ্রীঠাকুরকে চেনা যদি এতই সোজা, সহজ সরল 'তো তাহ'লে সেই ভক্তের প্রাণ সোজা, সহজ সরল 'তো আর জগৎ মাতিয়ে রাখতো, বক্রতা জটিল 'তো না। আর ঠাকুরকে চেনা মানেই সকলকে চিনতে পারা আর সেই যে রাম রূপে যখন তিনি অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র এসেছিলেন আর সঙ্গে 'রে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর পরমপ্রিয় শ্রীশ্রীহনুমানজীকে এবার আবার তিনি সঙ্গে 'রে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর সেই পরমভক্ত হনুমানকে শ্রীশ্রীবড়দা রূপে! সেই শ্রীশ্রীবড়দার মধ্যে যে তিনি অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুর বর্তমান তা কি জোর 'রে কাউকে বোঝানো যায় নাকি চেনানো যায়? সবটাই গভীর উপলব্ধির ব্যাপার!!! আমার সৎসঙ্গী গুরুভাইবোন শ্রীশ্রীবড়দা বিরোধীদের সাথে এসব নিয়ে অহেতুক আলোচনায় যাবেন না। আলোচনা তার সঙ্গেই হয় যার জীবন আলোময়, রূপময়, রসময়-এর সঙ্গ লাভের মধ্যে দিয়ে আলোময়, রূপময় রসময় 'য়ে উঠেছে! যার যা ইচ্ছা করুক নিজেকে অহেতুক বিতর্কে জড়িয়ে ঠাকুরকে কষ্ট দেবেন না নিজে অসুস্থ হওয়ার মহান দায়িত্ব নেবেন না। এটা জানবেন, যে বা যারা শ্রীশ্রীবড়দাকে চিনতে পারেনি তারা শ্রীশ্রীঠাকুরকে চিনতে, জানতে বুঝতে পারেনি অতএব সম্মানজনক দূরত্ব বজায় রাখুন। আর সেই ভক্ত প্রহ্লাদ, হনুমান, অর্জুন, উপগুপ্ত, নিত্যানন্দ বিবেকানন্দকে অনুভব করুন শ্রীশ্রীবড়দার মধ্যে! সৃষ্টিকর্তা যেমন তাঁর সৃষ্ট সমস্ত জীবকুলকে রক্ষা করবার জন্য বারবার যুগোপযোগী 'য়ে পৃথিবীর মাটিতে নেবে আসেন ঠিক তেমনি সঙ্গে নিয়ে আসেন বারবার তাঁর সেই শ্রেষ্ঠ ভক্তকে!!!!!!!! সৎসঙ্গীরা যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করতে পারবে এই অত্যাশ্চর্য সত্য ততো তাড়াতাড়ি ঠাকুরের বুকের ওপর থেকে নেবে যাবে সীমাহীন কষ্ট-যন্ত্রণার বোঝা! একথা বোঝে সেই সৎসঙ্গী, প্রাণ বোঝে যার! আসুন টাকার এপিঠ আর ওপিঠ শ্রীশ্রীঠাকুর আর তাঁর পরম ভক্ত শ্রীশ্রীবড়দার যুগল মূর্তির মধ্যে সেই বিষ্ণু-প্রহ্লাদ, রাম-হনুমান, কৃষ্ণ-অর্জুন, বুদ্ধ-উপগুপ্ত, নিমাই-নিতাই, রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ কে অনুভব করি, উপলব্ধি করি আর করি উপভোগ এবারের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ লীলা পিতাপুত্রের লীলা বংশপরম্পরায় শ্রীশ্রীঠাকুর-শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীবড়দা-শ্রীশ্রীঅশোকদাদা, শ্রীশ্রীঅশোকদাদা-শ্রীশ্রীবাবাইদাদা আর শ্রীশ্রীবাবাইদাদা-শ্রীশ্রীঅবিনদাদা! এমনিভাবেই রেত শরীরে সুপ্ত থেকেই পিতাপুত্রের লীলার মধ্যে দিয়ে কেটে যাবে শ্রীশ্রীঠাকুরের 'লে যাওয়া দশ হাজার বছরের মধ্যে আর না আসার ইঙ্গিত! আর আসবে সেই আকাঙ্খিত ঘোর কলিযুগ শেষে সত্যযুগ! আসুন এই রহস্যময় কলিযুগ থেকে সত্যযুগে প্রবেশের ট্রানজিশনাল পিরিয়ড অনুভব করি, উপলব্ধি করি, করি উপভোগ ৮৪লক্ষ যোনি ভ্রমণ শেষে প্রাপ্ত এই দুর্লভ মনুষ্যজীবনে যাতে পরবর্তী জীবনে আবার আসতে পারি, লাভ করতে পারি, সঙ্গ করতে পারি পুনরায় এই পিতাপুত্রের লীলাময় রহস্যময় জীবন!!!!!!!!! জয়গুরু।

 

No comments:

Post a Comment