ফেসবুকে পুরুষোত্তমদের নিয়ে ছবি ও লেখা পোষ্ট সম্পর্কে সৎসঙ্গীরা সাবধান।
সদগুরু, পুরুষোত্তম এই বিষয়ে অনেকেরই লেখা চোখে পড়ে। চোখে পড়ে ফেসবুকে। অনেকে আবার একই ফ্রেমে পুরুষোত্তমদের নিয়ে ছবি তৈরী ক'রে পোষ্ট করে। সেই ছবির মধ্যে আবার বর্তমান ও পূর্ববর্তী পুরুষোত্তমদের কেউ কেউ বাদ যায় আবার সেই বাদ যাওয়া জায়গায় কোনও কোনও সাধক দিব্যি পুরুষোত্তমদের সাথে জায়গা দখল ক'রে বসে। যারা এই বিষয় নিয়ে লেখে তাদের লেখার মধ্যেও অনেক পুরুষোত্তমের নাম উল্লেখ থাকে না। অথচ বেদ পুরাণ উপনিষদ গীতা ইত্যাদি চটকে পুরুষোত্তম সম্পর্কে, তাঁদের আসা সম্পর্কে বালখিল্য জ্ঞানগর্ব লেখা লিখতেও ঝাঁপিয়ে পড়ে। পোষ্ট করা ছবির মধ্যে যাদের ছবি রয়েছে তাঁরা কারা, তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি সম্পর্ক এ বিষয়ে লেশমাত্র ধারণা নেই অথচ জ্ঞানের পারমাণবিক বোমা ফাটাতে সিদ্ধহস্ত তারা। আর এই সিদ্ধহস্ত ফেসবুকের দৌলতে। ফেসবুক এখন ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। যে যা পারছে এখানে এসে হেগেমুতে দিয়ে যাচ্ছে। হয়তো কেউ কেউ অতিবোদ্ধা খোঁচা মেরে আমায় বলতে পারে আপনি তাহ'লে এই ডাস্টবিনে কেন হাতড়াচ্ছেন? এটার একটাই উত্তরঃ "যেখানেই দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখো তাই পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন।" এই কথাটা প্রায় সময় ঠাকুর বলতেন, "আমার মা "যেখানে দেখিবে------- অমূল্য রতন" এই কথা আমায় সবসময় বলতো।" তাই আমি ডাস্টবিনেও মুখ গুঁজে পড়ে থাকি। যদি ডাস্টবিনের গাদায় রত্নের সন্ধান পেয়ে যাই! এই ডাস্টবিনে রত্ন আছে বৈকি! এমনকি অনেক নূতন নবীন প্রবীণ প্রাণও ফেসবুকের স্পর্শে রত্ন হ'য়ে উঠছে দিনেদিনে! খুলে যাচ্ছে তাদের সামনে বৃহৎ জগতের বন্ধ রাস্তা। তবে এই সংখ্যাটা অতি নগন্য। ফেসবুক যে কতজনের সর্বনাশের কারণ হ'য়ে উঠেছে উঠছে তার ইয়ত্তা নেই। ফেসবুকের সাজানো ফাঁদে পড়ে কত প্রাণ আজ নিষ্প্রাণ হ'য়ে পড়েছে তার সংখ্যা অগুন্তি! যে যা পারছে, যার যা মনে আসছে তাই পোষ্ট ক'রে যাচ্ছে! সাপ, ব্যাঙ, ইঁদুর, ছুঁচো ইত্যাদির বন্যায় ভেসে যাচ্ছে ফেসবুক আর তার উপর মাঝে মাঝে ভেসে ওঠে, ভেসে যায় সোনা, হীরে, মুক্তো, মণিমাণিক্য! আর তাতেই অর্থাৎ কার্বনডাইঅক্সাইডের মাঝে একটু অক্সিজেন নিয়ে বাঁচি। ফেসবুক নিঃসন্দেহে এক বলিষ্ঠ মাধ্যম জ্ঞানের আলোর স্পর্শে আলোকিত হবার, অন্ধকার জগত থেকে আলোয় উদ্ভাসিত হবার, যুগ যুগ ধ'রে কুসংস্কারের হাত থেকে নিজেকে ও প্রিয়জনকে বাঁচাবার। হাজার হাজার বছর ধ'রে ধর্ম, রাজনীতি, শিক্ষা ইত্যাদির বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে মিথ্যের জালে মিথ্যের বেওসায়ীরা সাধারণ মানুষকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছিল তাদের ভয়, দূর্বলতাকে হাতিয়ার ক'রে অলীক মায়ার মোহন বাঁশির সুরে মোহাচ্ছন্ন ক'রে রেখেছিল সেই অসত্যের, মিথ্যের জাল থেকে, মোহচ্ছন্ন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার অন্যতম বলিষ্ঠ মোক্ষম মাধ্যম এই ফেসবুক। তাই ফেসবুক ডাস্টবিন নয়, অযোগ্য অদক্ষ অপাত্র হাতের স্পর্শে তা মলিন হ'য়ে উঠছে ক্রমশঃ।
তাই কোনও কিছু লিখতে গেলে সেই বিষয় সম্পর্কে আরও বিশদ পড়াশুনার দরকার হয়; বিশেষ ক'রে The greatest phenomenon of the world
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ও তাঁর দর্শন সম্পর্কে লিখতে গেলে। নইলে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যায়; বিশেষ ক'রে সৎসঙ্গীদের এই বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার। যদিও সৎসঙ্গীরা এইসব বিষয়ের ধার ধারে না। প্রথম কথা তাদের পড়ার সময় নেই, জানার ইচ্ছা নেই, নেই কোনও কিছু বিশদে তো দূরের কথা সামান্যটুকুও বোঝার ধৈর্য বা মানসিকতা। আর এতবড় লেখা কেউ পড়বেও না তাও আমি জানি। তবুও লিখি। আশায় মরে চাষার মত। যদি কেউ পড়ে আর তার বা তাদের চোখ যদি খুলে যায়! যদিও তারা ঐ মোল্লার দৌড় মসজিদের মতো; 'জয়গুরু'-তেই তাদের সফর সমাপ্তি। কিন্তু কিছু সৎসঙ্গী আছে যারা বেশ লেখালেখি করেন। লেখা ভালো, চেষ্টা করা ভালো। কিন্তু তাদের এই কঠিন বিষয়ে লেখার ইচ্ছের সঙ্গে বিষয় সম্পর্কিত জ্ঞান এত কম যে অবাক হ'য়ে যেতে হয়, এরা সৎসঙ্গী!? এরা জানে না যে বিষয়, জানে না কে বা কারা পুরুষোত্তম আর কারা সাধক, মুনি, ঋষি অথচ সেই বিষয়ে লেখে, সেই বিষয়ে ছবি তৈরী ক'রে পোষ্ট করে, শেয়ার করে।! এরা জীবন থেকে বিপদ তাড়াবার জন্য, ভাগ্য ফেরাবার জন্য হাতে গলায় তাবিজ মাদুলী লাল কালো সুতো পড়ে, শনি, রাহু, কেতুর হাত থেকে বাঁচতে জ্যোতিষীর দ্বারস্থ হয়, টাকা পয়সা খরচা ক'রে নীলা, পলা, ধলা, মুক্তো, সুক্তো ধারণ করে, খায় আবার ঠাকুর নিয়ে কথা বলতে আসর ঝাঁকিয়ে বসে! কত সৎসঙ্গীদের দেখেছি শকুন্তলা কালি পূজার সময় মানত করে পাঁঠাবলি দেবার এবং মায়ের পূজায় সেই পাঠা বলি দিয়ে মহানন্দে গায়ে মাথায় রক্ত মেখে ভক্তিতে গদগদ হ'য়ে সেই রক্ত পরিবারের ছেলেমেয়ে, স্বামীস্ত্রীর মাথায় মুখেচোখে মাখিয়ে দেয় আর মায়ের মহা প্রসাদ হিসেবে সেই কচি পাঁঠার কচি মাংস তেলেমশালায়, ঝালেঝোলে মাখিয়ে চিবিয়ে খায় হাড়গোড় সহ সেই মাংস চকাৎ চকাৎ ক'রে চোখে মুখে নাকে জল এনে মায়ের মহাপ্রসাদ মনে ক'রে! এরা সৎসঙ্গী! এরা পরিবারে সন্তান জন্মালে সন্তানের গলায় কোমরে ঝুলিয়ে দেয় লোহালক্কর, গাছপালা, ঝাড়জঙ্গল, শেকড় বাকড় আর হাতে পায়ে কোমরে গলায় বেঁধে দেয় বাবাজী মাতাজী জ্যোতিষির দেওয়া লাল, নীল,হলুদ, কালো সুতো! বারোমাসে তের পার্বনের মত তেত্রিশকোটি দেবদেবীর ধুমধাম ক'রে এরা পুজো করে, মহার্ঘ ডালা হাতে পুজা দেয় আর রাস্তাঘাটে ঝাড়জঙ্গলে যেখানেই মূর্তি বা সিঁদুরে মাখানো ইটপাথর বা ছাইভস্ম মাখা মানুষ দেখে সেইখানেই মাথা ঠেকায় আর কষ্টার্জিত আয় হ'ক আর বাঁ হাতের নিপুন খেলায় হ'ক রোজগার করা অর্থ তাদের খড়খড়ি পায়ে ঢেলে দেয়! কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুরের ইষ্টভৃতি প্রশ্নে এরাই তখন চোখমুখ বাঁকিয়ে জ্ঞানবৃদ্ধের মতো মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, পয়সা দিয়ে আবার ভগবানের পুজো কিসের? আর যদি ইষ্টভৃতি করেও তা করে ভয়ে আর সেই ইষ্টভৃতির অর্ঘের পরিমাণ চার আনা, আটআনা খুব বেশী হ'লে একটাকা। আবার কেউ কেউ এই সামান্য ইষ্টভৃতি দিয়ে অহঙ্কারী উঁচু গলায় মোটা স্বরে বলে, আমি ইষ্টভৃতি করি, আমি ঠাকুরবাড়ি টাকা পাঠায় আর বিকৃত স্বরে মুখ বাঁকিয়ে বলে, এই-ই আনন্দবাজারের ঠাকুর ভোগ!? অনেক তথাকথিত বড় বড় সৎসঙ্গীকেও বলতে শুনেছি, আনন্দবাজারের ঐ খাবার খাওয়া যায় না! নাম বলতে পারি কিন্তু নাম বললাম না। কিন্তু তাঁরা কোনদিন খায়? বিশেষ দিনগুলির বিশেষ ভোগ তাঁরা খায়! আবার উপরে উক্ত এইসব সৎসঙ্গীরাই সৎসঙ্গ করে, করে মাতৃ সম্মেলন! বক্তৃতা দেয়, গায় গান! ঠাকুর, সৎসঙ্গ এদের কাছে দু'নম্বরী আয়ের উপকরণ আর না ক'রে ফোকটে লাভ করার উপায়!
যাই হ'ক, হাজার হাজার বছর ধ'রে বংশ পরম্পরায় ধর্ম, ঈশ্বর, গুরু, সদ্গুরু, অবতার, অবতারি, দেবদেবী, সাধক, পুজো ইত্যাদি নিয়ে যে ভুল ভ্রান্তি মানুষের মধ্যে চারিয়ে গিয়েছিল (চারিয়ে গিয়েছিল বললে ভুল বলা হবে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে চারিয়ে দেওয়া হয়েছিল) ঈশ্বর নিয়ে ধর্ম নিয়ে ঈশ্বর ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের কারণে সেই ভয়ঙ্কর গভীর মরণ ফাঁদ থেকে মানুষকে বাঁচাতে, সৃষ্টিকে রক্ষা করতে ঈশ্বর বারবার নেবে এসেছিলেন তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের পিছনে পিছনে আর ধান্ধাবাজ ধর্ম বেওসায়ীরা সেই তাঁদেরই বিভাজন ক'রে রেখেছিল রেখেছে! আজও সেই ট্রাডিশন সমানে ব'য়ে চলেছে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে মৌরসি পাট্টা জমিয়ে বসা কায়েমি স্বার্থরক্ষাকারী সেই ধর্ম বেওসায়ীদের হাত ধ'রে। তাই সেই নেবে আসা জীবন্ত ঈশ্বর কারা তা আগে আমাদের পরিস্কার ক'রে জানতে হবে, জানতে হবে তাঁরা কে কে? কি নাম তাঁদের? কেন বা কি কারণে, কি উদ্দেশ্যে তাঁরা এসেছিলেন? ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সেই সমস্ত বিষয়ে কি কি ব'লে গেছেন সেই বিষয়ে আমাদের ক্লিয়ার কনসেপশান থাকার দরকার। নইলে তাঁর মর্তধামে নেবে আসার কোনও কোনও রূপ বাদ হ'য়ে যেতে পারে; যেমন আগে হয়েছে সমস্ত ধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে নিজের নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করা মর্তধামে নেবে আসা জীবন্ত ঈশ্বরদের নিয়ে। আর সৎসঙ্গীদের দ্বারা যেমন বর্তমানে বিভিন্ন পোষ্টের ক্ষেত্রে হয়েছে, হচ্ছে। সৎসঙ্গীরাই যখন জানে না ঈশ্বর কে? ঈশ্বর কি নেবে আসেন মানুষ রুপে মানুষের মাঝে? নেবে আসলে তাঁরা কে কে? কি নাম তাদের? কোন কোন রুপে তাঁরা নেবে এসেছেন? কেন তিনি নেবে আসেন বারবার? এরকম হাজারো প্রশ্ন সম্পর্কে যখন তাদের কোন ধ্যানধারণাই নেই তখন বুদ্ধিমানের মত চুপ ক'রে গেলেই ভালো ও মঙ্গল হ'তো। এর জন্যে আমরা, আমাদের আগের আগের প্রজন্ম দায়ী। আমাদের ঋত্বিক সম্প্রদায় দায়ী। আর দায়ী আমাদের পুর্বপুরুষরা। আমরা আগের পরের সবাই যদি নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতাম চাতুরীহীন অকপট ভাবে, ফলো করতাম শ্রীশ্রীঠাকুরের দেওয়া বাঁচাবাড়ার প্রেসক্রিপশন আর করতাম যজন যাজন এবং ইষ্টভৃতি ইষ্টভৃতির অর্থ বুঝে আর আমাদের আর্যধারা যদি ভেঙ্গে না যেত, আর্যধারার কন্টিনিউইটি বজায় থাকতো তাহ'লে আজ এতবড় সাম্প্রদায়িক বিভাজন হ'তো না। অজ্ঞানতার গভীর অন্ধকার আমাদের গ্রাস করতো না। আমরা বাঁচার পথ পেয়েও বৃত্তি-প্রবৃত্তির ভুল্ভুলাইয়ার অন্ধকার ঘুলঘুলিতে কষ্ট যন্ত্রণা পেয়ে মরতাম না!
তাই সৎসঙ্গীরা সাবধান। ঠাকুরের দর্শন বলাৎকার হয় এমন বালখিল্য সুলভ আচরণ আমরা সৎসঙ্গীরা যেন না করি। তাই ঠাকুর সম্পর্কে সবার সব লেখা সুন্দর আরও সুন্দর আরও স্বচ্ছ পরিপূর্ণ হ'ক যেখান দিয়ে ঠাকুর প্রতিফলিত হবে সুর্যের কিরণের মত ঠাকুরের শ্রীচরণে এই প্রার্থনা ক'রে এই লেখা শেষ করলাম। জয়গুরু।
No comments:
Post a Comment