Powered By Blogger

Monday, October 11, 2021

আচার্য প্রথা ও আচার্য পরম্পরা এবং বহুনৈষ্ঠিকতা।

অনেকদিন 'রে দেখতে পাচ্ছি শ্রীশ্রীঠাকুরের সত্যানুসরণে বলা "বহুনৈষ্ঠিকের হৃদয়ে প্রেমভক্তির স্থান নেই" বাণীকে একশ্রেণীর ঠাকুর অনুগামী ভুলভাবে ব্যখ্যা 'রে চলেছে। এরা নিজেদের ঠাকুরের এক একমাত্র ভক্ত 'লে দাবী করে। এরা নাকি একমেবাদ্বিতীয়ম এর পূজারী। এদের ঠাকুরের বাণীকে ভুল বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করার প্রবণতা ফেসবুকের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে। এই ব্যাখ্যা সবাই যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে 'রে থাকে তা নয়। যারা এই বাণী এবং অন্যান্য অনেক বাণী নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই মূল কেন্দ্র বিরোধী প্রচার করে তাদের সেই ঘৃণিত প্রচারের বিষবাষ্পে সরলমতি অনেক মানুষ শিকার। তারা না পারে গিলতে, না পারে উগলাতে। সাপের ছুঁচো গেলার অবস্থার মতন এইসমস্ত সরল সাধাসিধা সীমাহীন ভাঙ্গাচোরা দূর্বল মানসিকতাসম্পন্ন ভীতু অজ্ঞ মানুষদের মানসিক অবস্থা। সেইসমস্ত মানুষদের জন্য আফসোস হয়, হয় দুঃখ। মনে হয় যেন কিছুই করার নেই। এটাই নিয়তি।

হ্যাঁ! নিয়তি তো বটেই! ঠাকুর বললেন, নিয়তি মানে নিয়ে যায়। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এদের? নরকের দ্বারে! নিয়ে যাচ্ছে মরণের পথে! এর থেকে কি বাঁচার পথ নেই? আছে। পথ আছে। পথ আছে এদের বক্তব্যের কোথায় কোথায় মিথ্যে, কপটতা, ভুল লুকিয়ে আছে তা খুঁজে বের 'রে আম দীক্ষিতদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। যদি কেউ কেউ তা জেনে বাঁচে বা বাঁচার চেষ্টা করে।

তাই সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আমার এই লেখা। আমার এই লেখা তাদের উদ্দেশ্যে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে এই বিকৃত ভাব, এই মিথ্যের বিষাক্ত হাওয়া, ভুলের মৃত্যুর গ্যাস ছড়িয়ে দিচ্ছে ঠাকুর অনুগামীদের মধ্যে তাদের এবং সাধারণ ভক্তকূল যারা এই বিষাক্ত হাওয়ায়, মৃত্যুর গ্যাসে আক্রান্ত হচ্ছে তাদের সকলের ঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠার জন্য, মৃত্যুর গ্যাস চেম্বার থেকে সত্যের খোলা আকাশের নীচে শুদ্ধ অক্সিজেন ভরা বাতাসে বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়ার মধ্যে দিয়ে মুক্তি লাভের জন্য আমার এই প্রচেষ্টা।

যারা নানারকমভাবে উদারতার ভঙ্গী নিয়ে একমেবাদ্বীতিয়ম-এর পুজারী সেজে নানা কথার জাল বিছিয়ে ঠাকুরের বাণীর আশ্রয় নিয়ে বহুনৈষ্ঠিকের তত্ত্বকে বিশ্লেষণের নামে মূল কেন্দ্রের আচার্য প্রথার বিরোধীতা করে তাদের সেই ঘৃণ্য উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধে সরাসরি এই লেখা।

বর্তমান জীবন্ত ঈশ্বরের অনুগামী জীবন্ত ঈশ্বরের পূর্ব পূর্ব রূপের অনুগামী হবে, মান্য করবে, তাঁদের মাথায় নিয়ে নতুন যুগের অবতারীকে জীবনে গ্রহণ 'রে সামনে এগিয়ে চলবে তা'তে ভুল নেই এবং তা বহুনৈষ্ঠিকের পর্যায়ে পড়ে না।। কিন্তু তার সঙ্গে দুনিয়ার যত বোবা ভগবানের পিছনে ছুটবে, শনি, রাহু, কেতুর দ্বারস্থ হবে, লাল, কালো সুতো ধারণ করবে, তাবিজ, মাদুলি, বাবাজী মাতাজি ইত্যাদি ইত্যাদিতে ডুবে থাকবে সেটা ভুল, সেটা বহুনৈষ্ঠিকের জ্বলন্ত উদাহরণ।

কিন্তু নতুন যুগের নতুন বর্তমান জীবন্ত ঈশ্বর যাকে আমরা পুরুষোত্তম বলি, বলি অবতারী সেই তিনি আমাদের সামনে যখন নেবে আসেন যুগের প্রয়োজনে তখন আগামী ভয়ংকর অস্থির পৃথিবীতে যখন তিনি দেহরূপে থাকবেন না তখন অশরীরী তাঁকে কি 'রে অটুট অস্খলিতভাবে নিজের জীবনে 'রে রেখে তাঁর নির্দেশিত পথে নিখুঁত চলনায় 'লে নিজের অস্তিত্বকে রক্ষা করবো, নিজেকে রক্ষা 'রে কিভাবে প্রিয়জনদের রক্ষা করবো, পরিবেশকে কিভাবে বাঁচা-বাড়ার উপযোগী 'রে তুলবো সেসবের জন্য যিনি জীবন্ত প্রদর্শক ( Living demonstrator) যিনি নিজের জীবনে তাঁর নীতিবিধি মেনে নিখুঁত চলনায় 'লে তাঁকে জীবনে জীবন্ত 'রে তুলেছেন সেই তিনি যাকে আমরা আচার্য বলি তাঁকে তিনি অর্থাৎ স্বয়ং জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর আমাদের সামনে রেখে গেছেন, রেখে গেছেন এই ঘোর কলিতে পিতাপুত্র রূপে লীলা করবেন বলে। এই লীলা তাঁর সর্ব্বোত্তম লীলা! সেই লীলা স্বরুপ তাঁর যে অবস্থান সেই জীবন্ত অবস্থানকে সামনে রেখে 'লে যদি জীবন্ত ঈশ্বরের মিশন প্রতিষ্ঠায় ব্রতী না ' তাহ'লে যে ভুল হবে তার থেকে মহাভুল আর কিছু নেই। কারণ জীবন্ত ঈশ্বরের অবর্তমানে অর্থাৎ তাঁর শরীরী অবস্থান ত্যাগ করার পর তাঁর বলাগুলি, হাজার হাজার বাণীগুলি শুধু বইয়ের মধ্যে না থেকে তা কোনও রক্তমাংসের শরীরে যতক্ষণ না প্রাণ পেয়ে আমার চোখের সামনে জীবন্ত 'য়ে উঠছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমার মত সাধারণ ভাঙাচোরা মানুষের পক্ষে শুধু তাঁর বলে যাওয়া কথাগুলি পড়ে তাঁকে উপলব্ধি করা, উপভোগ করা, অনুভব করা, নিজেকে পরিবর্তন করা, পরিবর্ধন করা, তাঁর মিশনকে অস্খলিত অটুট চলনে 'লে প্রতিষ্ঠা করা কখনোই সম্ভব নয়। অমোঘ সত্য! এখানে কোনও ভুল নেই। আর এবারের পিতাপুত্রের লীলা সর্বোত্তম লীলাকে অস্বীকার করা, তাচ্ছিল্য করা, উপহাস করা, অগ্রাহ্য করা, সেই অত্যাশ্চর্য সর্বোত্তম লীলার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মিথ্যের পশরা সাজিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত 'রে নিজের মৌরসি পাট্টা কায়েম করার বৃথা চেষ্টা ভুল! ভুল!! মহাভুল!!! আর সেই মহাভুল থেকে যে মহাপতন হবে তার থেকে মহাপতন আর কিছু নেই দুনিয়ার বুকে। আর পিতাপুত্রের সেই সর্বোত্তম লীলাকে কেন্দ্র 'রে চলাকে বহুনৈষ্ঠিকের চলন বলে না। আর সেই চলাকে যারা জোর 'রে বহুনৈষ্ঠিকের চলন 'লে সৎসঙ্গীদের বিভ্রান্ত 'রে তাঁর বিজয় রথকে আটকাবার চেষ্টা করবে, চেষ্টা করবে সংহতিতে ভাঙ্গন ধরিয়ে তাঁর সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্থ করার তাহ'লে তারা ঠাকুরের 'লে যাওয়া কথামত 'লো 'ছেদক' ঠাকুর বললেন, "সংহতিতে যে বা যারা ভাঙ্গন ধরায় সে বা তারা ছেদক।" আর ছেদকের পরিণতি? পরিণতি আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদার বলা "শেষের সেদিন ভয়ংকর।"

আর এই যে জীবন্ত প্রদর্শকের কথা বললাম যাকে ইংরেজীতে Living demonstrator বলছি সেই তিনি ছিলেন আমাদের মূল কেন্দ্রের আচার্য রূপী শ্রীশ্রীবড়দা; যার জীবন ছিল ঠাকুরের সমস্ত বাণীর মূর্ত রূপ! যাকে আমি বলি, শ্রীশ্রীবড়দা 'লেন চলমান জীবন্ত সত্যানুসরণ! জীবন্ত প্রদর্শক! তিনি নিজে ঠাকুরের সমস্ত 'লে যাওয়াগুলি নিজের জীবনে আচরণ 'রে 'রে হাতে কলমে 'রে করিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন আমাদের যে ঠাকুরকে কেমন 'রে ভালোবাসতে হয়, কেমন 'রে তাঁর পথে চলতে হয় তাঁর চলনপূজার মাধ্যমে; চরণপূজা নয়। শ্রীশ্রীবড়দা আচরণসিদ্ধ মহাপুরুষ! আর বর্তমানে যিনি আচার্য রূপে আমাদের নিখুঁত পথ দেখিয়ে একইরকমভাবে আচরণসিদ্ধ 'য়ে ইষ্টপ্রতিষ্ঠা ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার পথে, ঠাকুরের মিশন পূরণের লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি 'লেন শ্রীশ্রীঅশোকদাদা যাকে শ্রীশ্রীদাদা বলি আমরা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি দীক্ষিতরা। এরকম আচরণসিদ্ধ জীবন্ত আচার্য যদি আমাদের সামনে তিনি রেখে না যেতেন তাহ'লে তাঁর পূর্ব পূর্ব রূপের ক্ষেত্রে যা হয়েছে বা 'য়ে চলেছে তাই- 'তো। আর তা তিনি অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুর জানতেন। এবার তিনি যেমন দয়াল তেমনি ভয়াল 'য়ে এসেছেন। এসেছেন কারণ এইসময় ঘোর কলি! আগামী ভয়ংকর পৃথিবীতে তিনি আর আসবেন না যা করার করবেন এবার পিতাপুত্রের লীলার মধ্যে দিয়ে! এই সময় কলি যুগ থেকে সত্য যুগে যাওয়ার সময়; ট্রাঞ্জিশনাল পিরিয়ড! তাই তাঁকে নিজেকেই নিজের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। কারণ তিনি জানতেন, মানুষের বড় অভাব। তাই তিনি 'আমায় মানুষ ভিক্ষা দাও।'কে কোথায় আছো আমায় মানুষ ভিক্ষা দিতে পারো' 'লে কেঁদেছেন। আর সেই কারণেই তিনি পিতাপুত্রের লীলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েই এবার ধরাধামে নেবে এসেছিলেন! তাঁর পূর্ব পরিকল্পিত পরিকল্পনা! তাই আচার্য 'লেন, Living demonstrator of SriSriThakur Anukulchandra's life & philosophy.

এই মানুষের অভাব প্রসঙ্গে একজন গুরুভাই মনোজ কুমার নন্দী আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, / জনও কি ব্যতিক্রম নেই? গুরুভাইয়ের জিজ্ঞাসার উত্তরে যা বলেছিলাম সেই কথা এখানে তুলে দিলাম। তাঁকে বলেছিলাম,

ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। আর ব্যতিক্রম আছে বলেই আজও সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে আর পশ্চিমদিকে অস্ত যায়। ব্যতিক্রম আছে বলেই আজও সৃষ্টিকর্তা তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের মাঝে মানুষ রূপে নেবে আসার জন্য যে উপযুক্ত আধার দরকার সেই আধার অর্থাৎ 'মা-বাবা' পায়! তাঁকে বলেছিলাম, দাদা! ব্যতিক্রম তো আছেই। ব্যতিক্রম আছে বলেই না আমরা আমাদের মাঝে শ্রীশ্রীবড়দার মতো মানুষ পেয়েছিলাম! পেয়েছি শ্রীশ্রীদাদার (অশোকদাদা) মত ঈশ্বরকোটি পুরুষ! আর আমাদের সৌভাগ্য আমাদের সামনে আছেন শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মতন বাকসিদ্ধ পুরুষ; যার মধ্যে ঠাকুর ভীষণ ভাবে জীবন্ত!!!!! আর পিছনে? পিছনে পিছনে আসছেন ধীর অথচ দৃঢ় পদক্ষেপে অসীম শক্তির অধিকারী 'য়ে আশ্চর্য পুরুষ শ্রীশ্রীঅবিনদাদা!!!!! আর আগামী আগামী আরও আগামীদিনের পূজ্যপাদ আচার্যরা অপেক্ষা করছে রেতঃ শরীরে শত, হাজার, লক্ষ সূর্যের দীপ্তি নিয়ে!!!! সেদিন আপনি আমি থাকবো না। হয়তো আবারও আসতে পারি যদি এই জীবন থেকে যাওয়ার আগে নিজেকে ব্যতিক্রমদের মতো একজন ব্যতিক্রম হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। আর ব্যতিক্রম আছে বলেই আমরা এবার যারা হাজার ভুল ত্রুটি নিয়ে চলা সত্ত্বেও আচার্য প্রথা, আচার্য পরম্পরা মেনে চলি সেই আমরা তারা হয়তো কঠিন মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেলেও বেঁচে যেতে পারি!

তাই সবার কাছে আহ্বান, আসুন আচার্য অনুসরণের মধ্যে দিয়ে নিজেকে একজন ঠাকুরের ব্যতিক্রমী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলি। ঠাকুর বলেছেন, Above average থাকার কথা। আসুন তাই করি আর জন্মগতভাবে নিয়ে আসা পরিবেশগতভাবে অর্জন করা সমস্ত রকম ত্রুটি, দূর্বলতা কাটিয়ে, সমস্ত রকম ব্যাঙের চরিত্র থেকে নিজেকে বের 'রে এনে তাঁর মনের মতো 'য়ে উঠি; অন্তত 'য়ে ওঠার চেষ্টা করি। ব্যাঙের চরিত্র বললাম এইজন্য যে, তিনি তাঁর একটা বাণীতে বলেছেন,

"ঈশ্বরকে পেতে 'লে---

সর্ব্বহারা 'তে হবে ভেবে ভয় 'রো না।

তাঁকে পাওয়া মানে সবকে পাওয়া

ব্যাঙের বুদ্ধি ভয়ে প্রস্রাব 'রে পালানো---

তুমি কি তাই করবে?

ব্যাঙ থাকে ব্যাঙেরই জগতে।"------শ্রীশ্রীঠাকুর।

জয়গুরু।

 

 

No comments:

Post a Comment