Powered By Blogger

Sunday, August 11, 2024

প্রবন্ধঃ পানাগড় ও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।

এই সেই পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার পানাগড় যেখানে আজ থেকে ৭৭ বছর আগে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার কথা ছিল।

কিন্তু আজ সময়ের এমন করুণ পরিণতি যে, সেই পানাগড় নিয়ে স্বাধীনতার ৭৭বছর পরে বাংলার পানাগড়ে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের 'সৎসঙ্গ' নিয়ে বলার পরিবর্তে বাংলার বর্ধমান জেলার পানাগড়ে মদের ঠেক গড়ে ওঠা বিষয়কে কেন্দ্র ক'রে বলতে হচ্ছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এমনই বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত ভবিষ্যৎ নিয়ে পথে নেমেছে, পথে নেমেছে ছোটো ছোটো স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা। এর থেকে বড় লজ্জা, সময়ের ভয়ংকর বিষাক্ত বড় থাপ্পড় আর কি হ'তে পারে জানি না। এরকম আরও কত কত ভবিষ্যৎ সময়ের বিষাক্ত ছোবল, ভয়ংকর থাপ্পড় অপেক্ষা করছে তা' আমাদের জানা নেই।
আজ সময়ের মেশিনের ওপর ভর ক'রে ফিরে গেলাম ১৯৪৭ সালে।
সৎসঙ্গী গুরুভাইবোন আমার, চলুন ঘুরে আসি ১৯৪৭ সাল থেকে।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের কারণে, শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' পাবনার সম্পত্তি হারায় যার মূল্য ছিল তৎকালীন প্রায় ১.৫ কোটি টাকা; যা ১৯৪৭ সালের পরপরই অনুমান করা হয়েছিল। দেশ ভাগের পর পাকিস্তান সরকার শ্রীশ্রীঠাকুরের সমস্ত সম্পত্তি দখল ক'রে নেয়।
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু শ্রীশ্রীঠাকুরকে পশ্চিম বঙ্গের বর্ধমান জেলার পানাগড়ের কাছে 6000 বিঘা জমি দিতে প্রস্তুত ছিলেন মানবজাতির মঙ্গলের জন্য বিভিন্ন স্থাপনা স্থাপন করতে। যাতে পানাগড়ে বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমায়েতপুর গ্রামে গড়ে ওঠা বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ পুনরায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার পানাগড়ে গড়ে ওঠে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সেই ৬০০০ হাজার বিঘা দানের নির্দেশ পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় নাকচ ক'রে দেন।
যদিও জওহরলাল নেহুরু সৎসঙ্গকে 6000 বিঘা জমি দিতে প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় প্রাথমিকভাবে 800 বিঘা জমি দেওয়ার মানসিকতা নিয়েছিলেন। শ্রীশ্রীঠাকুরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য 800 বিঘা জমি যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয়নি, তাই শ্রীশ্রীঠাকুর প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
শ্রীশ্রীঠাকুরের ইনটেনশান যদি খারাপ হ'তো, যদি জমি দখলই মূল উদ্দেশ্য হ'তো তাঁর তাহ'লে বাংলাদেশের তৎকালীন ১৯৪৭ সালের মূল্য ১.৫ কোটির (বর্তমান সময়ের মূল্য পাঠক হিসেব ক'রে নেবেন) বিশাল সম্পত্তি ছেড়ে দিয়ে খালি হাতে এপাড়ে চ'লে আসতেন না। যদি জমি দখল বা অর্থ লোভ থাকতো শ্রীশ্রীঠাকুরের তাহ'লে তিনি মোটা অর্থের বিনিময়ে বাংলাদেশের সৎসঙ্গের জমি হস্তান্তরের পাকিস্তান সরকারের প্রস্তাব গ্রহণ করতেন। যদি শ্রীশ্রীঠাকুরের উদ্দেশ্য খারাপ হ'তো, যদি শ্রীশ্রীঠাকুর জমি পাওয়ার যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থী বিবেচিত না হতেন তাহ'লে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জন্য ৬০০০হাজার বিঘা জমি দেওয়ার জন্য অনুমোদন করতেন না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু বেকুব ছিলেন না যে তিনি মানুষ চিনতেন না। আর, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ই বা কেন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত ৬০০০ হাজার বিঘার পরিবর্তে ৮০০ বিঘা দিতে চেয়েছিলেন? নিশ্চয়ই কিছু কারণ ছিল, তিনিও কিছু অনুভব করেছিলেন। কি সেই কারণ? কি সেই অনুভব?

১) ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের কি শ্রীশ্রীঠাকুরের কর্মকাণ্ডের ওপর সন্দেহ ছিল?
২) তিনি কি শ্রীশ্রীঠাকুর সম্পর্কে কিছুই জানতেন না?
৩) তিনি কি শ্রীশ্রীঠাকুর সম্পর্কে উদাসীন ছিলেন? অজ্ঞ ছিলেন?
৪) তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছুই জানতেন না?
৫) তিনি কি পাবনার হিমায়েতপুরের বিশাল 'সৎসঙ্গ' আশ্রম, সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থাপনা সম্পর্কে কিছুই খবর রাখতেন না?
যে প্রতিষ্ঠান দেখে জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী বিস্ময়ে স্তম্ভিত হ'য়ে বলেছিলেন, "আমি যে ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলাম তা' ইতিমধ্যে এই আশ্রমে গড়ে উঠেছে। যে মানুষটিকে দেখে তিনি বলেছিলেন,
"I have seen many greatmen in this world, but have never seen a man with such on extra ordinary power in all respect and as lovely as SriSriThakur Anukulchandra."
যার অর্থ, "আমি এই পৃথিবীতে অনেক মহাপুরুষ দেখেছি, কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের মতো অসাধারন ক্ষমতার অধিকারী এবং এত সুন্দর মানুষ দেখিনি।"
এই কথা জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী ১৯২৫ সালের ১৬ই জুলাই 'Young India Newspaper'-এ-ব্যক্ত করেছিলেন।
ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকা ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে লালা লাজপত রায় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং পরে জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী দ্বারা প্রকাশিত একটি ইংরেজি ভাষার সাপ্তাহিক পত্রিকা। এই পত্রিকার মাধ্যমে, মহাত্মা গান্ধী ভারতের স্ব-শাসন বা স্বরাজের দাবিকে জনপ্রিয় করতে চেয়েছিলেন এবং সেই সঙ্গে তাঁর অহিংস আন্দোলনের দর্শন প্রচার করাও ছিল আর একটি লক্ষ্য।

এই পত্রিকায় জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সম্পর্কে তাঁর অন্তর উৎসারিত শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেছিলেন। তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে দু'বার দেখা করতে গিয়েছিলেন। একবার পাবনা আশ্রমে, আর একবার কলকাতায়।
যাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস তিন তিনবার ছুটে গেছিলেন, ছুটে গেছিলেন তাঁর সঙ্গে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য, সেই তিনি হলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, সাম্প্রদায়িক হানাহানি ও দেশভাগের মত সবচেয়ে ভয়ংকর বিতর্কিত দুঃখজনক বিষয়ে উপেক্ষিত ব্যক্তি বিশ্বের বিষ্ময় সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন যিনি ব্রিটিশ ভারতের বিচার বিভাগের কাছে ত্রাস ছিলেন, ছিলেন আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা সংগ্রামী, কবি, লেখক ও দানবীর, ছিলেন কলকাতার মহানাগরিক সেই দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন শেষজীবনে সব ছেড়ে যাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন, যাঁর কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন ও দীক্ষা নিয়েছিলেন বাকী জীবন গুরুর দেখানো পথে জীবন অতিবাহিত করবেন দেশ গড়ে তোলার কাজে সেই তিনি হ'লেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।

আজকের শাসক দল বি জে পি তৎকালীন জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে এসেছিলেন এবং দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছিলেন। সেই সময় দেশভাগ যাতে না হয় এবং বাংলা ভাগকে আটকাবার জন্য, হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সাম্প্রদায়িক হানাহানি আটকাবার জন্য ও দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য, শান্তি ও সম্প্রীতি অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য শ্রীশ্রীঠাকুর যে বিধান দিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে তা' তিনি পূরণ করতে ব্যর্থ হন এবং পূর্ব বাংলা দুই সম্প্রদায়ের হানাহানির মধ্যে দিয়ে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। দেশভাগ ও বাংলা ভাগের পর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে দেখা ক'রে তাঁর ব্যর্থতা দুঃখের সঙ্গে চোখের জলে স্বীকার ক'রে নেন।

এর থেকে মহান নেতাদের সীমাবদ্ধতা বোঝা যায়।
এরকমভাবে তৎকালীন বহু রাজনৈতিক বিখ্যাত ব্যক্তিদের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। তাই উদাহরণের সংখ্যা না বাড়িয়ে আসল কথায় আসি।

৬) উপরে উল্লিখিত এসব খবর তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিখ্যাত ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় জানতেন না?

৭) তিনি নিজে একজন বিখ্যাত ব্যক্তি হ'য়েও তিনি কি ভারতের তৎকালীন সময়ের কোনও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ খবর ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না?
কথায় আছে, রতনে রতন চেনে। এক্ষেত্রে তাহ'লে কি ধ'রে নেবো? দু'জনের মধ্যে কে ভারতের রত্ন ছিল না? দু'জনেই ছিল না? নাকি যে কোনও একজন রত্ন ছিল আরেকজন ছিল না? তাহ'লে বাকী অন্যজন কি ছিল? কে সে? নাকি এক্ষেত্রে ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের ইগো কাজ করেছিল?

৮) ভারতের প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর অনুমোদিত ৬০০০ হাজার বিঘে জমি তিনি তাঁর প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে নাকচ ক'রে ৮০০ বিঘা জমি The greatest phenomenon, The greatest wonder in the world শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে দিয়ে ঠাকুরকে দয়া দেখিয়েছিলেন?

৯) পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় কেন ৬০০০বিঘার পরিবর্তে ৮০০ বিঘা দিতে রাজি হয়েছিলেন? প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর অনুমোদনকে একেবারে পুরোপুরি উপেক্ষা করতে পারেননি, তাই ?

কেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় ৬০০০হাজার বিঘা জমি পশ্চিমবঙ্গের পানাগড়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের স্বপ্ন পূরণের জন্য শ্রীশ্রীঠাকুরকে দিলেন না তা আজ আর জানা যাবে না। অনুমান নির্ভর কথার ওপর থেকে যেতে হবে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিকে।
অনুমান নির্ভর কথাগুলি এমন হ'তে পারে।

১) ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় শ্রীশ্রীঠাকুরকে কোনওদিন দেখেননি।

২) তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরকে চিনতেন না এবং তাঁর সম্পর্কে কিছুই জানতেন না।

৩) শ্রীশ্রীঠাকুর ও তাঁর অভূতপূর্ব বিশাল কর্মমুখর প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' সম্পর্কে তিনি কোনও খবর রাখতেন না।

৪) বাংলা তথা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এবং বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে যে হাজার হাজার জিজ্ঞাসু ও জ্ঞানী বিজ্ঞানীরা বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা হিমায়েতপুরের আশ্রমে ও দেওঘরে ছুটে ছুটে আসতেন, শ্রীশ্রী ঠাকুরের খবর দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা জানতেন এবং দেশভাগের পর বর্তমান ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে নোতুন ক'রে আবার আশ্রম গড়ে তুলতে লাগলেন শ্রীশ্রঈঠাকুর একেবারে শূন্য থেকে সেইসব খবর তিনি রাখতেন না বা পাননি স্বাধীনতার পরবর্তী প্রায় ১৫ বছর বেঁচে থেকেও।

যাই হ'ক,
৫) ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের ১৯৫০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শ্রীশ্রীঠাকুরের সাহায্য তিনি কি মনে রেখেছিলেন?

যার জন্য তিনি প্রবল প্রতিদ্বন্ধি বিরোধী প্রার্থী কম্যুনিষ্ঠ নেতা মহমমদ ইসমাইলের কাছে মাত্র ৪০০ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন সেই তাঁকেই বাংলার পানাগড়ে জায়গা না দেওয়ার জন্য কি তিনি অনুতপ্ত ছিলেন? ছিলেন না। থাকলে তিনি একবার হ'লেও কৃতজ্ঞতাবশতঃ তা স্বীকার করতেন, একবার হ'লেও শ্রীশ্রীঠাকুরের পরম ভক্ত শ্রীবালকৃষ্ণ কাপুরদার কাছে শ্রীশ্রীঠাকুরের নির্দেশে রাজনৈতিক কোনও দলের কর্মী না হ'য়েও নির্বাচনে তাঁর নির্বাচনী কআ বিরাট সৎসঙ্গী মহলে তাঁর হ'য়ে প্রচার করার ও তাঁকে জেতাবার জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করার জন্য কাপুরদাকে ডেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারতেন। ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়কে নির্বাচনে জেতাবার জন্য এই প্রচার কাজে সব সময়ে কাপুরদার সাথী ছিলেন জনার্দন মুখার্জিদা। কিন্তু এই কাপুরদা ও জনার্দনদাকে তাঁর হ'য়ে প্রচার কার্য চালাবার জন্য তাঁর অন্যান্য পরিচিত ও দলীয় কর্মীদের প্ররোচনায় তাঁর অফিসে ডেকে ভর্ৎসনা করেছিলেন। যদি তিনি এই সমগ্র বিষয় উপলব্ধি করতেন ও কৃতজ্ঞ থাকতেন তাহ'লে একবার অন্তত শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে দেখা করতে দেওঘরে যেতেন, যেতেন অন্তত শুধু এই কৌতুহলটুকু মাথায় নিয়ে যে, কে এই অনুকূলঠাকুর যাঁকে প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু ৬০০০হাজার বিঘা জমি দিতে রাজি হয়েছিলেন!!

৬) ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় যিনি এতবড় ডাক্তার ছিলেন, ছিলেন জ্ঞানী পন্ডিত ও রাজনীতিবিদ তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরকে চিনতে পারেননি। হয়তো বা তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের ধর্ম, ঈশ্বর ও দর্শন সম্পর্কে, জীবনবাদ সম্পর্কে বিরুদ্ধ মনোভাবাপন্ন ছিলেন।

৭) হয়তো শ্রীশ্রীঠাকুর বিরোধী প্রতিষ্ঠিত লোকজন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দ্বারা ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় প্রভাবিত ছিলেন।

যাই হ'ক এমন অনেক কিছুই ভাবা যেতে পারে। তা'তে যা হবার হ'য়ে গেছে তা' আর ফিরিয়ে আনার বা সংশোধনের আর উপায় নেই।

শুধু ভাবি, সময় বড় নির্মম ও বলবান। আজকের পানাগড়ে যখন বর্তমান পরিস্থিতি অস্বাস্থ্যকর হ'য়ে ওঠে, জনজীবন বিপর্যস্ত হয়, জনজীবনে নেমে আসে ভয়ংকর ঘোর অন্ধকার পানাগড়ের বুকে, মদের গন্ধে দূষিত হ'য়ে উঠেছে পানাগড়ের আবহাওয়া, মানুষের জীবন যৌবন, শিক্ষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি, বিলুপ্ত হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, নষ্ট হ'তে চলেছে প্রজন্মের পর প্রজন্মের ভবিষ্যৎ। প্রতিবাদে পথে নেমেছে স্কুল পড়ুয়া ছোটো ছোটো হেলেমেয়েরা। সেখানে যদি সেদিন ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের স্বপ্ন পূরণের পৃষ্টপোষক হতেন তাহ'লে পানাগড়ের বুকে আজ স্বর্গ রচনা হ'তো। আজ নরকের পরিবেশ ও কলুষিত আবহাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হ'তো না।

আজ আর শ্রীশ্রীঠাকুর নেই, নেই শ্রদ্ধেয় ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়। কিন্তু বাংলা আছে বাংলাতেই, বাংলার মধ্যেই আছে সেই পানাগড়।
আর, আছে বাংলার বাইরে ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে শ্রীশ্রীঠাকুরের স্মৃতি বিজরিত তাঁর হাতে তৈরি এক ও একমাত্র প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান, যা গড়ে উঠতো বাংলার বুকে সেদিন যদি ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় ৬০০০ হাজার বিঘা জমি দিতে রাজী হতেন। দুঃখের বিষয় পরবর্তী সময়েও তাঁর ৮০০ বিঘা জমি দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখানের বিষয়টিও তিনি ভেবে দেখেননি।
আজও আছে বাংলার সরকার। আর আজও আছে পন্ডিত জওহরলা্ল নেহেরু অনুমোদিত সেই স্বপ্ন পূরণ না হওয়া শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের স্বপ্নের উপেক্ষিত পানাগড়ের ৬০০০ হাজার বিঘা জমি, যে জমি ঈশ্বরের জমি হ'য়েও ঈশ্বরের পদস্পর্শ থেকে বঞ্চিত দুর্ভাগ্য বুকে নিয়ে।

এখান থেকে কি আমরা সৎসঙ্গীরা কিছু শিক্ষা নিতে পারি? আসুন ভেবে দেখি।



No comments:

Post a Comment