করোনার আবহে আমরা সবাই অদ্ভুত মানসিকতার শিকার! শিকার মানুষ (?) পশু (?) সবাই! কে মানুষ!? কে পশু!?
সেদিনটা ছিল পরপর দুদিন লকডাউনের পরের দিন। স্বাভাবিকভাবেই ভিড় উপচে পড়েছিল ব্যাংকে। আমার লোন সংক্রান্ত একাউন্ট টু একাউন্ট টাকা ট্রান্সফারের বিষয়ে যেতে হয়েছিল ব্যাংকে। করোনার প্রভাবে ব্যাংকের কাজকর্ম তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে একটা জটিলতার মধ্যে জড়িয়ে গেছে, জড়িয়ে গেছে ব্যাংকের কর্মচারী ও গ্রাহক। সেই অবস্থায় ব্যাংকে ফোন থাকা সত্ত্বেও কেউ ফোন ধরার অবস্থায় নেই। তার উপর ব্যাংকে লোক কম আর সঙ্গে ফোনও ইচ্ছাকৃত লকডাউন!
যাই হ'ক ব্যাংকের এক এমপ্লয়ীর ফোনে ফোন ক'রে অনেক অনুনয় বিনয় ক'রে আমার টাকা ট্রান্সফারের বিষয়টি জানিয়ে তাকে একটু ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলাবার জন্য অনুরোধ করি, অন্যসময় ম্যানেজার লোনের টাকা জমা দিতে দেরি হ'লে মেসেজ পাঠান, ব্যাংক এমপ্লয়ীকে দিয়ে ফোন করান কিন্তু এই জটিল পরিস্থিতিতে গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলার তার সময় বা ইচ্ছা কোনোটাই নেই! ঐ ব্যাংক এমপ্লয়ী আমার লোনের টাকা আমার সেভিংস একাউন্ট থেকে লোন একাউন্টে ট্রান্সফারের কথা ম্যানেজারকে জানালে ম্যানেজার তাকে বলেন, টাকাটা আমার (লেখক) সেভিংস একাউন্টে পাঠিয়ে দিলে তিনি সেই টাকা লোন একাউন্টে ট্রান্সফার ক'রে নেবেন। সেই অনুযায়ী টাকা আমার সেভিংস একাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়ার পরেও ট্রান্সফারের কাজে কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় আবার আমি সেই ব্যাংক এমপ্লয়িকে ফোন করি, কারণ ব্যাংকে ফোন ক'রে কোনও লাভ ছিল না, হয় অল টাইম এনগেজড টোন আর নাহয় কেউ তুলছেই না, তাই সেই এমপ্লয়িকে ফোন করা। এইভাবে কেটে যায় কয়েক দিন। তারপরে একদিন তিনি ফোন ধরেন এবং ধরেন বিরক্তির সঙ্গে এবং বলেন যে উনি ব্যস্ত আছেন অন্য কাজে তাই টাকা ট্রান্সফার সংক্রান্ত বিষয় দেখা হ'য়ে ওঠেনি। ম্যানেজার বলেছেন আপনি একটা চিঠি দিয়ে যান। আমি তাকে বলি, এর আগে ব্যাঙ্ক থেকে ফোন এসেছিল লোনের টাকা পরিশোধের ব্যাপারে এই করোনার আবহে জটিল আর্থিক পরিস্থিতির কারণে দেরী হওয়ায় তখন মৌখিক ভাবেই লোনের টাকা ট্রান্সফার ক'রে নিয়েছিল সেভিংস একাউন্ট থেকে লোন একাউন্টে ব্যাংক! অথচ এখন করোনার কারণে আরো জটিল পরিস্থিতিতে যখন মাঝে মাঝেই সপ্তাহে দু'দিন লক ডাউন, তার ওপরে অফিস টাইম কমিয়ে ১০টা থেকে চারটের পরিবর্তে কমে গিয়ে ২টো হ'য়ে গেছে, বাইরে বি-রা-ট লম্বা লাইন, চারজন ক'রে ভিতরে ঢোকার অনুমতি সেখানে মৌখিকভাবে টাকা ট্রান্সফারের জন্য ব্যাংকে কথা বলার কোন সুযোগ নেই, পরিবর্তে সেখানে একটা চিঠি জমা দিতে সপ্তাহে ৫দিন কাজে ১০টা থেকে ২টার মধ্যে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হবে, লাইনে দাঁড়িয়ে চিঠি জমা দিতে হবে!!!!! অথচ লোনের টাকা সময়মত জমা না পড়ার কারণে কম্পিউটার সিস্টেম লেট ইন্টারেস্ট কেটে নেবে। আমি ব্যাংকে গেলাম। ব্যাংকের দরজা বন্ধ! বাইরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে সকাল থেকে মানুষ! মাঝে মাঝেই নাবছে বৃষ্টি! কখনো জোরে, কখনো আস্তে, কখনো বা ফোটা ফোটা! রাস্তায় জমে আছে জল! যখন জোরে নাবছে তখন আশেপাশের দোকানে, বন্ধ দোকানের শেডের নীচে, এখানে ওখানে আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ! সেখানেও দোকানদার বা কারও কারও কাছাকাছি দাঁড়ানোতে মুখে একটা বিরক্তি! ছাতা মাথায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে কেউ কেউ! আবার বৃষ্টি থামলে সবাই এসে দাঁড়াচ্ছে লাইনে! সেখানে আবার আগেপিছের জায়গা নিয়ে শুরু হ'য়ে যাচ্ছে কথা কাটাকাটি! মাথার ওপর বৃষ্টি নিয়ে আমিও গিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। তারপরে ব্যাংক খুলে দরজা দিয়ে চারজন ক'রে ঢোকার জন্য এলাও করলো। ব্যাংকের দরজা খুললে বাইরে দাঁড়িয়ে গেটের ভিতরে কর্মীচারীকে ম্যানেজারের কথামত চিঠি জমা দেওয়ার কথা বললে তখন শুনলাম, ম্যানেজার নেই, ম্যানেজার ট্রান্সফার হ'য়ে গেছে! আমি অবাক হ'য়ে গেলাম! বললাম, তিনি আমাকে ডেকেছেন চিঠি জমা দিতে আর তিনিই চলে গেছেন একদিনের মধ্যে!? আমি দীর্ঘ লাইনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ডেপুটির টেবিলে চিঠি জমা দিলাম! ততদিনে সিস্টেম লেট খেসারত এড ক'রে নিয়েছে। করোনার ভয়ে মানুষ দিশেহারা! ভয়! মৃত্যুভয়!!
আর এর মধ্যে যখন সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম তখন দেখলাম কিছু মানুষ পিছন থেকে অদ্ভুত আচরণ করছে! এই বুঝি মারে! অসহিষ্ণুতার চরম পর্যায় কাকে বলে তা এই করোনার ভয়ঙ্কর আবহে দেখার মত! আর ব্যাংকের ম্যানেজমেন্টও যেন মানসিক করোনায় আক্রান্ত যা এক অদ্ভুত অসহায়ত্বের চরম নিদর্শন! যেন তাদের কিছুই করার নেই!
মনে মনে মন নিজেকে বললো, সত্যি সেলুকাস! কি অদ্ভুত! বর্তমান উন্নত ভারতের দিকে দিকে কি অদ্ভুত উন্নত ব্যবস্থা! একটা সামান্য পোকা উই পোকার মত ঝাঁঝরা ক'রে দিচ্ছে ভিতরে ভিতরে গোটা পৃথিবীকে! বিশ্বজুড়ে সর্বশক্তিমান অহংকারী উন্নত সভ্য মানুষ আজ অসহায়!!!!
ক্রমশঃ। ( লেখা ২২শে আগষ্ট'২০২০)
No comments:
Post a Comment