Powered By Blogger

Friday, August 2, 2024

সত্যঃ প্রাইভেট ২

জায়গাটা অন্ধকার আর নির্জন হ'লেও রাস্তার হৈ হুল্লোড় থেকে দূরে নয়। যদিও এই নিকট দূরত্বের মধ্যেই তড়িৎ গতিতে অনেক কাজ সেরে নেওয়া যায়। এমন একটা অন্ধকার নির্জন পরিবেশে দাঁড়িয়ে একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। আমি কি একটু ভয় পেলাম? যদিও সে ভয় নেই আমার। আগেও করিনি এখনো করি না। ভাবি দয়াল তো আছে সাথে! শুধু এখন প্রিয়জনদের ছবি ভেসে ওঠে, যদি কারও কিছু হ'য়ে যায় এই আশংকায় মনের কোণে ভয় বাসা বাঁধে কারণে অকারণে। এছাড়া আর কোনও ভয় নেই জীবনে।


এই নির্জন অন্ধকারে কথাটা মনে আসার পিছনে যদিও যৌবনের দিনগুলিতে অনেক অকারণ শত্রুতার মুখোমুখি হওয়ার স্মৃতি আছে। তাই--------। সেগুলি এখন আর মনে রাখার কোনও প্রয়োজন নেই। তথাপি স্থান কাল পাত্র ব'লে একটা কথা আছে। ভালো মন্দের মাহাত্ম্য আছে।


যাই হ'ক দু'জনে যখন এসে দাঁড়ালাম ওই নির্জন জায়গায় তখন হঠাৎ বন্ধু আমার হাত দু'টো ধ'রে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। আমি হতভম্ব হয়ে পড়লাম। এরকম একটা পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বন্ধুকে শান্ত করতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু সে আমার হাত ধ'রে কাঁদতে কাঁদতে বললো, তুই আমায় ক্ষমা ক'রে দিস। আমার জীবনে তোর উপকার কোনওদিনই ভুলবো না। এখন এই জীবনের পড়ন্ত বিকেলে প্রতিদিনই তোর আমার পাশে থাকার সব কথা মনে পড়ে, ভেসে ওঠে চোখের সামনে। আমার জীবনের উত্থানের পিছনে তোর অকপট প্রত্যাশা বিহীন বাড়িয়ে দেওয়া হাত আমি জীবনে ভুলবো না। তোর সাহায্যে জীবনের অনেক কঠিন বিপদের বাঁকের মুখ থেকে, এমনকি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি এ কথা সত্য; কিন্তু যৌবনের সেই উদ্দাম দিনগুলিতে তোর মতো বন্ধুর মূল্য বুঝিনি। তোকে আমার ভীষণ প্রয়োজন ছিল বাপী। যৌবনের দিনগুলিতে বলা তোর কথা গুলি যদি একটু শুনতাম তাহ'লে আজ আমার এই অবস্থা হ'তো না। সেদিন তোর কথা যদি হেসে উড়িয়ে না দিতাম, ব্যঙ্গ-মস্করা না করতাম, বন্ধুদের মাঝে ঠাট্টা ইয়ার্কি না করতাম, তোকে উপেক্ষা না করতাম, তোকে ছোটো না করতাম, বন্ধুত্ব ছিন্ন না করতাম তোর সঙ্গে তাহ'লে আজ------- কথা অসম্পূর্ণ রেখেই আমার বুকে মাথা দিয়ে বাচ্চা ছেলের মতো কাঁদতে লাগলো।
আমি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম। শান্ত ক'রে বললাম, কাঁদিস না। কি হয়েছে বল। বন্ধু নিজেকে একটু সামলে নিল। তারপর ব'লে চললো তার দুঃখের কথা।


জীবনের এক কঠিন সময়ে ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। উদ্দাম উচশৃঙ্খলতা পূর্ণ জীবন ছিল তার। বাড়ির পরিবেশ ভালো নয়, নরকতুল্য। সবসময় একটা ঝগড়া মারামারির পরিবেশ লেগেই আছে ভাইয়ে ভাইয়ে। বাবা থেকেও না থাকার মতো। সংসার সম্পর্কে উদাসীন। নেশারু। মা উদয়াস্ত খেটে চলেছে সংসারের পিছনে মুখ বুজে। মাঝে মাঝে স্বামীর মদ খেয়ে চীৎকার আর ছেলেদের পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া মারামারিতে মা প্রায় আধপাগল অবস্থা। এইরকম এক সময়ে আমার সঙ্গে তার পরিচয়, পরে তা বন্ধত্বে পরিণত হয়। তারপর বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠ হ'য়ে ওঠে। প্রায় সময়টাই আমার সঙ্গে কাটায়। ধীরে ধীরে আমার বন্ধুদের সঙ্গে গড়ে ওঠে সম্পর্ক। ওঠা বসা, খেলা, আড্ডা এখানে সেখানে যাওয়া চলতে থাকে। চলতে থাকে সঙ্গে তাকে নিয়ে পড়াশুনা। এই পড়াশুনার জন্য অনেকটা সময় ও পরিশ্রম ব্যয় করতে হয়েছিল।


আর, যেখানে যেখানে আমার পরিচিতি সেখানে সেও তাদের পরিচিত হ'য়ে উঠতে লাগলো ধীরে ধীরে। আমার বন্ধু হওয়ার সুবাদে সম্পর্ক হ'য়ে ওঠে ঘনিষ্ঠ। আমি যেহেতু সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, ছিলাম বামপন্থী গণনাট্যের সঙ্গে জড়িত সেই সুবাদে তারও পরিচয় ঘটে এলাকার নাট্যব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক দাদার সঙ্গে। আজও মনে পড়ে যেদিন পরিচয় ক'রে দিয়েছিলাম এলাকার দোর্দন্ডপ্রতাপ দাদার সঙ্গে বন্ধুর, সুপারিশ করেছিলাম তার অবস্থার কথা বর্ণনা ক'রে একটা চাকরীর ব্যবস্থা করার কথা সেদিনের কথা আজও মনে পড়ে, সেই দাদা বলেছিল, "বাপী তুই কিন্তু পরে পস্তাবি।" সেদিন বুঝিনি সেই কথার অর্থ। পরে বুঝেছিলাম। বুঝেছিলাম কতটা দূরদর্শী ছিল এলাকার সেই দোর্দন্ডপ্রতাপ দাদা।-----প্রবি।
ক্রমশঃ
( লেখা ২রা আগষ্ট'২০২৩)

No comments:

Post a Comment