বিভিন্নভাবে কিছু মানুষ সৎসঙ্গী গুরুভাই হ'য়ে নিজেদের বিভিন্ন ইচ্ছাপূরণ ক'রে চলেছে! "অর্থ-মান-যশ ইত্যাদি পাওয়ার আশায় আমাকে ঠাকুর সাজিয়ে ভক্ত হ'য়ো না"---এই বাণীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, পাশে সরিয়ে রেখে দাদারা ও মায়েরা সমানভাবে অর্থ-মান-যশ কামাবার লোভে ঠাকুরকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য প্রতিযোগীতায় নেবে পড়েছে! আর এই প্রতিযোগিতা বিল্ডিং মেটেরিয়ালস, এময়, ভেস্টিজ, ক্যাটারিং, এল. আই. সি, ডেকোরেটিং, ফটোগ্রাফি, মাতৃসম্মেলনের জন্য কাপড়, মায়েদের গহনা, ফুল-মালা ইত্যাদি ইত্যাদি নানাবিধ ব্যবসার পশরা সাজিয়ে ইষ্টপ্রতিষ্ঠার নামে হ'য়ে চলেছে! এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন নেট ব্যবসা!
এখন নেটের মাধ্যমে ফেসবুক, ইউ টিউব ইত্যাদি শক্তিশালী গণমাধ্যম ঠাকুরকে পণ্য ক'রে গুছিয়ে নেবার মোক্ষম অস্ত্র হ'য়ে উঠেছে! আধুনিক উন্নত ব্যবস্থার নিশ্চয়ই সুযোগ নেবো ঠাকুরের আদর্শ, ঠাকুরের মিশন বিশ্ব ব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যে। কিন্তু ঠাকুর যে যুগ পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে আবির্ভুত চরম পরম এক বিস্ময়, হাজার হাজার বছর ধ'রে চলে আসা সমস্ত ভুল, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্ম, ঈশ্বর, ভগবান, শাস্ত্র, পুজোপাঠ, রাজনীতি, বিবাহনীতি, জননবিজ্ঞান ইত্যাদি ইত্যাদি নানা বোধ থেকে বের ক'রে এনে বলিষ্ঠ, দৃঢ়, মজবুত, শক্তিশালী, স্বচ্ছ, ঝলমলে, সবুজ সম্পূর্ণ নতুন এক সভ্যতার সূর্য উদয়ের জন্যে এসেছিলেন সেই বোধ, সেই ধারণা, সেই জ্ঞান, সেই সচেতনতা দীক্ষিত সৎসঙ্গীদের বোধের বাইরে! এই নতুন অত্যাশ্চর্য সভ্যতার সূর্যের কিরণকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নেবো, নিশ্চয়ই নেবো, প্রচন্ডভাবে নেবো! কিন্তু কায়েমিস্বার্থ সিদ্ধি ও রক্ষার জন্য বিজ্ঞান যেন আমাদের হাতিয়ার না হয়। অল্প বিদ্যা যে ভয়ঙ্কর সে কথা যেন স্মরণ রাখি আমরা সৎসঙ্গীরা। কারণ তিনি এবার এসেছেন যেমন দয়াল হ'য়ে ঠিক তেমনি তিনি কিন্তু ভয়াল! আর তাঁর মিশন রথকে যে বা যারা থামাতে চাইবে সে যেই হ'ক সৎসঙ্গী হ'ক বা না হ'ক ভয়ঙ্কর ভয়াল হ'য়ে আবির্ভুত হবে দয়াল! আমার কথা অনেকের ভালো নাই লাগতে পারে কিন্তু তাঁর ব'লে যাওয়া কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই! তিনি বললেন, "তুমি যা করছো বা ক'রে রেখেছো ভগবান তাই-ই গ্রাহ্য করবেন আর সেগুলির ফলও পাবে ঠিক তেমনি। যা ইচ্ছা তাই করবে তুমি তা করলে রে চলবে না, ভালো ছাড়া মন্দ করলে পরিস্থিতি ছাড়বে না।"
যাই হ'ক এই নতুন নেট ব্যবসায় জড়িয়ে আছেন এক মা! বলতে চাই না, বলার ইচ্ছাও ক'রে না তবুও ঠাকুরের কথা স্মরণ রেখে সাবধান করার তাগিদেই এই লেখা। ইউ টিউব চ্যানেলে বহুদিন ধ'রে ঠাকুরকে নিয়ে, ঠাকুরের কথা, বাণী, ঘটনা নিয়ে বিকৃত ব্যাখ্যা, কুসংস্কারাচ্ছন্ন প্রচার হ'য়ে চলেছে! কখনো কখনো ঠাকুরের বিশেষ সময়ের বিশেষ ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে বলাকে বিকৃত পরিবেশনের মাধ্যমে সার্বজনিক ক'রে তোলা হচ্ছে! এই যে পরিবেশন হচ্ছে এই পরিবেশনের সামনের মুখ কোনও এক মায়ের হ'লেও এই মায়ের পিছনে অন্য কেউ আছে! একা কোনও মায়ের পক্ষে তাও গ্রাম্য উচ্চারণে ঠাকুরের বাণী নিয়ে ওপেন মিডিয়ায় কথা বলতে আসার মধ্যে সাহস লাগে। আসলে ইনি ভক্তিরসে ডুবে গিয়ে হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন তাই বুঝতে পারছেন না ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বটতলার ঠাকুর নন বা কোনও বাবাজি নন। আর নয়তো ভক্তির মুখোশ ঝুলিয়ে ঠাকুরকে অর্থ, মান, যশ-এর উপকরণ বানিয়ে পারদর্শী হ'য়ে উঠেছেন! নতুবা এই মায়ের অতি সরলতাকে মূলধন বানিয়ে এই নেট দুনিয়ায় এর পরিবারের কেউ ঠাকুরকে বাজারী বানিয়ে শহর থেকে গ্রাম, গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সরল সিধাসাদা মানুষের অজ্ঞতা আর কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রথ দেখা আর কলা বেচা দুটো কাজই ক'রে চলেছে!
পরিকল্পিতভাবেই এই কাজ চলছে বহুদিন ধ'রে। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতাকে কাজে লাগিয়ে যে যেদিকে যা পারছে হুক্কা হুয়ার মত ডেকে চলেছে। তাতে ঠাকুরের কোথায় ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, কোথায় ঘা লাগছে, ঠাকুরের মিশন কোথায় বাধা পাচ্ছে তা দেখার দরকার নেই কারও! টাকা রোজগারের মেশিন ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র! 'টাকা আপন মানুষ পর, যত পারিস টাকা ধর'--এখন সৎসঙ্গীদের মন্ত্র! ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। হ্যাঁ! আছে! আর ব্যতিক্রম আছে বলেই আজ সারা পৃথিবীতে ঠাকুরের মিশন ছড়িয়ে পড়েছে। আবার একশ্রেণীর সৎসঙ্গী ঠাকুরের "মানুষ আপন টাকা পর, যত পারিস মানুষ ধর"---বাণীর উল্টো রূপ এই 'টাকা আপন মানুষ পর, যত পারিস টাকা ধর'--কে ইষ্টভৃতির মন্ত্রের মত কিংবা বীজ মন্ত্রের মত দিনরাত জপে চলেছে!!!! গ্রামে গঞ্জে, শহরতলিতে এই জিনিস রমরমিয়ে চলেছে!
প্রশ্ন হচ্ছে, যেখান থেকে এই পোস্ট হচ্ছে সেখানে সেই অঞ্চলে কোনও সৎসঙ্গের কেন্দ্র নেই? কোনও সৎসঙ্গী নেই? নেই কোনও ঋত্বিক? যাজক? তারা কি করছে? এতটাই তারা দুর্বল? আর এতটাই এই মা সবল? নাকি তারাও যুক্ত? স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসতে পারে। যেখানে তাবড় তাবড় এলিট পর্যায়ের মানুষ ঠাকুর সম্পর্কে বলতে গিয়ে ১০বার ভাবেন, হিমশিম খান, ঘেমেনেয়ে ওঠেন, গলা শুকিয়ে যায় সেখানে এই মা মুখস্ত বিদ্যা চালিয়ে গ্রাম্য স্বরে ঠাকুরের বিরাট নেট ভক্ত হ'য়ে সাধ্বী মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হ'য়ে প্রবচন দিয়ে চলেছেন অবলীলায় অবহেলায় ঠাকুর বিষয়কে মূলধন ক'রে এতবড় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড শক্তিশালী সৎসঙ্গ কেন্দ্র থাকা সত্বেও! হয়তো বা আর কিছুদিনের মধ্যেই এই মা অনুকূলচন্দ্রের ভর পাওয়া মায়েতে পরিণত হবে কিছুদিনের মধ্যে ঐ গ্রাম্য অঞ্চলের সহজ সরল সাদাসিধে অজ্ঞ বোকা মূর্খ কুসংস্কারাচ্ছন্ন মায়েদের মধ্যে! কিচ্ছু করার থাকবে না সেদিন; যতদিন না সৎসঙ্গীরা বুঝবে ঠাকুর কেন এসেছিলেন, কি তাঁর বুকের ব্যথা ছিল, কি তাঁর মিশন, তিনি আমাদের কেমন দেখতে চেয়েছিলেন, তিনি আমাদের কাছে কি চান ইত্যাদি ইত্যাদি; আর ততদিন ঠাকুর "পঞ্চ ভুতের ফাঁদে ব্রহ্মা পড়ে করে কাঁদে"-প্রবাদের মত 'ধান্দাবাজ সৎসঙ্গী ভক্তকুল মাঝে ঠাকুর বাঁধা পড়ে কাঁদে"-- এমনটা হবে!!!!!
হয় যারা ব্যতিক্রমী সৎসঙ্গী যারা সেই সৎসঙ্গীরা সচেতন হ'ক, এলাকার সৎসঙ্গীরা সক্রিয় হ'ক, সৎসঙ্গে, কলমে উঠে আসুক প্রতিবাদ! নতুবা ঠাকুর যেমন বলতেন, আপনাদের রসূলকে, ইসলামকে যেখানে যখনই ভুল বিকৃত ব্যাখ্যা করবে তখনই আইনের আশ্রয় নিন, শয়ে শয়ে কেস ঠুকে দিন! ঠিক তেমনি ঠাকুরকে ভুল ব্যাখ্যা, ভুল উপস্থাপন করলে এলাকার সৎসঙ্গীরা সেই পদক্ষেপ নিতেই পারেন!!!!! জয়গুরু।
( লেখা ৮ই আগস্ট'২০২০)
No comments:
Post a Comment