করোনার আবহে আমরা সবাই অদ্ভুত মানসিকতার শিকার! শিকার মানুষ (?) পশু (?) সবাই! কে মানুষ!? কে পশু!?
আবার আর এক ব্যাংকের অভিজ্ঞতা নিয়ে হাজির হলাম।
হাজির হ'লাম ব্যাংকে ১৫এইচ/১৫জি জমা দেওয়ার বিষয়ে। দীর্ঘ সময় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ১৫এইচ/১৫জি ফর্ম জমা দেওয়ার জন্য যখন নির্দিষ্ট টেবিলে পৌঁছে গেলাম তখন সেই টেবিল ক্লার্ক বললেন, আর জমা নেওয়া হবে না। অনেক অনুনয় বিনয় করার পর সেই ক্লার্ক বললেন, হবে না! ৩১শে জুলাই লাস্ট ডেট চলে গেছে। আমি অবাক হ'য়ে বললাম, আপনি বলছেন ডেট চলে গেছে তাহলে আমাকে ১৫এইচ দেওয়া হ'লো কেন!? আমাকে ঐ ব্যাংক কর্মী বললেন, আপনাকে কবে দিয়েছে? আমি বললাম ঐ দিনই! সে কথা শুনে ব্যাংক কর্মী অবাক বিস্ময়ে ব'লে উঠলেন, তাহলে বলতে পারবো না। এখানে আমি জমা নিতে পারবো না। আপনি শুধু শুধু দাঁড়িয়ে আছেন! আমরা নিলেও কম্পিউটার সিস্টেম নেবে না! আমাদের হাতে কিছু নেই। তাকে যখন বোঝাবার চেষ্টা করছিলাম আমার পরিস্থিতি, সময়মত আসতে না পারার কারণ কিংবা ১৫এইচ ফর্ম ব্যাংক থেকেই বা ডেট চলে যাবার পর কেন দিল, কেনই বা আপনাদের মধ্যে কমিউনিকেশনের গ্যাপ ইত্যাদি তখন লাইনে দাঁড়ানো গ্রাহকের মধ্যে একজন আমার সঙ্গে কথা শেষ হওয়ার আগেই তার কাজের ব্যাপারে কথা শুরু ক'রে দিল! আমার সমস্যার সমাধান হ'লো কি না হ'লো তার প্রয়োজন বোধই করলো না। আমাকে সরতে ব'লে আমাকে ডিঙিয়ে সামনে এগিয়ে গেল। আর সরে দাঁড়াতে ব'লে এগিয়ে গেল এমনভাবে যেন সংক্রামক রোগীকে সযত্নে এড়িয়ে এগিয়ে গেল! আর পাশের আর একজন বিরক্ত হ'য়ে বললো, টাইম পার হ'য়ে গেছে উনি কি করবেন? উনার তো কিছু করার নেই। আমি বললাম, কিছু করার নেই তো ফর্ম দিলো কি ক'রে? অর্ডার না থাকলে কি ফর্ম ডিস্ট্রিবিউশন করা যায়? তা উনি জানেন কি না জানেন সেটা তো আমার দেখার কথা নয়! উত্তরে লাইনে দাঁড়ানো গ্রাহক ভদ্রলোক ঐ ব্যাংক কর্মীর সমর্থনে বললেন, সিস্টেম যদি না নেয় তাহলে উনি কি করবেন? একটা গ্রাহক আর একটা গ্রাহকের অসুবিধা বোঝার প্রয়োজনই মনে করলো না, ব্যাংক কর্মীকে খুশি করতে ব্যস্ত হ'য়ে পড়েছে! আমি বললাম, আপনার যেদিন এই সমস্যা হবে, যেদিন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন সেদিন বুঝবেন আপনি কোথায় কষ্ট! সেদিন বুঝবেন অসহযোগিতার যন্ত্রণা! মুখখানা এমন করলো যেন একরাশ বিরক্তি ঝরে পড়লো! তারপর বললো, আরে দাদা উনি কি করবেন? ট্যাক্স সোজা চলে যায় সরকারের ঘরে। আমি বললাম, আপনি কি জানেন আগে এই টাকা ব্যাংকের কাছেই থাকতো অনেক মাস তারপর যাদের কোনো কারণে ১৫জি, ১৫এইচ জমা পড়তে দেরী হতো তারা জমা দেওয়ার পর টাকা ফেরত পেয়ে যেত। কিন্তু এখন এই সুযোগ থেকে গ্রাহকরা বঞ্চিত! গ্রাহকদের এই সুবিধা ছিল তা আপনি জানেন? আগে গ্রাহক হ'য়ে জানুন তারপর ব্যাংক কর্মীর হ'য়ে কথা ব'লে তাকে খুশি করুন। কেন বঞ্চিত করা হ'লো? কেন, কি উদ্দেশ্যে টাকা কাটার সঙ্গে সঙ্গে এই টাকা ব্যাংকের অধিকারে থাকে না!? কেন টাকা কাটার সঙ্গে সঙ্গে টাকা সরাসরি সরকারী কোষাগারে চলে যায়? তারপরে ইনকাম ট্যাক্স ফাইল ক'রে সেই টাকা ফেরত নিতে কেন বয়স্ক সাধারণ মানুষকে ঝামেলা পোয়াতে হয়? আর যদি ইনকাম ট্যাক্স ফাইল জমা না দেয় সেই টাকা আর ফেরত পাওয়া যায় না! বেশিরভাগ একেবারে সাধারণ গ্রাহকদের ক্ষেত্রে এইটাই হ'য়ে থাকে। কেন গ্রাহকদের সঙ্গে এই প্রতারণা!? আর এখন যখন ভয়ঙ্কর কোভিট ১৯ পরিস্থিতি তো এইসময়েই তো কিছু বিশেষ একটা ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কতজন দূর দুরান্তে কাজের জন্য, চিকিৎসার জন্য, ব্যবসার জন্য, চাকরির জন্য ইত্যাদি বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা মানুষ ট্রেন বন্ধ থাকার জন্য আসতে পারছে না তাদের ক্ষেত্রে কি হবে? সবাই তো আর নেটওয়ার্ক ব্যাংকিং পরিষেবা ব্যাপারটা জানে না, জানলে বোঝেও না, তাদের ক্ষেত্রে কি হবে? আপনার হ'লে কি করতেন?
এইভাবে কথা বলার সময় দেখলাম তাদের কাছে উত্তর দেবার কিছু নেই, আছে শুধু একরাশ বিরক্তি! বুঝলাম চিরাচরিত চাটুকারী স্বভাবের সঙ্গে সঙ্গে বিরক্তির কারণও এই করোনা নামক রোগের প্রাদুর্ভাব। আপাত সামান্য ইনফ্লুয়েঞ্জার মত উপসর্গ নিয়ে হাজির করোনা মানুষের কাছে হ'য়ে উঠেছে বিভীষিকাময়! এইসময় চেনা যাচ্ছে মানুষের চরিত্র!
তারপর অসহায়ের মত ফিরে যাবার সময় কি মনে হ'লো ম্যানেজারের ঘরে ঢুকে পড়লাম। তাঁকে সবিনয়ে বিষয়টা জানিয়ে সাহায্য চাইলে তিনি সব শুনে বললেন, আপনি আসতে না পারলেও নেটওয়ার্ক পরিষেবার মাধ্যমে মেল ক'রে দিলে আমরা পেয়ে যেতাম। আপনি তাই করলেন না কেন? আমি বললাম, দেখুন সবাই তো আর নেট ব্যবহার করতে জানে না আর সবসময় কি এফ ডি নাম্বার মনে থাকে নাকি এফ ডি কাগজ সাথে থাকে? তাই সম্ভব হ'য়ে ওঠেনি। যদি আপনি একটু বিবেচনা করেন। সব শুনে ম্যানেজার পাশের একটা টেবিল দেখিয়ে বলল, ওখানে জমা দিয়ে যান। দেখুন সিস্টেম যদি নিয়ে নেয় তাহ'লে হ'য়ে যাবে। দেখুন আপনি, কি হয়। ওখানে জমা দিয়ে যান। এই ব'লে ম্যানেজারবাবু বিশেষ কাজে বাইরে বেরিয়ে গেলেন। আমি নির্দেশিত টেবিলে গিয়ে বিষয়টা বলার সাথে সাথে সেই ব্যাংক কর্মী ১৫এইচ ফর্ম জমা নিয়ে আমায় রিসিভড কপি স্ট্যাম্প মেরে দিয়ে দিল। আমি দীর্ঘ সময় মানসিক অস্থিরতায় কাটিয়ে ব্যাংকের বাইরে বেরিয়ে এলাম। বেরোবার সময়ও দেখলাম বাইরে দাঁড়ানো জিটি রোডের ধারে মানুষের লম্বা লাইন চলে গেছে অনেকদূর! আমায় বেরোতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে গেটের সামনে দাঁড়ানো মানুষ সরে গেল!
মনে হ'লো আমি মানসিক করোনায় আক্রান্ত মানুষের ভিড় ঠেলে ঠেলে এগিয়ে চলেছি ক্রমশঃ সকাল থেকে রাত!!!!!!
ক্রমশঃ। ( লেখা ২৩শে আগষ্ট'২০২০)
No comments:
Post a Comment