বাংলাদেশে আমার সৎসঙ্গী ভাইবোনেরা শান্তি স্বস্তি ফিরে আসার জন্য প্রার্থনা জানাচ্ছে।
আমিও আমার দয়াল ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা জানাই সবাই ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক, সুরক্ষিত থাকুক, শান্তিতে থাকুক। আর এই প্রার্থনা শুধু সৎসঙ্গী ভাইবোনেদের জন্য নয়, এই প্রার্থনা বাংলাদেশের সমস্ত সম্প্রদায়ের ভাইবোনেদের জন্যই প্রার্থনা।
কিন্তু আমিও জানি আমার দয়ালের উদ্দেশ্যে এই প্রার্থনা শুকনো প্রার্থনা। শুকনো প্রার্থনাতে শান্তি ফিরে আসে না। শান্তি ফিরে আসার জন্য যা যা করণীয় তাই তাই করতে হয়। আর তা সময়ে করতে হয়। তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে, আর সুখের সময় তাঁকে ভুলে গিয়ে বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে আকন্ঠ ডুবে থেকে বিপদের সময় ঠেলার নাম বাবাজী হ'য়ে প্রার্থনা করলে সেই প্রার্থনাতে আর যেই সাড়া দিক বিধাতা সাড়া দেয় না। কারণ বিধাতা স্বয়ং বিধির বিধানে বাঁধা। আর, বিধাতা আমার বাপের চাকর না যে ডাকলেই চাকরের মত সাড়া দেবে। অনেক সময় চাকরও সাড়া দেয় না অনেক ডাকলেও।
আজ দেশ ভাগ হয়েছে ৭৮বছর আর বাংলাদেশ হয়েছে ৫৩বছর। কিন্তু যাঁর কাছে প্রার্থনা করছি তাঁর সঙ্গে আমরা সবাই সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ বেঈমানি করেছি। আমরা সবাই নিজের নিজের সম্প্রদায়ের মানুষেরা দয়ালকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি ব'লে ভাগ ক'রে নিয়েছি। আমরা হিন্দুরা নানাভাগে বিভক্ত। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি আজ নোতুন না। বর্তমানের নেড়ারা জেনেবুঝেই বেলতলায় বারবার যায়। ফল যা হবার হয়। বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনায় আমরা দেখতে পাই বাংলাদেশে হিন্দুরা জীবন্ত ঈশ্বর দয়াল শ্রীশ্রীরামচন্দ্রকে, শ্রীশ্রীকৃষ্ণকে, শ্রীশ্রীমহাপ্রভুকে, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকে যার যার নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি ব'লে মনে করে। ঠিক তেমনি বাংলাদেশের সৎসঙ্গীরা করেছে জীবন্ত ঈশ্বর দয়াল ঠাকুর শ্রীশ্রীঅনুকূলচন্দ্রের সঙ্গে বেঈমানি। অর্থ, মান, যশের লোভে, ক্ষমতা দখল ও আধিপত্য বিস্তারের লোভে ঠাকুর থাকতেই শ্রীশ্রীঠাকুরের নিজের হাতে তৈরী মূল কেন্দ্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন ক'রে ঠাকুরের জন্মস্থানে ঠাকুরের সাথে করেছে বেঈমানি, করেছে নেমকহারামী। তাঁর জন্মস্থান নিয়ে কুকুরের মত করেছে কামড়াকামড়ি। সম্প্রতি সেই সমস্ত সৎসঙ্গীদের মিটিঙে কমিটি গঠন নিয়ে একটা কামড়াকামড়ির ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছিল কিছুদিন আগে তা সবাই দেখেছে। জানা যায় সেই মিটিং-এ উৎসব কমিটি গঠন হয়েছে কোনও এক মাননীয় এম, পি-র সুপারিশ অনুযায়ী। সেই মাননীয় এম, পি সৎসঙ্গী কিনা তা উল্লেখ ছিল না। বাংলাদেশে মুসলিমরা জীবন্ত ঈশ্বর দয়াল প্রভু মহম্মদকে শুধু মুসলমানদের সম্পত্তি মনে করে। যেমন সংখ্যালঘু খ্রীষ্টান, বৌদ্ধরা জীবন্ত ঈশ্বর দয়াল প্রভু যীশু ও বুদ্ধকে তাদের নিজেদের সম্পত্তি মনে করে। দয়াল প্রভু ভাগ হ'য়ে গেছে সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে। দয়াল প্রভু যে বারবার আসেন তাঁর সন্তানদের রক্ষা করার জন্য, তিনি যে একজনই, আসেন বারবার যখনি যেখানে নেমে আসার দরকার হয়, সময় ও জায়গা অনুযায়ী তিনি নেমে আসেন। বিশ্বের ৮০০ কোটি মানুষের তিনি পরমপিতা, কারও বা কোনও সম্প্রদায়ের একক সম্পত্তি নন এই কথা নানাভাবে বলা সত্ত্বেও তাঁর বিভিন্ন রূপের অনুগামীরা বুঝতে চায়নি, চায় না। আর, এবার যখন তিনি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র রূপে এলেন আর হাজার হাজার বাণী, ছড়ার মধ্যে দিয়ে, কথোপকথনের মাধ্যমে হাজার হাজার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তিনি যখন ধর্ম, ঈশ্বর, অবতার, সম্প্রদায় ইত্যাদি সম্পর্কিত সমস্ত বিষয়ে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়ে গেলেন তখন তা সত্ত্বেও শ্রীশ্রীঠাকুরের শিষ্য অনুগামীরা শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে অসহযোগিতা করেছে, করেছে চূড়ান্ত নোংরামি।
বাংলাদেশে পট পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবিত প্রধান উপাদেষ্টা ও উপদেষ্টামন্ডলী্র নাম প্রকাশ করা হয়। সেই নামগুলি পোষ্ট ক'রে বাংলাদেশে শান্তি, স্বস্তি ফিরে আসার জন্য প্রার্থনা চোখে পড়লো। সৎসঙ্গীরা সবাই দয়ালের কাছে কাতর প্রার্থনা করছে এবং সমস্ত গুরুভাইবোনেদের কাছে অনুরোধ করছে তাঁদের জন্য, বাংলাদেশের জন্য প্রার্থনা করতে।
বাংলাদেশে পট পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবিত প্রধান উপাদেষ্টা ও উপদেষ্টামন্ডলী্র নাম ফেসবুকে প্রকাশ ক'রে কার কাছে প্রার্থনা করলেন সৎসঙ্গীরা সেটা পরিষ্কার হ'লো না। মনে হ'লো এই কমিটির কাছে প্রার্থনা করেছেন। যদি কমিটির কাছে প্রার্থনা ক'রে থাকে সৎসঙ্গীরা তাহ'লে তাদের মতো আমিও অন্তর্বর্তীকালীন অস্থায়ী সরকারের কাছ্রে প্রার্থনা করি বাংলাদেশের অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি দ্রুত হাতে মোকাবিলা করার জন্য এবং বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ও সংখ্যালঘু জনগণের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য। প্রার্থনা করি বাংলাদেশের আগুনে পরিস্থিতির লাগাম টেনে উত্তপ্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক ক'রে তোলার জন্য।
প্রার্থনা প্রসঙ্গে বাংলাদেশের হিন্দুদের অবস্থা একটু আলোচনা করা যাক। বাংলাদেশের মোট হিন্দুর সংখ্যা কত?
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি অনুসারে, সেখানে এখন মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। বাংলাদেশে ক্রমশ কমছে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠিত হওয়ার পর সেখানে প্রথম জনগণনা হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। সেই সময়ে বাংলাদেশে হিন্দুদের হার ছিল ১৩.৫০ শতাংশ। এখন তা কমে হয়েছে ৭.৯৫ শতাংশ।
এই হিন্দুদের মধ্যে ঐক্য নেই। তার মধ্যে সৎসঙ্গীদের অবস্থা আরও শোচনীয়। ভাগাভাগিতে নিজেদের অস্তিত্বকে বিপন্ন আগেই ক'রে রেখেছে ঠাকুরের সঙ্গে বেঈমানি ক'রে। কিছুদিন আগে শ্রীশ্রীঠাকুরের মূল কেন্দ্র 'সৎসঙ্গ' বিরোধীদের মিটিং-এর একটা ছবি ফেসবুকে তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু তার কোনও প্রতিক্রিয়া পাইনি কোনও পক্ষ থেকে। সময় বড় নির্ম্মম, বড় নিষ্ঠুর। আমরা কেউই ঠাকুরের কথাকে গুরুত্ব দিইনি। সব সাজা সৎসঙ্গী আমরা। আত্মপ্রতিষ্ঠা, অর্থ, মান, নাম, যশ আর ক্ষমতা লাভ সবারই লক্ষ্য ছিল। কেউই শ্রীশ্রীঠাকুরের লক্ষ্য, ইচ্ছা, স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করিনি। শ্রীশ্রীঠাকুরকে সবাই টেকেন ফর গ্রান্টেড ক'রে নিয়েছি। দয়াল যে প্রয়োজনে ভয়াল রূপ ধরতে পারে তাঁর সৃষ্টিকে রক্ষা করতে, পথের কাঁটাকে উপড়ে ফেলে তাঁর কাজ করিয়ে নিতে সেটা সম্ভবত বই পড়ে বই হ'য়ে যাওয়া, তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থাকা, কপট ভন্ডরা জানে না। তারা ভুলে গেছে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।
তবে ব্যতিক্রম অবশ্যই অবশ্যই আছে। আর আছে বলেই তাঁদের জন্যই আজও 'সৎসঙ্গ' বিশ্বের বুকে মাইলস্টোন হ'য়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুরকে পাওয়া সত্ত্বেও আমরা আমাদের দুর্ভাগ্যকে সৌভাগ্যে পরিবর্তন করতে পারিনি। তাই শ্রীশ্রীঠাকুরের কথামত, "তুমি যদি অসৎ হও, তোমার দুর্দশার জন্য সমবেদনা প্রকাশের কেউই থাকবে না; কারণ, তুমি অসৎ হ'য়্রে তোমার চারদিকই অসৎ ক'রে ফেলেছো।" এই বাণী আজ আমাদের জীবনে স্পষ্ট হ'য়ে উঠেছে। এ কথা শ্রীশ্রীঠাকুরের, আমার নয়।
এ ছাড়া আবার শ্রীশ্রীঠাকুর বহু বছর আগেই নাংলা ভাষায় সতর্ক ক'রে দিয়ে বলেছিলেন,
"তুমি যা করছো বা ক'রে রেখেছো, ভগবান তাই-ই গ্রাহ্য করবেন তার ফলও পাবে ঠিক তেমনি। যা ইচ্ছা তাই করবে তুমি তা করলে রে চলবে না, ভালো ছাড়া মন্দ করলে পরিস্থিতি ছাড়বে না।"
এছাড়াও ঠাকুর সত্যানুসরণ গ্রন্থে স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন,
"সাধু সেজো না, সাধু হ'তে চেষ্টা কর। তোমার মনের সন্ন্যাস হ'ক; সন্ন্যাসী সেজে মিছামিছি বহুরূপী হ'য়ে ব'সো না। তোমার মন সৎ-এ বা ব্রহ্মে বিচরণ করুক, কিন্তু শরীরকে গেরুয়া বা রংচং-এ সাজাতে ব্যস্ত হ'য়ো না, তা' হ'লে মন শরীরমুখি হ'য়ে পড়বে।"
"তুমি ঠিক ঠিক যেন যে, তুমি তোমার নিজের, তোমার নিজ পরিবারের, দশের ও দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য দায়ী।"
সত্যদ্রষ্টা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাবো, আমার দুর্দশার সময় সমবেদনা প্রকাশের কেউই নেই। আমার করা অনুযায়ীই আজ আমি ফল ভোগ করছি। পরিস্থিতি আজ আমার অনুকূলে নেই। আমি সাদা কাপড়ে সাজা সৎসঙ্গী আজ। অসৎ আর সংকীর্ণতায় আমার মনকে ডুবিয়ে রেখে শরীরকে সাদা কাপড়ে ঢেকে ফেলেছি। ফলে মনকে সাদা করতে পারিনি। তাই আজ বর্তমান সময়ে আমি আমার নিজের, আমার নিজের পরিবারের, দশের ও দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য আমিই দায়ী।"
এ সমস্তই আজ ভাবার সময় এসে গেছে। বর্তমান বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতির আগে সম্প্রতি আমরা ভয়াবহ পরিস্থিতি 'করোনা'র মুখোমুখি হয়েছিলাম। সেইসময়ও আমরা ঠাকুরের কাছে রক্ষা পাওয়ার জন্য করুণ প্রার্থনা করেছিলাম। খুব দ্রুত আমরা তা ভুলে গেছি।
আরও বড়, আরও ভয়ংকর ভবিষ্যৎ ক্ষতি হওয়ার আগে আসুন আমরা সৎসঙ্গীরা নিজেদের পরিবর্তন করি। শ্রীশ্রীঠাকুর ভবিষ্যৎ ভয়ংকর ক্ষতি সম্পর্কে কিন্তু সাবধান ক'রে গেছেন বারবার এ কথা যেন আমরা ভুলে না যায় সৎসঙ্গীরা। যদি নিজেকে, নিজের পরিবারকে সত্যি সত্যিই এখন ও আগামি দিনে রক্ষা করতে চাই এখনও শ্রীশ্রীঠাকুর রেত শরীরে লীলা করছেন দেওঘরে শ্রীশ্রীআচার্যদেব রূপে চলুন তাঁর কাছে সবাই একসঙ্গে মিলিত হ'য়ে যাই আর ভবিষ্যৎ ভয়ংকর নানা রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয় ও দারিদ্রতা ইত্যাদি নানা বিষাক্ত মহা বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ও পরিবার, পরিজন, সমাজ, দেশকে রক্ষা করতে এখন আমাদের কি করণীয় তা শ্রীশ্রীআচার্যদেবের কাছ থেকে জেনে নিই।
আমি আবারও আমার দয়াল ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা জানাই সবাই ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক, সুরক্ষিত থাকুক, শান্তিতে থাকুক। আর এই প্রার্থনা শুধু সৎসঙ্গী ভাইবোনেদের জন্য নয়, এই প্রার্থনা বাংলাদেশের সমস্ত সম্প্রদায়ের ভাইবোনেদের জন্যই প্রার্থনা।
জয়গুরু।
No comments:
Post a Comment