"ইন্ডিয়ার কলকাতাতেই উত্তাল। বাংলাদেশকে দেখে সবাই অনুসরণ করছে! ইন্ডিয়াতেও বাংলা ঝড়। 'বৈষম্যহীন ছাত্র আন্দোলন' পাকিস্তান শাখার পর ইন্ডিয়া শাখা তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। যেখানে অধিকারের লড়াই আছে, সেখানে আমরা আছি।"
বাংলাদেশের 'বৈষম্যহীন ছাত্র আন্দোলন' সমর্থিত কিছু পেজ কলকাতার আন্দোলনের পাশে থাকার, 'অধিকারের লড়াই যেখানে আছে, সেখানে তারা আছে' এই ঘোষণা ক'রে তারা আন্দোলনকে উৎসাহিত করছে। এই ধরণের মানসিকতা খুবই প্রশংসনীয় ও আনন্দের বিষয়।
কিন্তু তাদের আন্দোলনের ধরণ বিশ্ববাসী দেখলো, বিশ্বের ছাত্র সমাজ দেখলো। এখন বিশ্বের ছাত্র সমাজের দৃষ্টিভঙ্গীর কথা এখন সরিয়ে রাখলাম এবং পাকিস্তান ছাত্র সমাজ কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে আন্দোলনকে সংগঠিত করেছে তাও এখানে বর্তমানে আলোচনা করতে চাই না। আলোচনা করতে চাই,
১) বৈষম্য কি ও বৈষম্যহীন আন্দোলন কি?
২) এই মুহুর্তে বর্তমানে কলকাতার বুকে আর জি কর কান্ডে যে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে সেই আন্দোলন কি বর্তমান বাংলাদেশের আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত? এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ধরণকে, আন্দোলনের সংস্কৃতিকে কলকাতা আন্দোলন স্বীকার করে? মেনে নেয়? ও অনুসরণ করে?
এখন আলোচনা ক'রে দেখা যাক কি পাওয়া যায়।
১নং প্রশ্ন ছিল বৈষম্য কি?
উত্তরঃ বৈষম্য হ'লো শ্রেণী, জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ ইত্যাদির ভিত্তিতে অন্যদের সাথে দুর্ব্যবহার করা।
আর, বৈষম্যহীন আন্দোলন কি?
বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ বৈষম্যহীন আন্দোলনের কথা বলছে। এই বৈষম্যহীন আন্দোলন মানে এই আন্দোলনে শ্রেণী, জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষের সমান অধিকার। তা' এই বৈষম্যহীন আন্দোলন কি মুসলমান ছাত্র বা নাগরিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ? নাকি বৈষম্যহীন আন্দোলন সমগ্র সম্প্রদায়ের আন্দোলন? সাম্প্রতিক বাংলাদেশে পট পরিবর্তনের ঘটনাবলী কি প্রমাণ করে? বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন বৈষম্যহীন আন্দোলন ছিল?
এক্ষেত্রে আমরা কি দেখলাম? বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের প্রতিনিধিত্বকারী ছাত্র ও নাগরিক সমাজ তাদের চোখে বৈষম্য সৃষ্টিকারী স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর পরই হিন্দুদের ওপর আক্রমণ ক'রে বৈষম্যহীন সমাজ উপহার দেওয়ার দৃষ্টান্ত বিশ্বজুড়ে স্থাপন করলেন।
২) আর, কলকাতার বুকে আর, জি, কর হাসপাতালের ঘটনাকে কেন্দ্র ক'রে যে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে সেই আন্দোলন বর্তমান বাংলাদেশের আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত কিনা, আন্দোলনের ধরণকে, আন্দোলনের সংস্কৃতিকে স্বীকার করে কিনা, মেনে নেয় কিনা, অনুসরণ ক'রে কিনা এই ২নং বিষয় নিয়ে বলতে পারি, অনুসরণ করার বিষয়টা কলকাতার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত, আন্দোলন সংগঠিত নেতাদের বিষয়। তারা আন্দোলন বিষয়টাকে কোন দিক থেকে দেখছে, কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে, গতিপ্রকৃতি কি হবে, কি ধরণের আন্দোলন হবে, আন্দোলনের সংস্কৃতি কি হবে, বাংলাদেশের আন্দোলনের মত হবে কিনা, সেই সংস্কৃতিকে ফলো করবে কিনা এই সমস্ত কলকাতার আন্দোলনের আয়োজকদের বিষয়।
আমরা সাধারণ মানুষ এই আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান জানিয়ে, আন্দোলনের সফলতা কামনা করি।
আর, আসুন একবার পিছন ফিরে দেখে নিই সম্প্রতি বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ছবিটা, যেটাকে বলা হচ্ছে পাকিস্তান শাখার পর এখন ইন্ডিয়া শাখা নাকি তাদের কার্যক্রম অনুসরণ শুরু করেছে।
আমার জানতে ইচ্ছে করে যারা ফেসবুকে কলকাতার এই আন্দোলন নিয়ে সরব তাদের কাছে এবং বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে যারা কলকাতার এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে "যেখানে অধিকারের লড়াই আছে, সেখানে আমরা আছি"--এই কথা ব'লে ফেসবুকে সমর্থন জানিয়ে পোষ্ট করছে তাদের কাছেও জানতে চাইঃ
১) ইন্ডিয়া শাখা বলতে তারা কি মিন করছে?
২) এই শাখা কথার আড়ালে কি আছে? বাংলাদেশের গোপন ষড়যন্ত্র মূলক আন্দোলনের সঙ্গে কলকাতার আন্দোলনের সঙ্গে কি সম্পর্ক? দু'টো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। একটা কোটা সংস্কারের আড়ালে সরকার পতনের ছক আর কলকাতার আন্দোলন নারীর ওপর পৈশাচিক অত্যাচার ক'রে ধর্ষণ ও নির্ম্মম হত্যার বিরুদ্ধে দোষীদের বিচারের দাবীতে গণরোষ। দু'টো কি এক হ'লো? এখানে শাখা শব্দ ব্যবহারের পিছনে কোন অভিসন্ধি, কোন ষড়যন্ত্র লুকিয়ে রয়েছে? এটা যেন ষড়যন্ত্রকারীরা ভুলে না যায় ভারতের মত বিশাল দেশের পেট থেকে জন্ম নেওয়া দেশ যে, হাতি শুকাতে শুকাতে গাধা হয় না, কিন্তু গাধা শুকাতে শুকাতে তার আর ট্রেস পাওয়া যায় না।
আসুন এবার দেখে নিই বাংলাদেশের আন্দোলনে অনুসরণ করার মত ছিলটা কি যা ইন্ডিয়া শাখা অনুসরণ করবে?
বাংলাদেশের আন্দোলন কি ছিল?
১) বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন ছিল মিথ্যে কোটা সংস্কারের আন্দোলন।
২) পরবর্তীতে ছাত্র আন্দোলন ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গিয়ে হ'য়ে গেল সরকার পতনের আন্দোলন।
৩) আন্দোলনের নানা ইস্যু মুহুর্তে মুহুর্তে টুইষ্ট করলেও একটা মেইন ইস্যু ছিল সেটা হ'লো ভারত বিরোধীতা।
এবার দেখে নিই আন্দোলনের ধরণ কি রকম ছিল।
১) কোটা আন্দোলনের আড়ালে গিরগিটির রঙ বদলের চেয়েও মারাত্মক ভয়ংকর রঙ বদলের মাধ্যমে সরকার পতনের ছিল গোপন এজেন্ডা।
২) ১৯৭১-এর স্বাধীনতা আন্দোলনের লড়াইয়ের মধ্যমণি শেখ মুজিবরের মূর্তির মাথায় চড়ে পেচ্ছাপ করা, বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের দিয়ে শেখ মুজিবরের ছবিতে পেচ্ছাপ করানো, গলায় জুতোর মালা পড়ানো, মূর্তিকে লাথি মারা, জুতো দিয়ে মারা, মূর্তি ভেঙে পৈশাচিক উল্লাস করা, ভাঙ্গা মূর্তির মাথা নিয়ে জলকেলি করা।
৩) রবীন্দ্রনাথের মূর্তি ভেঙে অপমান ক'রে বৈষম্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা, ছিল বই পোড়ানো।
৪) দেশজুড়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা ছিল ছাত্র আন্দোলনের ধরণ।
৫) মায়ের বয়সী প্রৌঢ়া মহিলার অন্তর্বাস, শায়া, ব্লাউজ নিয়ে প্রকাশ্যে পৈশাচিক সংস্কৃতির আমদানি করা ছিল আন্দোলনের ধরণ।
৬) আধুনিকা নারীদের মুখে, ছাত্রীসমাজের মুখে নারী হ'য়ে প্রৌঢ়া নারীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে পৈশাচিক উল্লাসে কানে গরম সীসা ঢেলে দেওয়ার মত অশ্লীল যৌন নোংরা শ্লোগান ছিল ছাত্র আন্দোলনের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি।
৭) ভারতের বিরুদ্ধে লাগাতার গালাগালির বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়া অশ্লীল ও মিথ্যে শ্লোগান ইত্যাদি ধংসাত্মক বিষাক্ত অপসংস্কৃতি ছিল ছাত্র আন্দোলনের মূলধন।
এখন কতিপয় প্রশ্নঃ
১) এইরকম কৃষ্টি-সংস্কৃতির অনুসরণ করবে কলকাতার আন্দোলন?
কেননা আমরা এর আগে কলকাতার বুকে ব্রা আর জাঙ্গিয়া পড়া, প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন দেখেছি। এবারও কি তাই দেখবো? নিশ্চয়ই না।
২) বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনকারীদের এত উৎসাহ কেন পাকিস্তানের পরে ভারতের কলকাতার এই আন্দোলনে? কি উদ্দেশ্য? কি গোপন এজেন্ডা?
৩) কলকাতার আন্দোলন কি তাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছে? 'গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল'-এর মানসিকতা বাংলাদেশের বাঙালীদের বৈশিষ্ট্য?
একথা কখনোই ভাবার অবকাশ নেই বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন দুনিয়ার বুকে দৃষ্টান্ত স্থাপনের মত উচ্চমার্গের উন্নত কৃষ্টি-সংস্কৃতিতে ভরপুর আন্দোলন ছিল যা কলকাতার ছাত্র ও নাগরিক সমাজ গ্রহণ করবে।
যাই হ'ক বাংলাদেশের বর্তমান গণ অভ্যুত্থানের সৈনিকদের, বাংলাদেশের বর্তমান উপদেষ্টামন্ডলী্দের ও প্রধানের নানারকম স্টেট্মেন্ট দেখে একটা কথায় মনে পড়ে সেই ব্যাঙ মায়ের গল্প।
( লেখা ২৬শে আগষ্ট'২৪)